আমার হায়াতি পর্ব ৩৪
Nahar Adrita
তিন মাস পর…
দিন কেটে মাস হয়ে গেছে।
এই সময়টা যেন আদিবের জীবনে এক নতুন ছন্দ নিয়ে এসেছে। সকাল-বিকাল-রাত—সবই এখন প্রজেক্টের কাজে ভরে গেছে। ব্যবসার খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের কাজ—সবকিছুর দায় যেন ওর কাঁধেই এসে পড়েছে।
রাকিব চৌধুরী কয়েকদিন হলো কুমিল্লায়, নতুন প্রজেক্টের মিটিং নিয়ে সেখানে ব্যস্ত। তাই আদিবকে ঢাকার প্রজেক্ট সামলাতে হচ্ছে একাই।
আসিফও এখন কম যায় না। একসময় শুধু মজার ছলে বিদেশের সব কাজ দেখতো, কিন্তু এখন সে-ও যেন সত্যিই হয়ে উঠেছে আদিবের ডানহাত। অফিসে মিটিং হোক বা বাইরে সাইট ভিজিট,,
আসিফ সবসময় আদিবের পাশে থেকে সাহায্য করে।
এদিকে হায়াত আর আরাবির পড়াশোনার চাপ বেড়েছে, সামনে ফাইনাল পরীক্ষা তাই সবটুকু ধৈর্য আর মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে।
আজ শুক্রবার হায়াত আর আরাবি দু’জন মিলে ছাদে বসে আছে। আরবির হাতে একটা বড় সাইজের জাম্বুরা, আর হায়াত ছুরি দিয়ে কাঁচা মরিচ কাটছে। আরবি কপাল কুঁচকে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— এই জানু, এত মরিচ কাটছিস কেন? আমায় কি তুই মেরে ফেলবি নাকি ঝাল খাইয়ে?
আরাবির কথায় হায়াত মুচকি হেসে বলল,
— ঢংয়ের কথা বলছিস কেন, বেবি ? তোর কাছে তো এইটুকু ঝাল কিছুই না..
— আরে ভাই, আমি শুকনা মরিচের ঝাল খেতে পারি, কিন্তু কাঁচা মরিচের না।
হায়াত আর আরাবি খুনসুটি করতে করতে সবকিছু কেটে জাম্বুরায় মাখিয়ে ফেলল। এরপর দু’জন একসাথে খেতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পরে হায়াত আরাবির দিকে তাকিয়ে বলল,
— আচ্ছা দোস্ত, তোর আর আসিফ ভাইয়ার মাঝে কি সব ঠিক হয়েছে?
আরাবি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
— মানে?
হায়াত আরাবির একটু পাশ এসে বসে বলল..
— মানে তোরা কি এখনো দু’জন দু’জনকে ভালোবাসিস না ?
আরাবি একটু লাজুক মুখ করে বলল,
— যাহ্ বাল, এটা কেমন প্রশ্ন ! আমার কি লজ্জা করে না ?
এরপর দুই বান্ধবী খুনসুটি করতে করতে কখন যে বেলা ১২টা পেরিয়ে দুপুর একটা বেজে গেল, টেরই পেল না। শেষে হায়াত আর আরবি দু’জনেই নিচে নেমে এলো। নিচে দেখল, মিসেস অরুরা আর সুফিয়া চৌধুরী রান্না করছেন। হায়াত আর আরবিকে দেখে দু’জন একসাথে হেসে বললেন,
— কই ছিলেন দুইজন এতক্ষণ ? গোসল করেন নি এখনো ?
শাশুড়ির কথায় হায়াত মুচকি হেসে বলল,
— আম্মু, আমিও কি রান্না করতে আপনাকে সাহায্য করব?
