আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২৬
তানহা ইসলাম বৈশাখী
ব্যাচেলার লাইফ নামের পাশে লাল বাতি জ্বলে গেছে অর্নবের। দুদিন পর তার নামের পাশে বিয়ের সবুজ বাতি জ্বলজ্বল করবে। কিন্তু সবুজ বাতিটা তার খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না। মাত্র তিনদিন আগে তার বাবা মা বিয়ের জন্য জোর করায় সে রাগের বসে বলে ফেলেছিলো তোমরা যাকে পছন্দ করো গলায় ঝুলিয়ে দাও। তার মা বাবা সত্যি সত্যিই গলায় ঝুলানোর জন্য তার বউ খুজে ফেলেছে।
অর্নব ভেবে পায় না মাত্র তিনদিনের মধ্যে কি করে বউ খোজা হলো যাকে এত পছন্দ হলো তার বাবা মায়ের। তবে তলের কলকব্জা যে অন্য কেউ একজন নাড়ছে সেটা ঠিকই বুঝতে পারছে অর্নব। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
আজ মেয়ে দেখতে যাবে তারা। তার বাবার কড়া আদেশ মেয়ে দেখতে যেতেই হবে তাকে। মেয়ের বাবাকে কথা দিয়েছে তারা যাবে। সাথে অর্নবের দুই বিয়াইত্তা বন্ধু প্রার্থ আর কার্তিকও যাবে। সাথে কার্তিকের নতুন বউ সুস্মিতাও থাকবে। এতে করে সে আরো নিশ্চিত হয়েছে যে এসবের কলকাঠি কে নাড়ছে? তিনদিনে বউ কি করে জোগাড় হয়েছে? প্রার্থ যে বলেছিলো ১ মাসের মধ্যে বিয়ে দিবে শালা সেটাই করতে চাচ্ছে।
অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে তাকে তৈরী হতে হচ্ছে মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য। মেয়ে দেখলেই কি বিয়ে তো আর হচ্ছে না। অর্নব বিয়ে করবেও না। নিজের কাছে নিজে পন করেছে ওর বন্ধু আর বাবা মায়ের পছন্দে সে বিয়ে করবে না।
অর্নবকে পাঞ্জাবী পরতে বলা হয়েছে অথচ সে সাধারন একটা শার্ট প্যান্ট পরে রেডি হয়ে নিয়েছে। তার মা তার জন্য যে পাঞ্জাবী রেখে গেছে বিছানায় সেটা সেভাবেই রয়েছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সূর্য এখন মাথার ঠিক উপরে। নিজের সর্বোচ্চ তেজ ঢেলে দিচ্ছে নৈসর্গে। দুপুর হয়তো ১২ টা বাজে। অর্নবের বড় গাড়ি এসে পৌছালি ধানমন্ডিতে। যে মেয়ে দেখতে এসেছে সে মেয়ের বাড়ি ধানমন্ডিতেই। তাদের গাড়ি মেয়ের বাড়ির সামনে আসতেই দেখা মিললো প্রার্থ আর কার্তিকের।
দুজন হ্যান্ডসাম ছেলে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রার্থর পরনে সাদা শার্ট। সামনের দুটো বোতাম খোলা। হাতাটা কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। চোখে আবার রোদচশমাও দিয়ে রেখেছে। কার্তিকও একই স্টাইলে এসেছে। আশ্চর্য জনক ব্যাপার অর্নবও ঠিক একই সাজে উপস্থিত হয়েছে। আকাশী রংয়ের শার্ট, কালো প্যান্ট সাথে কালো সানগ্লাস। এখানে যে বর কে কেউ ধরতেও পারবে না।
অর্নব গাড়ি থেকে নেমে ওদের কাছে গেলো। বাকি অর্নবের মা বাবা আর কাকা ভেতরে চলে গেছে। কার্তিক মিটিমিটি হাসছে অর্নবকে দেখে। প্রার্থ ভাবলেশহীন দাড়িয়ে। অর্নব ওদের কাছে গিয়ে প্রার্থর মেদহীন পেটে খোচা দিলো। পরপর রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।
“-শালা। আমি জানতাম এগুলো তুই করেছিস। কেন করছিস এগুলা ভাই? ক্ষ্যামা দে আমারে। আর কোনদিন প্রিন্সেসের দিকে তাকাবোও না। তাও বিয়ে নামক বাশ গলায় ঝুলাইস না দোস্ত প্লিজ।
প্রার্থর ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা গেলো। একহাতে অর্নবের কাঁধ জরিয়ে ধরলো। চশমাটা খুলে শার্টে ঝুলিয়ে দুষ্টু হেসে বললো।
“-কে বললো বিয়ে বাশ হয়। এই কার্তিক তুই তো বিয়ে করলি তোর কাছে বাশ মনে হয়েছে?
