আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২৭

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২৭
অবন্তিকা তৃপ্তি

ধ্রুব কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে; ওই অসুস্থ অবস্থাতেই আজ ভার্সিটির আড্ডাখানায় বহুদিন পর এসেছে। এতদিন পর ধ্রুবকে ভার্সিটিতে,; অথচ অসুস্থ দেখে জুনিয়ররা একে একে এসে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে। ওদের প্রিয় সিনিয়র ধ্রুব ভাই এর কি করুন অবস্থা; চোখে দেখা যাচ্ছে না এসব। বুকটা যেন ফেঁ/টে যাচ্ছিল একেকজনের। ওরা সবাই দেখা করে যাওয়ার পর, ধ্রুব ক্লান্ত ভঙ্গিতে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ইমনকে বলল——-‘তন্ময় কই? বলিস নি ওকে আমি দেখা করতে চাইছি?’

ইমন এবার গরিমসি করা শুরু করলো এবার; অপ্রস্তুত গলায় বলল ———‘বলেছিলাম তো, রাস্তায় মনে হয়।’
ধ্রুব শার্টের হাতা ফোল্ড করেছে। ওর হাতের ঘন লোম; ভেইনস-গুলো ভেসে উঠেছে শ্যামলা ত্বক-টায়! ওর সামনে সাইনবোর্ড লাগানো—-এখানে ময়লা ফেলবেন না! ধ্রুব ওসব মানে না; একটু আগে খেয়ে শেষ করা কোকের খালি বোতল ছুঁড়ে ফেলে দিল রাস্তায়! অলস ভঙ্গিতে সিগারেট ঠোঁটে চাপে; লাইটার পকেট থেকে বের করলে ইমন দ্রুত ওর হাত চেপে ধরে! ধ্রুব এক হাতে লাইটার; আর ঠোঁটে সিগারেট চাপা অবস্থায় এক ভ্রু উঁচালো। ইমন সরাসরি কড়া গলায় বললো———‘সিগারেট খাবি না একদম।অন্তত একটা সপ্তাহ ওয়েট করে নে না; ভাই।’
ধ্রুব ইমনের কথাতে ভ্রু কুচকে ফেলল; পরপর ওর চেপে রাখা হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সিগারেটে লাইটার দিয়ে আগুন ধরাতে ধরাতে বললো——-‘জ্ঞান ছাড়িস না, মাথাটা ঠান্ডা করা লাগবে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইমন হতাশ; চুড়ান্ত হতাশ! তাই ও না পারতে এবার আসল চাল ছেলে দিলো; বাঁকা হেসে ধ্রুবকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো——-‘আচ্ছা? ভাবিরে কল দেব? জানাব তার প্রেমিক ধ্রুব খাচ্ছেটা কি?’
ধ্রুব সিগারেট ঠোঁটের ফাকে চেপে তারপর ধোয়া ছাড়লো আকাশের দিকে; উদাস গলায় বললো———-‘পাবি না এখন, ক্লাসে ও।’
ইমন হেসে হেসেই বললো ——-‘সমস্যা নেই; আমি ছবি তুলে রাখতেসি আপনার। আপনি যে সিগারেট খাচ্ছেন; ভাবিরে বললে খবর আছে তোর।’

ধ্রুব বিরতি নিলো, আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট রেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইমনের দিকে; গা-ছাড়া ভঙ্গিতে বললো——-‘তোর কি মনে হচ্ছে; ধ্রুব ওকে ভালোবেসে দেখে সম্পূর্ণ ওর আয়ত্তে চলে গেছে? লিসেন, আমাকে এত সহজে বদলানো যাবে না। এন্ড সবচেয়ে বড় কথা ও এভাবেই আমাকে; এই রূপেই ভালোবেসেছে। ওর সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই আমাকে হ্যাঁ বলতো না।’

