আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩১
জান্নাত সুলতানা
আজ তিন হয় রাহান বাড়ি নেই।চাকরির খোঁজে আছে।অনেক গুলো কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করেছে। আর সেগুলোর সব ইন্টারভিউ এর জন্য সে কোনো এক বন্ধুর বাসায় রয়েছে। আজও একটা ইন্টারভিউ ছিল।সকালে একবার সারা কে ফোন করে জানিয়েছে। সারাদিন আর কোনো খবর পাওয়া যায় নি।বিকেলের দিকে অনেক গুলো ম্যাসেজ কল করেছে সারা কিন্তু কোনো রেসপন্স আসে নি।ফোন বন্ধ। সারা সেইজন্য চিন্তায় আছে। রাতে খাবার খেয়ে একটু আগেই রুমে এসছে। যদিও সারা আজ তিন দিন ধরে খাবার নিয়ে বসছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো গলা দিয়ে নামতে চায় না।কোথায় আছে মানুষ টা?কি খাচ্ছে? কিভাবে থাকছে?
দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে। কিন্তু রাহানের ফোনে নেট নেই।নেট নেই বললে ভুল হবে। রাহানের কাছে নেট নেওয়ার মতো অহরহ টাকা নেই।মির্জা বাড়ি থেকে সে এক পয়সাও নেই নি।নিজের বাইক বিক্রি করে দিয়েছে। যেটা রাহান টিউশন আর একটা কোচিং সেন্টারে যখন জব করতে ভার্সিটিতে পড়াকালীন তক্ষুনি বাইক টা নিজের রোজগারের টাকা দিয়ে নিয়েছিলো।যদিও রাহানের বাবা এখন যথেষ্ট বিত্তশালী মানুষ।ছোটখাটো একটা ব্যবসা দিয়েছে সেখানে কিছু কর্মচারী রয়েছে।কিন্তু রাহান কারোর সাহায্য নেয় নি।বাবা রফিক আহমেদ এই ব্যাপারে কিছু দিতে চাইলে রাহান বারণ করে দিয়েছে। আজ্জম মির্জা যেমন আদেশ দিয়েছে তারচেয়েও বেশি রাহান পালনের চেষ্টা করছে।
একদম নিজের প্রচেষ্টায় কিছু করার চেষ্টা।
আর সাফল্য অর্জন করার ফার্স্ট স্টেপই হলো চেষ্টা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারা চোখে ঘুম নেই। বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে আছে। গোলগাল মুখ টা এই টুকুন হয়েছে। কোমড় সমান সিল্কি চুল গুলো কেমন এলোমেলো। আগের মতো আর ঝরঝরে নয়।রাহান পাইপ বেয়ে সারা’র ছোট মিনি ব্যালকনিটায় এসে ঝুলে আছে।ব্যালকনির দরজা বন্ধ। কিন্তু একটা জানালার পাট খোলা।আর সেই অল্পস্বল্প ফাঁক দিয়ে রাহান সারা কে দেখছে।
রাহান এর মায়া হয়।বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে।নিচে একবার গার্ড এর দিকে তাকায়।একজন গার্ড রাহান কে পাইপ বেয়ে উপর উঠতে সাহায্য করেছে।রাহান গার্ড এর দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতে গার্ড লাইট নিয়ে চলে গেলো।
রাহান রেলিঙের ফাঁকে পা দিয়ে উঠার চেষ্টা করতেই পা লেগে একটু ফুলের টব কাত হয়ে পরে গেলো।রাতের নিস্তব্ধতায় ভালোই শব্দ হলো।সারা চমকে উঠলো। ভীতু চোখে ব্যালকনির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই লম্বাটে পুরুষের এক অবয়ব দেখতে পেলো। কিঞ্চিৎ সময় লাগলো মানুষ টা কে বুঝতে।বসা ছেড়ে এল দৌড়ে দরজা খুলে ব্যালকনিতে চলে গেলো।সবার আগে নিচে তাকালো।পরপরই রাহান কে টেনে নিয়ে ভেতরে আসতে আসতে ভীতু স্বরে জিগ্যেস করলো,
-“আপনি বাড়িতে কি করে প্রবেশ করলেন?এতো টা উঁচু কি করে আসলেন?কেউ দেখেনি?”
