আযদাহা পর্ব ৩১
সাবিলা সাবি
অন্ধকারে ঢেকে থাকা শিবিরের কেন্দ্রে ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা সুরক্ষিত একটি ল্যাবরুম,যেখানে মিস্টার চেন শিংকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।ল্যাবের চারপাশে ভারী অস্ত্রধারী গার্ড আর স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয়।পুরো এলাকায় নজরদারি করার জন্য ড্রোন উড়ছিল।
থারিনিয়াস আর আলবিরা গোপনে রাস্তার ছায়া থেকে ল্যাবের কাছাকাছি পৌঁছাল।থারিনিয়াস ফিসফিসিয়ে বলল,”ওয়াং লি যা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে,সেটা আমাদের পরিকল্পনাকে জটিল করে তুলছে।আমাদের সাবধান থাকতে হবে।”
আলবিরা মাথা নাড়ল।”তবে প্রিন্সের আদেশ অমান্য করার সুযোগ নেই।তাকে দ্রুত বের করতে হবে।”
আলবিরা প্রথমে একটি রুপালী ড্রাগনের ছোট আকার ধারণ করল আর ড্রোনগুলোকে বিভ্রান্ত করতে আকাশে উড়ে গেল।তার ডানাগুলোর ঝিলমিল আলো নজরদারির ক্যামেরাগুলোর দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিল।এদিকে,থারিনিয়াস নিজের ধুসর আঁশ-ঢাকা মানব রূপে দ্রুত ল্যাবের দরজার কাছে পৌঁছাল।
অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে হলে দরজার নিরাপত্তা কোড প্রয়োজন ছিল।থারিনিয়াস তার একটি ড্রাগন প্রযুক্তির ডিভাইস ব্যবহার করে কোডটি হ্যাক করল।”চলো,”সে ফিসফিস করে আলবিরাকে বলল।তারা ল্যাবের ভেতরে প্রবেশ করল।
মিস্টার চেন শিংকে একটি আধুনিক প্রযুক্তির বন্দী চেম্বারে রাখা হয়েছে।চারপাশে লেসার আর ইলেকট্রিক শক দিয়ে প্রহরা দেওয়া হচ্ছে।চেম্বারের ভেতরে মিস্টার চেন শিং অর্ধচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন।
আলবিরা দ্রুত নিজের ড্রাগন রূপে ফিরে এসে চেম্বারের বাইরের গার্ডদের আক্রমণ করল।তারা আধুনিক অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও আলবিরার ড্রাগন শিখার সামনে টিকতে পারল না।এদিকে,থারিনিয়াস চেম্বারের প্রযুক্তিগত লক ভাঙার চেষ্টা করছিল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তাড়াতাড়ি করো,থারিনিয়াস!” আলবিরা গর্জে উঠল।
“আর এক মিনিট দাও আলবিরা।এই প্রযুক্তি অনেক জটিল,” থারিনিয়াস বলল,তার আঙুল দ্রুত ডিভাইসে চলল।
অবশেষে লকের সিস্টেম খুলে গেল,আর থারিনিয়াস চেম্বারের দরজা খুলে মিস্টার চেন শিংকে বের করল।চেন শিং দুর্বল কণ্ঠে বললেন,”তোমরা.. তোমরা কারা,আমাকে কেনো বাঁচাতে এলে?”
থারিনিয়াস সংক্ষিপ্তভাবে বলল,”আপনাকে আমাদের প্রয়োজন।বাকিটা মাউন্টেন গ্লাস হাউজের ল্যাবে গিয়েই জানতে পারবেন।”
আলবিরা তখন দরজার সামনে এসে বলল”শত্রুরা দ্রুত এগিয়ে আসছে।আমাদের এখান থেকে বেরোতে হবে এখনই।”
থারিনিয়াস মিস্টার চেন শিংকে কাঁধে তুলে নিল।”আমাকে শক্ত করে ধরে রাখুন।”
তারা বাইরে বেরিয়ে আসতেই থারিনিয়াস নিজের ড্রাগন রূপ ধারণ করল।বিশাল ধুসর ড্রাগনের পিঠে মিস্টার চেন শিংকে বসানো হলোঅন্যদিকে,আলবিরাও ড্রাগন রূপে ফিরে এসে পেছনে পাহারা দিচ্ছিল।
“উড়ে চলো,মাউন্টেন গ্লাস হাউজে।এখনি,”থারিনিয়াস গর্জন করে বলল।
আকাশে উঠতেই শত্রুর ড্রোন আর লেসার অস্ত্র তাদের লক্ষ্য করল।আলবিরা পেছনে থেকে সেগুলো ধ্বংস করতে লাগল।মিস্টার চেন শিং ড্রাগনের পিঠে বসে থারিনিয়াসের শক্ত ডানার আওয়াজ শুনছিলেন আর মনে মনে ভাবছিলেন,আমি কোন রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে পড়লাম?