কার্তিক দুপাশে মাথা নেড়ে বললো
“-কখনোই না। উল্টো বিয়ে করার পর প্রেমের থেকেও বেশি ফ্যাসালিটি পাচ্ছি। বিয়েকে যে বাশ বলবে সে তো কাপুরুষ। পুরুষ হ অর্নব। আমাদের মতো সুপুরুষ হ। আর সুপুরুষ হতে গেলে তোকে বিয়ে করতেই হবে।
কার্তিকের কথায় প্রার্থ কার্তিক মজা পেলেও মজা পেলো না অর্নব। তার কাছে এগুলো সাজা মনে হচ্ছে। অর্নবের হুতুম পেঁচার মতো মুখটা দেখে প্রার্থ আবার বললো।
“-শোন, বিয়ে হচ্ছে অমৃত। আমাকেই দেখ। আমার বিয়ে নিয়ে আমার কত অভিযোগ ছিলো অথচ আজ সেই বিয়ের জন্য আল্লাহর কাছে বারবার শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। ফুলের সাথে বিয়ে না হলে এত সুন্দর অনুভুতিগুলো টের পেতাম কি করে বল। তোর জন্যেও আল্লাহ কাউকে না কাউকে ঠিক করে রেখেছে। তার সাথে একদিন না একদিন বিয়ে হবেই। ওই একদিনটা এখনই হোক।
অর্নব দীর্ঘশ্বাস ফেলে। প্রার্থ যে একবার পিছু লেগেছে আর ছাড়বে না। যা করতে চেয়েছে তাই করবে৷ কিন্তু আজকাল প্রার্থর বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করছে সে। কেমন হাস্যজ্জল হয়ে কথা বলে। আর আগের মতো অল্প কথাও বলে না। আগের থেকে একটু বেশি বলে। গম্ভীর্যতা আছে তবে আগের মতো ওতটা নেই। একটা নারী একটা ছেলের জীবন কতটা বদলাতে পারে! ভালোবাসা মানুষকে পরিবর্তন করতে সময় নেয় না। ভলোবেসেছো তো জীবন বদলে গেছে। জীবনের রং বদলে গেছে, স্বাদ বদলে গেছে নজরানা বদলে গেছে।
অর্নব তবে ভুল করেনি। প্রার্থকে পুষ্পর করে দিয়ে সে ভুল করেনি। সে জানতো প্রার্থ একবার মন দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। হলোও তাই। এবার সামনের পথচলায় ওরা সুখে থাকতে পারলেও অর্নবের শান্তি। একটু অন্যরকম শান্তি যেটা বোঝার ক্ষমতা অর্নবের ছাড়া আর কারো নেই।
অর্নবকে ভাবনায় বুদ হয়ে থাকতে দেখে কার্তিক খোচা দিলো। বললো।
“-কি ভাবছিস? ভেতরে চল। তোর হবু বউ দেখবি না? বউ কিন্তু তোর আমরা পছন্দ করে দিয়েছে। আমাদের পছন্দ তোর হান্ড্রেডে হান্ড্রেড পছন্দ হবে। ভাবি আমাদের জোসস।
কার্তিক ওর গলা জরিয়ে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেলো। প্রার্থ নিম্নোষ্ঠ চেপে ধরে তাকিয়ে রইলো। ওদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকেই হুট করেই নিঃশব্দে হেসে দিলো।
অর্নবরা আসার কিছুক্ষণ পর সুস্মিতা আর মেয়ের বড় বোন সুহায়মা নিয়ে এলো মেয়েকে।
পাত্রীকে দেখেই অর্নবের চোখ চড়কগাছে উঠে গেছে। হা হয়ে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। মেয়েটাও বোধহয় একই রকম বিস্ময়ে রয়েছে । কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
অর্নব তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবছে এ তো সেই মেয়েই যার সাথে অর্নের ধাক্কা লেগেছিলো কার্তিকের বিয়েতে। অর্নবের স্পষ্ট মনে আছে। তার মানে তার বাবা মা কি একটু বেশিই ভেবে নিয়েছে? নাকি সব তার ইচঁড়েপাকা বন্ধুদের কারসাজি?
