আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪৭
ইশিকা ইসলাম ইশা
গাড়ি চলছে ঝরের গতিতে।তীব্র বাইকের কাঁচে একপলক দেখে আগের স্পিড এবাইক চালাতে লাগল।
ওরা আপনাকে মারতে চাইছে কেন?কি করেছেন আপনি??
রিদির কথায় তীব্রর সহজ উওর,
অনেক কিছুই তো করেছি!হিসাব করিনি!! মাফিয়াদের পদে পদে শত্রু!!
মাফিয়া??মানে আপনি??
তীব্র স্পিড বাড়িয়ে বলল,
তাই তো মনে হয়!!
রিদি ভেবে পেল না এরপর আর কি বলা যায়। একজীবনে আজ সে কত কিছুই দেখল।যা তার ধারনার বাইরে।
তীব্রর টিশার্টের মধ্যে থাকাই রিদির ধারনা নাই বাইক চলছে না উড়ছে।তবে হুট করেই বাইক থামায় রিদি ভয়ে ঘামচে ধরল তীব্রর পিঠ। উন্মুক্ত বুকে নাক মুখ দাবিতে দিল।তীব্র রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
বৌ!!!!
হু……
চিন্তা নাই এখন আমরা সেফ আছি।রিদি ফট করে বলল,
তাহলে আমি বের হব??
রিদি তীব্রর বুকে থেকে বের হতে চাওয়াই তীব্র বিরক্ত হয়ে বলল,
কেন?তোকে বের হতে হবে কেন?
রিদি তীব্রর বিরক্ত তোয়াক্কা না করে বলল,
ছাড়ুন আমাকে!
না ছাড়লে কি করবি?? হুম?
আমাকে এভাবে বেঁধে না রেখে ছাড়ুন।আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।কি এক মাফিয়া হয়েছেন!কপাল চুইয়ে এখনো রক্ত বের হচ্ছে।ব্যাথা করে না নাকি!!!
ওষুধ খেয়েছি তাই ব্যাথা করছে না।
ওষুধ কখন খেলেন??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আপনি না খাওয়ালেন জান!এই ওষুধ কিন্তু আপনি ছাড়া কেউ খাওয়াতে পারত না।
রিদি আহাম্মক এর মতো তাকালো তীব্রর দিকে।সে কখন খাওয়ালো ওষুধ??তবে তীব্রর হাসি দেখে বুঝতে বাকি রইল না সে কোন ওষুধের কথা বলছে।
রিদি এবার আর লজ্জা পেল না। আপাতত তার চিন্তা তীব্রর রক্তাক্ত কপালের দিকে।
খুলুন ওরনা…..
তীব্র অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
আমি মেয়েদের ওরনা পড়ি!!!যে খুলব!
রিদি বিরক্ত হয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।সে জানে এই লোক ত্যারামির চুড়ান্ত।
আরে ওরনা দিয়ে যে বেঁধে রেখেছেন সেটা খুলুন!
দরকার নেই। এভাবেই থাকেন।
এই আপনি খুলবেন কি না!!
তীব্র রিদির দিকে চেয়ে ওরনা খুলতেই রিদি তীব্রর টিশার্টের ভেতর থেকে বেরিয়ে এবার নামতে চাইলে বাঁধল আরেক বিপত্তি এভাবে বসায় নড়াচড়া করতেই রিদির অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে না পেরে বলল,
একটু আমাকে নামান প্লিজ।
তীব্র সোজাসুজি উওর,
পারব না।
রিদি তীব্রর কথায় কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিন….. আপনার কপাল চুইয়ে রক্ত পড়ছে তো…..
তীব্র রিদির কাঁদো কাঁদো মুখের দিকে চেয়ে আর না করতে পারল না তাই কোমরের দু’পাশে ধরে চেড়ে একপাশে নামিয়ে দিল।রিদি নিজের খুলে যাওয়া চুলগুলো খোপা করতে করতে বলল,
আপনিও নামুন!!
তীব্র ত্যারামি না করে বৌয়ের কথা শুনল ।নেমে আসতেই তীব্র বলল,
কি করবেন আপনি??
