আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩৩

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩৩
ইশিকা ইসলাম ইশা

গাড়ি চলছে আপন গতিতে।পেছনে রিদি,দাদি আর রিয়া বসেছে। যদিও দাদি রিদির সামনে বসা নিয়ে জোড়াজুড়ি করেছিল তবে তীব্র কৌশলে দাদিকে সামনে বসাতে নিষেধ করেছে। কেউ বিষয়টা খেয়াল না করলেও রিদির চোখে পড়েছে।লতিফা বেগমের হঠাৎ এমন পরিবর্তন আগেই খেয়াল করেছিল।তবে আজকের বিষয়টি নজরে পড়ায় সন্দেহ প্রখর হলো রিদির।তবে কি দাদি কিছু জানে মজনুর ব্যাপারে?নাকি তার ভাবনা ভুল!
মনসুর আলীর বিশাল এরিয়া জুড়ে গ্রামিন পরিবেশে করা বাড়িটি অনেক সুন্দর। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে করাই বাড়িটি বেশ নজরকারা।বড় একটা গেট দিয়ে গাড়ি ঢুকতেই প্রথমে নজরে এলো বড় বাগান।পুরো বাগান সুন্দর করে সাজানো। চারদিকে জ্বলছে জোনাকির মতো আলো।সামনে বড় স্টেজ।সেখানে ব্লু কম্বিনেশন তৈরি করা মাহিরের জন্মদিনের স্টেজ। চারদিকে লোক সমাগমে ভর্তি।কালো সুট পরিহিত লোকজন কোনায় কোনায় দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো বডিগার্ড!

রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্র তুরি মেরে বলল,
এই যে ম্যাম!!
রিদি মজনুর ডাকে হচকচিয়ে তাকাল আশেপাশে,
একি গাড়িতে সে একাই বসে আছে।সবাই কোথায়??
বলেই তাড়াহুড়ো করে নামতেই জামায় বেঁধে পড়তে নিলে মজনু একহাত রিদির পেট জরিয়ে ধরে বলে,
আস্তে নামেন!আমি আপনাকে খেয়ে ফেলছি না।
রিদি নেমে ঝামটা মেরে তীব্রর হাত সরিয়ে রেগে বলল,
একদম আমাকে ছুঁবেন না!!
তীব্র দুষ্টু হেসে একটু ঝুঁকে এলো রিদির উপর,
তাহলে কাকে ছুবো??
রিদি রেগে কিছু বলতে চেয়েও আশেপাশে তাকিয়ে অনেক মানুষ আশেপাশে তাই রাগী চোখে চেয়ে সোজা হাটল দাদিদের দিকে।তার মতে মজনু কে কিছু বলা আর দেওয়ালে নিজের কপাল চাপড়ানো একই ব্যাপার। বেকার আরকি!
এদিকে তীব্র রিদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে বিরবির করে বলল,
“হায়ে বৌ!!কি অবস্থা করেছেন গো আমার! আপনার তাপে পুড়ছে তীব্র চৌধুরী !!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদিতা স্টেজের কাছে আসতেই মাহির ছুটে এসে জরিয়ে ধরলো রিদিকে।কালো সুট পরিহিত মাহিরকে দেখে অবাক হল রিদিতা বেশ লাগছে দেখতে।মাহির রিদিকে দেখে বলল,
ওয়াও!!ইউ আর লুকিং ভেরি প্রিট্রি!!
রিদিতা মুচকি হেসে বলল ,
তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে!!
মাহির রিদিতার গালে চুমু দিয়ে বলল,
ইউ আর ভেরি সুইট!!তোমার চুল কি বড় গো!!
রিদি অবাক হয়ে ফিক করে হেসে উঠলো।এর মাঝেই কোথা থেকে ছুটে এলো মণিকা উরফে মণি!রিদি ছেলেটাকে আদর করছে দেখে মায়ের হাত ছেড়ে ছুটে এসেছে সে!রিদি হাঁটু গেড়ে বসে ছিল মনি হঠাৎ ছুটে এসে জরিয়ে ধরায় হচকচিয়ে তাকাল মণির দিকে!মণি তীব্র রাগে মাহিরকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
দুত্তু তেলে!!এতা আমাল মামনি!টুমি তুমু দিলে তেন?

