আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৪
জান্নাত সুলতানা
-“বুঝলেন চেয়ারম্যান সাহেব। ছেলে টা দেশে ফিরছে। ভাবছি বিয়ের ব্যাপারে কথা বলব।”
ওয়াসিফ দেওয়ান জানাল।জাফর মির্জা হেঁসে বলে উঠলো,
-“সে তো ভালো কথা।
তবে মেয়ে পছন্দ আছে কি?”
-“না ইয়ে,,
ওয়াসিফ দেওয়ান আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু সাদনান মাঝে ফোঁড়ন কেটে বলল,
-“আঙ্কেল আমার মনে হচ্ছে আপনার একবার আপনার ছেলের সাথে কথা বলা উচিৎ।”
-“কথাখানি মন্দ বলো নি।
আজই জিগ্যেস করব।”
ওয়াসিফ দেওয়ান সাদনানের কথা টা বেশ মনে ধরলো।ছেলে টা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। কোথায় কি ধরণের কথা বলা উচিৎ বা কোন কথা টা বললে ঠিক হবে খুব ভালো করে সেটা বুঝে।যাকে বলে যথেষ্ট বিচক্ষণ পুরুষ। এমন পুরুষ খুব কমই দেখেছেন তিনি তার রাজনীতির জীবনে। তিনি এবার ভিন্ন কিছু ভেবেছেন।সাদনান সেটারই যোগ্য।এখন শুধু সময় করে কাজ টা ভালোই ভালোই করতে পারলে হয়।
সাদনানের দিকে তাকিয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান লম্বা চওড়া হাসে।অতঃপর আরো বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে খাবার খেয়ে ওয়াসিফ দেওয়ান মির্জা বাড়ি হতে বেরিয়ে গেলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাদনানের হাতের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। ক্ষত শুঁকিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এখন হাত নড়াচড়া করা নিষেধ।আজ পনেরো দিনের বেশি সময় হয় সাদনান বাড়ি থেকে বেরুতে পারে না। বাসায় বসে সব মিটিং আলোচনা সমালোচনা সবাই কে বাড়িতে ডেকে করতে হয়।ডান হাতে গুলি লেগেছে বিধায় খাবার নিজের হাতে খেতে পারে না। প্রিয়তা খাইয়ে দেয়।আবার মাঝে মাঝে সালেহা বেগম আয়েশা বেগম সুফিয়া বেগম সবাই খাইয়ে দেয়।মা চাচি ফুপি সাদনানের ভীষণ ভালো।সবাই বেশ মিলেমিশে সেবা যত্ন করছে।
এখন সালেহা বেগম খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। সাথে প্রিয়তা কেও।এখন নয় টা বাজে সাড়ে দশ টায় একটা মিটিং রয়েছে।দলের কিছু লোক আসবে।নিচে সিঁড়ি কোঠার কাছে বড় একটা কক্ষ রয়েছে যেটায় সব সময় এই রাজনীতির যত কাজ আছে সেখানেই হয় সব।সাদনানের খাবার খাওয়া শেষ সালেহা বেগম সব গুছিয়ে নিয়ে চলে গেলো। প্রিয়তা সাদনানের গা থেকে কালো শার্ট টা খুলে নিল।হাতে গুলি লেগেছে পর টি-শার্ট পড়া টা সম্ভব নয়।তাই শার্ট গায়ে দেয় সাদনান। প্রিয়তা কাবাড থেকে পাঞ্জাবি এনে সাদনান কে পড়িয়ে দিলো।হাত কাঁপছে এসি অন থাকা শর্তেও প্রিয়তার গলা ঘাড় নাকের ডগা ঘেমে ন্যায় একাকার অবস্থা।
সাদনান হাসলো।প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে সাদনানের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“হাসছেন কেনো?”