রিদি বিরবির করে বলল,
মেরামত করব!!বলেই তীব্রর হাতে থাকা নিজের ওরনাটা নিয়ে ছিড়ে দু ভাগ করল। তীব্র শুধু দেখছে রিদিকে।ওরনা না থাকার কারনে গলায় রাতের দেওয়া দাগগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে এক রাতেই যেন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বৌটার। তীব্রর ঠৌটে তখন বাঁকা হাসি বিদ্যামান।তীব্রর এভাবে দেখার মাঝেই রিদি তীব্র কে নিচু করে কপালে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে অপর টুকরা দিয়ে এহাতে তীব্রর চুলগুলো ধরে অন্যহাতে পেঁচিয়ে ব্যান্ডেজ এর মতো বেঁধে দিল।বাধা শেষ হতেই রিদি ঠোঁট ছোঁয়াল ব্যান্ডেজর উপর।তীব্র এতোক্ষণ ভদ্র বাচ্চার মতো চুপচাপ ছিল।কপালে রিদির আলতো স্পর্শ করতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।মনে মনে বিরবির করল,
“আমার সুখপাখি ”
রিদি তীব্রর দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনের।রিদি তীব্রর এমন চাহনিতে ঘায়েল হলো।ঐ নীলাভ বর্ণের চোখজোড়া বরাবরই রিদিকে টানে। তবে চোখজোড়া এই মুহূর্তে খুবই শান্ত আর নির্মল দেখালো।তীব্রর পুরো দৃষ্টিতে রিদিতে আবদ্ধ বিশেষ করে ঠোঁটের দিকে।রিদি তীব্রর দৃষ্টিতে থতমত খেয়ে বেশিক্ষণ তাকালো না তীব্রর ঐ চোখজোড়ায় এভাবে তাকালে মনে হয় যেন সে ঘোরে চলে যায়।রিদি চোখ নামিয়ে বিরবির করল,
“””দৃষ্টিতে যেন সে রাজপুতিন…
খুন হয়ে যায় আমি প্রতিদিন “”
তীব্র রিদিকে বিরবির করতে দেখে মৃদু হেঁসে বলল। চক্কর কি বেগমজান??
রিদি তীব্রর দিকে একধ্যানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল এলোমোলো চুলে ব্যান্ডেজ এর মতো ওরনা পেঁচানো তীব্র কে।আনমনেই গুনগুন করে উঠল গুনগুন,
“””””রুক্ষ এলোমেলো চুলগুলোয়,
মনটা চাই যেনো,হাত বুলোয়,
দু’হাতে আদর করি,মুখটাকে,
হৃদয়ে বেঁধে রাখি সুখটাকে………””””””
(গানের অংশ)
রিদির গুনগুন শেষ হওয়ার আগেই তীব্র রিদিকে টেনে কোমর পেঁচিয়ে ধরে বলল,
এই বৌ ……চুল,মন, হাত,আদর,মুখ সব আছে চাইলে বাঁধতে পারেন।আমি মাইন্ড করব না।
রিদি তীব্রর কথায় আনমনেই দুহাতে আগলে ধরল তীব্রর মুখটা। চোখে জঙ্গলের সেই দৃশ্য ভাসতেই কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।আজ যদি তীব্রর কিছু হয়ে যেত!ভাবতেই বুকের মাঝে তীব্র হাহাকারে ছেয়ে গেল।দম আটকে আসতে চাইলো।মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। তীব্র রিদির এমন আকস্মিক পরিবর্তনে কিঞ্চিৎ চিন্তিত মুখে বলল,
এই বৌ!!এই জান!আ………..
এই বৌ…এই কথাটুকুতে কি এমন আছে কি এমন প্রশান্তি আছে রিদি চট করেই ঝাঁপিয়ে পড়ল তীব্রর বুকে। তীব্র রিদিকে আগলে নিতেই ঝরের গতিতে পরপর কয়েকটা গাড়ি এসে থামল।গাড়ির শব্দে রিদি ঘামচে ধরল তীব্রর পেছনের শার্ট।তীব্র একপলক গাড়ির দিকে তাকিয়ে রিদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
গাড়িতে আমার জ্যাকেট আছে নিয়ে আয়!!!
তীর কিছু বলার আগেই তীব্রর কথায় একবার তীব্র তো একবার রিদিকে দেখে জ্যাকেট এনে দিতেই তীব্র সেটা রিদির শরীরে জরিয়ে দিল।তীর চিন্তিত মুখে বলল,
রিদিতা ঠিক আছে??
তীব্র তীরের কথায় ভূ কুঁচকে বলল,
ভাবি থেকে রিদিতা!!!
