আযদাহা পর্ব ১৮ (২)
সাবিলা সাবি
জ্যাসপারের ফ্যাকাশে ঠোঁট, যেখানে ফিওনার সঙ্গে প্রথম স্পর্শের স্মৃতি গেঁথে গেছে,ৎআরও স্থির, অস্থির আর অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ফিওনা।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই, জ্যাসপার ধীরে ধীরে তার চোখ খুলে নেয়,গভীর তন্দ্রা থেকে বেরিয়ে আসছে। তার শরীরের সবুজ রঙের আভা গাঢ় থেকে হালকা হতে শুরু করে, একটি শক্তিশালী আবহে আবার জীবনের স্পন্দন ফিরে আসছে। শরীরের মধ্যে হালকা শক্তি অনুভব করতে থাকে, কোথাও একটি নতুন সূর্যের আলো উজ্জ্বল হচ্ছে।
যখন জ্যাসপারের চোখ বন্ধ ছিল তখন জ্যাসপারের মস্তিষ্ক আর শ্রবন ইন্দ্রিয় সজাগ ছিলো, তখনি সে বুঝতে পেরেছিল —ফিওনা তার ওপর পড়ে গিয়েছিল।এক অদ্ভুত উপলব্ধিতে সে বুঝতে পারে, তার শরীরের অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। এই সজাগ অনুভূতি তার মস্তিষ্কে পরিষ্কার হয়ে ওঠে, সে বুঝতে পারে যে ফিওনার অপ্রত্যাশিত চুম্বনই সম্ভবত তাকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি উৎস হিসেবে কাজ করেছে।
জ্যাসপার অনুভব করে, ফিওনার ঠোঁটের স্পর্শে তার শরীর নতুনভাবে শক্তি অর্জন করছে। সে সেই অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে এসে, আবারও নিজের শক্তি খুঁজতে চায়।
ফিওনা এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, জ্যাসপারের পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রেখে। তার চোখে স্পষ্ট আতঙ্কের রেখা ছিল, তবে মুহূর্তটি ত্বরিতগতির ছিল।কিছু বুঝে ওঠার আগেই, জ্যাসপার বিছানা থেকে হালকা মাথা হেলিয়ে ফিওনার এক হাত ধরে টান দেয়।অপ্রস্তুত ফিওনা হঠাৎ করেই জ্যাসপারের শক্তপোক্ত পুরুষালী বুকের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জ্যাসপার ফিওনার মাথা নিজের বুক থেকে তুলে এক হাত ফিওনার কোমড়ে পেঁচিয়ে ধরে আর এক হাত ফিওনার পেছনের চুলের মাঝে শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে তার রক্তিম অধরদুটো ফিওনার গোলাপের পাপড়ির ন্যায় কোমল অধরের সাথে চেপে ধরে।এক গভীর চুম্বন।
ফিওনার অধরে যে সমস্ত রস, সেগুলো এক নিমিষেই শু’ষে নিচ্ছে জ্যাসপার। এই অপ্রত্যাশিত মুহূর্তে, সময় থমকে দাঁড়ায়,আর চারপাশের সমস্ত শব্দ মিশে যায়।
জ্যাসপার যখন ফিওনাকে উন্মাদের মতো চুম্বন করছিল, তখন তার ঠোঁটের সংস্পর্শে এসে ফিওনার জিভে অদ্ভুত, তেতো তরলজাতীয় স্বাদ ছড়িয়ে পড়েছিল। এটা ছিলো কোনো বিষাক্ত গ্যাসের মতো, যা মুহূর্তের জন্য তাকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছিল।
সে মনে মনে ভাবলো, এটা হয়তো ড্রাগনদের এক ধরনের বিশেষ রস।
যতক্ষণ জ্যাসপার তার ঠোঁট আঁকড়ে ধরে রেখেছে, ততক্ষণ ফিওনা অস্বস্তিতে ভুগছিল। ঠোঁটের ওই অস্বাভাবিক তেতো স্বা তার মনে এক ধরনের ভীতির সৃষ্টি করছিল।
জ্যাসপারের শরীর যখন শক্তি ফিরে পাচ্ছিল, তখন তার প্রভাব ফিওনার অনুভূতিতে স্পষ্ট হচ্ছিল।
