আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১১

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১১
জান্নাত সুলতানা

আজ সকাল থেকে তিন্নি ভাবছে।
ভার্সিটি অফ। ভোট কাল।আজ টিউশন করে হোস্টেল ফিরে আসবে এমনটাই চিন্তা ভাবনা ছিল।কিন্তু কাল রাতে কবির খাঁন এর ম্যাসেজ এর পর থেকে ভেবে যাচ্ছে শুধু। যাওয়া উচিৎ? না-কি না?আবার ভাবছে কোনো প্রয়োজন হয়তো। পরক্ষণেই ভাবছে কবির খাঁন বুঝতে পেরে যায় নি তো ও যে স্যার কে ভালোবাসে!আবার ভাবে যাওয়া উচিৎ স্যার মানুষ ডেকেছে না গেলে বেয়াদবি হবে।

তিন্নি দু-টানায় ভুগছে।তিন্নির এখন খুব করে নিজের পরিবার না থাকার অভাব টা উপলব্ধি করতে পারছে।পরিবার মা বাবা ভাই বোন কেউ যদি এখন পাশে থাকতো নিশ্চয়ই এব্যাপারে কথা বললে একটা সলিউশন দিতো।কিন্তু তিন্নির তো তেমন কেউ নেই। তিন্নি বিছানা থেকে ফোন হাতে নিলো।যদি এব্যাপারে কারোর সাথে শেয়ার করা যায় সেটা এই মূহুর্তে মাইশা।তিন্নির স্কুল, কলেজ লাইফে তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই।মুলত সময় হয় নি এসবে ধ্যান দেওয়ার।ভার্সিটিতে গিয়ে মাইশার সাথে কেমন অদ্ভুত ভাবে এই সম্পর্ক টা তৈরী হলো তিন্নি এখন বুঝতে পারে না।
মাইশা কে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ হলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“শোন দেখা করতে পারবি?”
তিন্নি জিজ্ঞেস করলো।
মাইশা কিঞ্চিৎ সময় ভেবে বলল,
-“এখন তো বাড়ি থেকে বেরুতে দিবে না।
কাল ভোট বুঝতে পারছি।
তুই একটা কাজ কর না আমাদের বাড়ি চলে আয়।”
তিন্নি কিছু ভেবে বলল,
-“ঠিক আছে।”
তিন্নি কল কেটে রেডি হয়ে মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।

দুপুরে সাদনান বাড়ি ফিরল আজ।প্রিয়তা অবাক। শোয়া থেকে ওঠে বসে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলো,
-“আপনি?”
সাদনান জবাব দিলো না।
এগিয়ে এসে প্রিয়তার কপালে হাত রাখে।মেয়েটার সকালে জ্বর এসছিল।এক রাতেই বউয়ের অবশ্য করুণ।ভবিষ্যতে কি হবে?বউয়ের দিকে এখন থেকে নজর দিতে হবে। এখন জ্বর নেই।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে বলল,

-“আবার যেতে হবে।
শাওয়ার নিবে?”
-“আপনি আগে যান।
আমি পরে যাচ্ছি।”
প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ওঠে গিয়ে কাবাড থেকে কাপড় নিতে নিতে বলল।
সাদনান গায়ের পাঞ্জাবি খুলে সোফায় রেখে টাওয়াল হাতে প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে ওয়াশ রুমের যেতে যেতে বলল,

-“এক সাথে নিয়ে নেব।
আমাকে আবার যেতে হবে।”
প্রিয়তা কিছু বলল না।
আগে প্রিয়তা শাওয়ার নিলো।ড্রেস চেঞ্জ করে সাদনান বউ কে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
অতঃপর নিজে বউয়ের কাপড় ধুয়ে এক্কেবারে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো।
সাদনান কাপড় ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে এসে দেখলো প্রিয়তা বিছানা বসে আছে। সাদনান একপলক সেদিকে তাকিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে বউয়ের পাশে গিয়ে বসলো।প্রিয়তা টাওয়াল নিজে হাতে নিয়ে সাদনানের চুল মুছে দিলো। সাদনান হাসলো।দারুণ লাগে যখন এই ছোট্ট ছোট্ট হাত দু’টির মালিক তার জন্য কিছু করে।

কালাম খাঁন ভোট প্রচারণায় গিয়েছিল আজ।মফিজুর মির্জা একজন বিজনেসম্যান। রাজনীতি সম্পর্কে খুব কমই ধারণা। মূলত এসবে আজ্জম মির্জা বা মফিজুর মির্জা দু-ভাইয়ের ততটা আগ্রহ নেই।তাই তো বাবা এতো বড় নেতা হওয়ার পরেও দু’ভাই বাবার ব্যবসায় হাত লাগালেও রাজনীতি নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।
তবে এবার সাদনানের জন্য সবাই খাটছে।
এতেও সবাই কমবেশি আশ্চর্য।

