আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৩৩

আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৩৩
নূরজাহান আক্তার আলো

কুহুকে কেবিনে রেখে রিদওয়ান গেছে মিটিংয়ে এটেন্ড করতে। যাওয়ার ঘন্টা খানিক পেরিয়ে গেছে৷ এরমধ্যে একজন এসে অনেক খাবার দিয়ে গেছে। সে এখনো খাবার ছুঁয়েও দেখে নি। রিদওয়ানের ফোন হাতে নিয়ে
গ্যালারির ছবিগুলো দেখছে।তার একেকটা ছবি একেক রকমের সুন্দর। বলা বাহুল্য, চোখ ধাঁধানো সুন্দর। ছবি গুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ তার ভ্রুঁ কুঁচকে গেল।

ছবিগুলো দেখতে দেখতে ভাবতে লাগল, ‘পুরুষ মানুষ এত সুন্দর হবে কেন? কেন সুন্দর হবে তার বাঁকা দাঁতের হাসি?’ সে বেশ মন দিয়েই ছবিগুলোর খুঁত বের করার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। ব্যর্থ হয়ে ফোনের কোথায় কি আছে, কার সঙ্গে কথা বলেছে, কে, কাকে, কি মেসেজ করেছে তাও দেখল। বাদ রইল না মেসেঞ্জার, মেটা, ইন্সট্রাগ্রাম। সবকিছু চেক করে চোখে পড়ার মতো তেমন কিছুই পেল না। যেগুলো পেলো সেসবের আগা মাথা কিছুই বুঝল না। তাই তার আইডি ট্যাগ না করেই মেরিড স্ট্যাটাস দিলো। ঠোঁটে টানল দুষ্টু হাসি। বিবাহিত হয়েও সিঙ্গেল সাজা হচ্ছে? তা তো হতে দেওয়া যাবে না। এরপর সে কেবিনটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল, রিদওয়ানের চেয়াল বসে রইল। গা এলিয়ে বসে পুনরায় ছবিগুলো দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেল।অসময়ে ঘুমানোর বান্দা সে না। এটা সকালে খেয়ে আসার ওষুধের প্রভাব।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অ্যাঞ্জেলিনা নামের নামিদামী একটা কফিশপে বসে আছে রিমি। তার ঠিক মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে ম্যাকসন। রিমির তথাকথিত বিদেশী বয়ফেন্ড। তাদের দু’জনের সামনে রয়েছে ক্যাপাচিনো। অথচ কেউ সিপ নেওয়া দূর, ছুঁয়েও দেখে নি। আদৌও কেউ ছোবে নাকি তাতেও সন্দেহ। কারণ তাদের মধ্যে চলছে বাকদন্ড। দু’জনেই যেন তৈরি হয়েই এসেছে, আজকের দ্বন্দে বিজয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে। এসে অবধিই আক্রমণাত্নক কথা বলে যাচ্ছে দু’জন। শান্ত স্বভাবের ম্যাকসনও থামছে না। সে রিমির প্রতিটা কথার পাল্টা যুক্তি দাঁড় করাতে ব্যস্ত। এবং তার কথার ভঙ্গিমায় সুস্পষ্ট অজ্ঞাত কোনো কারণে সে ভীষণ চোটে আছে। এতদিন সে কেন মিট করে নি, ভালোভাবে কথা নি, কেন ইগনোর করেছে, কোন যুক্তিতে ইগনোর করেছে, এমন নানান বাকদ্বন্দের একপর্যায়ে ম্যাকসন হ্যাৎ বলে উঠল,

-‘আই ওয়েন্ট টু হ্যাভ সেক্স উয়িথ ইউ।’
-‘হোয়াট! আর ইউ ক্রেজি? হোয়াট আর ইউ সেয়িং?’
-‘ আ’ম ইয়োর বফ। আই হ্যাভ দ্যা রাইট টু টাচ্ ইউ।’
-‘ (…..)’
-‘ লিমি লুক এট মি এ্যান্ড আনসার মাই কোশ্চেন। ডো’ন্ট ইউ লাভস্ মি?
টেল মি লিমি।’
-‘ ইয়েস।’
-‘সো হোয়ার ইউ ইয়োর প্রবলেম? লেটস্ গো।’
-‘নো, নেভার। আই ও’ন্ট গো।’

