আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২৭

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২৭
তানহা ইসলাম বৈশাখী

রৌদ্রময়ী সকালের মিষ্টি আভাস। সূর্যের উজ্জল লালিমায় স্পষ্ট সবকিছু। ঘরে শীততাপনিয়ন্ত্রক যন্ত্রটির কারনে ভেতরের আবহাওয়াটা শীতল অনুভুত হচ্ছে। যেটা ঘুমকে আরো ভালো করে জাপটে ধরেছে। এরকম আবহাওয়ায় দুজন মানব মানবীর উষ্ণ আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হতে ইচ্ছে করছে না বোধহয়। এজন্যই ঘুমকাতুরে দুজন ঘুমিয়েই আছে।
বেলা গড়িয়ে গেছে অনেকটা। এবার না চাইতেও ঘুমটা হালকা হয়ে গেলো পুষ্পর। জানালার পর্দার ফাক গলিয়ে একফালি সূর্যরশ্মি এসে পড়েছে কক্ষে। যাতে করে রুমটায় স্পষ্ট সব দেখা যাচ্ছে।
পুষ্পর ঘুম পুরোপুরি উবে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যে। সে নিজেকে কিছুর মাঝে বন্দী অবস্থায় পেলো। চোখ পিটপিট করে সামনে তাকাতে দেখলো গম্ভীর পুরুষালি মুখটা। তবে এখন তাকে মোটেও তেমন জলদগম্ভীর মনে হচ্ছে না। এত আদুরে, মায়াবী চেহারার মানুষকে কি কখনো গম্ভীরতা মানায়? অথচ সাহেব বাবু সবসময় মুখে একটা চির গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এখন অবশ্য প্রেমে পরে তা একটু ঘুচেছে।
প্রেমের বাতাসে সে এখন উড়ে বেড়াচ্ছে।

পলকহীন কিছুক্ষণ ঘুমন্ত মায়াবী মানব টার দিকে তাকিয়ে আপন মনে হাসলো পুষ্প। হাত বাড়িতে তার নিখুঁত দাড়ি খচিত মুখটায় হাত রাখতে চাইলো। কিন্তু হাতটা আর উঠাতে পারলো না। প্রার্থর পুরুষালি বজ্রমুষ্ঠিতে বন্দি সে। শক্ত পেলব হাতদুটো দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে আছে তাকে। যেন এখান থেকে পালাবার কোন পথ নেই। রোজ তো প্রার্থই শুয়ে থাকে পুষ্পর বুকে। আজ সে নিজে পুষ্পকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমাচ্ছে। কি প্রশান্তির ঘুমটাই না দিচ্ছে।
পুষ্প কোনমতে হাতটাকে বের করে রাখলো প্রার্থর গালে। মুহুর্তেই মনে পরে গেলো কাল রাতের কথা।
লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে হাতটা সরিয়ে আনলো তৎক্ষনাৎ।
প্রার্থর শক্ত পোক্ত শরীরের মাঝে পুষ্প নেহাতই ছোট মানুষ। কোনমতেই বের হতে পারছে না শক্ত বাধন থেকে।
পুষ্পর নড়াচড়ার জন্য প্রার্থর ঘুম হালকা হয়ে এলো। ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে উঠলো।
“-উমম! কি হয়েছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পুষ্প থেমে যায়। চড়ুই পাখির মতো ছোট দেহটাকে প্রার্থ আরে ভালোভাবে এঁটে নিলো নিজের মাঝে। পুষ্প ছোট করে লজ্জা মাখা কন্ঠে বললো।
“-ছাড়ুন। বাইরে যাবো। অনেক বেলা হয়ে গেছে।
পরবর্তী ভেসে এলো প্রার্থর একইরকম স্বর।
“-রাতে তো ঘুমাতে পারিস নি এখন উঠতে হবে না শুয়ে থাক।
আবার কথা বলা বন্ধ করিয়ে দিলো। রাতের কথা এখন বলতে হবে কেন? এমনিতেই সে লজ্জায় লজ্জাবতীর ন্যায় চুপসে যাচ্ছে। তার উপর এসব কথা বলছে।
তাকে আরো লজ্জা দিতে প্রার্থ আবার বলে উঠলো।
“-বাই দ্যা ওয়ে, রাতের কথা মনে আছে তো? সুড আই রিমাইন্ড ইউ অফ লাস্ট নাইট?
“- ছিঃ! চুপ করুন।
পুষ্প যে কোথায় মুখ লুকাবে সেই জায়গাই খুজে পাচ্ছে না। পুরো জায়গা জুড়ে তো প্রার্থই। যার কাছ থেকে লুকানোর চেষ্টা তার ভেতরেই লুকাতে হবে এখন। মুখটা নিয়ে একেবারে প্রার্থর বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলো।
প্রার্থ বিগলিত হাসলো। দুষ্টুমি ভরা স্বরে আবারও বললো।