আজ সকালে তারা বেশ কিছু এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছে। দুপুর হতেই আবার ফিরে এসছে।
তিন্নি মাইশার সাথে কথা বলে চলে যেতে যাচ্ছিল।কিন্তু সুফিয়া বেগম সালেহা বেগম যেতে দেয় নি।দুপুরে খাবার না খাইয়ে কিছুতেই যেতে দিবে না। তিন্নি বাধ্য হয়ে থেকে গেলো।
দুপুরে সবাই এক সাথে খাবার খেলো।কালাম খাঁন অদ্ভুত ভাবে মেয়ে টাকে বারকয়েক নজরে পড়ে।মনে হচ্ছিল কোথাও দেখেছে। পরক্ষণেই মনে পড়ে মাইশার বিয়েতে দেখা হয়েছে। কিন্তু না আরও কোথাও দেখেছে। তিন্নি কালাম খাঁন এর সাথে একবার কথা বলেছে। স্যার এর বাবা বলে কথা।

খাবার শেষ কালাম খাঁন সবার সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন।
তিন্নি অনেক আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।কিন্তু গাড়ি একটাও নেই। সাড়ে তিনটায় বেরিয়েছিল চারটার দিকেও তিন্নি কোনো গাড়ির পেলো না মূলত সব গাড়ি ভর্তি মানুষ কোনো গাড়ি ফাঁকা নেই।কালাম খাঁন নিজের গাড়ি নিয়ে গেইট ওভারটেক করার সময় তিন্নি কে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো।মেয়ে টা বাড়ি থেকে অনেক টা সময় হয় বেরিয়ে এসছে।

গাড়ি যে পাচ্ছে না তিনি বুঝতে পারে।
গাড়ি সাইড করে দাঁড় করিয়ে তিন্নি কে ডাকলো।
তিন্নি কাছে এগিয়ে গেলো।
মুচকি হেঁসে বলল,
-“জ্বি আঙ্কেল!”
-“তুমি কোথায় যাচ্ছো?
গাড়ি নেই।”
-“হ্যাঁ আঙ্কেল একটা গাড়ি ফাঁকা নেই।
আমার সামনে একটা টিউশন আছে ওখানে যাব।”
-“তুমি আমার সাথে এসো।
আমি এদিক দিয়ে বাড়ি ফিরছি।”

তিন্নি না করতে ইচ্ছে করল।কিন্তু কোনো গাড়ি নেই তারউপর ভদ্রলোক নিজে থেকে বলেছেন।
তিন্নি বেশি কিছু না ভেবে ওঠে গেলো।কালাম খাঁন গাড়িতে তিন্নি সাথে অনেক কথা বলল।তিন্নির বাবা মা নেই জানতে পেরে ওনি ভীষণ আফসোস করলেন।সাথে এখন থেকে কোনো প্রয়োজন হলে ওনাকে জানাতে বলল।তিন্নি শুধু মুচকি হাসল।কালাম খাঁন যে ভীষণ ভালো লোক সেটাও তিন্নি বুঝতে পারে। আধঘন্টা পর তিন্নি বড় একটা বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামাতে বলল।

এটা ছাঁদে একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে। কালাম খাঁন তিন্নি কে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করতেই আরেক টা গাড়ি গেইট দিয়ে প্রবেশ করলো। পার্কিং লটে গাড়ি টা পার্ক করে গাড়ির মালিক গাড়ি থেকে বেরুতেই কালাম খাঁন ভ্রু কুঁচকে নিলো।এটা কবির। গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে আজ।কালাম খাঁন গাড়ি স্টার্ট করলো।হয়তো ছেলের কোনো জরুরি কাজ রয়েছে। তবে মনে মনে কিছু একটা খটকা লাগল।

হঠাৎ করেই মনে পড়ল।তিন্নির ছবি তিনি তার ছেলের ফোনের লকস্কিনে দেখেছে। ছবি টা স্পষ্ট ছিল না বিধায় এতোক্ষণ বিষয় টা মনে করতে পারছিল না। তবে বিষয় টা তেমন পাত্তা দিলো না। অফিস থেকে জরুরি ফোনকল আসায় বিষয় টা আরো ভুলে গেলো
কবির গাড়ি পার্কিং করে গেইট এর দিকে তাকাতেই কালাম খাঁন এর গাড়ি নজরে এলো একটু বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “বাবা এখানে?আমাকে দেখেছে?”
কবির এর ভাবনার মাঝেই তিন্নি এগিয়ে এসে কবির খাঁন কে বিনয়ের সাথে সালাম দিলো।
কবির থমথমে কণ্ঠে সালামের উত্তর করলো।
চোখর সানগ্লাস টা ঠিক করতে করতে জানতে চাইলো,

