আমার হায়াতি পর্ব ২১
Nahar Adrita
সকল দম্পতিরা নীলাবর্ষা পার্ক থেকে ঘুরে এসে, বাড়ি পৌঁছালো রাত দু’টোই। ঘুম ঘুম চোখে একে একে চৌধুরী বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকছে সকলে। হায়াত টলমলে চোখে আদিবের দিকে তাকিয়ে আছে, আদিব চিন্তিত গলায় বললো,
– কি হয়েছে বউ নামছো না কেনো, সকলে রুমে গিয়ে সুয়ে পড়লো তো।
– শুনেন না,আমি আরেকটু ঘুরবো। এতো একটু কেউ ঘুরে নাকি।
– আরে জান,কালকে নেহার বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলেই আমরা সারারাত ঘুরবো ওকে।
– না,আমি আজই ঘুরবো।
হায়াতের বাচ্চামো দেখে আদিব স্মিত হেসে বাইকটা সাইড করে, হায়াতকে কোলে তুলে নিলো,হায়াত বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে পা ছুড়াছুড়ি করতে লাগলো, বললো,
– এই নামান আমাকে,বা’লের স্বামী আপনি একটা,আমাকে একটু ঘুরতেও নিয়ে যায় না।
– আরে বউ চুপ করো,সকলে আমাকে নিয়ে হাসবে,এভাবে কেউ বা’লের স্বামী বলে।
– এই বেডা এই, আপনি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন,চলুন না আরেকটু ঘুরবো।
– হুস বউ কালকে ঘুরবো,চলো এখন এক কাপ কফি আর তার সঙ্গে তোমাকে খাবো।
এই বলে আদিব হায়াতকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে ওপরে এসে নিজের রুমে প্রবেশ করলো। হায়াতকে ডিভানে বসিয়ে আদিব আলমারি থেকে দুটো টিশার্ট বের করে আনলো,হায়াত ভ্রু কুচকে আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– জান …….
– হু জান বলেন….
– আপনি কি একটা টিশার্ট নিচে পড়বেন, আরেকটা টিশার্ট ওপরে।
আদিব কপাল কুচকে ছোট্ট করে নিশ্বাস ফুঁকে বললো,
– উফ খোদা এই তুমি আমার ভাগ্যে রেখেছিলে, আমি এতো বড় কলেজের টিচার তার সাথে চৌধুরী কোম্পানির মালিক, সেই আমার নাকি এমন গোবর মাথার বউ জুটেছে ।
– এই আমার মাথায় গোবর বলছেন কেনো,জানেন আমি কতো বুদ্ধিমান। আমি তো শুধু প্রশ্ন করলাম দু’টো টিশার্ট দিয়ে কি হবে।
– হ্যা জানি বউ, তুমি অনেক বুদ্ধিমান। চলো গোসল করবো এখন।
– এখন ?
– হ্যা এখনই করবো,বাইরে থেকে এসেছি, কতো ধুলো বালি ছিলো রাস্তায় চলো ।
হায়াতের কাধ ঠেলতে ঠেলতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো আদিব।
ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে হায়াতকে সোজা করে দাড়া করালো সে। আদিব আস্তে আস্তে হায়াতের ওষ্ঠ নিজের ওষ্ঠে পুড়ে নিলো। হাত আপনা আপনিই চলে গেলো সুধার মধ্যে। পরম যত্নে আদিবের পিঠ দোয়াতে থাকলো হায়াত। আদিব আস্তে আস্তে হায়াতের পড়নের কুর্তিটা খুলে ফেললো,হায়াতও আদিবের শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। মিনিট দশেক দুজনই মধুর সাদ নিতে থাকলো। আদিব বাকা হাসলো,
– আজকে অন্য পজিশন ওকে।
– যেমন…..
