আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫২

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫২
সাবিলা সাবি

যুদ্ধ শেষ।
অবশেষে ফিওনা আর জ্যাসপারের দীর্ঘ সংগ্রামের অবসান ঘটেছে। তারা এখন একত্রে ফিরে এসেছে সেই গ্ৰাম থেকে। তবে এখনও‌ তারা ভেনাসে ফিরে যায়নি কেননা পৃথিবীতে—শেষবারের মতো, একজন প্রিয় অতি আপন মানুষের সাথে দেখা করতে হবে তাকেও বিদায় জানাতে হবে।
বেইজিং শহরের সীমানায়, যেখানে ঠাণ্ডা বাতাসে জ্যোৎস্না নেমে আসে, সেখানেই অবস্থিত ফিওনার গ্ৰান্ডপা চেন শিং-এর বসতভবন।

চেন শিং ফিওনার নানা। ফিওনার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি অনেক কিছু বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখে জল আর কণ্ঠে নীরবতা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তার চুল আজ ধূসর, কাঁধে সময়ের ভার।
ফিওনা চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে। শুধু ক্লান্ত ভালোবাসা আর একটি কথা—” তুমি আমার জন্য অনেক করেছো জীবনে গ্ৰান্ডপা, আমি কোনদিন ও তোমার এই প্রতিদান দিতে পারবোনা, সারাজীবন আমাকে আগলে রেখেছো আজ দেখো তোমার সেই ছোট্ট ফিওনার কোলেও আরেকটা ছোট প্রান এসেছে।”
চেন শিং শিশুটিকে দেখে স্থবির হয়ে যান। সে যেন ফিওনার মতোই, আবার জ্যাসপারের প্রতিচ্ছবিও। চোখের মধ্যে এক অপূর্ব সবুজ-বাদামি ঝলক, ঠোঁটে খয়েরি কোমল রেখা।
চেন শিং শিশুটির মাথায় হাত রাখেন আর হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, ” এই শিশুটি ভবিষ্যতে এক নতুন ইতিহাস গড়বে। আমার আশির্বাদ থাকলো তোমাদের ওপর। সারাজীবন এভাবেই সুখে থাকো তোমারা, আর কোনো বিপদ যেনো তোমাদের ছুঁতে না পারে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দীর্ঘ যাত্রার পর, জ্যাসপার ফিওনা আর তাদের সন্তান সহ ভেনাসে ফেরা মাত্রই এল্ড্র রাজ্যের আকাশ যেন নতুন করে দীপ্তি ছড়াল। জ্যাসপার ফেরার আগেই ইমেইল করে জানিয়ে রেখেছিলো তাই তারা ফেরার সাথেই সাথেই আয়োজন শুরু হয় আগে থেকেই আয়োজনের প্লানিং করা ছিলো।
এল্ড্র রাজ্যজুড়ে বাজতে শুরু করল রৌদ্রস্নাত ধ্বনি, যেন প্রতিটি ফুল, প্রতিটি পাহাড়, প্রতিটি বাতাসও বুঝে গেছে ,নতুন এক জীবন এসেছে, নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছে।
ফিওনা আর জ্যাসপার প্রাসাদের সিংহদ্বার দিয়ে প্রবেশ করতেই, দুই পাশে দাঁড়ানো ড্রাগন সেনারা মাথা নত করে সম্ভাষণ জানায়। আকাশ থেকে রঙিন আলোকরেখা নেমে আসে, আর এক মিষ্টি সুর বাজে রাজসিংহাসনের প্রাঙ্গণে।
সেই মুহূর্তে ফিওনার কোলে থাকে তাদের নবজাত সন্তান— তার চোখ দুটি এক অলৌকিক মিশ্রণে সবুজ আর বাদামির জ্বলজ্বলে আলো ছড়ায়। নাক জ্যাসপারের মতো তীক্ষ্ণ, আর ঠোঁটে লেগে থাকে সেই অনাবিল কোমলতা, যা যেন ফিওনার হৃদয়ের স্পর্শ বয়ে আনে।

