আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৪৬

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৪৬
সাবিলা সাবি

আজকের এল্ড্র রাজ্যে এক অভূতপূর্ব সকাল। রাজপ্রাসাদের সুবিশাল উঠানে সবার জমায়েত, ড্রাগন পরিবার, সভ্যগণ, দূর দুরন্তের বিশেষ রাজ্যের রাজারা, বিজ্ঞানী, এমনকি তরুণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাগনরাও উপস্থিত।
আজকের দিনটা শুধু বিদায়ের জন্য নয়—একটি পরিচয়ের প্রকাশের জন্যও।
ভেনাস কিং রাজা ড্রাকোনিস সামনে এসে ঘোষণা করেন “আজ থেকে এল্ড্র রাজ্যের সবাই জেনে রাখুন, আমাদের ড্রাগন সদস্য অ্যাকুয়ারা শুধুমাত্র একজন যুদ্ধজয়ী ড্রাগন নয় সে আমার একমাত্র ভাইয়ের মেয়ে। যে আজকে থেকে প্রায় ২০ বছরি পুর্বে সমাধী হয়েছেন সবাই জানেন সি বিষয়ে আপনারা আর অ্যাকুয়ারা তার সেই সন্তান আমি থাকে পরিচয় গোপন করে নিজের কাছে ভিন্ন পরিচয়ে লালন পালন করেছি। ও আমাদের একমাত্র ভেনাসের প্রিন্স জ্যাসপারের চাচাতো বোন, এল্ড্র রাজ্যের রক্ত সে একজন রাজকুমারী, এল্ড্র রাজকুমারী।”

মাঠজুড়ে গুঞ্জন। অনেকে বিস্ময়ে, অনেকে শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ায়। অ্যাকুয়ারার মুখে কোনো অহংকার নেই, বরং গভীর এক শান্তি বিরাজমান। লিউ ঝান, যার চোখে গভীর ভালোবাসা আর দায়িত্ব, সে অ্যাকুয়ারার পাশে দাঁড়িয়ে।
সবাই যখন বিদায়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, ঠিক তখন জ্যাসপার ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে আসে। তার হাতে চকচকে কালো কাভারের এক ফোল্ডার। সে অ্যাকুয়ারার সামনে এসে সেটা এগিয়ে দেয়।
“পৃথিবীতে আমার যা কিছু আছে প্রপার্টি—তার ত্রিশ শতাংশ আজ থেকে তোমার নামে রইলো আমার তরফ থেকে তোমার জন্য উপহার। তুমি শুধু আমার বোনা নও অ্যাকুয়ারা—তুমি আমার ভরসার একজন সবসময়। তুমি যেমন যুদ্ধ করেছো আমার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, আমি চাই আমার পৃথিবীর অংশও তোমার হোক।”
অ্যাকুয়ারা বাকরুদ্ধ। তার চোখে জল জমে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হঠাৎ, লিউ ঝান সামনে এসে দাঁড়ায়। মুখ গম্ভীর, কণ্ঠ কিছুটা কঠোর। “আমার উডবি ওয়াইফের এসবের প্রয়োজন নেই। আমার যথেষ্ট সম্পদ আছে। ও সারাজীবন আরাম করে বসে খেতে পারবে।”
এক মুহূর্ত নীরবতা।তারপর জ্যাসপারের ঠোঁটের কোণটিতে একটুকরো কঠিন দৃঢ়তা জন্ম নেয়।
“আমি তোকে কিছু দিচ্ছি না,। এটা আমার বোনের একান্ত প্রাপ্য। আমি চাই না ভবিষ্যতে কেউ—কোনো মানুষ বা ড্রাগনআমার বোনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার সাহস করুক। ও যেনো দাঁড়িয়ে গর্ব করে বলতে পারে, ‘আমি ভেনাসের প্রিন্সের রক্ত এবং পৃথিবীর সম্পদের মালিকানা।'”
অ্যাকুয়ারা নত চোখে দাঁড়িয়ে।জ্যাসপার এবার ধীরে লিউর দিকে তাকিয়ে বলে—“আর শোন…” ভবিষ্যতে… কোনো একদিন, যদি কখনো তোর মনে ফিওনার কথা ভেসে আসে,আর কোনো স্মৃতি তোর মনে উঁকি দেয় তাহলে সেদিন যেন তুই আমার বোনকে কষ্ট না দিস। ওর চোখে কোনোদিন পানি না আসে তোর জন্য। যদি আসে তাহলে ফল খুব খারাপ হবে।”

