আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩৫
ইশিকা ইসলাম ইশা
সকালে দরজায় কড়া ঘাড় এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল রিদির।কাল সারারাত ঘুম হয়নি।ভয়,মজনুর সত্যি, অস্থিরতা,তীব্রর নির্মম ব্যবহার, নিজের অসহায়ত্ব সব মিলিয়ে কাল অনেক মানসিক চাপে গেছে রিদির।রিদির কাছে এখনো মজনু বেশে তীব্রর আগমন স্পষ্ট নয়।তারপর সেই মৃত্যুর নির্মম দৃশ্য,খন্ডিত শরীরের টুকরা। রক্তাক্ত চারপাশ!!রিদির কাছে আশেপাশের সবটাই ভয়ংকর লাগছে!!রিদি আলগোছে উঠে দরজা খুলতেই নজরে এলো রিয়া কে,
কি রে সেই কখন থেকে ডাকছি!!
আসলে আপু!!!
কি হয়ছে?? চোখ মুখ এতো ফোলা কেন তোর???
না মানে ঐ একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম তাইই ভয় পেয়েছিলাম!!কি দরকার কিছু বলবে!!
রিয়া রিদিকে সেভাবে পরখ না করে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল,
হ্যা!!কাল পার্টিতে ফোন তোর ব্যাগে ছিল আমি এতো ঝামেলায় নিয়ে যেতে ভুলে গেছি!
ওহহ!!!আমি দিচ্ছি!!!
কাল রাতে একটু ও ঘুম হয়নি!!মেয়েটা রাতে খুব জ্বালাতন করছে।
কি??কেন??
মণির কাল হুট করেই জ্বর এসেছে।বার বার বলছে আম্মু রক্ত!! আম্মু রক্ত!!তোর মতো ওর ও রক্তে ফোবিয়া আছে বুঝলি। কিন্তু আমি এটা বুঝলাম না ও রক্ত কোথায় পেল !!
রিদি চমকে উঠল,
তীব্র…
কি?? বুঝলাম না।
না মানে ছোট মানুষ হয়তো কিছু দেখেছে!!
কি জানি!দে ফোনটা দে!মনির কাল কল করে পাইনি!পরে আব্বার ফোনে কল করেছিল। মেয়ের জ্বর শুনে আমাকে বকাবকি করছে এখন মেয়ের সাথে কথা বলিয়ে দিতে হবে।
রিয়া একদমে কথা গুলো বলে ফোন হাতে বেরিয়ে যেতেই রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কালকে কি কোন ভাবে তীব্র কে খুন করতে দেখেছে মনি। বাচ্চা মেয়েটা আজ তীব্রর কারনে অসুস্থ।রিদির হুট করেই রাগ হলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অহংকারী,রাগি,জেদি, একঘেয়ে,ত্যাড়ামির চুড়ান্ত সব মানা যাই তবে খুনি!!রিদির তীব্রর প্রতি হুট করেই রাগটা আরো প্রখর হলো। আপাতত তার তীব্র চৌধুরীকে ভয় লাগছে না।আগের রিদিতার মতো তীব্র কে দেখলে ভয়ে কাঁপাকাপি করা বিষয়টা যেন হাওয়া হয়েছে তার মন থেকে।কেন?কি কারণে এটা জানা নেই রিদির কিন্তু সে জানে তীব্র কে দেখে এখন আর ভয়ে ঙ্গান সে হারাবে না।কাল সেই ভয়ংকর দৃশ্য দেখে আর তীব্রর সত্য জানার পরেও রিদি ঙ্গান হারায় নি।যদিও নিজের এমন পরিবর্তন এর কারন রিদির জানা নেই।আর না জানার চেষ্টায় আছে সে। আপাতত তার চেষ্টা তীব্র চৌধুরীর সাথে দেখা করা। এখানে আসার কারন কি আর উদ্দেশ্যই বা কি?কি চাইছে উনি!!
সকাল থেকে এখন তপ্ত দুপুর।দিন এগিয়ে যাবার সাথে সাথে গরমের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।এই তপ্ত গরমেও গায়ে কম্বল দিয়ে মনিকে জরিয়ে ধরে বসে আছে রিদি।মেয়েটার জ্বর কিছুটা কমলেও পুরাপুরি সারে নি।এখনো শীত শীত করছে।রিদির বুকের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা।এদিকে রিদিতা ঘামে ভিজে উঠছে।তাই মনিকে শুইয়ে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালো। দৃষ্টি তার মজনু উরফে তীব্রর সেই কুড়োঘরের দিকে।এখনো ফিরে নি সে।রিদি বুঝল না তীব্র এখন কোথায় আছে?শহরে নাকি চৌধুরী বাড়িতে!
তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।রিদি রেগেই গিয়ে পৌছাল বাগানের কুড়োঘরটাই। আজ সারাদিন তীব্র বাসায় আসে নি। কিন্তু সন্ধ্যায় রিদি বেলকনিতে থেকে তীব্রকে বাগানের কুটিরে ডুকতে দেখেই রেগে সোজা নিচে নেমে হাঁটতে থাকে বাগানের কুড়োঘরের উদ্দেশ্য।চাপানো দরজা খুলে রুমে ঢুকে রিদি।তীব্রর পড়নে তখন কাবলি সেট।সবেই মাথায় দেওয়া পাগরি খুলে রেখেছে রিদিকে হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকতে দেখে অবাক হয়ে বলল,
বৌ আপনি?এতো তাড়াহুড়ো করার কি দরকার!আমি আছি তো!যাই নি!
রিদি রাগে হিসহিসিয়ে বললো,
নাটক আর কতোই করবেন?কি উদ্দেশ্যে আপনার??কি কারনে এখানে ছদ্মবেশে এসেছেন মজনু মিয়া বলব নাকি তীব্র চৌধুরী!
তীব্র বৌয়ের এমন ভয়হীন রাগী তেজি রুপ দেখে আয়েশ করে বসল বিছানায়।ভালো লাগছে বৌয়ের এমন ভয়হীন ব্যবহার।যদিও তার কাঁপা কাঁপা বৌ বেশি পছন্দ তবে ভয়হীন বৌ ও চলবে। তীব্র চৌধুরীর বৌয়ের মধ্যে ভয় শোভা পায় না।
তীব্র কে এমন আয়েশী ভঙ্গিতে বসতে দেখে রিদি চেতে উঠল,
কি করতে চাইছেন কি আপনি??কাল আপনার জন্য ছোট্ট মেয়েটার জ্বর এসেছে।রক্ত দেখেছে ও । রক্তে ফোবিয়া আছে বাচ্চাটার।
তীব্র ভু কুঁচকে বলল,
তো!আমি বলেছি দেখতে?
রিদি চরম রেগে বলল,
একটা বাচ্চার প্রতি ও আপনার মায়া হয় না।আজ যদি বড় কিছু হয়ে যেত!
তীব্র ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
হলে হতো!!!
রিদি তীব্রর এমন ভাবলেশহীন আচরনে রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
আপনি একটা হাটলেস।নিজের বাচ্চা যখন হবে তখন কি করবেন?
রিদি রেগে কথাগুলো বলে থামতেই তীব্র চট করে উঠে অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,
আমাদের বাবু!!কবে হবে?? চলুন বৌ মেয়েকে নিয়ে আসার প্রসেস শুরু করি!!
সিরিয়ার মূহূর্তে তীব্রর এমন কথায় রিদি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকালো তীব্রর দিকে ।সে তো ভাবল আজ তীব্র তাকে দু চারটে চর অনায়াসে দিবে। তবুও সে সাহস করে আজ তীব্রর সাথে যুদ্ধে নেমেছে।যাই হোক তীব্রর উদ্দেশ্য কি জানতে হবে। তাছাড়া মনিকার জ্বরের জন্য রিদি তীব্র কে দায়ী করছে।
তবে তীব্রর কথায় রিদি অবাক হল!!হওয়ার ই কথা কারন যেখানে তাদের বিয়েটাই একটা শর্ত।সেখানে তীব্র তাকে ডিভোর্স দিয়ে চাই সেই শুরু থেকে।তবে এখন এমন বিশেষ কি হয়েছে!!যে তীব্র তাকে চাইছে।মাঝে মাঝে তীব্রর বাহ্যিক রুপ তার ধারনা চুরমার করে দেয়।এই যে তীব্র চৌধুরী!!এই কুটিরে বর্তমানে থাকছে! একটাও একটা আশ্চর্য বিষয়।এমন পোশাক পড়ে ঘুরছে এটাও আশ্চর্য বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা সে রিদির ভালোর জন্য এসব করছে,রিদির জন্য এখানে এসেছে এটাই কঠিন আশ্চর্যের বিষয়।
এদিকে তীব্র রিদিকে এমন ভাবনায় দেখে মুচকি হাসল।যদিও হাসিটা দাড়ি মুচের আড়ালেই রইল।
বৌ আপনি কি ভাবছেন??বাসর এমন কুড়োঘরে!! করলে মন্দ হয় না!!কতো জনে কতো জায়গায় করছে! আমরা না হয় কুড়োঘরেই সেরে ফেলি……
তীব্রর লাগামহীন কথায় রিদির গাল গরম হয়ে গেল লজ্জায়।তবে লজ্জা পেলেও সেটা আড়ালে রেখে তপ্ত গলায় বলল,
লজ্জা আছে নাকি বিক্রি করে দিয়েছেন??
তীব্র আবারো ভাবলেশহীন তবে সম্মোহোনের মতো নেশাক্ত কন্ঠে বলল,
ছিলই না কখনো!!
