আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৬

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৬
ইশিকা ইসলাম ইশা

রিদির ঘুম ভাঙ্গতেই পিট পিট করে চোখ খুলতেই দেখল লতিফা বেগম রিদির হাত ধরে বসে আছে।রিদি আশেপাশে তাকিয়ে দেখল চাচা,চাচি, রায়ান ভাই,রিয়া আপু,সহ সবাই দাঁড়িয়ে আছে।রিদি উঠে বসতে চাইলে রায়ান বসতে সাহায্য করে।
তুই ঠিক আছিস তো রিদু!
রায়ানের কথায় রিদি সবটা মনে করতেই চমকে তাকালো সবার দিকে।মজনুর খুন করার সেই দৃশ্য তারপর দৌড়ানো,তারপর মজনুর সাথে গাড়িতে সেই মূহূর্ত।সব মনে পড়তেই মূহুর্তের মধ্যেই রিদির ভয়ে শরীর কেঁপে উঠলো।রিদি ভয়ে অস্পষ্ট গলায় বলল,

ম মজ নু রাতে আ……….
রিদি কথা শেষ করার আগেই লতিফা বেগম বলল,
মজনু রাতের ঘটনা আমাদের সব বলেছে।আমরা সব জানি!
রিদি ঘাবরে গিয়ে তাকালো সবার দিকে।সবাই কি তাকে ভুল বুঝবে!কথাটা মনে হতেই গলা শুকিয়ে এল তার।
মজনু ডা না থাকলে কি হইত? আল্লাহ আজ ওর হাতেই তোরে বাচাইছে রিদু! আল্লাহ পোলাডার ভালা করুক!!
রিদি হচকচিয়ে অবাক হয়ে তাকালো দাদির দিকে।দাদি মজনু মিয়ার তারিফ করছে এতোকিছুর পরেও!!কি বলেছে ওনি??
লতিফা বেগম রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
তুই নাকি রাতে একা একা হেটে বাগানের দিকে গেছিলি আর ঐ পুকুরে পইড়া গেছিলি।আমি কইছিলাম ঐ পুকুরে তেনারা থাকে।ঐ পুকুর ভালা না। নিশ্চয় তোকে বশে নিছিল নয়তো ওতো রাইতে তুই যাবি ক্যা!!
রিদি হতবাক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে দাদির দিকে!লতিফা বেগম গ্রামের আগেকার যুগের মানুষ।এসবে মানে বেশি। ছোট্ট থেকেই ঐ পুকুরের আশেপাশে যেতে দিত না তাঁদের।
আহা আম্মা!মেয়েটা অসুস্থ!এভাবে বলবেন না। তাছাড়া এমন কিছুই হয় না!
ছেলের কথায় লতিফা বেগম রেগে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হ।তোরা আমার কথা শুনবি কেন? তোরা তো আজকাল যুগের পোলাপান!কতবার বলেছি ঐ পুকুর ভরাট কইরা দিতে!কেউ শুনে নাই আমার কথা!
দাদি তুমি শান্ত হও!এই রিদু বল তো কি হয়েছে?
রিয়ার কথায় লতিফা বেগম বলল,
ওর থেকে জানা লাগবে কেন??মজনু তো কইছেই কি হইছিল।হুনলি না!মানে ঐ লিহা টিহা পড়লি না।হেই কি মিছা কথা লিখবো?আজ যদি মজনু না থাকত কি হইত??পোলাডা ওরে সরাসরি হসপিটালে নিয়ে গেছে চিকিৎসা করাইয়েছে!
আমাদের একবার বলতে তো পারত!!
রায়ানের কথায় লতিফা রেগে বলল,

মরার মতোই তো ঘুমাস!হের মুখে আওয়াজ তো আর তোর মতন দেয়নাই আল্লাহ!যে চেঁচিয়ে ডাকবে!ওর ঐ সময় যেডা ভাল লেগেছে সেটাই করছে।তোদের ডাকাডাকি করে সময় নষ্ট করে নি দ্রুত হাসপাতালে নিয়া গেছে!
লতিফা বেগমের রাগের উপর আর কেউ বেশি কথা বলতে পারল না।সবাই রিদিকে দেখে বেরিয়ে যেতেই রুমে ঢুকে মজনু মিয়া উরফে তীব্র। মজনু কে দেখেই লতিফা বেগম খুশিতে আটখানা হয়ে বলল,
আল্লাহ তোমার ভালা করুক মজনু।তুমি আমার নাতিডারে বাচাইছো।আসো আসো ঘরে আসো।তুমি না থাকলে যে কি হইত? আল্লাহ আমাদের বাচাইছে!
তীব্র লতিফা বেগমের কথায় একবার আড়চোখে তাকালো রিদির দিকে।রিদির রাগে গজগজ করতে থাকা তেলতেলে মুখখানা দেখে বাঁকা হাসল। ওষুধের প্যাকেট দাদির হাতে দিয়ে ইশারায় খাইয়ে দিতে বলল।
লতিফা বেগম ওষুধ রেখে পানি আনতে যেতেই তীব্র আয়েশি ভঙ্গিতে বসল সামনের সোফায়।রিদি রেগে বলল,
কি ভেবেছেন?আপনার চালাকি চলবে।আমি সবাইকে সবটা বলব!এরপর আপনাকে এই গ্রাম থেকে বিদায় করব!
তীব্র বাঁকা হেসে বলল,