ধ্রুব কথাটা বলে; আবারও সিগারেট ঠোঁটে চাপলো। ওপাশে ইমন হতাশ চোখে ওকে দেখতে থাকল। মনেমনে ভাবে, এই যে আংকেল এত আশা নিয়ে বসে আছেন, একদিন ধ্রুব ঠিক হয়ে যাবে। শেষ আশা যে দুরাশা হয়ে যাচ্ছে, সেটা উনি জানলে কি হবে। মনে তো হচ্ছেনা; এই জেদি ধ্রুবকে অদিতি অব্দি সোজা করতে পারবে।
হঠাৎ দূরে তন্ময়কে একটা ফুলের বুকে হাতে ওদের দিকে আসতে দেখা গেল। ইমন ওকে দেখেই কিছুটা নড়েচড়ে দাঁড়াল। ওর ভয় হচ্ছে, আজ ধ্রুব সব শুনলে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে দেবে নির্ঘাত! ইমনের পিঠে ক- ঘা পরবে কে জানে।
তন্ময় এসে ওদের সামনে দাঁড়াতেই; ইমন গলা কেশে কিছুটা সরে দাড়ালো ধ্রুবর থেকে। ধ্রুব সিগারেট ততক্ষণে জুতো দিতে পিষে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে; মুখোমুখি হয়েছে তন্ময়ের। তন্ময় যেন ধ্রুবর ওসব কিছুর ধার ধারলোই না; সোজা ধ্রুবর হাতে ফুলের বুকে-টা ধরিয়ে দিলো। ধ্রুব বিস্মিত ভঙ্গিতে হাতে ধরে রাখা বুকেটা দেখে; আবার তন্ময়ের দিকে ভ্রু কুঁচকে চাইলো। তন্ময় গাল ভরে হেসে বলল ———‘কংগ্রাচুলেশন ধ্রুব ভাই! অদিতি ভাবি ইজ ফাইনালি ইয়োর্স!’

ধ্রুব একহাতে বুকে নিয়ে থম হয়ে দাড়িয়ে আছে; তন্ময়ের ভাবগতি ওর সুবিধার লাগছে না।তন্ময় মুহূর্তেই এমন রঙ বদলে ফেলা ওকে অবাক করলো। রাজন পাশ থেকে এসব নাটক-মঞ্চ দেখে তন্ময়ের দিকে তেড়ে গিয়ে বললো——-‘ওই পোলা; ভাই এর পা ধরে মাফ চাওয়ার বদলে তুই ভাইরে কংগ্রেস জানাস! ট্রিকস খাটাস ভাইর লাগে?’
তন্ময় হেসে হেসেই বললো——-‘ট্রিকস? ওটা আমি না; আপনাদের ধ্রুব ভাই এর বাবা খাটিয়েছে; মানে আমাদের খাদ্য মন্ত্রী সৌরভ ইয়ামিন।’
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে; প্রশ্নবোধক চোখে চেয়ে রইল তন্ময়ের দিকে; জিজ্ঞেস করলো ———‘মানে?’
তন্ময় জবাব দিলো অলস ভঙ্গিতে———‘আপনার সামনে থাকা ইমন ভাইকে জিজ্ঞেস করুন। সে-ই তো আমাকে টাকা দিয়েছে; যেন আমি আপনাকে বাজির কথা বলে উষ্কে দেই। রাইট ইমন ভাই?’
ইমন ঢোক গিলে ধ্রুবর দিকে তাকাল! ধ্রুব ভ্রু বাকিয়ে ইমনের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো ———‘তন্ময় এসব কি বলছে?’’
ইমন শান্ত গলায় বোঝানোর চেষ্টা করল———‘ভাই আমার; আমি বুঝিয়ে বলছি। তুই ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনবি, ওকে?’

ধ্রুবর এখনও কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটুকু বুঝতে পেরেছে, ইমন কোন সাহসে ওর বন্ধু হয়ে সৌরবের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে! তবুও ইমনকে ও আঘাত করতে চায়না; তাই ঠান্ডা গলায় বলল ———‘হয়েছে কি বল!’
ইমন বলা শুরু করে————‘তুই অদিতির প্রতি শুরুর দিন থেকে দুর্বল ছিলি, এটা তুই স্বীকার না করলেও আমরা জানতাম; দেখেছি আমরা তোর পাগলামি। ওইদিন অদিতি অজ্ঞান হয়ে গেছিল না; তুই ওর ওকে অবস্থাতে দেখেও ওর পাশ অব্দি যাসনি। অবশ্য পরবর্তীতে গেছিস যখন অন্য পুরুষ ওকে ছোয়ার চেষ্টা করেছিল। তুই নিজেকে অদিতির পাশে ভাবতেও হীনমন্যতায় ভুগছিলি। আংকেল হয়তবা সেটা বুঝতে পেরেছে। উনি আমাকে একদিন উনার অফিসে ডাকেন। আমি ওইদিন তোকে ভার্সিটি রেখে উনার অফিসে যাই।

