আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩০
জান্নাত সুলতানা
-“অলরেডি অনেকটা লেইট্ মিস্টার কবির।
টেন পারসেন্ট আশা।
খুব সাবধানে সতর্কতার সহিত থাকতে হবে।ফুল বেড রেস্ট।একটা পানির জগে এক লিটার পানি ধরে।সেটাও তিন্নি নিজে ক্যারি করতে পারবে না। জগ থেকে পানি টা ওকে ঢেলে দিতে হবে।”
তিন্নি স্তব্ধ হয়ে সামনে বসা ডক্টর তাসলিমার কথা গুলো শুনে যাচ্ছে।
কি থেকে কি হচ্ছে? সবে তো এক মাস চলে।এতেই এতো রিস্ক?একদমই আশা নেই?কি হবে সামনে? থাকবে তো বেবি টা?
কবির ডক্টর এর সাথে কথা বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।খুব ধীরে তিন্নি কে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো।কবির তিন্নি যাওয়া মাত্র ডক্টর তাসলিমা মফিজুর মির্জা কে কল লাগালেন।
পূর্বপরিচিত তারা।মির্জা বাড়ির বাঁধা একজন ডক্টর বলা চলে ডক্টর তাসলিমা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাথে গাইনী ডক্টর। ওয়াজিদ রিধির বিয়েতে গিয়ে তিন্নির সাথে পরিচিত হয়েছিল।পরিবার নেই।এতিম জানতে পেরে তখন থেকে মেয়েটার প্রতি একটু আলাদা মায়া কাজ করে।আর একজন মেয়ের এই অবস্থায় নিজের পরিবার কে সব চেয়ে বেশি মিস করে। সেখানে তিন্নি ভিন্ন। বাচ্চা টা এখনো নিদিষ্ট স্থানে এসে পৌঁছায় নি।টিকতে পারে আবার নাও।এই দোটানায় একটা মেয়ে নিশ্চয়ই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরবে।তাই মনোবল ধীর করার জন্য মানসিক সাপোর্ট ভিষণ প্রয়োজন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কবির তিন্নি পার্কিং লটে পৌঁছাতেই মির্জা বাড়ির একটা সিলভার রঙের গাড়ি শাঁই শাঁই করে এসে ওদের গাড়ির পাশে থামলো।সেখান থেকে মফিজুর মির্জা আজ্জম মির্জা সহ রোজিনা বেগম নামলো।তারা তিন ভাই বোন গিয়েছিল আজ তাদের যে স্কুল টা রয়েছে সেখানে। আর সেখানে সভা শেষ বেরুতেই ডক্টর এর ফোন পেয়ে ছুটে এসছে।রোজিনা বেগম তিন্নি কে আগলে নিলো।হাসি মুখে সব জিগ্যেস করে কবির এর গাড়িতে বসলো।কবির অবাক হয়ে শুধু দেখছে।কি হচ্ছে? ওনারা কোথা থেকে এলো কিছু মাথায় আসছে না।
কবির থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ্জম মির্জা থমথমে কণ্ঠে কবির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-“গাড়ি গুলো মির্জা বাড়ি যাবে সোজা।
কোনো রূপ বাক্য শুনতে চাই না আমি।”
তিন্নি আসা মাত্র মির্জা বাড়ি যেনো আরো উল্লাসে মেতে উঠলো।রান্না বান্না। পরিবেশ টা কিছু টা রমরমা হয়ে গেলো। শুক্রবার বিধায় কবির একদম ফ্রী।তাকেও জোর জবরদস্তি করে সবাই রেখে দিয়েছে। কালাম খান কে সব জানানো হয়েছে। যদিও তিনি বেশি খুশি হোন নি তিন্নি মির্জা বাড়ি বেশ কিছু দিন থাকবে বলে।কিন্তু তিন্নির কন্ডিশন এর কথা ভেবে কিছু বলতে পারে নি।অবশ্যই খান বাড়ি থাকলেও কোনো সমস্যা হতো না।দুই দুই জন কাজের লোক রয়েছে দরকার পড়লে আরো নিতেন।তবে এমন অবস্থায় একটা মেয়ের সবচেয়ে বেশি যাকে প্রয়োজন সে হচ্ছে এক মাত্র মা। আর মির্জা বাড়িতে তিন্নির দুই দুই টা মা রয়েছে। তারা কখনো যে তিন্নি কে এমন অবস্থায় বাড়ি যেতে দিবে না সেটা দুই বাপ ছেলে ভালোই জানে।তাই তো কালাম খান কিছু বলে না।
তিন্নির সাথে দেখা করে দুপুরে খাবার খেয়ে বাড়ি চলে যায়।তখন সবাই লিভিং রুমে বসে ছিলো।একমাত্র সাদনান আর রাহান বাদে সবাই আজ বাড়িতে। তবে আজ্জম মির্জা ছেলের কথা মতো রেডি হয়ে চলে গেলো সাদনান এর দেওয়া এড্রেস অনুযায়ী একটা রেস্টুরেন্টে।
লিভিং রুমে তখন কবির অসহায় এর মতো বসে আছে। বউ কে সে এই বাড়ি আসার পর একবারও পায় নি।তিন্নি আর কবির কে নিচে লিভিং রুমের পাশে একটা বেডরুমে দিয়েছে। আর সেখানে তিন্নি বিছানায় আধশোয়া করে কেউ না কেউ ওর কাছে গল্প করছে বসে বসে।
তাই কবির রুম হতে বেরিয়ে এসছে।এতো মহিলার ভীড়ে থাকা সম্ভব না-কি!
আধঘন্টা নাগাদ আজ্জম মির্জা সহ সাদনান রাহান একটা টেবিলে বসে আছে। রেস্টুরেন্ট বেশ নামী-দামী।
সোফায় গা এলিয়ে সাদনান ফোনে স্ক্রল করছে।একটা বড়সড় রুমের মতোই কিছু টা। এটার বাহিরে রয়েছে গার্ড সব সাদনানের। আজ্জম মির্জা বারংবারই এখানে প্রবেশ করার সেই স্থানের দিকে তাকাচ্ছে।তিনি ছেলের এমন ভাবভঙ্গি দেখে বড়ই বিরক্ত হলেন।কিছু টা বিরক্তিকর স্বরে বলে উঠলো,
-“কি ব্যাপার তোমার পাত্র এখনো কেনো আসছে না?
আর কতক্ষণ বসে থাকবো!আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেলো।”
-“এখনো তো আমার বাচ্চাকাচ্চা পালা বাকি বাবা।
আর তোমার এক্ষুনি কোমড় ব্যাথা?আজই ডক্টর দেখাতে হবে।”
সাদনানের চিন্তিত কণ্ঠে শুনে আজ্জম মির্জার কপালে বিরক্তির ভাঁজ পরে। ছেলের কথার কোনো যুক্তি তিনি খোঁজে পেলেন না।ভ্রু কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুঁচকে শুধালো,
-“তোমার বাচ্চার সাথে আমার কোমড় ব্যাথার কি সম্পর্ক?”
-“সেকি কথা?বাচ্চাদের সাথে খেলতে হবে না!ওদের রাখতে হবে না। নয়তো আমার বউ আমাকে সময় দিতে পারবে না যে।”
সাদনানের কথার ভাব এমন মনে হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে সে।আজ্জম মির্জার কান গরম হয়ে আসে।ছেলে টা কোনো দিন ঠিক হবে না। সব সময় তাকে লজ্জায় ফেলবে।তিনি কিছু টা দাঁত কটমট করে বলল,
-“চুপ করো বেয়াদব ছেলে।
তোমার এসব কথাবার্তা শোনার জন্য আজ ছুটির দিনেও আমি দৌড়ে উপজেলায় আসি নি।”
-“মিথ্যা কেনো বলছো?
তুমি দৌড়ে কখন এলে?তুমি বিএমডব্লিউ কারে করে এসছো।যেটা এসি সহ বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত।”
সাদনানের কথায় রাহানের পেট মুচড়ে হাসি পেলো। তবে হাসলো না।এখনো হাসলে নিজের কপালে শনি রবি সবই আছে। আজ্জম মির্জা তাজ্জব বনে বসে আছে।সাদনান রাহানের দিকে একবার তাকিয়ে এবার নড়েচড়ে বসলো।
সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল,
-“বাবা সারা আমাদের সবার আদরের। ওর কষ্ট হয়। ও দুঃখ পাবে এমন কিছু আমি তুমি ইভেন আমরা কেউ করবো না।ও যদি অল্পতে খুশি থাকতে পারে আমরা কেনো ওর সেই খুশি ছিনিয়ে নেব?অবশ্যই না।ওর খুশিতে আমরা খুশি।ও ভালো থাকলে আমরা নিশ্চিন্তে থাকবো।আর আমার মনে হয় ও ওর ভালোবাসার মানুষ টার সাথেই খুশি থাকবে।”
হঠাৎ কেনো সাদনান এসব বলছে কিছু মাথায় এলো না আজ্জম মির্জার।তবে লাস্ট কথা টায় তিনি অনেক টাই অবাক হয়েছে।সারা এমন কিছু করেছে?তাহলে তিনি কিছু টের পেলো না কেনো?অবশ্য পাবেই বা কি করে একজন মেয়ে যদি এমন কিছু করে তবে সবার আগে সেটা তার মায়ের কাছে ধরা পরে। সেক্ষেত্রে তিনি তো বাবা।আর যদিও এসব করেই থাকে!তাহলে সালেহা কেনো তাকে কিছু বললো না?না-কি সেও জানে না এসব?না-কি জানে ইচ্ছে করে বলে নি?আজ্জম মির্জা থমথমে কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“কি বলতে চাইছো?
