আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫০
ইশিকা ইসলাম ইশা
থমথমে পরিবেশ চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগের হইচই এখন থেমে তৈরি হয়েছে থমথমে শান্ত পরিবেশ।
তীব্রর ছুড়ে মারা ফুলদানি গিয়ে সুইচবোডে আঘাত লেগেছে।যার ফলে লাইট বন্ধ হয়ে গেছে গত মিনিট পাঁচেক হবে।এই অন্ধকার ঘরে সবাই টেনশন করলেও মায়ের বুকে একদম শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে রাইমার ছেলে।যদিও তীব্রর ভাঙ্গা ফুলদানির আওয়াজ শুনে কিছুটা কেপে উঠেছিল তবে ঘুম ভেঙ্গে যায় নি।এতেই রাইমা অন্ধকারেও ছেলেকে বুকে চেপে ধরে আছে।
নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া ভয়ে, আতঙ্কে,চমকে, হতভম্ব হয়ে সবাই ৫ মিনিট চুপ থাকলেও এবার মুখ খুলে তীর।কিছুটা মিনমিন করে বলল,
আমি দেখে আসছি কেউ জায়গা থেকে নড়িস না নয়তো পড়ে……
বলতে বলতেই নিজেই ঠাস করে সোফার সাথে বারি খেয়ে পড়ল রুপের উপর।রুপ ভয়ে চেঁচিয়ে উঠার আগেই তীর মুখ চেপে ধরলো। মসৃণ পেটের উপর থেকে হাত সরিয়ে তরিৎ গতিতে উঠে ফিসফিস করে বলল,
সরি!!
রুপ ভয় পেলেও তীরের কন্ঠ শুনে স্বাভাবিক হয়ে বসতেই চারদিকে লাইট জ্বলে উঠলো।মির লাইট জ্বালিয়ে বলল,
তোরা সবাই ঠিই আছিস??
একি তীব্র কোথায়??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তীরের কথায় সবাই তীব্রর বসা জায়গায় দেখল তীব্র নেই সেখানে। কিন্তু তার জায়গায় রিদি বসে আছে। চুপচাপ একদম স্তব্ধ হয়ে।রাইমা রিদির অভিব্যক্তি বুঝে কাছে এসে বলল,
রিদিতা তুমি তো জানো তীব্র কেমন?সরি বোন আ….
রিদি হচকচিয়ে বলল,
কোনো সমস্যা নেই আপু আপনি বসুন আমি সবার জন্য চা করে আনছি।বলেই ছুটল রান্না ঘরের দিকে।সবার আড়ালে রান্না ঘরে ঢুকে একহাত বুকের পাশে রেখে শুকনো ঢোক গিলল।
এদিকে সবাই মন খারাপ করে বসে পড়ল সোফায়। সবাই জানে তীব্রর রাগ কেমন?তাই সবাই ই কিছুটা হতাশ হলো।তীর মনটা খারাপ করে বললো,
আমি কি আজ বেশি বলে ফেলেছি? পিচ্চি ভাবির উপর তো তীব্র রেগে গেল।এইতো ওদের মধ্যে সব ঠিক হলো।
রাইমা উদাস গলায় বলল,
হুট করেই এই বান্দা রেগে যায় কেন আমি বুঝি না। আচ্ছা রিদি কি তীব্র কে ভুল বুঝলো। মানে ঐ কিডন্যাপ এর ঘটনা থেকে। কিন্তু তীব্র তো আমাদের ভালোর জন্যই কিডন্যাপ করেছিল।
রিদি এর মধ্যে সবার জন্য চা নিয়ে আসে।একে একে সবাইকে চা দিতেই সবাই চোখমুখ কুঁচকে ফেলে চা খেয়ে।মির চা টা কোনমতে গিলে ফেললো তীর মুখ থেকে চা ফেলে বললো,
ভাবি এটা কোন ইস্টালের চা?মানে চিনির জায়গায় লবন!!
