আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৩
জান্নাত সুলতানা
-“বাবা-র সাথে কথা হয়েছে?”
কবির ফোন হাতে ব্যালকনি থেকে রুমে প্রবেশ করতেই তিন্নি উপরোক্ত প্রশ্ন টা করে।কবির তিন্নির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।গভীর ভাবে মেয়ে টাকে পর্যবেক্ষণ করলো।শাড়ীতে চমৎকার দেখতে লাগছে রমণী কে।সন্ধ্যায় পড়েছে শাড়ী সেই জন্য কিছু টা অবিন্যস্ত, এলোমেলো।লম্বা চুল গুলো খোঁপা বেঁধেছিল।কিন্তু এখন সেটা পুরো এলোমেলো কিছু চুল খোঁপা হতে মুক্ত পেয়েছে।যার ফলস্বরূপ সৌন্দর্য কয়েকগুণ যেনো বৃদ্ধি পেয়েছে। কবিরের ঘোর লেগে গেলো। কবির ধীরে গতিতে এগিয়ে এসে তিন্নি কে আগলে নিলো। তিন্নির এলোমেলো অবাধ্য ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
-“হুঁ।
কাল সকালে চলে আসবে।আজ না-কি মাত্র অফিস থেকে ফিরছে।”
তিন্নি নিজে কে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে বলল,
-“ছাড়ুন।
রাত ক’টা বাজে দেখছেন?ফ্রেশ হতে হবে।”
-“যাও।
দ্রুত আসবে।”
কবির তিন্নি কে ছেড়ে দিয়ে আদেশের স্বরে বলল। তিন্নি দ্রুত পায়ে নিজের ড্রেস হাতে ওয়াশরুম চলে গেলো। মানুষ টা ইদানীং বড্ড বেশি তিন্নি কে চোখে হারায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“কমনসেন্সে নেই আপনার?
রাত তিন টা বাজে একটা মেয়ের রুমে চলে এলেন!”
সারা ফিসফিস করে বলে উঠলো।
রাহান দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এলো।শক্ত হাতে খাবলে ধরে সারা’র বাহু।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।তবে কণ্ঠ শান্ত। গম্ভীর স্বরে বলে,
-“থাপ্পড়ে তোর সেন্স আমি এনে দেব।বেয়াদব।
ফাইজলামি করিস আমার সাথে?তোর ঢং আমি বেড় করে দেব।ওয়েট কর।”
সারা’র চোখের কোঠায় জল জমে।লাইট এর আলোয়ে চিকচিক করে সেই জল।রাহানের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে।এই মেয়ে এমন কেনো?এটুকুতেই কেনো এতো অভিমান করে?
-“সরি।”
রাহানের রাগ সারা’র মায়াবী মুখপানে তাকিয়ে পানির ন্যায় শান্ত হয়ে যায়।তাই তো মোহনীয় কণ্ঠে সরি বলে।কিন্তু সারা’র অভিমান তীব্র হয় এতে।প্রিয় মানুষ টার আস্কারায় চোখের কোঠায় জল গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।
-“আপনি সব সময় এমন করেন।
কথা নেই আপনার সাথে।”
সারা নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে অভিমানী স্বরে বলে।রাহান জড়িয়ে ধরে সারা কে।দিনদিন মেয়ে টা বড্ড বেশি অবুঝ হচ্ছে।
খুব শীগ্রই কিছু একটা করতে হবে। মায়া দিনদিন বেড়ে চলছে। দূরে রাখা সম্ভব না।
-“তুই কেনো এতো অবুঝ?ভার্সিটিতে পড়িস।
একটু তো আমাকে বুঝতে পারসি!সব সময় আমাকে কিভাবে রাগানো যায় সেই ফন্দি আঁটিস।”
সারা কোনো জবাব দেয় না।চুপ করে রাহানের বুকে মিশে থাকে।
ওয়াজিদ কে বাইকে বসে থাকতে দেখে রিধি ভূত দেখার মতো করে চমকে উঠলো। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“আপনি বাইক চালাতে পারেন?”
-“কেনো কোনো সন্দেহ আছে?”
রিধি ভ্রু কুঁচকে নিলো। এই লোক কোনো দিন কোনো প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দিলো না। সব সময় প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করবে।অদ্ভুত লোক।
-“ফাস্ট ওঠে আসো।”
ওয়াজিদ তাগাদা দিয়ে বলে।রিধি হাই তুলে মুখের সামনে হাত রাখে।ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।”
-“এসব কি রিধু?তুমি তো বলেছিল ঘুরতে যাবে!তাহলে!”
-“আমি কি জানতাম আমার ঘুম পেয়ে যাবে!”
-“আচ্ছা চলো যাও।
রুমে যাও।”
রিধি ওয়াজিদ এর গালে আলতো করে অধর স্পর্শ করে সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। রিধির একটু খারাপ লাগে।কিন্তু রাত বাজে তিন টা।তারউপর সন্ধ্যার পর থেকে কম দখল যায় নি।রিধি ভেতর প্রবেশ করা মাত্র কাজের লোক দরজা বন্ধ করে দিলো।ওয়াজিদ তপ্ত শ্বাস ফেলে গেইটের কাছে গিয়ে সিকিউরিটির হাতে একটা হাজার টাকার নোট গুঁজে দিতেই সিকিউরিটি মুচকি হেঁসে হাত সরিয়ে বলে উঠলো,
-“লাগবে না স্যার।
আপনি কি মনে করেছেন আমরা আপনার কথায় ম্যাডাম এর সাথে আপনাকে এতো রাতে দেখা করতে দিয়েছি!না স্যার আমাদের স্যার এর অনুমতি ছিল বলে আপনি দেখা করতে পেরেছেন।”
-“সাদনান?”