সারা?”
-“হ্যাঁ মামা।
আমি সারা কে ভালোবাসি।”
আজ্জম মির্জা মনে মনে এতোক্ষণ প্রশ্নের ঝড় তুললেও এপর্যায়ে তিনি একদম নীরব হয়ে গেলেন।শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো রাহানের দিকে। রাহান নিজে থেকে নিজের ঘাড়ে অপরাধ নিয়ে বলতে লাগলো,
-“মামা ওর কোনো দোষ নেই। প্লিজ ওকে তুমি ভুল বুঝো না।”
-“আমার মেয়ে ব্যাপার টা না হয় আমাকে বুঝতে দাও।
আর দেড়মাস পর আমি এব্যাপারে কথা বলবো।ততদিনে তুমি একটা চাকরির ব্যবস্থা করবে।বিয়ের পর অবশ্য তুমি আমাদের কোম্পানিতে আবার জয়েন করবে।যদি প্রশ্ন আসে তাহলে চাকরি কেনো খুঁজতে হবে? তাহলে আমার উত্তর হবে আমার মেয়ের জন্য আমি যোগ্য পাত্র চাই।এমন টা কখনো যেনো না হয়।আমার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই কে কখনো মির্জা বাড়ির কাছে মাথা নত করে থাকতে না হয়।তাই নিজে কে প্রমাণ করার একটা সুযোগ দিলাম তোমায়।”
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো আজ্জম মির্জা। সাদনান রাহান চুপ করে শুনে গেলো শুধু। কিছু বলার মতো অবশিষ্ট আর নেই।একদম শুরু থেকে শেষ করে দিয়েছে কথার।আজ্জম মির্জা একটু পানি খেলো।বসা ছেড়ে রুম হতে বেরিয়ে আসার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে ফের ফিরে তাকালো সাদনানের দিকে অতঃপর আবারও থমথমে কণ্ঠে সাদনান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
-“আর হ্যাঁ।
তোমাকে বলছি।চাকরির ব্যাপারের কোনো সাহায্য করবে না তুমি রাহান কে।আমি জানি ওর যোগ্যতা দিয়ে ওর একটা ভালো পোস্টে জব হবেই।”
-“বাবা-র রিয়াকশন কি ছিল?”
-“কোনো রিয়াকশন নেই।
শুনলে তো সব।”
সাদনান মোলায়েম কণ্ঠে জানালো। প্রিয়তা সাদনানের চুলের ভাঁজে ফের আঙ্গুল চালায়।সাদনান বউয়ের পেট জড়িয়ে আরো কিছু টা প্রিয়তার কোমড়ে চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই।
বাহিরে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।ব্যালকনির দরজা খোলা।তারউপর রুমে ফ্লোরে বসে আছে ওরা দু’জন। বাইরে থেকে আসা ঠান্ডা বৃষ্টির বাতাস। আর নিচে টাইলস এর ঠান্ডা দু’টো মিলে শরীর হিম হয়ে আসছে। প্রিয়তার পেটে সাদনান বারকয়েক নাক ঘষে। প্রিয়তা সাদনানের চুলে মৃদু টেনে বলল,
-“সব সময় ধান্ধা।”
-“শোনো।
ভার্সিটি থেকে নোটিশ দিয়েছে।
এটা কোনো মার্কস হলো জান?
তোমার সেকশনে তোমার সবচেয়ে নম্বর কম।
এমন হলে আমার সম্মানের বলে কিছু থাকবে না।”
সাদনান শোয়া থেকে ওঠে বসে অসহায় চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বলল।
প্রিয়তা ভাবলেশহীন। বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বিছানার দিকে এগুতে এগুতে জানালো,
-“এমনি হবে।
পড়তে চাই না আমি।”
-“তো?”
-“কতদিন বলেছি সংসার করবো!
আপনার তো সেসব শোনার প্রয়োজন নেই।”
সাদনান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে।
এগিয়ে এসে প্রিয়তা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে আদুরে কণ্ঠে বলল,
-“এটা কেমন বাচ্চাদের মতো কথা বলছো!
সময় চলে যাচ্ছে না।”
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৯
-“নিজে তো বুড়ো হচ্ছেন।
সেদিকে খেয়াল আছে?”
প্রিয়তা নিজে কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো।সাদনান ছাড়লো না বউ কে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে জানালো,
-“আমি বুড়ো না জোয়ান সেটা রোজ রাতে প্রমাণ করি।
চলে তোমার যখন বিশ্বাস হচ্ছে না তবে আবার প্রমাণ দেই।”