মিসেস অরুরা কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ মুছে বললেন,
— না বাবু, যাও গোসল করে নাও। আজ তোমার আম্মু আর আরাবির আম্মুরা আসবেন। তখন না হয় খাবার পরিবেশন করবে। এখন যাও, গোসল করে দু’জন শাড়ি পরে নাও।
হায়াত আর আরাবি কিছু না বলে যার যার মতো করে রুমে চলে এলো। হায়াত রুমে এসে বসতেই, ব্যালকনি থেকে দৌড়ে এসে পায়ের কাছে বসল ক্লিও। হায়াত মিষ্টি হেসে ক্লিও কে কোলে নিয়ে আদর করে ফিসফিস করে বলল,
— এই আকাইম্মা বিড়াল, সারাদিন খাই খাই করিস! চল এক কাজ করি, তোর বাবাকে একটা কল দিই আর একটা শাড়ি সিলেক্ট করে নেই।
যেই কথা, সেই কাজ।
আইফোনটা হাতে নিয়ে হায়াত ঠোঁট কামড়ে আদিবের আইডিতে ঢুকল,
তারপর আদিবকে কল করল।
এদিকে আদিব সবে একটা প্রোজেক্টের কাজ শেষ করে কেবিনে ঢুকেছে। তখনই হোয়াটসঅ্যাপে কল এলো। আদিব জানে অফিস টাইমে হায়াত ছাড়া আর কেউ কল দেয় না জেনে সে সময় নষ্ট না করে ফোন হাতে নিল। দেখল, হায়াত ভিডিও কল দিয়েছে। আদিব মুচকি হেসে কল রিসিভ করল।
— কী হয়েছে বউ জান, এখন কল দিলেন যে…
হায়াত ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,
— আর বলবেন না, আপনার বিড়ালটা আপনাকে ভীষণ মিস করছিল। বলছিল,,আমার বাবা কোথায় গেলো ? তাই আপনাকে কল দিলাম। হি হি…..বিশ্বাস না হলে ওকেই জিজ্ঞেস করুন।
আদিব কপালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করে বলল,
— বউ, যে কারণে কল দিয়েছো সেটা বলো। একটু পরেই গুলশান যেতে হবে মিটিং এ্যাটেন্ড করতে।
হায়াত ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
— আসলে আজকে আম্মুরা আসবে তো, কোন শাড়িটা পরব বুঝতে পারছি না। আপনি একটু বলে দিন না।
আদিব মাথায় হাত দিয়ে হায়াতকে কয়েকটা শাড়ি দেখাতে বললো। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অবশেষে একটা অফ-হোয়াইট শাড়ি হায়াতের জন্য পছন্দ করল। হায়াত খুশি মনে কল কেটে দিয়ে গোসল করতে চলে গেল।
দুপুর দুইটা নাগাদ হায়াত শাড়ি ঠিকঠাক পরে নিচে চলে এলো। মিসেস অরুরা আর সুফিয়া টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলেন। সেই সময় সিঁড়ি দিয়ে নামতেই হায়াতকে দেখে দু’জনের মুখ হা হয়ে গেল। যেন জান্নাতের হুরের মতো লাগছিল তাকে।
লম্বা চুলগুলো আধখোঁপা করা, কানে ছোট ছোট ঝুমকা, হাতে চিকন ডায়মন্ডের চুড়ি, নাকে ছোট্ট একটা ফুল ঝলমল করছে,সব মিলিয়ে যেন অমায়িক এক রূপ। মিসেস অরুরা এগিয়ে গিয়ে হায়াতের কপালে চুমু খেলেন, তারপর একটু কাজল নিয়ে হায়াতের গালের কোনায় লাগিয়ে দিলেন যাতে কারও নজর না লাগে। মিসেস সুফিয়াও এগিয়ে এসে হায়াতের প্রশংসা করতে লাগলেন।
এমন সময় সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামল আরাবি। তার পরনে কালো জামদানি শাড়ি, কোমর অব্দি খোলা চুল, একটু অভিমানি সুর নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
— হ্যাঁ, সেই তো ! জানুকে সুন্দর লাগছে, আর আমায় একটুও লাগছে না।
নূপুর আর মিনহাজা ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
— না ভাবি,তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে। মাশাআল্লাহ, আমার ভাবিদের ওপর কারও নজর না লাগুক।
ঠিক তখনই মেইন গেটের কলিং বেল বেজে উঠল। বাড়ির কাজের লোক রোজি দরজা খুলতেই হায়াতের মায়ের হাসি-উজ্জ্বল মুখ ভেসে উঠল।
হায়াত তড়িঘড়ি করে ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল। আলিয়া বেগম মুচকি হেসে কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রেখে মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
দু’জনেই আবেগে ভেসে কাঁদতে লাগল। আলিয়া বেগম মেয়ের চোখ মুছে দিয়ে বললেন,
— আম্মু এসে গিয়েছি তো, এভাবে কেউ কাঁদে নাকি ?
হায়াত এবার শব্দ করে কেঁদে উঠল,
— এতদিন পর তুমি কেন এলে ? আমাকে কি একটুও ভালোবাসো না ?
আলিয়া বেগম শান্ত স্বরে বললেন,
— আফরা, এত বাচ্চামি করতে নেই মা। বাড়িতে অনেক কাজ ছিল, কী করব বলো?