তীর রক্ত মাখা শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে ক্যাবলা হেসে বলল,
ভাবি ডাকার জন্য তোর বৌ গুনে গুনে ১০ বছরের ছোট।
তীব্র সেসব তোয়াক্কা না করে বলল,
১০০বছরের ছোট হলেও ভাবি মিনস ভাবি!!
তীর ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
সালা মির জাফর ইকবাল হোসেন উদ্দিন রহমান আনামিয়া স্যারের চ্যালা যে আমি!সালা আমার বৌ কে শুধু বিয়ে টা করতে দে তখন আমিও দেখব!!!
তীব্র তীরের কথা এবারো তোয়াক্কা না করে বলল,
শার্ট চেঞ্জ করে আয়। ও ভয় পাবে…….
তীর তীব্রর কথা এবার কোন কথা ছাড়া মেনে নিল।একে তো রিদির কথা ভেবে তারউপর পুরো শাট রক্তে লাল হয়ে আছে। রক্ত অবশ্য তার না তীব্রর শত্রু পক্ষের বাম হাত মানে এরিক জ্যাংশন এর ।ইরিক জ্যাংশন এর ছোট ভাই এরিক জ্যাংশন।ইরিক জ্যাংশন হচ্ছে মাফিয়া ওয়ার্ল্ড এ তীব্রর শত্রু পক্ষ।যার প্রতিনিয়ত একটাই চেষ্টা তীব্র কে শেষ করা। তবে গত ৫ বছরে এটা শুধু তার চেষ্টায় মাত্র।কখনো তীব্র পর্যন্ত পৌছাতে পারে নি।আজ ও পারত না যদি রিদিতা তীব্রর সাথে থাকত।বৌ ছিল বিধায় তীব্র কে মারার কথা বাস্তবে ভাববার সুযোগ হয়েছে নয়তো তীব্র সেই সুযোগ ই কখনো দিত না।
তীর চেঞ্জ করে আসতেই দেখল মির চলে এসেছে।মির লাশটা কাফিনে করে জ্যাংশন মহলে পাঠিয়ে দিয়েছে।যদিও মেরেছে তীর কিন্তু পৌছে দিয়ে এসেছে মির।এসব খুন টুন খুব কমই করে তীর।তীব্রর মতো ঠান্ডা মাথায় খুন যদিও তার দ্বারা সম্ভব নয় তবুও আজ কাজটা সেই ই করেছে। এবং ভালোভাবেই করেছে।
তীর আসতেই দেখল তীব্র রিদিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়েছে। মির ড্রাইভিং সিট এ বসা।তবে তীব্র কে গাড়িতে বসতে না দেখে বলল,
তুই আবার কোথায় যাবি?
একটু নেশা চেপেছে!!
তীব্রর কথায় তীর আহাম্মক এর মতো শুধায়,
কিসের নেশা!!
তীব্র বাইকে উঠতে উঠতে বলল,
বৌয়ের পর বাইকের নেশাটা!!
তীর তীব্রর বাইকের নেশার কথা শুনে একদৌড়ে গিয়ে মিরের গাড়িতে বসেছে।পিছে রিদিতা বসে আছে।আর এদের কান্ড দেখছে।তীর কে দৌড়ে আসতছ দেখে রিদি অবাক হয়ে বলল,
কি হয়ছে ভাইয়া?আপনি এভাবে আসলেন কেন?আর ওনি…….
তীর কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
বিশ্বাস করেন ভাবি…আপনার মতো এতো সাহস আমার নাই। তীব্রর সাথে বাইকে উঠার। আমার একটা ভবিষ্যতে তো আছে নাকি বলেন!! আপনারও তো ইচ্ছে হয় আমার বিয়ে দিয়ে টুকটুকে লাল একটা বৌ আনার।
রিদি তীরের কথায় পুরোদমে হতবাক হয়ে বলল,
বাইকে উঠতে কি সাহস লাগে ভাইয়া……
তীর অসহায় মুখ করে বলল,
তীব্রর সাথে বাইকে উঠতে সাহস লাগে ভাবি!!এই বেডা গাড়ি চালায় না উড়ায়!বাইকে বসে নিজেকে পাইলট দাবি করে বাইক উড়ায়!
