আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫৫
ইশিকা ইসলাম ইশা
সময় তখন সকাল ১০ টার কাছাকাছি, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থেকে সরাসরি নূরজাহান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছে রিদি। তীর রিদি কে হসপিটালের সামনে নামাতেই লাবিব ছুটে এলো।সে মুলত রিদির আসার অপেক্ষায় করছিল।তীর লাবিব কে দেখে বলল,
ভাবীকে নিয়ে যা আমি একটু পরে আসছি!!
লাবিব মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই তীর গাড়ি নিয়ে ছুটল!
রিদি ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে লাবিবের সাথে উপরে গেল। করিডোর দিয়ে সোজা যেতেই দেখল অনেক মানুষ বসে আছে। চৌধুরী পরিবার ব্যাতীত আরো কিছু নতুন মুখ।রিদি চিনে না এদের।তবে রিদিকে দেখে সবার অবাক হওয়া চেহেরা গুলো রিদিকে অস্বস্তিতে ফেলল।ধীর পায়ে এগিয়ে এসে থামল নাজমা চৌধুরীর কাছে।
আম্মু কেমন আছে দাদি??
নাজমা চৌধুরী কিছুটা সময় চুপ থেকে বলল,
তোর অপেক্ষায় আছে!যা………
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল।বেডে নিথর হয়ে শুয়ে আছে তীরা চৌধুরী।গায়ে দেওয়া সাদা চাদর।দুহাতে চলছে রক্ত আর স্যালাইন। সুন্দরী মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। ঠোঁট জোড়া একদম শুকিয়ে আছে।রিদি গিয়ে তীরা চৌধুরীর পাশে বসে মৃদু স্বরে ডাকল,
আম্মু!!
তীরা চৌধুরী ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো রিদির দিকে।রিদিকে দেখেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল তার। ক্লান্ত আর ধীর কন্ঠে বলল,
আরো একবার আম্মু বলে ডাকবি মা!
রিদির চোখ টলমল করে উঠলো।সে বুঝতে পারছে তীরা চৌধুরী গুরুতরভাবে অসুস্থ। কিন্তু কি হয়ছে তা এখনো জানে না। কানাডা থাকাকালীন তীরার সাথেই বেশ কথা হতো তার!তীরা চৌধুরী নিজ থেকেই কল দিয়ে কথা বলত তার সাথে। সবচেয়ে বেশি কল তীরা চৌধুরীই করত তাকে। যদিও বা তীরা চৌধুরীর ব্যবহার দেখে সে প্রথম প্রথম বেশ অবাক হতো। তবে তীরা চৌধুরীর কথায় রিদি বেশ বুঝতে পারত তীরা চৌধুরী তীব্রর জন্য ব্যাথীত। যদিও রিদি কথায় কথায় অনেক বার তাঁদের মা ছেলের এই অদ্ভুত সম্পর্কের কথা জানতে চেয়েছে তবে তীরা চৌধুরী বার বার বলেছে সময় হলে তাকে সবটা জানাবে।তাই রিদিও আর জোর করে নি।তীরার মাতৃত্ব সুলভ আচরণেই সে ভীষণ খুশি ছিল।অনেক বছর পর মা মা ফিল পাচ্ছিল।
আম্মু!!!
