আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৪২
নূরজাহান আক্তার আলো
সময় স্রোতহীন চলমান নদীর মতোই বহমান। তার কাজ নির্দিষ্ট গতি পথ ধরে গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়ে চলা। এই পথের সঙ্গী কখনো সুখের পরশ কখনো’বা দুঃখের নির্মমতা। সুখ দুঃখের সংমিশ্রণের এই জীবনে আমরা ভাবনা সাজায়। কল্পনা করি৷ স্বপ্ন আঁকি। ইচ্ছে পূরণের চেষ্টা করি। সেই ইচ্ছে কখনো পূরণ হয় তো কখনো অপূর্ণই থেকে যায়। জীবনের ফাঁক ফোঁকরে তা হারিয়ে যায় পরিস্থিতির নিরসনে।
আজ সতেরো তারিখ, সোমবার। দুপুর একটা। রিদওয়ান দাঁড়িয়ে আছে গার্লস স্কুলের সামনে। একটু পরে স্কুল ছুটি দিবে। কলকল করে বেরিয়ে আসবে রুপ ও কথা। জমজ তারা। এসেই শুরু করবে অভিযোগ। কে কাকে মেরেছে, কে কাকে ধাক্কা দিয়েছে, কে পড়া পারে নি, কে বই নিয়ে যায় নি, কে টিফিন খেয়েছে, কে টিফিন অন্যকে দিয়ে দিয়েছে, কে কার ব্যাগ নিচে ফেলে দিয়েছে, আরো নানান অভিযোগ। অভিযোগের শেষ নেই। তাদের কথা বলতে না বলতেই দৌড়ে আসতে দেখা গেল তাদের।
স্কুল ড্রেস পরিহিত মেয়েরা তাকে দেখেই হাত নাড়াল। সে হাত নাড়িয়ে আস্তে ধীরে আসার ইশারা করল। রুপ নাদুস নুদুস, দৌড়াতে পারে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
খুব বেশি নাদুস নুদুস এমনটাও না চলনসই নাসুদ নুসুদ আর কি। নাদুস নুদুস রুপ দৌড়াতে গেলেই ধুম করে পড়ে যায়, তবে কাঁদে না। সে খুব শক্ত ধাঁচের। গম্ভীর টাইপের। শান্ত স্বভাবের। মোদ্দাকথা পরিবেশ বুঝে চলে। ঠিক যেন রিদওয়ানের কপি। আর কথা দারুণ চটপটে। দুষ্ট। কুহুর কার্বন কপি। দুজনের বয়স ছয় বছর। নামের মতোই দেখতেও ফুটফুটে।
সবার ভীষণ আদরের। বাবাকে দেখে আসতে গিয়ে রুপ কিছুর সঙ্গে পা বেঁধে মুখ থুবকে পড়ে গেল। এবং সঙ্গে সঙ্গে উঠে নিজের জামা কাপড় ঝাড়লো। এরপর ধীরে ধীরে বাবার কাছে এগিয়ে এলো। কথা ততক্ষণে দৌড়ে গাড়িতে উঠে বসেও পড়েছে। রিদওয়ানের কাছে এসে রুপ মাথা নিচু করে অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে রইল। বাঁ হাঁটু ছিলে গেছে জ্বলছে খুব। রিদওয়ান মেয়েকে কোলে নিয়ে হাঁটু দেখতে দেখতে আদুরে সুরে
বলল, ‘ব্যথা পেয়েছো মা? বাবা, আদর করে দিচ্ছি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
রুপ না বোধক মাথা নাড়াল অর্থাৎ ব্যথা পায় নি সে। রিদওয়ান রুপের গালে আদর এঁকে গাড়িতে বসল। ড্রাইভারকে যেতে বলে রুপের পায়ে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিতে দিতে বলল, যারা সামান্য ব্যথাতে কুঁকড়ে যায় তারা বড় হতে পারে না। বড় হতে গেলে কষ্ট সহ্য করা শিখতে হয়।’
রুপ নিশ্চুপ।বাবার আদুরে স্পর্শে সব ব্যথা চলে গেছে। বাবার কথা শুনে
মায়ের মারের ব্যথাও ফিনিশ হয়ে গেছে। সে হাসল। তবে হাসিটা অস্পষ্ট রয়ে গেল। তার বাবাও এভাবে হাসে। বাবাকে দেখে সেও এভাবে হাসতে চেষ্টা করে। রুপ কোনো কথা বলল না তবে কথা ভ্রুঁ কুঁচকে বলল, ‘ কিন্তু বাবা, যে ব্যথাগুলো সহ্য হয় না সেই ব্যথাগুলোকে কি করা যায় ?’