অর্নব গরম চোখে তাকালো প্রার্থ আর কার্তিকের দিকে। কার্তিক এই ভ্রু উচু করে বোঝালো “-কি? পছন্দ হয়েছে তো?”
পছন্দ? মেয়েকে দেখে তার মাথার প্রতিটা নিউরন দপদপ করছে রাগে। যেখানে আবার পছন্দ আসে কোত্থেকে?
অর্নব চোখ দিয়েই ওদের গিলে খাচ্ছে যেন। প্রার্থ ভাবলেশহীন তাকিয়ে। তার ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা অদ্ভুত হাসি অর্নবের দৃষ্টিগোচর হলো না।
তার মধ্যেই অর্নবের মা ডাকলো মেয়েকে।
“-স্নেহা মা কেমন আছো। এদিকে এসে বসো। আমাকে মনে আছে তো? কার্তিকের বিয়ের সময় যে তোমার সাথে পরিচয় হলো। তোমাকে আমার তখন থেকেই পছন্দ।
স্নেহা মেয়েটা লজ্জা পেলো। কুশল বিনিময় করলো সবার সাথে। সুস্মিতা ওকে নিয়ে বসিয়ে দিলো সোফায়।
অর্নের মা আবার তাকে শুধিয়ে বললো।
“-কেমন আছো? আমাকে মনে আছে নিশ্চয়ই।
মেয়েটা রিনরিনে গলায় বললো।
“-জ্বি আন্টি মনে আছে।
“-যাক আমি ভাবলাম ভুলেই গেছো বুঝি।
অর্নবের বাবা আনোয়ার সাহেব স্নেহার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
“-বেয়াই সাহেব। আগেই বলে দেই আপনাদের মেয়েকে আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে। আমরা চাইছিলাম আপনার মেয়েকে খুব শীঘ্রই আমাদের ঘরে তুলতে।
স্নেহার বাবা অসুস্থ মানুষ। হার্টের পেশেন্ট তিনি। অলরেডি দুবার এ্যাটাক করে ফেলছে। কতদিন বাচবে সে নিজেও জানে না। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। মোহ ছোট মেয়ে। তাকে ভালো একটা ঘরে দিয়ে দিতে পারলেই তার শান্তি। রুগ্ন অসুস্থ লোকটা বললেন।
“-মেয়ে পছন্দ হলে অবশ্যই নিবেন ভাইসাব। আমি অসুস্থ মানুষ আর কতদিনই বা বাচবো। মেয়েটাকে সুখে রেখে যেতে পারলেই আমি সুখী। তবে তার উপর আমি কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবো না। সে যা চাইবে তাই হবে।
এরপরের কথাটা বললো প্রার্থ। বড়দের মতো করে সাফাই গাইলো বন্ধুর।
“-অবশ্যই আঙ্কেল। জীবন আপনার মেয়ের সে-ই সিদ্ধান্ত নিক। তবে বলে দেই আমার বন্ধুর মতো খাটি মানুষ আজকাল খুব সহজে পাওয়া যায় না। যে অন্যের জন্য নিজে ত্যাগ স্বিকার করে সে নিজের জন্য অনেক কিছুই করতে পারবে। আপনার মেয়ে কখনোই অসুখী হবে না তার সাথে। আপনারা খোজ করুন এবং ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
ছেলের বন্ধুর এমন কথায় বুক ফুলে উঠলো অর্নবের বাবার। কিন্তু বুক ফোলাতে পারলো না অর্নব। বন্ধু যে কেন তার এত প্রশংসা করছে সে-কি সে জানে না? অবশ্যই জানে। সব হচ্ছে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার ধান্দা। এমনিতেও প্রার্থ তার অনেক প্রশংসাই করে কিন্তু আজকেরটা অতিরঞ্জিত হয়ে গেলো না? আজ প্রশংসা না করলে কি হয় না?
