আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৪৩
সাবিলা সাবি
এলড্র রাজ্যের আকাশ আজ যেন একটু বেশিই ঝকঝকে। সূর্যের আলো স্বর্ণালী ধাতুর মতো ঝিলমিল করছে সাদা মেঘের গায়ে। বহুদিন পর ফিওনা আবার ফিরেছে ভেনাসে—জ্যাসপার, আলবিরা আর থারিনিয়াসের সঙ্গে। ড্রাগন রুপ থেকে মানব রুপে নামতেই প্রাসাদের সামনে ভেসে উঠলো পরিচিত সেই সুবিশাল রাজ্য—ড্রাগনের পাখার মতো গঠিত প্রবেশদ্বার, নীলাভ স্ফটিকের রাজপথ আর প্রাসাদের উঁচু চূড়া যেন আকাশ ছুঁয়েছে।
প্রাসাদের দরজা পেরিয়েই ধ্বনিত হলো বিশাল শব্দ।
রাজসভায় প্রবেশের মুহূর্তটি যেন থমকে গেল সময়ের মত।রাজা ড্রাকোনিস নিজ আসনে বসে, পাশেই উচ্চপদস্থ ড্রাগন লর্ডরা। ঠিক একপাশে লিউ ঝান আর অ্যাকুয়ারা শান্তভাবে বসে আছে। জ্যাসপারের পা হঠাৎ থমকে গেল।
“লিউ ঝান এখানে ?” জ্যাসপারের মুখ কঠিন হয়ে আসলো।
আলবিরা মুচকি হেসে বলল, “মনে হচ্ছে কিছু একটা অপেক্ষা করছে…”
রাজা ড্রাকোনিস চোখ তুলে তাকালেন—চোখে ছিল গর্ব, চাপা উত্তেজনা, আর গভীর কিছু লুকোনো। তিনি হেঁটে এলেন সামনে, জ্যাসপারের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন— “তোমরা অবশেষে ফিরে এসেছো। আজ সভায় তোমাদের জন্য বিশেষ খবর আছে । তবে তার আগে… লিউ ঝান, তুমি বলো কি বলতে চাও?”
লিউ ঝান উঠে দাঁড়ালো। তার চোখ অ্যাকুয়ারার চোখে আটকে ছিল। “আমি এই ভেনাসের রাজসভায় দাঁড়িয়ে বলছি—আমি অ্যাকুয়ারাকে বিয়ে করতে চাই। আমি চাই তাকে পৃথিবীতে নিয়ে যাবো, আমার বাবা-মার সাথে পরিচয় করাবো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফিওনার মুখে আনন্দের দীপ্তি খেলে যায়, যেন পৃথিবীর সব গোলাপ হঠাৎ করে ফোটে উঠেছে তার চোখে।ফিওনা হেসে ওঠে, চোখে জলছোঁয়া আনন্দ। “এতদিনে তুমি নিজের ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছো, আমি খুব খুশি।”
আলবিরা হালকা হেসে থারিনিয়াসের দিকে একবার তাকায়, ওদের মধ্যে এক বোঝাপড়া আছে বহুদিনের।
কিন্তু জ্যাসপার? সে চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এল অ্যাকুয়ারার দিকে। “তুমি কী চাও, অ্যাকুয়ারা?” তার গলা শান্ত, কিন্তু ভিতরে চলছিল অস্থির এক দহন।
অ্যাকুয়ারা মাথা নিচু করেই বলল, “আমি লিউ ঝানকে ভালোবাসি। তার সাথে যেতে চাই প্রিন্স।”
এক মুহূর্ত নীরবতা।তারপর জ্যাসপারের চোখ নেমে এলো, অতীতের হাজারো দৃশ্য তার মনে ভেসে উঠলো—লিউ ঝান, যে এক সময় একশ বছর ধরে ফিওনার জন্য ব্যথিত ছিল, তার সেই ভালোবাসা কি এত সহজে রূপান্তরিত হলো? তার অনুভবের রঙ কি বদলে গেল এত অল্প সময়ে?
“তুমি কী সত্যিই ভুলে গেছো ফিওনাকে?” জিজ্ঞাসা করল জ্যাসপার, চোখে কুয়াশা জমে ওঠার মতো কষ্টের ছায়া।
লিউ ঝান শান্ত গলায় উত্তর দিল, “ভালোবাসা কখনো হারায় না, জ্যাসপার। তবে সে নিজেই পথ বদলায়। ফিওনা ছিল আমার অতীতের প্রেরণা, আর অ্যাকুয়ারা আমার ভবিষ্যতের আশ্রয়।”
জ্যাসপার কিছু বলতে পারল না। সে জানে, ভালোবাসা চিরন্তন হলেও তা একমুখী নয়। মাঝে মাঝে হারিয়ে যায়, আবার নতুন পথে জন্ম নেয়। সে শুধু একবার ফিওনার দিকে তাকাল, জ্যাসপার চোখ বন্ধ করল এক মুহূর্ত। তারপর গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলল— “লাইফটা অ্যাকুয়ারার নিজের। সে যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই হবে। আমি বাধা দেবো না।” তারপর একটু থেমে যোগ করল, “তবে আপাতত… তোমরা যেতে পারবে না। কারণ আজ আরেকটি ঘোষণা আছে। আর পৃথিবীতে যাওয়ার আগে আমার পক্ষ থেকে অ্যাকুয়ারার জন্য একটি উপহার আছে।” “তবে শোনো, লিউ ঝান,” তার চোখে জ্বলতে থাকে এক অদ্ভুত কঠোরতা, “অ্যাকুয়ারা আমার বোন। আমি তাকে সবসময় একজন ছোট বোনের মতো দেখেছি, আগলে রেখেছি। তুমি কি গ্যারান্টি দিতে পারো, যে তুমি কোনোদিন তাকে কষ্ট দেবে না? কোনোদিন এমন কিছু করবে না, যাতে সে এক ফোঁটা চোখের জল ফেলে?”
