আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৮

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৮
জান্নাত সুলতানা

-“শাড়ী পড়ব?”
কবির বিছানায় বসে ল্যাপটপ কিছু করছিল।হঠাৎ তিন্নির প্রশ্নে তিন্নির দিকে তাকিয়ে বলল,
-“নাহ।
তবে সাথে করে একটা নিয়ে নাও।”

তিন্নি তাই করলো।একটা শাড়ী ব্যাগে নিয়ে নিলো।আর একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
আজ মির্জা বাড়ি যাবে ওরা।বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ দিন। এই পাঁচ দিনে মফিজুর মির্জা সহ মির্জা বাড়ির সবাই যাওয়ার জন্য রোজ ফোন করছে।কবির যেতে চায় নি।কিন্তু তিন্নি? মেয়ে টার পরিবার নেই।সেটা যখন মির্জা বাড়ির সবাই বুঝতে দিতে চায় না। তাহলে সে কেনো দিবে?একদিনেরই তো ব্যাপার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকালে নাস্তা করেই সাদনান বউ আর বোন কে নিয়ে মির্জা বাড়ি চলে এসছে।আয়ান আসে নি।পরে আসবে।মাইশা কেও দিতে চায় নি।কিন্তু মেয়ে টা সেদিন এয়ারপোর্টেও যেতে দেয় নি।মন খারাপ হতে পারে স্বাভাবিক। তাই আর বারণ করে নি।
সাদনান ওদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নিজের সিকিউরিটি নিয়ে আবার বেরিয়ে যায়।প্রিয়তা আগে ফ্রেশ হয়ে অতঃপর সারা’র রুমে উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।

-“রাহান ভাই আমার হাতে লাগছে ছাড়ুন।”
সারা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল।আর রাহান হঠাৎ কোথা থেকে এসে হুমড়ি খেয়ে বারান্দায় এসে সারা’র কে টেনে এনে ঠাশ করে বারান্দার দরজা সাথে চেপে ধরে একটা হাত শক্ত করে সারা’র হাত টেনে ধরে। সারা আকস্মিক আক্রমণে ভয়ে পেয়ে গেলো।চোখ বন্ধ করে ব্যথাতুর শব্দ করে।সামনে দাঁড়ানো মানুষ টা যে রাহান সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না।তাই তো চোখ বন্ধ রেখেই উপরোক্ত কথা টা বলল।
রাহান ফোঁস ফোঁস করে।
চোয়াল শক্ত করে জানাল,

-“লাগার জন্যই ধরেছি।
আদর করতে নয়।”
-“ছিঃ কি সব বলেন?
ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার বোন।”
-“এই তোর মুখ আমি ভেঙ্গে ফেলবো।
তুই আমার বোন না আর না আমি তোর ভাই।”
-“একদম বেশি বলবেন না।”
-“আমি বেশি বলছি?
আর তুই যা করছিস ঠিক করছিস?কি শুরু করেছিস আজ একমাস নাগাদ?বলেছি না আমায় একটু সময় দেয়?”
হঠাৎ সারা শব্দ করে কেঁদে দিলো। রাহান হকচকাল।ভড়কে গিয়ে তড়িঘড়ি করে সারা’র হাত ছেড়ে সারা কে জড়িয়ে ধরলো।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

-“আই নো আমি তোকে টাইম দিতে পারি না। ঠিকঠাক দেখা হয় না কথা হয় না।অভিমান হবে।কিন্তু অভিমান ভাঙ্গার জন্য তো আমাকে তোর কাছাকাছি আসতে দিতে হবে। কিন্তু তুই?আমাকে ইগনোর করিস।আমি করতাম টা কি?”
সারা কোনো জবাব দিলো না।কান্নাও করছে না।চুপচাপ রাহানের বুকে মাথা রেখে সেভাবেই পড়ে রইলো।
রাহান নিজেও চোখ বন্ধ করে সারা কে জড়িয়ে ধরে রইলো।
-“সারা!”

