আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২১
অবন্তিকা তৃপ্তি
ধ্রুব আর ইফাজ সারা দুপুর ক্যামেরা নিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছে। বাড়ি ফেরার কিছুটা পথ আসতেই তারা দেখে, এক জায়গায় মানুষের অনেক ভিড় জমে আছে। গ্রামের মানুষজনও সেদিকে দৌড়ে দৌড়ে যাচ্ছে। ইফাজের মনে শঙ্কা; ও ভয় পেয়ে ধ্রুবর এক আঙুল চেপে ধরলো! ধ্রুব ইফাজের ধরে থাকা আঙ্গুলের দিকে একবার চেয়ে, ভ্রু কুঁচকে সামনের দিকে তাকালো। গ্রামের মানুষ হইচই করছিলো কিছু একটা নিয়ে। ধ্রুব এগিয়ে গিয়ে ঘটনাটি দেখতে চাইল। কিন্তু মাঝপথে ইফাজ ধ্রুবর আঙ্গুল ধরে আটকে ফেলে বললো——‘দুলাভাই, যেও না। যদি আমরা ফেঁসে যাই?’
ধ্রুব ইফাজের কথায় কান দিল না। সামনের ভিড়ের দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে শুধু বললো——-‘কিছু হবে না; আসো আমার সঙ্গে।’
ইফাজ ধ্রুবর আঙুল ছেড়ে হাত চেপে ধরলো ভয়ে। ওরা এগিয়ে গেল। সেখানে পৌঁছানোর পর দেখতে পেল—একটি ছেলে-মেয়েকে ঘিরে সবাই ভিড় জমিয়েছে। গ্রামের মানুষ ছেলে-মেয়েটির দিকে ঘৃণা ও অবজ্ঞার চোখে তাকিয়ে আছে। সবাই একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। ছেলেটির মুখে মাস্ক ছিল, যা খুলে ফেলা হয়েছে। মেয়েটির বোরকার উপর নিকাব পরা। ধ্রুব আশপাশের কথা শোনার পর বুঝল—এই দু’জন এই গ্রামে প্রেম করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। গ্রামের লোকের এদের নিয়ে চুড়ান্ত কঠোর সমালোচনা দেখে ধ্রুব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। ও যা শুনেছে, তা নিজের চোখে দেখতে পেয়ে সে বিস্মিত! ও কেন যেন স্পষ্ট ওই ছেলের জায়গায় নিজেকে দেখতে পাচ্ছে; আর মেয়েটির জায়গায় অদিতি!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
গ্রামের মুরুব্বিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ছেলে-মেয়েটিকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পবিত্র গ্রামের মাটি অপবিত্র করার সাহস দেখানোর জন্য তারা দায়ী। তোফাজ্জল হায়াতকে খবর দেওয়া হয়েছে। তার বাড়িতে আজ বিচারের আসর বসবে।
ধ্রুব তাদের এই আচরণ দেখে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব কি হচ্ছে? প্রেম করলেই এমন শাস্তি দিতে হবে? ধ্রুব কিছু বলার চেষ্টা করলো;———-‘আপনারা ঠান্ডা হোন প্লিজ। সামান্য প্রেমই তো করেছে; এখানে প্রবলেম কি?’
চারপাশের উত্তেজনা ধ্রুবর কথা শুনে আচমকা স্তব্ধ হয়ে গেছে। ইফাজ ধ্রুবর আঙুল চেপে ধরলো ভয়ে। তার দুলাভাই এসব বলেছেটা কি? গ্রামের লোক ধ্রুবকে আগাগোড়া দেখছে। এই শহুরে ছেলে গ্রামে কোথায় এসেছে? ধ্রুব ওদের বাকা চোখে তাকানোকে পাত্তাই দিল না; নিজের মত করে বলে গেলো——‘আপনাদের মনে হচ্ছে না; যে আপনারা বেশি করছেন! ছেলে-মেয়ে এডাল্ট; নিজেদের মর্জিমত প্রেম করেছে। হোয়াটস রং উইদ দ্যাট?’