অর্নব চোখ তুলে তাকালো স্নেহার দিকে। স্নেহা তার দিকেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো। দুজনের চোখাচোখিতে অপ্রস্তুত হয়ে পরে দুজনেই। অর্নব মাথা নুয়িকে ভাবে “-শেষ! এবার সব শেষ। মেয়ে যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে মনেহচ্ছে সে বিয়েতে রাজি। কি যে হবে কে জানে।
বিয়ে নিয়ে টুকটাক কথা চললো অনেকক্ষণ। সেখানে নিরব দর্শক হয়ে রইলো অর্নব।
তিনদিনে কি করে মেয়ে খুঁজলো এবার অর্নব বুঝতে পারছে। মেয়েটা কার্তিকের বিয়েতে এসেছিলো। সুস্মিতার বান্ধবী সুহায়মার বোন হয় স্নেহা। বোনের জেরেই বিয়ে বাড়িতে যাওয়া। সেখা অর্নবের সাথে ধাক্কা লেগে দেখা হয় অর্নবের মায়ের সাথে। আর অর্নবের মায়ের সাথে আলাপ পরিচিতা হওয়া দেখে নেয় প্রার্থ। দুদিনের ভেতর বাড়ির খবর ও মেয়ে সম্পর্কে জেনে নেয় সে। অর্নবের মায়ের সাথে ইনিয়েবিনিয়ে পরামর্শ করে তাদেরও হাত করে নেয়। আর অর্নবের মায়ের তো আগে থেকেই পছন্দ হয়েছে মেয়েকে। এরপর কার্তিক সুস্মিতা কে দিয়ে খবর পাঠায় বিয়ের। তাদের ফোন নাম্বার নিয়ে নিজেরাও কথা বলে নেয়। মেয়ের বাবা অসুস্থ বলে সেও রাজি হয় দেখতে আসা নিয়ে। এইত তিনদিনেই একেবারে টোপলা পুটলি বেধে বিয়ের আয়োজনে নেমে পড়েছে তারা। তার মধ্যে ফেসে গেছে বেচারা অর্নব।
রাতের আকাশের মধ্যমনিতে রূপোর থালার মতো চাদটা জ্বলজ্বল করছে। তবে শহুরে জনজীবনে তা বড়ই বেমানান লাগছে। কারন চাঁদের প্রতি আহামরি কারো খেয়াল নেই। যে যার মতো ব্যাস্ত। বাইরের রাস্তার কোলাহল ছাপিয়ে একফালি চাঁদের আলো বেশ করে উপভোগ করছে পুষ্প। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সে চাঁদ দেখতে ব্যাস্ত। চন্দ্রবিলাসের সাথে সাথে হালকা মিষ্টি বাতাসও উপভোগ করছে। বাতাসের সাথে বাগান থেকে ভেসে আসা বেলি ফুলের সুবাসেও মুখরিত হয়ে আছে জায়গাটা।
আজকাল তার খুব সুখ সুখ অনুভব হয়। সে তো সুখীই, সুখ অনুভব হবে না? তার প্রার্থ ভাই তাকে ভালোবাসে এর থেকে বড় সুখ আর কিসে আছে? রোজ সে-ই মানুষটা তার বুকের মাঝে শুয়ে থাকে। নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে রাখে তাকে। যেখানে পুষ্পর থাকার কথা প্রার্থর বুকে সেখানে প্রার্থ থাকে পুষ্পর বুকে লুকিয়ে। তার নাকি ওখানে থাকতেই ভালো লাগে। দিনশেষে ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে সেখানে থাকতেই সুখ পায়।
তিনদিন হলো প্রার্থ তার ভালোবাসা প্রকাশ করেছে। কিন্তু তার ব্যাবহারে মনেহয় না মাত্র তিনদিন আগে সে স্বিকার করেছে। পুষ্পর মনেহয় বহু বহু বছর ধরে তারা একে অপরের সাথে জুরে আছে।
সামান্য এলাচিকে নিয়েই তার কত জেলাসি ভাবলেই হাসি পায় আবার সুখও পায়। এত পাগলামো কি তার ভাগ্যে সত্যিই লেখা ছিলো?