লিউ ঝান কিছুক্ষণ চুপ থেকে, এক পা এগিয়ে আসে।
“আমি ড্রাগন হলেও আমি মানুষ ও, ভুলত্রুটি আমার থাকবে। কিন্তু কষ্ট দেবো? না, সেই অধিকার আমার নেই। ওর পাশে থাকতে চাই সারাজীবন শুধু, ওর ওপর কখনো কষ্টের ছায়াও ফেলতে দিবো না।”
জ্যাসপার আবার বলে “আর যদি তোমার পরিবার, তোমার বাবা-মা আমার বোনকে অপমান করে, কী করবে তুমি?”
লিউ ঝান দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দেয়: “তবে আমি নিজের পরিবার ছেড়ে দেবো, তবু অ্যাকুয়ারার হাত ছাড়বো না। আমি ফিওনার জন্য যেমন একশ বছর অপেক্ষা করেছি, তেমনই অ্যাকুয়ারার জন্য অনন্তকাল দাঁড়িয়ে থাকবো, যদি দরকার হয়।”
সবাই চমকে উঠলো। রাজসভা নিঃশব্দ।
রাজা ড্রাকোনিস সামান্য হাসলেন। কিন্তু তার চোখের গভীরে কেউ দেখল না—এক শতাব্দীর পুরোনো এক গোপন সত্য লুকিয়ে আছে, যা বদলে দিতে পারে জ্যাসপার আর অ্যাকুয়ারার পরিচয়…
প্রাসাদের আঙিনা জুড়ে তখন সূর্যালোকে যেন স্বর্ণ ছড়িয়ে পড়েছে। ভেনাসের আকাশে উড়ছিল ছোট ছোট আলো, আর ফিওনা, লিউ ঝান, অ্যাকুয়ারা—তাদের চোখে ছিল এক নতুন জীবনের স্বপ্ন। তবে সবার চোখ এড়িয়ে, রাজা ড্রাকোনিস মনেই বললেন— “ক্ষমা করো, অ্যাকুয়ারা। আমি যে সত্য চিরকাল লুকিয়ে এসেছি—তুমি যে এই বংশেরই রক্ত…”
জ্যাসপার কিছুক্ষণ নীরব থাকল। তারপর সিংহাসনের সামনে এগিয়ে এসে এল্ড্র সভার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দৃঢ় স্বরে বলল—”আজকের দিনটি কেবল ফিরে আসার দিন নয়, বরং একটি নতুন সূচনার দ্বারপ্রান্ত। আমি, এল্ড্র রাজ্যের যুবরাজ জ্যাসপার ড্রাকোনিস, রাজা ড্রাকোনিসের অনুমতিক্রমে ঘোষণা করছি—আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে থারিনিয়াস ও আলবিরার বিয়ে।”
প্রাসাদের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত অবধি ধ্বনিত হলো আনন্দধ্বনি।
ড্রাগন গার্ডরা একসাথে উল্লাসে তালি দিল, কাস্টোরা সোনার ঘন্টা বাজাতে শুরু করল, জ্যাসপার মঞ্চের এক প্রান্তে এগিয়ে এসে আবার মাইক ধরে বিন্দুমাত্র দ্বিধা ছাড়াই বললো “রাজ্যবাসী গর্বের সঙ্গে শুনুন!আগামীকাল, সূর্যের সবচেয়ে দীপ্তিময় আলোর স্নেহে, অনুষ্ঠিত হবে আমাদের এল্ড্র রাজ্যের সবচেয়ে সাহসী যোদ্ধা ড্রাগন আলবিরা আর থারিনিয়াসের বিবাহ। এল্ড্রে রাজ্য আমাদের ইতিহাসে আরেকজোড়া সাহসী প্রেমের সাক্ষী হতে চলেছে। প্রস্তুতি শেষ—আগামীকাল সকাল ৭টায় ক্রিস্টাল ফ্লেম কোর্টই হবে সেই মঞ্চ, যেখানে তারা চিরজীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হবে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ—এল্ড্রে’র হৃদয় থেকে সবাইকে স্বাগত!”