– ওয়েট এন্ড সি সোনা…
আদি আস্তেধীরে হায়াতকে কোলে তুলে নিল। হায়াত সামান্য ঝুকে গেলো আদিবের বুকে। আদিব হায়াতের বেতলা ভাজে আস্তে করে ধরলো। হায়াতের ফর্সা উদরে ঝর্ণার পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে আদিব তা খেতে লাগলো। খুচা খুচা দাড়ি গুলোর স্পর্শে শিওরে উঠলো হায়াত।উদরের গভীরে যেনো কোনো এক অস্থির ঢেউ ওঠানামা করছিলো তার, অভ্যন্তরীন অঞ্চলে মুখ ডুবালো আদিব,আস্তে আস্তে রসনা দিয়ে লেহন করতে লাগলো । একপর্যায়ে আরো গভীর ভাবে মাদকতা মিশিয়ে লেহন করতে লাগলো আদিব। এক হাত দিয়ে উরোজযুগলে হাত চালাতে লাগলো৷ ওষ্ঠ পুড়ে নিল সে, হাত চালাতে লাগলো পুরো সর্বাঙ্গ জুড়ে ।
এরপর হায়াত আদিবের সারা শরীর জুড়ে পরশ একে দিতে লাগলো,সে গোপন অস্তিত্ব রসনা দিয়ে লেহন করতে শুরু করলো। আদিব বেসামাল হয়ে গেলো, এর পর শুরু করলো এক প্রেম নিবেদন মতোয়ারা খেলা,সর্বাঙ্গ জুড়ে সুখের আভাস ভাসতে শুরু করলো,হায়াত জুড়ে জুড়ে ব্যাথায় আর্তনাদ করতে লাগলো, আদিব হায়াতকে দেয়ালে ঠেকিয়ে সামান্য চুলের মুঠি ধরে আত্নার আকাঙ্ক্ষিত সংযোগ শুরু করলো,রাতভর ছিলো শুধু নীরব রতি, সুধার মতো ঢেলেছিলো কামনার আখর। দেহ নয়, দু’টি আত্না যেন আবারও মিলিত হলো এই ঘোরে।
রাত তিনটে ব্লানকেট জড়িয়ে শুয়ে আছে দুজন। তৃপ্তির হাক ছাড়ছে দম্পতি।
স্লো ভয়েসে আদিব বললো,
– Mmm… you’re so soft, and I love savoring every bit of you.
– সরুন তো আমার ভালো লাগছে না, হাআআআআ হা হাচ্চি………
– বউ কি হয়েছে,হাচ্……. হাচ্চু…..বউ।
– বা’ল,আব্ হাচ্চি…… আপনার জন্য এখন আমার সর্দি লেগে হাচ…..হাঁচি…. গেলো।
– উফ একটু হা্…..হাব্…হাঁচি… বেশিই ভিজে ফেললাম।
– হুম,চলুন গরম পানি আর গরম দুধ হাঁচি…… খেয়ে ঘুমাই।
– Hurry up, Pakhi, bring hot milk and water — heat them up first……হাচ্চি….
– হ্যা….
হায়াত নিচে গিয়ে এক গ্লাস দুধ আর গরম পানি নিয়ে আসলো। আদিব অর্ধেক গরম পানি খেয়ে বাকিটুকু হায়াতকে খেতে দিলো,এরপর দুজনই ভালো করে সরিষার তেল আর চুন গলায় মেখে নিলো।হায়াত আদিবের দিকে গ্লাসের দুধ এগিয়ে দিলো,আদিব তা দেখে বাকা হেসে হায়াতের চোখে চোখ রেখে বললো,
– Ah… tonight I’ll indulge in liquid milk, just to chase the taste your body once left on my lips, darling.
হায়াতও কম কিসে মুচকি হেসে ঠোঁট কামড়ে বললো,
– So be it… seems I’ll need another shower to cleanse the ache you’ve etched into my flesh.
আদিব যেনো আকাশের চাঁদ পেয়ে গেলো, খিশিতে হায়াতকে একটা চোখ টিপ দিয়ে মাথার চুল গুলো ঝাকিয়ে হাতে দুধের গ্লাসটা নিয়ে বললো,
– Tonight, just like the old times — full of passion and longing. I’ll taste you slowly, sweetened with milk… and you’ll return the desire, tracing every part of me with that same fire.
হায়াত আদিবের পাশে বসলো,আস্তে করে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে আদিবের ওষ্ঠ স্পর্শ করে বললো,
– Then tonight, I’ll savor you with chocolate as well.
আদিব হায়াতকে কোলে বসিয়ে নিলো,হায়াতের পরনের টি-শার্টটি একদমই ঢোলা,আদিব সামান্য উঁচু করে বললো,
– Well then, let’s begin, madam — tonight, I’ll be strapping you to the bed with a belt, if you don’t mind.
হায়াত হালকা চমকিত হয়ে আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
– new way,is it ?