ওই দুস্কর মানুষটা যে কখনো তার হবে ভাবলেই চোখে জল আসে। সে তো সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলো। পিছিয়ে গিয়েছিলো অনেকটা। কিন্তু মানুষটা আর পিছাতে দিলো কই। এক টানেই তাকে এনে ফেলেছে তার হৃদয়মাঝে। আটকে দিয়েছে পালিয়ে যাওয়ার সমস্ত পথ। ভালোবাসার ডোরে বেধে দিয়েছে তাকে।
মনে মনে এসব চিন্তা করেই চোখে পানি এলো পুষ্পর। ওষ্ঠে ফুটে উঠলো অমায়িক হাসি।
আচমকা পেছন থেকে এসে কেউ জরিয়ে ধরল তাকে। চমকে উঠলো পুষ্প। পরপরই বুঝতে পারলো এই ছোয়া কার। গায়ের গন্ধটাও যে খুব করে চেনা। যাকে নিয়ে এত ভাবাভাবি সে এসেই পরেছে। একহাত দিয়ে আলগোছে চোখের জল মুছলো। প্রশ্ন করলো মিহি স্বরে।
“-এসেছেন তবে। অপেক্ষা করছিলাম।
প্রার্থ দুহাতে পেছন থেকে তার কোমড় জরিয়ে রেখেছে। থুতনি নামিয়ে দিয়েছে পুষ্পর কাঁধে। সে মুখ তুলে পুষ্পর গলায় ছোট্ট চুমু খেয়ে বললো।
“-এখানে কেন? মাথা ব্যাথা করছে আবার?
পুষ্পর দুদিন যাবত হুটহাট মাথা ব্যাথা শুরু হয়। তবে আজ হচ্ছে না। সে সহাস্যে মাথা নাড়লো। একহাত উঠিয়ে প্রার্থর চাপদাড়ি ওয়ালা মুখে হাত রেখে বললো।
“- করছে না। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন ক্লান্ত হয়তো অনেক।
প্রার্থ আবারও পুষ্পর কাঁধে মুখ গুজে বললো।
“-উহুম। একটু আদর করতে দে।
পুষ্প লজ্জা পেলো। ছোট করে বললো।
“-আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনি ক্লান্ত। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগবে না।
প্রার্থ উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। বললো।
“-তুইও চল। এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। আমি চেঞ্জ করে আসি।
পুষ্পকে নিয়েই ঘরে গেলো। পুষ্পকে রেখে সে গেলো ফ্রেস হতে।
প্রার্থ রাতে খাবার খেয়েই এসেছে বাইরে থেকে। ফোন করে আগেই জানিয়ে দিয়েছে সে। এখন আর খাবে না। পুষ্প দেওয়াল ঘড়িতে তাকাতে দেখলো ১০ টা বেজে গেছে প্রায়। প্রার্থ নিশ্চয়ই নিচে বড় আম্মুর সাথে দেখা করে এসেছে। এখন তাহলে আর কোথাও যাবে না। হয়তো ল্যাপটপে কাজ করবে নয়তো শুয়ে পরবে।
পুষ্প সেই ভেবেই বিছানা গোছালো। কাজ শেষে আবারও গিয়ে দাঁড়ালো বেলকনিতে। একটু পরেই আবার প্রার্থ হাজির হলো সেথায়। পেছন থেকে পুষ্পর খোঁপা করা চুকগুলো খুলে দিলো এক টানে। খোলা চুলে সহজেই মুখ গুজে দিলো সে। পুষ্প ঘুরতে চাইলেও ঘুরতে দিলো না। শক্ত পুরুষালি হাতের বিচরণ চললো পুষ্পর উন্মুক্ত কোমড়ে।
পুষ্প শক্ত বনে যায় নিমিষেই। পুরুষালি চটা হাতের অবাধ স্পর্শেই থেতিয়ে আসছে শরীর। শিরশির করে উঠছে পায়ের পাতা। বেসামাল হয়ে পরেছে শ্বাসের গতি। সে কোনোমতে বললো।
“-কি করছেন ?