শুধু এনার্জি নষ্ট হবে পাখি!এসব এনার্জি বাসরের জন্য বাঁচিয়ে রাখুন কাজে আসবে!
খবরদার উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন তো!আমি আজই চাচুকে সবটা বলব!দেখি আপনি কি করতে পারেন।
বেশি কিছু করব না।রাতের ঘটনা পুনুরায় রিপিট করব আপনার পরিবারের সাথে।একে একে সবাইকে শেষ করব!না একেবারে সবাইকে বিদায় করব!
তীব্র আবারো বলল,
এবার আপনি ভেবে দেখেন!চয়েস ইজ ইউরস ব্ল্যাক রোজ!
রিদি ভয় পেলেও শক্ত কন্ঠে বলল,
কি চাই আপনার? সত্যি করে বলুন!
তীব্র সোফা থেকে উঠে রিদির কাছে এসে একটু ঝুঁকে দুষ্টু হেসে সুর তুলে বলল,
যদি সত্যি জানতে চাও তোমাকে চাই,
তোমাকে চাই…
যদি মিথ্যে মানতে চাও তোমাকেই চাই!
বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।রিদি অস্থির হয়ে উঠল।কি করবে সে এখন?
কাল যদি কারো চিৎকার শুনে বাগানে না যেত তাহলে এসব কিছুই হতো না। কালকের ঘটনা ভাবতেই ডুকরে উঠলো রিদি,

রাত তখন প্রায় ১:৩০ এর কাছাকাছি।এডমিশন এর পড়া শেষ করতে করতে দেরি হয়ে গেছে।রিদি বই খাতা রেখে বেলকনি থেকে দুপুরে শুকাতে দেওয়া কাপড় তুলতে বেলকনিতে যেতেই কারো গোঙানির আওয়াজ শুনে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল। মৃদু আলোয় বাগানের দিকে কিছু লোক দেখা গেল।একজন লোক একহাত ধরে কাউকে টেনে হিজরে নিয়ে যাচ্ছে।রিদি কিছুটা ভয়ে মুখে হাত দিয়ে বসে পড়ল। পরক্ষনেই কি মনে করে ছুটে গেল ঘর থেকে বেরিয়ে বাগানের রাস্তায়।গাছমছম করা সরু রাস্তা দিয়ে সূরা পড়তে পড়তে সামনে যেতেই দেখা মিলল কয়েকজন কালো পোশাক পড়া লোককে।রিদি আম গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেল।কিছুটা সামনে তাকাতেই নজরে এলো মজনু মিয়া নামক সুঠামদেহী লম্বাটে পুরুষটি কে।রিদি ভরকে গেল।কারন মজনু মিয়া ছিল চেয়ারে বসা।চেয়ারের হাতল এর উপর একহাত রেখে মুখের কাছে হাতটা দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে স্টাইল করে বসে আছে।রিদি অবাক হয়ে দেখল মজনুর রাজকীয় ভাবে বসা।ঠিক তার সামনে কালো পোশাক পড়া একজন লোক একটা লোককে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে ধরে আছে। তাঁদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে তা শুনতে পেল না তবে ধরে রাখা লোকটার গলা থেকে মাথা মূহূর্তেই আলাদা হয়ে গেল।আর আলাদা করেছে স্বয়ং মজনু মিয়া! রক্তাক্ত বড় দা তার হাতে।রিদি ভয়ে তাৎক্ষণিক চিৎকার করে উঠতেই মজনুর নজর পরে তার দিকে।থরথর করে কাঁপতে থাকা রিদিকে দেখেও কোন ভাবাবেগ নেই তার মাঝে কিন্তু গার্ডরা যখন রিদিকে ধরতে যাবে ঠিক তখনি হুমকি স্বরূপ আওয়াজ আসে,