প্রিয়তার কণ্ঠ শুনে দু’জন দু’দিকে ছিটকে দূরে সরে গেলো। প্রিয়তা চোখের উপর হাত রেখে বলল,
-“আমি কিছু দেখি নি।”
সারা প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে রুমের বাহিরে আসার উদ্দেশ্য হাঁটতে হাঁটতে অনুরোধের স্বরে বলল,
-“কাউ কে বলিস না প্লিজ।
বিশেষ করে আপু কে আর ভাবি কে।জানতে পারলে ইচ্ছে মতো পচাবে।”
প্রিয়তা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সারা’র দিকে। সারা প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে নিচে লিভিং রুমে চলে এলো।সেখানে বাড়ির সবাই আছে মোটামুটি। রিধি বসে ছিল আম্বিয়া মির্জার পাশে সেখান থেকে ওঠে এসে প্রিয়তা কে আগলে নিলো। আদর করলো।কপালে চুমু খেয়ে বলল,

-“এতো কেনো আদুরে তুই?
আগেও দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করতো।”
প্রিয়তা মুচকি হাসলো। সত্যি কে সে ভীষণ আদুরে দেখতে? সবাই কেনো এমন বলে?প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই রিধি প্রিয়তা কে টেনে নিয়ে সোফায় বসলো।

দুপুরে তিন্নি আর কবির এলো।সবাই হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে দিয়ে খাবার শেষ করে আড্ডা দিতে বসে গেলো।কবির তিন্নির দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়ে টা মনে হয় প্রথম বারের ন্যায় কবির ওকে এতো টা হাসিখুশি দেখলো।নিজের কাছের আপন ভালোবাসার মানুষ গুলো ভালো থাকলে নিজেদেরও মন ভালো হয়ে যায়। সুখী মনে হয় নিজদের।
আড্ডা শেষ সবাই যে যার রুমে গেলো।সাদনান বাড়ি ফিরেছে।মির্জা বাড়ি পুরো টা সিকিউরিটি দিয়ে ঘেরাও করা।কাল সকাল অব্ধি সাদনান এখানে থাকবে।তারপর বউ কে সাথে নিয়ে শহরে চলে যাবে।
প্রিয়তার মন খারাপ হলো এই খবর শোনার পর। সবাই কে ফেলে যেতে ইচ্ছে করছে না।

ভাবলো রাতে এব্যাপারে সাদনান এর সাথে কথা বলবে।প্রিয়তা রুমে গিয়ে অদ্ভুত একটা ঘ্রাণ পেলো।চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে বারকয়েক। সাদনান তখন বিছানায় বসে বউ কে নিজের কাছে ডাকল।প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে সাদনানের সামনে দাঁড়াল। বাইরে অন্ধকার। মেঘ জমেছে আকাশে। হয়তো কিছু সময় ব্যবধানে সেগুলো বৃষ্টি হয়ে জমিনে লুটিয়ে পড়বে।প্রিয়তা লাইট অন করতে গেলে সাদনান বাঁধা দিলো।
বউ কে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে বালিশের পাশ থেকে একটা বেলি ফুলের মালা বেড় করলো।সামন্য নেতিয়ে গিয়েছে।

হয়তো দুপুরে কড়া রোদে।
প্রিয়তার কৌতূহল জাগে। এই ভরদুপুরে এটা কোথা থেকে আনলো?
সহসাই মনে প্রশ্ন টা আসা মাত্র জিগ্যেস করলো,
-“কোথা থেকে আনলেন এটা?
দেখি নি আমি!”
-“পকেটে করে এনেছি।
তাই দেখো নি।”

সাদনান প্রিয়তার হাতে সেটা বেঁধে দিতে দিতে জানালো।
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
-“কিন্তু পাঞ্জাবি আমি খুলে নিজে হাতে বিছানায় রেখে ছিলাম।”
-“প্যান্ট চেক করে ছিলে?”
আস্তে করে প্রিয়তার হাতের উলটো পিঠে চুমু খেয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জিগ্যেস করলো।
প্রিয়তা নাকের কাছে নিজের হাত টা এগিয়ে নিয়ে ঘ্রাণ শুঁকে।
লম্বা শ্বাস টেনে জবাব দিলো,
-“নাহ।”