“-লজ্জা করছে নাকি?
“-ছাড়ুন আমাকে যেতে দিন।
প্রার্থ কন্ঠ ভারী করলো।
“-কোথাও যাওয়া হবে না।
“-প্লিজ। অনেক বেলা হয়েছে এবার যেতে দিন।
প্রার্থ হাতের বাধন খুলে দিলো তবে তাকে যেতে দিলো না। উল্টো পুষ্পকে পুতুলের ন্যায় দুহাতে ধরে উচু করে বালিসে শুয়িয়ে দিলো। অতঃপর নিজের শুয়ে পরলো তার উপর। মুখ গুজে দিলো পুষ্পর সুতনু গ্রীবায়। আগের থেকেও দ্বিগুন শক্ত করে জাপটে ধরলো তাকে।
পুষ্প অবাক। ছাড়তে বললে যেন আরো শক্ত করে ধরছে। ব্যাপারটা কি হলো? সে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে প্রায় নয়টা বেজে গেছে। বাড়ির রান্নাবান্না নাহয় রুবি খালা অহনা আন্টির সাথে করে নিবে তাই বলে কি সে এত বেলা পর্যন্ত শুধু শুয়েই থাকবে? নাহ!এবার উঠতেই হবে। পুষ্প প্রার্থর গায়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললো।

“-কি করছেন? একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখুন কয়টা বাজে। এভাবে ঘরে শুয়ে থাকলে বাকিরা কি ভাববে?
“-কি ভাববে? বিবাহিতরা নতুন নতুন একটু বেশি ঘুমায় এটা সবাই জানে।
“-কিন্তু আপনি তো ঘুমাচ্ছেন না। আমারও ঘুম ভেঙে গেছে ছাড়ুন।
“-উহুম! ঘুম না এলাম এখানে শান্তি পাওয়া যায়। হাত রাখ মাথায়।।
পুষ্প শুস্ক ঢোক গিললো। গলার মাঝে প্রার্থর মুখ থাকায় এমনিতেই সুরসুরি লাগছে তার উপর আবার জ্বলছেও খুব। গলায় হয়তো দাগ বসে গেছে। এখন নাকি আবার বাচ্চাদের মতো চুলে হাত রেখেও আদর করতে হবে।
প্রার্থ আবার বললো।
“-কি বলেছি?
পুষ্প তৎক্ষনাৎ হাত ডুবিয়ে দিলো প্রার্থর এলোমেলো চুলের মাঝে। সে হাল ছাড়া পাখির ন্যায় শান্ত হয়ে বললো।

“-এবার যেতে দিন। আর কতক্ষণ?
“-পুরো জনম।
“-পাগল হয়েছেন?
“-হুম। সব তোর জন্য।
“-আমি বলেছি পাগল হতে?
“-তুই করেছিস পাগল।
“-কি করে?
“-এইযে ভালোবেসে।
“-ভালোবাসা দিয়ে কাউকে পাগল করা যায়?
“-হুম। আমাকে করেছিস । তোর ভালোবাসায় পাগল হয়েছি, উন্মাদ হয়েছি, স্রোতহীন নদীর হয়েছি।

পুষ্পর হৃদয় থমকে যায়। ভেতরে কেমন যেন অনুভুতি সৃষ্টি হয়। এই লোকটা কবে যেন তাকে হার্ট এ্যাটাক করিয়ে মেরেই ফেলবে। মাঝে মাঝে এমন কথা বলে হৃৎপিণ্ড ধমকে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এতকথা জানে মানুষটা! অথচ পুষ্পর সব অজানা। নতুন করে জানছে, নতুন করে চিনছে তাকে। যত চিনছে তত গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। এত সুখ, এত আনন্দ হচ্ছে পুষ্পর। মনেহচ্ছে পৃথিবীর সবকিছু পাওয়া হয়ে গেছে। এরপর আর কিছু না পেলেও চলবে। এবার তো মরনেও কোন ভয় নেই।
এই সুখ এই আনন্দ কখন যেন লবনাক্ত তরলে পরিনত হয়ে গড়িয়ে পড়েছে গাল বেয়ে। সে তরল গিয়ে লেগে প্রার্থর গালে। সে বুঝতে পারলো তবু মুখ উঠালো না। একইভাবে গলায় মুখ গুজে রেখে বললো।
“-কাদছিস কেন?
পুষ্প নিজেকে ঠিক করে বিগলিত হেসে বলো।
“-সুখে।
“-কেমন সুখ?
“-আপনাকে পাওয়ার।
“-ওই সুখময় জলে যেন শুধু আমিই থাকি। ওই চোখের প্রতিটি অশ্রুতেও আমার অধিকার।
“-আমার সবেতেই তো আপনার অধিকার।
দুজনেই চুপ রইলো কিছুক্ষণ। প্রার্থ পরে রইলো তার শান্তিময় জায়গায়। পুষ্প পরম যত্নে চুলগুলো এলোমেলো করছিলো।
নিঃশব্দতার মাঝে পুষ্প হঠাৎ বলে উঠলো।

“-কতটা ভালোবাসেন?
“-হিসেব করিনি।
পুষ্প হাসলো। বললো।
“-এই কয়দিনে কাউকে হিসেব ছাড়া ভালোবাসা যায়?
প্রার্থ জবাব না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করলো।
“-প্রেমে পড়তে কতক্ষণ লাগে?
“-এক লমহা।
“-আর ভালোবাসতে?
“-কিছু নাম না জানা বিশেষ মুহূর্ত।
“-আমাদের মাঝে কি বিশেষ কোন মুহূর্ত আসেনি?
“-এসেছে বুঝি?