আংকেল আমাকে তোর-অদিতির ব্যাপারে সব বলতে বলে। আমি সব বলি, যে তুই ওকে ভালোবাসিসই কিনা তুই শিউর না। তুই কখনোই আগাবি না অদিতির দিকে; চাইবি না তোর এই নষ্ট জীবনে কোনো মেয়ে আসুক। আংকেল সেটা বুঝে; আমাকে বলে— তুই যেমন রাগী-জেদি, তোকে একমাত্রই উষ্কে দিতে পারলেই অদিতির কাছে তুই যাবি; ওকে কনফেস করবি। তাই আংকেল নিজে আমাকে তন্ময়ের বাজির ধরার বুদ্ধিটা দিলেন। আমি ভাই বিশ্বাস কর শুরুতে মানা করেছি; কসম! কিন্তু আংকেল চাইছিলেন তুই ভালো হো; সুস্থ জীবন কাটা। অদিতি ভালো মেয়ে, যে তোকে তোর এই নষ্ট জীবন থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসবে। অদিতির মধ্যে আংকেল আশা দেখেছিলেন; তাই আমিও তোর ভালোর কথা ভেবে শেষ অব্দি রাজি হই। ওইদিন ভার্সিটি এসে তন্ময়ের সঙ্গে কথা বলি; তন্ময় আমার পরিচিত হওয়ায় রাজি হয়ে যায়। ব্যাস; বাকিটা এ অব্দি এসে পৌঁছে যায়।’

ধ্রুব হতবম্ব; ও চোখ কপালে তুলে শুনে যায় এসব। ওর ফিলিংস নিয়ে খেলা হচ্ছিল এতদিন। ধ্রুব রাগের মাথায় ইমনের দিকে তেড়ে যায় ইমনের দিকে; ইমনের কলার চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলে———‘শালা; তুই কেন আমার বাপের লগে মিলে এমন ফালতু বুদ্ধি করবি? তোকে তো আমি….’
ইমন ধ্রুবর কলার ধরে রাখা হাত দুহাতে চেপে বোঝানোর চেষ্টা করে;———‘ভাই; তোর বাপ তোর ভালো চায়। তুই আল্লার ওয়াস্তে এটা মানতে শিখ ধ্রুব।’

ধ্রুব ইমনের কলার চেপে ধরে চেচিয়ে উঠে আবার বলল ——-‘দরকার নাই আমার তার লোক দেখানো ভালো। তুই আমার ফ্রেন্ড। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড:আমার বাপের সঙ্গে তোর কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’
ধ্রুবর চোখ-মুখ অস্বাভাবিক; রাগ মাথায় চেপে আছে। ইমন ওই রাগী চেহারার দিকে চেয়ে হেসে ফেলল; বলল ——-‘আংকেল যে তোর বাপ যে স্বীকার করছিস তাহলে।’
ধ্রুব ইমনের এ কথায় অতিষ্ট হয়ে ওর কলার ছেড়ে দিয়ে সরে গেল; আঙ্গুল উঁচিয়ে শাসালো;———‘সে আমার বাবা নয়; হি ইজ জাস্ট অ্যা…. জাস্ট আমার মায়ের হাজবেন্ড; যে চিট করেছে আমার মায়ের সঙ্গে। নাথিং মোর।’
ধ্রুব তারপর বড়বড় পা গেলে বাইকে গিয়ে বসে! ইঞ্জিন চালু করছে; ইমন সেটা দেখে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ধ্রুবর হাতটা ধরে বলল ——-‘ভাই আমি তোর ভালোর জন্যেই—‘

ধ্রুব ইমনের হাত ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে দিয়ে বলল——-‘ভারমে যা তুই আর তোর ভালো। যা এখন, আমার বাপের লগে মিলমিশ করে বুদ্ধির গোডাউন খুল। আমার কাছে আসার দরকার নেই।’
ধ্রুব কথাটা বলে,বাইকের ইঞ্জিন চালু করে; শো-শো আওয়াজে চলে গেল! কোথায় ও যেতে পারে জানে ইমন। ও যেতেই ইমন তড়িগড়ি করে অদিতিকে কল করল; ওপাশে কল ধরলে ইমন বলল ———‘অদিতি; বোন আমার। তোমার প্রেমিক রাগ করে বাইক নিয়ে ভার্সিটি থেকে হওয়া। কোথায় যেতে পারে: আমি তোমাকে এড্রেস দিচ্ছি। ওর রাগটা কমাও গিয়ে; নাহলে তুমি-আমি সবাই ফিনিশড!’