মাহির আচমকা ধাক্কা খেয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকালো।সাদা গাউন পড়া পিচ্চি মেয়েটার দিকে,
এই পুচকি মেয়ে?সাহস তো কম না আমাকে ধাক্কা দাও!তুমি জানো আমি কে??
মাহরিব খান মাহির!!আর এটা আমার জান বাঁচানো প্রিয় আন্টি হয়।আমি চুমু দিব তাতে তোমার কি??
টুমি দুত্তু তেলে!!পতা টুমি!!এতা আমাল মামনি!আমি তুমু দিব!!
না না!!আমি চুমু দিব!
আমি দিব!টুমি দুত্তু পতা!!বলেই কেঁদে দিল।
রিদি হতবাক হয়ে দুইজনের টানাটানি দেখছিল।মণির কান্না দেখে ঝটপট কোলে তুলে আদর করে বলল,
কাঁদে না মামনি!!আমি তো তোমার মামনি জান!! কাঁদে না!!
মাহির মণির কান্না দেখে বলল,

বুঝলে মিষ্টি মেয়ে!এই পঁচা মেয়েটা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে মামলা জিতে যাবে!!
রিদি মাহিরের কথায় অবাক হল।ছেলেটা বয়সের তুলনায় বড় বড় কথা বলে।”মামলা জিতে যাবে”।নিশ্চয় এটা মামার থেকে রপ্ত করেছে।রিদি ভেবে মুচকি হাসল।
মাহির মণির দিকে তাকিয়ে বড়দের মতো করে বলল,
থাক থাক আর কাঁদা লাগবে না!তোমাকে চকলেট দিব নি!আমি এখুনি মামুর থেকে নিয়ে আসছি!!
বলেই মাহির ছুটল কোথাও।রিদি মুচকি হেসে মণিকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক হাঁটতে লাগল!!মণি রিদির গালে নিজের ছোট ছোট দু হাত দিয়ে ধরে বলছে,
টুমি আমাল মামনি!টুমি আমাল মামনি!
রিদি মণির গালে চুমু দিয়ে বলল,
হ্যাঁ মা আমি তোমার মামনি!

এদিকে দূর থেকে এদের কান্ড দেখে তীব্র আফসোস করে বলে,
সবাই আমার বৌ নিয়েই টানাটানি লাগায় কেন??
মির অবাক হয়ে বলল,
কে আবার টানছে ওকে??
তীব্র ভু কুঁচকে বললে,
ওকে??????
মির জোর পূর্বক হেসে বলল,
এমনে তাকাস কেন?ভাবি লাগে তো!!
তীব্র মিরের থেকে চোখ সরিয়ে রিদির দিকে তাকালো। হাঁটু ছুই ছুই লম্বা চুল গুলো বাতাসে দুলছে দেখে তীব্র বিরক্ত হল। আশেপাশে একবার নজর বুলিয়ে বিরক্ত রাগে রুপান্তরিত হল।কারন প্রায় অনেকেই রিদির দিকে তাকিয়ে আছে।আজকে মেয়েটাকে লাগছেও অসম্ভব সুন্দর!
লাইট অফ করে দে গার্ডেন এরিয়ার!!
মির হচকচিয়ে বলল,
কি???কেন??
তীব্র শীতল দৃষ্টিতে আশেপাশে সবটা দেখে বলল,
ডু ইট ফাস্ট!!!
মির তীব্রর কথায় কাউকে কল করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে লাইট অফ হয়ে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার না হলেও বেশ অন্ধকার হয়ে গেল পুরো জায়গাটা। সাথে সাথেই হৈচৈ পড়ে গেল। সবার একই কথা কি হয়েছে কি হয়েছে??
কয়েক মিনিট পর সবার হৈচৈ থামল টুংটাং গিটারের শব্দে। চারদিকে তখনো অন্ধকার হয়ে আছে কিন্তু ভেসে এলো কারো কন্ঠস্বর,