প্রাসাদে সাজানো হয় শিশুর স্বাগত অনুষ্ঠান। এটি কেবল এক অভ্যর্থনা নয়, এক মহাযজ্ঞ। রাজকীয় প্রথা আর আধুনিক আভিজাত্যের মিশেলে গড়ে ওঠে এক অনন্য আয়োজন।
প্রবেশপথের দু’পাশে ঝুলিয়ে রাখা হয় সোনালী রেশমি ব্যানার, যেখানে বর্ণময় ক্যালিগ্রাফিতে লেখা— “স্বাগত নতুন উত্তরাধিকারীকে”
মূল সভাকক্ষে বসানো হয় শিশুর জন্য বিশেষভাবে নির্মিত একটি দোলনা, যেটি তৈরি হয়েছে কোহিনুর হিরা,আরো নানা রকম ডায়মন্ড,এমিথিস্ট আর নীলচে টোপাজ পাথরে তৈরি, ড্রাগন-আকারের দোলনার মাথায় খোদাই করা এল্ড্র রাজ্যর প্রতীক।
দোলনার মাথায় সোনার মুকুট খচিত— আর তার পাশে রাখা হয়েছে একটি ছোট রাজমুকুট, যেটি নতুন ছোট্ট প্রিন্সের জন্য তৈরি করেছেন ড্রাকোনিস নিজেই।

আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ ছিলো ‘জ্যোতির্ময় হাঁটার রাস্তা’— একটি লম্বা স্ফটিকপথ, যেটি শিশুকে কোলে নিয়ে ফিওনা আর জ্যাসপার হেঁটে যায় আলোর মাঝে দিয়ে, ঠিক যেমন তারা পেরিয়ে এসেছে অন্ধকার, যুদ্ধ আর মৃ*ত্যু থেকে আশার রাস্তায়।
পাশে বসে থাকা অতিথিরা উঠে দাঁড়ান, মাথা নত করেন। রাজা ড্রাকোনিস, কোমর বাঁধা রাজরূপে, মুখে অশ্রুর রেখা, শিশুর কপালে চুমু খেয়ে বলেন— “আজ এল্ড্র রাজ্য আবার জীবিত হয়েছে।”
রাজসভায় একে একে প্রবেশ করলেন আমন্ত্রিতরা— প্রথমেই এলেন ফিওনার মা লিয়ারা, তাঁর চোখে জল, মুখে হাসি, আর দুই হাতে বহুমূল্য উপহার।

তাঁর পরনে ছিল রূপালি সিল্কের সাঁজ, কানে প্রাচীন ফ্লোরাস রাজ্যের পান্না কুন্ডল।তিনি এগিয়ে এলেন শিশুর কাছে, হালকা করে কোলে তুলে নিলেন। তারপর ফিওনার দিকে তাকিয়ে বললেন— “আজ বুঝি, তুমি কেবল আমার মেয়ে নও… এক রাজ্যের মা হয়ে উঠেছো।”
তিনি শিশুর জন্য এনেছিলেন এক জ্বলজ্বলে সোনার লকেট,যার মধ্যে ছিলো ভেনাসের সবচেয়ে দামি পাথর বসানো।
এরপর প্রবেশ করলেন রাজা জারেন, ফ্লোরাস রাজ্যের শ্রদ্ধেয় শাসক— ফ্লোরাস রাজ্যের রাজা জারেন শিশুকে উপহার দেন একটি প্রাচীন নীলাভ বলয়— যেটি নাকি একসময় ফ্লোরাস রাজ্যের তার গলার অলংকার ছিলো।
সাথে এসেছে অ্যালিসাও সে শিশুকে হাতে তুলে নিয়ে বললো—“ওতো দেখতে একবারে রাজপুত্রের মতোই হয়েছে, কিভাবে তাকিয়ে আছে দেখো মনে হচ্ছে সব বুঝতে পারছেও আমাদের কথা ।”
ডক্টর আগ্নিস তার নিজস্ব উদ্ভাবিত সোনার কৌটোয় রাখেন শিশুর জন্য এক স্নেহের প্রতীক— একটি ছোট লাল আলো, যা শিশুর ঘুম রক্ষা করবে আর তার চেতনায় জ্ঞানের বীজ বপন করবে।
অনুষ্ঠানের শেষে হয় ‘আকাশে নাম লেখানোর’ পর্ব—