অদিতি শুনে, প্রশ্নবোধক গলায় বলল——‘কিন্তু ভাইয়া তার তো এখন হসপিটাল থাকার কথা। আমি হসপিটালের দিকেই যাচ্ছিলাম এখন।’
ইমন অতিষ্ট গলায় ধ্রুবর নামে বললো ———-‘কি আর বোঝাব তোমাকে। ওটা ধ্রুব অদিতি; ওর মতিগতি বোঝা কার সাধ্য! সমস্যা নেই; ধীরে ধীরে চিনে যাবে তুমি। এখন যাও; ওর রাগটা কমিয়ে দিয়ে আসো! নাহলে ওর বাবার আজ আর রক্ষে নেই ওর কাছ থেকে।’
অদিতি সঙ্গেসঙ্গে ইমনকে শান্ত করতে বলল ——-‘জি ভাইয়া; আমি যাচ্ছি। চিন্তা করবেন না।’

বৃষ্টি নেমেছে মেঘলা আকাশ চিরে। নদীর তীর জুড়ে কুয়াশার মতন ধোঁয়া, বাতাসে ভিজে যাওয়া মাটির গন্ধ। ধ্রুব বাইক থেকে নেমে নদীর পাড়ে এসে দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। ভেজা চুলগুলো তার কপালে লুটিয়ে পরেছে, শার্ট ভিজে গায়ে সেঁটে গেছে। বাইরেরটা যতটা শান্ত দেখাচ্ছে; চোখে ঠিক ততটাই ঝড়ের মতো রাগ আর হতাশার ছাপ।ও ইমনের কাছে এসব আশা করেনি! সৌরভ ইয়ামিনের দয়া ওর চাইনা! সৌরভ ইয়ামিন ওর কিচ্ছু না; নাথিং। ধ্রুব আজ অব্দি যা পেয়েছে সব নিজের জোরে পেয়েছে। অদিতিকেও তাই। অথচ অদিতিকে পাওয়ার পেছনে অর্ধেক হাত যে সৌরভের সেটা মানতেই চাইছে না ধ্রুব।
হঠাৎ অদিতি ছাতা হাতে দাঁড়িয়েছে ধ্রুবর পেছনে। ওখানে দাড়িয়ে; হাঁপাতে হাঁপাতে বললো——-‘আপনি এখানে কি করছেন ধ্রুব? ঠান্ডা লাগবে, ছাতার নিচে আসুন।’

ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা অদিতির কণ্ঠে অনুনয়, চিন্তিত ও ধ্রুবর জন্যে ধ্রুব ভিজছে, ওর নাকের পাটা লাল টকটকে। চোখ মারাত্মক লাল হয়ে আছে। আজ জ্বর উঠবে নির্ঘাত। অদিতি আবারও বললো একই কথা;———‘ধ্রুব জেদ কেন দেখাচ্ছেন? ছাতার নিচে আসুন প্লিজ।’
ধ্রুব যেন শুনতেই পায়নি। তার কপালের শিরাগুলো উত্তেজনায় টানটান হয়ে আছে। অদিতি আবার ডাকলো——‘ধ্রুব?’
ব্যাস; এটুকুই! ধ্রুব সঙ্গেসঙ্গে পেছন ফিরে অদিতির দিকে বড়বড় পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে ওর ছাতা ছুড়ে গেলে দুহাত চেপে ধরে ওর বাহু শক্ত ভঙ্গিতে। অদিতি ভয় পেয়ে গেল; চোখ ছোটছোট করে ধ্রুবর রাগী সত্ত্বা দেখতে থাকল।

ধ্রুব চিৎকার করে বলে——-‘তুমি এখানে কেন?ওই লোকটা তোমাকেও ইউজ করছে; রাইট? খবরদার অদিতি; তুমি ধ্রুবকে ভালোবেসেছো। আমার পরিবার তোমার কাছে কিচ্ছু না। তুমি শুধু আমার কথা শুনবে; অন্য কারো না। কেউ তোমাকে উষ্কে দিলে অ্যাই সোয়ার আমি তাকে খু\ন করে ফেলবো।’
অদিতি কিছুটা হতভম্ব হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে কম্পিত গলায় বললো———-‘ধ্রুব ঠান্ডা হোন। কি হয়েছে আপনার? কে উস্কাবে আমায়?’
ধ্রুব থেমে গেল। অদিতির ভয়ার্ত মুখের দিকে চেয়ে, ওর অপরাধবোধ হলো হঠাৎ। দ্রুত ওকে ছেড়ে দিয়ে সরে গিয়ে দুহাতে মুখ চেপে ধরে জোরেজোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো।
অদিতি সব দেখতে থাকে। তারপর ও অনেকটা সাহস নিয়ে; হাসার চেষ্টা করে বললো———‘আপনার রাগ দেখুন আকাশেরও সহ্য হয়নি; তাই কেঁদে ফেলেছে।’