জ্যাসপারের কণ্ঠ মঞ্চ জুড়ে প্রতিধ্বনিত হতেই মুহূর্তের জন্য যেন সময় থমকে গেল।আলবিরা প্রথমে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিল না। তার হাতের আঙুলে এখনো প্রাচীন সোনালী আংটি জ্বলজ্বল করছে, কিন্তু এ ঘোষণায় চোখ দুটো যেন আরও ঝলসে উঠলো। হঠাৎ এক নিঃশ্বাসে সে বলে উঠল,
“প্রিন্স!আপনি সত্যিই এতো বড় সারপ্রাইজ দিবেন কখনো ভাবতে পারিনি।”তার গলায় কাঁপা স্পষ্ট, চোখে জল—কিন্তু সে হাসছে।
থারিনিয়াস কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি জানেন, আমি কখনো কোনো রাজ্য চাইতাম না। শুধু আলবিরাকে চেয়েছিলাম।আপনি আজ আমাকে সেই চিরন্তন রাজ্যটা দিয়ে দিলেন আমি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে সারাজীবনের জন্য।” তার কণ্ঠ দৃঢ়, কিন্তু চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রু আড়াল করা যায়নি।
“তোমরা দু’জনের জীবনে আমি অনেক ঝড় দেখেছি। এই রাজ্যে ভালোবাসার সবচেয়ে সাহসী উদাহরণ তোমরা দুজন। এবার সময় এসেছে রাজ্যকে তোমাদের প্রেমের স্বীকৃতি দেওয়ার।” — জ্যাসপার গম্ভীর অথচ কোমল কণ্ঠে বললো।
ফিওনা তখন হাততালি দিয়ে উঠলো।
“ইয়েস! অবশেষে এল্ড্রে রাজ্যে একটা বিয়ে যেখানে কেউ কাউকে জোর করে অপহরণ করেনি!” এটা শুনে সবাই হেসে উঠলো। আলবিরা হেসে ফিওনাকে জড়িয়ে ধরল।
অ্যাকুয়ারা হাত মুঠো করে থারিনিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল, “এবার মনে হয় আমি আমার রান্নার প্রতিভা কাজে লাগাতে পারি… বিয়ের কেকটা আমি বানাবো!”
জ্যাসপার আচমকা থামলো। চারপাশ নিস্তব্ধ। রাজসভায় থাকা শত ড্রাগন সদস্য, সৈনিক, অতিথিরা নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। তারপর ধীরে ধীরে সে হাত তুলে সামনের এক সোনালী প্রাচীরের দিকে ইশারা করলো।
এক মুহূর্তে সেই প্রাচীরের একাংশ সরে গেলো—একটা বিশাল স্ফটিক দরজা নিজে নিজেই খুলে গেলো, যেন জাদুতে বাঁধা। ভেতর থেকে ধীরে ধীরে সরে গেলো ভারী এক রক্তিম পর্দা।
তারপরই ভেসে উঠলো রাজকীয় ভাষায় লেখা এক বিশাল ব্যানার— “Royal Union of Dragon Council Member Albira & General Tharinias”
সোনালী অক্ষরে ঝিলমিল করছে পুরো প্রাসাদ। হলঘরে তখন সুর বাজছে মৃদু—ড্রাগনের বাঁশির ধ্বনি যেন ভালোবাসার আবেশ ছড়াচ্ছে।
আলবিরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। চোখে জল জমে উঠেছে। কাঁপা গলায় সে বললো “প্রিন্স… এটা… আমাদের জন্য…?”
থারিনিয়াস প্রথমে কিছু বলতে পারলো না, এরপর দৃঢ় কণ্ঠে বললো,”আমি কোনো দিন ভাবিনি এমন সম্মান পাবো। এলড্র রাজ্যে একজন সৈনিক হিসেবে এসেছিলাম, আজ… ভালোবাসার স্বীকৃতি পেতে চলেছি।”
ফিওনা তখন খুশিতে হেসে উঠে হাততালি দিলো।
লিউ ঝান ফিসফিস করে অ্যাকুয়ারার কানে বললো,
“ভেনাসের বাতাস আজ শুধু প্রেমের ঘ্রানে ভরে উঠেছে।”
রাজা ড্রাকোনিস দূর থেকে তাকিয়ে রইলো, চোখে এক অদ্ভুত স্মৃতি—অবর্ণনীয় এক অতীতের চাপা যন্ত্রণার ছায়া। কিন্তু আজ সে দিন নয়, আজ উৎসবের দিন।
জ্যাসপার সামনে এসে বললো, “এলড্র রাজ্যের ইতিহাসে অনেক যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু এই প্রথমবার দুই সাহসী প্রাণ একত্রে রাজসভায় তাদের ভালোবাসা নিয়ে আসছে। আগামীকাল আমরা উদযাপন করবো তাদের রাজকীয় মিলন।” চারদিকে তখন করতালি, সুর, এবং রঙিন আলোয় মুখরিত হয়ে উঠলো ভেনাস রাজ্য।
সবাই যার যার স্থানে ফিরে গেছে। রাজসভা এখন নির্জন। রাজকীয় আলোকসজ্জা নিভে এসেছে অনেকটাই, শুধু মাঝখানের স্ফটিক ঝাড়বাতিতে কিছু নরম আলো ঝিলমিল করছে।
ফিওনা, আলবিরা, থারিনিয়াস—সবাই চলে গেছে। তখন ধীরে পায়ে জ্যাসপার এগিয়ে এলো তার বাবার কাছে। রাজা ড্রাকোনিস সিংহাসনে বসে দূরে তাকিয়ে ছিলেন, যেন চাঁদের দিকে কিছু খুঁজছিলেন।
“ড্রাকোনিস,”—জ্যাসপার নরম স্বরে বলল, “এথিরিয়ন কোথায়? আজকের এই আনন্দের দিনে ওকে দেখলাম না যে।” ড্রাকোনিস ধীরে মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন ছেলের দিকে। তার চোখে যেন এক অজানা ভার। তারপর খুব সহজভাবে বললেন, “সে বেরিয়ে গেছে। এখন রাজ্যে নেই।”
জ্যাসপার চমকে উঠে সামনে এগিয়ে গেলো, “কোথায় চলে গেছে ? আর এমন হঠাৎ করে? আমাকে আগে কেনো জানালেন না ?”