লিউ ঝানের চোখ কিছুটা নরম হয়। সে অ্যাকুয়ারার দিকে এক পা এগিয়ে এসে হাতটা ধরে ফেলে। “তোমার সম্মানের জন্য আমি সবসময় লড়তে প্রস্তুত, অ্যাকু।”
অ্যাকুয়ারা কিছু বলে না। শুধু জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে মাথা নোয়ায় হালকা। অ্যাকুয়ারা এল্ড্র প্রাসাদের উঠানে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে জল নেই, তবুও চোখের কোণে হালকা আলোড়ন। একে একে সবাই তার কাছে এগিয়ে আসে।
প্রথমেই ফিওনা এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। রাজা ড্রাকোনিস মাথায় হাত রাখলো। আলবিরা, থারিনিয়াস, এথিরিয়ন সিলভা সবাি একে একে কাছে আসে।
রাজা ড্রাকোনিস তখন বললো “তুই আমার ছোট্ট ডানা ছিলি, অ্যাকুয়ারা… আজ পূর্ণ ডানায় উড়ে চলবি পৃথিবীর বুকে নতুন জীবনের পথে।

একঝলক বাতাসে অ্যাকুয়ারার সোনালি চুল উড়ে ওঠে।
এরপর একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নেয় সে। কেউ কপালে চুমু দেয়, কেউ শুধু হাত ধরে রাখে অনেকক্ষণ। আজ যেন এল্ড্ররাজ্যে সূর্যটা একটু নরম আলোয় বিদায় জানাচ্ছে আপনজনকে।
শেষে ফিওনার সামনে এসে দাঁড়ায় লিঊ ঝান। তাকে দেখে ফিওনার ঠোঁটে এক হালকা হাসি ফুটে উঠল। ফিওনা সবসময় জানতো লিউ ঝান খুব ভালো একজন মনের ছেলে যার হ্নদয় সবসময়ই শুদ্ধ ছিলো তার সাথে নিয়তি কখনোই খারাপ করতে পারেনা। তাকে তার প্রাপ্যটা নিয়তি ঠিকই দিবে আর তার সেই প্রাপ্যটাই হলো আ্যাকুয়ারা।
লিঊ ঝান ধীরে সামনে এসে বলে, “বেবির খেয়াল রেখো ফিওনা। ওর জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করো… আমার আর অ্যাকুয়ারার আশীর্বাদ থাকলো ওর জন্য।”
ফিওনা মাথা নাড়ে ধীরে, তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে অ্যাকুয়ারার বিদায়ের জন্য।
লিঊ ঝান এবার পেছনে ফিরে অ্যাকুয়ারার দিকে হাত বাড়ায়।অ্যাকুয়ারা সেই হাত ধরে আকাশের দিকে তাকায় একবার, তারপর দুজনেই ড্রাগন রুপ ধরে।
“চলো, পৃথিবীর দিকে…”আকাশের বুকে সোনালি আলো ছড়িয়ে পড়ে ডানার ঝাপটায়। সবাই চেয়ে থাকে সেই দুইটা ডানার মিলনবিন্দুর দিকে।

পরেরদিন…..
ভেনাসের সকালটা হালকা মেঘলা, এল্ড্র রাজ্যের আকাশে সূর্য যেন উঠেছে আজ বিষাদের রঙ মেখে। ফিওনা তখন ঘুমিয়ে, নিঃশব্দ নিঃশ্বাসে ঘুমের ভিতরে লুকিয়ে ব্যথা সামলাচ্ছে।
জ্যাসপার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ দরজায় টোকা।
ড্রাগন মেডিক্যাল গার্ড: “প্রিন্স, ডক্টর আগ্নিস এসেছেন। তিনি আপনাকে ল্যাবে একা ডেকে পাঠিয়েছেন। জরুরি।”
জ্যাসপারের কপাল ভাঁজ পড়ে। সে দেরি না করে সোজা চলে যায় এল্ড্র ল্যাবের দিকে।
এল্ড্র ল্যাবের কনফারেন্স রুমে হোলো-স্ক্রিনে রিপোর্ট ভেসে আছে।ডক্টর আগ্নিস হাতদুটো পিছনে বেঁধে, ধীরে ধীরে হাঁটছেন। জ্যাসপার তখনি উপস্থিত হয় ল্যাবে।
ডক্টর আগ্নিস তখন বলতে শুরু করলো সরাসরি “তোমাকে যা বলবো, তা শুনে তুমি ভেঙে পড়বে প্রিন্স। কিন্তু মিথ্যে বলার সুযোগ নেই আর। রিপোর্ট একদমই পরিষ্কার।”
জ্যাসপার চোখ সরায় না স্ক্রিন থেকে।