“””””নাম জানি না তোর,
আর রাত জানিনা ভোর
মন যায় রে চলে যায়,
প্রেম যানিয়ে।
হাল মেলাবি আয়,
দিনকাল মেলাবি আয়
মন ফিরবে নারে আজ,
তোকে না নিয়ে।
তোর এক কথায় আমি রাখবো হাজার বাজি
তোর ইশারায় আমি মরে যেতেও রাজি
তোর এক কথায় আমি রাখবো হাজার বাজি
তোর ইশারায় আমি মরে যেতেও রাজি
কিছুটা সায় নিয়ে যা তুই,
আলো আমায় দিয়ে যা তুই
পারিনা থাকতে একা আর,
কোনো উপায় দিয়ে যা তুই..
তোর এক কথায় আমি রাখবো হাজার বাজি
তোর ইশারায় আমি মরে যেতেও রাজি।
জানাশোনা নেই অজান্তেই এসেছে অন্য কে
আমাকে মনের অরণ্যের ঠিকানা চিনতে দে ..
জানাশোনা নেই অজান্তেই এসেছে অন্য কে
আমাকে মনের অরণ্যের ঠিকানা চিনতে দে
আর কি বোঝাবো বল,
বলছে ফুলের দল, তুই আমারি
আর কি কারণ চাস,
বলছে বন্ধু বাতাস, তুই আমারি..
তোর এক কথায় আমি রাখবো হাজার বাজি
তোর ইশারায় আমি মরে যেতেও রাজি।
বাড়াবাড়ি মন জ্বালাতন করছে যখনি
আমি কোনো আর চেষ্টার সীমানা রাখিনি
বাড়াবাড়ি মন জ্বালাতন করছে যখনি
আমি কোনো আর চেষ্টার সীমানা রাখিনি
আর কি বোঝাবো বল,
বলছে ফুলের দল, তুই আমারি
আর কি কারণ চাস,
বলছে বন্ধু বাতাস, তুই আমারি..
তোর এক কথায় আমি রাখবো হাজার বাজি
তোর ইশারায় আমি মরে যেতেও রাজি””””

গান শেষ হতেই ভেসে এলো করতালির শব্দ। সাথে অচেনা ব্যাক্তি কে সেটা নিয়ে তুমুল কথাপকথন। আবার কেউ কেউ তো বলছে,”ওয়ানস মোর”,”ওয়ানস মোর”!
রিদি নিজেও উঁকিঝুঁকি দিল।গানের গলা আসলেও মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর! তবে ব্যাক্তি টি কে? জানার আগ্রহ থেকেই উঁকিঝুঁকি দিতেই হঠাৎ কারো গরম নিঃশ্বাস গলার কাছটায় বারি খেতেই রিদি চমকে উঠল। তখনি ফিসফিস করে কেউ বলল,

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩২

“”আর কি বোঝাবো বল,
বলছে ফুলের দল, তুই আমারি
আর কি কারণ চাস,
বলছে বন্ধু বাতাস, তুই আমারি..”””
আপনি আমারি জান। আমার। একান্তই আমার!!
রিদি চট করে পিছনে ঘুরেই বলল,
আপনি??
মজনু হেসে বলল,
অন্য কাউকে আশা করেছিলেন বুঝি??
রিদি কিছু বলার আগেই চারদিকে লাইট জ্বলে উঠলো।রিদি লাইটের দিকে তাকিয়ে সামনে তাকাতেই চমকে উঠলো।মজনু নেই সামনে।রিদি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিল।

আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩৪