আযদাহা পর্ব ৪৭ (২)

আযদাহা পর্ব ৪৭ (২)
সাবিলা সাবি

রাতের পাহাড়ি বাতাসে শীতলতার পরশ।মাউন্টেন গ্লাস হাউজের কাচের দেয়ালের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলো জ্যাসপার।তার চোখে এক ধরনের অনির্বচনীয় দৃষ্টি, যেন অনেক দূরের কোনো স্মৃতি তার মনকে জড়িয়ে ধরেছে।ফিওনা নীরবে তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।
হঠাৎ,জ্যাসপার গভীরভাবে শ্বাস নিলো।তার কণ্ঠে এক ধরনের ভার অনুভূত হলো।”তোমাকে একটা কথা বলিনি,হামিংবার্ড।প্রথমবার যখন পৃথিবীতে এসেছিলাম,একটা অদ্ভুত ভ*য়াবহ ঘটনা ঘটেছিল।”
ফিওনার কপালে ভাঁজ পড়ল।”কী ঘটনা,প্রিন্স?”

জ্যাসপার একটু পেছনে হেলান দিয়ে স্মৃতির গভীরে ডুব দিলো।”সেদিন বেইজিংয়ের আকাশে আলোকরশ্মি হয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলাম,কিন্তু হঠাৎ করে এক ভয়ানক দৃশ্য দেখলাম।”
সে এক মুহূর্ত থেমে ফিওনার দিকে তাকাল।”একটি কালো গাড়ি দ্রুতগামী হাইওয়ে থেকে খাদে পড়ে গেল। আমার চোখের সামনে সবকিছু ঘটল।গাড়িটা গভীর খাদে পড়ে চূ*র্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।”
ফিওনার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।”তারপর?”
“আমি দেখলাম,খাদ থেকে কয়েক ফুট ওপরে একটা গাছে একটা মেয়ে ঝুলে ছিল।তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ।হঠাৎ গাছের ডালটা ভেঙে পড়তে শুরু করল।মেয়েটি খাদে গড়িয়ে পড়তে লাগল।”
জ্যাসপারের গলায় চাপা আবেগের সুর ভেসে এলো। “জানি না কেন,কিন্তু আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি।কিছু একটা আমাকে বলেছিল,‘তাকে বাঁচাও।’”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফিওনা বিষ্ময় হয়ে শুনছিল।”তাহলে তুমি তাকে বাঁচিয়েছিলে?”
জ্যাসপার মাথা হেঁট করে বলল,”হ্যাঁ।আমি ড্রাগন রূপ ধারণ করেছিলাম।তাকে আমার ডানা দিয়ে আটকে একটা ঢালু জায়গায় নামিয়ে দিলাম।সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল, র*ক্তাক্ত অবস্থায় আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম,কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছিলাম না তার।তখন তাকে মুখ দিয়ে অক্সিজেন দিলাম।কয়েক মুহূর্ত পর সে একটু সাড়া দিল।”
ফিওনার চোখে অশ্রুর আভা দেখা দিলো।”তুমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে বাঁচিয়েছিলে।কিন্তু তারপর কী হলো?”

“হঠাৎ চারিদিকে এক প্রকার মানুষের কোলাহল শুরু হলো তারা এ*ক্সিডেন্ট বিষয়ে কথা বলছিলো,তারা আমাকে দেখার আগেই দ্রুত সরে যেতে হলো। মেয়েটিকে রেখে আমি অদৃশ্য হয়ে গেলাম।”
ফিওনা একটু থেমে বলল,”তুমি কি জানো সে মেয়ে বেঁচে ছিল কিনা?”
জ্যাসপার দীর্ঘশ্বাস ফেলল।”জানি না।শুধু জানি, সেদিন আমি প্রথমবার নিজের ক্ষমতার সঙ্গে মানবিক আবেগের মিল দেখেছিলাম। হয়তো সে মেয়ে জানেও না যে,তার জীবনের পেছনে একজন ড্রাগন ছিল।”
রাতের আকাশে তারাগুলো যেন নীরবে সাক্ষী ছিল। ফিওনা মাউন্টেন গ্লাস হাউজের বাইরে পাহাড়ের আরামদায়ক দোলনায় বসে ছিল,আর তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল জ্যাসপার।জ্যাসপারের চোখে দূরের শূন্যতা,যেন সে স্মৃতির মায়াজালে আটকে গেছে।