রিমির মুখে না শব্দ শুনে ম্যাকসন দাঁতে দাঁত খিঁচে বসে রইল। এতক্ষণ বোঝানোর পরেও সেই একই কথা। বাঙালি মেয়েরা এত ঘাড়ত্যাড়া হয় আগে জানত না সে। জানলে হয়তো এমন গোঁয়ার মেয়ের সঙ্গে রিলেশন করত না। হাত ধরতে দেবে, কিস করতে দেবে না, ডেটে যাবে না, বারে যাবে না, ড্রিংকস করবে না, সবকিছুতে না, না আর না।এমন করলে কী রিলেশন টিকবে? বফকে যখন সন্তুষ্ট’ই করতে পারে না তখন রিলেশনের কি দরকার? ম্যাকসনকে রাগে দুঃখে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষণ বিরক্ত লাগছে সামনে বসা রিমির দিকে তাকাতে। তখন রিমি বলল,

-‘ ডু ইউ ওয়েন্ট টু ব্রেকআপ ফর সাম রিজন?’
-‘(..)’
-‘ম্যাক আনসার মাই কোশ্চেন?’
-‘ইয়েস, আই ওয়েন্ট টু ব্রেকআপ। বিকজ ইউ ডো’ন্ট ডির্জাভ টু বি ও লাভার।’
-‘ আই ডো’ন্ট লস মাই ভার্জিনিটি সো আ’ম ডিসকোয়ালিফাইড? হা,হা, হা, ওকে, দ্যাটস্ ইট।’
রিমি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ম্যাকসনের দিকে৷ যেন চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দেবে। দেহ কাঁপছে থরথর করে। তাদের রিলেশনের পূর্ব শর্ত’ই ছিল বিয়ের আগে এসব আবদার করা যাবে না। অথচ ম্যাক তা ভুলে গেছে।

সন্দেহের বশে অবিবেচকের মতো কথা বলছে। এমন না ম্যাক জানে না তার কালচার সম্পর্কে। তাছাড়া সেও খুব ভালো করেই জানে রিমি এই আবদারে রাজি হবে না। তারপরেও…। তার এখন ইচ্ছে করছে ম্যাকের মাথাটা ধরে দেওয়ালে ঠুকে দিতে। নয়তো ইট দিয়ে তার সুন্দর মুখখানা থেঁতলে দিতে। যাতে ভুল ভবিষ্যতেও আর কখনো এসব কথা উচ্চারণ না করে। রিমি সত্যি সত্যি ব্রেকআপ করে যখন উঠতে যাবে তখন ম্যাক তার হাত চেপে ধরল। ঠান্ডা মাথায় কথা বলার অনুরোধ করল। রিমি ও বসল। ম্যাক এবার ধীরে সুস্থ বলল, ইন্টিমেন্ট হতে হবে না শুধু তার নুড পিক দিলেই হবে। এবং সেই পিক সে নিজেই তুলবে। এজন্য তাকে এখন ম্যাকসনের ফ্ল্যাটে যেতে হবে। বফ হিসেবে অন্তত তার এইটুকু আবদার পূরণ করুক। রিমি নিশ্চুপ। তার মতে, বফ হলে কী নুড পিক দিতে হবে? নগ্ন দেহের ভাঁজ দেখাতে হবে? এ আবার কেমন ভালোবাসা? নাকি এটা প্রেম? প্রেম আর ভালোবাসা কি এক নয়? তাকে নিশ্চুপ দেখে ম্যাকসন সাহস পেলো সে আরো সুন্দর করে বোঝানোর জন্য জানাল, সে সুন্দরী। তার শারীরিক গঠনও মারাত্মক সুন্দর। সুন্দর কিছু ঢেকে রাখতে নেই।