রাজা এবার গভীর স্বরে, কিছুটা কঠিন মুখভঙ্গিতে বললেন, “কারণ বলার মতো নয়, জ্যাসপার। ওকে… ভার্সিটি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ভার্সিটির প্রফেসরের গায়ে হাত তুলেছে।”
জ্যাসপারের মুখ অন্ধকার হয়ে গেল।“এথিরিয়ন এমন কিছু কেনো করলো? সে তো সবসময় শান্ত ছিলো… কিন্তু কেনো? ও এখন কোথায়?” ড্রাকোনিস চোখ নামিয়ে বললেন, “বলতে পারি না। ও নিজে চেয়েছে সবাই যেন কিছুদিন ওকে খুঁজে না পায়। নিজেকে প্রমাণ না করা পর্যন্ত সে ফিরে আসবে না।”
কিন্তু জ্যাসপার… তার চোখে তখন আগুন। গম্ভীর অথচ কঠিনভাবে বললো, “ওই একাডেমিতে আমি নিজে যাচ্ছি। কেউ আমার ভাইকে এভাবে তুচ্ছ করতে পারে না।”
জ্যাসপার তখনই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে স্টেলার একাডেমির দিকে। গাড়ি এসে থামলো ভার্সিটির সামনে। স্টেলার একাডেমির বিশাল মিনার গর্জে উঠলো জ্যাসপারের আগমনে। প্রধান গার্ডরা ভয়ে থমকে যায়।
স্টেলাস একাডেমির প্রধান চেম্বারে এখন উত্তপ্ত পরিবেশ। জ্যাসপার সামনের টেবিলে দাঁড়িয়ে, চোখে আগুন, কণ্ঠে রুদ্ধধ্বনি।
অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল বললেন, “এথিরিয়ন একজন প্রফেসরকে আঘাত করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, আমরা তাকে সাসপেন্ড করেছি।”
জ্যাসপার ঠাণ্ডা গলায় বলল, “কারনটা বলুন।”
প্রিন্সিপাল কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তখনই পেছন থেকে এক ছাত্র বলল, “সিলভা নামের এক ছাত্রীকে ওই প্রফেসর ভুলভাবে স্পর্শ করছিল। তখনই এথিরিয়ন রেগে প্রফেসরের গায়ে হাত তুলেছে কিন্তু কেউ বিশ্বাস করছেনা।”
আরেকজন বলল, “হ্যাঁ, প্রিন্স! স্যারের দোষ ছিল। আমরা সাক্ষী দিতে রাজি।”
জ্যাসপার ধীরে ধীরে মাথা নিচু করলো, চোখ বুজে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিলো। তারপর সে সামনে তাকিয়ে বলল,
“আমার ভাই তো কেবল গায়ে হাত দিয়ে থেমে গেছে—তাহলে সে অত্যন্ত সংযম দেখিয়েছে। আমি হলে, ওখানেই মেরে ফেলতাম একবারের জন্য।”
পুরো হল নিস্তব্ধ। কেউ একটাও শব্দ করলো না।
জ্যাসপার কড়া গলায় যোগ করল, “একজন শিক্ষকের হাতে যদি একটা মেয়ে নিরাপদ না থাকে, তাহলে সেই একাডেমি নিজের মান হারায়। আজ যদি তার জায়গায় আমার ফিওনা থাকত আমি কি করতাম তা ধারনার বাইরে আপনাদের?”
প্রিন্সিপাল থতমত খেয়ে বললেন, “আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।” জ্যাসপার রীতিমতো গর্জে উঠল,
“তদন্ত নয়—আপনি এখনই সেই প্রফেসরকে বরখাস্ত করবেন, আর আমার ভাইকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনবেন। এটা রাজ আদেশ আমার।”
এক দণ্ড চুপ থাকার পর, শেষমেশ প্রিন্সিপাল মাথা নিচু করে সম্মতি জানালেন। তারপর রাজকীয় ভঙ্গিতে করিডোর দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেলো জ্যাসপার। ভার্সিটির প্রত্যকটা মেয়ে হা করে তাকিয়েছিলো। প্রিন্স সহজে ভার্সিটিতে পা রাখেন না বিশেষ কারন ছাড়া আর যখন পা রাখেন সবার ভেতরছ অস্থিরতা কাজ করে বিশেষ করে মেয়েদের তবে ড্রাগন নারীরা নিজেদের আকর্ষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
দুপুরে প্রাসাদের বেদি ঘরে বসে আছে জ্যাসপার। একদিকে আলবিরা আর থারিনিয়াস চুপচাপ, ফিওনা ওর পাশে বসে। এথিরিয়ন এখনো ফেরেনি।
জ্যাসপারের চোখে অস্থিরতা—তবু মুখে দৃঢ়তা।
সে গভীর কণ্ঠে বলে, “এল্ড্র রাজ্যের সব সীমান্তে নজরদারি বাড়াও। এথিরিয়ন কোথায় গেছে ওকে খুঁজে বের করতেই হবে যেভাবেই হোক।”
একজন রক্ষী কাছে এসে মাথা নিচু করে বলল, “প্রিন্স, যদি এথিরিয়ন নিজেই লুকিয়ে থাকে…?”