ফিওনা ধীরে ধীরে বললো,“তুমি বলছিলে সেই মেয়েটার কথা,যে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল।তার পোশাক কেমন ছিল,মনে আছে?”
জ্যাসপার একটু ভ্রু কুঁচকালো,স্মৃতির গভীরে ডুব দিল। “মনে হয় লাল আর সাদা রঙের কোনো ড্রেস ছিল।তবে নিশ্চিত নই।তবে এটুকু মনে আছে,তার ড্রেসে রক্ত লেগে গিয়েছিল।আর তার মুখ… খুবই কষ্টকর দেখাচ্ছিল।যেন মৃত্যুর খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল সে আর বয়স আনুমানিক আট,নয় হবে।”
ফিওনার গলা শুকিয়ে গেল।তার মনে যেন এক ঝড় উঠলো।“মেয়েটিকি মারাত্মক ভাবে আহত ছিলো?তোমাকে দেখেনি?”

জ্যাসপারের চেহারা গভীর হয়ে গেল। “হ্যাঁ,হামিংবার্ড। তার অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল চোখ খুলে কাউকে দেখার মতৌ অবস্থা তার ছিলোনা।তার মাথায় আঘাত লেগেছিল,শরীরে রক্ত ঝরছিল।আমি যত দ্রুত সম্ভব তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু তার পর কী হলো,আমি জানি না।সেদিন আমার ক্ষমতা সীমিত ছিল,আর মানুষের দুনিয়ায় আমি নবাগত। ষআমি তখন কেবল এটুকুই বুঝেছিলাম,জীবন বাঁচানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
ফিওনার গলায় যেন কাঁপন এসে গেল।“তুমি তাকে রক্ষা করলে।কিন্তু তারপর?তুমি কখনও জানতে চাওনি,সে কীভাবে কোথায় আছে?”
জ্যাসপার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। “না,জানতে পারিনি। আমার সামর্থ্য তখন এত সীমিত ছিল যে,আমি কেবল তাকে নিরাপদ জায়গায় রেখে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম।
ফিওনা ধীরে ধীরে জ্যাসপারের দিকে ঘুরলো। তার চোখ ভেজা,আর জ্যাসপার সেদিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল।“হামিংবার্ড,তুমি কাঁদছো কেন?” জ্যাসপার প্রশ্ন করলো,তার গভীর কণ্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট।
ফিওনা কোনো উত্তর দিল না।সে হঠাৎ জ্যাসপারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো এবং তার কাঁধে মুখ লুকিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো।জ্যাসপার পুরোপুরি হতভম্ব। সে ধীরে ধীরে তার গাল দুটো ধরে ফিওনার মুখটা তার দিকে তুলে ধরলো।

“হামিংবার্ড,কী হয়েছে?কাঁদছো কেন? আমি কি কিছু ভুল করেছি?” তার কণ্ঠে অপরাধবোধ ফুটে উঠলো।
তারপর হঠাৎ যেন একটা ভিন্ন ধারণা মাথায় এলো।
“ও তুমি কি… জেলাস হচ্ছো?আমি ওই মেয়েটাকে মুখে মুখ লাগিয়ে অক্সিজেন দিয়েছি বলে এটা শুনে?”
ফিওনা তার কথায় আরও জোরে কেঁদে উঠলো। জ্যাসপার তৎক্ষণাৎ আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। “আরে, সে তো একটা বাচ্চা মেয়ে ছিল!যদি আমি অক্সিজেন না দিতাম,সে মারা যেত!কিন্তু… হয়তো আমি সেদিন পুরোপুরি তাকে রক্ষা করতে পারিনি।”
ফিওনা তার কান্না সামলে বললো, “প্রিন্স,তোমার মনে আছে আমি একবার বলেছিলাম আমার বাবা-মা এ*ক্সিডেন্টে মারা গেছেন?আর আমি অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিলাম?”
জ্যাসপার ধীরে মাথা নাড়লো।“হ্যাঁ,মনে আছে। কিন্তু… তার সাথে এর কী সম্পর্ক?”
ফিওনা গভীর শ্বাস নিলো। “সেই এক্সি*ডেন্টেই আমি খাদে পড়ে গিয়েছিলাম।আর যেই মেয়েটাকে তুমি সেদিন বাঁচিয়েছিলে,সেই মেয়েটা আমি ছিলাম।”
জ্যাসপারের চোখ বড় হয়ে গেল। তার ভ্রু কুঁচকে গেলো। “তুমি…তুমি সেই মেয়ে?আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। এটা কীভাবে সম্ভব?”