রিদি হচকচিয়ে চা মুখে দিতেই সোজা দৌড় দিল ওয়াসরুমে। জঘন্য চা হয়েছে।এই প্রথম মনে হয় এতো জঘন্য চা বানিয়েছে।রিদি কুলি করে আয়নায় নিজেকে দেখল। বিশেষ করে ঠোঁটের দিকে। সেখানটায় হালকা ফুলে আছে।গরম চা ঠোঁটে লাগায় আরো খানিকটা লাল হয়ে গেছে।রিদি ঠোঁটের কোনে হাত ছোঁয়াতেই মনে পড়ল কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,
তীব্র ই সেই গুন্ডা এটা শুনে রিদি তাজ্জব বনে গেছিল।মানে তীব্র ই সেই যে তাকে মারতে চেয়েছিল।কিডন্যাপ করেছিল নাফু কে।রিদির এসব ভাবনার মাঝেই তীব্রর ডাকে চমকে উঠলো।গম্ভীর মুখে রিদিকে ডাকায় যেন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।তবে ধীর পায়ে এগুতেই রিদি সামনে তীর কে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলেও পরক্ষণেই তা আতঙ্কে রুপ নিয়েছে যখন তীব্র ফুলদানি তুলে দেওয়ালে আছার মেরেছে। এমনিতেই ভয়ে কাঁপছিল তীব্রর ভাংচুর এ আরো কেঁপে উঠলো। আবার চারদিকে অন্ধকার হতেই রিদি আরো একদফা কেঁপে উঠল।শিরশির করে উঠলো পুরো শরীর। ঠোঁট জোড়ার মাঝে পুরে আছে কারো ঠোঁট।
অবাধ্য হাতের বিচরন চলছে পেট জুড়ে।রিদি আচমকা ভর ছেড়ে দিল। অসহ্য রকমের অনূভুতিতে ছেয়ে আছে পুরো শরীরে।তীব্রর অবাধ্য হাতের বিচরনে নিজেকে ধরে রাখা কঠিন হতেই ভর ছেড়েছে। তীব্র দুহাতে ছোট্ট দেহখানা আকরে ধরে নিজের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।তীরের কথায় রিদির হুস ফিরতেই নিজেকে ছাড়াতে চাইলে তীব্র ধীরে রিদিকে সোফায় বসিয়ে দেয়।রিদি তখনো শকড্ হয়ে আছে।এমন সিচুয়েশনে তীব্রর এমন কান্ড সত্যি অভাবনীয় ছিল।সে কি ভেবেছিল আর কি হলো।সে তো ভেবেছিল আজ হয়তো তীব্র তাকে পঁচা গুন্ডা বলায় বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিবে।
এরপর!!!এরপর তীব্র রিদিকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে কানের কাছে নেশাক্ত গলায় বলেছিল,
“I can do anything for this boujan”
মানে তীব্র ইচ্ছা করেই ফুলদানি দেওয়ালে আছার মেরেছে যেন সুইচবোডে আঘাত করে লাইট বন্ধ করতে পারে।এতো নিখুঁত নিশানা কিভাবে সম্ভব!!
রিদি তুমি ঠিক আছো??
রাইমার ডাকে রিদি হচকচিয়ে ভাবনা থেকে বের হয়ে বলল,
জি আপু!
একি!!তোমার ঠোঁট এভাবে লাল হলো কিভাবে?
রিদি আচমকা এমনে প্রশ্নে ঘাবরে গিয়ে বলল,
আসলে আপু!আমি আসলে গরম চা মুখে নিতে গিয়ে ঠোঁট এ লেগছে।
রাইমা রিদির দিকে চেয়ে রইল খানিকক্ষণ।এরপর বলল,
ঠিক আছে বুঝেছি।যাও রুমে গিয়ে……
রিদি রাইমার কথায় তাৎক্ষণিক বলল,
না না রুমে যাব না……
রাইমা রিদির কথায় বুঝতে পারে বেচারি অনেক ভয় পেয়েছে তীব্রর কান্ডে তাই বোঝানোর সুরে বলল,
দেখো রিদি তুমি তীবুর কাজে রাগ করো না।আসলে তুমি তো জানো না কেন তীবু নাফিসাকে তখন কিডন্যাপ করতে গেছিল।
রিদি এবার লজ্জাটা গিলে প্রশ্ন করল,
কেন??
রাইমা একে একে সবটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
জানো রিদি! সেদিন যদি তীব্র না থাকত।আমি বা নাফিস কখনোই সুখের সংসার করতে পারতাম না।নাফিসের মতো বন্ধুর মতো স্বামী।নাফিসার মত বোনের মতো একটা ননদ।মায়ের মতো একটা মা।এতো ভালোবাসা।একটা পরিপূর্ণ সংসার,আমার ক্যারিয়ার।সব কিছুই তীব্রর ঐ কিডন্যাপ থেকেই হয়েছিল।নয়তো আমার বাবার ক্ষমতার কাছে নাফিস বা আমার কারো কিছু করার ছিল না।হয়তো আজ আমাদের সুখের সংসার হতো না।এতো দিন বেঁচে থাকতাম কি না!