জ্যাসপার একনাগাড়ে ফিওনার ঠোঁট আঁকড়ে ধরে চুম্বন করে চলেছে,পৃথিবীর সব কিছু একমাত্র এই মুহূর্তের কাছে সমর্পিত।তার শরীরের সবুজ বর্ণ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে তুষারের শুভ্রতার মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠছে পুনর্জন্মের এক নতুন সূচনা হচ্ছে।
ফ্যাকাশে বাদামি ঠোঁটজোড়া পুনরায় রক্তিম বেগুনি রঙে ফিরছে,শক্তি আর প্রাণশক্তি পুনরুদ্ধার করছে, আর তার মধ্যে অব্যক্ত এক শিহরণের অগ্নিশিখা জ্বলছে।
ফিওনার শরীরের দুর্বলতা এখনো কাটেনি;কিন্তু জ্যাসপারের শক্তি তার সমস্ত সত্তাকে দখল করে নিয়েছে।
সে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলেও,জ্যাসপারের শক্তির কাছে পরাজিত হয়,জ্যাসপার আরো শক্ত করে ফিওনার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে আর অন্য হাত ফিওনার চুলের মাঝে। প্রতিটি চুম্বন, তার আত্মাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু সেই সঙ্গে, ফিওনার ঠোঁট ব্যথা অনুভব করতে শুরু করে। তার চোখ দিয়ে অশ্রু বেয়ে পড়ছে, যা শুধুমাত্র শারীরিক ব্যথারই নয়,বরং অনুভূতির এক জটিল প্রতিফলন। এই অপ্রত্যাশিত চুম্বনের প্রতিক্রিয়া তার হৃদয়ের গভীরতম স্রোত সৃষ্টি করছে—একদিকে তেতো, অন্যদিকে ভয়ের অনুভূতি।
এখন,ফিওনা নিজেকে চুম্বনের সেই অদ্ভুত বাস্তবতায় বন্দী মনে করছে, যেখানে অস্থিরতা আর যন্ত্রণা।
পুরোপুরি শক্তি ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জ্যাসপার ফিওনার ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দেয়, এক অসীম আবেগের বাঁধন থেকে মুক্তি পেয়ে সে নতুন দিগন্তে পদার্পণ করছে। ফিওনার অশ্রুসিক্ত চোখ, সেই চুম্বনের উষ্ণতায় গরম হয়ে উঠা ঠোঁট,মুহূর্তের জন্য আটকে যায়।
জ্যাসপার তখন তার সেই চিরচেনা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে সে দৃষ্টির বিভ্রম থেকে বেরিয়ে এসে নতুন এক বাস্তবতায় প্রবেশ করলো।
ফিওনা হঠাৎ করে নিশ্বাস নিতে শুরু করে, তার বুকের গভীরতা থেকে নিঃশ্বাসগুলো ছিঁড়ে বের হয়ে আসছে।সে আশ্চর্য হয়ে বুঝতে পারে যে, কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে তার সারা দেহ এক অদ্ভুত অনুভূতির তরঙ্গকে ধারণ করেছে।
কিন্তু ঠিক এই সময়ে,জ্যাসপার তাকে এক ঝটকায় বিছানার পাশে ফেলে দেয়।
জ্যাসপার তখন বিছানা থেকে উঠে হনহন করে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় এক মুহূর্তের জন্যও পেছন ফিরে তাকায় না।তার শরীরের শক্তি আর উগ্রতা দিয়ে পুরো ঘরটি কাঁপছে। সে একদিকে অপ্রতিরোধ্য,অন্যদিকে একা, তার হৃদয়ে জ্বলন্ত প্রশ্নের আগুন।
ফিওনা এখনও হতভম্ব,মনে হতে থাকে নৈসর্গিক যাদুর ভেতর দিয়ে সে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই মুহূর্তে,তার সমস্ত চিন্তা যেন অবশ হয়ে গেছে। ওই অদ্ভুত প্রাণী, সেই ভয়ঙ্কর ড্রাগন,যে কিনা প্রথম দেখাতেই ফিওনার হৃদয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল, সে কিভাবে এইভাবে তার ঠোঁটের স্পর্শে তাকে জড়িয়েছে? অদ্ভুতভাবে, তাকে চুম্বন করেছে!