জ্যাসপার তখন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। তার চোখ দুটো যেন রক্তে রাঙা। “আমার ভাই যদি নিজের ইচ্ছায় হারিয়ে যায়, তাহলে আমি পুরো এল্ড্র ঝাঁকিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনবো। তার অভিমান ভাঙানো আমার দায়িত্ব।”
তারপর সে সামনে তাকিয়ে বলল,” কালকের মধ্যেই এথিরিয়নের সন্ধান চাই। প্রয়োজনে স্টার হান্টার স্কোয়াডকে এক্টিভ করো। ওর যেন একটা আঁচড়ও না লাগে।”
সবার মাঝে হঠাৎ নীরবতা। এরপর শুরু হয় খোঁজার পালা।
জ্যাসপার ফিওনার হাত চেপে ধরে, তার কণ্ঠে কেবল একটা ফিসফিস “আমার ভাই হারিয়ে গেছে, হামিংবার্ড! রাগ করছ চলে গেছে কোথায় কে জানে।”
বিকেল। এলড্র রাজ্যের সূর্য তখন একটু নিচু হয়ে এসেছে। গোলাপি আলো ছড়িয়ে পড়ছে রাজপ্রাসাদের বারান্দায় জ্যাসপার আস্তে করে ফিওনার চোখে একটা কালো স্যাটিনের ফিতা বেঁধে বললো, “চলো হামিংবার্ড, আজকে তোমার জন্য কিছু পাগলামি করেছি।” ফিওনার চোখ বেঁধে রাখা অবস্থায় জ্যাসপার ওকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
একটা নরম, নীল রঙের সিল্কের স্কার্ফ দিয়ে। গাড়ি থামে এক রহস্যময় জায়গায়। ফিওনা তখন অবাক হয়ে বলে “প্রিন্স, তুমি আবার কিছু কিনে ফেলেছো না তো?”
জ্যাসপার হেসে বললো “তোমার হাসি কেনার মতো না। তবে হাসিটা যতক্ষণ থাকে, আমি সব বানাতে রাজি।”
ফিওনা হেসে বললো “আবার কি করেছো প্রিন্স? চোখ বেঁধে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?” জ্যাসপার তখন বললো “বহুত খরচ হয়েছে, এখন যদি তোমার ভালো না লাগে, তাহলে পুরো এল্ড্র ধ্বংস করে দিব।”
জ্যাসপার ফিওনাকে নিয়ে এসে দাঁড় করায় একটা বিশাল ভবনের সামনে। চোখ খুলতেই ফিওনার চোখ কুঁচকে যায় রোশনিতে। তার সামনে একটা বিশাল গ্লাস-ডোম, যার ওপরে হোলো প্রজেকশনে ঘুরছে রঙিন ড্রাগন, ফায়ার রিংস আর ‘ELDR REALITY PARK’ নামটা জ্বলজ্বল করছে।
ফিওনা স্তব্ধ। সে চারপাশে তাকায়। নিচে বিশাল ৬ একর জমি জুড়ে আধুনিক, স্পেস-থিমড গেমজোন। অ্যানিমেটেড এলিয়েন, মহাকাশযান, পানির নিচের রাজ্য, রিয়েল টাইম ভার্চুয়াল ফাইটিং এরেনা—সবই এখানে!
Eldr Reality Park এর হাইলাইটস…..
Dragon VR Zone: 360° ড্রাগন-রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স। মনে হবে আসলেই একজন ড্রাগনের পিঠে বসে উড়ে যাচ্ছে ইউজার।
Underworld Escape Tunnel: এক কিমি লম্বা ভার্চুয়াল টানেল—অন্ধকার, আলো, সাউন্ড, হাওয়া সব কিছু এত রিয়েল যে হার্টবিট বেড়ে যায়। ফিওনা চিৎকার করে বলে, “আমি পড়ে যাচ্ছি!”
Starlight Combat Arena: মাল্টিপ্লেয়ার ফাইটিং এরেনা, যেখানে নিজের অবতার বানিয়ে লড়াই করতে হয়। ফিওনা দেখে তার অবতার ঠিক তার মত দেখতে—চুল, গলার মালা, চোখের রঙ পর্যন্ত এক!
Venus Cafe 9D: কফিশপ যেখানে কফির কাপ ঘোরে, ফ্লেভার বদলায় আর প্রতিটি কাপে নতুন চমক—জ্যাসপার আগেই বলে, “তোমার প্রেগনেন্সির কথা মাথায় রেখেই কফি বানিয়েছি।”
BabyZone Galaxy: গেমজোনে সবচেয়ে সুন্দর এক অংশ—একটি বাচ্চাদের জোন, যেখানে “Coming Soon: Hummingbird Jr.” লেখা। ফিওনার চোখে পানি চলে আসে।
ফিওনা হাসিমুখে বললো “আচ্ছা প্রিন্স, তুমি যে এত দামি জিনিস বানালে—সেইটাতে আমি খেলতেই পারবো না?”