দীর্ঘ এক লড়াইয়ের পর তারা মাউন্টেন গ্লাস হাউজের নিরাপদ প্রান্তে পৌঁছাল।আলবিরা ও থারিনিয়াস একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল,”মিশন কমপ্লিট।।”
অবশেষে থারিনিয়াস ও আলবিরা মিস্টার চেন শিংকে পুস্পরাজ পাহাড়ের জ্যাসপারের ল্যাবে এনে রাখল। পাহাড়ের শিখরে নির্মিত কাঁচের দেওয়ালঘেরা ল্যাবটি ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ভরা,যেখানে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে এক মোহময় পরিবেশ তৈরি করছিল।
মিস্টার চেন শিংকে আরামদায়ক একটি চেয়ারে বসানো হলো।তার ক্লান্ত মুখ আর চোখে ছিল অসংখ্য প্রশ্ন।আলবিরা দ্রুত এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে তার হাতে দিল।মিস্টার চেন শিং এক চুমুকে পানি খেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেলেও মুখে চিন্তার রেখাগুলো অম্লান রইল।
তিনি একটু জোরে শ্বাস নিয়ে বললেন,“তোমরা আমাকে কেন বাঁচালে?তোমাদের উদ্দেশ্য কী?আর জানলে কীভাবে আমি সেখানে বন্দি ছিলাম?”
থারিনিয়াস সামনে এগিয়ে এসে শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে বলল,“আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দেওয়া হবে,তবে এখনই নয়।আপনার শারীরিক অবস্থা ভালো হওয়া প্রয়োজন। ধৈর্য ধরুন।”
মিস্টার চেন শিং ভ্রু কুঁচকে বললেন,“আমি ধৈর্য ধরব কীভাবে?তোমরা কারা,কী চাও?এসব আমাকে এখনই জানতে হবে!”
আলবিরা তার পাশে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বলল,“আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন আমাদের প্রিন্স,জ্যাসপার অরিজিন।তিনি আসছেন।তার সাথে কথা বললেই সব কিছু স্পষ্ট হবে।”
চেন শিং একটু থেমে বললেন,“জ্যাসপার…আমি তার নাম শুনেছি।সে কি সেই ড্রাগন প্রিন্স,যে আমার নাতনিকে কিডন্যাপ করে কোথাও আটকে রেখেছে?”
থারিনিয়াস চোখ সরু করে বলল,“আপনি যা শুনেছেন,তার চেয়েও বেশি কিছু জানবেন।তবে এখন আপনার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।প্রিন্স আসলে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন।”
চেন শিং তাদের দিকে সন্দেহমিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।তার মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল,কিন্তু তিনি বুঝলেন,এই দুই ড্রাগন তাকে আরও কিছু বলার জন্য প্রস্তুত নয়।তিনি অবশেষে মাথা নাড়লেন,“ঠিক আছে,তাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো।
জ্যাসপার ইতিমধ্যেই থারিনিয়াস ও আলবিরার পাঠানো সিগন্যাল পেয়েছিল যে তারা মিস্টার চেন শিংকে নিয়ে ল্যাবে পৌঁছেছে। সে নিজের মধ্যে একধরনের অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করল,কারণ চেন শিং-এর উপস্থিতি তার পরিকল্পনার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
ড্রাকোনিস শিখরের পাহাড়ি বাতাসের ঠান্ডা তার চামড়ায় লাগছিল,আর সেই মুহূর্তেই সে দ্রুত নিজের জন্য প্রস্তুত হয়ে নিল।জ্যাসপার আজ তার প্রথাগত সাধারন পোশাকের বাইরে কিছু বিশেষ পরিধান করার সিদ্ধান্ত নিল।সে একটি তুষারসাদা শার্ট পরল,যা তার প্রশস্ত কাঁধে নিখুঁতভাবে বসেছিল।শার্টের উপর পড়ল একটি সাদা ব্লেজার,যার বুকের ডানপাশে আর বামপাশে সোনালি সুতোয় বুনন করা ছিল ড্রাগনের মূর্তি।মূর্তিগুলো যেন প্রাণবন্ত ছিল,হালকা চাদের আলোয় চিকচিক করছিল তাদের প্রতিটি রেখা। ব্লেজারের বোতামগুলো ছিল ছোট রত্নখচিত,যা প্রতিটি চলাফেরায় দ্যুতি ছড়াচ্ছিল।
নিজেকে আয়নায় এক ঝলক দেখে জ্যাসপার একদম নির্ভুল মনে হলো।তার তীক্ষ্ণ চেহারা আর তীব্র ব্যক্তিত্বের সাথে এই পোশাকটি যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল।সে মৃদু হাসল আর নিচু গলায় বলল,”আজ,আমার দ্বিতীয় পরিকল্পনার প্রথম ধাপ পূরণ হবে।”
তারপর,নিজের সবুজ চোখগুলো এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ করে,সে ড্রাগন রাজ্যের প্রতীক সম্বলিত একটি সিল্কের রুমাল তার ব্লেজারের ভেতর গুঁজে নিল। রুমালটি ছিল তার পিতার এক স্মৃতি,যা সে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ব্যবহার করত।
পাহাড়ের বাতাসে তার চুলের হালকা সোনালি আভা ঝলমল করছিল।সে দ্রুত ল্যাবের দিকে হাঁটতে শুরু করল,প্রতিটি পদক্ষেপে তার আত্মবিশ্বাস আর শাসনক্ষমতার ছাপ স্পষ্ট হচ্ছিল।ল্যাবের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে গভীর শ্বাস নিল,তারপর ধীরে ধীরে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল।
আলবিরা ও থারিনিয়াস তার অপেক্ষায় ছিল।তারা জ্যাসপারকে দেখেই সম্মানসূচকভাবে মাথা নত করল। মিস্টার চেন শিং,যারা সেখানেই ছিল,জ্যাসপারের উপস্থিতি অনুভব করেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