– হ্যা পাখি।
আদিব হায়াতকে বে’ল্ট দিয়ে বেধে নিলো,হাসফাস করতে লাগলো বেচারি হায়াত, আদিব মুচকি হেসে হায়াতের সর্বাঙ্গে দুধ ঢেলে দিলো, উদরে আস্তে আস্তে রসনা দিয়ে লেহন করতে লাগলো,এরপর কুনাফা চকলেট এনে সেই পেস্তা বাদামের মিশ্রণ দিয়ে আদিব তা টেস্ট করতে লাগলো,খানিক সময় পরপরই হায়াত কেঁপে কেঁপে ওঠে। আদিব হাস্কি স্বরে বললো,
– Will you be able to handle it ? Hope you don’t catch a fever.
হায়াত চুপ করে আছে,যার মানে সম্মতির লক্ষণ। বেশ কিছুক্ষণ আদিব আত্নার আকাঙ্ক্ষিত কামনা চালিয়ে যেতে থাকলো,আর হায়াত পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে তৃপ্তি নিতে থাকলো। এভাবেই ভোরের আলো ফোটা অব্দি তাদের আত্নার সংযোগ চলতে থাকলো।
সকাল সাতটা…….সকালটা যেন আজ অন্যরকম। সূর্যটা উঠেছে একটু বেশি দীপ্তি নিয়ে—ঠিক যেমনটা হয় রাজকীয় কোনও উৎসবের দিনে।
বাড়ি জুড়ে যেন অন্যরকম আমেজ। গোসল করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে হায়াত,আর তার পেছনে আদিব। হায়াত কপাল স্লাইড করে বললো,
– উফ দেখুন হিকি দিয়ে ভরা আমার গলার অবস্থা দেখুন,গালে দেখুন…..
– আরে বউ সবাই দেখুক, তাতে কি হয়েছে… হিকি দিলেও আমার বউকে দিয়েছি, এতে কার কি৷
– হ্যা সমস্যা আছে,লামিয়া,খুশি আপু, শম্পা আপুরা দেখলে আমাকে নিয়ে মজা করবে না….
– আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আমার সাথে থাকবে,তাই আর কেউ তোমাকে কিছু বলবে না।
– সরুন তো ভাল্লাগে না বা’ল।
এমন সময় দরজায় নক করলো সাফা। হায়াত ওড়না দিয়ে গলা ঢেকে দরজাটা খুলে দিলো,সাফার মুখে একগাদা হাসি। হি হি করতে করতে বললো,
– হায়াত চলো, নেহাকে হলুদ দিয়ে গোসল করাতে হবে।
– হ্যা আপু চলুন।
প্রথম রোদ যখন একটু দেরিতে ছাদে এসে পড়ল,
নেহা সহ একসাথে ছাদে উঠল হায়াত, জুলিয়া, খুশি, সাফা, মারিয়া,লামিয়া সহ সকল বান্ধবী, সবাই পরেছে রঙিন চুড়িদার আর হাতে গাঁদা ফুলের মালা।ছাদটা এখন যেন এক রঙিন ক্যানভাস, যেখানে রঙ আর হাসির আঁচড় মিশে আছে।একেকজন তুলে নিয়ে আসছে মাটির কলসি, হায়াত পাটার মাঝে কিছু হলুদ বেটে নিলো। এরপর সকলে মিলে নেহাকে হলুদ মাখিয়ে গোসল করিয়ে দিলো৷
দুপুর বারোটা বাজে। বাড়ির পেছনের উন্মুক্ত রান্নাঘর তখন পুরোদমে যুদ্ধক্ষেত্র।
নয়জন বাবুর্চি বিশাল কড়াইতে একসাথে তেহারি, কোরমা আর পোলাও বানাতে ব্যস্ত।
গন্ধে চারদিক ভরে গেছে—জাফরানের হালকা সুরভি, মসলা ভাজা ঘ্রাণ আর ঘি’র মিষ্টি তাপ যেন বাতাসে ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পাশেই দু’জন তরুণ দাঁড়িয়ে তদারকি করছে —
একজন একটু গম্ভীর মুখে লিস্ট হাতে,
আরেকজন ঝাঁপাঝাঁপি করছে একটা ঠেলা-টেবিলে চামচ, প্লেট গুছিয়ে।
আদিবের পরনে সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা। গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে একটা রেফারেন্স লিস্ট নিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলছে,
– ঐ যে গরুর কোরমার কড়াই—ওটার লবণ একটু চেক কর। গত বছর মামার বিয়েতে হালকা লবণ কম ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছিল।
তাসিন ফিক করে হেসে বললো,
– বাহ দ্যা গ্রেট সাদাদ আদিব চৌধুরী ও মিডিয়াকে ভয় পায়,জানা ছিলো না ভাই।
– বাজে বকা বন্ধ করে যা গিয়ে চেক কর।
– ওকে ব্রাদার, তুমি যাও রেস্ট নাও।
এমন সময় পাশের আমগাছের নিচে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো লামিয়া,,তাসিন গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
– এই মিস কি করছেন।
– এই তো আপুর সাথে কথা বললাম।
– ওহ আচ্ছা বুঝলাম…..