-‘প্রথম প্রথম সব ব্যথাকেই অসহনীয় মনে হয়। এরপর সময় সব ব্যথাকে সহ্য করা শিখিয়ে দেয়।’
-‘কি খেলে ব্যথা সহ্য করা যায়?’
-‘যে খাবার খেলে শরীর সুস্থ ও সবল থাকে। সুস্থ শরীর সব ব্যথাকে সহ্য করতে শিখিয়ে দেয়।’
-‘আচ্ছা।’
এরপর কিছুক্ষণ নিরাবতা। রুপ চুপ করে বাবার বুকে হেলান দিয়ে বসে আছে। জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখছে। তখন রিদওয়ান দুই মেয়ের দিকে
তাকাল। কথার চোখ দুটো একদম কুহুর মতো। মায়ায় ভরা। যেন কুহুর আরেক কপি। তখন তার ফোন বেজে উঠল রুপক ফোন করেছে। মামা কল করেছে দেখে কথা আগ বাড়িয়ে কলটা রিসিভ করার বায়না ধরল।
এরপর কল রিসিভ করে খলবলিয়ে বলে উঠল,
-‘হ্যালো মামা? আমি কথা বলছি।’
-‘ কেমন আছো মামনী? সব ঠিকঠাক তো? রুপ কোথায়?’
-‘আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? রুপ পড়ে গেছে। হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছে। বাবা তাকে কোলে নিয়ে বসে আছে।’
-‘ইস! বেশি ব্যথা পেয়েছে?’
-‘হুম। কথা বলবে রুপের সঙ্গে? ‘
-‘দাও।’
-‘মামা?’
-‘বলো মামনী?’
-‘আমি তো কথা শুরুর আগে সালাম দিতে ভুলে গেছি? আম্মু যদি জানে আমি সালাম দিতে ভুলে গেছি তাহলে ভীষণ রাগ করবে। এখন সালাম দেই? এখন সালাম দিলে কি রাগ করবে?’
-‘না মামনী একটুও রাগ করব না।’
-‘আসসালামু ওয়ালাইকুম মামা। ভালো আছো?’
-‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, আমি অনেক ভালো আছি।’
-‘ঠিক আছে। এই নাও রুপের সঙ্গে কথা বলো।’
-‘দাও।’
এরপর কথা রুপের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিলে রুপ ফোনটা কানে ধরে খুব সুন্দর করে সালাম দিলো। তা দেখে রিদওয়ান মুচকি হাসল। কথার মনে থাকে না সালাম দিতে আর রুপ ধীরে সুস্থে সালাম দিয়ে কথা শুরু
করতে ভুলে না। দু’জন দুই রকমের মেধাবী। রুপক রুপকে বলল,
-‘মামনী খুব ব্যথা পেয়েছো?’
-‘ না, না, একটু। তুমি কবে ফিরবে মামা?’
-‘আজকে রাতেই ফিরব মামনি। কি আনব তোমার জন্য?’
-‘কথার জন্য চকলেট আনলেই হবে।’
-‘আর তোমার জন্য?’
-‘ আমার জন্য কিছু লাগবে না।’
-‘হা, হা, ঠিক আছে তাহলে সাবধানে বাসায় যাও। আমি তাহলে রাখি।’
-‘তুমিও সাবধানে এসো। আল্লাহ হাফেজ।’
-‘আল্লাহ হাফেজ।’
এরপর কল কেটে রুপ ফোন বাবার হাতে দিয়ে দিলো। কথা ড্রাইভারের সঙ্গে গল্প করছে, ক্লাসে কি কি করেছে সেসব গল্প। মেয়েটা এত বকবক করতে পারে। রুপ চুপ করে শুনছে। রিদওয়ান তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে, মস্ত বড় মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে প্রায় সাত বছর আগের দিনটির কথা।
সাত বছর আগের ঘটনা,
সেদিন রাতে তাদের বিয়ের দিনক্ষণ পাকা করে পরেরদিন রুপকরা চলে গিয়েছিল। দিনগুলো ভালো যাচ্ছিল। রিদওয়ান দেশে তার কোম্পানির
আরেকটি ব্রাঞ্চ তেরির কাজ গুছিয়ে নিচ্ছিল। কুহু কলেজ যাওয়া শুরু করল। হুঁটোপুঁটি গ্যাং এর সঙ্গে মজামাস্তিতে তার সময় গুলোও কাটতে লাগল। রেগুলার মেডিসিন নেওয়াতে অবস্থাও ভালোর দিকেই যাচ্ছিল।
সামনে পরীক্ষা। সারাদিন কলেজ, কোচিং আর সন্ধ্যার পর রিদওয়ানের কাছে পড়তে বসত। এসবের মাঝে ঘুরাঘুরির আবদার তো আছেই। রিদ তার আবদারে কখনো নাকচ করতো না। বরং তার সাপোর্ট, পরিবারের সাপোর্টে কঠিন রোগ থেকে মুক্তির পথে এগোচ্ছিল মেয়েটা। তাকে কেউ একা থাকতে দিতো না। একা থাকলে সে কল্পনার জগতে ডুবে যায়, কী
সব ভুলভাল ভাবে, চিন্তা করে। সবকিছু ভালোর সঙ্গে বাড়ছিল তাদের ভালোবাসা। গাঢ় হচ্ছিল দু’জনের পবিত্র বন্ধন। মায়া। এবং আসক্তি’ও।
দিনের বেলা যেমন কাটুক রাতের বেলা কেউ কাউকে ছাড়া থাকত না। কুহুর যেমন রিদওয়ানের বুকে মাথা না রাখলে ঘুমই আসত না তেমনি
কুহুকে বুকে না জড়িয়ে নিলো রিদওয়ানও ঘুমাতে পারত না। সব শূন্য শূন্য লাগত। বুক ফাঁকা হয় দম আঁটকে আসত। সেসময় ভালো রিসোর্ট খুঁজে পাচ্ছিল না। সব বুক। রিসোর্ট বুক করলে একমাস আগে জানাতে হয়। এমতাবস্থায় দুই পরিবার নতুন করে আবার ডেট ঠিক করল। দেড় মাস পর তাদের ডেট ঠিক হলো।বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে একটু একটু করে প্রস্তুত’ও হচ্ছিল দুই পরিবার। তার দায়িত্ব ছিল রিসোর্ট বুক করার। সেও ঢাকার মধ্যে দেখে শুনে ‘রৌদ্দুর’ নামে একটি রিসোর্ট বুক করে ফেলল।
নিজেও বর সাজার জন্য প্রস্তুত হলো। এরইমধ্যেই রুপক আগের জবটা ছেড়ে আরো ভালো একটি কোম্পানিতে অফিসার পদে জয়েন করল।
স্যালারিও হাই। সেও রিমিকে ঘরে তোলার জন্য সবদিক থেকে গুছিয়ে নিচ্ছিল। তার রুম ডেকোরেটও করাল রিমির পছন্দকে প্রাধ্যন্য দিয়েই।
এভাবে দিনগুলো এগোতে এগোতে তাদের গায়ে হলুদের দিনটিও চলে এলো। রিসোর্টেই হবে হলুদের অনুষ্ঠান। দুই কাপলের এক সঙ্গে’ই গায়ে হলুদ। আনন্দ হইহট্টগোলে পরিপূর্ণ চারপাশ। কুহুর ফ্রেন্ডদের কিছু কিছু
কান্ডে হেসে গড়িয়ে পড়ছিল অনেকেই।
রেডি হয়ে পাশাপাশি বসেছে রিদওয়ান আর কুহুর। দারুণ মানিয়েছিল তাদের। রুপক আর রিমির স্টেজ একটু দুরত্বে তবে তাদের মুখোমুখিই।
রুপক সেখানে একা বসে আছে রিমি আসে নি এখনো। তার নাকি শাড়ি খুলে গেছে। বেশ কিছুক্ষণ পর রিমি এলো। শুরু হলো অনুষ্ঠান। অনেক রাত অবধি চলল নাচানাচি, গান বাজনা, খাওয়া-দাওয়া। গতরাতে রাত করে সবাই ঘুমিয়েছি তাই সকালে উঠেছেও বেলা করে। রিসোর্টটা খুবই সুন্দর।
কুহু রিদওয়ানকে জোর করে ঘুম থেকে টেনে তুলে পুরো রিসোর্টটা ঘুরে দেখল। সেলফি নিলো। এরপর এলো ব্রেকফাস্ট করতে। দুজন খেলোও একসঙ্গে। বড়রা একসঙ্গে বসে গল্প করছে। সবার মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে রিমি অনুপস্থিত। রিদওয়ান ব্যাপারটা খেয়াল করে নিলুফা ইয়াসমিনকে জিজ্ঞাসা করে জানল, রিমি ঘুমাচ্ছে। তান মাথা ধরেছে ওষুধ খেয়েছে, ডাকতে নিষেধ করেছে৷ আর একটু ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর রুপক বেরিয়ে আসে আর সরাসরি রিদওয়ানকে জিজ্ঞাসা করে,
-‘রিমি কোথায় রিদ?’
-‘ঘুমাচ্ছে।’
-‘তুই সিওর ঘুমাচ্ছে? ‘
রিদওয়ানের এবার ভ্রুঁ কুঁচকে গেল। রুপক তো এই টোনে কথা বলে না।
সে এবার উঠে দাঁড়াল আশেপাশে তাকিয়ে নিচু স্বরে জিজ্ঞাসা করল,
-‘কি হয়েছে?’
-‘ রিমি বাসায় চলে গেছে। সে বিয়ে করবে না। আজ রাতে নাকি দেশে ছেড়ে চলে যাবে।’
-‘হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত কেন?’
-‘সেটা নাহয় তোর বোনকে গিয়ে জিজ্ঞাসা কর।’
-‘ এই সিদ্ধান্তের পেছনে তোর কোনো হাত নেই তো? যদি থাকে তাহলে কিন্তু আমি আমার বোনের সাপোর্ট নিবো।’
-‘ আর যদি এখানে আমার কোনো দোষ না থাকে, তবে?
-‘ কাজ করেই নাহয় দেখাই। তুই এখানেই থাক। আত্মীয় স্বজন কিছু না জানে। সবার দিকে খেয়াল রাখিস, আসছি আমি।’
রুপক কোনো জবাব দিলো না। রাগে হাত নিশপিশ করছে। রিমিকে দুই থাপ্পড় দিতে বলতে ইচ্ছে করছে, ‘এসবে মানে কি? বিয়ে করবে না তো
এত কাহিনি কেন করলে? কেন আগ বাড়িয়ে রিদকে সব বলতে গেলে?
এখন সব ঠিক করে বিয়ে না করার কারণ কি?’ ফোনে বলেছেও। কিন্তু তার একটাই কথা সে বিয়ে করবে না। এমন করার কারণও বলছে না।
রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। পরিবারের কেউ এখনো জানে না কিছু। কিন্তু
তাদের দুই বন্ধুর কথোপকথন শুনে কুহু হতভম্ব। সেও এবার ছুটে চলল
রিদওয়ানের পিছু পিছু কিন্তু রিদওয়ানের গাড়ির নাগাল পেলো না সে।
অগত্য সিএনজি নিয়ে রওনা হলো শশুড় বাড়ির উদ্দেশ্যে। রিদওয়ান বাসায় গিয়ে দেখে রিমি লাগেজ গুছাচ্ছে। পার্সপোর্ট পড়ে আছে বেডের উপর। টিকিটও কনফার্ম। রাত আটটায় ফ্লাইট। এখন বেরিয়ে হোটেলে উঠবে এরপর হোটেল থেকে সরাসরি চলে যাবে সুইজারল্যান্ড। সেখানে স্থায়ী হবে আর কখনো দেশে ফিরবে না। তখন রিমির রুমের দরজা নক করল রিদওয়ান। ভাইয়াকে দেখে শুকনো ঢোক গিলে মাথা কিঞ্চিৎ নিচু করে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল। তখন রিদওয়ান রুমে প্রবেশ করে খুব ঠান্ডা স্বরে বলল,
-‘এখানে কেন তুমি?’
-‘এ এই একটু আ..আগেই এসেছি।’
-‘কেন এসেছো সেটাই তো জিজ্ঞাসা করছি।’
-‘ভাইয়া! আ..মি বিয়েটা করতে পার..ব না।’
-‘কারণ?’
-‘আম আ..মি।’
-‘কারণটা জানতে চাচ্ছি?’
-‘ম্যাক সুইসাইড করেছে। হসপিটালে সে। আমি ফিরে না গেলে আবার সুইসাইড করবে। ওর মা ফোন করেছিল সকালে জানিয়েছে সব। ম্যাক মারা গেলে এর জন্য আমি দায়ী থাকব। কারণ সে আমাকে ভালোবেসে এসব করছে।’
-‘ এখানে রুপকের দোষ’টা কোথায়? তার সন্মান নিলামে তোলার মানে কি? সে কি তোমায় বলেছিল ভালোবাসতে? নাকি থ্রেট দিয়েছিল তাকে বিয়ে করতেই হবে? স্বেচ্ছায় বিয়েটা করার জন্য সবাইকে জানিয়ে এখন পিছুটানে মানে কি? আসলে দোষটা তোমারও না তোমার পরিবারের, তারাই তোমাকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারে নি, তাই না?’