জ্যাসপার ল্যাবের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তার স্বাভাবিক তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল,”মিস্টার চেন শিং,আপনার অনেক প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে আছে।তবে সময়মতো সব জানবেন। এখন আপনার আসল কাজ আগে জানাই ।”
তার চোখে ছিল এক অমোঘ দৃষ্টি,যা চেন শিংকে অবচেতনে নিস্তব্ধ করে রেখেছিল।
জ্যাসপার শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলতে শুরু করল,”ওয়াং লি তার সীমা ছাড়িয়েছিল।তার পরিকল্পনাগুলো ধ্বংস করার জন্য আমাকে যা করতে হয়েছিল,করেছি।এথিরিয়নকে তার চক্র থেকে মুক্ত করতে গিয়ে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে,কিন্তু এখন সে নিরাপদে আছে।আর ওয়াং লি… তার নিজের কর্মই তাকে ধ্বংস করেছে।”
চেন শিং কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন।তার চোখে এক চিলতে তৃপ্তির ছাপ ফুটে উঠল।তারপর গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,”ওয়াং লি তার শাস্তি পেয়েছে।এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারত?কিন্তু…”
তিনি হঠাৎ জ্যাসপারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, “তোমার কাছে একটা প্রশ্ন আছে।আমার নাতনি ফিওনার কী অবস্থা?সে কোথায়?তুমি ওর সাথে কী করেছ?”
জ্যাসপার গভীর এক দৃষ্টিতে মিস্টার চেন শিংয়ের দিকে তাকাল।তার ঠোঁটের কোণে মৃদু এক হাসি খেলল, তবে সে সেটা গোপন করার চেষ্টা করল।মনের ভেতর তার চিন্তার ঢেউ বয়ে গেল। “এখনো তো তেমন কিছুই করিনি আপনার নাতনির সাথে,গ্র্যান্ডফাদার ইন-ল। সময় হলে সব করে নিবো,মনে মনেই বললো।”
জ্যাসপারের ঠোঁটে এক চিলতে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল।কিন্তু তার কণ্ঠে গম্ভীরতা বজায় রেখে বলল, “ফিওনা নিরাপদে আছে।পুস্পরাজ পাহাড়ের গ্লাস হাউজে রয়েছে।আমি তাকে কিছু করিনি,বরং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।সে সম্পূর্ণ নিরাপদ,মিস্টার চেন শিং।”
চেন শিং ভ্রু কুঁচকে বললেন,”তাহলে তুমি এখনো কেন তাকে ফিরিয়ে দাওনি আমার কাছে?কী কারণে তাকে নিজের কাছে আটকে রেখেছো?”
জ্যাসপার একদম ধীরস্থিরভাবে তার কথাগুলো মেপে মেপে বলল,”আপনার নাতনি এখনো আমার এই মিশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।আমি ভেনাসে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে এখানেই থাকবে।”
তবে মনের ভেতর জ্যাসপার হাসল।তার মনের গভীরে একটা অনুভূতি ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছিল।ফিওনার প্রতি তার যে আকর্ষণ,তা সে অস্বীকার করতে পারছিল না।কিন্তু সেই সত্য চেন শিংয়ের সামনে প্রকাশ করা মানে মিশনের আগুনে আরও তেল ঢালা।
জ্যাসপার আরও বলল,”আমার সঙ্গে সে নিরাপদ।আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি,সময় হলে তাকে আপনি আবার কাছে পাবেন।কিন্তু এখন,আমার মিশন সম্পুর্ন করতে আমকে সাহায্য করবেন আর আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য।”
চেন শিং কিছুক্ষণ নীরবে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।তার চোখে মিশ্র অনুভূতি—একদিকে নিজের নাতনির জন্য উদ্বেগ,অন্যদিকে এই ড্রাগন প্রিন্সের প্রতি অদ্ভুত এক বিশ্বাস জন্ম নিলো।
জ্যাসপার চেন শিংয়ের এই দ্বিধার সুযোগ নিয়ে নিজের মনের গোপন কথাটি মৃদু স্বরে বলে উঠল,যদিও সেটা চেন শিং শুনতে পাননি। “আপনার নাতনিকে আমার জীবনেও ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই,কারণ সে আমার ভালোবাসা আমার জীবন।”
তারপর জ্যাসপার বলল “আর কোনো প্রশ্ন থাকলে, সেগুলোর উত্তর আমি পরে দেব।এখন আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন।আমাদের সামনে আরও বড় লড়াই অপেক্ষা করছে।”
জ্যাসপার গম্ভীর কণ্ঠে বলল “আজকের মতো সবাই বিশ্রামে যাবে।আগামীকাল মিশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।থারিনিয়াস,আলবিরা—তোমরা ল্যাবের পাশের যে কক্ষটা রয়েছে সেখানে মিস্টার চেন শিং এর থাকার ব্যাবস্থা করো।”
আলবিরা আর থারিনিয়াস সম্মতি জানিয়ে চলে গেল। তাদের যাওয়ার পর মিস্টার চেন শিং খানিকক্ষণ চুপ থেকে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে বললেন,”আমার নাতনিকে একবার দেখতে দেবে আমায়?আমি নিশ্চিত হতে চাই সে ভালো আছে।”
জ্যাসপার কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে ঠাণ্ডা অথচ দৃঢ় স্বরে বলল,”থারিনিয়াস।”
থারিনিয়াস ফিরে তাকাল,তার নির্দেশের অপেক্ষায়।
“যখন ফিওনা লিভিং রুমে থাকবে,তখন সিসি ক্যামেরার লাইভ ফুটেজ মিস্টার চেন শিংকে দেখাবে।তবে সে যেন কেবল নির্ধারিত ফুটেজই দেখতে পায়।”
চেন শিং কিছুটা অপ্রসন্ন মুখে বললেন,”লাইভ ফুটেজ? সরাসরি দেখা কি অসম্ভব?”