ফিওনা শিশুর নাম উচ্চারণ করেন আকাশের দিকে তাকিয়ে, তখনই পুরো রাজ্যের ওপর এক সোনালী অক্ষরে ভেসে ওঠে সেই নাম—’ জ্যাফিওন অরিজিন ‘
এল্ড্র প্রাসাদের টাওয়ার থেকে উড়ে যায় সাদা রেশমের পতাকা, আর সেই পতাকায় লেখা থাকে— “নতুন সূর্যোদয়, নতুন র*ক্ত, এক নতুন রাজত্বের শুরু”।
প্রাসাদজুড়ে তখন গান, ধূপ, আলো আর প্রার্থনার মিশ্র সুর।রান্নাঘরে চলছে ভেনাসের খাবারের অপূর্ব আয়োজন— জলপাই তেল ও পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করা মাছ, তুলসী-রস দিয়ে তৈরি স্যুপ, আর বিশেষ আগুনে বেক করা মিষ্টি।
ফিওনা দাঁড়িয়ে আছে চোখে এক অপূর্ব দীপ্তি নিয়ে।
সে মনে মনে ভাবলো—“আজ যা কিছু পেলাম, তা হয়তো বহু জন্মের ফল। কিন্তু আজকের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি… এই ছোট্ট প্রাণটা।”

সকাল গড়িয়ে মধ্যাহ্ন। এল্ড্র প্রাসাদের রাজকক্ষ আজ কোনো দৈনন্দিন কক্ষ নয়—এ যেন ইতিহাসের পৃষ্ঠায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা কোনো মুহূর্ত।
প্রথমে এগিয়ে আসে থারিনিয়াস। চোখে ক্লান্তির রেখা থাকলেও, মুখে প্রশান্ত হাসি। সে শিশুকে কোলে তুলে নেয় ধীরে ধীরে, যেন ভেঙে না ফেলে এই ছোট্ট বিস্ময়।
“একদিন তুমি ঠিক জানবে কতখানি রক্ত ঝরেছে তোমাকে আগলে রাখার জন্য,” বলল সে নিচু কণ্ঠে।
তার দেয়া উপহার ছিল একজোড়া রত্নখচিত ড্রাগন চেইন—যা শুধু অলঙ্কার নয়, রক্ষাকবচ।
তারপর আসেন সিলভা।চোখে আনন্দ, হাতে এক কাঁচের বোতলে তরল চাঁদের আলো ধরে এনেছেন। “এটা তোমার ঘুমে রাখবে স্নিগ্ধতা, আর চোখে রাখবে স্বপ্ন।”সে শিশুকে বুকের কাছে ধরে রাখে কিছু মুহূর্ত— চোখে এক মাতৃস্নেহের ছায়া, যাকে কোনো নাম দেওয়া যায় না।
এথিরিয়ন আসে আহত শরীরে। সে বলে, “তোমার জন্মের আনন্দে আমার ব্যথাও মধুর হয়ে গেছে ।” সে উপহার দিলো—নিজ হাতে আঁকা একটি চিত্রপট, যেখানে আঁকা ছিল শিশুর ভবিষ্যৎ:ষডানায় ডানায় উড়ে চলা এক যুবরাজ, ভবিষ্যতের রক্ষক।

আলবিরা আসে হাসিমুখে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন প্রকৃতিই রূপ ধরে এসেছে। সে উপহার দেয় এক জোড়া ডায়মন্ড দিয়ে তৈরি জুতো— মৃদু, কোমল, আর প্রতিটি পায়ে দেবে রাজকীয় গর্বের স্পর্শ।
তারপর আসে অ্যাকুয়ারা। সে শিশুর হাতে রাখে একটি কাঁচের রথ। সে বলল, “যেদিন তুমি প্রথম কথা বলবে, সেদিন এই খেলনার ভেতর বেজে উঠবে শব্দ— তোমার প্রথম বাক্য স্মরণ করিয়ে দেবে সবাইকে।”
সবশেষে লিউ ঝান।শিশুকে দেখে চোখ নরম হয়ে আসে।সে উপহার দেয় একটি ক্ষুদ্র তরবারি—খাঁটি গ্রাভাইট দিয়ে তৈরি, যা একদিন তার বয়ঃসন্ধিতে কাজ দেবে প্রতীক হিসেবে।“নিজেকে কখনোই দুর্বল ভাববে না।এই তরবারি তোমার সাহসের ছায়া হবে,” বলে সে মাথায় একটি চুমু রাখে শিশুর।