সবাইকে দেখানোর জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হয়। তাছাড়া বফ হিসেবেও গফের শরীর দেখার অধিকার আছে তার। সে দেখতেই না অনেক কিছু করতেও পারে। এখানে এটা কমন ব্যাপার। এই অবধি ম্যাকসনের কথা শুনেও রিমির টু শব্দ করল নি। নিরাবতা সম্মতির লক্ষণ ভেবে ম্যাকসন উঠে এসে তার পাশে বসল। একবারে শরীরের সঙ্গে শরীর মিশিয়ে। তার পুরুষালি এক হাত রাখল রিমির ডান উরুর উপর। রিমি হাতটা সরিয়ে
দিতেই ম্যাকসন ফিচেল হেসে ঝরঝরে ইংলিশে ফিসফিস করে বলল,

-‘এই শপের থার্ড ফ্লোরে রুম ভাড়া করা যায়, যাবে?’
-‘না।’
-‘কেন, ডালিং? চল যাই?’
-‘ হাত সরাও। ‘
-‘কেন সরাবো? আমার স্পর্শ ভালো লাগছে না? কার স্পর্শ ভালো লাগে তোমার ভাইয়ার ফ্রেন্ডের স্পর্শ ভালো লাগে, হুম?’
-‘ম্যাক মুখ সামলে কথা বলো। নয়তো এরপর যা হবে মোটেও ভালো হবে না।’

-‘ ভুল তো বলি নি। ওই ব্ল্যাডি বিচ আসার পর থেকে তুমি আমাকে কেন জানি ইগনোর করো।দেখা করতে চাও না। কথা বলতে চাও না।সবসময়
গা ছাড়া ভাব দেখাও। কতদিন ধরে বলছি ডেটে যাওয়ার জন্য। রাজিও হচ্ছো না। এমনকি কিস করতে দাও না। টাচ্ করতে দাও না। ভেবেছো আমি কিছুই বুঝি না?তার টাচ্ পেয়ে এখন আমাকে আর ভালো লাগছে না?’
-‘ তাকে আমি বড় ভাইয়ের মতো সন্মান করি। তাই বলছি, তাকে নিয়ে নোংরা কথা বলবে না।’
-‘জানি তো,দিনে ভাইয়ের মতো সন্মান করো আর রাতে তার সঙ্গে শুয়ে পড়ো, তাই না? আজ আমাকেও সুযোগ দাও আমিও তোমার দেহ- মন স্যাটিসফাইড করব।’

-‘লাস্টবার ওর্য়ানিং দিচ্ছি মুখে লাগাম টানো ম্যাক।’
-‘ কেন হানি? খারাপ কি বলেছি?’
-‘আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙো না ম্যাক, প্লিজ।’
-‘কেন? সত্যি কথা গায়ে লাগছে? রাত ভর তার সঙ্গে মজামাস্তি করে পা মচকানোর অজুহাত দেখাও। সব খবর আসে আমার কাছে। আর এসব বলে ছাড় পাবে না আজ। তুমি যদি আমাকে ভালোই বাসো তাহলে থার্ড ফ্লোরে চল। ছুঁতে দাও তোমার এই আবেদনময়ী দেহ। মেনে নাও সর্বাঙ্গে ছুঁয়ে যাওয়া আমার স্পর্শ। ধরে নাও, এটাই হবে তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা।’

-‘পরীক্ষা?’
-‘হ্যাঁ পরীক্ষা। ‘
-‘তা কেন দেবো পরীক্ষা?’
-‘ভালোবাসার প্রমাণ দিতে।’
-‘যদি না দেই?’
-‘তাহলে ব্রেকআপ।
-‘ ভার্জিনিটি দিয়ে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে?’
-‘হবে।’

-‘ ওকে তাহলে সেকেন্ড অপশন চুজ করলাম। ব্রেকআপ! তোর নামের ভালোবাসা তুই গুলে খা। দরকার নাই তোর ভালোবাসার। মর তুই। আর কি বললি তুই রুপকের সঙ্গে মাস্তি করি? হ্যাঁ করি, বেশ করি, প্রয়োজনে আরো করব। এবার যা পারিস করে নে।’

আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৩২

একথা বলে রিমি হনহন করে বেরিয়ে গেল। ম্যাকসন এতবার ডাকলেও শুনল না। তবে সে বাসায় যেতে যেতে একটা সিদ্ধান্ত নিলো। সিদ্ধান্তটা জানাতে সে গেল তার মায়ের শপে।

আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৩৪