আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৩৮
সাবিলা সাবি
চারদিক প্রখর নিস্তব্ধ। প্রাসাদের ছাদজুড়ে গম্ভীর এক বাদ্য বাজছে যেনো। বিচারসভা বসেছে এল্ড্র প্রাসাদের কেন্দ্রস্থলে। যেখানে বহু বছর পর ডাকা হয়েছে এমন এক গণ-সম্মেলন,যেখানে ভেনাসের প্রায় অর্ধেক অংশের ড্রাগন-প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছে সেখানে আজকে।
সিংহাসনে বসে আছেন এল্ড্র রাজ্যের রাজা জেনোথ ড্রাকোনিস।জ্যাসপারের পিতা। তাঁর মুখ শক্ত কঠিন, কিন্তু চোখের গভীরে অদ্ভুত এক টানাপোড়েন রয়েছে। তার পাশেই বসে আছেন ফ্লোরাস রাজ্যের রাজা জারেন এবং বড় রাজকন্যা লিয়ারা ফিওনার মা। লিয়ারা চুপ, তবে চোখেমুখে ভীষণ ধিক্কার রয়েছে।
সম্মেলনের মুখপাত্রে দাঁড়িয়ে আছেন —এক প্রবীণ ড্রাগন প্রতিনিধি, নাম কুন-থাথ আর তিনি সর্বপ্রথম নিস্তব্ধতা ভেঙে বলে উঠলেন “এই সভা ডাকা হয়েছে এক অপরাধের বিচারের জন্য—এক ড্রাগন প্রিন্স, একজন ভেনাসের উত্তরাধিকারী, নিজের হাতে প্রা*ণ নিয়েছেন আরেক অভিজাত ড্রাগনের—আলাইরার। আমরা জানতে চাই—কেন, কেনো তিনি আলাইরাকে হ*ত্যা করলেন ?”
ড্রাগন জনতারা উত্তাল হয়ে ওঠলেন। কেউ চিৎকার করে বলতে লাগলেন “জ্যাসপার অরিজিন ভেনাসের প্রিন্স হবার যোগ্য নয়! “ড্রাগনের র*ক্ত হয়ে আরেক ড্রাগনের র*ক্ত ঝরালে সে কীভাবে শাসন করবে গোটা ভেনাস?”
জ্যাসপার চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাথা উঁচু করেই, তবে তার সবুজ চোখজোড়া সামনের দিকেই স্থির, মুখে কোনো শব্দ নেই।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
প্রাসাদের ভেতরে মৃ*ত্যু নেমে এসেছে যেন। কাঠগড়ার মতো বাক্সে দাঁড়িয়ে আছে প্রিন্স জ্যাসপার। আর তার সামনে রাখা এক টুকরো কাগজ। সবার সামনে উচ্চকণ্ঠে এক ড্রাগনপ্রতিনিধি বলে উঠলো “এই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করুন, প্রিন্স অরিজিন। আজ থেকে আপনি আর ভেনাসের কোনো রাজ্যের উত্তরাধিকারী নন। আপনার শিরোপা বাতিল করা হচ্ছে।”
কেউ কোনো কথা বলেনি। রাজা ড্রাকোনিস চুপচাপ বসে আছেন। তার চোখ স্থির। মুখটা অনড় হয়ে আছে।
তাঁর হৃদয়ে কী চলছে—তা বোঝার উপায় নেই।তিনি একজন রাজা। সত্য-মিথ্যা তাঁর কাছে নয়, বরং ‘শাসন’ আর ‘শৃঙ্খলা’ই শেষ কথা।
জ্যাসপার তাকিয়ে থাকে নিজের নামের ওপর।
তার কলম ধরা হাত একটু কাঁপতে লাগলো। সবার চোখ সেই কাগজের দিকেই —প্রিন্স সই করবেন কি না তা দেখার জন্য সকলেই অধীর আগ্রহে।
চারদিকে শুধু নীরবতা।সবার সামনে রাখা সেই কাগজ—যেটাতে স্বাক্ষর করলেই জ্যাসপার আর ভেনাসের প্রিন্স থাকবে না। হলরুমে টান টান উত্তেজনা বিরাজমান। অন্য অন্য রাজ্যের ড্রাগনেরা ফিসফিস করছে। ষরাজা ড্রাকোনিস চুপ। তিনি জানেন, শাস্তি সকলের জন্য সমান হওয়া উচিত।
জ্যাসপারের চোখ নিচের দিকে, হাতে কলম ধরা সই করতে যাবে। ঠিক তখনই—
“থামো প্রিন্স !” এক নারীর রুদ্ধশ্বাসে করা কণ্ঠ ভেসে আসে হলরুমের দরজার দিক থেকে। সবার চোখ ঘুরে যায় সেখানে।
ফিওনা। সে দৃঢ় পায়ে সভায় প্রবেশ করে। পরনে সাদা রঙের গাউন বিশিষ্ট পোশাক, চোখে রাগ আর খানিকটা অভিমান। তার চোখে একটাই কথা—তুমি এটা করতে পারো না জ্যাসপার। সবার মাঝে ফিসফাস শুরু হয়।
ফ্ল্যাশব্যাক: আজকে সকাল………
ফিওনার চোখ জলেভেজা। সে চিৎকার করে বলে “তুমি কেনো সবাইকে মিথ্যে বলছো প্রিন্স? কেনো বলছো না ওকে আমি মেরেছি! আমি বলে দিবো সবাইকে সত্যিটা আমি নিজেই গিয়ে বলবো আজকে সভায়!”
জ্যাসপার চুপচাপ বসে ছিলো। তার চোখে অবিচলতা।
“না ফিওনা,” সে বলেছিলো নিচু গলায়,
“তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো… তাহলে চুপ করে থাকবে একদম। এই খু*নের বোঝা আমি বইতেপারবো। তুমি পারবে না ফিওনা।”
ফিওনা কাঁদতে কাঁদতে বলে, “কিন্তু এটা অন্যায় প্রিন্স!”
জ্যাসপার তাকিয়ে বলে “আমি ড্রাগন। প্রিন্স। এবং তোমার হাজবেন্ড। এই দুটোর মধ্যে একটাকে বেছে নিতে বললে—আমি তোমাকে বেছে নেবো ফিওনা। বাকি সবকিছু ছেড়ে দিবো আমি।”
ফিওনার চোখ রাগে জ্বলছে। “তুমি কি ভাবছো, তুমিই সবসময় সিদ্ধান্ত নেবে আর কেউ নিতে পারবে না? আমি কিছুতেই সভায় তোমাকে যেতে দিবোনা!”
জ্যাসপার ঠাণ্ডা গলায় বলে— “তুমি কি বুঝতে পারছোনা ফিওনা। আমি তোমার জীবনের কোনো প্রকার ঝুঁকি নিতে দেব না। তুমি আজ সভায় কেনো কোথাও যাবে না।”
ফিওনা কিছু বলার আগেই দরজা বন্ধ হয়ে যায়। জ্যাসপার নিজ হাতে তাকে সেই কক্ষে আটকে দেয়।
কক্ষে বসে ফিওনা পায়ে দিয়ে বারবার আঘাত করে দরজায় আর চেঁচাতে থাকে “ প্রিন্স! দরজা খুলো! আমাকে যেতে দাও!” ঠিক তখনই জানালার পাশে একটা টোকা।
“শান্ত হও ফিওনা,” একটা চেনা মুখ—অ্যাকুয়ারা।
সে আস্তে করে জানালা খুলে, ফিওনা তখন অ্যাকুয়ারাকে সবটা বোঝায় আর সব শুনে অ্যাকুয়ারা বুঝতে পারে আর ফিওনাকে সাহায্য করে বের হতে। ফিওনা জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসে।
বর্তমানে……..
ফিওনা চিৎকার করে বলে উঠে— “এক মিনিট! ওই কাগজে সই করার কোনো দরকার নেই। প্রিন্স কাউকে খু*ন করেনি!”
রাজা ড্রাকোনিস অবাক। জারেন, লিয়ারা, আর বাকি ড্রাগনরাও ফিসফিস করে ওঠে।
“আমি মেরেছি আলাইরাকে,” ফিওনার কণ্ঠ নিঃসংশয়।
“আর কেনো মেরেছি সেটাও বলবো।” ফিওনার কথাটা সবার কানে পৌঁছানো মাত্র সবাই হতবাক। লিয়ারা, রাজা জারেন, এথিরিয়ন, থারিনিয়াস আর আলবিরা সবাই হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে। কারন তারা ভাবতেও পারেনা ফিওনা কাউকে খু*ন করাতো দূর কাউকে আঘাতও করতে পারেনা।
ফিওনা সবার গুঞ্জন উপেক্ষা করে বলতে থাকে। জ্যাসপার এগিয়ে আসতে চাইলেও পারছেনা কারন সে এই মুহূর্তে যেখানে দাঁড়ানো সেটা ভেনাসের একটা কাঠগড়া আর যেটা পেরিয়ে সে আসতে পারবেনা যতক্ষন কোনো ফয়সালা না হবে।
“আলাইরা সকল সদস্যের খাবারে নিওট্রিনসাল-৭৭ নামের একধরনের বিষা*ক্ত কেমিকেল মিশিয়েছিল, যা ধীরে ধীরে নার্ভ সিস্টেম দুর্বল করে ফেলে এবং অজ্ঞান অবস্থা থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ করে মৃত্যু*র দিকে ঠেলে দেয়। এই কেমিকেল শুধু প্রাণঘাতী নয়, বরং ড্রাগনের অভ্যন্তরীণ আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও ধ্বং*স করে।” ফিওনা একনাগাড়ে কথাগুলো বলতে থাকে তারপর আবার থেমে বলতে লাগলো “ দ্বিতীয়ত আলাইরা প্রিন্সকে অচেতন করে কৌশলে এবং তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা ও করে। এটাই কি যথেষ্ট না, যে একজন প্রিন্সের সম্মান নষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে?