“-অনেকবার এসেছে। সে মূহুর্তে আমি তোকে নিজের মতো উপলব্ধি করেছি। অনুভুতি নামক অদ্ভুত খাতায় তোর নাম লিখিয়েছি। হারানোর ভয়ে হেরে যাওয়া খাতায় নিজের নাম লেখিয়েছি। পরিশেষে আমি হেরে গিয়েছি। হেরে গিয়েও জিতে গিয়েছি। আমার ফুলকে পেয়েছি। আমার পুষ্পরানীর রাজা হয়েছি।
শখের পুরুষের কাছ থেকে এরকম কথা শুনলে কি আর চোখের বাধ মানে? মানে না। পুষ্পরও মানলো না। নোনা জলে ভরা গহ্বর এবার উপচে পরলো।
নিজেকে একটু সামলে কোনমতে বললো
“-এত কথা কি করে শিখলেন?
“-প্রেমে পরে।
“-আমি তো সেই নব্বই দশক থেকে প্রেমে পরে বসে আছি। এত কথা শিখিনি তো।
“-শিখেছিস। বলার অবকাশ পাসনি। সামনের মানুষটা শুনতে চায়নি। এবার থেকে শুধু বলবি। মানুষটা না চাইলেই সব শুনবে।

পুষ্পর নিঃশব্দ কান্নার বেগ বাড়লো। শরীর ঝাঁকিয়ে হেচকি তুলে কাঁদছে সে। প্রার্থ এবার মুখ তুললো। এগিয়ে গিয়ে পুষ্পর মুখোমুখি হলো। হাত বাড়িয়ে চোখের জল মুছিয়ে বললো
“-সবসময় এই সুখ জল বইলে তো মানবো না। এটা আমাকে কষ্ট দেয়।
পুষ্প নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করলো। কোনমতে নিজেকে সামলে নিলো। আচানক প্রার্থ উষ্ঠ গলিয়ে দিলো পুষ্পর অধৈর্য, কম্পনরত অধরে।
নিমিষেই শান্ত হয়ে এলো ছটফটে তরুণী। অস্থিরতায় ডুবে থাকা বুকে শীতল হাওয়া বসে গেলো। অবস হয়ে গেলো সুতনু শরীর।
বেশ কিছুক্ষন পর প্রার্থ নিজে থেকেই সরে এলো। তপ্ত শ্বাসে উঠানামা করলো বুক। গভীর চোখে তাকিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত মনে বলে উঠলো প্রার্থ

“-কান্না থেমেছে? এবার চোখ অবাধ্য হবে তো খবর আছে। প্রার্থর সুখ ফুলের চোখে জল মানায় না।
অবাধ্য না হতে বললে কি হবে সেই তো আবার প্রতারনা করে ফেলে চোখ দুটো। একটু মন জুরানো কথা শুনলেই চোখ বেহায়া হয়। পুষ্প নাক টেনে বাচ্চাদের মতো করে বললো।
“-চোখ অবাধ্য হয়ে গেলে আমার কি দোষ? আপনার জন্যই তো হয়।
প্রার্থ দুষ্টু হেসে বললো।
“-আমার জন্য হয় বলেই তো আমিই ওষুধ দিলাম। এখন যেটা দিলাম সেটা হচ্ছে ভিটামিন-সি। সারাদিন চাঙ্গা দেখতে চাই।
কথাটুকু বলেই ঠোঁটে ছোট্ট চুমু বসিয়েই উঠে গেলো সে। পুষ্প দুহাতে মুখ ঢেকে কিছুক্ষণ পরে রইলো বিছানায়। সব কেমন যেন তার স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এত তাড়াতাড়ি আল্লাহ তার সব স্বপ্ন পূরন করলো ভাবতেই চোখ ভরে উঠে। রবের দরবারে অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করে সে।

বেলা বাজে বারো টা কি সারে বারোটা। মেঘমুক্ত আকাশে সূর্যটা একটু বেশিই উত্তাপ দিচ্ছে। তীব্র গরমের মাঝে সুন্দর ছোটখাটো একটা কফিশপে বসে আছে অর্নব ও স্নেহা। দৃষ্টি তাদের কাচ গলিয়ে বাইরের রাস্তায় গিয়ে পড়েছে। কেউ কারো দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। লজ্জায় অস্বস্তিতে মুখ থেকে আওয়াজও বের হচ্ছে না যেন।
স্নেহার সামনে একটা কোল্ড কফি এবং অর্নবের সামনে ধোয়া উঠা হট কফি।
স্নেহার শুধু হাত দিয়ে স্ট্র টা নারছে। মুখে আর পুরছে না। অর্নব মাঝেসাঝে দু এক চুমুক বসাচ্ছে গরম কফিতে।
দুজনেই বাসা থেকে ফোর্স করে পাঠানো হয়েছে দেখা করার জন্য। কাল তো তারা একা কথা বলতে পারেনি। আজ একা একটু কথা বলে সব ঠিকঠাক করে নিক।
অগত্যা অর্নবকেও আসতে হয়েছে। তবে এসেছে পর থেকে কেউই কথা বলছে না। অর্নব নিজেকে একটু তৈরী করছে সব গুছিয়ে বলার জন্য
একটু পরেই অর্নব হঠাৎ বলে উঠলো।