ফিওনা ততক্ষণে নিজের সব শক্তি একত্রিত করে জ্যাসপারকে সব বলে দিল।“সেদিন আমাদের গাড়ি ব্রেকফেল করেছিল।গাড়িটা খাদে পড়ে যাচ্ছিলো, শুধু এতোটুকুই মনে আছে আমার আর কিছু জানিনা আমি, তারপর সব অন্ধকার হয়ে গেল।যখন জ্ঞান ফিরলো, বুঝতে পারলাম কোনো এক অলৌকিক ভাবে আমি বেঁচে গেছি।আজ জানলাম তুমিই সেদিন আমাকে বাঁচিয়ে ছিলে।”
জ্যাসপার অবিশ্বাসে ফিওনার দিকে তাকিয়ে রইলো। কয়েক মুহূর্ত কিছু বলতে পারলো না।তারপর ধীরে ধীরে ফিওনার চোখে তাকালো।

“তুমি…তুমি আমার অতীতের সেই মেয়ে?”তার কণ্ঠে বিস্ময়ের সঙ্গে মিশে ছিল একটা অপরাধবোধ।
“আমি জানতাম না,হামিংবার্ড।আমি কখনো ভাবিনি, আমাদের অতীত এমনভাবে জড়িয়ে আছে।”
ফিওনা এবার তার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,“তোমার জন্যই আমি আজ বেঁচে আছি।আমার এই জীবন,এই শ্বাস-প্রশ্বাস,সবকিছু তোমার জন্য।আমি আজ বুঝলাম,তুমি শুধু আমার রক্ষক নও,তুমি আমার জীবনের অধিকারী।”
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনাকে তার বুকে জড়িয়ে নিল। “হামিংবার্ড,”সে ফিসফিস করে বললো,তুমি জানো না,তুমি আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।আমি সেদিন শুধু একজন মেয়েকে বাঁচাইনি,আমি আমার নিজের ভবিষ্যতকে রক্ষা করেছিলাম।তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ।”
ফিওনা কাঁদতে কাঁদতে বললো,“তুমিও আমার সবচেয়ে মূল্যবান।তুমি আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে আছো,প্রিন্স।আমি তোমার ভালোবাসার বাইরে আর কিছু চাই না।”
পাহাড়ের চূড়ায় তারা দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। ষঝর্ণার শব্দ,বাতাসের মৃদু সুর—সবকিছু যেন তাদের মুহূর্তটাকে আরও গভীর এবং শাশ্বত করে তুলছিল।

জ্যাসপার হঠাৎ করে বললো,“হামিংবার্ড,উঠো!এখনি ল্যাবে যেতে হবে।”ফিওনা চমকে উঠলো। “কেন?এত তাড়াহুড়ো কিসের?”
জ্যাসপারের চোখে গভীর এক উত্তেজনার ঝলক ছিল। “তোমার শরীরের ভেতরে বায়ো ক্যামিকেলের উৎস কিভাবে সেটাই আজকে জানবো।”
ফিওনা অবাক হয়ে বললো,“তুমি এত নিশ্চিত হলে কীভাবে?আমি তো নিজেই কিছু বুঝতে পারছি না!”
জ্যাসপার তার হাত ধরে বললো,“সেইদিন দুর্ঘ*টনার সময় আমি তোমাকে বাঁচানোর জন্য অক্সিজেন দিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি জানো না,সেটা ছিল সাধারণ অক্সিজেন নয়।এটা আমার দেহের প্রাণশক্তি থেকে আসা কিছু।এবং…আমার অসুস্থতার রাতে যখন তুমি আমাকে চুমু খেয়েছিলে,আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম “বায়ো ক্যামিকেল”পেয়েছিলাম।”