রিদি সব শুনে অবাক হলেও পরক্ষনেই স্বস্তি বোধ করছে। তীব্র ঠিক কেমন তা ধারনাই আনা কঠিন। মূলত তীব্রর একেক রুপ তার কাছে অদ্ভুত লাগে।
রাইমা আবারো বলল,
জানো রিদি আমরা তখন কলেজে পড়ি।তখন তীব্র আমি ব্যাতিত কোন মেয়ের সাথে কথা বলত না দেখে সবাই মনে করত আমি ওর জিএফ।তাই সবাই এটা ওটা কাজের জন্য আমাকে খুব পটাতো। আমিও যখন পটে গিয়ে তীবু কে কিছু বলতাম তখন সে বলত,
পটে এসেছিস নাকি না পটে!!
আমি,তীবু,মির,তীর একটা ভালো বন্ডিং এর জন্য পুরো কলেজে আমাদের বন্ধুত্ব চর্চায় থাকত।এর পর ভার্সিটি!তারপর তীব্র চলে গেল দেশের বাইরে।তীর ও তীব্রর সাথে মির ল নিয়ে ভর্তি হলো।আমাদের অবশ্য প্রায় কথা হতো।
জানো তোমার জ্বরের সময় ও আমাকে কি হুমকি ধামকি দিয়ে এনেছিল??
রিদি অবাক হয়ে বলল,
জ্বর??হূমকি??
রাইমা সবটা বলতেই রিদি আরো অবাক হলো।আনমনেই চোঁখের পানি এসে ভীর জমালো।লোকটা কি তাকে সত্যিই এতোটা ভালোবাসে।এতোটা ভালাবাসা যায়!!
রাইমা রিদির চোখের পানি দেখে বলল,
কাঁদছো কেন রিদি?
আমাকে এতোটা ভালবাসা যায় আপু??
রাইমা রিদির অভিব্যক্তি বুঝতে পেরে বলল মুচকি হেসে বলল,
তোমাকে ভালোবাসা যায় না বলছো!তবে তীব্র কাউকে কখনো এতোটা ভালোবাসতে পারে এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য!জানো নিজে চোখে না দেখল কখনো বিশ্বাস করতাম না তীব্রও কাউকে ভালোবাসতে পারে। অসম্ভব রকম ভালবাসে ও তোমায়।
তোমায় অনেকেই ভালোবাসে রিদি। হয়তো তোমাকে ধরা,ছোয়ার উপায় নেই তবে তারাও চাই তুমি ভালো থাকো।কথাটা মনে মনে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মিরের জন্য তার খারাপ লাগলেও সে জানে মির ঠিক নিজের জীবনটা গুছিয়ে নিবে।কারন তীব্র আর মিরের অনেক বৈশিষ্ট্য এক হলেও তীব্র বেপরোয়া আর মির গুছালো।এক জীবনে সবটা কি আর ভাগ্যে থাকে।এই শ্যামাপাখিটা হয়তো জানেই না সে তীব্র ব্যাতিতও কারো মনে কি গভীর ভাবেই গেঁথে আছে।
সময়টা তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত বাজে ৮ টার কাছাকাছি।তীব্রর খোলা ছাদের সুইমিংপুল সাইডে বসে আছে সবাই।সবাই বলতে তীব্র আর মির বাদে।মির আর তীব্র বেরিয়েছে কিছু কাজে।তীর যেতে চাইলেও তীব্র সাথে নেয়নি।এতেই গাল ফুলিয়ে বসেছে।নাফিস তীরের মুড ভালো করতেই সবাই মিলে সুইমিং পুল সাইডে আড্ডা দিচ্ছে। এতে তীরের মুড এখন বেশ উন্নত হয়েছে।যদিও তীরের মুড খারাপ বেশিক্ষণ টেকসয় হয় না।রুপ,রিদি,রাইমা,নাফিস,তীর বসে গানের কলি খেলছে।তীরের কাকের গলা শুনে রিতীমতো দু দফা ঝরগা শেষ হয়েছে রাইমা আর তীরের।
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৪৯
আর বেচারা নাফিস দুইজনকে থামাতে গিয়ে ফেসেছে মাইনকার চিপায়।একজনের সাইড নিলে আর একজন গজে উঠছে।এদের দুইজনের মধ্যে বাকবিবেচনাই সময় যাচ্ছে চলে।রিদি নাফিসের অবস্থা দেখে মিটমিট হাসছে।সাথে রুপ হাসছে।কারন দুইজন বাচ্চাদের মতো ঝগরা করছে ভুল গান বলা আর তীরের কাকের গলা শুনে।রাইমা তো তীরের গলাকে ডোরেমন কার্টুনের জিয়ানের গলার সাথে তুলনা করে ফেলেছে।এতেই চলছে এদের পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধ।
এদের টম জেরির মতো ঝগরা থামে কারো গম্ভীর কন্ঠে।
এখানে কি হচ্ছে?হোয়াট দ্যা হেল ইজ গোয়িং অন??