জ্যাসপার তখন বললো “পারবে, হামিংবার্ড। তবে শুধুই আমার বেছে দেয়া গেমগুলো। তুমি এখন শুধু গেমের কুইন, অ্যাকশন হিরোইন না।”
‘Venus Painting Battle’ একটা বিশাল ভার্চুয়াল ক্যানভাসে, দুইজন আলাদাভাবে পেইন্ট করে আর AI বিচার করে কারটা সুন্দর। ফিওনা একদিকে তার প্রিয় চাঁদ-রাত আঁকে,জ্যাসপার অন্যদিকে ড্রাগনের ডানা মেলে দেয় এক সূর্যাস্তের মাঝে। শেষে জ্যাসপার হেরে যায়।
‘Guess the Emotion’ একটা স্পেস-রুমে দাঁড়িয়ে থেকে একে অপরের মুখে এক্সপ্রেশন দেয়—অবাক, রেগে যাওয়া, খুশি, দুষ্টু—আর সামনের স্ক্রিনে AI চিহ্নিত করে কে কেমন অভিনয় করলো।
ফিওনা হেসে বলে “তুমি তো হিংসুটে মুখ দিতেই পারছো না প্রিন্স!” জ্যাসপার রাগের অভিনয়ে করে বলে “তোমার সাথে কেউ বেশি কথা বললে, তখন এই মুখের এক্সপ্রেশন হয়।”
‘Hummingbird Nesting Puzzle’ এইটা ছিল ফিওনার প্রেগনেন্সির জন্য বানানো স্পেশাল গেম। যখন ফিওনা পাজল রাখে, স্ক্রিনে ভেসে ওঠে:“Welcome, Little Star!”
এই গেইমে একটা ভার্চুয়াল নেস্ট বানাতে হয়—ডিম রাখা যায়, পাখি উড়ে আসে, গান বাজে। যখন ফিওনা ডিম রাখে, তখন পুরো গেমজোনে বাজে একটি কিউট সাউন্ড: “Baby Mode Activated.”
ফিওনার চোখ ভিজে যায়। “তুমি আগে থেকেই এসব ভেবে রেখেছিলে, প্রিন্স?”
জ্যাসপার হালকা গম্ভীর গলায় বলে “তুমি আমার সবকিছু। তোমার আর আমাদের বেবির জন্য কিছু না করাটা অন্যায় হতো।”
‘Couple Karaoke Booth’ এইবার ওরা ঢোকে সাউন্ডপ্রুফ স্টুডিওয়, যেখানে ৩৬০° স্ক্রিনে গ্যালাক্সির ভিউ, আর গান চালু হয়: “You are my Universe…”
ফিওনা গান গায়, আর জ্যাসপার একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। গান শেষে কানের পাশে ফিসফিসিয়ে বলে,
“তুমি এতো সুন্দর গান গাও,আমি শুনতে শুনতে সারাজীবন পার করে দিতে পারবো।”
‘Venus Mood Quiz’AI ফিওনাকে নানা প্রশ্ন করে—
“তুমি কার সাথে জীবনের শেষ ডিনার করবে?”
“তুমি কাকে না দেখে একদিনও থাকতে পারবে না?”
সব উত্তরেই ফিওনা বলে— “ প্রিন্স”
শেষে স্ক্রিনে ওঠে: “Certified: Venus Queen.”
শেষে, জ্যাসপার চুপচাপ একটা বাক্স এগিয়ে দেয়—
একটা “বেবি ড্রাগন মিউজিকাল ঘড়ি”। ঘুরালে মিউজিক বাজে, আর ছোট্ট আলো জ্বলে। জ্যাসপার ফিসফিসিয়ে বলে: “তোমার কোলের জন্য অপেক্ষা করছে নতুন এক রাজত্ব।”
সন্ধ্যা ৭টা। গেমজোনের এক কোণে কাঁচের দেওয়াল ঘেরা স্পেশাল কিউবিক স্পেস। কিউবের মাথার ওপর তারারা ঝুলছে—আলো জ্বলছে নরম নীল আর গোলাপি আলোয়। তারার নিচে একটি ছোট্ট ডিনার টেবিল, সাদা সিল্ক টেবিল ক্লথ, মাঝখানে গোলাপ, আর পাশে দাঁড়ানো দুজন ড্রাগন-কেশওয়ালা সার্ভার।
জ্যাসপার ফিওনার চেয়ার টেনে দেয়, নিজে বসে বলে—
“আজকের ডিনার তোমার জন্য, আমাদের ছোট্ট অতিথির জন্য, আর আমার জন্য, যে তোমাকে পেয়েছে।”
ডিনার মেনু:Starry Soup – ভেনাসের ফেমাস স্টার-ডাস্ট মাশরুম দিয়ে তৈরি স্যুপ। উপরে ঝিলমিল করা খাবারযোগ্য সোনা ছিটানো।
Dragonleaf Salad – ক্রিসপি পাতা, কারামেলাইজড বাদাম, বেবি টমেটো আর ফ্রুট জেলির মিশ্রণ, উপর দিয়ে মধুর ড্রেসিং।
Moon-Glazed Chicken – হালকা মশলার গ্লেজ দিয়ে রান্না করা চিকেন পিস, তারার আকারে কাটা পটেটো আর প্যাস্টেল রাইস কিউবের সাথে।
Venus Veggie Stew – প্রেগন্যান্সির উপযোগী স্যামন-ফ্রি স্পেশাল হট পট, যাতে ফিওনার জন্য পুষ্টি ও স্বাদ একসাথে।
Dessert:Pink Galaxy Cake – চকোলেট ভিতরে, বাইরে গোলাপি ফ্রস্টিং, এক কামড়েই মুখে গলে যায়।
Strawberry Milky Orbit – স্ট্রবেরি মিল্কশেকের উপর ভ্যানিলা মেঘের মত ফোম।
Drinks: Starlight Juice – জেসমিন-ফ্লেভার্ড হালকা ঝিলমিল পানীয়। Pregnancy-safe Venus Tea – রোজ ও হানি মিক্স, গরম গরম ভেষজ চা।
ডিনার চলাকালিন জ্যাসপার বললো “এতোদিনে যা যা খরচ করেছি, কিন্তু সব কিছুর চেয়েও দামি তোমার একফোঁটা হাসি হামিংবার্ড।”
ফিওনা তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে বললো “তোমার চোখের মনি আমার পুরো গ্যালাক্সি।”
আকাশে হঠাৎ আতশবাজির মতো একরাশ তারা জ্বলে ওঠে—“F+J+Baby = Forever”
শেষে ফিওনা একটু হেসে বলে,“আমার খিদে তো শেষ, কিন্তু তোমার ভালোবাসা কখনো শেষ হবে না বুঝি?”