যে গোটা ভেনাসের প্রিন্স! তার মান-সম্মান কে ক্ষুণ্ণ করতে চেয়েছিল।”
“তৃতীয়ত আমার পুরো পরিবার—রাজ পরিবারের খাবারেও ছিল সেই কেমিকেল। মানে সে শুধু এক ব্যক্তিকে নয়, পুরো রাজসভাকে দুর্বল করে রাজ্য কুক্ষিগত করতে চাইছিল।”
“চতুর্থত আমি পুরোপুরি ড্রাগন না, আমি পৃথিবীর একজন মানবী। আমি পুরোপুরি ভেনাসের আইনের আওতাভুক্ত নই। আর যাকে আমি মেরেছি, সে একজন অপরাধী। আলাইরার অপরাধ এমনিতেই মৃ*ত্যুদণ্ডযোগ্য।”
সম্পুর্ন সভা স্তব্ধ, কেউ নিশ্বাস নিচ্ছে না। যতফিওনার কথা শেষ হতেই পুরো সভায় এক মুহূর্তের জন্য নিঃস্তব্ধতা।রাজা ড্রাকোনিসের চোখে প্রথমবার একটু আন্দোলন।জারেনের মুখ পাথরের মতো কঠিন।আর লিয়ারার চোখ বিস্ফোরিত।
একজন বিজ্ঞানী ড্রাগন উঠে দাঁড়ায়, আর বলে— “নিওট্রিনসাল-৭৭ এর নমুনা আমি বিশ্লেষণ করেছি। ফিওনা ঠিক বলছে। ওটা ছিল মৃ*ত্যুর ফাঁদ।”
সবাই একে অপরের দিকে তাকায়, ফিসফিস শুরু হয়।
তখনই রাজা জারেন উঠে দাঁড়ান।গম্ভীর গলায় বলেন
“আমার ভাগ্নি যে কাজ করেছে একদম ঠিক করেছে।
যে কাজ অন্য কেউ পারেনি,সেই সাহসিকতা দেখিয়েছে সে। এবং… যে অপরাধ আলাইরা করেছে, তাতে ফিওনার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো। এই শাস্তি ন্যায্য একদম।”
তৎক্ষণাৎ লিয়ারা বলে ওঠে, “আমিও একমত।আমার মেয়ে ফিওনা যদি না রুখতো তাকে,আজ আরও অনেকের প্রাণ যেতে পারতো, ভবিষ্যতে সে এমন আরো অপরাধ করতো।”
তখনি একজন জ্যেষ্ঠ ড্রাগন উঠে দাঁড়ায়— “আমরা ভুল করেছি। আমরা প্রিন্সকে ভুল বুঝেছি। আমরা সত্যি ক্ষমাপ্রার্থী।”
আরেকজন ড্রাগন মাথা নিচু করে বলে, “আমরা প্রিন্সের পদত্যাগ চাইনি, কিন্তু মিথ্যা তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলাম। ক্ষমা চাইছি, প্রিন্স।” সভাজুড়ে ধ্বনি ওঠে— “প্রিন্স আমাদের গর্ব!” আর এখন ফ্লোরাস রাজ্যের প্রিন্সেস ফিওনা বাঁচিয়েছে এল্ড্র রাজ্যর সম্মান আর প্রিন্সের সম্মান!”