“-খাচ্ছেন না কেন?
মেয়েটা দৃষ্টি ফিরিয়ে অর্নবের দিকে তাকালো। কুণ্ঠায় আবার নিচু করে ফেললো দৃষ্টি। ছোট্ট করে বললো।
“-এমনি।
আবারও মৌনতা। একটু পর অর্নব আবার বললো।
“-আপনি জানতেন বিয়েটা আমার সাথে ঠিক করা হচ্ছে?
মেয়েটা না তাকিয়েই দুদিকে মাথা নাড়লো। অর্থাৎ সে জানতো না। অর্নব ফের বললো।
“-আমিও জানতাম না। যাইহোক আপনি কি বিয়েতে রাজি?
সরাসরি প্রশ্নে বিব্রতবোধ করলো স্নেহা। এরকম ডিরেক্ট প্রশ্নে কি করে জবাব দিবে সে? কিছু ভাবতে দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। এদিক ওদিক এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো উৎকন্ঠায়।

অর্নব গভীর চোখে একটু পরখ করলো তাকে। খারাপ না। দেখতে ভালোই মেয়েটা। শান্তশিষ্ট ভদ্রই মনে হচ্ছে। মেয়েটার এমন অস্থিরতায় তাকে আরেকটু রূপবতী করে তুলেছে।অর্নব ভাবে, বিয়ে তো করতেই হবে। আজ অথবা কাল বিয়ে তাকে করতে হবে এটা সিওর। তবে কি এখনই করে ফেলবে? এখন করে ফেলাটাই কি শ্রেয়? হয়তো! কারন অর্নব জানে পুষ্পকে সে যতই ভুলে যাক মনের মাঝে অদৃশ্য অনুভুতিরা মাঝে মাঝে হানা দিতেও পারে। আর সে চায় না পুষ্পকে নিয়ে ভাবতে। সে এখন অন্যকারো বউ। নিজের সবথেকে প্রিয় বন্ধুর বউ। যে বন্ধু তার বউকে ইদানিং চোখে হারাচ্ছে। সে দিকে তাকানোটাও পাপ। আর অর্নব এমন জঘন্য পাপ করতে পারবে না। এজন্য বোধহয় বিয়ে করাই উত্তম উপায় হবে। হ্যাঁ সংসারে মন বসতে বা কাউকে নতুন করে ভালোবাসতে একটু সময় লাগবে তবুও আস্তেধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন। অর্নব বয়ঃসন্ধিকালের কোন বাচ্চা নয়। যথেষ্ট এডাল্ট সে। বউকে ভালো না বাসতে পারলেও দায়িত্ব বা সম্মান দুটোই করতে জানে। ভালোবাসা তো পরেও হবে তবে সম্মান! বিপরীত মানুষটাকে সম্মান দেওয়াটাই আসল ব্যাপার। আর এক্ষেত্রে অর্নবের পুরো বিশ্বাস আছে সে তার অর্ধাঙ্গিনীকে যথেষ্ট সম্মান দিতে পারবে।

স্নেহাকে বেচ্যান অবস্থায় কিছু ভাবতে দেখে অর্নবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ধোয়া উঠা কাপে একটা চুমুক বসিয়ে বললো।
“-এত ভাবতে হবে না। উত্তর না জানা থাকলে দিতে হবে না। আমি বিয়েতে রাজি।
এরকম কথা বোধহয় কস্মিনকালেও আশা করেনি স্নেহা। সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চোখমুখে অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে আছে অর্নবে দিকে। সে হয়তো ভাবেনি এত বড় গায়ক তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে তাও এত জলদি। সে তো ভেবে এসেছিলো আগে অর্নবের থেকে জানতে চাইবে সে রাজি কিনা। এরপরই ফয়সালা নিবে। বাবা অসুস্থ তিনি চায় মেয়ের বিয়ে তিনি নিজ চোখে দেখবেন এজন্য স্নেহার কোন আপত্তি ছিলো না বিয়ে করা নিয়ে। তবে শর্ত ছিলো ছেলে ভালো হতে হবে। আর স্নেহা জানে অর্নব ভালো ছেলে। সেক্ষেত্রে না করার প্রশ্নই আসে না। তবুও যদি অর্নব বিয়েতে রাজি না হতো তবে সে নিজে এই বিয়ে ক্যান্সেল করে দিতো।
অর্নব আবার বললো।