-‘ভাইয়া!’
-‘ চলে যাবে, যাও। বন্ধুটাও আমার, বন্ধুর সন্মান রক্ষা করার দায়িত্বও আমার। প্রয়োজনে আমি নিজ দায়িত্ব আজকের মধ্যে ওর বিয়ে দেবো।
তবে একটা কথা জেনে নাও, আজ যদি তোমার কারণে আমার বন্ধু কষ্ট পায় তাহলে আমি ভুলে যাব আমার বোন ছিল। রুপকের মুখ দেখে যদি কুহুর চোখে পানি আসে, আমি ভুলে যাব আমার বোন ছিল। যদি বাবা মাকে কথা শুনতে হয়ে, আমি ভুলে যাব আমার বোন ছিল। তুমিও ভুলে যেও আজ থেকে তোমার ভাই মৃত। তোমাকে একঘন্টা সময় দিলাম। এখন সিদ্ধান্ত নাও।’
একথা বলে সে পেছনে ঘুরতেই রিমি তাচ্ছিল্যের সুরে এবার বলে উঠল,
-‘বাংলাদেশে এসে তোমার মেন্টালিটিও বাঙালিদের মতোই হয়ে গেছে। তুমিও আজকাল ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে শিখে গেছো। সো কল্ড ভাইদের মতো নিজের মতামত অন্যের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। যত যায় বলো, আমি যাবোই ভাইয়া।’
-‘আমি কি বলেছিলাম, রুপকের সঙ্গে রিলেশনে জড়াতে? নাকি বলেছি, রুপককে বিয়ে করার জন্য আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করতে? শুধু তুমি বলেছিলে বলে আমি বাবার অমতে গিয়ে এনগেজমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন কোন বিবেকে আমার দোষ দিচ্ছো?’
-‘তখন বিয়ের সিদ্ধান্ত ঠিক মনে হয়েছিল এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি।’
রাগে গজগজ করে একথা বলতেই কুহু হাততালি দিলো। তালির শব্দে তারা দুই ভাই-বোন ঘুরে তাকাতেই দেখে কুহু দাঁড়িয়ে আছে। সে তালি দিতে দিতেই এগিয়ে এসে দাঁড়াল রিমির মুখোমুখি। তারপর মাত্রারিক্ত শীতল চোখে তাকিয়ে বেশ জেদি সুরে বলল,
-‘আজকের পর থেকে তোমাকে সন্মান করতে পারব কি না জানি না। তবে তোমার কারণে আমার ভাইয়া যদি বিন্দু পরিমানও কষ্ট পায় তবে আমিও তোমার ভাইয়ের সমস্ত সুখ কেড়ে নেবো। যেই সম্পর্কের সূত্র ধরে আমার ভাইয়া তোমাকে ভালোবেসেছিল, আমি সেই সম্পর্ক রাখব না। লাস্টবার বলছি, তুমি বিয়েটা করবে কি না?’
-‘না।’
-‘ঠিক আছে।’
একথা বলে কুহু ঘুরে দাড়াতেই রিদওয়ান তার পথ আগলে দাঁড়াল। তার গাল চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
-‘খবরদার বলছি, ওদের সমস্যার মধ্যে আমাদের সম্পর্কটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার স্পর্ধা দেখাবে না। বিয়ে হবে, রিমির সঙ্গে রুপকেরই বিয়ে হবে।’
-‘না, বিয়ে হবে না। যে আমার ভাইকে নিয়ে খেলার পুতুলের মতো শুধু
খেলেছে। ভালোবাসার অভিনয় করেছে দিনের পর দিন। স্বপ্নভঙ্গ করতে কতশত স্বপ্ন দেখিয়েছে। এমনকি যে আমার ভাইকে সামান্যতরও সন্মান করে না, তার সঙ্গে আমি আমার ভাইয়ের বিয়ে হতে দেবো না।’
আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৪১
-‘তোমার ভাইকে বিয়ে করার জন্য আমিও বসে নেই। সস্তা মেন্টালিটির সস্তা কাউকে তার গলায় ঝুলিয়ে দাও।’
একথা শুনে কুহু রিদওয়ানের হাতটা ঝাটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল। রিদওয়ানও বোনের দিকে একপলক তাকিয়ে বেরিয়ে পড়ল। তার আর কিছু বলার নেই। জোর করে, মেরে ধরে তো কবুল বলাতে পারবে কিন্তু সংসার?