ফিওনার মনে ভেঙে পড়ে অশান্তি—ইশ!তার হাত অবশ হয়ে গেছে,মঔনে হয় যেন ড্রাগনের কঠিন আর উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ তাকে পাথর করে দিয়েছে। সে নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে, এই মনস্টারটারটা তাকে এভাবে কি করে চুম্বন করতে পারে?
ফিওনা দ্রুত উঠে গিয়ে কক্ষের ছোট্ট বাথরুমের দিকে চলে যায়। সেখানে পৌঁছানোর সাথে সাথেই সে হ্যান্ড শাওয়ারটি খুলে ঠাণ্ডা পানির প্রবাহ ছড়িয়ে দেয়।
তার ঠোঁটের ওপর পানি পড়তে শুরু করে, সে সেই অপ্রত্যাশিত চুম্বনের স্বাদ মুছে ফেলতে চায় প্রতিটি গড়িয়ে পড়া পানির ফোঁটা তার অস্থির হৃদয়কে কিছুটা শান্ত করে।
সে টিস্যু নিয়ে ঠোঁটগুলোকে ডলতে শুরু করে, চুম্বনের নোংরা স্মৃতি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চায়। “ছিঃ!”সে মনে মনে অভিযোগ জানায়,এ কেমন অদ্ভুত অবাঞ্ছিত অনুভূতি।
সে আশা করেছিল যে ওই ভয়ংকর ড্রাগনের থেকে সে কখনো এরকম কিছু অনুভব করবে না। কিন্তু এখন সেই অবিশ্বাস্য ঘটনার স্বাদ তার ঠোঁটে লেগে রয়েছে, আর সে চাইছে যত দ্রুত সম্ভব তা মুছে ফেলতে।
“কী জঘন্য স্বাদ!” ফিওনা মনে মনে ভাবে, তার শ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে আসে অস্থিরতার ছাপ।ঠোঁটগুলোতে পানি পড়তে থাকলে তার মনে নতুন করে শিহরণ বয়ে যায়—পানি আর টিস্যুর সঙ্গে সাথে সেই অদ্ভুত চুম্বনের চিহ্নও ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে।
জ্যাসপার যখন ল্যাবে প্রবেশ করল,তখন তার উপস্থিতিতে ল্যাবটি এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল।আলবিরা আর থারিনিয়াস, যাদের মুখাবয়ব চিন্তিত আর উদ্বিগ্ন ছিল, দ্রুত উঠে দাঁড়ালো দুজনে একসাথে।কম্পিউটারের পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে তারা নতুন আশা খুঁজে পেলো।
“প্রিন্স অরিজিন, আপনি সুস্থ হয়ে গেছেন!” আলবিরা বিস্মিত হয়ে বলল। তার গলার উষ্ণতায় বিরাট এক আনন্দের ছোঁয়া ছিল। “আমরা তো ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।”
থারিনিয়াসও সাথে সাথে উত্তর দিল, “আপনার হিপনোটাইজের পর আমরা ভেবেছিলাম আপনার শক্তি আপনি চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবেন,
সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে, অ্যাকুয়ারার ওষুধের কার্যকারিতা আসলে আপনাকে রক্ষা করতে পেরেছে”
জ্যাসপার,এখনো এক প্রকার কৌতূহল আর আবেগে ভরা, দ্রুত তাদের বোঝাতে চাইল যে, “এখন এসব বলার সময় নেই। আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, যেটা এক্ষনি করতে হবে।”