দূর দূর বাড়ির চারদিকে কালো পোশাক পরিহিত সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে।
দৃষ্টি তাদের উলটো দিকে। বাড়ির দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সবার হাতে বন্দুক সাথে একটা করে ছাতা।হয়তো বৃষ্টির জন্য নিয়েছে।ব্যালকনিতে যাওয়া মাত্র দক্ষিণা শীতল বাতাস এসে গা ছুঁয়ে গেলো।

প্রিয়তা শরীর সব গুলো লোমকূপ শিরশির করে উঠল।শিহরণ দিলো শরীর। সাদনান প্রিয়তা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে। প্রিয়তা এক হাত সাদনানের গালে রেখে আর এক হাত নিজের জামা খামচে ধরে।
সাদনান টুপটাপ বৃষ্টির ন্যায় চুমু খেলো বউয়ের গলায় ঘাড়ে। প্রিয়তা সাদনানের দিকে ফিরে সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে পা জোরা সাদনানের পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে সাদনানের লম্বা উঁচু নাকের ডগায় চুমু খেলো।
সাদনান ভ্রু কুঁচকে তাকাল বউয়ের দিকে।আজ সেধে সেধে এতো আদর দেখাচ্ছে।সাদনান বুঝতে পারলো বউ কিছু আবদার নিশ্চয়ই করবে।
তাই আগে আগে জিগ্যেস করলো,

-“কি ব্যাপার?”
প্রিয়তা সাদনানের টি-শার্ট এর বোতাম খুলতে খুলতে আদুরে কণ্ঠে ডাকল,
-“শুনুন?”
-“বলো।”
সাদনান বউয়ের চুল ঠিক করতে করতে বলল।
প্রিয়তা ইনিয়েবিনিয়ে মিনমিন করে বলল,
-“আমার ওখানে যেতে ইচ্ছে করছে না।
না যাই প্লিজ!”

সাদনান ঠিক জানতো বউ তার এই জন্যই এতো আদর দেখাচ্ছে।
সাদনান খানিকক্ষণ সময় নীরব থাকে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়া শুরু করেছে।সাদনান নিজের হাত সহ বউয়ের হাত টা বাহিরে বৃষ্টির মধ্যে এগিয়ে দিলো।মূহুর্তের মধ্যে দু’টি হাত পানির স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠল।বৃষ্টির ঠান্ডা পানি শরীর শিহরণ বয়ে যায়।
সাদনান বউয়ের পেটে শক্ত করে চেপে ধরে বুকের মধ্যে পিষে নেওয়ার মতো করে। ঘাড়ে নাক ঘষে লম্বা শ্বাস টানে। চুলের ভাঁজে মুখ গুঁজে দিয়ে নেশাতুর কণ্ঠে সম্মতি দিয়ে জানাল,
-“আচ্ছা যাব না।”

প্রিয়তা চমকে উঠলো।সাদনান এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে প্রিয়তার ধারণাতীত ছিল।
ভেবেছে গম্ভীর কণ্ঠে বলবে,”এটা সম্ভব নয় জান” কিন্তু এখন তো বিপরীত হলো।
প্রিয়তা এই মূহুর্তে কি বলা উচিৎ মাথায় আসছে না। খুশির জোয়ারে মুখের বুলি হারিয়েছে।

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৭

সাদনান বউয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া আশাও করেনি। কারণ শব্দ গুলো সত্যি অপ্রত্যাশিত ছিল। প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে সাদনান ঝট করে কোলে তোলে নিলো।প্রিয়তা চোখ বড় বড় করে সাদনানের দিকে তাকিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে।
সাদনান রুমের উদ্দেশ্য হাঁটতে হাঁটতে বলল,
-“এমন একটা ওয়েদারে রোমাঞ্চ না করলে, নিজের সাথে ঘোর অন্যায় করা হবে আমার জান।”

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৯