জ্যাসপার চোখে চোখ রাখে—“হয়তো আমিই শেষ ড্রাগন, যার ভালোবাসা অফুরন্ত।
সকাল ৭টা। এলড্র রাজ্যের হাই প্যালেসে সাজ সাজ রব। পুরো প্যালেসের ছাদজুড়ে ঝুলছে নীল-সাদা আর সোনালি ব্যানার। ভেনাসের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে অতিথিরা আসছে—রাজকুমারী, বিজ্ঞানী, যোদ্ধা, কবি, ড্রাগন শ্রেণির অতিথি—সবার মুখে একটাই উচ্ছ্বাস: “আজ থারিনিয়াস আর আলবিরার বিয়ে!”
ফিওনা গোলাপি-সোনালি চায়না কটন আর ভেনাস ফ্যাব্রিক মেশানো মাটিতে ছোঁয়া লেহেঙ্গা পরেছে, পেটটায় হালকা হালকা হাত বুলিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
জ্যাসপার পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে বলে “আজ ওদের বিয়ে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আজ আবার আমাদের বিয়ে আর তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি প্রতিদিন।”
ফিওনা হেসে বলে, “তুমি যদি এমন বলো, তাহলে তো আমি রোজ বিয়েতে যেতে চাই।
বিয়ের ঠিক আধ ঘণ্টা আগে সবাই অপেক্ষা করছে ফিওনার মা, মামা আর সিলভার জন্য। কিন্তু দরজায় কোনো সঙ্কেত নেই। ফিওনা একটু চুপচাপ হয়ে পড়ে। অ্যাকুয়ারা ওর কানে কানে বলে, “ওনারা আসবেই। হয়তো একটু দেরি হচ্ছে।”
বিয়ের স্থান: Crystal Flame Courtyard…..
সাদা মার্বেলের বেদি। চারপাশে পান্না রঙের পাতার সাজ, মাঝে বিশাল এক লাল-হলুদ আগুনের প্রতীক জ্বলছে—যেটা প্রতীক থারিনিয়াসের ‘ফায়ার-ভিত্তিক’ ড্রাগন জাতের।
ব্রাইড এন্ট্রির সময় পুরো প্যালেস সুর বাজায়—
“Albira of Light, Bride of Fire.” থারিনিয়াস দাঁড়িয়ে, সোনার বর্মে, চোখে অশ্রু। আলবিরা ধীরে ধীরে আসে। সবাই দাঁড়িয়ে যায়। আকাশ থেকে রঙিন পাতার ঝরনার মতো আলোর ফোয়ারা পড়ছে।
বিয়ের ঠিক শুরু হবার আধঘণ্টা আগে, Crystal Flame Courtyard-এর বাইরে হঠাৎ হালকা গর্জনের শব্দ হয়। সবাই অবাক হয়ে তাকায়।একটা কালো গাড়ি এসে থামে আর সেই গাড়ি থেকে, ধীরে ধীরে নেমে আসে একজন।
এথিরিয়ন ফিরেছে। ওর মুখ থমথমে। চোখ লাল। জামাকাপড় ধুলোয় ভরা। ক্লান্ত কিন্তু অভিমানে ঠাসা মুখ।
সবাই থেমে যায়। ফিওনা তাকিয়ে আছে, থারিনিয়াস এক পা এগোতে যাবে কিন্তু জ্যাসপার হাত তুলে ওকে থামিয়ে নিজেই এগিয়ে যায়।
জ্যাসপার ধীরে জিজ্ঞেস করে— “কোথায় ছিলে এতদিন?”
এথিরিয়ন কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ ফেটে পড়ে—“কেনো জ্যাসু ভাইয়া, কেনো?!সব কিছু তুমি একাই পেলে!টাকা, সম্মান, শক্তি, আত্মমর্যাদা, এমনকি… বাবা!তাকেও তো তুমি বেশি পেয়েছো!আমার দিকে কখনো তাকানোও হয়নি ওনার! তুমি একটা ভুল করলেও সেটা ‘ভবিষ্যতের রাজা’র ভুল, আর আমি কিছু বললেই… শাস্তি!”