হায়াত চোখ মুছে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখল,তখনি দেখতে পেলো রাব্বির হাতে দুটো ব্যাগ।
ছুটে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরল। রাব্বি মিষ্টি হেসে পকেট থেকে পাঁচটা ডার্ক চকলেট বের করে বোনকে দিল।
হায়াত মুচকি হেসে বলল,
— এত চকলেট এনেছিস কেন ? দু’টা আনলেই তো হতো…!!
রাব্বি হায়াতের হাত থেকে একটা চকলেট নিয়ে আরাবির কাছে এগিয়ে গেল।
আরবি মিষ্টি হেসে রাব্বিকে আদর করল।
রাব্বি হাতে থাকা চকলেটটা আরবিকে দিয়ে বলল,
— আমি জানি আমার আরু আপুও চকলেট খায়, তাই আরু আপুর জন্যও এনেছি। আপা, তুই একা খাবি না, দুলাভাইকেও দিবি,,মনে যেন থাকে ।
দুই ভাইবোনের খুনসুটির মাঝে আরাবির বাবা-মাও ভিতরে প্রবেশ করল। সকলে কুশল বিনিময় করে, মিসেস অরুরা সবাইকে খেতে বসালেন। হায়াত ও আরাবি খাবার পরিবেশন করে নিজেরাও খেতে বসল।
সকলে খাওয়া–দাওয়া শেষ করে ড্রয়িং রুমে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলেন; সন্ধ্যায় সবাই চলে গেলেন। হায়াত তার মা-কে থাকতে বলেও মা থাকলেন না; আর কী করার, হায়াত একটু উদাসিন হয়ে তার মা-কে বিদায় জানালো।
রাত প্রায় দশটা, চারিদিকে নীরবতা বিরাজ করছে; বাইরে হালকা ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। হায়াত মৃদু পায়ে বেলকোনিতে প্রবেশ করল। দুলনায় বসে ক্লিও কে কোলে নিয়ে বসে রইল। খানিকক্ষণ পরই গাড়ির শব্দ শোনা গেল,
হায়াত উঠে দরজার সামনে দাঁড়াল।
আদিবের হাতে চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে দরজায় নক করল। হায়াত দরজা খুলে দিতেই আদিব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল,
…….বউ, তোমাকে একদম নতুন বউয়ের মতো লাগছে! উফফ, চোখ ফেরানোই যাচ্ছে না !
এই বলেই আদিব ভেতরে এসে হায়াতকে কোলে তুলে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। ডিভানের উপর বসিয়ে দিয়ে শরীরের আঁচল ফেলে গলায় মুখ গুঁজে দিল। হায়াত মিষ্টি করে হেসে আদিবের গলা জড়িয়ে ধরল।
অন্যদিকে, রুমে বসে শাড়ির পিনগুলো একে একে খুলছিল আরাবি। এমন সময় দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল আসিফ। আরাবিকে এভাবে দেখে খানিক থমকে গেল, মাথা নিচু করে নিল। আরাবি তাড়াতাড়ি শরীরের আঁচল বুকে গুঁজে নিল, লজ্জায় মাটি পাক করে ভিতরে ঢুকে যাওয়ার মতো অবস্থা বেচারার। আসিফ পিছন ঘুড়ে তখনও দাঁড়িয়ে আছে। আরাবি আলমারি থেকে একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই আসিফ ডেকে উঠল,
….. এদিকে আসো…
আরু মৃদু পায়ে আরাবি আসিফের সামনে এসে দাঁড়াল।
আসিফ আরাবিকে ইশারা করে দরজা লাগাতে বলল। মৃদু পায়ে দরজা বন্ধ করে সামনে এসে দাঁড়াল আরাবি।
আসিফ হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল—
— শার্টের বোতামগুলো খুলে দেন মেডাম..
আরাবি কোনো কথা না বাড়িয়ে এক হাতে শাড়ির আঁচল বুকে জড়িয়ে, অন্য হাত দিয়ে শার্টের বোতামগুলো খুলতে লাগল।
এক মিনিট পর আসিফ ধীরে ধীরে আরাবির কোমরে হাত রাখল। হালকা কেঁপে উঠল আরাবি, লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল।
আসিফ বাঁকা হেসে আরাবিকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল।
দুই হাত পিছনে চেপে ধরতেই বুকের আঁচল ধপ করে ফ্লোরে পরে গেল। আসিফ তার তর্জনি আঙ্গুল দিয়ে কপাল থেকে গলা অবধি স্লাইট করতে লাগল।এর পরে আস্তে আস্তে গলার পাচঁ আঙ্গুল নিচে হাত চলে যেতেই আরাবি বড় বড় চোখ করে তাকালো
আসিফ মুচকি হেসে আরাবির দিকে ঝুঁকে যেতেই আরাবি বেলকনির দিকে ছুটে গেল।
আসিফ চুলে হাত চালাতে চালাতে আরাবির পিছন পিছন গেলো
আরাবি তখন বেলকনির এক পাশ থেকে শাড়ি ঠিক করে আঁচল টা বুকে দিচ্ছিল তখনি আসিফ এসে আরাবিকে দেয়ালের সাথে আটকিয়ে ফেললো
চোখের ঘন পাপড়ি জোরা কাঁপছে তার..
আরাবি আস্তে করে কপালে একটা টুকা মারলো……আস্তে আস্তে ওষ্ঠ এগিয়ে কপালে চুমু খেলো।
আরাবি বিস্ময় চোখে তাকালো আসিফের দিকে
আসিফ আরাবিকে আরেকটু চমকিয়ে দিতে চুলের মুঠি ধরে ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ পুরে দিলো,, জুরে জুরে ঠোঁটের স্বাদ নিতে লাগলো..
আরাবি যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেছে
পুরা পনেরো মিনিট পর ঠোঁট ছেড়ে দিতেই আরুর কপালে মাথা ঠেকিয়ে জুরে জুরে নিশ্বাস নিতে থাকলো আসিফ
আরাবি যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেছে আসিফ ব্যাপারটা লক্ষ করে এক ধমক দিয়ে বললো…
– নিশ্বাস নেও বেয়াদব…. এই বার রেসপন্স না করলে মাইর দিবো।
এর পর আবারও শুরু হলো ওষ্ঠের স্বাদ নেওয়া.. এইবার যেন আরাবি কি করবে বুঝতে না পেরে ভয়েই আসিফের সাথে তালে তাল মিলাইতে থাকলো।
সকাল ৭টা বেজে ৪০ মিনিট, হায়াত আর আরাবি রেডি হয়ে নিচে আসলো। হায়াত লক্ষ্য করল আরাবির গলায় কেমন যেন একটা লাল দাগ। চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল,,
— আরু, তুই না বলেছিলি তোর আর ভাইয়ার মাঝে কিছুই চলছে না, তাহলে তোর গলায় এটা কিসের দাগ ?
আরাবি একটু নড়েচড়ে উঠল, আদু আদু করে বলল,,
— না মা… মানে….কাল রাতে..
আর কিছু বলার আগেই মিসেস অরুরা আর মিসেস সুফিয়া ড্রয়িংরুমে এলেন।
আরাবি আর হায়াতকে খেতে নিয়ে গেলেন। তারপর খেতে খেতে হায়াতকে সব বলল আরাবি। হায়াত তো সবটা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে উঠল।
কলেজে আজ এক্সাম-এর রুটিন দেবে। একটা ক্লাস শেষে হায়াত আর আরাবি দু’জনেই রুটিন দেখছিল। ঠিক তখনই ক্লাসে প্রবেশ করল আদিব। দীর্ঘদিন যাবৎ পরে আসায় খুরশেদ স্যার আদিবের সাথে কুশল বিনিময় করলেন।
তারপর ঠিক হলো আজকের লাস্ট ক্লাসটা আদিব নেবে।
ক্লাস শেষে ১০ মিনিট ব্রেক দিতেই হায়াত আর আরাবি মাঠে গেলো । কিছু খাবার কিনে নিলো সঙ্গে করে।
বাইরে তখন প্রচণ্ড রোদ, হায়াতের হঠাৎ করেই মাথা ঘুরতে শুরু করল। আরাবিকে বলল,,
— আরু, পা… পানি খাবো প্লিজ, আমার মাথায় কেমন যেন লাগছে।
আরাবি দেরি না করে পাশের স্টল থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল আনল।
হায়াত কিছুটা পানি খেয়ে মাথায় ঢেলে নিল। এমন সময় একজন মেয়ে এসে বলল,,
— আদিব স্যার তোমাদের ডেকেছে আপু ।
হায়াত আরাবির সাহায্যে উঠে দাঁড়াল। তারপর দু’জন অফিস রুমের দিকে পা বাড়াল। আরাবি আনমনে বকবক করেই যাচ্ছিল। ঠিক তখনই হায়াত মাথা ঘুরে পড়ে গেল।
আরাবি ভয়ে চিৎকার করে উঠল। কলেজের সকলে মাঠের বাম পাশে ছুটে এলো। কয়েকজন গিয়ে আদিবকে জানালো হায়াতের কথা।
এদিকে আদিব তখন স্যারদের সাথে কথা বলছিলো, এমন সময় জাকিয়া, সুমনা নামে দুটো মেয়ে ছুটে এসে জানালো হায়াতের অসুস্থ হওয়ার কথা। আদিব দৌড়ে আসলো মাঠে।
হায়াত এভাবে পরে থাকতে দেখে ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে ওঠলো। কিছু না ভেবে হায়াতকে কোলে তুলে নিলো,আরাবিও পেছন পেছন গেলো।
গাড়িতে শুইয়ে দিয়ে আরাবিকে পাশে বসতে বললো,আর আদিব ড্রাইভ করতে লাগলো। একটু পর পরই লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাতে লাগলো,আরাবি আশ্বাস দিতে বললো,