আলিয়া বেগম হায়াতের রুমে আসলো ধীরে ধীরে, মাকে দেখেই এক গাল হেসে বললো,
– আম্মু বসো,বেয়াইন বাড়ি এসে আমাকে তো ভুলেই গিয়েছো একদম, হুহ।
– মা তার আদরের সন্তানকে কখনো ভুলে না, তুই সুখে আছিস এটাই অনেক।
– হ্যা আম্মু, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করি, আমি এতো ভালো একজন হাসবেন্ড পেয়েছি,আর আমার শশুর শাশুড়ী আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো,সকলেই খুব ভালো।
আলিয়া বেগম হায়াতের কপালে ছোট্ট করে পরশ একে দিলো , এরপর রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। হায়াত আলমারি থেকে একটা রোজ গোল্ড কালার শাড়ি বেড় করলো এবং আদিবের জন্য হালকা প্যাস্টেল ব্লেজার বের করে রাখলো,বইয়ের তাঁক থেকে একটা উপন্যাসের বই বেড় করে নিলো,বাড়ির সকল মেয়েরা গোসল করে splendor by anika bushra তে সাজতে ধানমন্ডি যাবে নেহাকে নিয়ে,সকাল থেকেই হালকা অসুস্থ অনুভব হওয়াই বাড়িতেই একটু সাজবে হায়াত। বেলকনিতে গিয়ে নরম দোলনায় বসে #ভালোবাসি_যে উপন্যাসটা সম্পূর্ণ পড়লো হায়াত। এর পর গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো…..
ঝিরিঝিরি স্বপ্ন ঝরে….
দুটি চোখের সীমানায়….
চুপি চুপি কানে কানে….
কেউ আমাকে ডেকে যায়……🎵
মন হারানোর এ সময়….
পাখা মেলে…না জানি যাবো কোথায়,,,,,তেরে রার রুরু…মন উড়ু উরু…….
প্রেম হলো শুরু…মনে হয়…..
তেরে রারা রুরু….. মন উড়ু উড়ু….🎵(!!)
আদিব রুমে প্রবেশ করতেই একটা অমায়িক গানের গলা ভেসে আসলো তার কানে। মুচকি হেসে কাচের গ্লাসের আড়ালে দাড়িয়ে হায়াতের কন্ঠে সুন্দর করে গাওয়া গানটি শুনলো আদিব। হায়াত থেমে যেতেই আদিব বেলকনিতে প্রবেশ করলো। হায়াত মুচকি হেসে বললো,
– রান্না শেষ সব ?
– না একটু পর শেষ হবে, আেনার গলা কিন্তু মাশাআল্লাহ মেডাম।
– শুকরিয়া। পানি খাবেন…
এই বলে হায়াত আদিবের জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসলো,আদিব মুচকি হেসে বললো,
– চলো আরেকটা গান ধরি,আমার সাথে গাইতে হবে ওকে।
– আচ্ছা।
হে হে হে আ আ আ…… (!!)
হ… তোমাকে ছেড়ে আমি…. কি নিয়ে থাকবো,,ভালোবেসে যাবো ও গো যতোদিন বাচবো….
হেসো না হেসো না তুমি যেনে রাখো তা…বলে তো দিয়েছি, আমি হৃদয়ের কথা….
হে হে আ আ আ….(!!) 🎵🎵
তোমাকে ছেড়ে আমি…. কি নিয়ে থাকবো,,ভালোবেসে যাবো ও গো যতোদিন বাচবো….