সবার সম্মুখে একজন প্রবীণ ড্রাগন হাঁটু গেড়ে বসে, মাথা নিচু করে বলে— “ক্ষমা করবেন, প্রিন্স আর প্রিন্সেস ফিওনার সাহসিকতা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।”
জ্যাসপার শুধু তাকিয়ে আছে ফিওনার দিকে একবারের জন্যও চোখ সরাচ্ছে না।
জ্যাসপার নিজের মনেই বলে উঠলো “তুমি আমাকে হারতে দাওনি। তুমি আজ আবায প্রমান করেছো, তুমি একমাত্র যোগ্য সঙ্গিনী আমার হামিংবার্ড।”
রাজা ড্রাকোনিস, যিনি এতক্ষণ কিছু বলেননি, প্রথমবার বলে ওঠেলেন— “আজ এক মানবী কন্যা আমার একমাত্র পুত্রবধূ আমার প্রিন্সের অর্ধাঙ্গীনী আজ সম্মান বাঁচিয়েছে আমাদের এল্ড্র রাজ্যর আর আমার ছেলের ও।আমি গর্বিত, শুধু একজন রাজা না… একজন পিতা হিসেবেও।”
সেই সঙ্গে সবাই করতালি দিয়ে উঠলো।…
সূর্যের সোনালি আলো কাঁচের জানালা ছুঁয়ে কক্ষের ভেতর ঢুকছে।বাতাসে হালকা সুরভি আর নীরবতা। কক্ষের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাসপার, তার চোখে রয়েছে অতল প্রশান্তি।তার পাশেই ধীরে ধীরে হেঁটে আসছে ফিওনা।
ফিওনা ধীরে ধীর বলে –“তুমি কেন আমার জন্য এত করো,প্রিন্স? কেন বারবার নিজেকে বিপদের মধ্যে ফেলো তুমি?”
জ্যাসপার চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর এক ধাপ এগিয়ে আসে। তার গভীর কণ্ঠস্বরে ভাঙে নীরবতা—
“তুমি জানো না..আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি আর ভালোবাসা মানেই আগলে রাখা আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তোমাকে আগলে রাখতে চাই। তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আমার হ্নদয় শূন্য হয়ে যায়।”
ফিওনা চোখ সরাতে চায়, কিন্তু পারে না। জ্যাসপার তার গাল ছুঁয়ে বলে—“তুমি এখন আমার র*ক্তে, আমার নিঃশ্বাসে সবকিছুতেই মিশে আছো।”
ফিওনার চোখ ভিজে যায়। সে ফিসফিসিয়ে বলে—
“আর আমি তোমার জন্য নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত।তোমাকে হারানোর ভয়েই আমি আজ সবাইকে সত্যি বলেছি কারন আমি আজকে সত্যি না বললে ওরা তোমাকে শাস্তি দিতো আর সেই শাস্তির কারনে তামার আমার থেকে দূরে থাকতে হতো। আমি সব সহ্য করতে পারলেও তোমার শুন্যতা সহ্য করতে পারবো না প্রিন্স ..”
জ্যাসপার আর কথা না বলে ফিওনার কপালে নরম করে একটা চুমু খায়।তারপর ফিওনাকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়।তার ডান হাত ফিওনার চুলে বিলিয়ে যায়, আর বাঁ হাতে কোমর জড়িয়ে রাখে।জ্যাসপার আস্তে ফিসফিস করে বলে—“আমার হামিংবার্ড,তোমার জন্য আমি এল্ড্র রাজ্য ছেড়ে যেতেও রাজি।” ফিওনা তার বুকে মুখ গুঁজে ফেলে।“না, কোথাও যেতে হবেনা… শুধু আমার চোখের সামনে থেকো।”
বিকেলের আলো হালকা পড়ছে,আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ফিওনার চোখ জ্বলজ্বল করছে উত্তেজনায়।
ফিওনা হেসে বললো– “আজ আমি ঘুরতে যেতে চাই, প্রিন্স। অনেক কষ্ট আর চাপের পর আজ একটু ফ্রেশ হাওয়া চাই আমার।”
জ্যাসপার কিছু না বলে মাথা নাড়ে। মুহূর্তেই তারা স্থানান্তরিত হয় ভেনাসের একটি পুরনো শহুরে এলাকায়। একটা সময়ের বিখ্যাত গেইম জোন – কিন্তু এখন শুধুই ধ্বং*সস্তূপ। ভাঙা দেয়াল, পোড়া গন্ধ, ছেঁড়া ব্যানার।
ফিওনার মুখ থমকে যায়। ফিওনা চোখ বড় করে বলে– “এইটা তো… আমি একবার এসেছিলাম এখানে! তখন কত সুন্দর ছিলো সব… এখন এই অবস্থাটা কী করে হলো প্রিন্স?” জ্যাসপার ঠাণ্ডা গলায় বলে—“আমি করেছি।”
ফিওনা ঘুরে তাকায় জ্যাসপারের দিকে, মুখে অবিশ্বাসের ছাপ। ফিওনা আবেগে কাঁপা কণ্ঠে বলে– “তুমি?! কিন্তু কেনো করেছো এটা?” জ্যাসপার এগিয়ে আসে, চোখে অদ্ভুত তীব্রতা— “তোমার কি মনে হয়, ফিওনা… আমি কিছু জানি না? এই গেইম জোনে তুমি এসেছিলে পাতি সেনাপতিটার সাথে,হাসছিলে, খেলছিলে, সময় কাটিয়েছিলে।”
এক মুহূর্ত থেমে জ্যাসপার বলে— “তুমি হয়তো জানো না ফিওনা আমার কাছে তুমি আসলে কি…তোমার পাশে কাউকে দেখলে না ভাবলেও… আমার ভেতরের ড্রাগনটা পাগল হয়ে যায়।আমি সহ্য করতে পারিনা।”