জ্যাসপার ল্যাবে পৌঁছে দ্রুত সমস্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চালু করলো।ফিওনাকে বিশেষভাবে ডিজাইন করা একটি চেয়ারে বসতে বললো।চারপাশে শীতল পরিবেশ,কম্পিউটার স্ক্রিনগুলোতে অসংখ্য জটিল ডাটা ভাসছে।
“শোনো,হামিংবার্ড,” জ্যাসপার বললো,“তোমার দেহে আমার অক্সিজেন এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিক্রিয়া করেছে।এটি শুধুমাত্র শারীরিক নয়,এটি কোয়ান্টাম স্তরে প্রভাব ফেলেছে।”
ফিওনা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,“কোয়ান্টাম স্তর?এর মানে কী?”
জ্যাসপার তার হাতে একটি হাই-টেক স্ক্যানার তুলে নিলো। “মানুষের শরীর কোষের স্তরে কাজ করে।তবে আমার ড্রাগনিয়ান শক্তি কোষের স্তরকেও ছাড়িয়ে যায়।এটি কোয়ান্টাম ফিল্ডে প্রবেশ করে,যেখানে সময়,স্থান এবং শক্তি একসঙ্গে কাজ করে।যখন আমি তোমাকে অক্সিজেন দিয়েছিলাম,এটি তোমার রক্তের সাথে মিশে তোমার কোষে বায়ো-কেমিক্যাল তৈরি করেছে।এটি কেবল একধরনের শক্তি নয়;এটি একটি নতুন বায়ো-অ্যালগরিদম।”
“বায়ো-অ্যালগরিদম?” ফিওনার কণ্ঠে বিস্ময়।

“ঠিক তাই,”জ্যাসপার বললো।“তোমার দেহ এখন নিজেই নিজেকে রূপান্তর করতে পারে।আমি নিশ্চিত যে এটি তোমার ইমিউন সিস্টেমকে এমনভাবে শক্তিশালী করেছে,যা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে। এটি তোমার কোষগুলোকে একধরনের সেলুলার রিজেনারেশন ক্ষমতা দিয়েছে,যেটি তোমার আঘাত সারানোর ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে।”
এবার জ্যাসপার ফিওনার রক্তের নমুনা বিশ্লেষণে মন দিলো। প্রথমে,সে একটি স্পেকট্রাল ডিফ্রাকশন ডিভাইস ব্যবহার করলো,যা আলোর মাধ্যমে রক্তের ভেতরের উপাদানগুলোকে বিশ্লেষণ করে।স্ক্রিনে নানা রঙ ফুটে উঠলো।
“দেখো এখানে,”জ্যাসপার বললো। “তোমার রক্তে হেমোগ্লোবিনের সাথে এক অদ্ভুত গ্যাসীয় যৌগ মিশে গেছে। এটি সাধারণ অক্সিজেন নয়।এটি ড্রাগনিয়ান প্লাজমা অক্সিজেন,যা আমার দেহের শক্তি থেকে তৈরি।এটি তোমার কোষগুলোর DNA স্ট্রাকচারে ঢুকে পড়েছেএবং তাদের পুনর্গঠন করেছে।”

“এতে কী প্রভাব পড়েছে?ফিওনার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।“তাহলে…আমি কি কোনোভাবে তোমার মতো কিছু হয়ে যাচ্ছি?”
জ্যাসপার মুচকি হেসে বললো,“না,হামিংবার্ড।তুমি মানুষই থাকবে।কিন্তু তুমি এখন আর সাধারণ মানুষ নও।তুমি এমন কিছু শক্তি অর্জন করছ,যা আমাদের দুজনকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসবে।”
“তোমার কোষগুলো এখন দেহের ক্ষতি সারাতে এবং বহিরাগত আক্রমণ প্রতিহত করতে আগের চেয়ে দ্রুত কাজ করে। এমনকি, তোমার স্নায়ুতন্ত্রের সিগন্যাল স্পিডও বেড়ে গেছে, যার মানে তুমি আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।”
জ্যাসপার এবার একটি নিউরো-ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ডিভাইস চালু করলো। এটি ফিওনার মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছিল।