তীরা চৌধুরী মুচকি হাসল। অসুস্থ অবস্থায় এই হাসিটাও যেন মলিন লাগল।
জানিস তো রিদিতা! সন্তান গর্ভে ধারণ করেও সেই সন্তানের মুখে মা ডাকটা না শোনা কতোটা দূরভাগ্য আমার।
রিদি ফ্যালফ্যাল করে তাকালো তীরার দিকে।তীরা রিদির ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা দেখে মৃদু হেঁসে বলল,
আজ তোকে সবটা বলব!তুই জানতে চাইতি না গর্ভে ধারণ করেও কেন তীব্র আমাকে মা বলে ডাকে না।
অতীত,
সময়টা ঠিক মনে নেই। ভার্সিটি লাইফ চলে তখন।বাবার খুব আদুরে, সুন্দরী আর ধনী হওয়ায় আমার মধ্যে আলাদা একটা ব্যাপার ছিল। মানে ঐ আরকি আজকাল বলে না ক্রাশ।বলতে পারিস ক্রাশ ছিলাম।কতশত যে প্রেমের প্রস্তাব আর বিয়ের প্রপোজাল পেয়েছি তা বলার বাইরে।বলেই হাসল তীরা।এরপর আবারো বলতে শুরু করল।
ছেলেদের পাত্তা না দেওয়া আমি আটকে গেলাম এক শান্ত গম্ভীর পুরুষের মায়াবী চোখজোড়ায়।নীলাভ বর্ণের চোখজোড়ায়।আমিরের প্রেমে। তীব্রর নিলাভ আর্কষনীয় চোখজোড়া তার বাবার মতো।আমির খুব পড়াকু টাইপ ছেলে ছিল। সারাদিন পড়ত না পাটি না নেশা না অন্যকিছু। আমার ঐ শান্ত স্নিগ্ধ,পড়াকু ছেলেটাকেই মনে ধরল।ঐ ছেলেটাকে লাগবে মানে লাগবেই। বলে একদিন প্রপোজ করলাম। কিন্তু সে আমাকে সরাসরি মানা করে দিল।
আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট না করাই আমার মাঝে এক জিদ চেপে বসল যে কোন মূল্যে আমার আমির কে চায়।এই জেদ ,আর ইগো ই আমাকে নিয়ে দাঁড় করালো এক কঠিন পর্যায়ে।আমির কে পেতে একদিন সুযোগ বুঝে তার ডিংস এ নেশার ওষুধ মিশিয়ে তার সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলাম।
পরের দিন সকালে অনেক মেলোড্রামা করলাম। আমির শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।তার চোখের দিকে যখন তাকিয়ে ছিলাম তার চোখ মুখে ছিল ব্যাথাতুর দৃষ্টি।আমির নিঃশব্দে আমাকে দেখে কিছুক্ষণ পর বলল,
চল বিয়ে করে ফেলি!!
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম।ভাবিনি আমির এতো তাড়াতাড়ি মেনে যাবে।আমি কিছু বলার আগেই আমির বলল,
তুমি রেডি হয়ে আসো আমরা এখুনি কাজি অফিসে যাব।
আমি সেদিন অবাক হয়ে বললাম,
তুমি সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি মেনে নিলে !কেন?
আমি জানি না এসব কিভাবে হলো। পার্টিতে আমি শুধু সফট ড্রিংকস নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের মাঝে যা হয়েছে তা অন্যায়ভাবে হয়েছে।আমি চায় না তুমি অপবিত্র হয়ে যাও।লোক সমাজ তোমাকে খারাপ বলুক।
সেদিন আমি ছিলাম নিস্তব্ধ।আমি অবাক হয়েছিলাম এমন পুরুষ দেখে। যেখানে আমি স্ব ইচ্ছায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে দু বার ভাবিনি আমার ইজ্জত এর কথা অথচ সে আমার ইজ্জত বাঁচাতে কোন কিছু যাচাই না করেই আমাকে বিয়ের কথা বলল।না চাইতেই এক অপরাধ বোধ কাজ করছিল আমার মাঝে।
সেদিনেই আমাদের বিয়ে হয়।দুই পরিবারে সবটা জানিয়ে দিই।বাবা আমাকে ভালোই চিনত সে জানে আমি কেমন জেদি।যা আমার চাই তা আমার চাই ই। সেদিন বাবা আমাকে কষিয়ে থাপ্পর মেরেছিলেন।হয়তো ভাবে নি এতোটা নিচে আমি নামব।বাবা সবসময় আমার পিছনে লোক লাগিয়ে রাখত। সেখানে থেকে তিনি জেনেছিলেন আমি ড্রিংস নেশার ওষুধ মিশিয়েছিলাম।ওনি বলেছিলেন,