ফিওনা স্তব্ধ। কিছু বলতে পারে না। সে ধীরে ধীরে ভাঙা গেইম মেশিনের পাশে দাঁড়ায়। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে—“তুমি এতটা ভালোবাসো আমাকে… যে শুধু ঈর্ষাতেই সবকিছু ভেঙে দিলে?”জ্যাসপার কাছে এসে তার দুই বাহু ধরে বলে—“তোমার হাসির কারন, তোমার কান্নার কারন এমনকি তোমার নিঃশ্বাস নেয়ার কারনটাও শুধুমাত্র আমি হবো ফিওনা আমি।
ফিওনা ধীরে ধীরে ভাঙা মেঝেতে হাঁটতে লাগলো। এক সময় হেসে বলে উঠলো— “গেইমগুলো খুব সুন্দর ছিলো, প্রিন্স। সত্যি বলতে… আমার খুব ভালো লেগেছিলো এই জায়গাটা।আমি অনেক আনন্দ পেয়েছিলাম।
জ্যাসপার এক মুহূর্ত চুপ থাকে, তারপর তার চোখে ফিরে আসে সেই চিরচেনা সংকল্প। “এক সপ্তাহের মধ্যে আমি এল্ড্র রাজ্যের মূল ফটকের ঠিক সামনেই একটা নতুন গেইম জোন বানাবো। একদম তোমার পছন্দ মতো গেইম থাকবে সেখানে—ভিআর রেসিং, স্পেস শ্যুটিং, মিরর মেইজ, ক্যান্ডি বক্স… যা চাও তাই থাকবে।”
ফিওনা একটু অবাক হয়ে বলে জোর”তুমি কি সিরিয়াস?”
জ্যাসপার মাথা নাড়ে। “ইয়েস আম সিরিয়াস!! আর সেই গেইম জোনে তুমি ছাড়া আর কেউ ঢুকতে পারবে না। কেবল তোমার রাজ্য হবে সেটা।”
ফিওনার চোখে বিস্ময়, কণ্ঠে মৃদু হাসি—”কিন্তু এটা তো অনেক খরচের ব্যাপার, প্রিন্স… এত বড় একটা জিনিস!”
জ্যাসপার হালকা হেসে বলে— “বেশি না। মাত্র পাঁচশত মিলিয়ন মার্কিন ডলার লাগবে।”
ফিওনা চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে তার দিকে—
“তুমি… মজা করছো,?”
জ্যাসপার চোখ টিপে বলে—”তোমার মুখের হাসি আর তোমার আনন্দ এই মহাবিশ্বের সব মুদ্রার চেয়েও দামী আমার কাছে। তবে যদি খরচের কথা বলো তাহলে বলবো হ্যাঁ আমার ব্যাংক ব্যালেন্স একমাত্র তুমিই খালি করে দিবে।
ফিওনা হেসে ফেলে। চারপাশে ভাঙা দেয়াল, ধুলার গন্ধ—তবু ওই মুহূর্তে মনে হয় যেন ওরা দাঁড়িয়ে আছে একদম নতুন এক জগতের দোরগোড়ায়।
সিলভা ক্লাস শেষ করে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে ভবন থেকে। হাতে বই ধরা,হালকা ক্লান্ত মুখে হাঁটছে — ঠিক তখনই রাস্তার ওপাশে চকচকে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে যায় এক সুদর্শন পুরুষ।
এথিরিয়ন।
এক হাত পকেটে, অন্য হাতে গাড়ির দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে, মুখে শান্ত আত্মবিশ্বাসী হাসি।
এথিরিয়ন “চলো,আজকের ক্লাস তো শেষ। এবার কিছু মুহূর্ত আমার জন্যও রাখো।”
সিলভা চমকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর হালকা মাথা নিচু করে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। দুজন উঠে পড়ে গাড়িতে। গাড়ি এগিয়ে যায় ফ্লোরাস রাজ্যের বাইরের পাহাড়ি পথ ধরে— বিকেলের নরম বাতাসে চুল উড়তে থাকে দুজনের।দুজন পাশাপাশি বসে। কিছুক্ষণ কোনো কথা হয় না। বাতাসের শব্দ আর একে অপরের নিঃশ্বাস ছাড়া চারপাশ নিস্তব্ধ।
গাড়ির মধ্যে বসে সিলভা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। গাড়ির কাঁচের পাশে তাকিয়ে থাকা মুখে লজ্জার রঙ ফুটে আছে। গতকাল রাতের খাত ভেবেই সিলভা লজ্জায় রক্তিম হয়ে আছে। সেদিন রাতে তাদের ভালোবাসার মুহূর্ত থেমে যাওয়ার পরেই সিলভা ফিরে যায় নিজের প্রাসাদে।
এথিরিয়ন চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে, মাঝে মাঝে চোখ যায় পাশে বসা মুখ লুকোনো সেই মেয়েটার দিকে।
এথিরিয়ন নরম কণ্ঠে বললো “এতো কি ভাবছো?বাই এনি চান্স তুমি কি গতরাতের কথা ভেবে লজ্জা পাচ্ছো”
সিলভা একবারে তাকিয়ে পুনরায় চোখ সরিয়ে বললো ” এভাবে সরাসরি কেউ জিজ্ঞেস করে?…”
এথিরিয়ন হেসে বললো “ আমি এমনটাই। তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছোও না, ঠিক আছে তাকাতে হবেনা শুধু অনুভব করো… আজকে লং ড্রাইভে যাবো।”
সিলভা একটু নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল, “প্রাসাদে কেউ জানে তুমি যে সাসপেন্ড হয়েছো?”