রিদি তখনো ব্যাপারটা বুঝতে পারে নি।কোই সে তো তীব্রর সাথেই বাইকে এলো।রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্র হেলমেট পরে বাইক চালু করল। ইতিমধ্যে গাড়ি ও চালু হয়েছে। কিন্তু তীব্র বাইক চালু করতেই যেন মিস্টার ইন্ডিয়ার মতো হাওয়ার বেগে ছুটে চলল।রিদি এবার নিজেই আহাম্মক হয়ে গেল।কয়েক সেকেন্ডে তীব্রর বাইক আর দেখা যাচ্ছে না।যদিও গাড়িও বেশ স্পিড এ চলছে।
দেখছেন! দেখছেন ভাবি!!বাইক কেমনে উড়ায়……
মানে আমাকে…….
আপনাকে নিয়েও এমন স্পিড এ চালিয়ে এসেছে!!
রিদি হচকচিয়ে গেল,
এমন স্পিড এ চালালো অথচ সে জানেই না।জানবেই কি করে!!বুকের মাঝেই তো ঘাপটি মেরে ছিল সে তাও টি শার্টের ভেতর!রিদি এসব ভাবনার মাঝেই তীব্রর বাইক পেছন থেকে ছুটে এসে থামল গাড়ির সামনে।রিদি হচকচিয়ে গেল।এই না সামনে দিয়ে গেল এইটুকু সময়ে পেছনে দিয়ে কিভাবে এলো। কানাডার রাস্তা কি ছোট নাকি!!রিদির ভাবনার মাঝেই তীব্র গাড়ির কাছে এসে বলল,
তোরা বাইকে আয়।আমি বৌয়ের সাথে যাব।
মির বিরক্তিকর ভঙ্গিতে নেমে এলো তীব্র কে বলা আর না বলা সমান।ও বলেছে যাবে মানে যাবে।
মির নামলেও তীর চুপচাপ বসে আছে দেখে তীব্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
নাম!!
তীর একটু ত্যারামি করে বলল,
দেখ ভাই আমি একটা খুন করে ভীষণ ক্লান্ত!তোর মতো এতো এনার্জি নাই আমার আমাকে সাথে নিয়ে চল।
তীব্র বিরক্ত হয়ে তীর কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল।তীরের ত্যারামি সে জানে।এখন উল্টাপাল্টা কথা বলে তার মাথা খাবে এটা নিশ্চিত হতেই সে নামিয়ে দিয়েছে।
তীর ও কম কিসে ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,
দেখলেন ভাবি আমাকে কিভাবে আবর্জনা ভেবে নামিয়ে দিল!
রিদি তীব্রর কান্ডে সত্যি অবাক।এই লোক এমন কেন??
আপনি ভাইয়াদের গাড়ি থেকে বের করলেন কেন?আমরা একসাথেই তো যেতে পারতাম!
তীব্র তিরিক্ষি মেজাজে বলল,
আমি একসাথে যাব না।
কেন?
সেটা আপনি কিছুক্ষণে জেনে যাবেন।
এখন জানলে কি সমস্যা?
তীর ও তীব্র কে জালাতে রিদির সঙ্গ দিয়ে বলল,
হ্যাঁ হ্যাঁ বল বল কি সমস্যা!!তোর বাইকের নেশা শেষ!!বাইকে যাবি বলে গেলি না কেন?বল…..
তীব্র চরম বিরক্তি নিয়ে বিরবির করল,
বৌয়ের নেশা কাটে না তো বাইক!!
কি হলো বল বল???
তীব্র তীরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিরের উদ্দেশ্য বলল,
মির বাইক চালু কর।তীর আসবে না। রাস্তায় থাকার প্ল্যান আছে ওর।
তীব্রর কথায় তীর চট করেই দৌড় দিল বাইরের পেছনে কারন তীব্রর বলতে দেরি মিরের গাড়ি চালু করতে দেরি হলো না।তীর বাইকের পেছনে ছুটতে ছুটতে বলল,
এই সালা মির জাফর ইকবাল স্যারের নাতি থাম।
তীব্র ডোর খুলে রিদিকে নামতে বলে চট করেই তোলে তুলে নিল।কোলে নিয়েই গাড়িতে বসে গাড়ি স্টাট দিতেই রিদি বলল,
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪৬
এসব কি?কোলে নিচ্ছেন কেন?
“”হুস বৌ!কথা বলে না জান!নাউ আই ওয়ান্ট টু টেস্ট ইউ “”