ডোন্ট টাচ হার!
রিদি চমকে উঠে মজনু কে কথা বলতে দেখে।এরপর ভয়ে দিকবিদেক না দেখে প্রানপনে ছুটছে শুরু করে।এরপর যা হল সব জানা।
রিদি ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে রইল।শরীর মন দুটোই অচল হয়ে আসছে আজ।কি থেকে কি হল?কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।

ঘড়িতে তখন রাত ৯টার কাছাকাছি।রিদির রুমে বসে আছে লতিফা বেগম সহ সবাই। ডক্টর রাইমা রিদিকে দেখে ওষুধ লিখে দিলেন!জ্বরে কাহিল রিদি বেহুসের মতোই পড়ে আছে।এইতো খানিক আগে খিঁচুনি উঠার মতোই কাঁপছিল।লতিফা বেগম আহাজারি করতে করতে বলল,
এই ম্যাইয়্যা আমার এডা কথাও হুনে না!কি দরকার আছিল সকাল সকাল গোসুল করার!এই গোসুল কইরাই তো জ্বর আসছে।আমি মানা করলাম যে গোসুল দিস না।হেই হুনলো আমার কথা!এহন কার কষ্ট হইতাছে!!
ডঃ রাইমা মিষ্টি হেসে বলল,
চিন্তা করবেন না দাদিমা ঠিক হয়ে যাবে রিদিতা!
লতিফা বেগম রাইমার কথায় মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
ভালা হোক নাতনি তোমার!এতো রাইতে তুমি আইছো!
না এসে উপায় ছিল না দাদি।আসতেই হতো!
বলেই আড়চোখে তাকালো মজনুর দিকে।সেই এক কোনায় দুহাত বুকে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার রিদির পানে।

লতিফা বেগম আবারো বলল,
রায়ান যা তো ডক্টর নাতিরে আগাইয়া দিয়া আয়!!
না না দাদিমা!আমার জন্য তপার আছে মানে ঐ আরকি গাড়ি আছে!আমি চলে যাব!আপনি চিন্তা করবেন না!
চপার কি?
রাইমা কিছুটা ভরকে গিয়ে বলল,
না মানে গাড়ি আছে।আর দাদিমা রিদিতাকে রাতে আর জাগাবেন না।আমি ইনজেকশন দিয়েছি রাতে গভীর ঘুমে কাটবে।তাই আপনারা চিন্তা করবেন না।গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন!!
রায়ান বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
রিদুর শরীর এখনো বেশ গরম!
রাইমা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

চিন্তা করবেন না।রিদিতা সারারাত ঘুমাবে তাই সকালের দিকে ঙ্গান ফিরবে আর শরীরে জ্বর কমে যাবে!
কিন্তু রাতে যদি জ্বর হয়।আমাদের কারো তো থাকা উচিত ওর কাছে!
রিয়ার কথায় রাইমা তাৎক্ষণিক বলে,
দরকার নেই।ঘুমের ওষুধ আর জ্বরের ওষুধ দেওয়া আছে জ্বর আর আসবে না।আর আপনারা ওর থেকে দূরে থাকুন….
মানে এখন প্রায় সবারই এমন জ্বর হচ্ছে।একজন থেকে ভাইরাস অন্যজনে ছড়াচ্ছে তাই বললাম আরকি!
কিন্তু জ্বর তো……
আর আর বাচ্চাদের ও তো সমস্যা হবে। তাইই ওকে পুরোপুরি রেস্ট করতে দিন।সকালে ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।আমি ডক্টর আমার কথা শুনুন এতে সবার ই ভালো হবে!
নয়তো এই পাগল আমাকেই হসপিটালে ভর্তি করে দিবে (শেষ কথাটা আস্তে বিরবির করে বলল রাইমা)
কিছু কইলা??
না না‌। না কিছু না….. বাচ্চাদের বিষয় তো তাই বলছি একজন থেকে অন্যজনে ছড়াচ্ছে।
এডা কি করুনা ভাইরাস নাকি গো ডক্টর নাতনি!
রাইমা জোরপূর্বক হেসে বলল,
না তবে সাবধানে থাকা ভালো!
বাচ্চাদের বিষয় বলে আর কেউ কোন কথা বাড়াল না। রাইমার কথা মেনে নিল।