হেসো না হেসো না তুমি যেনে রাখো তা…বলে তো দিয়েছি, আমি হৃদয়ের কথা….
চাঁদেরও আলো দিয়ে মুখখানি দেখবো…
পেয়ো নাকো লজ্জা খুব কাছে রাখবো….. হো চাঁদের ও আলো দিয়ে মুখখানি দেখবো….🎵🎵
হায়াতকে কোলে বসিয়ে সবটুকু গান গেয়ে শেষ করলো আদিব, আস্তে করে হায়াতের ওষ্ঠ নিজের আয়ত্তে এনে ফেললো।হাত চালাতে লাগলো মাধুর্য সিক্ত সুধায়,হায়াত পরম আবেশে আদিবের চুল গুলো খামচে ধরলো। আদিব মিনিট পাঁচেক পর আহ্লাদী স্বরে বললো,
– বউ উপন্যাস পড়ছিলে।
– হু,এত্তো ডার্ক রোমান্টিক গল্প পড়েন আপনি জানা ছিলো না।
– হুম পড়তে ভালোলাগে। আচ্ছা থাকো গোসল করে আসি,তুমিও যাবে চলো…
– উহু আমার ভালো লাগছে না,আপনি যান।
– আচ্ছা।
বিয়েবাড়ির চারপাশে সন্ধ্যার আলো নামতে না নামতেই চারদিক জ্বলে উঠলো রঙিন বাতিতে।
ঘড়ির কাঁটা ছয়টা ছুঁতেই ধরা দিল দুই ভিন্ন সৌন্দর্যের চূড়ান্ত রূপ—আদিব আর হায়াত।
আদিব পড়েছে প্যাস্টেল ব্লেজার, যার ওপর সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি। চোখে এক আত্মবিশ্বাসী ঝলক, আর মুখে এক হালকা কিন্তু স্থির হাসি।
সেই হাসির দিকেই সবাই তাকিয়ে থাকে, কিন্তু তার চোখ তো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু এক দিকেই…হায়াত রোজ গোল্ড রঙের শাড়ি যেন সন্ধ্যার আকাশে রঙধনু! তার সৌন্দর্যে এক অদ্ভুত নরম দীপ্তি।
হাতে স্বর্ণের মোটা চুড়ি, কানে ঝুলছে পুরনো দিনের নকশার স্বর্ণের ঝুমকা, আর খোঁপায় গাঁথা হয়েছে টুকটুকে লাল গোলাপের গাজরা—যেন একটা ছোট বাগান তার পেছনে হেঁটে চলেছে।
হায়াত আর আদিব স্টেজে ওঠে কিছু পিক তুলে নিল।ক্যামেরাম্যান এসে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললো,
– আপু ভাইয়া আপনাদের কিছু কিউট ভিডিও ক্যাপচার করে দিই।
– ওকে দিন, কিন্তু আমার ওয়াইফের মুখ যেন বেশি না দেখা যাই।
– ওকে ভাইয়া।
এরপর একে একে সকলে স্টেজে আসতে লাগলো,সকলেই কনে আর বর আসার আগে কিছু সেলফি তুলে নিলো।
ঘড়ির কাঁটা যখন সাতটা ছুঁয়েছে, তখন স্টেজের আলো একটু ম্লান করে রাখা হয়েছে।
সবার অপেক্ষা একটাই—আজকের কনে কবে আসবে!