সবাই একে একে শিশুকে কোলে নেয়, আলতো করে ধরে,চোখে দেখে নিজের আগামীকাল।
আর তখন… জ্যাসপার এগিয়ে আসে। ফিওনার পাশে দাঁড়িয়ে, দুহাতে তুলে নেয় সন্তানকে।
তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। চোখে অদ্ভুত এক কৃতজ্ঞতা—ভেনাসের প্রতি, পৃথিবীর প্রতি, আর ফিওনার প্রতি।
সে ধীরে ধীরে দোলনায় শুইয়ে দেয় ছোট্ট রাজপুত্রকে।
আর তারপরে…হাতে মুকুটটি তোলে— যেটি তৈরি হয়েছে দামি হিরে আর প্লাটিনাম দিয়ে, সাথে দুনিয়ার সবচেয়ে দামি পাথর,যেটি আজ শুধুই দামের নয়— ঐতিহ্য আর দায়িত্বের প্রতীক।
জ্যাসপার শিশুর মাথায় আলতো করে মুকুট পরিয়ে দেয়।সাথে বলে—“এই মুকুট শুধু শক্তির নয়, এই মুকুট ভালোবাসা, ত্যাগ আর ইতিহাসের ধারক।”
আর তখন পুরো কক্ষের মানুষ দাঁড়িয়ে উঠে করতালিতে ভরিয়ে দেয় আকাশ।

রাত গভীর। রাজপ্রাসাদের আলো নিভে এসেছে ধীরে ধীরে,কেবল রাজপুত্রের দোলনায় ছোট্ট নিঃশ্বাসের শব্দ যেন সুরের মতো ভেসে আসে ঘর জুড়ে।
অতিথিরা বিদায় নিয়েছে। ডক্টর আগ্নিস, রাজা জারেন, প্রিন্সেস অ্যালিসা সবাই ফিরে গেছেন নিজ রাজ্যে। শুধু থেকে গেছেন ফিওনার মা লিয়ারা। এমন এক সন্ধ্যা, যা উৎসবের জোয়ার শেষে রেখে যায় নীরবতার ঢেউ।
এমন সময়…
ফিওনা জানতে পারে— ভেনাসে এই ক’দিন যে কঠোর যুদ্ধ চলছিলো, তা কেবল এল্ড্রর পতাকা রক্ষার জন্য ছিলো না।
ছিলো এক প্রবল, ব্যক্তিগত যুদ্ধও— যার উৎস ছিল আরডন।

আরডন, সেই নামটি যেন ঝড় তুলে ফেলে ফিওনার বুকে।আরও ভয়াবহ সত্য— সে আবার ফিরেছে। পুনর্জন্মে এসেছে অর্কন রুপে।
ফিওনার বুকটা যেন মুহূর্তে জমে গেলো।
স্মৃতির অতল থেকে উঠে এলো সেই নিষ্ঠুর কালো অতীত।
একশো বছর আগের ভেনাস। কায়রা তখন মাত্র চার বছরের। তার মায়ের মৃ*ত্যুর পর……
তাকে কেউ বলেছিল, “তোমার মা অজানা অসুখে মারা গেছেন।” কিন্তু কায়রার মন বলেছিল, কিছু ঠিক ছিলো না।
তাদের প্রাসাদে সেই দিন প্রথম পা রাখে এক সাধারণ বংশের ড্রাগন নারী, যার হাত ধরা ছিলো এক দশ বছরের ছেলেটি—আরডন। ফিওনার মনে পড়ে যায় সেই চাহনি— ছোট্ট বয়সে হলেও সেই চোখের শীতল বিদ্বেষ ভোলা যায় না।