প্রার্থ পুরুষালি নিরেট কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো।
“-শিইইই!আদর করছি। আজ আটকাবি না। কথা দিয়েছিলাম তোর অনুমতি ছাড়া ছুবো না তোকে বাই কান্ট, আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ। ধৈর্যের বাধ মানছে না।
বেশরমের মতো কথাটুকু বলেই হুট করে পুষ্পকে কোলে তুলে নিলো সে। পুষ্প বিস্মিত, অবাক, হতবাগ। তার ধারনাতেও ছিলো না প্রার্থ আজ এমন করবে। গত তিনদিন যাবত গভীভাবে তাকে ছুঁয়ে দেখেনি প্রার্থ। সারাদিন পরিশ্রম করে এসে রাতে পুষ্পর বুকে সুখ খুজেছে। কিন্তু আজ যে সব পরিবর্তন হবে তা তার ধারনাতেও ছিলো না।
প্রার্থ আবারও পুষ্পর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
“-তোর অনুমতি পাওয়ার আশায় থাকলে বুড়ো হয়ে যাবো। আমার বাচ্চাকাচ্চারা এসে বলবে -বাবা আমাদের আগে কেন পৃথিবীতে আনলে না।”
তাদের দুনিয়ার তাড়াতাড়ি আনার জন্য আমাদের তো ব্যাবস্থা করতে হবে তাইনা?
পুষ্প লজ্জায় মুখ লুকালো প্রার্থ বুকে। হাত দিয়ে বুকে কিল মেরে বললো।
“-ছিঃ! অসভ্য!
“-এটাকে অসভ্য বললে পরে যেটা হবে সেটাকে কি বলবি?
পুষ্প মুখ লুকিয়েই ধমকে উঠলো।
“-চুপপ করুনন!
প্রার্থ বিছানায় নিয়ে শুয়িয়ে দিলো পুষ্পকে। তার উপর ঝুকে হাস্কি স্বরে বললো।
“-ফ্লাউয়ার, আর ইউ রেডি টু হ্যান্ডেল দ্যা ওয়ে আই ডিজায়ার ইউ?
পুষ্প কি বলবে সে জানে না। লজ্জায় তার জ্ঞান হারাবার জোগাড়। প্রার্থকে রেখেই সে কম্বল মুরি দিয়ে শুয়ে পড়েছে লজ্জায়। প্রার্থ হেসে উঠে গেলো বাতি নিভিয়ে দিতে। আবার পুষ্পর সামনে এসে জোর খাটিয়ে সরিয়ে দিলো কম্বল। পুষ্প চোখ বন্ধ করে আছে। প্রার্থ তার কপালে চুমু খেয়ে আবারও বললো।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২৫
“-দ্যা নাইট ইজ লং বাট আই প্রমিস আই উইল বি জেন্টেল।
পূর্নিমার এই ভরা চন্দ্রিমায় নতুন করে শুরু হলো দুটো তৃষ্ণার্থ মানব মানবীর মধুচন্দ্রিমা। চাদের নরম আলোয় নীরব নিশুতি সাক্ষী হলো দুটি আত্মার মিলনের, ভালোবাসার এক নিখুত প্রতিচ্ছবির। তাদের ভালোবাসা চিরায়ত হোক। আমরণ প্রেমতৃষ্ণায় আর ভুগতে না হোক কাউকে। প্রেমময় তিথির মতোই রঙিন হোক তাদের প্রতিটি দিন প্রতিটি ক্ষন।
তবুও প্রকৃতির কিছু নিয়ম আছে যে নিময় সবকিছু সবরকম হতে দেয় না।