এথিরিয়ন জানালার বাইরে তাকিয়ে থেকে নিঃশব্দে মাথা নাড়ল, তারপর ধীরে বলে উঠল, “না… এখনো কেউ জানে না। প্রাসাদে এমনিতেই একেকটা ঝামেলা চলছে… এখন এসব বললে আরও চিন্তার বোঝা পড়বে সবাইর ওপর।”
সিলভা চিন্তিতভাবে তাকাল ওর দিকে। “তুমি সব একা একা সামলাচ্ছো কেনো, রিয়ন? আমি তোমার পাশে আছি, জানো তো?”এথিরিয়ন তখন হালকা হাসল, ওর গলাটা একটু নরম হলো। “তুমি পাশে আছো বলেই আমি এখনও নিশ্চিন্তে আছি।” সিলভা তখন হেসে বললো ” তুমি এমনিতেও সব বিষয়ে নিশ্চিন্তেই থাকো ভেনাস উল্টে গেলেও। ষএথিরিয়ন সমান্য হাসলো সিলভার কথায়। কারন এথিরিয়ন কখনোই কোনো বিষয়ে সিরিয়াস হয়না।
গাড়ির মধ্যে মুহূর্তটা কিছুক্ষণের জন্য নীরবতায় ডুবে গেল। তাদের চোখে যেন এক অদৃশ্য বোঝাপড়া— ব্যথার, নির্ভরতার, আর একরাশ অমীমাংসিত অনুভূতির।
অতিথিকক্ষের দরজাটা খোলার মুহূর্তেই অ্যাকুয়ারার বুকের মধ্যে যেন কিছু একটায় কেঁপে উঠল। ঘরটা নিঃশব্দ, ধুলোহীন—কিন্তু সেখানে বাতাসের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে এক পরিচিত গন্ধ, এক অদৃশ্য স্পর্শ… লিউ ঝান।
প্রথমে সে ধীরে পা ফেলে ঘরে ঢুকে পড়ে। চোখ ঘোরায় জানালার দিকে, সোফা, ডেস্ক, বইয়ের তাকে—সবকিছু যেন তার মনের ভেতরে জমে থাকা কোনো পুরনো স্লাইডশোর মতো। এই ঘরেই কয়দিন তারা একসাথে কিছু সময়ের জন্য ছিলো… আর লিউ ঝান অসুস্থ ছিলো, অ্যাকুয়ারা রাত জেগে তার সেবাও করেছিল।
সব কিছু এখন অতীত, কিন্তু দেয়ালের রঙ, বাতাসের ছোঁয়া, নিঃশ্বাসের ভার—সব যেন বলে উঠছে, “সে এখনও তোমার খুব কাছাকাছি আছে।”
হঠাৎই চোখে পড়ে, বিছানার এক কোণে হালকাভাবে গুটানো একটা সাদা শার্ট রাখা আছে—ভাঁজ না করা, তবুও গোছানো।
অ্যাকুয়ারা সেটা হাতে তুলে নেয়। প্রথমে একটু থেমে থাকে। তারপর…শার্টটা মুখের কাছে আনে, চোখ বন্ধ করে এক গভীর শ্বাস নেয়।
লিউ ঝান।
শার্টের গন্ধে ভেসে আসে কেবল একটি অনুভব—নরমভাবে জড়িয়ে ধরার মতো এক আত্মিক উষ্ণতা।মনে হয়, যেন লিউ ঝান তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।একটি প্রিয় অস্তিত্ব, একটি চাপা শ্বাস, একটি না-বলা কথার আশ্রয়।
শুধু গন্ধেই ভালোবাসা ঝরে পড়ে।
চোখ খুলে অ্যাকুয়ারা এক মুহূর্ত দম নেয়, তারপর চুপচাপ সেই শার্টটা নিজের গায়ে পরতে শুরু করে। বোতাম গুঁজতে গুঁজতে তার চোখে জল এসে যায়—তবুও সে হাসে, কারণ এই একটুকু কাপড়েই যেন একটা সময়ের পুরো ভালোবাসা ধরে আছে। শার্টটা ওর শরীর ছুঁয়ে যেন বলে—” আমি আছি তোমার পাশেই।তোমার অস্তিত্বে।”
এল্ড্র রাজ্যর গোপন ল্যাবের কাঁচের দরজা খুলে গেলো ধীরে।আলবিরা ঢুকল প্রথমে ল্যাবে—চুলে হালকা সোনালি আভা ছড়িয়ে আছে, চোখে রয়েছে আগুনের দীপ্তি। তার পেছনে থারিনিয়াস—গম্ভীর, বুদ্ধিদীপ্ত ড্রাগন পুরুষ।