ডক্টর আগ্নিসের স্বর ভয়াবহ ঠান্ডা “ফিওনা এখন দুই মাসের গর্ভবতী। বাচ্চার হৃদস্পন্দন স্থিতিশীল। ওর পেটে ছেলে বেবির ভ্রুন রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে ভ্রূণের গঠন নিয়ে।”
জ্যাসপারের ঠোঁট শুকিয়ে আসে। “সরাসরি বলুন।”
ডক্টর আগ্নিস গভীর শ্বাস নিয়ে বলে ওঠেন “ফিওনা অর্ধ-মানবী। আর ড্রাগনের সন্তান গর্ভে থাকলে, প্রথম চার মাস সে থাকে ক্ষুদ্র এক ড্রাগনের রূপে। তার পরে ধীরে ধীরে মানব শরীরে রূপান্তর হয়।
কিন্তু এই পরিবর্তন একজন সম্পূর্ণ ড্রাগন-মাতার শরীর সহ্য করতে পারলেও। ফিওনার শরীর… তা পারবে না।”
এক মুহূর্ত নীরবতা। ডক্টর আগ্নিস ধীরে, মাটির দিকে তাকিয়ে বলেন “যদি বাচ্চাকে জন্ম দিতে দেন, তাহলে ফিওনার মৃ*ত্যুর সম্ভাবনা… আশি শতাংশ। কিন্তু বাচ্চা পুরোপুরি সুস্থ থাকবে।”
জ্যাসপার চুপ। একটুও নড়ে না।

ডক্টর আগ্নিস চোখ তুলে বললেন “আর যদি ফিওনাকে বাঁচাতে চাও, তাহলে এখনই ভ্রূণকে বিশেষ মেডিসিন দিয়ে শেষ করতে হবে। কিন্তু এরপর তার আর কখনো সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা থাকবে না তার।”
এক থমথমে নীরবতা চারপাশে। হোলো-স্ক্রিনে বাচ্চার হৃদস্পন্দনের লাল আলো জ্বলছে।
জ্যাসপার দাঁড়িয়ে, যেন সময় থেমে গেছে। তার কণ্ঠ নরম, কিন্তু ভেতরে আগ্নেয়গিরির মতো দুঃসহ অস্থিরতা বিরাজমান। “আপনি বলছেন… আমার ওয়াইফ, আমার ভালোবাসাকে বাঁচাতে হলে আমার নিজের রক্তকে… শেষ করে দিতে হবে?”

ডক্টর আগ্নিস মাথা নত করেন। “আমি চিকিৎসক, প্রিন্স। সিদ্ধান্ত তোমার… আমি শুধু সত্যি বলেছি।”
ডক্টর আগ্নিস চুপ করে ছিলেন। তার কণ্ঠে ক্লান্তি, চোখে ভারী এক বোঝার ছাপ।
জ্যাসপার ধীরে বলে ওঠলো “কোনো উপায় নেই, ডক্টর? কিছুই না?ফিওনা আর আমার‌ বেবিকে একসাথে বাঁচানোর কোনো পথ নেই?” ডক্টর আগ্নিস এবার ঘুরে দাঁড়ালেন, হাতে তুলে নিলেন একটি স্ফটিক ডিভাইস।
হোলো-গ্রাফে ভেসে উঠল ফিওনার শরীরের ভেতরের তিনটি স্তরের বিবরণ: মানবিক কোষ, মিউটেটেড জিন, এবং ড্রাকোনিক অণু-সংযোজন।

ডক্টর আগ্নিস চোখ নামিয়ে বললেন “ফিওনার মা লিয়ারা ছিলেন শুদ্ধ ড্রাগন, তুমি জানো। কিন্তু তার পিতা ছিলেন একজন মানব।তাই ফিওনার শরীরে দুই বিপরীত সত্ত্বার মিশ্রণ যার ফলে ফিওনা কোনো শুদ্ধ ড্রাগন না সে হাইব্রিড জাতের ড্রাগন‌। তার শরীরে একদিকে আগুনের মতো ড্রাগনের রক্ত, আরেকদিকে মানুষের নরম জৈব গঠন।”
ডক্টর আগ্নিস স্ফটিক টেবিলের উপর এক ডিজিটাল স্কিমা দেখালেন—ফিওনার শরীরের কোষ, যেখানে ড্রাগন জিন সক্রিয় হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে “বাচ্চাটি পুরোপুরি ড্রাগন রক্তের, প্রিন্স।তাই তার ভ্রূণ ধীরে ধীরে ফিওনার শরীরের ভেতর আগুনের কোর তৈরি করছে যা একজন অর্ধমানবীর শরীর ধারণ করতে পারবে না।”
“চতুর্থ মাসে এই বাচ্চা তার নিজস্ব শক্তির বিস্ফোরণ ঘটাবে, যাতে ফিওনার হৃদপিণ্ড বা ফুসফুস ঝলসে যেতে পারে। তার শরীর এই আগুন-ভিত্তিক বাচ্চাকে ধারণ করার জন্য তৈরি হয়নি।”
জ্যাসপারের ঠোঁট শক্ত হয়ে উঠল।

