আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৭

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৭
জান্নাত সুলতানা

-“না যাই প্লিজ।
আপনিও দেশে শিফট করেন।”
রিধির কথায় ওয়াজিদ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। এগিয়ে এসে বিছানায় রিধির পাশে বসে ওর একটা হাত ওয়াজিদ এর হাতের মুঠোয় পুরো নিলো।বোঝানোর স্বরে বলল,
-“রিধু এমন টা কথা ছিল না।
যেতে হবে দু’দিন পর ফ্লাইট।”

-“তো আপনি যান।
তারপর সব সেটেল্ড করে চলে আসুনন,,,
-“মেরে ফেলবো।তুমি ছাড়া এতোদিন অসম্ভব।
যতদিন থাকি তোমাকেও যেতে হবে।”
ওয়াজিদ রিধি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বলে উঠলো।রিধি হাসলো।মানুষ টা বড্ড বেশি ভালোবাসে ওকে।বিয়ের পর একটা রাতও গিয়ে মির্জা বাড়ি থাকতে দেয় নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তিন্নি আজ ভার্সিটিতে এসছে।খুব সকালে।কবির নিজেও তিন্নির আগে এসেছে।
তবে তিন্নি এতো তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে এসছে কবির জানতো না।তাকে খবর টা বাড়ি থেকে জানিয়েছে কাজের লোক।সাথে এটাও জানিয়েছে তিন্নি সকালে কোনো খাবার খায় নি।তখন থেকে কবির এর মেজাজ তুঙ্গে। শুধু ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে সেজন্য কিছু করতে পারে নি। তবে নিজের ক্লাস ছিল তৃতীয় ঘন্টায়।কিন্তু কবির আজ ক্লাস করাবে না।একজন পিয়ন দিয়ে তিন্নি কে ডেকে পাঠিয়েছে।

আর এখন বসে বসে তিন্নির আসার প্রহর গুনছে।এদিকে তিন্নি কবিরের কেবিনের সামনে এসে অনেক সময় হয় দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। সে জানে কবির এতোক্ষণ সব জেনে গিয়েছে আর সেই জন্যই তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। আর মানুষ টা যে ওর উপর রেগে আছে সেটাও ভালোই বুঝতে পারছে।তবে সব ভয় ঠেলে সরিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো। কবির ল্যাপটপ স্কিনে তাকিয়ে ছিল।কারোর রুমে প্রবেশ করার শব্দ বুঝতে বাকি থাকে না কে এসছে।একবার চোখ তুলে সামনে তাকলো।পরপরই দৃষ্টি সরিয়ে আদেশের স্বরে বললো,

-“বসো।”
তিন্নি কাঁপা কাঁপা পা জোরা টেনে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো। বসার মতো সাহস কুলাতে পারে না।কবির শান্ত। তিন্নির সেটা দেখে আরো বেশি ভয় লাগছে। তিন্নি কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কবির এবার কিছু টা খেঁকিয়ে ওঠে বলে উঠলো,
-“বসতে বলি নি! বসো।”

তিন্নি চট করে ঘুরে এগিয়ে গিয়ে কবির এর কোলে বসলো।কবির কিছু টা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।পরক্ষণেই বউয়ের কোমড় দুই হাত রাখলো।মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। তিন্নি কবির এর গলা জড়িয়ে ধরে বাচ্চা ফেস করে বলল,
-“জানেন আমি যে এতিমখানায় থাকতাম। সেখানের একজন মহিলা আছে বৃদ্ধা।আমরা সবাই ওনাকে দাদি ডাকি।ওনি অসুস্থ। তাই সকালে আপনি বেরিয়ে আসার পর আমিও,,,
-“না খেয়ে দেখতে চলে গিয়েছিলে।

আমাকে বললে আমি নিয়ে যেতাম না?একা কোথাও যেতে কত বার বারণ করেছি। কেনো শোনো আমার কথা?”
-“আমার অভ্যাস আছে একা একা চলাফেরা করার।”
-“কিন্তু এখন তুমি একা নয়।
তোমার হাসবেন্ড রয়েছে। একটা বাবা রয়েছে।অনেক বড় একটা পরিবার হয়েছে।তারচাইতেও ইম্পরট্যান্ট কথা আমার ভয় হয়।আতংকে থাকি।”

তিন্নি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে অনিমেষে কবিরের চিন্তিত মুখপানে।
এর আগে কখনো ওকে নিয়ে এভাবে কেউ ভাবে নি, হারানোর ভয় পায় নি।এখন এসব নিজের মনে বাঁচার তীব্র ইচ্ছে জায়গায়। এই মানুষ গুলো কে নিয়ে অনেক বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে সুন্দর সুন্দর মূহুর্ত কাটাতে ইচ্ছে করে। আর সেগুলো সৃতি বন্দী করে ভবিষ্যতে সেগুলোর সৃতিচারণ ঘটাতে চায়।