জ্যাসপার হোলো-প্রজেকশন চালু করলো। বেগুনি ঝলমলে পাথর “লুমেনকো অরব”-এর ছবি ঘুরে বেড়াতে লাগল বাতাসে। জ্যাসপার তাদের দুজনের উদ্দেশ্য বলল, “তোমরা জানো, এই পাথর পৃথিবীর একমাত্র জ্বালানি ব্যবস্থাকে পাল্টে দিতে পারে। কিন্তু আমরা যদি একে কেবলমাত্র শক্তি হিসেবে না দেখে, একে এক্সক্লুসিভ রত্ন, অস্ত্র শক্তি, এমনকি হেলথ সেক্টরে বিক্রি করি, তাহলে আমাদের আয় হবে…”
জ্যাসপার পাশে থাকা গ্রাফ দেখালো ১ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্ভাব্য প্রথম ধাপের লেনদেন।
রাত তখনও গভীর হয়নি, এল্ড্র ল্যাব – কাঁচের দেয়ালের ভেতর আলোর রশ্মি তখন ও ঘুরছে।
জ্যাসপার এবার হোলো-ম্যাপে পাথরের গঠন দেখাতে লাগলো।তার কণ্ঠে রহস্যময় চাপা উত্তেজনা— “এইগুলো… সাধারণ পাথর না। এরা জীবন্ত—মাইক্রো-কোডেড এনার্জি ধারক। বিজ্ঞানীরা এদের বলে ‘Silent Healers’।”
আলবিরা চোখ মেলে তাকালো, — “Silent Healers? মানে?” জ্যাসপার ধীরে ধীরে বলল, — “তুমি যদি এগুলা দিয়ে জুয়েলারি বানাও… আর সেটা কেউ পরে—তাহলে প্রথমে ওর শরীরে মাইগ্রেন কমে যাবে, তারপর স্ট্রেস হ্রাস পাবে, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হবে… এবং ধীরে ধীরে হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার, বা স্নায়বিক জটিলতা নিরাময়ের দিকে যাবে। কিন্তু মজার ব্যাপার কী জানো?”
সে থামল। — “মানুষ পুরোপুরি সুস্থ হবে না। শুধু ভালো থাকতে শুরু করবে। ডাক্তারের কাছে কম যাবে, কিন্তু কারণ বুঝবে না। একটা অভ্যন্তরীণ শক্তি তৈরি হবে, আর সেই শক্তির মাঝেও, তার জীবন ঝুলে থাকবে লুমেনকো’র আশপাশেই।”
জ্যাসপার চোখ নিচু করে শান্ত কণ্ঠে বলল,— “আমি এবার পৃথিবীতে যাবো না।”
আলবিরা কৌতূহল ভরে তাকালো, — “আপনি যাচ্ছন না? প্রিন্স কিন্তু কেন?”
জ্যাসপার ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল,—ফিওনাকে এখানে একা রেখে আমি যাবো না। এই প্রজেক্ট এখন পুরোপুরি তোমার আর থারিনিয়াসের হাতে। আমি এখান থেকেই সব পর্যবেক্ষণ করব। সময় এসেছে অন্য কিছু নিয়ে কাজ করার।”
থারিনিয়াস ভ্রু কুঁচকে বলল,— “আপনি কি নিশ্চিত?আপনি না থাকলে পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে প্রথম লেনদেনটা কঠিন হয়ে পড়বে প্রিন্স।”
জ্যাসপার তাকিয়ে থাকলো হোলো-ম্যাপে ঘূর্ণায়মান পাথরের প্রতিচ্ছবির দিকে। তার চোখে চিন্তার ছায়া।— “আমার কাজ ছিল এটা তৈরি করা, পথ দেখানো। এখন কাজটা শেষ করো তোমরা। আমি চাই না ওরা আমার মুখ মনে রাখুক—শুধু লুমেনকো অরবের নামটাই থাকুক তাদের মনে।”
চীনের, বেইজিং, রাত ১১টা….