আরডন ছোট থেকেই কায়রাকে অপছন্দ করতো, তার উজ্জ্বলতা, তার সম্ভ্রান্ত র*ক্ত, তার ভবিষ্যৎ—সব কিছুই যেন তাকে আহত করতো প্রতিনিয়ত।
কিন্তু হিংসা তখনই বিষ হয়ে ওঠে, যখন রাজা ঘোষণা দেন—”এই রাজ্য, এই সাম্রাজ্য, আমার কন্যা কায়রার নামে উৎসর্গিত হবে।” সেই দিন থেকেই আরডনের হৃদয়ে জন্ম নেয় ষড়যন্ত্র।
সে কেবল কায়রার ভবিষ্যৎ কেড়ে নিতে চায়নি, সে চেয়েছিল তাকে নিশ্ব থেকে মুছে ফেলতে।
ফিওনা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তার চোখে এখন আগুন। “তুমি ফিরেছো, আরডন… এইবারও কি ভেবেছো আমি সেই দুর্বল চার বছরের মেয়ে? তুমি ভেবেছিলে আমাকে মেরে ফেলে তুমি জিতে গেছো, কিন্তু আমি ফিরে এসেছি— আর এবার আমি কেবল কায়রা নই—আমি এল্ড্র রাজ্যের রানী,
এবং আমি আবার তোমার বিচার করবো, আমি তোমাকে শাস্তি দিবো—এ জন্মে।”
চোখে জল ছিল না ফিওনার, ছিলো কেবল র*ক্তমাখা অতীতের শপথ।

রাত গভীর। এল্ড্র প্রাসাদ নিস্তব্ধ।
তবুও, এক কক্ষের দরজা খোলা হয় নিঃশব্দে।
ফিওনা আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়, বাচ্চার পাশে চোখ রাখে শেষবারের মতো, তারপর ধীরে এগিয়ে যায়।
সবার অগোচরে সে পৌঁছে যায় প্রাসাদের পিছনের পুরনো এক গোপন দরজায়। সেই দরজা, যা হয়ত বহু শতাব্দী ধরে খোলা হয়নি। কিন্তু আজ, সেই দরজাই তার প্রতিশোধের পথ। তার চুলে বোনা আগুনরঙা এক ফিতা, কোমরে বাঁধা ছোট অস্ত্রের বেল্ট, আর হৃদয়ে পুঞ্জিভূত এক শতবর্ষের রক্তক্ষরা প্রতিজ্ঞা।
ফিওনা জানে, কোথায় গেলে আরডনকে পাওয়া যাবে।

সে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর তার শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বাদামি আলো। সে রূপান্তরিত হয় নিজের আসল রূপে— এক বাদামি ড্রাগন, যার চোখে জ্বলছে ক্রোধ।
আকাশের বুক চিরে সে উড়ে যায় সে, গন্তব্য:সেই পাহাড়,যেখান থেকে একদিন পড়ে গিয়ে শেষ হয়েছিল তার আগের জন্ম। সেই পাহাড়, যেখান থেকে তাকে ঠেলে দিয়েছিল এক বিশ্বাসঘাতক—তার সৎভাই, আরডন।
পাহাড়ে পৌঁছে সে ডানা মেলে নামে।চারদিক নীরব। বাতাস কাঁপছে। একসময়, সে সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে ওঠে—“আরডন! আমি জানি, তুমি মরোনি!তুমি মরতে পারো না! কারণ তোমার মৃ*ত্যু… আমার হাতেই লেখা—এই জন্মে!”
তার গলা কাঁপছে, কিন্তু চোখ স্থির। একশো বছর আগে, সে ছিল কায়রা। আজ, সে ফিওনা। কিন্তু প্রতিশোধ? সেটা ঠিক আগের মতোই জ্বলন্ত। পাহাড়ে প্রতিধ্বনি ফিরে আসে। নীরবতার মাঝে কিছু একটার গর্জন হয়তো সাড়া দিচ্ছে…

পাহাড়ের পাথুরে মাটিতে দাঁড়িয়ে ফিওনা চোখ মেলে তাকায়।
তাকে অবাক করেনি সেই আগমণ। ছায়া থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে একজন, কালো চুল, র*ক্তমাখা চোখ, ঠোঁটে অদ্ভুত এক হাসি। চোখে হিং*স্র আত্মবিশ্বাস। আরডন—এখন সে অর্কন নামে পরিচিত, এক নতুন মুখ, কিন্তু সেই পুরোনো ছায়া।
সে থামে না।সোজা এসে দাঁড়ায় ফিওনার সামনে।