জ্যাসপার দৃঢ়ভাবে বলল,”আমার নিজের নির্ধারিত নিয়ম রয়েছে,মিশন শেষ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি ফিওনার সাথে সরাসরি দেখা করতে পারবেন না।আর আমি কাজের বিষয়ে কখনো কোনো আপস করিনা।তাই এখন শুধু লাইভ ফুটেজেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।”
চেন শিং কিছু বলতে যাচ্ছিলেন,কিন্তু জ্যাসপারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে তিনি থেমে গেলেন।তার কণ্ঠে তেমন কিছু না বললেও মনের গভীরে তিনি বুঝলেন,জ্যাসপার কখনো নিজের নিয়ম ভাঙবে না।
প্রায় ভোরের আলো ফুটতেই জ্যাসপার গ্লাস হাউজে প্রবেশ করলো।সূর্যের প্রথম রশ্মি হালকা করে পুরো পরিবেশ আলোকিত করছে,কিন্তু জ্যাসপারের মন অতটা শান্ত ছিল না।যখন সে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাচ্ছিলো,হঠাৎ লক্ষ্য করলো এথিরিয়ন ফিওনার কক্ষের দিকে যাচ্ছে।তার গতিবিধি কিছুটা সন্দেহজনক লাগলো তাই জ্যাসপার তার দিকে এক ঝলক নজর দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ডেকে বললো,”কি ব্যাপার, এথিরিয়ন?এতো সকাল সকাল ফিওনার কক্ষের কাছে কি করছিস?”
এথিরিয়ন চমকে উঠে ফিরে তাকালো, মুখে অস্বস্তি ছড়িয়ে গেলো।”ওহ,জ্যাসু ভাইয়া,আমি তো ফিওনাকে ডাকতে এসেছিলাম।সকাল হয়েছে,নাস্তা তৈরি করবে কিনা জানতে…”
জ্যাসপার ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে তার দৃষ্টি গভীর করে বললেন,”এভাবে মেয়েদের কক্ষে পারমিশন ছাড়া ঢোকা অন্যায় জানিস না?এটা ভেনাস নয়,আর ফিওনা ড্রাগন গার্ল নয়,ও হিউম্যান গার্ল।ওর প্রাইভেসি বলে একটা কথা আছে।আর কখনো এভাবে ওর কক্ষে যাবিনা।”
এথিরিয়ন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে,মাথা নিচু করে বলল, “ঠিক আছে,জ্যাসু ভাইয়া…” তারপর চুপচাপ সেখান থেকে চলে গেল।
জ্যাসপার দরজার দিকে এক নজর ফেললো,দরজাটা স্লাইডিং হয়ে খুলে গেলো আর জ্যাসপার ফিওনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেলো।স্লাইডিং দরজার কাঁচের মাধ্যমে মৃদু আলোর ছটা পড়ছিল,ফিওনার শান্ত মুখাবয়ব যেন সকালের উজ্জ্বলতার সাথে মিশে এক নিঃশব্দ মাধুর্য তৈরি করছিলো।তাঁর নিঃশ্বাসের সুর ছিল সুরেলা,একরকম নিরব শান্তির অনুভূতি।এ দৃশ্য দেখে,কিছু অজানা অনুভুতি জ্যাসপারের ভিতর গুমরালো—এক ধরনের প্রটেকটিভ আবেগ,যা সে আগে কখনও অনুভব করেনি।
তার হাত থেকে স্মার্ট ঘড়ি সরলভাবে আলো ছড়াতে লাগলো,আর প্রযুক্তির সহজ গতি অনুসরণ করে সে ফিওনার কক্ষের লক সিস্টেমে ছোটখাটো পরিবর্তন করে দিলো।তার কাছে,এটা কোনো সাধারণ কাজ ছিল না।এটা ছিল তাঁর আর ফিওনার মধ্যে এক ধরনের অদৃশ্য চুক্তি,এক প্রতিশ্রুতি—যে প্রতিশ্রুতি বলছে,”আমি ছাড়া আর অন্য কোনো পুরুষ তোমার কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না।”
এখন থেকে,শুধুমাত্র অ্যাকুয়ারা আর আলবিরা ছাড়া কেউই ফিওনার কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না,অনুমতি ছাড়া।
দুপুর দিকে ফিওনা চোখ খুলে ধীরে ধীরে মাথা তুলে বসে।ঘরটাতে সূর্যের আলোর মৃদু প্রতিফলন,গ্লাস হাউজের কাচের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ছিল।তার শরীরের অস্বস্তি কাটেনি,তবে সে বুঝতে পারছিল না যে কেন এত বিশাল অস্থিরতা অনুভব করছে।তার মাথা ভারী, যেন কোনো অদৃশ্য চাপ তার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।
