আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৩

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৩
জান্নাত সুলতানা

-“দিলি তো বুকের হাহাকার বাড়িয়ে!”
সারা রাহানের কথায় লাজুক হেঁসে মাথা নিচু করে নিলো।বিয়ের ভারী মেক-আপ এ রমণী সারা কে দারুণ দেখতে লাগছে।
রাহান ফোন ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে মাথায় পাগড়ি পড়তে পড়তে আবার বলল,
-“আসছি।
অপেক্ষা কর।
অতঃপর কল কেটে দিলো। আয়ান সহ আরো কিছু ছেলে তখন রুমে এলো।রাহান কে সাথে নিয়ে নিচে এলো।আসার সময় অবশ্যই রাহান কে সবাই খুঁচাতে ভুলে না।

সারা কে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাহাত আয়ান সাদনান সবাই এলো।মহিলারা সবাই সরে জায়গায় দিলো পুরুষদের। প্রিয়তা তখন এক পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদনান বউয়ের দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে অবাক হলো। শাড়ী সে যেভাবে পড়িয়ে দিয়েছে সেভাবেই রয়েছে। মুকে কোনো রকম সাজ নেই।লম্বা চুল গুলো হাত খোঁপা বাঁধা হয়তো। মাথায় ঘোমটা টানা তবে আশেপাশে দিয়ে কিছু চুল উঁকিঝুঁকি মারছে সেই কারণ সাদনান কিছু টা অনুমান করলো।যেখানে বিয়ের সাজে সবাই ভারী মেক-আপ দিয়ে একএকজন এর আসল চেহারা বুঝার উপায় নেই সেখানে তার বউ কে এম বিধস্ত কেনো দেখাচ্ছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কি হয়েছে মেয়েটার?সাদনান বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে প্রিয়তাও তাকালো সাদনানের দিকে। দু’জনের দৃষ্টি মিলন হলো।প্রিয়তা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে তাকালো।ততক্ষণে রাহাত বোন কে আগলে নিয়ে বিছানা হতে এগিয়ে এসেছে। সাদনান বোন কে আরেক পাশে দিয়ে আগলো ধরলো।অতঃপর এগিয়ে গেলো তাঁরা। পেছনে পেছনে সব মানুষের সিরিয়াল করে তাদের অনুসরণ করে। সাদনান বারকয়েক পেছনেই তাকায়।তার পেছনে কতগুলো মেয়ে রয়েছে।

কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকেই দেখছে। কিন্তু সাদনানের সেসবে নজর নেই। তাঁর নজর একদম পেছনে লম্বা হওয়ার দরুনে একদম রুম পর্যন্ত দেখতে পেলো।বউ কেমন দুর্বল পায়ে এগিয়ে আসছে। সাদনান হঠাৎ মনে হলো।সকালে মেয়ে টাকে খাবার খাইয়ে দিতে গেলো প্রিয়তা পরে খাবে বলে বারণ করে দেয়।সাদনান অনেক জোরাজুরি করেও বিশেষ কোনো লাভ হয় নি।এরপর তো সে আর রুমে যায় নি।আর এক্কেবারে যখন গিয়েছে তখন বারো টা বাজে।নিজে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে প্রিয়তা কে রেডি করে হন্তদন্ত হয়ে আবার ছুটে নিচে চলে গিয়েছিল। কিছু সুনামধন্য ব্যক্তি এসেছিল তাদের রিসিভ করতে।এরমধ্যে এতো দৌড়া দৌড়েতে আর একবার খোঁজ নেওয়া হয় নি মেয়ে টা খেয়েছে কি-না?

সারা কে বসিয়ে এগিয়ে গেলো সাদনান চাচির কাছে।আস্তে করে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে জানতে চাইলো,
-“ছোট মা ও খাবার খেয়েছিল?
সকালে?”
-“নাহ আব্বা।
তুমি তো খাবার নিয়ে আবার ফিরে দিলে খালা কে দিয়ে।
এরপর আর ও আসে নি।
কেনো ও আর খায় নি?”
-“ইস্টুপিট।
আচ্ছা শোনো রুমে খাবার দাও।
আমি রুমে যাচ্ছি।”

প্রথমে বিড়বিড় করে বলে পরে সুফিয়া বেগম কে বলে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরলো সাদনান।
প্রিয়তা নিচে আসার জন্য সবার পিছু পিছু আসছিল।কিন্তু হঠাৎ করে মাথা ঘুরে ওঠে।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।নিচে আসার মতো শক্তি পায় না।একজন কাজের লোক ছিল সারা’র রুমে।তিনি করিডরে এসে প্রিয়তা কে দেখে বলে উঠলো,

-“ছোট গিন্নি?
আপনের কি শরীর ভালা না?”
-“তেমন কিছু না।
একটু দুর্বল লাগছে। আমায় রুমে দিয়ে আসুন একটু।”
প্রিয়তা মহিলার কাঁধে এক হাত রেখে আরেক হাতে শাড়ী সামলে রুমে এলো।বিছানায় বসে বলল,
-“দরজা টা চাপিয়ে যাবেন।
আর কাউ কে বলার দরকার নেই আমার শরীর খারাপ লাগছে।”
মহিলা টা মাথা নেড়ে জিগ্যেস করলো,
-“আমি কি ঠান্ডা পানি আনতাম?”
-“নাহ।
আপনি যান।”