ওয়াজিদ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো।সিকিউরিটি হেঁসে ঘাড় নাড়ে। ওয়াজিদ তাও হাতের নোট টা গুঁজে দিলো সিকিউরিটির হাতে অতঃপর বাইক ওঠে স্টার্ট করে চলে গেলো।
-“একটু খেয়ে নাও।
বমি চলে যাবে।”
আয়ানের কথা শুনে মাইশা অসহায় চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে কণ্ঠ অসহায় করে বলল,
-“আমি আর খাব না।
প্লিজ আপনি এটা রেখে দিন।”
-“সোনা।এমন করলে হয়।খেতে হবে। প্লিজ একটু।”
মাইশা মুখ খুলে খাবার টা মুখে নিলো।কোনো রকম দু’বার নিয়ে আর নিলো না।আয়ান অনেকবার জোর করেও দিতে পারে না।
বাধ্য হয়ে খাবার রেখে হাত ধুয়ে এলো।মাইশা তখন বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
আয়ান এগিয়ে এসে বউয়ের মুখে ক’টা বাদাম পুরে দিলো। মাইশা ওয়াক করে ফেলে দিতে গিয়েও পারে না। আয়ান নিজের অধর বউয়ের অধর চেপে ধরে রাখে।মাইশা আয়ানের পিঠে কিল-ঘুষি দিয়েও কোনো কিছু করতে না পেরে মুখের খাবার গিলে নেয়।
-“দেখলে চেষ্টা করলে অবশ্যই খেতে পারবে।
তুমি বমি করার ভয়ে খাবার খেতে চাও না।”
কথা টা শেষ করে পরপরই আবার বলে উঠলো,
-“শুধু শুধু আমার মেয়ে কে না খাইয়ে রাখো।”
-“মোটেও আপনার মেয়ে হবে না।
আমার ছেলে হবে।”
মাইশা নাক মুখ কুঁচকে বলে উঠলো।
আয়ান হেঁসে দিয়ে বলল,
-“আল্লাহ যা দেয় তাই আলহামদুলিল্লাহ।”
-“জান উঠো।
ফ্রেশ হয়ে খেতে হবে।”
সাদনান বউয়ের পাশে বসে ডেকে ওঠে বলল।প্রিয়তা ঘুমঘুম কণ্ঠে অনুরোধ স্বরে বলল,
-“প্লিজ না।
আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি খেয়ে শুয়ে পড়ুন।”
-“একদম না।
উঠো।খেতে হবে।”
প্রিয়তার কোনো কথা শুনলো না সাদনান।কোলে তুলে ওয়াশ রুমে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে রুমে নিয়ে এলো।প্রিয়তা পানির ছোঁয়া পেতেই ঘুম সব উড়ে গেলো। তবে রেশ টা এখনো কাটে নি। ঝিম মেরে বসে থাকে।সাদনান সেন্টার টেবিলের উপর প্লেট দিয়ে ডেকে রাখা খাবার প্লেট হাতে নিয়ে বউয়ের পাশে বসলো।প্রিয়তার মুখে খাবার দিতেই প্রিয়তা চুপচাপ খেয়ে নিলো।সারা দিন অনেক দখল গিয়েছে। খাবার ঠিকঠাক মতো খেতে পারে নি। অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কতক্ষণ আগে। শরীর আর খাবার খাওয়ার জন্য সায় দিচ্ছিল না।
তাই তো রুমে এসে শুয়ে পড়েছিল।সাদনান রুমে ছিল না। রুমে এসেই ডাকাডাকি শুরু করে দেয়।আর নিজে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার নিয়ে রুমে এসেও যখন প্রিয়তা কে শুয়ে থাকতে দেখে খাবার রেখে নিজে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে এলো। পেটে ক্ষুধা থাকায় বেশ অনেক টা খাবার খেলো প্রিয়তা।সাদনান নিজেও একই প্লেটে খেয়ে নিলো।এঁটো প্লেট রেখে হাত ধুয়ে লাইট অফ করে বিছানায় বউয়ের পাশে শোয়া মাত্র প্রিয়তা সাদনানের লাল রঙের টি-শার্ট এর বোতাম একটা একটা করে দু’টো বোতাম খোলা মাত্রই সাদনান প্রিয়তা কে বুকের উপর থেকে নিজের নিচে ফেলে দিলো।
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২২
ঘাড়ে মুখ গুঁজে গলায় কামড় বসাল। প্রিয়তা আর্তনাদ করতেই সাদনান সরে গেলো প্রিয়তার উপর থেকে।
প্রিয়তা ফের টেনে ধরে সাদনান কে।সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। কিছু টা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“এতোক্ষণ ঘুমিয়ে যাচ্ছিলে।এখন আবার আদর চাই!”
প্রিয়তা জবাব দিলো না। কাচুমাচু ভঙ্গিতে সাদনান বুকে মুখ লুকাল। সাদনান শব্দ করে হেঁসে বউ কে শক্ত করে ধরে আলিঙ্গন করে।