জ্যাসপারের মুখ গম্ভীর। আশপাশে সবাই স্তব্ধ। বাতাসেও যেন থমথমে উত্তেজনা। জ্যাসপার ধীরে কাছে গিয়ে বলে—“তুই আমার ভাই, রিয়ন।তোর জায়গা সবসময় আমার পাশে ছিল, আছে, থাকবে।কিন্তু তুই সেই জায়গাটা নিজেই ছেড়ে চলে গেছিস। আমি কিছু পাইনি বিনা পরিশ্রমে।
তোর জায়গাটা তুই বুঝতে পার,সেইটাই আমি চাই।”
এথিরিয়ন একটু কাঁপছে। চোখে জল এসে গেছে, কিন্তু ও নিজেকে শক্ত করে রেখেছে।
এথিরিয়ন ধীরে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে বলে—
“আমাকে কেনো কিছুই দেওয়া হয়নি, জ্যাসু ভাইয়া?
তুমি যা চাও তাই পাও।সবাই তোমাকে ভালোবাসে, সম্মান করে, তোমার সামনে মাথা নোয়ায়। আর আমি? আমি কি শুধু তোমার ছায়া হয়েই বাঁচবো?”
চারপাশের পরিবেশ থমকে যায়। ফিওনার চোখে জল। থারিনিয়াস একটু নড়ে ওঠে, কিন্তু জ্যাসপার থেমে যায় না।
জ্যাসপার ধীরে কিন্তু দৃঢ় গলায় বলে— “তুই ভুল বলছিস এথিরিয়ন। আমি যা পেয়েছি, সেটা আমার রাতদিন পরিশ্রমের ফল। তুই জানিস না, আমি কতটা কষ্ট করে, ঘুমহীন রাত কাটিয়ে এই অবস্থানে এসেছি। কেউ আমাকে কিছু ‘দেয়নি’, আমি নিজে করে নিয়েছি—আমার মেধা, সাহস আর লড়াই দিয়ে। তোর ও সেই সামর্থ্য আছে।তুই এখনো তরুণ, বয়স কম। তোর পথ শুরু হয়নি এখনও।হেঁটে দেখ,পড়বি,আবার উঠে দাঁড়াবে, একদিন আমাকেও ছাড়িয়ে যাবি।”
এথিরিয়ন দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ চুপচাপ। তারপর ধীরে ধীরে জবাব দিলো, গলার কণ্ঠটা কম্পিত, কিন্তু চোখে আগুন। এথিরিয়নের চোখ লাল হয়ে উঠেছ যেন ভিতরে জমে থাকা সমস্ত অন্ধকার আজ ছিঁড়ে ফেলবে—ভাইয়ের নাম, গর্ব, ভালোবাসা—সব কিছুর বিরুদ্ধে।
“তুমি সবকিছু পেলে, আমি শুধু প্রাসাদের অন্ধকার করিডোর!” জ্যাসপার একটাও শব্দ করলো না। নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলো।
“তুমি পেলে বাবার আশীর্বাদ, আমি পেলাম তিরস্কার।” চারপাশ থম মেরে গেলো। কেউ কিছু বলছে না।
জ্যাসপার তবুও কিছু বললো না। ঠোঁট শক্ত করে দাঁড়িয়ে, দুই মুঠো হাত জোর করে শান্ত রাখছে। মুখে একটুও রাগ নেই, শুধু গভীর এক যন্ত্রণা। “তুমি আমার থেকে সব ছিনিয়ে নিয়েছো, এমনকি নিজের ছোট ভাইয়ের সম্মানটুকুও না!” —
ঠিক সেই মুহূর্তে— “এথিরিয়ন! থাম!” — চিৎকার করে এগিয়ে এলো অ্যাকুয়ারা।
সে ছুটে এসে এথিরিয়নের হাত চেপে ধরলো, চোখে রাগ, ভয় আর বেদনার মিশ্র ঝলক। “তুমি কি দেখছো না সে কিছু বলছে না? সে তোমাকে ঘৃণা করে না, ভালোবাসে! এভাবে কী নিজের রক্তকে কথার আঘাত করা যায়?”
এথিরিয়ন শ্বাস নিচ্ছে কাঁপতে কাঁপতে। কাঁধ উঠছে-নামছে। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে সড়ে গেলো একপাশে। এক মুহূর্তের নীরবতা যেন পুরো রাজপ্রাসাদ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো। কেউ কথা বলছে না, শুধু হৃদয়ের আওয়াজ কানে বাজছে সবার।
এথিরিয়ন চোখ সরিয়ে নিলো।হঠাৎ করে ভেনাসের প্রাসাদের সামনে এক যুবক দৌড়ে এসে এথিরিয়নকে খুঁজতে থাকে।
আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৪২
যুবক হাপাতে হাপাতে বললো “এথিরিয়ন! তুই এখানে বসে আছিস? তোর জন্য বড় খবর আছে!”
এথিরিয়ন চমকে উঠলো “কি হয়েছে? তুই এমন দৌড়ে এলি কেনো?”
যুবক “তোর জানার কথা ছিল না, আমি জানি…
কিন্তু সিলভার আজ বিয়ে হয়ে যাচ্ছে…! ফ্লোরাস রাজ্যে আজ ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে তাও আবার ক্যালিক্সের বড় ভাইয়ের সাথে ।”
এথিরিয়নের চোখ হঠাৎ বড় হয়ে যায়। সে আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না—দৌড়ে যায় বাইরের দিকে, চোখমুখ আগুনের মতো জ্বলছে।
ফিওনা হঠাৎ বলে উঠলো “কি হয়েছে? কোথায় যাচ্ছে ও এভাবে?”