মহিলা টা কিছু ভেবে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।প্রিয়তা বারণ করেছে তাতে কি। তিনি তো এটা বলে দিবে কাউ কে সামনে পেলেই।মহিলা ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গিয়ে সিঁড়ি কাছে যেতেই সাদনান কে সিঁড়ি বেয়ে উপর আসতে দেখে হাত চাঁদ পাওয়ার মতো মুখে হাসি ফুটে উঠলো।এই বাড়িতে কাজ করছে অনেক দিন ধরে। বাড়ির প্রতিটা মানুষ ভীষণ ভালো।আর পুরোনো স্টাফ এর মধ্যে ওনি এখনো যুগ এর বেশি সময় ধরে কাজ করে।তাই আলাদা একটু দাম রয়েছে। সাদনান কে আসতে দেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে নমনীয় কণ্ঠে জানালো,
-“ছোট সাহেব ছোট গিন্নি রুমে আছে।

শরীর টা মনে হয় ভালা না।কেমন হাঁটতে পারছিল না। ধরে রুমে দিয়ে আইলাম।”
সাদনান বুঝি পুরো টা শুনে?সে তো অর্ধেক শুনেই দিশেহারা। কানে যেনো মহিলার বলা কথা গুলো বাজছে।ধুপধাপ পা ফেলে কিছু টা দৌড়ে রুমে এলো।দড়াম করে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রিয়তা চমকে ওঠে চোখ খুলে শোয়া থেকে ওঠে বসে।সাদনান অস্থির পায়ে ছুটে এলো।প্রিয়তার মুখ টা দুই হাতের আঁজলে নিয়ে বিচলিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“আগে কেনো বলো নি শরীর খারাপ লাগছে?”
-“কিচ্ছু হয় নি।
শরীর টা এমনি দুর্বল লাগছে। আপনি কেনো আসতে গেলেন?বিয়ে পড়ানো শুরু হবে তো এখন।”
-“সবাই আছে সেখানে।
তুমি খাবার কেনো খাও নি?”
-“আচ্ছা শুনুন।
এতো অস্থির হতে হবে না।”

প্রিয়তা বসা ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে সেখান থেকে হাতে একটা কিছু নিলো।সাদনান বউয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে নিলো।প্রিয়তা হাতে কিট নিয়েছে।সাদনান সন্দিহান কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“এটা কেনো নিচ্ছো?
তোমার কি তাই মনে হচ্ছে?”
-“আগে টেস্ট করে আসি!”
বলে ওঠে দাঁড়াতে নিয়ে আবার মাথা ঘুরে গেলো।সাদনান তড়িৎ বউয়ের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে। মেয়েটার এই এক সমস্যা। খাবার না খেলে মাথা ঘুরে। তারউপর শরীর বমির ভাব সেই সকাল থেকে হচ্ছে। কিন্তু ভেতর থেকে কিছুই আসে না।অবশ্যই পেটে কিছু থাকলে তো বমি হবে।

! সাদনান প্রিয়তা কে কোলে তুলে ওয়াশ রুম দিয়ে এলো।প্রিয়তা হাসলো।মানুষ টা সত্যি পাগল।প্রিয়তা ওয়াশ রুম হতে বেরিয়ে আসে প্রায় বিশ মিনিট এর মাথায় তাও সাদনানের ডাকাডাকিতে।সাদনান প্রিয়তা বেরিয়ে আসতে আগেই প্রিয়তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।প্রিয়তা টলমল পায়ে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো সাদনান কে।সাদনান কিছু জিগ্যেস করতে হলো না।প্রিয়তা ফুঁপিয়ে ওঠে ধরে আসা গলায় জানালো,

-“কংগ্রাচুলেশন।”
সাদনান প্রিয়তার কথায় চমকালো।বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক শব্দ হলো।অধর জোড়া তিরতির করে কাঁপতে লাগলো।কাঁপা কাঁপা অধর জোড়া সাদনান জিহ্বা ধারা ভিজিয়ে নিলো একবার।কাঁপতে থাকা অধর জোড়া নেড়ে অনেক্ক্ষণ পর বলে উঠলো,
-“আই কান্ট বিলিভ ইট, জান।
টাচ ওয়ান্স্?প্লিজ!”

সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে হাঁটু মুড়ে নিচে বসে গেলো।প্রিয়তার পেট থেকে শাড়ী সরিয়ে উন্মুক্ত করলো মসৃণ পেট।ডান হাত টা একবার আলগোছে ছুঁয়ে দিতেই বা চোখ হতে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে সাথে সাথে মুছে নিয়ে মুখ এগিয়ে গভীর ভাবে অধর স্পর্শ করলো প্রিয়তার পেটে। প্রিয়তা সাদনানের মাথার চুল শক্ত করে ধরে বলে উঠলো,

-“সবে তো কিছু দিন।
এখনো,,
-“আমার অস্তিত্ব।
আমার তোমার ভালোবাসা এক প্রহর।”
সাদনানের আবেগি কথায় প্রিয়তার চক্ষু চড়কগাছ। মানুষ টা সুস্থ আছে? কি বলছে নিজে জানে?এই গম্ভীর মন্ত্রীর মুখে এসব যে অকল্পনীয়।প্রিয়তা বিস্ময় ভুলে অবাক হয়ে বলে উঠলো,

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩২

-“আরো কত প্রহর বাকি তবে?”
সাদনান প্রিয়তা কে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
গভীর ভাবে আলিঙ্গন করে শুধালো,
-“অনেক অনেক।এক-এক একটা দিনের সূচনা মানে তোমার আমার ভালোবাসা সুন্দর একটা প্রহর এর সূচনা।”

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৪