“-তো বলুন, আপনার কোন পছন্দ আছে? মানে আপনার বিয়েতে দ্বিমত আছে বা অন্য কেউ আছে লাইফে? থাকলে বলে ফেলুন। চিন্তা নেই আপনাকে জোর করা হবে না।
অর্নবের কথায় দ্রুত মাথা নাড়লো মেয়েটা। বললো তড়িঘড়ি করে।
“-না না এমন কেউ নেই।
অর্নব হাসলো তার অস্থিরতা দেখে। কেমন বাচ্চাদের মতো হাসফাস করছে। সে আশ্বাস দিয়ে বললো।
“-এত অস্থির হচ্ছেন কেন? রিল্যাক্স! আপনি কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন।
স্নেহা আস্তে করে বললো।
“-কিছু বলার নেই।
“-মানে আপনি রাজি?
স্নেহা একবার আবার অর্নবের দিকে তাকালো। বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো তার। এত সুন্দর ছেলেদের দিকে তাকানো যায় না হার্ট বিট করা মিস করে দেয়। সে দৃষ্টি নামিয়ে রইলো।
মৌনতা দেখে অর্নব বললো।

“-নিরবতাই তবে সম্মতির লক্ষণ ধরে নিবো?
এবার হাসলো স্নেহা। ঠোঁটের কোনে মিষ্টি একটা হাসি ঝুলিয়ে বললো।
“-ধরতে পারেন।
“-বাহ! আপনি হাসতেও পারেন?
“-হাসতে না পারলে মানুষ হলাম কি করে?
অর্নব অবাক হওয়ার ভান করে বললো।
“-আপনি কথাও বলতে পারেন?
স্নেহার হাসি প্রকট হলো। অর্নব সে হাসির দিকে তাকিয়ে আবারও ভাবলো। মন্দ না। তার বাবা মা, বন্ধুদের চয়েজ আছে বলতে হবে। এ হাসির দিকে তাকিয়ে পুরোনো হাসি ভুলতে পারলে মন্দ হয় না বরং ভালোই হয়।
এরপর কিছুক্ষণ কথা হলো তাদের মাঝে। স্নেহাও একটু স্বাভাবিক হলো। গুনে গুনে কথা না বলে ইচ্ছাধীন হয়ে কথা বললো।
কথা বলার একফাকে অর্নব বললো।

“- আমাদের বিয়ে হলে দুজনকেই একটু সময় দিতে হবে। কারন আপনাকে বিয়ে করার পিছনে খুব সূক্ষ্ণ একটা কারন আছে আমার। হুট করেই ভালোবাসতে পারবো না। একটু সময়ের প্রয়োজন হবে আমার।
স্নেহা খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো।
“- আমি চাইনা আমাকে কেউ হুট করেই ভালোবাসুক। ধীরে ধীরে আমাকে বুঝুক এরপরেই ভালোবাসুক। এ নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। চিন্তা করবেন না।
স্নেহার স্বাভাবিক কথায় অর্নবের ভালো লাগলো। অর্নবের কথাটা যে খারাপভাবে নেয়নি তা বোঝা গেলো। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে এ-ও বুঝলো যে মেয়েটা সরল সহজ। অর্নবের জন্য তো এমন মেয়েই পারফেক্ট যে মেয়ে তার সরলতা দিয়ে অন্য জগৎ তৈরী করবে তার মাঝে। ভুলিয়ে দিবে ফেলে আসা সমস্ত অতীত, অতীতের সমস্ত ব্যাথা।

রাতের খাবার শেষ করে সকলে বসেছে বসার ঘরে। এখন একটু গল্পগুজব করবে আড্ডা দিবে। এরপরেই চলে যাবে নিজ নিজ কক্ষে ঘুমাতে। তবে আড্ডা দেওয়া আর হলো না। প্রার্থ সোফায় বসে ল্যাপটপ ঘাটছে। অন্ত রুম থেকে খুব একটা বের হয় না কিছুদিন ধরে। খাবার খাওয়া আর বাইরে যাওয়ার সময় একটু দেখা পাওয়া যায় এছাড়া আর তাকে দেখা যায় না সচরাচর। মনমরা হয়ে পরে থাকে সারাদিন।
পুষ্পও কাজে ব্যাস্ত। বড় আম্মু যাবে এখন ঘুমাতে। সবশেষে হতাশ প্রিয়া আর প্রান্ত। উল্টো তাদেরকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে পড়ার জন্য। অন্তকে পড়ার কথা কখনো বলতে হয় না৷ সে নিজ দায়িত্বে নিজেরটা করে নেয়। তবে প্রিয়া আর প্রান্তকে ঠেলে ঠেলে পাঠাতে হয় রাতে পড়ালেখা করার জন্য। অহনা বেগম অবশ্য বাড়িতে থাকলে তারা একাই চলে যায় পড়তে। একটু কড়া মানুষতো সবাই ভয়ে তটস্থ থাকে। আজ অহনা বেগম এখনও ফেরেনি। গেছে একটা পার্টিতে আশরাফ সাহেবের সাথে। এই সুযোগে দুজনই পড়ায় ফাকি দিতে চেয়েছিলো কিন্তু পুষ্প তা হতে দিলো না। ঠেলে পাঠালো রুমে পড়তে।