তার হাতে থাকা ধাতব বলটি চেপে ধরলো এমনভাবে যেন সেটা চূর্ণ করে ফেলবে।
“যদি তুমি সন্তানটিকে বাঁচাতে চাও, তবে ফিওনার মৃ*ত্যু ৮০% নিশ্চিত,আর যদি ফিওনাকে বাঁচাতে চাও… তাহলে এই বাচ্চাকে এখনই ‘এলিমিনেট’ করতে হবে, বিশেষ এক ওষুধ দিয়ে। যা ভ্রূণের বিকাশ থামিয়ে দেবে।”
এক মুহূর্তে পুনরায় ল্যাবে নেমে এলো অস্বস্তিকর নীরবতা।
“আর একটা বড় সমস্যা আছে, প্রিন্স। ফিওনার শরীরিক বয়স মাত্র ১৯ আর তার জিনগত বয়স মাত্র ১৬ বছর।ফিওনার বায়োলজিক্যাল ক্লক ধীর হয়ে আছে।“ফলে, তার জরায়ু আর অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত না। একটি ড্রাগনের পূর্ণ শক্তির ভ্রূণ তার দেহে একপ্রকার অন্তঃশত্রুর মতো আচরণ করছে।এই পরিস্থিতিতে গর্ভকাল ৪ মাস পার হলে—তার শরীর আর দাঁড়াতে পারবে না।
জ্যাসপার ধীরে চেয়ারে বসে পড়ে।চোখে চাপা ক্রোধ, কপালে ব্যথা—আর ঠোঁট কামড়ে ধরে ফিসফিস করে বলে “ফিওনাকে আমি মরতে দিতে পারিনা। কিন্তু আমার বাচ্চাকেও আমি মৃত্যু*র মুখে ঠেলে দিতে পারি না।”

রাত ৩টা….
জ্যাসপার একা বসে আছে ল্যাবে। তার সামনে এলিয়েন-কাঁচে মোড়ানো এক জৈবনিক যন্ত্র,
আর তার হাতে এক ছোট্ট কাচের শিশি, যা ধীরে ধীরে পূর্ণ হচ্ছে এক বিষাক্ত রঙহীন তরল দিয়ে।
ওটা সেই ওষুধ…যা তার নিজের সন্তানকে ধ্বংস করবে
যে সন্তান এখনও ফিওনার গর্ভে বেড়ে উঠছে, তাকে কখনো এই জগতে আসতে দেবে না।
জ্যাসপারের হাত কাঁপছে।তার গলায় শব্দ নেই,
কিন্তু চোখে বন্য আগুন।নিজের হাতেই বানানো এক জীবননাশী ওষুধ এই সত্য মেনে নিতে পারছে না সে।
সে নিজের মনেই বলছে— “আমি প্রিন্স, যোদ্ধা, আর
আজ আমি হ*ত্যাকারী… আমার সন্তানের। আমি কীভাবে ফিওনার চোখের দিকে তাকাবো এরপরে?”
তার নিঃশ্বাস ভারী।তার ডান হাতে পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে সেই ইনজেকশন তৈরির ছুঁচ।
হঠাৎ…

ল্যাবের নিস্তব্ধতায় হঠাৎ ভেসে আসে এক শিশুর কান্না।
একটা নিঃশব্দ ল্যাবরেটরিতে,তরল নাইট্রোজেনের গ্যাসের গন্ধে ভরা জেনেটিক ঘরে এই কান্না সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।
জ্যাসপার স্তব্ধ হয়ে গেল।তার চারপাশের বাতাস জমে গেল যেন। তারপর সেই কান্না হঠাৎ রূপ নেয় এক শিশুর হাসিতে একটা অনাগত শিশুর গুঙানি… খিলখিল হাসি… যেন ফিওনার গর্ভেই থেকে তার সন্তান বলছে— “পাপা… আমি এসেছি।আমি তো কেবল শুরু করেছি আমার অস্তিত্ব। আমায় শেষ করে দিওনা…”
জ্যাসপার চিৎকার করে উঠে কানে হাত চেপে ধরে— “থামাও… থামাও এই শব্দ!”
সে এক ঝটকায় পাশের ডেস্কের সব কিছু ছুড়ে ফেলে।বিজ্ঞান যন্ত্র, ল্যাবের গ্লাস, রিপোর্ট,সব ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
তার চোখ ছলছল করে।একটা ড্রাগনের বুক ফেটে যাচ্ছে। তার হাতে আগুন, কিন্তু বুকের ভেতর জমে আছে বরফ।
সে হাঁপাচ্ছে।জ্যাসপার ধীরে ধীরে মেঝেতে বসে পড়ে।