“অদ্ভুত! তোমার মস্তিষ্কের নিউরাল এক্টিভিটি বেড়ে গেছে। তুমি হয়তো কিছু সময়ের মধ্যে এমন স্মৃতিও মনে করতে পারবে,যা তোমার মন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।”
“এই পরিবর্তনগুলো কি শুধু সেই অক্সিজেনের কারণে?”ফিওনা সন্দিহান।
জ্যাসপার গভীরভাবে বললো,“না,এটি শুধু অক্সিজেন নয়। তোমার শরীরের সাথে এটি যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়েছে, তা একধরনের মেটা-বায়োলজিক্যাল সিম্বায়োসিস তৈরি করেছে।সেই রাতে,যখন তুমি আমাকে চুমু খেয়েছিলে, তোমার শরীরের তৈরি হওয়া বায়ো-কেমিক্যালের অংশ আমার শরীরেও প্রবেশ করেছে।এখন এটি আমাদের দুজনের মধ্যে একটি জৈবিক সংযোগ তৈরি করেছে।”
“এখন তুমি কী পরীক্ষা করবে?”ফিওনা প্রশ্ন করলো।
“আমি নিশ্চিত হতে চাই,এই বায়ো-কেমিক্যাল কি শুধুমাত্র রক্তে কাজ করছে,নাকি এটি তোমার অন্যান্য সিস্টেম যেমন হার্ট,লাংস,বা মস্তিষ্কেও প্রবেশ করেছে।”
জ্যাসপার এবার একটি বায়ো-ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সেন্সর ব্যবহার করলো,যা পুরো দেহের শক্তির মাত্রা নির্ধারণ করে। স্ক্রিনে ফিওনার দেহের শক্তি গ্রাফ দেখাচ্ছিলো।
“দেখো,” জ্যাসপার বললো। “তোমার শরীর একটি নতুন ধরনের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ তৈরি করছে।এটি কেবল জীবনের জন্য নয়,বরং এটি একধরনের প্রতিরক্ষামূলক ঢাল তৈরি করতে পারে।”
“আমার মনে হচ্ছে,তুমি এটা নিয়ে খুব বেশি উত্তেজিত,” ফিওনা বললো।

ল্যাবের আলো মৃদু ঝলমল করছে।বাইরের পাহাড়ি বাতাস কাচের দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে এক অনন্য সুর সৃষ্টি করছে।জ্যাসপার ধীর পায়ে ফিওনার দিকে এগিয়ে এল।জ্যাসপার ফিওনার কপালে কোমলভাবে চুমু দিয়ে বলল,“এইজন্যই,হামিংবার্ড,আমি যখন অসুস্থ হয়েছিলাম,তখন তোমার চুমুর মাধ্যমে বায়ো-কেমিক্যাল পেয়ে গিয়েছিলাম।কারণ আমি তো তোমাকে প্রথম অক্সিজেন দিয়েছি।আর সেখান থেকেই আমার জন্য তোমার শরীরে আমার অ্যান্টি-বায়োটিক তৈরি হয়েছে,মানে বায়ো-কেমিক্যাল।আমি ভাবতেই পারিনি,তুমি হিউম্যান হয়েও কিভাবে আমাকে বায়ো-কেমিক্যাল দিতে পারলে,এখন বুঝতে পারছি।”