তার মুখে ঝলকানি হাসি, যেন পুরো মৃ*ত্যুপুরী তার কণ্ঠে।
“উফ… কত বছর হয়ে গেলো… প্রায় একশো বছর, তাই না? অবশেষে আমি আমার প্রিয় বোনটিকে দেখতে পেলাম। আগের জন্মে তুমি ছিলে কায়রা,এই জন্মে তুমি ফিওনা।আবারো রাজকন্যা, আবারো রাজ্য তোমার পায়ের নিচে। কিন্তু একটাই প্রশ্ন—কেন? তুমিও মানবী রুপে ছিলে পৃথিবীতে তাহলে কেন আবার ড্রাগনের রূপে ফিরে এলে ভেনাসে?
তোমার তো ওই পৃথিবীতে থেকে যাওয়ার কথা ছিলো,আর আমি… আমি এবারো কিছুই পেলাম না।আগের জন্মেও আমি ছিলাম শুধু নামেই রাজপুত্র। এবারো আমি পুরো ভেনাসের প্রিন্স হতে পারিনি।”
ফিওনা চুপ।তবে ঠোঁট কঠিনভাবে সোজা।
তারপর ধীরে ধীরে বলে “তুমি ভুল করছো, আরডন।

আগের জন্মেও তুমি কিছু পাওয়ার অধিকারী ছিলে না।
কারণ তুমি ছিলে আমার বাবার রক্তে*র নয়,আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মাত্র। আমার বাবা, ফ্লোরেক্সিয়া রাজ্যের রাজা, তোমাকে গ্রহণ করেছিলো, ভালোবাসায় বুক পেতেছিলো। কিন্তু তুমি? তুমি সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিলে বিশ্বাসঘাতকতা দিয়ে। আমার মাকে বিষ খাইয়ে হ*ত্যা করেছিলো তোমার মা, আর তার পরে… একমাত্র উত্তরাধিকারিণী আমাকেও পাহাড়ে এনে… হত্যা করেছো তুমি।
তুমি জানো, আরডন, আমার মৃ*ত্যু তোমার পরিকল্পনার অংশ ছিলো, কিন্তু নিয়তি তোমার থেকে বড়। আমি মরিনি। আমি ফিরে এসেছি। আর আজ… আমি তোমাকে শেষ করতে এসেছি।”

আরডনের চোখে ক্ষীণ বিস্ময়, তবে তা মুহূর্তেই ঘৃণায় পরিণত হয়।“তুমি জানো না আমি কে হয়েছি, ফিওনা!
আমি এখন অর্কন— শুধু এক রাজ্যের নয়, গোটা ভেনাসের রাজ্যের ছায়া। আমাকে শেষ করা এত সহজ না।”
ফিওনা তীব্রভাবে এগিয়ে আসে। চোখে জ্বলছে আগুন। “তুমি যেই হও না কেন, আজ তোমার রক্ত দিয়ে আমি আমার রাজ্যের ইতিহাস পরিষ্কার করবো। আজ আমি কায়রা নই, আমি সেই মেয়ে, যার চোখের সামনে মা মরেছে,যার র*ক্তে শতাব্দীর প্রতিশোধের আগুন ধীরে ধীরে পুড়েছে। আজ তুমি মরবে, আরডন।আমার হাতে। এই জন্মেই।”
আরডন হাসে।তার চোখে চ্যালেঞ্জ।আকাশের গর্জন যেন এই দুই ভাইবোনের যুদ্ধের দামামা বাজায়।
একপাশে ফিওনা—নিঃশব্দ শক্তি, দায়িত্বের প্রতিচ্ছবি।