ইফাজের মাথায় পরে বাজ! ও আশেপাশের লোকের অবাক দৃষ্টি; ওদের কারো কারো রূড় দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে ধ্রুবর টিশার্ট টেনে ধরে ——-‘ভাইয়া , চলো এখান থেকে চলে যাই। আব্বা শুনলে আমাদের মেরে ফেলবে। চলো না।’
ইফাজ বারবার ধ্রুবকে টানছিল।ধ্রুব যায়না; ও তখনও স্থির ভঙ্গিতে সেভাবেই দাড়িয়ে থাকে। ও শুনতে চায়- গ্রামে এসব হচ্ছেটা কি? ওর ভ্রু কুচকানো! এ পর্যায়ে একজন মধ্যবয়স্ক লোক ধ্রুবর কাঁধে ধাক্কা দিয়ে শাসিয়ে উঠে——‘অ্যাই ছেলে! গ্রামের মুরুব্বিদের সিদ্ধান্তের উপরে কথা বলার সাহস হয় ক্যামনে তোমার?’
ধ্রুব সেই ধাক্কায় পিছিয়ে যায়; বুকের দিকে একবার চেয়ে; পরপর শান্ত চোখে ওই লোকটাকে দেখে শুধু এটুকু বললো——‘গায়ে হাত দিবেন না।’
ওই মধ্যবয়স্ক লোক তবুও এগিয়ে যায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব পেছাতে থাকে; ওর রাগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘু/ষি পরতে পারে! ওই লোক ধ্রুবর বুকে ধাক্কা দিতে দিতে বললো——‘প্রেমের পক্ষে থাকো। আল্লাহর বিরোধিতা করো? সাহস কম না তোমার!’
ধ্রুব পেছাতে থাকে; ধ্রুবর আঙুল চেপে ইফাজও পেছায়! একপর্যায়ে ধ্রু থামে; আর পেছায় না। ওই লোক এবার চুড়ান্ত খারাপ কথাটা বলে ফেলে———‘গ্রামের কোনো ছেড়িরে পছন্দ হয়েছে? নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করতেসস নাকি?’
ব্যাস; ধ্রুবর রাগ এবার তুঙ্গে উঠে যায়। ও রক্তলাল চোখে চেয়ে; হাত উঁচিয়ে ঘুষি বসাতে উদ্যত হলো! ইফাজ ভয় ধ্রুবর আঙ্গুল ছেড়ে দুহাতে চোখ চেপে ধরলো! তবে ধ্রুবকে আটকে দিল অন্য একজন বৃদ্ধ! ধ্রুবর হাত চেপে ধরতেই ধ্রুব চেচিয়ে উঠলো———‘ছাড়ুন আমাকে। ব্যাডার কতো বড় সাহস; কাকে নিয়ে কি বলছে! আমি অদ….’
ধ্রুব থমকে উঠে থেমে গেল হঠাৎ! কি বলতে যাচ্ছিল ও?ধ্রুব ঠান্ডা হয়ে যায় একদম; হাত নামিয়ে গায়ের টিশার্টের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে ভ্রু কুঁচকে সামনে থাকা লোকটার দিকে চায়। মধ্যবয়স্ক ওই লোকটার চোখে উপহাসের হাসি! ধ্রুব চোখ উল্টে ফেলে; হতাশ ও! নিজেকে সামলাচ্ছে ও অদিতির জন্যে; অথচ এরা ওকে ভালো থাকতেই দিচ্ছে না।
এসবের পর; ইফাজ ধ্রুবকে টেনে নিতে লাগল বাড়ির দিকে। ধ্রুব ইফাজের সঙ্গে হাঁটছিল ঠিকই;কিন্তু বারবার পেছনে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল গ্রামের মানুষদের উন্মত্ত আচরণ। বাড়ি পৌঁছানোর পর দেখতে পেল, তোফাজ্জল হায়াতের উঠোনে বিচারসভা বসার জন্য চেয়ার-টেবিল সাজানো হয়েছে। ফাহিমা তখন চুলায় চা বসিয়েছেন।
ইফাজ বাড়ি ঢুকতে না ঢুকতেই তাকে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হলো। হঠাৎ ধ্রুবের দৃষ্টি গেল এক কোণে চেয়ার হাতে দাঁড়ানো অদিতির দিকে। ধ্রুব তাকিয়েই রইল; ওর চোখ অদ্ভুতভাবে ভীষণ শান্ত ছিলো! অদিতির চোখেমুখে নীরবতা! ধ্রুব চেয়ে ছিলো; অদিতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠোনে চেয়ার রেখে ভেতরে চলে গেল।
এর মধ্যেই তোফাজ্জল হায়াতের উঠোনে লোকজনে গিজগিজ করতে লাগল। গণ্যমান্য লোকেরা চেয়ারে বসেছেন। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে আছে। মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সেই ছেলে-মেয়েটিকে। দু’জনই অবিরাম কাঁদছে। ছেলেটির বাবা-মা লজ্জায় মাথা নত করে আছে। মেয়েটির বাবা গাছ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, চোখে পানি; যেকোনো মুহূর্তে জ্ঞান হারাবেন!