সে ফিওনাকে আরো গভীরভাবে চুমু দিতে লাগলেন, তার অনুভূতি যেন পাগল হয়ে গেছে।“এই যেভাবে তোমাকে বাঁচালাম,তারপর অক্সিজেন দেওয়া,আবার দশ বছর পর তোমার কাছে আসা—সবকিছু মিলিয়ে এটি যেন এক মহাবিশ্বের পরিকল্পনা।তোমার শরীরের বায়ো-কেমিক্যাল পাওয়ার মাধ্যমে আবার আমার ফাংশনাল এক্টিভেশন হওয়া,এসব কিছুই ডেস্টিনি। হামিংবার্ড,এই ইউনিভার্সের ডেস্টিনি।এই ডেস্টিনি কোনো এক কারণে আমাদের মিলিয়ে দিয়েছে।”
ফিওনার হৃদয় বিগড়ে গেল।সে অনুভব করলো যে, তাদের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, তা শুধুমাত্র প্রণয় নয়; এটি যেন এক শাশ্বত বন্ধন, যা তাদের অতীত,বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে একসূত্রে গেঁথে দিয়েছে।
“ডেস্টিনি?” ফিওনা মৃদু হাসলো,“তাহলে,আমাদের এই মিলন কি সত্যিই অনিবার্য ছিল?”
“হ্যাঁ,আমি বিশ্বাস করি।সব কিছুই আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল,”জ্যাসপার বললো তার চোখে গভীর তীব্রতা।“আমরা হয়তো ভিন্ন জগতে থেকেছি,কিন্তু আমাদের পথ যেন সবসময় একে অপরের দিকে এগিয়েছে।

পাহাড়ের নির্জন প্রান্তরে,যেখানে বাতাস থমকে থাকে সেই প্রান্তেরের ল্যাব,ল্যাবের সাদা আলোয়,যেখানে বিজ্ঞান আর আবেগের মিশ্রণ ঘটছে,জ্যাসপার ফিওনার দিকে ঝুঁকে এলো।তার চোখের গভীরতায় যেন অন্ধকারের মাঝে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো ছিল।ফিওনার শ্বাস আটকে গেল, সময় যেন থমকে গেল বলে মনে হলো।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে তার হাত ফিওনার কোমরে রাখল,মৃদু কিন্তু শক্তিশালী এক ভঙ্গিতে।সেই স্পর্শে ফিওনার শরীরে যেন বিদ্যুতের মতো এক ঝাঁকুনি ছড়িয়ে পড়লো।তার চোখের গভীরতায় এমন কিছু ছিল যা তাকে ভেঙে ফেললো,আবার নতুন করে গড়ে তুললো।
“এবার আরো একটা কাজ বাকী।তোমাকে গভীরভাবে আদর করার জন্য উপায় বের করতে হবে,হামিংবার্ড,” জ্যাসপার ফিসফিস করে বলল,তার কণ্ঠে যেন পাহাড়ি ঝরনার মতো এক মিষ্টি সুর।“তোমার কাছাকাছি থাকা, তোমার এই শ্বাসের স্পন্দন—সবকিছুই যেন আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়।আমি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।তুমি আমাকে পাগল করে তুলেছো।”

জ্যাসপার ফিওনার শরীরের প্রতি এলোমেলোভাবে হাত বোলাতে লাগলো,ফিওনার কোমরের সংস্পর্শে তার স্পর্শে একটি নতুন শিহরণ তৈরি হলো।ফিওনা কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ল,যেন সে নিজেকে হারাতে শুরু করেছে।সে জ্যাসপারের কাঁধের শার্ট শক্ত করে খামচে ধরলো,আর তার হৃদয়ের প্রতিটি ধাক্কায় তার অনুভূতি যেন আরো তীব্র হয়ে উঠছিল।

আযদাহা পর্ব ৪৭

“কিভাবে উপায় বের করবে?”সে মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,তার গলার সুরে এক শিহরণ।
জ্যাসপার তার ঠোঁট ফিওনার ঠোঁটের মাঝে ডুবিয়ে দিল।দুই হৃদয়ের মিলনে যেন ল্যাবের আলো জ্বলজ্বল করছিল। ঠোঁটের স্পর্শে সময় থেমে গেল।সে অনুভব করলো যে তার শরীরের প্রতিটি কণা যেন জ্যাসপারের স্পর্শে সাড়া দিচ্ছে

আযদাহা পর্ব ৪৭ (৩)