ধ্রুব মুখ থেকে হাত সরালো; অদিতির দিকে চেয়ে রইলো! মিনিট কয়েক কেটে গেল। ধ্রুব এখন নিজের কপাল হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। অদিতি ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে তার মুখে চেপে রাখা হাতটা ধরলো; আলতো করে ধ্রুবর হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে, মৃদু গলায় বললো——-‘আপনি আমার প্রেমিক ধ্রুব। ব্যাস; এটুকুই আমি জানি আপনার ব্যাপারে। আমাকে আর বাদবাকি কে কি বললো আমি জানিনা, জানতে চাইনি কোনদিন।’
ধ্রুব তাকিয়ে রইলো অদিতির গোলগাল মুখের দিকে। ধ্রুবর প্রতি অদিতির আকর্ষণ ধ্রুবকে আবারও মুগ্ধ করলো।ধ্রুবর তার রাগ, হতাশা যেন ধুয়ে যেতে লাগল বৃষ্টির জলে। অদিতির চোখে ভরসা, ভালোবাসা— যা ধ্রুব এতদিন খুঁজে ফিরেছে।

বৃষ্টির শব্দ আরও তীব্র হয়ে উঠল। দুজনেই দাঁড়িয়ে রইল নদীর পাড়ে, যেন এই মুহূর্তটুকু থমকে গেছে! আকাশের গর্জনে পুরো পরিবেশ যেন কেঁপে উঠছে। হঠাৎ এক বিকট বাজ পড়তেই অদিতি আচমকা ভয়ে ধ্রুবর পিঠ খামচে ওকে জড়িয়ে ধরে ফেলল। অদিতি ধ্রুবর বুকে মুখ গুঁজে চোখ-মুখ শক্ত করে রেখেছে। ধ্রুব এমন ব্যবহারে থমকে গেল। এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল যেন।
ধ্রুব মাথাটা নামিয়ে অদিতির মুখের দিকে তাকাল। বৃষ্টির জল বেয়ে নামছে অদিতির মুখের কোণে, ওর মুখে ভয়ের রেখা স্পষ্ট। ধ্রুব আবার আকাশের দিকে তাকাল। আকাশ চিরে বিদ্যুৎ নেমে আসছে, আর বৃষ্টির ধারা যেন আজ থামার নামই নিচ্ছে না। যেন সুযোগ করে দিচ্ছে- দুজন যেন আরো-আরো কাছে আসে! যতটা কাছে আসলে আর ফিরে যাওয়া যায়না।

ধ্রুবর ভেতরে যেন এক নিষিদ্ধ ঝড় বইছে। এই পরিবেশ, এই মুহূর্ত সবকিছু তার ভেতরের সুপ্ত ইচ্ছেগুলোকে উস্কে দিচ্ছে। কিছু নিষিদ্ধ অনুভূতি তাকে গ্রাস করতে চাইছে।
ধ্রুব ধীরে ধীরে অদিতির পিঠে হাত রাখল। তারপর শক্ত করে তাকে নিজের দিকে টেনে নিল। ভিজে কাপড়ের ভেতর দিয়ে তাদের শরীরের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ছে। একে অপরকে জড়িয়ে রইল অনেকক্ষণ।
ধ্রুব কিছুসময় পর, ধীরে ধীরে অদিতির ঘাড়ের ওপর ঝুঁকল। তার ভেজা চুল সরিয়ে নরম ঘাড়ে আলতো করে একটি চুমু খেতেই অদিতি চমকে উঠে ধ্রুবকে ছেড়ে দু’পা পিছিয়ে গেল।
ধ্রুব দাড়িয়ে রইল; তার চোখে এক অদ্ভুত নেশা খেলা করছে। অদিতি নিঃশব্দে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে আতঙ্ক, বিভ্রান্তি।ভয়ে ও ঘাড়টা একহাতে চেপে ধরে মুখ অন্যপাশে ঘুরিয়ে ফেলে অস্থির শ্বাস ফেলতে লাগলো।