বিচার শুরু হলো।ধ্রুব একপাশে দাড়িয়ে আছে। অদূরে জানালার পর্দার ফাকে অদিতির অর্ধেক মুখটুকু দেখা যাচ্ছে। তোফাজ্জল হায়াত বিচারে এলেন। সবাই জায়গা ছাড়লো উনার জন্যে। তোফাজ্জল সকলের মধ্যমণি হয়ে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসলেন। তার চোখে ছিল শীতল দৃষ্টি। গ্রামের লোকজন জানাল——‘সাব; এদের ধানক্ষেতের পাশে অশ্লীল কাজ করতে দেখা গেছে।”
সঙ্গেসঙ্গে ছেলেটি প্রতিবাদ করে বললো——-‘আমরা কোনো অশ্লীল কাজ করিনি। আমরা শুধু দেখা করছিলাম।’
তোফাজ্জল হাত তুলে ছেলেটিকে থামিয়ে দিলেন। ছেলেটি হাত দেখে থেমে গেল। তোফাজ্জল তারপর ছেলেটির পরিবারের দিকে তাকিয়ে বললেন——-‘আপনারা কিছু বলবেন?’
ছেলের বাবা কাঁদতে কাঁদতে বললেন——-‘আপনি যা সিদ্ধান্ত নেন, নিন। ওকে আমি আজ থেকে গ্রামবাসির সামন্য ত্যাজ্য করলাম।’
ছেলেটি হতবাক হয়ে চিৎকার করে উঠলো——‘আব্বা!’
ছেলের চিৎকারে মুষড়ে পরলেন উনি! কিন্তু একঘরে করে দেবার ভয়ে শাসিয়ে উঠলেন——‘চুপ! তোর মা মরার পর আমি তোকে কত কষ্টে বড় করেছি যাতে তুই বড় হলে রঙ্গলীলা করতে পারস এইজন্যে? শা/লা জা/নোয়ার!’
ছেলের চোখ বুজে ফেলেছ; বাবার মুখে নিজেকে নিয়ে ঘেন্না ওর রূহ অব্দি কাপিয়ে তুলেছে যেন। তোফাজ্জল ওসব দেখেন না; উনি মেয়ের পরিবারকে জিজ্ঞেস করলেন——-‘আপনাদের কিছু বলার আছে?’
মেয়েটির পরিবারও একই সুরে কথা বলে; মেয়েটির বাবা কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন———‘আমার মেয়েকে আমি ত্যাজ্য করলাম। আপনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাই মাইনা নেব।’
মেয়েটি এবার শব্দ করে ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো। ছেলে হয়তো মেয়ের কান্না শুনে অপরাধবোধে ভুগে। ও এবার আর কোনো উপায় না পেয়ে; সোজা তোফাজ্জল হায়াতের পায়ে পড়ে গেল। তোফাজ্জল ওইভাবেই বসে; নড়লেন না জায়গা থেকে। ছেলে পায়ে হাত দিয়ে কাঁদতে লাগল——-‘চাচা, আমি ওকে বিয়ে করে ফেলবো! আমাদের সম্পর্ক আমি হালাল করে দিব। প্লিজ, তবুও এত বড় শাস্তি দেবেন না আমাদের।’
তোফাজ্জল হায়াত পা সরিয়ে ফেললেন। ছেলেটা মুখ থুবরে মাটিতে পরলে মেয়েটা হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে আটকে ফেলা হলো ! ছেলেটা চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো! তোফাজ্জল কঠোর কণ্ঠে বললেন———-‘প্রেম করার আগে এই প্রস্তাব দিলে আমরা মেনে নিতাম। হারাম কাজ করার আগে কেন হালাল করার কথা মাথায় এলো না?’
