আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৩
ইশিকা ইসলাম ইশা
সকাল সকাল তীব্রর ঘুম ভাঙল খিলখিল হাসির শব্দে কতক্ষণ হাসির শব্দটা শুনে ছোট খাটো ঘরের কাঠের জানালা খুলে দিতেই নজরে এলো মুগ্ধময়ী হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। ছোট্ট একটা বাচ্চার পেছনে দৌড়াচ্ছে ওর মুগ্ধময়ী ওকে ধরার জন্য। তীব্র জানালার সাথে হেলান দিয়ে বসলো।দু হাত ভাজ করে তাকিয়ে দেখল তার বেয়াদব বৌ কে!মনে মনে ভাবল সকাল এভাবে শুরু হলে মন্দ হয় না!
রিদির ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে দিন কয়েক আগে। এতো দিন পরে বৌয়ের খিলখিল হাসি দেখে না চাইতেও ভালো লাগলো তীব্রর। ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি।মাথায় ওরনা দেওয়া শ্যামল কন্যা কে দেখে।মনে পড়ল লাবিবের কথা,
বস ভাবি তো কালো না!শ্যামল্যা!শ্যামলা মেয়েরা কিন্তু ভয়ংকর সুন্দর হয়!ঠিক ভাবির মতো!
তীব্রর মনে হচ্ছে শ্যামলা গায়ের রংটা যেন একান্তভাবে তার বৌয়ের জন্য খুব নিখুঁত ভাবে তৈরি করেছে উপর আলা।নয়তো তার বাচ্চা বৌ এতোটা ভয়ংকর সুন্দর দেখতে হবে কেন?এই রং তো সব জায়গায় অবহেলিত!তাহলে!তাহলে তার কাছে এতোটা স্পেশাল মনে হয় কেন?এই যে সে এই বেয়াদব বৌয়ের জন্য এতদূর থেকে ছুটে এসেছে তাও ছদ্মবেশে কেন?এই বৌয়ের মধ্যে এমন কি আছে??
তীব্র নিজের অদ্ভুত ভাবনার উপর বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো।বাগানের দিকে ছোট্ট একটা ঘরে থাকে সে।এমন ছোট্ট স্যাঁতস্যাঁতে মাটির ঘরে হয়তো তার বাসার কাজের লোক ও থাকে না।অথচ সে দিব্যি গত দু মাস এর মতো থাকছে মাটির ঘরে! ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে বিশ্বে।যদি কেউ জানে তীব্র চৌধুরী কিনা এমন ঘরে থাকছে।হাহ!! বৌয়ের জন্য আর কি কি করতে হবে!!
এই যে মিস্তার কে টুমি??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল কিছুক্ষণ আগে তার বৌ কে দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে ফেলা সেই বাচ্চা মেয়ে!বয়স আনুমানিক ৪-৫ বছর হবে বয়স।ফোলা ফোলা গুলুমুল ফর্সা দেখতে বাবুটা কিউট লাগলো তীব্রর কাছে। তীব্র নিচে বসে গাল টেনে বললো,
আমি তোমার আঙ্কেল!
নো নো!!এক মিনিট!খালার হাজবেন্ড কে কি যেন বলে??খালু!!! হ্যাঁ খালু!!আমি তোমার খালু!!তবে খালু ডাকটা আমার বিদঘুটে লাগে তার চেয়ে তুমি আঙ্কেল ডেকো কেমন!!
মেয়েটি সারাংশ, সারমর্ম কি বুঝল মাথা ঝুঁকিয়ে বলল,
আচ্ছা!!টুমি আমার আঙ্তেল!!
তীব্র হ্যাঁ বা না কিছু বলার আগের পেছন থেকে রিদি ছুটে আসতে আসতে বলল,
এই দুষ্টু মেয়ে দাঁড়াও!!তোমার আজকে একদিন না আ……..
রিদি দৌড়ে আসতে গিয়ে প্লাজুর সাথে বেঁধে ধপ করে গিয়ে পড়ল তীব্রর পিঠের উপর!হুট করে পড়ায় তীব্র তাল সামলাতে না পেরে এক হাত মাটিতে রেখে ঝুঁকে পড়ে নিজেকে সামলে নিল।অন্য হাতটা পেছনে দিয়ে আকরে ধরল রিদির কোমর!রিদি তীব্রর পিঠের সাথে লেপ্টে যেতেই তীব্র অনুভূব করল রিদির মৃদু কম্পিত শরীর। অবাক হলেও মৃদু হাসল।কাপাকাপি কন্যা বৌ।মনে মনে নামটা ঠিক করে দৃঢ় করল বাঁধন।রিদি নিজেকে দ্রুত ছড়িয়ে নিতে চাইলেও তীব্র ছাড়ল না। আস্তেধীরে কোমর থেকে হাত সরিয়ে নিতেই রিদি ঝটপট উঠে দাঁড়াল।এখনো কাঁপছে তার শরীর!রিদি অনূভব করল নিজের মাঝে এই অস্থিরতা।এমন তো শুধু ঐ মানুষটার কাছে……
রিদি আর ভাবল না।ভাবতে চাই না ঐ নিষ্ঠুর মানব কে।রিদি অস্থিরতা কমাতে দ্রুত বাচ্চা মেয়েটার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। মজনু নামক এই পুরুষের চোখের সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অস্থির করে তুলে তাকে।মনে হয় ঐ রাক্ষস মানব চেয়ে আছে তার দিকে।ঐ নিলাভ আর্কষনীয় চোখজোড়া দেখলে বুকের টিপটিপ হৃদযন্ত্র টা লাফাতে শুরু করত তার।রিদি কোনমতে বাড়িতে ঢুকে সোজা চলে এলো নিজের রুমে!