তবে যা সবচেয়ে অদ্ভুত তা হলো,ফুলের প্রভাবে যা ঘটেছিল তার কিছুই তাকে মনে পড়ছে না।গন্ধ,রঙ, সুর—সব কিছু যেন স্রেফ ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেছে।তবে একটি অনুভূতি ছিল—এক ধরনের সন্ত্রস্ততা,আর সেই অস্বস্তি ফিওনার ভেতরে গভীরভাবে ঢুকে গিয়েছিল। তার শরীরে একটা অদ্ভুত শক্তি প্রবাহিত হচ্ছিল,যা আগে কখনো সে অনুভব করেনি।
“কাল রাতে কী ঘটেছিল?” ফিওনা নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো।ফুলের প্রভাবের পর তার পুরো দেহে যেপরিবর্তন আসার কথা ছিল,সেই পরিবর্তনই কি ঘটেছে?অথবা কি এমন ঘটনা ঘটেছিল,যা সে মনে রাখতে পারছে না?
ফিওনা তার চোখ বন্ধ করে,গভীরভাবে শ্বাস নিল। তার নাকের মধ্যে এক অদ্ভুত গন্ধ ভেসে আসছিল—একটি পরিচিত,ভারী,কিন্তু মার্জিত ঘ্রান।সেটা ছিল জ্যাসপারের পারফিউমের গন্ধ।যেন তার শরীরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে।এই গন্ধটি তাকে অস্থির করে তুলছিল,আর তার মনেও কিছু প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছিল।
তার শরীরের প্রতিটি অংশে যে অস্বস্তি অনুভব করছে, তার সাথে এই গন্ধের অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল।ফুলের প্রভাবে যে পরিবর্তন ঘটেছিল,তাতে আরও একটি বিশাল প্রশ্ন উঠেছিল তার মনে—তারমানে কাল জ্যাসপার তার কাছে ছিলো?
“কাল কি ঘটেছিল?”ফিওনা নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকলো।তার মন একেকবার বিভ্রান্ত হয়ে উঠছিল, যেন কোন কিছু মনে করতে পারছে না।কিন্তু তার অনুভূতি তাকে কিছু একটা বলছিল—কাল রাতে কিছু একটা অন্যরকম ছিল,আর সেই অনুভূতি তার ভেতরে একটা অস্বস্তি তৈরি করছিল।
ফিওনা নিজেকে শান্ত রেখে মনে মনে এক পরিকল্পনা আঁকতে লাগলো।জ্যাসপার তাকে কখনোই এখান থেকে বের হতে দিবে না,এটা সে জানে।আর যতদিন এখানে থাকবে,ততদিন তার জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে থাকবে।তার নিজের স্বাধীনতা হারানো, একমাত্র পথ যখন বন্দী হয়ে যাওয়ার মত লাগছিল, তখনই মনে হল—একটা সুযোগ পেলে সে পালিয়ে যেতে পারে।কিন্তু সেই সুযোগ কিভাবে আসবে?তার মন এথিরিয়নকে লক্ষ্য করে গড়ে তুললো এক কৌশল।
ফিওনা নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই,লিভিং রুমের দিকে চোখ পড়লো তার।সেখানে এথিরিয়ন সোফায় বসে,আধুনিক একটি ডিভাইসে গেম খেলছিল।তার মুখে কোনো তেমন এক্সপ্রেশন ছিল না,শুধু গেমে মনোযোগী হয়ে ছিল।গ্লাস হাউজের নিরবতায় ফিওনা বুঝে গেলো বাকিরা কেউই হাউজে নেই আর অ্যকুয়ারা নিজের কক্ষে ঘুমোচ্ছে।আর ফিওনা এটাও জেনেছে এথিরিয়ন বর্তমানে ড্রাগন রুপ ধারন করতে পারবেনা।
সে জানত,এথিরিয়ন তার প্রতি কিছুটা আগ্রহী,কিন্তু কি ভাবে তাকে বাইরে নিয়ে যাবে সেটা ভেবে পরিকল্পনা করছিল।ফিওনার মনে হলো,আজকের দিনটায় যদি সে নিজের আকর্ষণ দেখিয়ে এথিরিয়নকে কাবু করতে পারে,তবে তাকে বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পাবে। ফিওনা ঠিক করলো,তাকে এই মুহূর্তে তার প্রতিক্রিয়া ও আদুরে ব্যবহার দিয়ে ফাঁদে ফেলবে।
এথিরিয়ন এখনো সোফায় বসে,ভিডিও গেমের স্ক্রীন দেখছিল,কিন্তু তার চোখের কোণে ফিওনার গলাযুক্ত হাসি ধরা পড়লো।সে একটু ধীরগতিতে এগিয়ে গিয়ে, স্নিগ্ধ কণ্ঠে বললো, “রিয়ন,কি করছো?জানো কালকে পাহাড়ে ঘুরে আমার অনেক ভালো লেগছে।গ্লাস হাউজে কেই নেই এখন চলো তুমি আর আমি একা পাহাড়ের বাগানে যদি একটু ঘুরে আসি…?”