ধ্রুব এসব দেখেনা। ওর কাছে মনে হচ্চেহ- হয়তবা অদিতি লজ্জা পাচ্ছে। ও ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এলো। অদিতির কোমর আলতো করে ধরে ওকে আবার নিজের কাছে টেনে আনল।
অদিতির ঠোঁট কাঁপছে। বুক ধড়ফড় করছে। এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে, কিছু একটা ভুল হতে যাচ্ছে।ধ্রুব অদিতির ভেজা ঠোঁটের দিকে একবার চেয়ে দেখলক। কি নেশা লেগে আছে ওই কোমল ঠোঁটে! ধ্রুবকে আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে যেন।
ধ্রুব এবার অদিতির চোখের দিকে তাকিয়ে,ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল——‘আই কান্ট রেসিস্ট মাইসেলফ, অদিতি। ক্যান আই কিস ই‍্যয়ু? জা…জাস্ট একবার?’

অদিতির সারা গা এই এক কথাতেই যেন জমে গেল। তার মুখ শুকিয়ে গেছে। ঠোঁট নড়ছে, কিন্তু কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। ধ্রুব অদিতির নীরবতাকে আবারও ওর লজ্জা; ওর সম্মতি ভেবে ভুল করে বসলো। ধীরে ধীরে ধ্রুব এগিয়ে আস্কে অদিতির তিরতির করে কাপতে থাকা ঠোঁটের দিকে।
অদিতি চোখ খিঁচে; ধ্রুবর শার্টের বুক পকেটের অংশ শক্ত করে নিজের মুষ্টিতে চেপে রেখেছে। তাকে আটকাতে চাইছে, কিন্তু তার হাতে যেন আর এক ফোঁটা শক্তি বেঁচে নেই।
ঠিক যখন তাদের ঠোঁট প্রায় ছুঁই ছুঁই করছে, আবেশে ধ্রুব নাস্তানাবুদ! ঠিক তখনই অদিতি আচমকা ধ্রুবকে শক্ত করে ধাক্কা দিল। ধ্রুব চোখ খুলে, কয়েক কদম পিছিয়ে গেল। হতভম্ব হয়ে তাকালো অদিতির দিকে।

অদিতির চোখে রাগ; এই প্রথম ধ্রুবকে ওর অসহ্য লাগছে। অদিতর চোখে জল টলমল করছিল, ও ধ্রুবর হতভম্ব চোখ-দুটোর দিকে চেয়ে কাপতে কাপতে বললো———‘আমি কোনো শহুরে মেয়ে নই! এসব স্পর্শ, ক-কিস…..আমি, আমার কাছে এসব আশা করবেন না। আপনার কাছে আমাকে ব্যাক ডেটেড লাগতে পারে, মনে হতে পারে আমি কোনো গাইয়া মেয়ে।কিন্তু…কিন্তু ধ্রুব আমি অনেক ভীতু এসব ব্যাপারে। আমি…আমি সরি!’
অদিতির গলা কাঁপছে। ও দুহাতে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে কেঁদে ফেলল! ধ্রুব দাড়িয়ে আছে। ওর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না- এসব হচ্ছিল কি? অদিতির ইচ্ছার বিরুদ্ধে…শিট! মনেমনে ধ্রুবর অপরাধবোধ হলেও, মস্তিষ্কে যেন চেপে ধরেছে- অদিতি তাকে ধাক্কা দিয়েছে! ওকে অপমান করেছে! অদিতি কেন শুরুতে মানা করেনি, কেন চুপ ছিলো? তাহলে ধ্রুব এতদূর নিশ্চয়ই আগাতো না। অদিতির চুপ থাকাকে ধ্রুব সম্মতি ভেবেছে, এটাতে ধ্রুবর দোষ কোথায়? রিলেশনশিপে তো এসব নরমাল!

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২৬

তারপর ধ্রুব থামল হঠাৎ! দোষ কি অদিতির? হয়তবা ওরই! ও-ই এগিয়েছে! ধ্রুব থামল; চোখ বুজে অন্যপাশে ঘুরে গেল। মনেমনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিলো— আজ থেকে ও অদিতিকে ছুবে না। এক-ফোটাও না!

আমার প্রেমিক ধ্রুব পর্ব ২৮