তিন্নির ভাবনার মাঝেই কবির ব্লুটুথ চাপলো দুইবার।বারো পনেরো সেকেন্ড এর মাথায় কাউ কে বলল,
-“হ্যাঁ একটা বিরিয়ানির প্যাকেট, একটা আইসক্রিম, হ্যাঁ,না আর কিছু না।হুম কেবিনে দিয়েন।”
তিন্নি ভ্রু কুঁচকে নিলো।মানুষ টা কি পাগল হলো?এখন সাড়ে বারো টা অলরেডি বেজে গিয়েছে। আর ঘন্টা দুই পর বাড়ি চলে যাব।এখন এমন পাগলামির মানে হয়?
তিন্নি কবিরের কোল থেকে উঠার চেষ্টা করতে করতে বলল,

-“একটু পর বাড়িতে চলে যাব।
আমি যাচ্ছি।”
-“এক পা নাড়াবে না খবরদার।
বসো।”
তিন্নি চুপ করে ওঠে এসে সামনে চেয়ারে বসলো।কবির ফের ল্যাপটপে মনোযোগ দিলো। মিনিট পাঁচ মিনিট এর মাথায় কেবিনের দরজায় টোকা পড়ে।কবির উঠে গিয়ে একটা প্যাকেট হাতে ফিরে এলো।
তিন্নির সামনে রেখে আদেশের স্বরে বলে উঠলো,

-“একটাও যেনো পড়ে না থাকে।নাউ স্টার্ট।”
তিন্নি একপলক তাকালো খাবার এর দিকে। এক প্যাকেট বিরিয়ানি তিন্নি চোখ বড় বড় হয়ে এলো।সে আজ পর্যন্ত কখনো এক প্যাকেট বিরিয়ানি সহিসালামতে খেতে পারে নি।যদিও তিন্নির বিরিয়ানি খুব ফেবারিট। তারপরও কেনো জানি বেশি খেতে পারে না। ঠেলেঠুলে অর্ধেক। তিন্নি কে একই ভাবে বসে থাকতে দেখে কবির কিছু টা ধমকের স্বরে বলল,

-“বসে থাকার জন্য ডাকি নি আমি তোমায়।
খাবার খেয়ে ঝটপট ক্লাসে যাও।”
তিন্নি ওঠে গিয়ে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে প্যাকেট খুলে কবিরের কাছে চেয়ার টা টেনে নিয়ে বসলো।অতঃপর নিজের সাথে কবির কেও খাইয়ে দিলো। কবির প্রথমে ধমক দিলো পরে বউয়ের টলমল চোখের দিকে তাকিয়ে মায়া হয়।তাই কিছু না বলে খেয়ে নিলো।

সাদনান গাড়িতে বসে আছে।এখন দুপুর মূলত বউ আর বোন কে নিতে ভার্সিটির পাশে অপেক্ষা করছে।পাশে রাহান বসে আছে।সাদনান ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। রাহান তখন বলল,
-“বলছিলাম বাবা-র সাথে কি কথা বলব?”
-“এতো তাড়া কিসের!আস্তে ধীরে হোক না।”
-“যা সালা তুই তাহলে জানিস না।তোর বাপের মতিগতি আমার ঠিক লাগছে না।”
-“কেনো?”

-“আমাদের নেক্সট ডিল টা যেই কোম্পানির সাথে হওয়ার কথা। ওই কোম্পানির মালিকের ছেলে।
বিদেশ রয়েছে। লেখাপড়া শেষ হয়তো খুব তাড়াতাড়ি দেশে চলে আসবে।”
-“এতে তোর কি সমস্যা?”
-“তোর বাপের মনে অন্য কিছু চলছে।
দেখলি না সেদিন ওই ব্যাটা কে বাড়িতে ডেকে কত আদর আপ্যায়ন করলো।”
সাদনান এবার একটু ভাবুক হলো।সত্যি সেদিন একজন বাড়িতে এসছিল।তার বাবা আজ্জম মির্জা সে কি এলাহি আয়োজন করে লোকটা কে আমন্ত্রণ জানালো। তবে সে বিষয় টা তেমন পাত্তা দেয় নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পাত্তা দেওয়া প্রয়োজন।
সাদনান কিছু বলবে তার আগেই সারা আর প্রিয়তা চলে এলো।তাই আর কেউ এব্যাপারে কিচ্ছু বলল না।