বেইজিং ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরে হালকা কুয়াশা,জানালার ভিতরে আলো জ্বলছে।
জম্বিদের সেই বিভীষিকাময় রাতের পর, হাসপাতাল আবার নতুন করে পথচলা শুরু করেছে। ধ্বংসস্তূপ আর র*ক্তের দাগ মুছে ফেলে তারা এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত, পুরোপুরি সুরক্ষিত এক মেডিকেল দুর্গ। লিউ ঝান পৃথিবীতে ফেরার পর থেকে এই হাসপাতালের পুনর্গঠনের কাজেই ব্যস্ত ছিল।অপারেশন থিয়েটারে, রাতের পর রাত জরুরি ওয়ার্ডে—তার নিঃশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে হাসপাতালের নিঃশব্দ শব্দগুলো।
সে জানে, মানুষের শরীরের ক্ষ*ত মেরামত করা যায়—কিন্তু মনের মধ্যে জমে থাকা ভয় আর শোক? সেগুলো সারাতে সময় লাগে।
একটা বিশেষ ভিআইপি রুমে বসে আছে লিউ ঝান, পরনে হালকা নীল ডাক্তারি পোশাক, চোখে ক্লান্তি কিন্তু গম্ভীর চেহারা। টেবিলের পাশে চায়ের কাপ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।আজ তার বাবা-মা চীনে এসেছে, বহুদিন পর।
তার বাবা—মিস্টার লিউ হুইচেন। মিস্টার লিউ হুইচেন চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর প্রধান হিসেবে কর্মরত একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং বায়োমেডিক্যাল গবেষক। তার গবেষণা এবং অবদান বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি লাভ করেছেন।
লিউ ঝানের মা, মেই শিউয়েন, একজন খ্যাতনামা ন্যানো-টেকনোলজি গবেষক। তার মুখে নরম হাসি, কিন্তু চোখে একধরনের উদ্বেগ।
লিউ ঝানের মা বললেন — “ঝান… এবার তো ঠিক সময়। যুদ্ধ-ঝড় অনেক হলো। এখন নিজের জীবন নিয়েও ভাবতে হবে তোমাকে।”
বাবা গম্ভীর গলায় বললেন — “তুমি এখন আগের থেকে ভালো আছো। ভালো একটা পদে আছো। কিন্তু সারাক্ষণ হাসপাতাল নিয়ে থাকো। একটু থাম এবার, দেখ চারপাশটা, ফিওনা তো আর নেই তোমার জীবনে ,তাহলে কি এভাবেই জীবন শেষ করবে। কাউকে না কাউকে তো জীবনে জড়াতে হবেই।”
লিউ ঝান চুপ করে আছে। মা এগিয়ে এসে বললেন
— “আমরা একটা প্রস্তাব পেয়েছি। খুব ভদ্র, শিক্ষিত একটা মেয়ে। বেইজিংতেই থাকে। ওর বাবা-মাও তোমায মতই স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত।”
লিউ ঝান শান্ত স্বরে বল:— “আমি এখনো ঠিক প্রস্তুত না মা। আমার ভেতরে কিছু ঘুরছে… কিছু প্রশ্ন… যেগুলোর উত্তর আমি নিজেই জানি না।”
বাবা কড়া গলায় বললেন:— “সব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকে মেলে না। অনেক সময় মানুষকে ভরসা করে এগোতে হয়। তুমি সেই জম্বির আক্রমণ থেকে বেঁচে ফিরেছো—এটা স্রেফ কাকতালীয় ছিল না।”
মা চোখ সরিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে বললেন
আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৩৭
— “এত মানুষের জীবন তুমি বাঁচাও… কিন্তু নিজের জীবনে তো একা হয়ে আছো, ঝান।”
রুমে কিছুক্ষণ নীরবতা। লিউ ঝান ধীরে উঠে দাঁড়ায়, জানালার বাইরে তাকিয়ে বলে— “আমার জীবনটা সহজ না মা। কিন্তু যদি কাউকে পাশে চাই… সে হবে এমন কেউ, যে আমার ভেতরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা মেনে নিয়ে আমার সাথে থাকবে।”
তার বাবা-মা পরস্পরের দিকে তাকাল।চুপচাপ হয়ে গেলেন তারা।