আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩
জান্নাত সুলতানা
সাদনান সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিজের বুকের উপর বউয়ের অস্তিত্ব টের পেলো। এক চিলতে হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে।
নিজের মাথা টা সামন্য উঁচু করে প্রিয়তার মাথায় চুলের ভাঁজে নিজের অধর জোড়া ছুঁয়ে দিলো। নিজের উপর থেকে সরিয়ে প্রিয়তা কে নিজের একটা বাহুর উপর রেখে একপাশ ফিরে শুয়ে প্রিয়তার মুখের উপর থেকে সাবধানের সহিত এলোমেলো হয়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে অপলক তাকিয়ে রইলো বউয়ের মুখপানে।
গোলগাল ছোট মুখটা ঘুমন্ত অবস্থায় দারুণ মায়াবী লাগছে দেখতে। সাদনান একবার বউয়ের কপালে আলতো করে নিজের অধর জোড়া ছুঁয়ে দিলো। প্রিয়তা নড়েচড়ে ওঠে।সাদনান চুপ করে তাকিয়ে থাকে।এরমধ্যে হঠাৎ সাদনান এর ফোন টা বেজে উঠল। সাদনান তড়িঘড়ি করে বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে সাইড বাটন চাপে।
অতঃপর আলগোছে প্রিয়তা কে বালিশে শুইয়ে নিজে বিছানা ছেড়ে নিঃশব্দে ব্যালকনিতে চলে গেলো। ফোনে অনেকটা সময় কথা বলে সাদনান রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। সকাল সাড়ে সাত টা বাজে তখন। সাদনান ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে প্রিয়তার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রিয়তার ললাটে ফের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিলো।নিজের মুখ টা এগিয়ে নিয়ে প্রিয়তার কানের কাছে বিড়বিড় করে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“দ্রুত ফিরে আসার চেষ্টা করব।
ভিন্ন কিছু দেখার অপেক্ষা।”
কথা শেষ সাদনান মুচকি হেঁসে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।
সাদনান আর জাফর মির্জা বাড়ি নেই।সেই সকালে দাদা-নাতি কোথাও বেরিয়েছে।হয়তো কোনো জরুরি কাজে।সামনে ইলেকশন।
প্রিয়তা বিকেল টা আয়না, মাইশা আর ইনিয়ার সাথে থেকে কেটে গেলো। বেলা এগারো টা নাগাদ আবার আয়ান বোন কে দেখতে এসছিল।প্রিয়তা তখন ভীষণ খুশি হয়েছিল পরক্ষণেই ভাই চলে যাও মনও খারাপ হয়েছিল।তবে বড় বোন সাথে রয়েছে আর বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি মেয়েদের নিজের বাড়ি।তাই যতদ্রুত সম্ভব সবাই কে আপন ভেবে সংসারে মন দেওয়া শ্রেয়। এমনটাই আম্বিয়া মির্জা উপদেশ দিয়েছে প্রিয়তা কে।প্রিয়তা শুধু চুপচাপ শুনে গিয়েছে। হয়তো সত্যি।রাতে রান্না প্রিয়তা শ্বাশুড়ির হাতে হাতে এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করল।আয়না নিজের মেয়ে কে রেখেছে। প্রিয়তা অবশ্য পরে সালেহা বেগম আর সুফিয়া বেগম ঠেলাঠেলিতে রান্না ঘর থেকে নিজের ঘরে এলো বাধ্য হয়ে।
প্রিয়তা রুমে আসার পর কি মনে করে আলমারি খুলে সেখান থেকে একটা ট্রাউজার আর একটা নীল রঙের গেঞ্জি নামিয়ে বিছানায় রেখে দিয়ে নিজে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রইল।বেশ অনেক টা সময় পর একটা গাড়ী এলো বাড়িতে। সাদনান এর ব্যালকনি হতে বাড়ির গেইট একদম বরাবর হওয়ায় প্রিয়তার নজরে এলো।সাদনান গাড়ি থেকে নেমে দারোয়ান এর হাতে চাবি দিয়ে একবার নিজের রুমের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।অতঃপর জাফর মির্জা কে সাথে নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
প্রিয়তা সাদনান কে এদিকে তাকাতে দেখে ভাবুক হলো।মানুষ টা বড্ড রহস্যময়।
প্রিয়তা ব্যালকনি থেকে রুমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাদনান রুমে এসে দরজা আটকে নিজের গায়ের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে কৌতূহল নিয়ে বলল,
-“মনে হচ্ছে আমায় মিস করছিলে!
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে!”
প্রিয়তা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।
প্রিয়তা যতটুকু জানে বা এতো বছর ধরে যেমন টা দেখে এসছে আর আজ দু’দিন ধরে যে সাদনান ভাই কে দেখছে তার মধ্যে আগের সাদনান ভাই আর এখনকার সাদনান ভাইয়ের একদমই মিল নেই। স্বভাবসুলভ সাদনান গম্ভীর খুব কম কথা বলে।আর ভীষণ রাগী সেখানে এমন মানুষ টার এই স্বাভাবিক আচরণ প্রিয়তার নিকট বরই অবাক আর অস্বাভাবিক লাগছে।।
তবে নিজের স্বভাব আর সাদনান ভাই এর সাথে কোনো স্বাভাবিক কথা বার্তা কখনো না হওয়ায় এবারেও চুপ রইল প্রিয়তা।
সাদনান ততক্ষণে নিজের গায়ের পাঞ্জাবি খুলে সোফায় রেখে ড্রেস এর জন্য কাবাড এর দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হতেই নজর পরে বিছানায় কাপড় নামিয়ে রাখা দেখে বলল,
-“বাহ্।
এখন থেকে স্বামীর যত্নআত্তি করতে শুরু করে দিয়েছো!