আলো কমানো, সুর ধীরে বাজছে… একটা সাসপেন্স যেন আকাশে ভেসে আছে।
ঠিক তখনই—
পিছনের গেট খুলে ধীরে ধীরে ভেতরে প্রবেশ করে নেহা।
ডার্ক মেরুন কাতান লেহেঙ্গা, তাতে সোনালি জরি আর মিরর ওয়ার্ক—জ্যোৎস্নার মতো ঝিলমিল করে উঠছে।
মাথায় ওড়নার নিচে গাঢ় কাজ করা খোঁপা, কপালে চওড়া টিকলি, গলায় পোলকি হার, ঠোঁটে ডিপ রোজ কালার লিপস্টিক , চোখে স্মোকি শেড—সে যেন রক্তরঙা মেঘে গড়া কোনো রাজরানী।
চারপাশের কোলাহল থেমে গেল।
কিন্তু আদনান তখন কেবল চোখ বড় করে তাকিয়ে, একদম হা হয়ে গিয়েছিল।
মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরোচ্ছে না, শুধু ধুকধুক করে ওঠা বুকের শব্দ শুনতে পাচ্ছে যেন।
হঠাৎ পিছনে বসে থাকা মিসেস অরোরা কাঁধে শাড়ির আঁচল টেনে চোখ মুছলেন।
চোখে জল নিয়ে মৃদু হাসলেন—তার মিষ্টি কণ্ঠে শুধু একটাই কথা,
– আজ মেয়েটাকে সত্যিই বউ লাগছে…আপা দেখলে কান্না করে দিত।
তার পাশে বসা নারীরা সম্মতিতে মাথা নাড়ল।
কারও মুখে কিছু ছিল না—কারণ নেহাকে দেখে তখন কারো ভাষা ছিল না।
নেহা ধীরে ধীরে যখন স্টেজে উঠল, তখন লাইট একদম তার গায়ের ওপর। মুহূর্তেই গান বেজে ওঠলো,আর নেহা নাচতে শুরু করলো,
meri saiyya superstar …… গানে।
নেহা তখনো দাঁড়িয়ে—বাড়ির গেট থেকে একদম স্টেজে উঠে এসেছে ধীরে ধীরে,গানটিতে নাচতে নাচতে।তার চোখে লাজুক দীপ্তি, ঠোঁটে একটুখানি কাঁপা হাসি।
স্টেজে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আদনান—আইভরি শেরওয়ানি, মাথায় গোল্ড সাফা, গলায় মালা, আর চোখে বিস্ময়।
নেহা কাছে আসতেই সবার সামনে দাঁড়িয়ে গেলো আদনান।
মিউজিক থেমে, ক্যামেরা এক ফ্রেমে জুম।
আদনান নিচু হয়ে নেহার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
– আমার কুইন, আজ থেকে এই জীবনটা তোমার হাতে দিয়ে দিলাম।
চারপাশে তখন হায়াত, জুলিয়া, খুশি আর মারিয়াদের চিৎকার।
এরপর স্টেজে শুরু হলো ডান্সের আয়োজন। শম্পা আর খালিদ মিলে নাচতে শুরু করলো,
জানু বানু যো কেহতা হে
বিবি তেরা হু লাগতা হে সামে
মোর সামে……
সামি সামি জো কেহতা হু,,
মারদ মেরা তু লাগতাহে সামে…..🎵🎵🎵
নাচ শেষে সকলে তালি দিলো।
এরপর একে একে সকলে পাগলাটে নাচ করতে লাগলো,আদিব, তাসিন,খালিদ,আরাফ সকলে মিলে কয়েকটা গানে নাচতে লাগলো।একটু পর শুরু হলো হায়াত আদিবের ডান্স….
মধুর মধুর কইয়া কথা…!
সরল মনে দিলা ব্যথা,,,
মানে না মন ছলনা..!
কেটে কেটে যায় দিনে রজনী,
আসি আসি বলে আর আসো নি…!
বলে বলে লোক পাগলীনি…!
পাগল আমি নই…!
বন্ধু কই কই…..🎵🎵🎵🎵
এরপর জুলিয়া আর ইমন নাচতে শুরু করলো,,,,
ঝুমকা গিরা রে এই গানে……
ঘড়ির কাঁটা তখন বিকেল রাত নয়টা ছুঁই ছুঁই।
সবার চোখে এক রকমের উচ্ছ্বাস—সাক্ষ্যরের পরেই ‘নেহা-আদনান’ নামটা চিরস্থায়ী হবে।
চেয়ার টেনে বসলো আদনান। একবার নেহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি—
তারপর একটানে কলমটা হাতে তুলে নিলো।
এক মুহূর্ত থেমে, সাদা কাগজের কোণে নিজের নামটা লিখে দিলো স্পষ্ট করে:
আদনান আহমেদ।
সবার মুখে চাপা উল্লাস, কিছু জায়গায় খুশির কান্না।
কিন্তু নেহা……সে তখনও নিজের জায়গায় বসে।
কলমটা তার সামনে, কিন্তু সে যেন সময়ের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
চোখ স্থির, দৃষ্টি ঝাপসা, আর হাত দুটো কাগজের ঠিক উপরে থমকে আছে।
আদনান নেহার পাশে এসে বসলো,বুকে হালকা জড়িয়ে ধরে বললো,
– আমি আছি বেবি,সাইনটা করো প্লিজ,ভয় নেই তো।
নেহা চোখ তুললো,চোখে পানি চিক চিক করছে,কাঁপা কাঁপা হাতে কলমটা তুললো,
– অনামিকা আরা নেহা-
এই ছিল সেই মুহূর্ত—যখন কালি না, দুজন মানুষের জীবনের গল্প সাক্ষ্যরিত হলো।
সাদা পাতায়, কালো অক্ষরে, লাল হয়ে থাকা হৃদয়ের সাক্ষী হয়ে।
নেহার কলম ধরা হাতটা এক মুহূর্ত কেঁপে উঠলো।
সই করে নেবার পর সবাই ছবি তুলছে, আর কেউ হাসছে।
কিন্তু নেহার ভেতরটা তখন ছিঁড়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে।তার চোখ চলে গেলো অতিথিদের ভিড়ের মাঝে—
হাজারো চেনা মুখ, পরিচিত হাসি…
তবু সেই একটিমাত্র মুখ সেখানে নেই।
আম্মু…আব্বু….