তোমার ভাগ্যে ভালো তীরা আমির চৌধুরীর মতো একটা মানুষ পেয়েছ।হারিয়ে ফেলার মতো ভুল করো না।শুধরে নেও নিজেকে।নয়তো পরে কেঁদেও কুল পাবে না।অবশ্য ভুল আমারি বেশিই ছুট দিয়েছি তোমায়।বলেই তিনি চলে গেলেন।
এরপর আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ের মাস খানেক পর আমরা একটা বিয়ের দাওয়াত পায়।আমি যেতে ইচ্ছুক না হলেও সবার মন রাখতে গেলাম গ্রামে বিয়ে খেতে।সেদিন ছিল তিশার বিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ রফিক হাসনাত এর সাথে।তিশা ছিল তীব্রর দাদির বান্ধবীর মেয়ে।তীব্রর দাদির ইচ্ছে ছিল তিশাকে আমিরের বৌ করার।তবে তা প্রকাশ করার আগেই এতো কিছু ঘটে গেলো।
তিশা ছিল উজ্জল ফর্সা।ধবধবে আমাদের মতো না হলেও মায়াবি। শান্তশিষ্ট,মিষ্টি,ভদ্র মেয়ে। আমার তো গ্রামের পরিবেশ আর বিয়ে পুরাই তখন বিরক্ত লাগছিল।রুমে বসে ফোনে তখন ফ্রেন্ডসদের সাথে কথা বলছিলাম। হুট করেই হট্টগোল এর শব্দে বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে এলাম বাইরে। দেখলাম তিশার মা হাতে একটা লাঠি নিয়ে চেঁচামেচি করছে একটা মেয়েকে।মেয়েটার পড়নে আটপৌরে শাড়ি।বয়স বেশি না হবে ১৫-১৬।এতো ছোট মেয়েকে শাড়িতে দেখে আমি অবাক হলাম। এগিয়ে যেতেই দেখলাম শ্যামলা মায়াবী মুখখানা।মুখের কোনে ঝুলছে মিষ্টি হাসি।এতো বকাবকির পরেও মেয়েটা হাসছে দেখে বেশিই অবাক হলাম। ইতিমধ্যে ছুটে এলেন তীব্রর দাদি।তিশার মাকে শান্ত হতে বলে আগলে নিলেন মেয়েটাকে। মেয়েটা তীব্রর দাদিকে দেখে খুশি হয়ে বলল,
ভালো আন্টি কখন এলে তুমি??
তীব্রর দাদি বলল,
এসে থেকেই তো খুঁজছি তোকে। কোথায় টইটই করে বেড়াস?মায়ের এতো বকাঝকা খাস তবুও একটু ও শুধরাস না কেন?
তুমি আজ আসবে জানলে আমি আজ বাইরে যেতাম না।
তাই বুঝি!! দুষ্টু মেয়ে!!
মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠলো। তার হাসিতে যেন পুরো বাড়ি হেসে উঠল।একটু পর সবাই আবার স্বাভাবিক ভাবেই যার যার কাজে লেগে পড়ল।আমি অবাক হয়ে দেখলাম শুধু।হয়তো ব্যাপারটা নতুন না তাদের কাছে। আমার ভাবনার মাঝেই মেয়েটা ঝট করেই আমাকে জরিয়ে ধরল।আচমকা এমন হওয়াই ভরকে গেলাম আমি।
আল্লাহ গো ভাবি কি সুন্দর গো !!!ভালো আন্টি!!একদম পরির মতো!
তীব্রর দাদি মেয়েটার কথায় হেসে আমার উদ্দেশ্য করে বলল,
তীরা ও আমার বান্ধবীর ছোট মেয়ে দিয়া।
মনে মনে বিরক্ত হলেও মুখে হাসি টেনে সেখানে থেকে রুমে আসলাম।রুমে ঢুকে দেখি আমির বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছে জানালার বাইরে।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
এভাবে বাইরে কি দেখছ??
আমির চমকে উঠে বললো,
কিছু না।
বিরক্তকর গাইয়া পরিবেশ।বলা নেই কয়া নেই হুট করে এসেই জরিয়ে ধরলো। অসহ্য!!!
কে জরিয়ে ধরলো??
ময়লা একটা মেয়ে!ছি!!
দিয়া???
হবে হয়তো!!
কিছু মনে করো না ও একটু চঞ্চল তাই!
একটু চঞ্চল??পুরাই বিরক্তকর!!
আপনাতেই আমি সিজন ২ পর্ব ৫৪
দেখ তীরা বিয়ে বাড়িতে আছি মাএ দুদিন! চলে যাব বিয়েটা শেষ করেই।প্লিজ কোন সিন ক্রিয়েট করো না।
আমিরের কথায় আমি বিরক্ত হয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেলাম। সবার এতো ভালো মানুষি সহ্য হচ্ছিল না।রাগে দুঃখে ইচ্ছে করছিলি সব ভেঙ্গে ফেলতে।