“প্রিন্স, আপনি বিশ্রাম করতেন এখন এই মুহূর্তে ল্যাবে প্রবেশ করাটা বোধহয় ঠিক হয়নি,” থারিনিয়াস বলল, “আমি কিং ড্রাকোনিসকে জানিয়ে দিচ্ছি আপনি যে অলৌকিক ভাবে সুস্থ হয়ে গেছেন।”
জ্যাসপার তাদেরকে কঠোর কন্ঠে জবাব দিলো
“থারিনিয়াস আলবিরা আমি জানি তোমারা আমাকে নিয়ে অনেক চিন্তিত আর উদ্বিগ্ন ছিলে, এখনতো আমি ঠিক হয়ে গেছি তাইনা, একটুও ক্লান্ত বোধ নেই এই মুহূর্তে আমার ভেতর, তোমরা এখন হাউজে ফিরে যাও আমার ল্যাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে”।
তারা দুজনে এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধায় পড়ে গেল, কিন্তু অবশেষে প্রিন্সের কঠোর সিদ্ধান্তের সম্মান জানিয়ে ল্যাবের দরজা থেকে বেরিয়ে গেল।
ল্যাবের শান্ত পরিবেশে এক অদৃশ্য চাপ অনুভব হচ্ছিল, আর জ্যাসপার জানত যে, এখন তাকে একা কিছু বিষয় রিসার্চ করতে হবে—দ্রুত।
জ্যাসপার কম্পিউটারের সামনে বসে এক মনোযোগী দৃষ্টিতে স্ক্রীনের দিকে তাকাল। তার মাথায় অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল আর সে জানত যে এই রহস্যের সমাধান খুঁজে বের করা তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“মানুষের চুম্বনে কি কি ক্যামিকেল থাকে?” টাইপ করে সে সার্চ বক্সে চাপ দিল। কিছু সেকেন্ডের মধ্যে স্ক্রীনে বিভিন্ন তথ্য হাজির হল। জ্যাসপারের মনে উঁকি দিচ্ছিলো এক অজানা আশঙ্কা।
পড়তে শুরু করলো: “চুম্বনে প্রধানত থালা, প্রোটিন, গ্লুকোজ, ভিটামিন,ৎআর কিছু বিশেষ যৌগ থাকে।” কিন্তু তার গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, এই কেমিক্যালগুলো মানুষের মধ্যে প্রায়ই পাওয়া যায়, কিন্তু এর কোনোটাই তেমন জাদুকরী ক্ষমতার অধিকারী নয়।
“কিন্তু আমি তো সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে গেছি,”সে মনে মনে পুনরাবৃত্তি করলো। “ফিওনার ঠোঁটের চুম্বনই কি আমাকে সুস্থ করেছে?”
এখন, জ্যাসপার বুঝতে পারলো যে ফিওনার মধ্যে অন্য কিছু রয়েছে। সাধারণ মানুষের চুম্বনের যেসব যৌগ দেখা গেলো এর একটাও বায়ো ক্যামিকেল তৈরি করতে পারবেনা ড্রাগনের শরীরের তাহলে ফিওনার চুম্বন কি অন্য কোনো বিশেষ যৌগ ছিলো?
অবশেষে,সে ভাবল। “এটা হয়তো ফিওনার অজানা উৎস থেকে আসা কিছু বিশেষ জৈব রাসায়নিক হতে পারে?”
আবিষ্কৃত তথ্যের সঙ্গে জড়িত থাকা তার আসল উদ্বেগ মাথা চারা দিয়ে উঠলো। ফিওনা, যে কিনা সাধারণ এক মানবী, সে কি করে তার মধ্যে এমন কিছু ধারণ করে রেখেছে?