শরীরটা ঢলে পড়লো চেয়ারে।
হাতের চুড়ি বেজে উঠলো কাঁপা কাঁপা ধ্বনিতে।
হায়াত তখন ছুটে এলো, পাশে বসে নেহার হাত ধরে বললো—
– নেহা আপু…..
মিসেস অরোরা সহ সকলে নেহার কাছে এসে বসলো। নেহা কিছু বললো না, শুধু হঠাৎ করেই ঝাঁপিয়ে পড়লো হায়াতের বুকে।
সেই গর্জে ওঠা কান্না—
যেটা এতক্ষণ বুকের ভেতর আটকে রেখেছিলো,
সেটা যেন এখন এক সমুদ্র হয়ে হায়াতের গলার কাছে এসে পড়েছে।
নেহা কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বললো—
– হায়াত… আমার আম্মু কোথায়… আমার আম্মু কেন নেই আজ ? আজ তার মেয়ের বিয়ে,আর পাপা…পাপা তো আসতে পারতো,এই দিনটাতে জন্য আমি তো শুধু ওনাদের মুখটাই দেখতে চেয়েছিলাম…আমার মা বাবা কেনো আসলো না, বলো না।
হায়াত নেহার চুলে হাত রাখে, চোখে জল জমে যায় ওর, শান্তভাবে বলে—
– আপু তোমার আম্মু… আন্টি যদি সুস্থ থাকতেন, অবশ্যই আসতেন,এভাবে কান্নাকাটি করো না আপু।
আদিব কিছু একটা ভেবে ফোনটা হাতে নিলো,অতঃপর নেহার মাকে কল দিলেন। স্ক্রিনে জল জল করছে নেহার মার প্রতিচ্ছবি। আদিব তার খালামুনিকে সালাম দিয়ে বললো,
– খালামনি এই নাও, তোমার মেয়ে মা মা বলে কাঁদছে।
এরপর নেহা তার মা বাবার সাথে কথা বলে নিজেকে কিছুটা শান্ত হলো। সকলে যেন প্রশান্তির হাক ছাড়লো।
রাত দশটা…
নেহার বরাদ্দকৃত রুমটিতে সুন্দর করে সাজানো ফুল দিয়ে,দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে সকলে,এরই মাঝে আদনান বলে ওঠলো,
– আরে কি মুশকিল শালিকারা ভেতরে যেতে তো দিবে নাকি….
সবার সামনে দাড়িয়ে থাকা খুশি বলে ওঠলো,
আমার হায়াতি পর্ব ২০
– ওকে যেতে দিবো, আগে টাকা দিন।
এরপর টাকা মিটমাট করে আদনান ভেতরে প্রবেশ করলো।নেহার কপালে প্রশান্তিময় পরশ একে দিলো,আজ রাতটি সত্যিই তাদের জন্য খুবই পবিত্র।
আদিব হায়াতের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
– জান আমাদের বিয়ে এরপর ওকে,তারপর আমরাও নতুন করে বাসর করবো।
– হ্যা সেই তো,প্রতিদিন বাসর করেও আপনার সাধ মিটে না হুহ।
– আরে এমন করছো কেনো….আমরা আমরাই তো।