তার হাতের ইনজেকশনটা গড়িয়ে যায় ল্যাবের এক কোণে।
সে ফিসফিস করে বলে—“আমি তোমাকে মারতে পারি না…লিটল প্রিন্স! আমি একজন প্রিন্স হতে পারি, কিন্তু আমি… বাবা… কিন্তু আমার তো উপায় নেই লিটল বেবি, তোমার মাম্মাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি এই মহাবিশ্বের সবকিছুর চাইতেও বেশি,তাকে আমি হারাতে পারবোনা আমার আগে মরতে দিতে পারবোনা, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

ল্যাবের সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। গ্লাস, যন্ত্রপাতি, রিপোর্ট… আর মেঝেতে শুয়ে আছে সেই ইনজেকশন। তাতে রয়েছে সেই বিষ যা তার সন্তানকে শেষ করে দেবে।
জ্যাসপার এখনও হাঁপাচ্ছে।সে ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকায় ফিওনার মেডিকেল স্ক্যান রিপোর্টের দিকে।একটা রঙিন স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে ভ্রূণটির ছোট্ট নড়াচড়া।
এক মুহূর্তে সে ফিসফিস করে বলে—“আমি ওকে মরতে দিতে পারি না…ফিওনা আমার প্রাণ…
আমার সব… আমি ওকে হারাতে পারব না কোনোকিছুরই বিনিময়ে।”
সে উঠে দাঁড়ায়।তার চোখে তখনো অশ্রু জমেছে, কিন্তু এখন সেই চোখে ঝলসে উঠছে এক নতুন সংকল্পের জন্য।

রাত গভীর। এল্ড্র ল্যাবরেটরির ঠান্ডা করিডোর পেরিয়ে,
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনার কক্ষের দরজায় এসে দাঁড়ায়।
তার হাতে ছোট কাঁচের শিশি।ভেতরে সেই মেডিসিন—
যেটা এক মুহূর্তে শেষ করে দিতে পারে তাদের অনাগত সন্তানের অস্তিত্ব।
তার মুখ থমথমে। চোখ ফাঁকা। নিঃশ্বাস ভারী।
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে।চাঁদের আলো জানালা গলে ফিওনার শান্ত মুখের উপর পড়েছে। সে গভীর ঘুমে। নিঃশ্বাস ওঠানামা করছে ধীরে ধীরে।

জ্যাসপার চুপচাপ তার পাশে গিয়ে বসে।তার চোখে হাজারো যুদ্ধ, অগণিত প্রশ্ন। তারপর… সে ধীরে ধীরে ফিওনার পাশে শুয়ে পড়ে।মুখটা ফিওনার পেটের উপর রাখে। দুটো হাত দিয়ে আলতো করে তাকে জড়িয়ে ধরে।
একটা ছোট্ট স্পন্দন। তার কানে ভেসে আসে এক ক্ষীণ কিন্তু জীবন্ত হার্টবিটের শব্দ।
ছোট্ট জীবনটা কথা বলছে যেন—পাপা… আমি আসছি।
জ্যাসপারের চোখ ভিজে যায়।সে ফিসফিস করে বলে,
“তোমার কোনো দোষ নেই…তবু হয়তো আমার হাতেই তোমার জীবন শেষ হবে। আমি কি করবো বলো?”
সারারাত সে কোনো শব্দ করে না।শুধু ফিওনার পেটের উপর মাথা রেখে সন্তানের সেই হৃদস্পন্দন শুনতে থাকে।
একসময় ভোরের সূর্য ওঠে।ঘর ভরে যায় কমলা আলোয়। জ্যাসপার তখনও শুয়ে, চোখে লাল হয়ে আছে, সারারাত একটুও ঘুময়নি। জ্যাসপার নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালো।
ভোরের আলো জানালার পর্দা ছুঁয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছে।
ঘুমের মধ্যেই ফিওনার কপালে এক নরম আলো পড়ে।
সে অর্ধ-ঘুমে চোখ মেলে। হালকা টানটান ব্যথা আছে পেটে, কিন্তু সেটা এখন সয়ে গেছে।কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকে পাশের দিকে খালি।