আমাকে যে এভাবে কিডন্যাপ করে নিয়ে এলি এতোদূর থেকে একটা ধন্যবাদ তো দেওয়া উচিত!!
তীব্র ভাবলেশহীন ভাবে তাকালো রাইমার দিকে!রাইমা ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল!সরি আর থ্যাংকস কি এমন জটিল শব্দ যে এই বান্দার মুখ থেকে বের হয় না।
তোর পাগলামির সীমা রেখা কোথায় তীব্র?
ওর আবার কোন সীমা রেখা আছে নাকি?সালা…..
না মানে তীব্র ও !ওর তো কোন সীমা রেখা নাই!
মিরের কথায় তীব্র নির্বাক হয়ে তাকালো শুধু কিছু বলল না। মির শান্ত তীব্র কে খোঁচা মেরে বলল,
বৌ পাগল হয়েছে বুঝলি!!
রাইমা মিষ্টি হেসে বলল,
আমার তো কল্পনাতেও কখনো আসে নি আমাদের দি গ্রেটেস্ট তীব্র চৌধুরী,আমাদের ন্যাশন্যাল ক্রাশ,কাউকে এতো গভীর ভাবে ভালোবাসবে! ওহ মাই আল্লাহ!আই যাস্ট কান্ট বিলিভ!নিজ চোখে ওর পাগলামি না দেখলে বিশ্বাস করতাম না কখনো!বাপরে!!
তাছাড়া রিদিতা মাশাআল্লাহ এতো কিউট একটা আদুরে টাইপ মেয়ে!আমার তো দেখতেই ইচ্ছে করছিল!এতো মায়াবী মুখখানা আমি খুব কম দেখছি!
বিশেষ করে ওর চুল আল্লাহ কতো কতো বড় মাই আল্লাহ আমি তো ফিদাহ!হায়ে আমি মেয়ে হয়েও ওর উপর ফিদাহ ব্রো!!

মির ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
তোকে কি ওর বৌয়ের তারিফ করার জন্য এনেছি!কোই ওর ঐ সুন্দরী চাচাতো বোন ও তো মেলাই সুন্দরী।বাড়িতে বিয়ের লাইন লেগে থাকে ওরও তো এতো তারিফ করিস নি!নাকি তীব্র চৌধুরী বৌ বলে তারিফের পুল বাধছিস!
রাইমা প্রতিবারের মতোই মিষ্টি হেসে বলল,
তুই কি হিংসা করছিস? ঠিক আছে তুই ও বিয়ে কর তোর বৌ এর ও তারিফ করব ওকে!!
মির বিরবির করে বলল,
সিঙ্ঙেল ই মরব আমি!যেই একটা মনে ধরল সে আবার নাকি তীব্র চৌধুরীর বৌ!নয়তো অন্যর বৌ হলেও তুলে আনা যেত!ছ্যা,ছ্যা….
রাইমা মিরকে বিরবির করতে দেখে পিঠে থাবা মেরে বলল,
বিরবির করছিস কেন?আমাকে দিয়ে আয় বাসায়!
মির ছ্যাত করে উঠে বলল,
এই আমার বৌয়ের বরের শরীরে হাত দিচ্ছিস কেন?
রাইমা বিরক্ত হয়ে বলল,
তোরা দুইজন কলেজ থেকেই এমন নারী বিদ্বেষী কেন?মেয়েদের ছোঁয়াই কি তোদের গায়ে ফোসকা পড়ে হাদারাম!কোন কপালে যে তোদের মতো বন্ধু পেয়েছি!ওটার শরীরে সামান্য টাচ লাগলেই নীল চোখ লাল করে তাকাই আর তুই….

এই এই তীব্র আর তোর একই মেয়ে মানে রিদিকে আবার পছন্দ করিস নি তো!!
মির হচকচিয়ে মাথা নুইয়ে মলিন হেসে বলল,
আমার ওসব মায়াবতী টায়াবত চলে না!আমার তো ধবধবে সাদা টাইপ রুপবতী লাগবে!
রাইমা মিরের কথায় হাসল।এতো বছরের বন্ধুত্ব সবটাই সে বুঝে।মিরের হয়তো রিদিকে পছন্দ কিন্তু আজ তীব্র যা করল তাতে রিদিতা তীব্রর পছন্দ না!!রিদিতা তীব্রর পাগলামি, অতিরিক্ত চাওয়া, ভালবাসার চেয়েও বেশি কিছু!সাইকো লাভার মনে হয়েছে আজ তাকে!নয়তো তীব্র যাকে ধরা ছোঁয়া যাই না সে গত কয়েকমাস ধরে এমন ছদ্মবেশে ঘুরছে তাও এই গ্রামে।এটা কখনো সম্ভব হতো না যদি রিদিতা নামক রমনীর নাম তীব্রর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে না থাকত!তীব্রর মতো পাথর মানুষকে যে গলাতে পারে এতে নিঃসন্দেহে বলা যায় সে অনন্যা।রাইমা পিছনে ফিরে তাকাল তীব্রর দিকে। মজনু বেশেও বেশ লাগছে তাকে।