সে আরও গভীরভাবে চিন্তা করলো,”আমি নিশ্চিত, ফিওনার চুম্বন শুধুমাত্র মানবিক স্পর্শের জন্য নয়,বরং সম্ভবত শক্তিশালী,প্রাচীন উৎসর মাধ্যমে এসেছে—যা হয়তো ভেনাসের কোনো দীর্ঘকালীন প্রভাবের ফল তবে ওতো পৃথিবীর হিউম্যান?।”
এখন তার লক্ষ্য স্পষ্ট হয়ে উঠলো। যে করেই হোক এর রহস্য উন্মোচন করতেই হবে আর তাকে জানতে হবে যে ফিওনার মধ্য এমন কি আছে?
জ্যাসপার একনাগাড়ে সিদ্ধান্ত নিল, “যাই হোক,অন্তত একটা কিছু তো পাওয়া গেলো পৃথিবীতে সার্ভাইব করার মতো—এটাই আমার জীবনের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসাবে কাজ করবে।”
জ্যাসপার তার ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো, “এলিসন ফিওনা,এ জীবনে তোমার আর মুক্তি নেই—এই জ্যাসপার অরিজিনের শিকড়ে এখন তুমি চিরকালীনভাবে বন্দি। আমি ভেনাসের ড্রাগন প্রিন্স,আমার রক্তে বহমান অনন্ত শক্তি, আর সে শক্তির অধীনে এখন তুমি আমার কাছেই আবদ্ধ।যতদিন না আমি স্বেচ্ছায় এ পৃথিবী থেকে ত্যাগ করি ভেনাসের ফিরে না যাচ্ছি, ততদিন তুমি আমার করাল ছায়াতেই থাকবে। তবে এর জন্য যে আমি দায়ি নই—তুমি নিজেই ফিওনা, ভুলবশত সেই অভিশপ্ত ফাঁদে পা দিয়েছো যা এক অনিবার্য পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে তোমাকে।”
তার চোখে অদ্ভুত দীপ্তি—মায়ার মোহ থেকে মুক্তি নেই সেখানে, বরং রয়েছে এক ক্ষমাহীন কঠোরতা।কম্পিউটারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো, যে অন্ধকারের শেকল তার অন্তরে বন্ধন তৈরি করেছে, তা এতই দৃঢ় যে তা আর ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়।
হঠাৎ জ্যাসপার গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে পড়লো, যখন তার মাথায় এক অজানা ব্যাথা বিদ্ধ করল। মনে হচ্ছিল, তার মস্তিষ্কের ভেতর কিছু নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করেছে—একটা অদৃশ্য শক্তি, যা তার চিন্তা আর অনুভূতিগুলোকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করছে। প্রতিটি সেকেন্ডে, অসহ্য যন্ত্রণা বাড়ছিল, তার মাথা ঝিমঝিম করছিল।
“হঠাৎ ব্রেইনে কি হচ্ছে ?” ভাবতে ভাবতে সে অনুভব করল, তার মন-মগজের এক কোণায় অজানা তথ্যগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই চুম্বনের স্পর্শে কি ছিলো—যা তার শারীরিক অবস্থাকে এতটুকু বদলে দিয়েছে?
জ্যাসপার মাথাটা ঝাঁকিয়ে বিষণ্ণভাবে স্বীকার করলো, “এত বছর ধরে আমি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিলাম, কিন্তু আজকে প্রথমবার এমন কিছু হচ্ছে যা এর আগে কখনো ঘটেনি আমার সাথে কি এমন রহস্যপূর্ণ শক্তি মস্তিষ্কে হানা দিলো?”
তার মনে উঁকি দিলো এক ভীতিকর চিন্তা “এটা কি সম্ভব, মনে হচ্ছে কোনো হরমোন মস্তিষ্কে নিষ্ক্রিয় হচ্ছে ধীরে ধীরে ?”