প্রিয়া তো যাবেই না তবুও বকে-টকে পাঠালো।এমনিতেও আজ পুষ্পর সারাটাদিন কেটেছে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে। একে তো প্রার্থ যার লজ্জা শরমের বালাই নেই তার উপর জায়গায় জায়গায় কাল রাতের দাগ। সেগুলো ঢাকতে ঢাকতে দফা রফা তার। আর প্রিয়ার যা জহুরি নজর সেটা কোন না কোনভাবেই পৌছে যায় যেখানে সেখানে। এখন আরো বাজে অবস্থায় পড়ার আগেই মানে মানে করে বিদায় করলো তাদের।
সবকিছু সামলে বাড়ির কাজ করে ভার্সিটির ক্লাস করে এসে এবার ভীষন ক্লান্ত সে। প্রার্থ কাজ থেকে ফিরেছে সন্ধ্যার দিকেই। ঘরে পরী রেখে বাইরে আর কতক্ষণই বা মন টেকে?তাই জলদি জলদি ফিরে বাসায়। কিন্তু বাসায় ফিরেও কোন লাভ নেই। তার পুষ্পকলি তার হাতের নাগালে আর এলো কই? সে এদিক সেদিকের কাজ করেই কূল পায় না স্বামীর কাছে যাবে কখন?
এ নিয়ে প্রার্থ ভীষন হতাশ। যার জন্য সব ফেলে বাড়ি আসা সে-ই তাকে ফাকি দিয়ে এদিক ওদিক ঘুরছে। পুষ্পর উপর চরম বিরক্ত সে।
রাতের সমস্ত কাজ শেষে মাত্র বসার রুমে সোফায় এসে বসলো পুষ্প। প্রার্থ পাশেই বসা ছিলো। ল্যাপটপটা সাইডে রেখে বললো।

“-কাজ শেষ?
পুষ্প সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়ে ক্লান্ত স্বরে বললো।
“-হ্যা। এখন শুধু বড় আম্মুকে ওষুধ দিয়ে আসবো।
“-আমি দিয়ে দিয়েছি। মা ঘুমাচ্ছে এখন।
“-ওহ তাহলে তো হলোই।
হুট করেই প্রার্থ পুষ্পকে কোলে তুলে নিলো। পুষ্পর চোখ বন্ধ ছিলো হঠাৎ কোলে নেওয়া বুঝতে পেরে চমকে গেলো। গোল গোল চোখে তাকিয়ে বললো।
“-কি করছেন?
প্রার্থ গা ছাড়া ভাবে বললো।
“-বউকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যাচ্ছি।
“-নামান আমি হেটে যেতে পারবো।
প্রার্থ কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে হাটতে শুরু করলো। বললো গম্ভীর গলায়।
“-তোকে এত কাজ করতে বলেছে কে?
“-কে বলবে? বাড়ির কাজ আমি করবো না?
“-রুবি খালা আছে না?

“-সে একা একা কত করবে? বাড়িটা কি ছোট নাকি?
“-তাহলে আরো সার্ভেন্ট রাখি।
“-তার প্রয়োজন নেই। অল্প কাজ দুজন মিলে করলেই হয়ে যায়।
পুষ্প প্রার্থর গলা জরিয়ে আছে। হুটহাট এমন হাওয়ায় ভাসতে ভালোই লাগে। যদি হয় সেটা প্রার্থর কোল। এখানে সারাদিন বসে নাচলেও সে ক্লান্ত হবে না।
প্রার্থ হাটতে হাটতে দুষ্টুমি করে বললো।
“-কিন্তু ম্যাডাম আপনি যে কাজের জন্য আপনার স্বামীকে ভুলে যাচ্ছেন সে খেয়াল কি আছে আপনার?
ইশশ! প্রথমবার মনেহয় প্রার্থ তাকে আপনি ডাকলো। পুষ্পর লজ্জা লাগলো ভীষন। এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো।
“-আপনাকে ভোলা কি আদৌও সম্ভব?
“-হতেও পারে সম্ভব। যেভাবে পতি ভক্তি বাদে কাজ ভক্তি করছেন এভাবে স্বামীকে ভুলতে কতক্ষণ?
“-বাজে কথা। যেদিন আপনাকে ভুলে যাবো বুঝবেন সেদিনটি হবে আমার মরনের দিন। তার আগে কখনোই ভুলবো না।
প্রার্থর পা থেমে গেলো। দাঁড়িয়ে গেলো করিডরের মাঝেই। অসহায় চোখে তাকালো পুষ্পর দিকে। হঠাৎ পুষ্পর এমন কথায় ভেতরটা যেন নড়ে উঠেছে।
প্রার্থকে থেমে যেতে দেখে পুষ্প বললো।
“-কি হলো?
“-কিছুনা।
কিছুনা বলেই আবার হাটা ধরলো। কিছু কথা মনে মনেই থাক। সব ভয় প্রকাশ করতে নেই। ভয় প্রকাশ করার আলাদা ভাষাও নেই। এই ভয় তার মনেই থাক।