ধ্রুব শুনতে থাকে; ছেলেটি বিষণ্ণ গলায় বলল——-‘ওর পরিবার মানবে না; আমি বেকার তাই। তাছাড়া আমি ভয় পেয়েছিলাম। তাই আপনাদের কাছে যেতে পারিনি।”
তোফাজ্জল হায়াত বললেন——-‘আমি তোমাকে চাকরি দিতাম। তুমি আমার কাছে কেন আসোনি?”
ছেলেটি উত্তর দিল——-‘আমি ভয় পেয়েছিলাম, চাচা। আপনি প্রেমের এত ঘোর বিরোধী। যদি কিছু করে ফেলতেন!”
তোফাজ্জল আশপাশে তাকিয়ে সবার জবাব নেওয়ার জন্যে বললেন——-‘আমি এই গ্রামে কাউকে সৎ পথে সাহায্য করতে অস্বীকার করেছি আজ অব্দি? কেউ কি কখনো আমার কাছে আসতে ভয় পেয়েছো?”
গ্রামের লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাল। শেষমেশ সবাই মাথা নেড়ে তোফাজ্জলের অবদানের কথা একবাক্যে স্বীকার করল। তোফাজ্জল এবার ছেলেটার দিকে তাকালেন; বললেন ———‘হারাম তো হারামই। এবার অন্যদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তোমাদের সঙ্গেও তাই ঘটবে।”
এ কথায় যেন পুরো উঠোনে হইচই লেগে গেল! ছেলেটি এবার নিজেই কেঁদে ফেলল। তোফাজ্জল হায়াত উঠে দাঁড়ালেন। সবার উদ্দেশ্যে বললেন——-‘ওদের এখনই বিয়ে দেওয়া হবে। কাজী আনা হোক। তারপর তোমরা এই গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে। যেহেতু তোমাদের বাবা-মা তোমাদের ত্যাজ্য করেছেন, তাই তাদের একঘরে করা হবে না। তবে যদি তাদের সঙ্গে তোমাদের পরিবারের কোনো যোগাযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ছেলে-মেয়ের বাবারা সবাই হতবুদ্ধি হয়ে তোফাজ্জলের দিকে তাকিয়ে রইলো! ওদের হৃদয় থমকে গেছে যেন! মুহূর্তেই কোলাহল শুরু জয়ে গেল। তোফাজ্জল নিজের ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। হঠাৎ পেছন থেকে সেই ছেলেটি চিৎকার করে ডেকে উঠল——-‘হায়াত সাব; দাঁড়ান!’
ছেলেটির চিৎকারে তোফাজ্জল থামলেন। পেছনে ফিরে গম্ভীর-শান্ত দৃষ্টিতে ছেলেটিকে দেখলেন; সঙ্গে উপলব্ধি করলেন ওর চোখের হিংস্রতা-প্রতিশোধপরায়নতা! ছেলেটি এগিয়ে এসে মুখোমুখি দাঁড়াল উনার। তার চোখে ছিলো অদ্ভুত এক ভাষা! সে তার ভেজা চোখ দুটো তোফাজ্জলের চোখে রেখে বললো——‘আপনি এত্ত প্রেম বিরোধী, লোকের ভালোবাসার উপর আঙ্গুল তোলেন! যদি কোনোদিন আপনার ছেলে-মেয়ে প্রেম করে, তখন কী করবেন? তখন কেমন বিচার করবেন?’
ধ্রুব থমকে তাকিয়ে রইলো! ওর নিঃশ্বাস আটকে গেছে; তোফাজ্জলের জবাব শোনার জন্যে ওর ভেতরে ছটফট!
তোফাজ্জল গ্রামবাসীর দিকে তাকালেন। সবার চোখে এক অদ্ভুত কৌতূহল! তোফাজ্জল গভীর শ্বাস নিলেন; দু মুহূর্তে না ভেবে; বলে ফেললেন—-‘সেদিন আমি নিজের হাতে আমার মেয়েকে খু/ন করব!’