এথিরিয়ন তার কথা শুনে গেমের দিকে আরেকবার তাকাল।ফিওনার প্রতি তার আগ্রহ বাড়ছিল,তার মনেও কিছু একটা অজানা আকর্ষণ উঁকি দিয়ে উঠলো।সে তার স্ক্রীন থেকে চোখ সরিয়ে,ফিওনার দিকে তাকালো, যেন একটু ভেবে দেখলো।ফিওনা আরো এক ধাপ এগিয়ে এসে তার চোখে চোখ রাখলো,তার ভেতর একরকম আবেদন ছিল—একটি বিনয়ের সাথে তবে শক্তিশালী আবেদন।
“যদি তুমি না চাও তাহলে বাদ দাও।কিন্তু আজকের দিনটা অনেক সুন্দর।আর একটু ঘুরে এলে কিছুটা শান্তি পাওয়া যেতো।” ফিওনা কোমলভাবে বললো।
এথিরিয়ন তার গেমটি পাশের টেবিলের উপর রাখলো। তার চোখে এক ঝলক সিদ্ধান্তের ছাপ ফুটলো।সে হেসে বললো, “ঠিক আছে,তোমাকে বাগানে নিয়ে যেতে হবে তো।চলো আমি তোমাকে আজকে পুরো পাপড়ি ঘুরিয়ে দেখাবো ।”
ফিওনা ভেতরে ভেতরে আনন্দিত হলো।এথিরিয়ন একটু মৃদু হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে,প্রধান দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।ফিওনা লক্ষ্য করলো,এথিরিয়ন একটা পাসকোড দিয়ে দরজা খুলে ফেললো।
“তাহলে চল,ফিওনা,” বললো এথিরিয়ন।“আজকের দিনের সবচেয়ে সুন্দর সময় আমরা একসাথে কাটাবো।”
ফিওনা তাড়াতাড়ি বাইরে পা রাখলো।এই মুহূর্তে, তার মনে হলো—এথিরিয়নকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে মুগ্ধ করা সম্ভব হয়েছে।সে এখন পাহাড়ের বাগানে যেতে প্রস্তুত, কিন্তু তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল—এথিরিয়নকে তার পিছু টেনে আনার জন্য যেভাবে প্রলুব্ধ করা গেছে।
এথিরিয়ন তাকে নিরাপদে বাগানে নিয়ে যাবে,কিন্তু ফিওনার ভেতরেও নতুন এক পরিকল্পনা পাকা হতে শুরু করেছে—এটা শুধু শখ নয়,এক নতুন সুযোগ যাতে সে নিজের স্বাধীনতা ফিরে পেতে পারে।
ল্যাবের বড় কনফারেন্স রুম,আলো কিছুটা কম। সবকিছু গম্ভীর এবং সুনসান,যেখানে বৈজ্ঞানিক গবেষণা,মহাকাশযাত্রা আর পৃথিবী ও ভেনাসের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
জ্যাসপার সোজা হয়ে বসে আছে,তার সোজা আর গম্ভীর চেহারায় এক ধরনের সংকল্প স্পষ্ট।আলবিরা আর থারিনিয়াস তার পাশে বসে,তাদের মুখাবয়বও অন্ধকারাচ্ছন্ন।মিস্টার চেন শিং শান্তভাবে রুমে প্রবেশ করে আর একটা বড় টেবিলের কাছে গিয়ে বসে,তার চোখে একটি আগ্রহী দীপ্তি।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে মিস্টার চেন শিংকে তার দ্বিতীয় মিশনের উদ্দেশ্য জানাতে শুরু করলো।তার কণ্ঠস্বরে চরম গুরুত্ব রয়েছে,কারণ এই মিশন ভেনাসের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
“মিস্টার চেন শিং,আমরা এখন ভেনাসের এক নাজুক অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।তার জলবায়ু অত্যন্ত বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।গ্রহটি একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।যদি আমরা তাড়াতাড়ি প্রয়োজনীউপাদানগুলো সংগ্রহ করতে না পারি,তবে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।” – জ্যাসপার বললো,চোখে কঠোরতা ছিল।
“পৃথিবী থেকে এসব উপাদান সংগ্রহ করতে হবে?” চেন শিং প্রশ্ন করলো,তার গলাতে যথেষ্ট আগ্রহ ছিল,কারণ পৃথিবী সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল বিশাল।
“হ্যাঁ,পৃথিবী থেকে বিভিন্ন খনিজ আর অনন্য উপাদান সংগ্রহ করতে হবে।তবে,এটা সহজ হবে না,” জ্যাসপার বললো।”পৃথিবীতে আছে কিছু রক্ষক মনস্টার,যারা আমাদের পথ আটকে দেবে। আপনার সাহায্য ছাড়া এই মিশন সফল হওয়া অসম্ভব।”