আ’ম ইমপ্রেস।”
সাদনান কথা টা বলে হাসতে হাসতে ওয়াশ রুম চলে গেলো।
এই লোকের হয়েছে কি?প্রিয়তা আপনমনে বিড়বিড় করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
-“সরি জান আমি আর কোনো রিস্ক নিতে পারছি না।
আমি আজ বাবার সাথে কথা বলে সব ফাইনাল করব।”
আয়ানের কথায় ফোনের ওপাশের রমণী বোধহয় হাসল।আয়ান সেটা ফোনের মধ্যেও ঠাহর করতে পারল।
গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
-“তুমি হাসছ?
আশ্চর্য!এটা মোটেও হাসার সময় নয়।
আমি রোজরোজ এতো আতংক আর তোমাকে হারানোর ভয় নিয়ে থাকতে পারছি না।”
মাইশা এবার শব্দ করে হেঁসে উঠলো। আয়ান অন্য সময় হলে হয়তো এই হাসি নিয়ে একদফা বর্ণনা করত।কবিতা বলে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করত।কিন্তু এখন এই হাসি টা তার নিকট নিজের অসহ্য মনে হলো।মেয়ে টা হাসছে এমন একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়েও।ভাবা যায়?
-“শুনুন, বিয়ের উপযোগী মেয়ে ঘরে থাকলে সম্বন্ধ আসবেই।দেখতেই আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।
এটা নিয়ে এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে?”
আয়ান চুপ করে রইল।তবে মনে মনে ঠিক কি করবে সেটাও স্থির করে।
আজ গিয়েছিল আয়ান মির্জা বাড়ি।বোন কে দেখতে। মাইশা বাড়ি ছিল না।বাড়িতে আম্বিয়া মির্জার কিছু আত্মীয় এসছে। মুলত মাইশা কে দেখতে তবে হঠাৎ করেই।
আয়ান তখন থেকে অস্থির।
আয়ান কে কোনো প্রতিত্তোর করতে না শোনে মাইশা ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,
-“কিছু বলছেন না কেনো?”
-“অনেক রাত হয়েছে।
ঘুমিয়ে পড়ো।”
মাইশা ঘড়ি দেখলো সত্যি রাত অনেক হয়েছে। তাই রোজকার মতো ভালোবাসি বলে আয়ান ফিরতি আমিও ভালোবাসি বলে ফোন কাটে।
আয়ান ফোন রেখে বাবা মায়ের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
রাত তখন অনেক টা।শফিক সওদাগর নিজের অভ্যাস মোতাবেক রুমে বসে বই পড়ছিল।মিতা সওদাগর তখন ঘুমিয়ে পড়েছে।
আয়ান গিয়ে দরজায় নক করতে শফিক সওদাগর ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়।আবার মনে মনে একটু চিন্তিত হয়।এতো রাতে ছেলে কেনো এসছে ভেবে।
-“বাবা আমি বিয়ে করব।
কাল মেয়ে দেখতে যাবে।”
আয়ান রুমে প্রবেশ করেই কোনো বনিতা না করেই সোজাসুজি জানি দিলো।
শফিক সওদাগর নড়েচড়ে বসলো।বই বন্ধ করে চোখের চশমা টা একটু ঠেলে দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“কি সব বলছো?
মাথা ঠিক আছে?
রাত ক’টা বাজে দেখেছো তুমি?”
-“কেনো তুমি আর মা তো এতোদিন বিয়ের জন্য পাগল করে দিচ্ছিলে।আমি তো বনুর বিয়ের পর করব বলেছি।
তাহলে এখন এসব কেনো বলছো?”
শফিক সওদাগর এপর্যায়ে এসে চুপসে গেলো। হ্যাঁ তা ঠিক তবে ছেলে এতো রাতে কেন এ-সব নিয়ে পড়েছে?বিয়ে করবে এটা তো সকালেও বলা যেতো।তারা কি বারণ করছে যে বিয়ে করাবে ন! তাই রাতবিরেত এসে তাদের রাজি করানোর চেষ্টা করছে! ততক্ষণে মিতা সওদাগরও ঘুম থেকে ওঠে গিয়েছে। ছেলে আর স্বামীর কথোপকথন শুনে ব্যাপার টা বোঝার চেষ্টা করল।সফলও হলো।ছেলের পক্ষে নিয়ে বলল,
-“হ্যাঁ ঠিক।
আমরা তো চাই।বাবা তোর মেয়ে পছন্দ আছে?”
-“হ্যাঁ।
তোমার ছেলের বাবা কে বলে দাও।
মফিজুর মির্জার সাথে কথা বলতে।
বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নেব।”
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২
আয়ান কথা গুলো খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে রুম হতে বেড়িয়ে এলো।বুকে একবার থুতু দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে রুমের ভেতর একবার উঁকি দিয়ে দেখলো মিতা সওদাগর হাসিহাসি মুখে শফিক সওদাগর কে কিছু বলছে।আর শফিক সওদাগর অনুভূতিহীন। হয়তো ওনি ভাবতে পারে নি ছেলে তার তলেতলে টেম্পো চাচ্ছে। আয়ান বিশ্ব জয় করা হাসি দিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটতে হাঁটতে নিজে কে বাহ্ বাহ্ দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
-“সাব্বাশ মাহমুদ আয়ান সওদাগর সাব্বাশ।”