সাদনান ওঠে দাঁড়াল। বা হাতে প্রিয়তার কোমড়ে রেখে আচমকাই প্রিয়তা কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।প্রিয়তা কেঁপে উঠল। তবে সাদনানের বুকের উপর দুই হাত রাখে।সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়।মাথা নিচু করে নেয়।
সাদনান প্রিয়তার মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে প্রিয়তার ললাট নিজের অধর স্পর্শ দিলো।
সেখান থেকে সরে এসে থমথমে কণ্ঠে আদেশ করল,
-“মাথা উঁচু করো।”
হঠাৎ সাদনানের থমথমে কণ্ঠে শোনে অবাক হলো।মাথা উঁচু করে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই সাদনান নিজের উদ্দেশ্য সফল করলো।বউয়ের অধর নিজের অধর চেপে ধরলো।প্রিয়তা হঠাৎ অনাঙ্ক্ষিত স্পর্শে একটু অপ্রস্তুত হলো। তবে সামনের পুরুষ টার করা অধর স্পর্শে নিজে কে সামলাতে হিমশিম খেলো।শক্ত হাতে সাদনানের বুকের কাছের পাঞ্জাবি খামচে ধরলো।নিজের মনে ভালোলাগার অনুভূতি হলো।আজ অনেক দিন পর সাদনান বউ কে এতো টা গভীর স্পর্শ দিলো।প্রথম সেদিন রাতের আর আবার আজ।যদিও মাঝেমধ্যে ছোট ছোট চুমু খায় কিন্তু আজ সময় নিয়ে নিজের তৃষ্ণা মেটাল।সাদনানের থেকে ছাড়া পাওয়া মাত্র প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে জোর জোর শ্বাস টানে। সাদনান নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে আবার প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলল,
-“এটা কি করলে জান।
এখন আমি বাহিরে কি করে যাব?পাঞ্জাবির অবস্থা নাজেহাল।”
প্রিয়তা লজ্জা ভুলে অবাক হয়ে সাদনানের বুকের দিকে তাকাল সত্যি পাঞ্জাবি টা বাজেভাবে কুঁচকে গিয়েছে।
প্রিয়তা কিছু বলবে তার আগেই সাদনান পাঞ্জাবি টেনে টুনে ঠিক করে।প্রিয়তা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।সাদনান এগিয়ে গিয়ে পারফিউম হাতে নিলো।ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে পারফিউম স্প্রে করতে করতে বলল,
-“নিচে গেলো সিঁড়ির নিচের রুমে আশেপাশে যাবে না।”
-“সব সময় বলতে হয়?”
-“হুঁ।
বলাতো যায় না কখন কোন দিক দিয়ে কার নজর পড়ে বসে।”
সাদনান গুরুগম্ভীর কণ্ঠে কথা টা বলেই ফোন হাতে নিলো।ঠিক তক্ষুনি দরজায় কেউ কড়া নাড়ে।
সাদনান ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“কে?”
-“ছোট সাহেব নিচে সব মানুষ আইয়া পড়ছে।”
-“আসছি আমি।”
একটা মহিলার কণ্ঠ স্বর।কাজের লোক চলে গেলে সাদনান বউ কে বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বেশ কিছু দিন ধরে রাহান ঠিকঠাক দুই মামার সঙ্গে অফিস যাচ্ছে। এতে আজ্জম মির্জা আর মফিজুর মির্জা ভীষণ খুশি। বেশ কিছু ডিল কনফার্ম করেছে। যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে।
আজও একটা মিটিং ছিল।সেটা শেষ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাহানের অনেক রাত হলো।আজ অনেক দিন হয় প্রেয়সীর সাথে ঠিকঠাক কথা বলা হয় না।তাই রাহান আগে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিলো।খাবার সালেহা বেগম পরিবেশন করে দিলো।সবাই অনেক আগেই রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছে।
সালেহা বেগম রাহানের খাবার শেষ সব গুছিয়ে রাখে।রাহান তখনো বসে আছে বড় মামির অপেক্ষায়।সালেহা বেগম সব গুছিয়ে এলেই রাহান বলল,
-“সারা ঘুমিয়ে পড়েছে বড়মনি?”
-“মনে হয় না।
মেয়ে টা আমার দিন দিন উদাসীন হয়ে যাচ্ছে!”