চেন শিং তখন তার ফাইল খুলে,কিছু নোটস নিলো আর বললো,”আমি জানি পৃথিবীর রক্ষক মনস্টারদের সম্পর্কে তাদের শক্তি আর পদ্ধতি আমি পর্যবেক্ষণ করেছি,তবে সেটা মোকাবেলা করা সহজ হবে না।”
জ্যাসপার এক মুহূর্তে থেমে গেলো,তারপর মাথা নেড়ে বললো, “আপনার গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ।কারন পৃথিবীর সম্পর্কে আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন।”
মিস্টার চেন শিং তখন তার রিসার্চ নোটের পৃষ্ঠা উল্টে উল্টে পড়তে থাকেন।তার চোখে এক ঝলক চিন্তা ফুটে ওঠে এবং সে বলতে শুরু করে,”প্রথম উপাদান, অক্সিজেন,যা ভেনাসের বায়ুমণ্ডলে কমে যাচ্ছে,তাকে সংগ্রহ করতে হবে পৃথিবীর কিছু বিশেষ জঙ্গলে।কিন্তু সেখানে রয়েছে’এনার্জি-ভাইন’, একটি উদ্ভিদ যা শক্তিশালী শিকল দিয়ে আমাদের আটকে দিতে পারে। এটির বিরুদ্ধে তোমাদের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।”
“তাহলে,অক্সিজেন সংগ্রহ করতে হলে আমাদের এনার্জি-ভাইনের সাথে মোকাবিলা করতে হবে,” জ্যাসপার সংক্ষেপে বললো।”আর কি?”
“দ্বিতীয় উপাদান,থার্মাল স্ট্যাবিলাইজার।পৃথিবীর আর্কটিক অঞ্চলে এই উপাদান পাওয়া যায়,তবে সেখানে রয়েছে ‘আইস গারগয়েল’,যে বিশাল বরফের প্রাণী।তার শক্তিশালী আক্রমণ থেকে বাঁচতে হবে।” চেন শিং বললো,তার চোখে একটি দ্বিধা ছিল,কিন্তু সে জানতো,এভাবে চলতে হবে।
“আইস গারগয়েল,” থারিনিয়াস মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বললো, “তাদের খুবই বিপজ্জনক শক্তি।”
“সঠিক,” চেন শিং স্বীকার করলো।”আর পরবর্তী উপাদান,হাইড্রোজেন,যা পৃথিবীর মহাসাগরের গভীরে রয়েছে।সেখানে রয়েছে ‘আকুয়া-টাইটান’,বিশাল জলদানকারী মনস্টার,যারা জল সংগ্রহকারী যানকে ধ্বংস করতে পারে।কিন্তু এটি সংগ্রহ না করলে ভেনাসে পানি সংকট আরও বাড়বে।”
“আমরা এই সমস্ত মনস্টারদের মোকাবিলা করতে পারব,কিন্তু তাদের শক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে,” জ্যাসপার বললো। “আমার ধারণা,আপনি এসব বিষয়ে বেশ ভালোভাবে জানেন,তাই আপনার গবেষণার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হবে।”
“নিশ্চয়ই,” চেন শিং ধীরে ধীরে জানালো,”তবে আমাদের শুধু জানলেই হবে না,আমাদের তৎপরভাবে কাজ করতে হবে,কারণ প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ।”
“তাহলে,আমাদের পরিকল্পনা শুরু করতে হবে।আমরা প্রস্তুত হবো,” জ্যাসপার দৃঢ় কণ্ঠে বললো।
মিস্টার চেন শিং তার ফাইল থেকে একটি ম্যাপ বের করে টেবিলের ওপর রেখে বললো,”অক্সিজেন সংগ্রহের জন্য আমি যে জায়গাটি চিহ্নিত করেছি,তা হলো পৃথিবীর আর্কটিক অঞ্চলের উত্তরাংশ,যেখানে বিশাল বরফ শৃঙ্গ এবং গভীর গহ্বর রয়েছে।ওই অঞ্চলে ‘এনার্জি-ভাইন’ উদ্ভিদটি পাওয়া যায়,যা অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।”
জ্যাসপার চুপচাপ ম্যাপের দিকে তাকিয়ে রইলো,তার মুখাবয়বে কোনো আবেগ ছিল না।সে জানতো,এই মিশনটি সহজ হবে না।কিন্তু ভেনাসের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এর সফলতার ওপর।তার চোখে একটি তীক্ষ্ণ আলোর ঝিলিক দেখা গেলো,যখন সে সোজা হয়ে বসে বললো,”আমরা কাল এই মিশনে রওনা দেবো।সেখানে অনেক বিপদ থাকতে পারে,কিন্তু এটাই আমাদের একমাত্র সুযোগ।”
থারিনিয়াস,যে একপাশে বসে ছিলো।মুখ চেপে ধরে মুচকি হাসলো,”আর্কটিক?সেখানকার তাপমাত্রা বিপজ্জনক হতে পারে।আর যদি এনার্জি-ভাইন আমাদের রক্ষা না করে?”