তীব্র ধীর পায়ে এগিয়ে এলো।লাবিব হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসল তীব্রর সামনে। তীব্র লাবিব কে বলল,
রাইমা কে ঠিক ঠাক ঢাকায় পৌঁছে দিতে বল।লাবিব যেতেই হেলিকপ্টার এর পাখা মেলেছে তুমুল শব্দ তুলে চলছে পাখা।বাতাসে উড়ছে খোলা মাঠের ধুলিবালি।রাইমা এগিয়ে এলো তীব্রর কাছে,
ছোট্ট একটা মেয়ে!তোর পাগলামি সহ্য করতে পারবে! তোকে সামলাতে পারবে! মিষ্টি একটা মেয়ে ও তীব্র!, কিন্তু তুই!তুই ভয়ানক, ভয়ংকর তোর পাগলামি!
এখনো কিছুই শুরু করি নি আমি !তীব্রর নিরলস জবাব!
রাইমা কিছুটা রেগে বলল,
৪৫কেজির শরীরে ৮৫ কেজি ভর চাপালে পুরো শরীর ব্যাথায় জর্জরিত হবে না? আবার রাক্ষসের মতো গলায় দাগ করে রেখেছিস!তার উপর মানসিক চাপ!তুই কি ওকে সব মেয়েদের মতো ভাবছিস!ওর জন্য তুই অচেনা আর তোর ছোয়া ওর কাছে অপবিত্র!

তীব্র বিরক্ত হয়ে রাগে হিসহিসিয়ে বলল,
বালের ঙ্গান দিচ্ছিস! ঙ্গান চেয়েছি আমি!
বালের একটা বৌ!ওকে দেখলেই তো আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। তবুও কি আমি আজ পর্যন্ত কিছু করেছি!সহ্য করতে পারবে !সামলাতে পারবে আমায়!
ছ্যা….
বালের একটা জীবন।বালের একটা বৌ!ঘরেও বোরকা পরিয়ে রাখতে হবে!নয়তো দেইলেই তো গিলতে ইচ্ছে করে….
ছ্যা….

বালের একটা চেহেরা,বালের মতো কাপাকাপি করে, ঠোঁট কাপায়,বালের শরীর,শরীর থেকে ওমন ঘ্রাণ!বাল সব….
এই !!এই !!আমি বলেছি ওরে তুই কাঁপা কাপি কর!আমি বলেছি শরীর থেকে ওমন ঘ্রান বের কর!আমি বলেছি গলায় তিল রাখ!আমি বলেছি চোখ গুলো ওতো বড় বড় করে রাখ, আমি বলেছি চোখ এ ওমন মায়া জরিয়ে রাখ,আমি বলেছি ঘন কালো পাপড়ি ঝাপটা,আমি বলেছি খিলখিল করে হাস,আমি বলেছি ওমন ঘন কালো চুল রাখ!!!
ওর কোন দোষ নেই তাই না!এসব করে আমাকে আকর্ষন করে তার বেলায় কোন দোষ নাই!আর আমি বেসামাল হলেই দোষ! ঙ্গান দিবি না একদম!ছ্যা …….. বালের একটা বৌ……
তীব্র একনাগাড়ে কথাগুলো বলে হাটা ধরল মিজা বাড়ির দিকে!রাইমা হতবাক!প্রথমত সে অবাক তীব্র এতো কথা বলল আদোও!!!তার ওপর রিদির উপর কিসব দোষ চাপালো! আশ্চর্য!!রাইমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিদির জন্য দোয়া করল!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৫

তীব্র তাকে শারিরীক মানসিক সব দিক থেকেই পোড়াবে!আবার মলম ও সেই হবে!তবে রিদির কোন ক্ষতি হতে দিবে না!যা করার সে করবে মারবে,আদর করবে,ক্ষত করবে,মলম লাগাবে কিন্তু অন্য কারো দ্বারা কখনো ক্ষতি হতে দিবে না!
রাইমা কথাগুলো ভেবে এগিয়ে গেল ঘুরতে থাকা হেলিকপ্টার এর দিকে।এই হেলিকপ্টার এ করেই তীব্র তাকে যত দ্রুত সম্ভব এই গ্রামে নিয়ে এসেছে।কেন??কারন তার বৌ জ্বরে কাহিল হয়ে ঙ্গান হারিয়েছে।রাইমাকে এক প্রকার তুলে নিয়ে এসেছে বৌয়ের চিকিৎসার জন্য।দু বছরের ছেলেকে রেখে এসেছে সে।যদিও সময় বেশি হয় নি!

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