চিন্তিত কণ্ঠে বলল সালেহা বেগম।
রাহান ওনার কথা শোনে বুকের ভেতর মুচড় দিলো।অনেক দিন ধরে মেয়ে টা কে একটু সময় দেওয়া হয় না।তাই এমন টা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ভালোবাসলে তো হবে না।ভালোবাসার মানুষ টাকে সারাজীবন এর জন্য নিজের করে রাখার জন্য নিজের প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি।
আর যেটা রাহান করছে।
রাহান কথা গুলো ভেবেই তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
-“আমি কি বাবা কে বলব বাবাই’য়ের সঙ্গে কথা বলতে?”
-“নাহ আরো ক’টা দিন যাক।
নয়তো সবাই বুঝে যাবে আমি তোকে অফিস যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।”
-“তাহলে?”
-“আমি তোর বাবাই’য়ের সাথে কথা বলব।”
-“সাদনান কি বলেছে?”
-“বেকার ছেলের সাথে বোন বিয়ে দিতে কোন ভাই চাইবে!তবে আমি জানি সাদনানের মনের কথা এটা নয়।
তুই নিশ্চিন্তে থাক।”
-“হ্যাঁ।
আমি তোমাদের বিশ্বাস করি।”
রাহানের কথায় সালেহা বেগম হাসলো।
অতঃপর রাহান কে ঘুমুতে যেতে বলে নিজেও কক্ষের দিকে চলে গেলো।
সেদিন রাতে ছাঁদের দরজা খোলা ছিল।সালেহা বেগম ভেবেছিল হয়তো কাজের লোক দরজা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে।তাই তিনি ছাঁদের দরজা বন্ধ করতে গিয়েছিল। আর সেখানে গিয়ে দুই মানব-মানবীর কথোপকথন শুনে তিনি থমকে দাঁড়ান। এর আগেও অবশ্য তিনি নিজের মেয়ে কে রাহানের সাথে রাতে সেদিন প্রাচীর টপকে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে দেখেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই সম্পর্ক কি পরিণতি পাবে?
এমন প্রশ্ন মস্তিষ্কে আসার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। রাহান পড়ালেখা শেষ করেছে।সাদনান আর নানার সাথে থেকে রাজনীতি করে। কিন্তু কোনো পারমানেন্ট জব নেই।আর সালেহা বেগম তাই এব্যাপারে সাদনান এর সাথে কথা বলে আর সাদনানই রাহান কে অফিস যাওয়ার জন্য বলে।রাহান সবদিক বিবেচনা করে তাই করল।
সাদনান ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। প্রিয়তা রুমে বসে সাজুগুজু করছে। সাজুগুজু বলতে শাড়ী পড়ে চোখে কাজল দিয়ে ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিয়ে চুল ছেড়ে দিয়ে গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে সাদনান কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।সাদনান একটু চমকায় না।তবে নিজের পুরুষালী চিত্ত জেগে ওঠে।হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে লাফালাফি করে।মনের ভেতর ভালোবাসার জোয়ার ওঠে।বউ কে কাছে পাওয়ার নেশা তীব্র থেকে তীব্র মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।প্রিয়তা নিজের শরীর কাঁপছে। হৃদপিণ্ড দ্রুত বেগে ওঠানামা করছে যার ফলস্বরূপ সাদনানের পিঠে প্রিয়তার বুকের সাথে সংঘর্ষ হচ্ছে।
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৩
সাদনান চকিতে পেছনে ফিরলো ফোন পাশের দোলনায় রেখে ধীরে ধীরে বউয়ের দিকে এগিয়ে এসে মুখ টা উঁচু করে নিলো।প্রিয়তার চোখ বন্ধ সাদনান প্রিয়তার বন্ধ চোখের পাতায় ফু দিলো।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। সাদনান তৎক্ষনাৎ বউয়ের ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের ভাঁজে নিলো।সময় নিয়ে গভীর চুম্বন করলো। ছেড়ে দিয়ে প্রিয়তার মুখ টা নিজের দুই হাতের আঁজলে নিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,
-“ধন্যবাদ আমার প্রাপ্তি কে প্রাপ্তিময় করে মূহুর্ত টাকে সুন্দর করে স্বরণীয় করে রাখার জন্য। তবে আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি আমার তুমি।”