রাত বাজে ১১ টা। প্রিয়া পড়ার টেবিলে বসে বসে ঝিমাচ্ছে। এই পড়ালেখা আর ভালো লাগে না। মন চায় দেশান্তরি হয়ে যেতে। সবকিছু থেকে দূরে বিশেষ করে পড়ালেখা থেকে দূরে যেতে হলেও তাকে দেশান্তরি হতে হবে। এই আন্ডার অংক আর তার মাথায় ঢুকবে না কোনমতেই। ভেবেছিলো কলেজে ক্লাস ১০ এর মতো ওইরকম খবিশ মার্কা গনিত নেই। গনিত ছাড়া পড়ালেখা করা সবচেয়ে ইজি বিষয় কিন্তু কে জানতো কলেজের প্রতিটা সাবজেক্টে গনিত সহ তার পুরো পরিবার ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আইসিটির মতো বিষয়ে কে অংক আনে? ৩০ টা এমসিকিউ দিতে গেলেই ঘাম ঝড়ে যেত। এখানে তো আবার অংকও ঢুকিয়ে দিছে। কি বিপদ। এখন না পারছে বুঝতে না পারছে সল্ভ করতে। ক্লাসে আবার স্যার বলে দিয়েছে বাইনারি সঠিকভাবে করে আনতে না পারলে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখবে সবাইকে। এখন সে বাইনারি করবে কি করে? সে তো পারেই না।
অনেকক্ষণ বসে বসে ভাবার পর চট করে উঠে দাঁড়ালো প্রিয়া। বুবু তো এগুলা পারে। বুবুর কাছ থেকে শিখে আসা যাক।

যেই ভাবা সেই কাজ। চটজলদি উঠে গিয়ে দাঁড়ালো প্রার্থর রুমের সামনে। কিন্তু তাদের কি ডাকবে? না ডাকবে না? বুঝতে পারছে না। দুবার দরজা টোকা দিতে গিয়েও হাত গুটিয়ে নিলো।
এদের এখন ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। নতুন নতুন প্রেমে পড়া মানুষদের এত রাতে বিরক্ত করা যায় না।যদি হয় তারা আবার এত রোমান্টিক। প্রিয়া সব দেখেছে। পুষ্পর ঘাড়ের দাগ সে যতই লুকানোর চেষ্টা করুক তার নজর এড়াতে পারেনি। দিনের পুষ্পর লুকানোর কথা মনে পরতেই হি হি করে হেসে দিলো প্রিয়া। সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলো।
এবার কোথায় যাবে? তখনই মাথায় এলো অন্তর কথা। আগেপিছে কিছু না ভেবেই গেলো অন্তর রুমের দরজার কাছে। সোজা হয়ে দাড়িয়ে দুবার টোকা দিতেই ভেতর থেকে দরজা খুলে দাঁড়ালো অন্ত।
বাইরে প্রিয়াকে দেখে কিছুটা অবাক হলো অন্ত। তবে প্রকাশ করলো না। অবাক ভাবটাকে সরিয়ে দিয়ে গম্ভীর চেহারায় প্রশ্ন করলো।

“-কি চাই?
“-তোমাকে।
অন্তর বুক ছলাৎ করে উঠে। ঠিক শুনলো তো? প্রিয়া কি এই কথাটাই বললো? কোন হিসেবে বললো?
অন্তকে দরজার সামনে সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রিয়া নিজ থেকেই ভেতরে ঢুকে গেলো। বললো।
“-একটা হেল্প করে দাও না? আমি বাইনারির অংকগুলো করতে পারছি না। তোমাকে লাগবে।
অন্ত এখন বুঝলো আসল ঘটনা। অথচ অবুঝ মন ওই এক শব্দেই কতকিছু ভেবে বসেছে। মনে মনে একশ একটা চড় দিলো নিজের ভাবনায়। পরপর শাসালো নিজের মনকে
“-একদম না। ওসব চাঁদ তোর মতো মানুষের ধরা ছোয়ার বাইরে। ভুলেও ছুতে যাস না। ছোয়ার চেষ্টাও করিস না। আগেই পুড়ে মরবি। অলরেডি ঝলসে গেছিস। পুড়ে ছাই হওয়া বাকি শুধু। দূরে থাক।
নিজেকে নিজে বুঝ দিয়ে বিষন্ন মনে হেটে গেলো ভেতরে।