জ্যাসপার নেই।শোনা যায় বাথরুমে শাওয়ারের শব্দ।
জল পড়ছে অনবরত।
ফিওনা ধীরে ধীরে উঠে বসে। চুলগুলো এলোমেলো।
সে তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। তারপর ধীরে হেঁটে যায় বাথরুমের পাশের আয়নার সামনে।
“আজ ও খুব চুপচাপ কেনো…” — ফিওনা ফিসফিস করে বলে।
এদিকে জ্যাসপার, শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে, মাথা নিচু করে রেখেছে। তার ঠোঁট চেপে ধরা। চোখ বন্ধ।
“নিজের সন্তান… নিজের ভালোবাসা… আমি কীভাবে একটা শেষ করে দিতে পারি…” তার ভিতরে চলছে এক অসম যুদ্ধ।
জল আর কষ্টের ভার একসাথে মিশে যাচ্ছে।
শাওয়ার বন্ধ করে সে ধীরে বের হয়।ততক্ষণে ফিওনা বাথরুমে ঢুকে পড়ে।
জ্যাসপার তখন চুপচাপ কক্ষ থেকে বেরিয়ে নিচে কিচেনে চলে যায়, একটি ট্রেতে করে হালকা নাস্ত নেয়, ফ্রুটস, হালকা কেক আর এক গ্লাস ফ্রেশ অরেঞ্জ জুস।
তার হাতে ছোট্ট কাঁচের শিশি।হাত কাঁপছে তার।
সে নিঃশব্দে শিশির কর্ক খুলে জুসের গ্লাসে ঢেলে দেয় মেডিসিন। এক বিন্দু কণ্ঠে শব্দ নেই।
ফিওনা তখনও বাথরুমে।

জ্যাসপার কিচেন থেকে ফিরে এসে কক্ষে প্রবেশ করে তারপর সেই ট্রেটা বিছানার পাশে রাখে।
একবার জুসের গ্লাসের দিকে তাকায়… তারপর দরজার দিকে।
তার ঠোঁট থেকে চাপা একটা শব্দ বের হয়, “ক্ষমা করো… আমার ছোট্ট হার্টবিট… সারাজীবন এই অপরাধবোধ আর কষ্ট নিয়ে তোমার পাপাকে বেঁচে থাকতে হবে।”
ফিওনা বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে। চুল ভেজা, চোখে ঘুমের রেশ, কিন্তু মুখে এক অদ্ভুত স্থিরতা।
জ্যাসপার তখন বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে।তার ঠোঁটে এক নরম হাসি, “গুড মর্নিং হামিংবার্ড…”
তার কণ্ঠে ছিল পরিচিত কোমলতা,যেন কিছুই হয়নি।
হয়নি কোনো যুদ্ধ, কোনো মেডিসিন… কেবল আজ আরেকটি সকাল সবসময়ইর মতোই।
সে জুসের গ্লাসটা ফিওনার হাতে তুলে দেয়।

ফিওনা নিঃশব্দে হাতে নেয়, ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে বিছানার কিনারায় এসে দাঁড়ায়। তবুও কোনো শব্দ নেই।
এক… দুই… তিন… কয়েক সেকেন্ড বাদেই ফিওনা ছুড়ে মারে জুসের গ্লাস। ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে কাঁচ।
ফ্লোর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কমলা রঙের তরল।
জুসের কিছুটা ছিটকে পড়ে জ্যাসপারের মুখে আর তার সাদা টি শার্টের ডান কাঁধে।
হঠাৎ স্তব্ধতা।জ্যাসপারের চোয়াল শক্ত হয়।
কিন্তু সে কিছু বলে না।তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা সে জন্য সে সবকিছু করতে পারে—
ফিওনা।ফিওনা তখন দু’পা এগিয়ে আসে।
চোখে অগ্নি, ঠোঁট কাঁপছে, পা দুটো উঁচু করে হাত তুলে জ্যাসপারের কলার চেপে ধরে।
“হাউ ডেয়ার ইউ, প্রিন্স?তুমি কী করে পারলে এটা?
আমাদের বেবিকে মারার প্ল্যান করলে তুমি?”
তার চোখের জল গলে পড়ছে গাল বেয়ে।কিন্তু কণ্ঠে আগুন।
সে জ্যাসপারের কাঁধে ইচ্ছেমতো মারতে থাকে।