তীব্র এতক্ষণ দেখেছিল বৌয়ের অস্থির মনোভাব।ঠৌটে তার আনমনেই ফুটে উঠল মুচকি হাসি। বৌয়ের একটু ছোঁয়ায় শরীর মন চনমনে হয়ে গেল! আজকাল প্লাজু কেও তার ধন্যবাদ দিতে মন চাই! কতোদিন পর বৌয়ের ছোঁয়া পেল।তীব্র খেয়াল করল সে আজকাল এই মাটির ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে নিজের আলিশান জীবন যাপন ছেড়ে থাকতে পারছে। শুধু কি থাকতে পারছে!!বরং ভালো মতোই থাকতে পারছে। তীব্র হাসল নিজের পরিবর্তন মাঝে মাঝে নিজেরি কাছে অবাক লাগে।যাকে মেরে ফেলতে এসেছিল এখন সেই মেয়েটাই তাকে মেরে ফেলছে।তবে পার্থক্য শুধু এইটুকু যে মেয়েটা তাকে চরম এক অনূভুতির দানাবলে পিষে মেরে ফেলছে।
গভীর রাত সবাই যখন ঘুমে মগ্ন তীব্র নিঃশব্দে বসে আছে রিদির শিউরে। একধ্যানে দেখছে তার শ্যাম কন্যা কে।আজ সারাদিন মেয়েটার দর্শন হয়নি। তখনকার জন্য হয়তো লজ্জায় তার সামনে যায় নি। তীব্র হাত বাড়িয়ে রিদির কপালে আসা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিল। কিন্তু বাইরের বাতাস হুরহুর করে ঘরে আসায় একগুচ্ছ চুল আবারো পড়ল রিদির মুখের উপর। তীব্র মৃদু হেসে আবারো সরিয়ে দিল।এমন বেশ কয়েকবার করল।বার বার বাতাসে আসা এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিল তীব্র!
বাহিরের ঠান্ডা বাতাস হুরহুর করে ঘরে আসছে।সেই বাতাসে উড়ছে খোলা ডায়রির পাতা। নিস্তব্ধ পরিবেশে ডাইয়ির পাতার চট চট শব্দ শুনে রিদি নড়েচড়ে আবারো ঘুমিয়ে পড়ল। তীব্র রিদিকে আবারো ঘুমাতে দেখে তীব্র উঠে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নজর বুলাল ডাইরিতে ।বাতাসে উড়ছে খোলা ডায়রির প্রতিটি পেজ!
কাঠের জানালা বন্ধ টানতেই কপাল কুঁচকে গেল তার! মির্জা বাড়ির দেওয়াল টপকে কেউ এগিয়ে আসছে।তীব্র জানালা বন্ধ করে বেলকনি দিয়ে নেমে সোজা গিয়ে দাড়ালো হুডি পড়া লোকটার সামনে।গান বের করে সোজা ধরল কপাল বরাবর!!ট্রিগারে চাপ দিতে যাবে তখনি হুরমুর করে মাথা থেকে টুপি ফেলে চেঁচিয়ে বলল কেউ,
এই!এই আমি রে আমি!!
তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তখনো গান তাক করে আছে ।
এমনে তাকাস কেন?গান নিচে নামা!!গুলি টুলি বের হয়ে যাবে ব্রো!!এখনো বিয়ে করতে পারলাম না!
ডিস্টার্ব করতে এসেছিস??
কি কথার মাঝে কি কথা!!লোকটা অবাক হল না তিরিক্ষি মেজাজে দাঁত চেপে বলল,
এতো রাতে কি এমন মহান কাজ করছিলেন আপনি!যে আমি আসিয়া আপনাকে ডিস্টার্ব করিলাম মহাশয়!
তীব্র গান নামিয়ে বাঁকা হয়ে বৌয়ের ঘরের দিকে তাকিয়ে বলল,
বৌয়ের কাছে ছিলাম!
লোকটা চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ দেখল তীব্র কে!এরপর ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বললো,
সে তো সারাক্ষণ থাকিস!!এমন ভাব নিচ্ছিস বৌ তোর একার ই আছে! এসব থাক।এখানে তোর সাক্ষর চাই!!
কি আছে এতে??
কি আবার!! লিগ্যাল গার্ডিয়ান হওয়ার সাটিফিকেট।
আমার বৌয়ের!!