সারা’র বাচ্চা বাচ্চা প্রশ্নে রাহান ক্লান্তিতে চোখ পিটপিট করে তাকালো সারা’র চিন্তিত মুখপানে।
-“সেসব তোকে জানতে হবে না।
শুনলাম খাওয়াদাওয়া করছিস না ঠিক মতো?
এই কথা কেনো বলছিস না? আমি এতো কিছু কার জন্য করছি?তোর জন্য।আর তুই আমার সব কিছুর এই দাম দিচ্ছি?”
সারা কোনো কথা বলছে না। রাহান সারা’র দুই বাহু ঝাঁকিয়ে জিগ্যেস করে।
সারা চোখ টলমল করে। রাহানের হাত সরিয়ে আলগোছে মাথা রাখে রাহানের শক্ত পোক্ত বুকে।রাহান একদম চুপ হয়ে গেলো। নিজেও এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আরেক হাত সারা’র মাথায় রাখতেই সারা ফুঁপিয়ে শব্দ করে।তবে কাঁদে না। ধরে আসা গলায় বলল,
-“আমার আপনার জন্য কষ্ট হয়।এতো ভালো ভালো খাবার আমার গলা দিয়ে নামে না।আপনি যেখানে এতো কষ্ট করছেন সেখানে আমি এসি রুমে আরাম-আয়েশ দিন পাড় করছি।”
-“চাকরি পেয়ে গেলে তো শেষ। আর কিসের কষ্ট?এটা তো আমায় আজ হোক কাল হোক করতেই হতো।আর সবচেয়ে বেশি খুশির খবর হচ্ছে পরশু যে ইন্টারভিউ টা দিয়েছি সেটা থেকে আমায় আজ ই-মেইল পাঠিয়েছে দেখা করার জন্য।”
রাহানের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের ভালো লাগে।তবে হঠাৎ কিছু মনে হতে মলিন হয় মুখ।মলিন কণ্ঠেই বলে উঠলো,
-“যদি সিলেক্ট না করে?”
-“নেগেটিভ কেনো ভাবছিস?পজিটিভ ভাব।”
সারা আবার দুই হাতে জড়িয়ে ধরে রাহান কে।
-“রাহান ভাইয়ের চাকরি হয়েছে।আমার যে কি খুশি লাগছে।”
সাদনান রুমে প্রবেশ করা মাত্র প্রিয়তা উপরোক্ত কথা গুলো বলে উঠলো।
সাদনান পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“কি ব্যাপার তোমার কেনো এতো খুশি লাগছে?”
-“আপনি বুঝবেন না।
আমি তো জানি সারা এই পনেরো দিনে কত টা কষ্ট পেয়েছে। আর চাকরি পেয়েছে তাই বাবা আর এখন অমত করতে পারবে না।তাহলে সারা আর কষ্ট পাবে না।”
সাদনান বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। গা হতে পাঞ্জাবি খুলে প্রিয়তার হাতে দিয়ে টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুমের উদ্দেশ্য চলে যেতে যেতে বলল,
-“সোফায় দু’টো প্যাকেট রাখা আছে।
দেখো ওগুলো একটা বিয়ের জন্য আরেকটা হলুদের।”
প্রিয়তা সাদনানের কথা অনুযায়ী প্যাকেট খুলে দেখলো।সব কমপ্লিট।কোনো কিছু বাদ রাখে নি।একদম জুয়েলারি থেকে শুরু করে সবই আছে। প্রিয়তা অবাক হলো।সবে তো চাকরি হয়েছে। তবে কি বিয়ের ডেইটও ফিক্সড করে ফেলেছে?তাহলে ও কিছু শোনেনি কেনো?