একটা, দুটো, তিনটে ঘুষি…নখের আঁচড় লেগে যায় জ্যাসপারের গলায়, এক ফালি লাল দাগ…
তবুও জ্যাসপার চুপ।স্তব্ধ। চোখে রাগ নেই, কিন্তু মন কান্নায় ভেঙে পড়েছে। সে শুধু ফিওনার দিকে তাকিয়ে থাকলো—জানে না ভালোবাসায়, অনুশোচনায়,নাকি নিজের অসহায়তায়।
ফিওনার চোখে তখন কেবল অন্ধকার। শরীরটা যেন হঠাৎ ভারি হয়ে এলো, হাঁটু ভেঙে বসে পড়তে যাচ্ছিল সে।
ঠিক তখনই জ্যাসপার তাকে ধরে ফেলে। “ফিওনা!” তার গলায় ভয়, কাঁপন উঠে যায়।
কিন্তু ফিওনা জ্যাসপারের হাত সরিয়ে দেয়।
চোখে কষ্ট,আর ঠোঁটে ঘৃণা ফুটে উঠে। সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে যায় একটু দূরে।
জ্যাসপার পিছন থেকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
তার কণ্ঠটা ধীরে ধীরে ফিওনার কানের কাছে কেঁপে ওঠে,
“প্লিজ,জাস্ট লিসেন টু মি… হামিংবার্ড…”

ফিওনার শরীরটা কাঁপে, কিন্তু সে থেমে যায় না।সে শীতল গলায় বলে, “আমি তোমাকে ঘৃণা করি, প্রিন্স। আমার সন্তানের বাবা হিসেবে ঘৃনা করি।একজন বাবা হয়ে তুমি কীভাবে নিজের সন্তানের মৃত্যুর পরিকল্পনা করতে পারলে এতোটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারলে, তোমার বুক কাপলো না ? যদি আলবিরা সবটা কাল না শুনতো তোমাদের কথা আর‌ যদি আমাকে না বলতো তাহলে আজ আমাদের কতো বড় ক্ষতি হয়ে যেতো।”
তার কণ্ঠ ফেটে যায় কান্নায়। “তুমিই একমাত্র বাবা যে নিজের হাতে নিজের সন্তানকে মারতে চেয়েছিলে।ছি… আমি ভাবতেও পারছি না…”

ফিওনা তখন জ্যাসপারের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু জ্যাসপার তাকে শক্ত করে ধরে রাখে। তার ঠোঁট কাঁপছে, চোখে জল এসে জমে। “আমি চাইনি এটা হোক… আমি কেবল তোমাকে বাঁচাতে চেয়েছি, ফিওনা। আমি জানি না কিভাবে একজন হাজবেন্ড আর একজন বাবা—এই দুই সত্তার মাঝে আটকে গেছি যআমি…আমি কেবল তোমার মুখ দেখতে চেয়েছি প্রতিদিন সকালে…তোমার নিঃশ্বাস শুনতে চেয়েছি প্রতিদিন রাতে আমি—আমি… নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি মনে হচ্ছে…”
ফিওনা ততক্ষণে নিজেকে তীব্রভাবে ছাড়িয়ে ফেলে।সে এক মুহূর্তের জন্য থেমে বলে,“তোমার মুখে আর কিছুই শুনতে চাই না। আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না প্রিন্স। তুমি আমার সন্তানের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছো। আর সে বিশ্বাসঘাতকতা একজন মায়ের কাছে চিরন্তন শাস্তির সমান…”
ফিওনার কান্না আর থামছে না। তার চোখ রক্তবর্ণ হয়ে গেছে, কণ্ঠ কাঁপছে ক্ষোভে, যন্ত্রণায়।সে হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে— “তুমি আমার জীবন নিয়ে খেলা করেছো, প্রিন্স!
এই তোমার ভালোবাসা? নিজের সন্তানকে শেষ করে দেওয়ার ওষুধ তৈরি করো তুমি? তুমি কি জানো গর্ভে একটা প্রাণ মানে কী?”

তার চিৎকারে যেন গোটা কক্ষ কেঁপে ওঠে।জ্যাসপারের মুখ থমথমে।সে জানে—আর কিছু বললে ফিওনা হাইপার হয়ে পড়বে।এই অবস্থায় তার উত্তেজনা হলে… সেটা সন্তানের জন্য ভয়ানক হতে পারে আর তখন ফিওনার ও ক্ষতি হবে।
তাই নিজেকে কষ্ট দিয়ে হলেও সে ধীরে ধীরে ফিওনার দিক থেকে পিছিয়ে যায়।তার চোখে অপার যন্ত্রণা, কিন্তু কণ্ঠে প্রশান্তির ছায়া টেনে এনে সে বলে “তোমাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিয়ে যাচ্ছি…কিন্তু একটা কথা ভুলো না, হামিংবার্ড আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকেই আগে রাখি… সব কিছুর চেয়ে, সব কিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকেই বেছে নিবো,সেটা আমার নিজের প্রানের বিনিময়ে হলেও।।”
সে আর কিছু না বলে ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে যায়। ফিওনা তখনো পেছনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে, সারা শরীর কাঁপছে রাগে।জ্যাসপার দরজার হাতলে হাত রেখে একবার পিছনে তাকায়।তার চোখে বিষাদ ভেসে উঠে।
“আমি দানব নই, ফিওনা… আমি কেবল তোমাকে হারাতে চাই না আর তার জন্য আমাকে যতোই নিষ্ঠুর আর পাষান হতে হোক না‌ কেনো।”
তারপর দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে কক্ষে থেকে বেরিয়ে যায়।
পেছনে পড়ে থাকে নিঃশব্দ কাঁপতে থাকা ফিওনা…আর এক শ্বাসে জমে থাকা বাতাস—যেখানে ভালোবাসা, বিশ্বাসঘাতকতা আর মাতৃত্বের চিৎকার একসাথে ছড়িয়ে আছে।

ভোরের আলো ভেদ করে সূর্য ঠিক মাথার ওপর উঠেছে। এল্ড্র প্রাসাদের সোনালী হলঘরে আজ গাঢ় নিরবতা। চারপাশে বসে আছে রাজ্যের প্রধান উপদেষ্টা, গবেষক ডক্টর আগ্নিস, রাজা ড্রাকোনিস এবং জ্যাসপার।
জ্যাসপার উঠে দাঁড়ায়। কণ্ঠে ক্লান্তি, গলায় প্রচ্ছন্ন হতাশা।
“ফিওনার প্রেগনেন্সির দুই মাস পেরিয়েছে। আর ওর গর্ভে রয়েছে ছেলে ড্রাগন সন্তান। কিন্তু ফিওনা অর্ধ-মানবী। ও একটা হাইব্রিড ড্রাগন। আর আমাদের সন্তান… সে পুরোপুরি ড্রাগন হবে কারন সে জন্মগত শুদ্ধ ড্রাগনের ডিএনএ বহন করছে। ডক্টর আগ্নিস বলেছে—এই সন্তান জন্ম দিতে গেলে ফিওনার মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। আর আমি… আমি চেষ্টা করেছিলাম বেবিটাকে শেষ করে দিতে। কিন্তু ফিওনা জেনে গেছে… এবং সে এখন আমাকে ঘৃণা করছে।”
সবার মুখ থমথমে হয়ে যায়। আগ্নিস নিচু কণ্ঠে মাথা নোয়ায়।

রাজা ড্রাকোনিস ধীরে উঠে দাঁড়ান। তার চোখ দুটো অদ্ভুতভাবে স্থির। তিনি ধীরে ধীরে বলেন “আমি রাজা, আমি বাবা… আমি দাদাও। এই সন্তান শুধুই আমার নাতি না, এ আমাদের ভবিষ্যৎ। পুরো ভেনাসের উত্তরসূরি। কিন্তু আমি একটাই জীবন দু’ভাগে ভাগ করতে চাই না। ফিওনাকে হারানো যাবে না, আর সন্তানকেও না।”
সবার দৃষ্টি চলে যায় তাঁর মুখের দিকে।“আমার প্রস্তাব একটাই।ফিওনাকে… একটি রিসার্চের মাধ্যমে পুরোপুরি ড্রাগনে রূপান্তর করতে হবে।অন্তত এই ৬ মাসের জন্য। যাতে ওর শরীর বাচ্চাটাকে সহ্য করতে পারে।পরে চাইলে আমরা সেই ক্ষমতা তুলে নিতে পারবো।”

জ্যাসপার শ্বাস রোধ করে বসে থাকে। “কিন্তু এমন রিসার্চ কি আদৌ সম্ভব? ফিওনার শরীর তো আধা মানবী, সে তার মা লিয়ারার মতো পুরো ড্রাগন নয়।”
ডক্টর আগ্নিস উঠে দাঁড়ায়, আর বলে “এমন গবেষণা আছে। কিন্তু সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে কখনো ব্যবহার করা হয়নি। রিস্ক প্রচণ্ড। তাই আমি বলিনি এই ব্যাপারে যদি প্রক্রিয়ায় সামান্য ভুল হয়—ফিওনার শরীর পুড়ে যেতে পারে।”

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৪৫

ঘরে আবার নীরবতা। রাজা ড্রাকোনিস সিংহাসনে বসে ধীরে বলেন— “আমি জানি, এটা সহজ সিদ্ধান্ত না।
কিন্তু প্রিন্স! এখন সিদ্ধান্ত তোমার। তুমি চাইলে এই প্রজেক্ট আজই শুরু হবে।”
জ্যাসপার স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার চোখে জল নেই, কিন্তু বুকের ভেতর একটা যুদ্ধ চলছে। ফিওনার জীবনের রিস্ক… নাকি তার সন্তান?

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৪৭