রিদি তীব্রর হঠাৎ টোন পরিবর্তনে হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।তীব্রর দৃষ্টি তার দিকেই স্থির!চোখে অদ্ভুত এক নেশা।রিদি তীব্রর হঠাৎ পরিবর্তনে কিছুটা ভরকে গেল। তবুও নিজেকে শক্ত করে আবারো রেগে বলল,
সমস্যা কি আপনার? এখানে এসেছেন কেন?তাও এই বেশে!!
তীব্র চুপচাপ রিদির রাগি চেহেরা দেখছে আপাতত রিদির এমন তেজি লুকে সে ফিদাহ।যদিও তার চাহনি সম্পন্ন আলাদা। ঠিক নেশাগ্রস্তদের মতো।
রিদি এবার রেগে চিৎকার করে বলল,
কি চাইছেন আপনি??
বাইট!!
কিহ???
I want to bite your neck.it’s looking yummy. May I ???
মে আই??মানে কি?মে আই মানে পারমিশন নেওয়া। কিন্তু তীব্র!!তার পারমিশন নেওয়ার ধৈর্য কুলাল না।ঝরের গতিতে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল রিদির কোমল দেহখানা।কোন কথা ছাড়াই মুখ ডোবালো রিদির গলার ভাঁজে।
রিদির হুস ফিরল গলায় চিনচিনে ব্যাথার চোটে। এতক্ষণ সে হতবাক হয়েই মূর্তির মত দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু কামড়ের ফলে ব্যাথা হওয়াই নিজেকে সামলাতে ঘামচে ধরল তীব্রর পেছনের পাঞ্জাবির কাপড়। মৃদু আর্তনাদ করতেই তীব্র কামড় দেওয়া জায়গায় ছোট ছোট চুমু দিল।রিদি ছটফট করতে লাগলো ছাড়া পাওয়ার জন্য। তীব্র রিদিকে ছেড়ে আবারো আয়েশ করে বসল বিছানায়। ভাবখানা এমন যেন সে কিছুই করেনি।ইনোসেন্ট একটা বাচ্চা।
রিদি এখনো সেইভাবেই দাঁড়িয়ে আছে গলায় হাত দিয়ে। তীব্র কে আয়েশী ভঙ্গিতে বসতে দেখে রেগে তেড়ে আসতেই হোঁচট খেয়ে পড়ল তীব্রর গায়ে। তীব্র দু হাতে রিদিকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে হেসে বলল,
আমার বুকে আসতে চাইলে এভাবে আসার দরকার নেই জান!বললেই আমি আপনাকে আমার বুকে জরিয়ে ধরবো ।
আপনাকে……..
এই এই কে আছো ভিতরে!!!
পোলা আর ম্যাইয়ার কথা হুনা যাইতাছে! এইহানে কেডাই থাকে রে আলিশা!!
কেউ বাইর হয় না কেন??এই কেডা ভিতরে!!
রিদি বাইরের সবার আওয়াজ শুনে ভয়ে তীব্রর পাঞ্জাবি খামচে ধরলো।সে কি ভুলে গেছিল এটা তাদের গ্রাম। এখানে ছেলে মেয়ে কে একঘরে পাওয়া মানে…..রিদির শরীর কেঁপে উঠলো!! ভয়ে, টেনশনে অস্থির হয়ে উঠল। তীব্র বাইরের আওয়াজ আর রিদির এমন অস্থিরতা দেখে বলল,
রিল্যাক্স আমি দেখছি!
রিদি তীব্রর বাহু খামচে ধরে বলল,
না না! খুলবেন না!ওরা আমাদের একসাথে দেখলে বদনাম রটাবে!!
স্বামী স্ত্রী কে একসাথে দেখলে সমস্যা কোথায়??
রিদি রাগান্বিত হয়ে বলল,
আপনি আমার স্বামী নন।
হুট করেই তীব্রর মেজাজ খারাপ হল।রাগে খিচে খিচে বলল,
অস্বিকার করছিস??
রিদির জেদি কন্ঠস্বর,
হ্যাঁ করছি!!
তীব্র হুট করেই বললো,
তাহলে তো স্বীকার করাতেই হচ্ছে!!স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত হ!!!
বলেই রিদিকে ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দিতেই হুরমুর করে প্রবেশ করে দুইজন মুরব্বি।রিদি আর মজনু কে একসাথে দেখে চেঁচিয়ে উঠলো,
কই গো সব…আহো আহো দেইখা যাও…
চেয়ারম্যান এর ম্যাইয়া এই চাকরের লগে ফষ্টিনষ্টি করছে।
তীব্র প্রস্তুতি নিয়েই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৩৪
চাচা ঘরে তো জায়গা কম বাইরে চলুন। তাহলে সবাই দেখতে পাবে!!বলেই মুরব্বি কে তোয়াক্কা না করে রিদির হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসতে আসতে বিরবির করে বলল,
মরনের পাখা গজিয়েছে এদের বাল!!আর আমি মারলেই দোষ!!ছ্যা…..