প্রিয়তা প্যাকেট গুলো কাবডে তুলে রেখে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে রইলো।রাত তখন একটা ছুঁই ছুঁই করছে।সাদনান বেরিয়ে এলো সাত কি আট মিনিট এর মধ্যে।শাওয়ার নেই নি।শুধু গা মুছে নিয়েছে। সকালে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।তারউপর সারা দিন বৃষ্টি আবহাওয়া ঠান্ডা।সাদনান টাওয়াল সোফায় রেখে বিছানা থাকা সবুজ রঙের গেঞ্জি টা পড়ে নিলো।চপ্পল খুলে বিছানায় পা তুলে গুটিশুটি মেরে বউয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। প্রিয়তা নড়েচড়ে বসলো। এটা যেনো এই পুরুষের রোজকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রিয়তা সাদনানের চুলে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে জিগ্যেস করলো,
-“আপনি এতো আগে কেনো শপিং করে নিয়ে এসছেন?
মাত্র চাকরি হয়েছে বিয়ে এখনো অনেক দূর।”
-“কে বলেছে?
কাল সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ।বাবা-র সাথে আমি রুমে আসার আগে এব্যাপারে কথা বলে এসছি।”
-“দাদু?”
-“দাদু নিজেই সব আয়োজন করছে।”
সাদনান বউয়ের পেটে মুখ গুঁজে সেখানে নাইটি সরিয়ে অধর স্পর্শ করে বলে উঠলো,
-“আমার অস্তিত্ব কবে এখানে আসবে?”
প্রিয়তা লজ্জায় মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো।সব সময় মুখে মুখে যা-ই বলে কিন্তু সাদনান নিজে কিছু বললে প্রিয়তার লজ্জায় তখন কান গরম হয়ে আসে।সাদনান বউয়ের লজ্জা মাখা মুখপানে চেয়ে শব্দ করে হেঁসে বউ কে এক ঝটকায় বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“এবার তাহলে সত্যি সত্যি অস্তিত্ব আনার মিশন শুরু করি! বউ লজ্জা পায় এখন।”
-“দেখো মাইশা ও তোমার মতো করে হাসে।
কিউট গালে কি সুন্দর টোল পড়ে।মাশা-আল্লাহ।
ঠোঁট গুলো তোমার মতো চিকন গোলাপি।”
আয়ানের কথা শুনে মাইশা হাসলো।আজ পাঁচ মাস নাগাদ এই কথা গুলো আয়ান রোজ বলে।
কিন্তু ছেলে পুরোই বাবা-র মতো দেখতে হয়েছে।যদিও মাইশার মতে।কিন্তু সবাই বলে মিশান মাইশার কার্বন কপি।শুধু হাত পায়ের আঙ্গুল বাবা-র মতো লম্বা লম্বা।মাইশার ভাবনার মাঝেই আয়ান ছেলে কে দোলনা থেকে তুলে কোলে নিয়ে বিছানায় বসাল।ইদানীং ছেলে তার দোলনা বেশি পছন্দ করে না।বিছানায় বসালে বসে এদিকে সেদিকে হামাগুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে।আবার দাদা,পাপা, মামা ডাকে।আর কাউ কে না।মাইশা তখন কান্না পায়।ছেলে কে নয় মাসের বেশি সময় পেটে ধারণ করলো সে।আর ছেলে?সে গুষ্টি শুদ্ধো লোকে ডাকে।শুধু মা কে ডাকে না।তখন আয়ান দম ফাটা হাসিতে লুটিয়ে পড়ে।বাবা-র সাথে সাথে ছোট মিশানও হাসে।কি বুঝে কে জানে।মাইশার তখন সব মন খারাপ দূর হয় ছেলের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে।
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩০
-“ওর মনে হয় ক্ষুধা পেয়েছে।
তুমি ফিডিং করিয়ে দাও।আমি গোসল করিয়ে রেডি করে দেব।বিকেলে তো আবার মির্জা বাড়িতে হলুদ অনুষ্ঠান অ্যাটেন্ড করতে হবে।”