“তাহলে আমরা ওদের সঙ্গে মোকাবিলা করবো,” জ্যাসপার ঠাণ্ডা কণ্ঠে বললো। “আমরা জানি,পৃথিবীর জলবায়ু পরিস্থিতি খুবই তীব্র।আমাদের শক্তি আর কৌশল মেশাতে হবে।”
“ঠিক,”চেন শিং বললো, “এই জায়গায় পৌঁছানোর জন্য তোমাদের শক্তিশালী যান প্রয়োজন হবে।আর যাত্রার পথেও বিপদ আসতে পারে।আর্কটিক অঞ্চলে জটিল বায়ুপ্রবাহ আর বরফের স্তুপ থাকতে পারে,যা আমাদের তোমাদের বাধা সৃষ্টি করবে।”
“আমরা প্রস্তুতি নিয়ে বের হবো,” জ্যাসপার বললো। “বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ,সুতরাং কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।”
চেন শিং তারপর অন্য কিছু নোট পড়তে থাকলো এবং বললো,”এনার্জি-ভাইনটি সংগ্রহের পর,আমি অন্য উপাদানগুলোর জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান করবো।আমি নিশ্চিত,সবকিছু সংগ্রহ করা গেলে ভেনাসের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে।”
“তাহলে,কাল আমরা রওনা দেবো,” জ্যাসপার বললো, আর তারপর আলবিরা ও থারিনিয়াসের দিকে তাকিয়ে নির্দেশ দিলো,”সবাই প্রস্তুত থেকো।
মিস্টার চেন শিং সরে গিয়ে ম্যাপের জায়গাগুলো চিহ্নিত করে লিখলো,আর বললো, “অক্সিজেন সংগ্রহ করা প্রথম লক্ষ্য। তবে এটা শুধুমাত্র প্রথম ধাপ, পরবর্তী উপাদানগুলোর জন্য আমাদের আরও বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।”
জ্যাসপার মাথা নেড়ে বললো,”প্রথম পদক্ষেপই সবচেয়ে কঠিন,তবে এটা সফল হলে অন্যগুলো সোজা হবে।”
পাহাড়ের বাগানে হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে,আর আকাশে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে।ফিওনা আর এথিরিয়ন একসাথে হাঁটছে,মাঝে মাঝে হাসছে ও কথা বলছে।ফিওনার চোখে এখন শুধু একটাই লক্ষ্য—একটি সুযোগ পাওয়া,যাতে সে পালাতে পারে।
ফিওনা বেশ কিছুক্ষণ আনন্দে থাকলো,যখন একটা আকাশি রঙের খরগোশটি তার সামনে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। তার চোখে নতুন আশা দেখা দিলো,আর সে জানতো,এটি একটি সুযোগ—একটি পালানোর সুযোগ।
“রিয়ন,দেখো!কি সুন্দর স্টকখরগোশটা!আমার লাগবে ধরো,ধরো!” ফিওনা রোমাঞ্চিত কণ্ঠে বলে ওঠে।
এথিরিয়ন,যার মনোনিবেশ ছিল খরগোশের গতিতে,হাত বাড়িয়ে খরগোশটি ধরতে গেল।ফিওনা জানতো এথিরিয়ন তার পেছনে ছুটে গিয়ে তাকে তাড়া করবে,আর সেই সময়টুকু সে ব্যবহার করবে।এক মুহূর্তের মধ্যে,ফিওনা ছুটে যায় পাহাড়ের বিপরীত দিকে।পাহাড়ের বুক চিড়ে দ্রুত পা চালায়,যেন কোন কিছু তাকে থামাতে না পারে।
এথিরিয়ন খরগোশটির পিছু নেয়ার জন্য ছুটতে ছুটতে কিছুটা দুরে চলে যায়,তার দৃষ্টি থেকে ফিওনা সরে গিয়ে দূরে চলে যেতে থাকে।ফিওনার পা তখন দ্রুত চলে,সে জানতো যদি একবার পাহাড়ে পেরিয়ে কোনো রাস্তায় পৌঁছাতে পারে, তাহলে সে মুক্ত হতে পারে,এই গ্লাস হাউজের চার দেয়ালের বাইরে।
আযদাহা পর্ব ৩০
এথিরিয়ন খরগোশটি ধরার সময় বুঝতে পারলো,ফিওনা কোথায় হারিয়ে গেছে।কিছুক্ষণের মধ্যে সে অনুভব করলো, তার পেছনে কিছু ভুল হয়ে গেছে।তার চোখে প্রথমে বিভ্রান্তি দেখা দিলো, পরে তা আতঙ্কে পরিণত হলো।
“ফিওনা!” এথিরিয়ন চিৎকার করলো চারিদিকে ঘুরে ঘুরে।তবে ফিওনা অনেক দূরে চলে গেছে।
এথিরিয়ন দ্রুত ফিরে গ্লাস হাউজের দিকে পা বাড়ালো,তবে তার মনে একটাই চিন্তা ছিল—জ্যাসপারকে কি জবাব দিবে এখন?