-“টিউশন শেষ?”
-“নাহ।
পাঁচ টায় যাব।”
তিন্নি জানাল।
লিফটে করে ওরা ছাঁদে এলো।একদম কর্নারে একটা টেবিলে গিয়ে বসল।
একদম নামী-দামী একটা রেস্টুরেন্ট।এক-এক টা টেবিলের মধ্যে অনেক দূরত্ব।তারউপর ডেকোরেশন চমৎকার।
ওরা বসার পর একজন ওয়েটার এলো।কবির তিন্নি কে কিছু জিগ্যেস না করেই কয়েকপদ খাবার অর্ডার দিলো।
ওয়েটার জানাল একটু সময় লাগবে।কবির শুধু মাথা দুলিয়ে ওয়েটার কে যেতে বলল।
ওয়েটার যাওয়ার পর কবির মুখ থেকে মাস্ক টা খুলে নিলো।তিন্নির চোখ কবির খাঁন এর মুখে আঁটকে গেলো।
চোখে সানগ্লাস আকাশী রংয়ের শার্ট গায়ে কালো প্যান্ট। চমৎকার দেখতে এই পুরুষ টাকে যেকোনো মেয়ে এক দেখায় প্রেমে পড়বে।

-“আমাকে পর্যবেক্ষণ করা শেষ?”
তিন্নি আকস্মিক কবিরের এরূপ প্রশ্নে হকচাল।লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো।
কবির তিন্নির দিকে তাকিয়ে হাসলো।যেটা তিন্নির নজরে এলো না। কবির মুগ্ধতা নিয়ে তিন্নির দিকে তাকালো। গায়ে খয়েরী রঙের একটা কুর্তি। মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ঝুলানো। গায়ের রং টা চাপা হয়তো নিজের যত্ন খুব একটা করে না।অবশ্য করার কথাও নয়।বাবা মা ছাড়া নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে একা একা নিজের জীবন পরিচালনা করা বড্ড কঠিন।যেই যুদ্ধ প্রতিনিয়ত তিন্নি করে আসছে।নিতান্তই বাচ্চা মেয়ে।

,-“স্যার কোনো দরকার!
না মানে এভাবে,,
-“হ্যাঁ তোমাকে।
দেখো আমার ভূমিকা নিয়ে কথা বলা একদম পছন্দ নয়।সোজা উপসংহারে পছন্দ। সোজাসাপ্টা বলতে গেলো আমি তোমায় ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।
আমি চাইলে বাবা কে দিয়ে তোমাকে প্রস্তাব পাঠাতে পারতাম। কিন্তু ওই যে বললাম ভূমিকা আমার একদম পছন্দ নয়।তাই আমার মনে হলো আগে তোমার সাথে কথা বলে তোমার মতামত জানা প্রয়োজন। অযথা জল গোলা না করে আমাদের মধ্যে আগে এটা নিয়ে কথা বলে ক্লিয়ার হওয়া উচিৎ।”

তিন্নি স্তব্ধ। কস্মিনকালেও তিন্নি ভাবতে পারে নি কবির এমন কিছু বলার জন্য ওকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে।
না চাইতেও তিন্নির চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।কবির হকচকাল।
ওঠে এগিয়ে এসে তিন্নির পাশে বসে অস্থির কণ্ঠে বলল,
-“দেখো তোমাকে কেউ জোর করবে না তুমি সময় নাও যতটা লাগে। কিন্তু সময় শেষ উত্তর টা আমি পজিটিভ,,,
কবির খাঁন এর পুরো কথা না শুনেই তিন্নি
মলিন কণ্ঠে বলল,

-“স্যার আমার পরিবার নেই।রূপ গুণ কোনো দিক দিয়ে আহামরি নই।
কিচ্ছু নেই।আমার থেকে ভালো কাউ কে ডিজার্ভ করেন আপনি।
হয়তো আবেগের বশে এসব বলছেন এখন।যখন কোনো সমস্যায় পড়লে আমার দিক থেকে পারিবারিক কোনো সহয়তা পাবেন না তখন আপনার হয়তো মনে হবে আবেগের বশে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল টা আপনি করেছেন।”
তিন্নির কথায় কবির চোয়াল শক্ত করে নিলো।মেয়ে টা কি সব উদ্ভট কথা বার্তা বলছে বুঝতে পারছে?পারিবারিক সহয়তা বলতে যে আর্থিক সাহায্যের কথা বলছে সেটাও বুঝতে পারে কবির। কবির গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“তোমার আমার বয়স টাকে আবেগের মনে হচ্ছে?

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১০

আর তোমার পরিবার নেই।এতে তোমার কোনো হাত নেই।সব আল্লাহর ইচ্ছে। আর আমার বাবার বা আমার আল্লাহ কোনো দিক দিয়ে কম দেয় নি যে অর্থ-সম্পত্তির জন্য তোমার পরিবারের প্রয়োজন হবে।
আমি তোমার কি আছে না আছে এসব জানতে চাই না আমি তোমায় ভবিষ্যতে হতে চাই।যার সবটা জুড়ে আমি থাকব।”

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১২