– ভাইয়া কোনো চিন্তা করবেন না,হায়াতের কিচ্ছু হবে না।
আদিব চিন্তিত স্বরে বললো,
– আরু হায়াত তো নিয়ম মতো ঔষধ খায়, তাহলে এমন হলো কেনো, আর গাধাটাকে কে বলেছিলো এই রোদের মধ্যে ঘাসে গিয়ে বসতে।
– ভাইয়া আসলে অনেকদিন পর এলাম এর জন্য বসেছিলাম,আমার একদম খেয়াল ছিলো না, হায়াতের যে এমন সমস্যা হবে।
আদিব আর কিচ্ছু বললো না, তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে থাকলো।
প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়িটি এসে থামলো সুপার হসপিটালের সামনে। হায়াতকে কোলে করেই ভেতরে নিয়ে গেলো আদিব। একটুপর এসে কয়েকজন মিলে হায়াতকে ভেতরে নিয়ে গেলো।
গাড়িটি এসে থামলো সুপার হসপিটালের সামনে। তাড়াহুড়ো করে আদিব কোলে তুলে নিল হায়াতকে, দ্রুত ভেতরে নিয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তাররা হায়াতকে ওয়ার্ডে নিলেন। চারপাশে অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর এক নার্স এসে নরম গলায় জানালেন,
– পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।
খবর শুনেই আদিব ছুটে গেল ভেতরে। নিভু নিভু চোখে হায়াত তাকালো তার দিকে। সেই মুহূর্তে এক নার্স এগিয়ে এসে বললো,
– ড. লিয়ার কেবিনে আপনাকে যেতে হবে।
আরাবি তখন হায়াতের পাশে বসে রইলো, আর আদিব ধীরে ধীরে পা ফেলে ডাক্তারের কেবিনে প্রবেশ করলো।
ড. লিয়া তাকিয়েই ইশারায় বসতে বললেন।
— আপনি তার হাসবেন্ড ?
— জ্বি ডাক্তার, আমার স্ত্রীর কিছু হয়নি তো ?
ড. লিয়া টেবিল থেকে কয়েকটি আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট এগিয়ে দিলেন। বিস্ময়ে স্থির হয়ে গেলো আদিব। ডাক্তার মুচকি হেসে বললেন,
— অভিনন্দন, আপনি বাবা হতে চলেছেন। আপনার স্ত্রী তিন মাসের প্রেগন্যান্ট।
শুনে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল আদিব। অবিশ্বাস ভরা চোখে কিছুটা নড়ে বসলো সে।
– কিন্তু হায়াতকে দেখে তো একেবারেই মনে হয় না।
ড. লিয়া শান্ত গলায় বললেন,,
– হ্যাঁ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনটাই হয়। আর একটি সুখবর আছে,আপনারা টুইন বেবির parents হতে চলেছেন। তবে খুব যত্নে রাখতে হবে। এতটুকু শরীরে দুটো জীবন বেড়ে ওঠা সহজ নয়। কোনো কাজ যাতে না করে, সেটা খেয়াল রাখবেন।
কাগজে ভরা আল্ট্রার রিপোর্ট আর প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে নুয়ে পড়া পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো আদিব।
হায়াত তখন আরাবির সাথে শুয়ে শুয়ে গল্প করছিলো, এমন সময় আদিব কেবিনে ঢুকলো। আদিবকে এমন গম্ভীর দেখে আরাবি এবং হায়াত দু’জনই অস্থির হয়ে ওঠলো।
গায়াত ওঠে হালকা বসলো, আদিবের হাতের দিকে তাকিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
আমার হায়াতি পর্ব ৩৩
– কি হয়েছে ? রিপোর্ট কি খারাপ এসেছে..!!
আদিব হায়াতের পাশে বসে,কপালে একটা চুমু খেলো,
– তুমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমরা মা বাবা হবো জান। আমাদের খুব শীগ্রই টুইন বেবির আগমন ঘটবে।
হায়াত যেনো কথা বলতে ভুলে গেলো, আদিব আরও কিছু বলার আগেই আরাবি খুশিতে লাফিয়ে ওঠলো, আর হায়াত সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারালো।