ধ্রুব বিস্মিত হয়ে তাকালো তোফাজ্জলের দিকে; ওর হৃদয়ে তখন টগবগিয়ে রক্ত ছুটছে! ধ্রুব যেন নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। একজন বাবা এমন কথা কীভাবে বলতে পারে?ধ্রুব অবাক-হতবম্ব চোখে জানালার দিকে তাকায়; অদিতির চোখ-টুকু আজ শান্ত-স্থির! ও এস জানতই; ওর জন্যে এসব কথা আজ নতুন নয়। ধ্রুব তাকাতেই অদিতি চোখ নামিয়ে ফেলল! ধ্রুব বোঝে- আজ অদিতির কিছুই বলার নেই।
তোফাজ্জল ছেলেটার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে গ্রামের সবার উদ্দেশ্যে বললেন——‘আগামীকাল আমার মেয়েকে আমার পছন্দ করা ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসবে। আপনাদের নিমন্ত্রণ রইল। আসবেন!”
ধ্রুব হাত মুষ্টিবদ্ধ করে; চুপচাপ শুধু শোনে যায়। তোফাজ্জল তারপর ছেলের কঠিন চোখের দিকে চেয়ে থেকে বললেন——‘মেয়ে-ছেলে মানুষ করতে জানতে হয়! আমি দোয়া করি, তুমি যেন ভালো বাবা হও।”
এ কথা বলে তোফাজ্জল নিজের ঘরের ভেতর চলে গেলেন। ছেলেটিকে ঘিরে ধরে গ্রামের লোকেরা শাসাতে লাগল। কেউ বলল——-‘তুই এভাবে কথা বললি কেন? হায়াত সাহেবের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে তোর সাহস হলো কী করে?”
ছেলেটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখ ভ্রুকুঞ্চিত। সে তোফাজ্জলের ঘরের দিকে তাকিয়েই রইল। ধ্রুব শুধু ওই ছেলেটাকে দেখতে থাকে; যার মধ্যে ও নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পারছে।
বিচার কাজ শেষ হয়েছে! ধ্রুব ঘরে এসে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে বিছানায় হিয়ে বসেছে। রীতিমত ফুঁসছে ও! মন যেন অসংখ্য শব্দ আর প্রশ্নের ভারে চিৎকার করে উঠতে চাইছে। সারাদিনের ঘটনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। গ্রামবাসীর হিংস্র চাহনি, ছেলেটার অসহায় আকুতি, আর তোফাজ্জল হায়াতের কাঠিন্য—সবকিছুই যেন ওর বুকের ভেতর একটা ভারী পাথরের মতো চেপে বসেছে।
ধ্রুবর সবকিছু অসহ্য লাগছে। ও জুতো পায়েই বিছানায় লম্বালম্বি শুয়ে পরলো, সারারাত চোখের পাতা এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হচ্ছিল না। বারবার; বারবার মনে পরছিলো , ছেলেটার শেষ প্রশ্ন—-‘যদি আপনার মেয়ে প্রেম করে, সেদিন কী করবেন?” আর তোফাজ্জল হায়াতের সেই জবাব—‘নিজের হাতে খু/ন করব।’
ধ্রুব অন্ধকার ঘরের সিলিংয়ের দিকে চেয়ে থাকে; একসময় অতিষ্ট হয়ে আবার উঠে বসে পরে। বাতি জ্বালিয়ে মাথাটা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকে। একসময় সেটাতেও শান্তি না মিললে; যথে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। চাঁদের আলোয় গ্রামের কাঁচা রাস্তা, উঠোনের মাটি, আর দূরে নদীর ঢেউগুলো জ্বলজ্বল করছিল। কিন্তু ধ্রুবর চোখে সেই আলো ধরা পরছিলো না। তার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছিল ছেলেটার কান্না, মেয়েটার ভীত মুখ, আর তোফাজ্জল হায়াতের কঠিন মুখটা।
আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২০
ওই ছেলেটা ধ্রুব হতে পারত; মেয়েটা অদিতি হতে পারতো! ধ্রুব ওই ছেলেটার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠল। জানালার গ্রিলে হাত ঠেসে চেপে ধরে কল লাগালো কাউকে; ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলে ধ্রুব হিসহিসিয়ে বলল ——-‘লক্ষীপুর গ্রাম; ছেলে ঢাকার ম্যানেজার; খোঁজ নাও।
——-‘আপাতত এটাই করো বলদ! এর পরবর্তী কাজ আমি জানিয়ে দেব।’