মির্জা বাড়ির সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে।আজ সবাই এক সাথে হয়েছে অনেক দিন পর।খাবার শেষ লিভিং রুমে বৈঠক বসলো।অনেক্ক্ষণ গল্পগুজব করলো।রাত বেশি হচ্ছে বিধায় জাফর মির্জা আম্বিয়া মির্জা কক্ষে চলে গেলো। সারা রাহাত আয়না প্রিয়তা ওরাও যে যার রুমে চলে গেলো।
রাহান সাদনান আজ্জম মির্জা সুফিয়া বেগম সালেহা বেগম মফিজুর মির্জা রোজিনা বেগম শুধু বসে রইলো।সাদনান বাবা আর চাচার ব্যবসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে সে-সব শুনছে।এক পর্যায়ে আজ্জম মির্জা ছেলে কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-“তোমার সাথে অনেক দিন ধরে একটা বিষয় আলোচনা করব করব করে আর বলা হচ্ছে না।”
-“এখন বলো।
শুনছি।”
সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে বলল।
আজ্জম মির্জা একটু নড়েচড়ে বসলো।সবার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
-“ইয়ে মানে!বলছিলাম কি বিশিষ্ট শিল্পপতি কাদের শেখ। ওনার সাথে একটা ডিল নিয়ে কথাবার্তা চলছে।ডিল টা আমাদের কোম্পানি পেলে ভীষণ ভালো হবে। না পেলে তেমন কোনো লোকসান হবে না।পেন্ডিং আছে এটা।এখন ওনার সাথে কোনো ভাবে আমাদের সম্পর্ক টা যদি মজবুত করা যায়।তাহলে ডিল কনফার্ম।”

-“এরজন্য কি করতে হবে?”
সাদনান কোনো ভণিতা ছাড়া জিগ্যেস করলো। আজ্জম মির্জা এই পর্যায়ে এসে একটু ভিতু হলেন।আমতা আমতা করে জানালো,
-“সেদিন বাড়ি এলো না।
তখন সারা কে দেখেছে ওনার ছেলে মালদ্বীপ রয়েছে বর্তমানে খুব শীগ্রই দে-শে ফিরবে।বিয়ের ব্যাপারে এগুতে চাইছে।”
-“না করে দাও।
ডিলও করতে হবে না। আমি আমার বোনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি।”
সাদনানের শান্ত কণ্ঠে বিস্ফোরণ ঘটালো সবার মাঝে। রাহান নির্বিকার সাদনানের পাশে বসে আছে। আজ্জম মির্জা কিছু টা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

-“কি সব বলছো?
বিয়ে ঠিক করে রেখেছো মানে কি?ছেলে কি করে?জাতবংশ বাড়ি কোথায়?”
-“কাল কথা বলছি এব্যাপারে তোমার সাথে। এখন আমার বউ নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমাকে যেতে হবে।”
কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো সবার।কেমন একটু বেশরম শোনাল বাক্য গুলো। সাদনান সে-সব উপেক্ষা করে বসা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল।গেঞ্জি টেনেটুনে ঠিক করে উপরে নিজের রুমে চলে এলো।

প্রিয়তা বিছানায় শুয়ে আছে। হাতে ফোন। সাদনানের যা দেখে মেজাজ খারাপ হলো।বউ কেনো রাতে ফোন নিয়ে শুয়ে থাকবে?জামাই আছে জামাই কে সময় দিবে।এগিয়ে গেলো।প্রিয়তার হাত থেকে ফোন টেনে নিয়ে দূরে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে দিলো। প্রিয়তা আকস্মিক ঘটনায় ভড়কে গিয়ে শোয়া থেকে ওঠে বসে গেলো।সাদনান কে চোখ লাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আস্তে করে একবার ঢুক গিলে নিলো। সাদনান বাড়ি থাকলে প্রিয়তা কখনো ফোন হাতে নিতে পারে। সাদনান পছন্দ করে না।প্রিয়তা নিজেও ধরে না ফোন। কিন্তু এখন ঘুম আসছিল না।আর সাদনান রুমে ছিল না সেইজন্যই ধরে ছিল।কিন্তু কে জানতো এই রাক্ষস গম্ভীর পুরুষের আগমন এখনই ঘটবে!

সাদনান প্রথমে রেগে থাকলে পরবর্তীতে রাগ পড়ে যায়।সামন্য অসুস্থ বউ।এমন ব্যবহার করা মোটেও ঠিক হয় নি।
সাদনান হঠাৎ করে প্রিয়তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা একটু চমকে যায়।তবে নিজে কে ধাতস্থ করে সাদনানের ঘনকালো জঙ্গলের ন্যায় চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালায়।দু-তিন মিনিট এভাবে অতিবাহিত হলো।কেউ কোনো কথা বলল না। হঠাৎ করেই সাদনান বলে উঠলো,

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৬

-“ব্যালকনিতে যাবে?
চলো না যাই!”
প্রিয়তা অবাক হলো।আজ মোটেও আকাশে চাঁদ নেই। অন্ধকার আকাশ।মেঘ আকাশে সন্ধ্যের আবার বৃষ্টি হয়েছে।
-“অন্ধকার।”
-“ভয় নেই সুন্দর নারী।
তোমার মন্ত্রী মশাই আছে।”

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৮