লোকটা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
তোর বৌ এটা বার বার বলার কিছু নেই!আমি জেলাস না!ওমন আদুরে টাইপ মেয়ে আমার পুষায় না!
তীব্র রাগল না বরং হাসল,
পেপার পড়ে সাইন করতে করতে বলল।সো ফেমাস এডভোকেট মির আলী জেলাস!!
মির হতাশ গলায় বলল,
আমি বললাম তো মোটেও আমি জেলাস না! তোর বাচ্চা বৌ আমার পছন্দ না!
তীব্র হাসল।মিরের চোখে দিকে তাকিয়ে বলল,
গুড!!
মির মলিন হেসে যেতে যেতে আবার থেমে গিয়ে বলল,
রিদিতাকে কষ্ট দিস না তীব্র!সি নিডস ইউ!!
সাথে সাথে তীব্রর জবাব,
রং ব্রো!আই নিড হার ব্যাডলি!
মির পেছন ফিরে তাকাল তীব্রর দিকে,
তীব্রর দৃষ্টি তখনো দোতলায় একটা ঘরের জানালার দিকে।মির মুচকি হাসল। তীব্রর শান্ত চোখের ভাষা পড়তে সময় লাগলো না আজ !তার কাছে স্পষ্ট রিদিতা তীব্রতেই সুরক্ষিত!!এটা ভেবেই কিছুটা শান্তি লাগলো। পরক্ষনেই নিজের উপর বিরক্ত হল।অন্যর বৌ নিয়ে এমন ধারনা রাখা কি ঠিক? তাও যদি হয় তার একমাত্র প্রাণপ্রিয় বন্ধুর প্রানপাখি!!কিন্তু মন!একে সে কিভাবে বুঝাবে?
তীব্র মিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাকাল রিদির ঘরের দিকে,
এই নারী শুধু আমার!আমাকে অস্থির করে যে নারি, সে শুধু আমার!আমার স্থির করে যে নারী, সে শুধু আমার!আমার ব্যাক্তিগত নারী! একমাত্র আমার বেয়াদব বৌ!
কথা গুলো মনে মনে বলে তীব্র চোখ জোড়া বন্ধ করতেই ভেসে এলো ডায়রির পাতার লেখা গুলো!!
“রাক্ষস মশাই”
আপনি আমার প্রিয় না! তাই প্রিয় সম্বোধন করলাম না।আপনি আমার অপ্রিয় রাক্ষস মশাই।
“অপ্রিয় রাক্ষস মশাই ”
আবর্জনা ভেবে ফেলে গেলেন।কখনো কি আমার কথা মনে পড়বে না! জানি পড়বে না!
“অপ্রিয় রাক্ষস মশাই”
আচ্ছা!! আর কি আমাদের দেখা হবে না!আপনি কি আর আমাকে ডাকবেন না “বৌ”বলে!বৌ ডাকটা একসময় আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও এখন “বৌ “ডাকটা মিস করি!
“প্রিয় রাক্ষস মশাই”
আপনি আমাকে ডিভোর্স তো দিবেন!! কি অদ্ভুত তাই না!!এক সই অনাকাঙ্ক্ষিত বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন আর একটা সইে সেই বন্ধন থেকে মুক্তি দিবেন। সেদিন নিশ্চয় দেখা হবে আমাদের!!যদি সেদিন আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন আমার শেষ ইচ্ছে কি?তখন আমি বলব “আপনাকে দু চোখ ভরে দেখা”।
“অপ্রিয় রাক্ষস মশাই ”
“আমার আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে রাক্ষস মশাই!আপনি তো আমার খুব অপ্রিয় মশাই! তবুও কেন আপনাকেই দেখতে ইচ্ছে হয়!!”
“অপ্রিয় রাক্ষস মশাই ”
আমার এই আবেগ কখনো আপনার নিকট পৌঁছাবে না মশাই!আবেগগুললো শুধু এই ডায়রির পাতায় সীমাবদ্ধ থাকবে আজীবন!
“অপ্রিয় রাক্ষস মশাই”
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২২
“অনাকাঙ্ক্ষিত কারো ছোঁয়া আমার শরীর স্পর্শ না করুক! যতটুকু ছোঁয়া আপনার আছে তাতেই সীমাবদ্ধ থাকুক!”
তীব্র চোখ খুলে চাইলো আকাশের দিকে। শরীর জুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঝরো বাতাস!মনটা আজ বড্ড আবেগী লাগছে। পিচ্চি বৌয়ের আবেগী লেখা কি তাকে আবেগী করে দিল! তীব্র আবারো চোখ বন্ধ করল।মন আজ অদ্ভুত এক খুশিতে আত্মহারা হয়ে আছে। তীব্র চৌধুরী তো এতো আবেগী নয়।সে তো আবেগ দেখাতে পারে না।নয়তো আজ চিৎকার করে বলত” তীব্র চৌধুরীকে পোড়াচ্ছেন আর নিজে পুড়বেন না তা কখনো হয় পিচ্চি বৌ। অনেক সময় নিয়েছেন বেগম। ইউর টাইম ইজ ওভার নাও!রেডি ফর মাই টচার বৌ!!