জ্যাসপার কষ্টে চোখ বন্ধ করে নিল, তার মাথায় গর্জন শুরু হলো। মনে হচ্ছিল সবকিছু অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।
“নাহ,এভাবে আমি আর যন্ত্রনা নিতে পারবো না।আমাকে অবশ্যই এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।”
কিন্তু মাথার ব্যাথা ক্রমশই বাড়ছিল। হঠাৎ করে, জ্যাসপারের মনে একটি ইঙ্গিত এল—একটি অতীতের কণ্ঠস্বর, তাকে স্মরণ করাচ্ছে, “কখনো হ্নদয়ের অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করোনা।”
জ্যাসপার বুঝতে পারলো এই যন্ত্রণার মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি সত্য, একটি উত্তর যা তার অপেক্ষায়।
তবে সেই সত্য উদঘাটন করতে হলে, তাকে ফিওনার সংস্পর্শে থাকতে হবে।
আলবিরা,থারিনিয়াস,আর অ্যাকুয়ারা বসে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলো,তাদের চিন্তায় নানা দুশ্চিন্তা আর আশাবাদ কাঁপছিল। “হয়তো ভেষজ ঔষধের প্রভাব কাজ করেছে একটু সময় নিয়ে,” আলবিরা বললো,“যদিও এটি সময়সাপেক্ষ, কিন্তু প্রিন্সের শারীরিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে গিয়েছে।”
থারিনিয়াস মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বললো, “হ্যাঁ,তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময়ে, পরিবর্তনগুলি মুহূর্তের মধ্যে ঘটে—একটি মূহুর্তেই সবকিছু বদলে যেতে পারে।” তাঁর কথা শোনার সাথে সাথে অ্যাকুয়ারা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললো। “আমি তো ভাবতেই পারিনি এই প্রাকৃতিক ভেষজ ঔষধ এভাবে কাজে লাগবে, কিন্তু আমরা তো জানি ড্রাগনদের শরীরে যেকোনো ঔষধ দ্রুত কাজ করে একদম সাথে সাথে আর না কাজ করলে একবারেই করেনা তাহলে?”
এদিকে, ফিওনা ছিল অজ্ঞাত এক দুর্দান্ত সত্যের সামনে, যা তার কাছে রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে উপলব্ধি করতে পারছিল না যে জ্যাসপারের সুস্থতার পেছনে কেবল তার চুম্বনই ছিল প্রধান কারণ।
জ্যাসপারের ড্রাগন শক্তি ফিরে পাওয়ার ঘটনাটি ছিল রহস্যময় অভিজ্ঞতা, যার মূল কেন্দ্রে ছিল তার নিজস্ব উপস্থিতি, কিন্তু ফিওনা এই বিষয়ে অবগত না,তার কোনো কিছুই বোধগম্য হয়নি, সে জানেও না তার কারনেই জ্যাসপার সুস্থ হয়ে উঠেছে।
জ্যাসপার তার বাবাকে ভিডিও কল করলো।
ড্রাকোনিস স্ক্রিনে জ্যাসপারকে দেখেই আনন্দে বিস্ময়ে ভরে উঠলো। “ওহ,মাই সান! তুমি সুস্থ হয়েছো?” তার কণ্ঠে ছিল পরম ভালোবাসা আর গর্ব। “এখন কেমন লাগছে তোমার? কোনো দুর্বলতা বা ক্লান্তি নেই তো?”
জ্যাসপার এক ঠান্ডা হাসি ছুঁড়ে দিলো, মুখে সেই চিরচেনা আত্মবিশ্বাসের রেখা ফুটে উঠলো। “রিল্যাক্স, ড্রাকোনিস! আমি পুরোপুরি ঠিক আছি। আগের চেয়েও শক্তিশালী অনুভব করছি মনে হচ্ছে নিজের শক্তির উৎস নিজেই পুনরায় আবিষ্কার করেছি।”
ড্রাকোনিসের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। “অবশেষে!তাহলে অ্যাকুয়ারার ভেষজ ওষুধই কাজ করলো,”সে গর্বিত সুরে বললো।
কিন্তু জ্যাসপারের চোখে এক দুর্বোধ্য রহস্যের ছায়া। সে জানে, যা ঘটেছে,তার পেছনেতো অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে—এক অনিবার্য সত্য যা তাকে প্রাচীন নিয়ম ভাঙতে বাধ্য করেছে। কিন্তু এই সত্যের গোপনীয়তা এখনো অব্যক্ত। ড্রাকোনিস যেন বুঝতেও না পারে, তাই সে মুখে বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রকাশ না করে শান্তভাবে মাথা নাড়ল। ফিওনার স্পর্শ, সেই রহস্যময় চুম্বনের স্মৃতি, তার ভেতর রয়ে গেলো এক অন্ধকারে ঘেরা গোপন গভীরতায়—কোনো মানুষের বিশেষত কোনো মানবীর বিষয়ে,বাবাকে বলা যাবে না। জ্যাসপার জানে, এই সীমানা পেরোতে গিয়ে সে নিজেই অজান্তে এক অভূতপূর্ব পরিণতির পথে পা বাড়িয়েছে।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে তার এথিরিয়নের বিষয়ে পরিকল্পনার প্রতিটি খুঁটিনাটি জানাতে লাগলো ড্রাকোনিসকে।
ড্রাকোনিসও বুঝতে পেরে বললো, “আমি জানি,মাই সান! তোমার ক্ষমতা বিচক্ষনতার পরিধি সীমাহীন। তবে তোমাকে সাবধান থাকতে হবে। মনে রেখো, তোমার হাতে মাত্র আর একটি হিপনোটাইজ করার সুযোগ বাকি আছে পৃথিবীতে।সেটা কোনো মহামূল্যবান বিশেষ কাজে লাগাবে”।
জ্যাসপার হালকা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। “আমি জানি, ড্রাকোনিস!আপনার উপদেশ আমি স্মরণে রাখবো। আর ভেনাসের পরিস্থিতি কেমন?”
ড্রাকোনিস কিছুটা চাপা কণ্ঠে উত্তর দিলো,“এখানে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। তবে তোমার দ্রুত ফিরে আসা প্রয়োজন। অ্যালিসা তোমার অপেক্ষায় আছে।”
ড্রাকোনিসের মুখ থেকে অ্যালিসার নাম শুনেও জ্যাসপারের মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না।তার মন এখন এই প্রথাগত দায়িত্বের শৃঙ্খলাকে উপেক্ষা করতে চাইছে। একসময় যা ছিল তার জন্য নিয়তি স্বরূপ, এখন সেই সম্পর্ক বা কর্তব্য তাকে আর আকর্ষণ করছে না। সফটওয়্যারের সৃষ্ট নিয়ম মেনে চলা, বিয়ে, সম্পর্ক—সবই যেনো তার মনের গহীন থেকে সরে যাচ্ছে।
আযদাহা পর্ব ১৮
জ্যাসপার এখনো গভীর এক অজানা অন্বেষায় মগ্ন; তার মানসিকতায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা অ্যালিসার মায়াজালকে ম্লান করে দিয়েছে। তার অন্তরে অচেনা এক শূন্যতার প্রতিধ্বনি, যা প্রতিটি মুহূর্তে তাকে আরো রহস্যময় ভবিষ্যতের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।জ্যাসপারের মনে হচ্ছে এখন আর এসবের কোনো মুল্যে নেই, কোনো সফটওয়্যার দিয়ে আর যাই হোক সম্পর্কে জড়ানো যায়না তবে জ্যাসপার ভেবে পাচ্ছেনা সে এসব কোনো ভাবছে এটাই তো ভেনাসের নিয়ম তাহলে এই নিয়ম সে কিভাবে উপেক্ষা করতে চাইছে?