চঞ্চল প্রিয়া আগেই বই খাতা নিয়ে অন্তর পড়ার টেবিল দখল করে নিচ্ছে। এবার অন্তর এসে বুঝিয়ে দেওয়ার পালা। অন্ত চেষ্টা করলো স্বাভাবিক থাকার। এতকিছুর পর এত আহুতির পরেও যদি প্রিয়া নরমাল বিহেভ করতে পারে তাহলে অন্ত কেন পারবে না। তাদের মাঝে কিছুই হয়নি ভাব করে বসে আছে প্রিয়া।
আর এটা দেখে আরো কষ্ট হচ্ছে তার। একটা মানুষ কতটা অবহেলা পেলে তার বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে অন্ত।
সে গিয়ে আরেকটা চেয়ার নিয়ে বসলো প্রিয়ার পাশে। কোন বাড়তি কথা ছাড়াই তাকে অংক বুঝিয়ে দিলো।
সব বুঝে তো প্রিয়া মহা খুশি। এত সহজ জিনিস সে পারে না বলে কেমন রাগ হচ্ছিলো। আগে এভাবে কেউ বুঝিয়ে দিলেই হতো।
এবার বুঝা শেষ। নিজের ঘরে যাওয়া যাক। প্রিয়া অন্তকে থ্যাংক ইউ বলে বইখাতা গোছাচ্ছিলো ঘরে যাওয়ার জন্য।
হঠাৎ অন্ত করুন স্বরে ডেকে উঠলো।
“-প্রিয়া!

প্রিয়ার হাত থেমে যায়। সে এই ডাক থেকে বাচার জন্যই এত তোড়জোড় করছিলো। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিলো। কিন্তু বাচতে পারলো না। অন্ত ডেকেই ফেললো।
এক্টিংয়ে প্রিয়া মাহির। কোন নাটকে চান্স পেলে সে এওয়ার্ডও পেয়ে যেত। প্রিয়া ইচ্ছে করেই এত চঞ্চল হচ্ছিলো যাতে অন্ত আর কিছু না বলে। সব ভুলে যায়। দুদিন ধরে অন্তকে খুব ভালোভাবেই খেয়াল করছে প্রিয়া। না খাওয়া দাওয়া করে ঠিক মতো না কারো সাথে কথা বলে না প্রিয়ার মুখোমুখি হয়। টোটালি এড়িয়ে চলছে তাকে। তবুও তার ভেতরের যে তুফান তা একটু হলেও বুঝতে পারছে প্রিয়া।
প্রিয়া অপ্রস্তত ভাবটাকে কাটিয়ে আবার কন্ঠে চঞ্চলতা এনে বললো
“- হ্যা বলো। তুমি কিন্তু সবকিছু ভালোভাবেই বুঝাতে পারো। ভালো টিচার হতে পারবে।
অন্ত নিজেকে কটাক্ষ করে বিড়বিড় করে বললো

“-হুহ্! সব আর বোঝাতে পারি কই। সব বোঝাতে পারলে মনও বোঝাতে পারতাম।
অন্তর বিড়বিড়িয়ে বলা কথাটাও শুনলো প্রিয়া। এবার তার অস্থির লাগছে। অন্তর এমন কথা প্রিয়ার ঠিক কোথায় গিয়ে পৌছায় সে জানে না। শুধু জানে তার খুব অস্থির লাগে। কোথাও একটা সূক্ষ্ম সুচ ফুটে।
অন্ত এবার বিড়বিড় করে না বলে সোজাসুজি বললো।
“- তুই আর আমার সামনে আসবি না।
প্রিয়ার কাছে কথাটা কেমন অপমান মূলক মনে হলো।
সে রাগে ফুসে উঠে বললো।
“-কেন?
অন্ত বা পাশে বুকে হাত রেখে বললো।
“-এখানে ব্যাথা করে।
প্রিয়া দমে যায়। মাথা নিচু করে বসে থাকে। অন্ত আবার বললো।
“- তোকে আর জ্বালাবো না। তোর চোখের সামনেও আসবো না। নিজেকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখবো। শুধু তুই দূরে থাক আমার থেকে। তোকে দেখলে ঠিক থাকিনা আমি। ভেতরে তোলপাড় হয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় আমার। মরে যেতে ইচ্ছে করে।

কথাটা শেষ হতেই প্রিয়া লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। চিকচিক করে উঠে চোখের কোটর। অবাক নেত্রে তাকিয়ে থাকে অন্তর দিকে। অন্ত জড়বস্তুর ন্যায় বসে আছে। তার প্রতিটা কথায় কি যেন ছিলো যা প্রিয়াকে নাড়িয়ে দিতে বাধ্য করেছে।
প্রিয়া শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করলো। কাপা স্বরে কোনমতে বললো।
“-ঠিকাছে, আর আসবো না তোমার সামনে।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২৬

বলতে দেরি ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে দেরি হলো না। যেমন চঞ্চল পায়ে ঘরে এসেছিলো তার থেকেও দ্বিগুন তাড়ায় চলে গেলো সেখান থেকে।
অন্ত একইভাবে বসে রইলো চেয়ারে। ছেলেদের হুটহাট ভেঙে পড়তে নেই অথচ অন্ত প্রতিবারই ভেঙে পড়ে তার অন্তঃপ্রিয়ার সামনে। এই ভাঙাচোরা কি কখনো জোড়া লাগবে না?

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২৮