অন্যপাশে আরডন—ঘৃণার আগুন, আত্মম্ভরিতার ছায়া।
তলোয়ার বের হয়। আগামী মুহূর্তেই, আগুন আর রক্তে ভেসে যাবে সেই পাহাড়।
পাহাড়ের শীর্ষ। রাত গভীর। শুধু বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে আগুনের ফিসফাস আর হৃদয়ের শ্বাস। ফিওনা আর আরডন একে অপরকে দেখছে, যেন শতাব্দীর জমে থাকা শত্রুতা আজ ফেটে বেরোবে।
আরডন প্রথমে রূপ বদলায়—তার শরীর আগুনে জ্বলে উঠে ড্রাগনের আকৃতি নেয়। গা ধূসর, চোখ রক্তাভ, ডানা ছড়ানো।
ফিওনা তখন চোখ বন্ধ করে।শরীর থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে তার আসল রূপ— বাদামী ড্রাগনের আগুনমাখা শক্তি।

এটা শুধু যুদ্ধ নয়। এটা একটা প্রলয়।দুজনই আকাশে উড়ে যায়, মুখোমুখি।
পাহাড় গর্জে ওঠে ফিওনার প্রথম আঘাতে।তার ডানা ঝাপটায়, বায়ু ছিঁড়ে দেয়। আরডন পাল্টা জবাব দেয় তার জ্বলন্ত নিঃশ্বাসে।
একা আকাশ যেন এদের ওজন টানতে হিমশিম খায়।ফিওনার বাদামী আঁশে আলোর ঝলক, আরডনের ধূসর আঁশে ছায়ার থাবা।কখনো গর্জনে, কখনো থাবায়—
কখনো পাথর ছুঁড়ে, কখনো আগুন বর্ষণ করে—তারা লড়তে থাকে।
শেষে, ফিওনা তার শক্তির সীমা ছাড়িয়ে একটা আকাশভেদী তেজ নিক্ষেপ করে, যা আরডনকে মাটিতে ফেলতে বাধ্য করে।

দুজনই ড্রাগন রূপ থেকে ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় মানবদেহে।ফিওনার হাতে চকচকে তলোয়ার, আরডনের হাতে কালো অস্ত্র—এক গোপন জাদুর খঞ্জর।
তলোয়ার আর খঞ্জর একে অপরের সঙ্গে শব্দ করে ধাক্কা খায়। “তুমি আমার ভাই ছিলে,” ফিওনা বলল, “কিন্তু তুমি সেই পরিচয় মুছে দিয়েছো বহু আগেই।”
আরডন হাঁসে। “তুমি কখনো আমার বোন ছিলে না।
তুমি ছিলে বাধা—আমার রাজ্য পাওয়ার পথে। আজ সেটা শেষ হবে।”
হঠাৎই, ফিওনা পিছনে সরে এসে কোমর থেকে রিভলভার বের করে নেয়। একটি গুলি—সোজা আরডনের হাঁটুতে।
আরডন আর্তনাদ করে পড়ে যায়। “তুমি ভেবেছিলে আমি শুধু দুর্বল রাজকন্যা? ভুলে গেছো, আমি একজন যোদ্ধাও।”
ফিওনার চোখে দহন।

সে এগিয়ে আসে।দড়ি বের করে আরডনের গলায় পেঁচায়।
তারপর টেনে হিচড়ে নিয়ে আসে পাহাড়ের কিনারায়।কান ঘেঁষে বলে “একশ বছর আগে আমার বাবাকে হ*ত্যা করে, আমাকে পাহাড়ে মেরে ফেলেছিলে। আজ সেই পাহাড়েই তুমি মরবে। কিন্তু আমি তোমাকে যন্ত্রণাময় মৃত্যু দেব না— আমি তোমাকে দেব এক ‘শান্তির মৃত্যু’, কারন যদি তুমি আমাকে না মেরে ফেলতে, তাহলে আমার পুনর্জন্ম হতোধা আর তাহলে আমি আমার প্রিন্সকে পেতাম না। এই একটাই কারণে, তুমি আজ তাড়াতাড়ি মরে শান্তি পেলে।”
এরপর ফিওনা তার রিভলবারকা তাক করে তারপর চুপচাপ, ঠান্ডা গলায়—একটি গুলি। আরডনের হৃদপিণ্ড থেমে যায়।

তাকে ঠেলে ফেলে দেয় নিচে— শতবর্ষ আগে যে পাহাড়ে ফিওনার মৃ*ত্যু হয়েছিলো, আজ সেখানেই হলো আরডনের শেষ পরিণতি।
পাহাড়ের কিনারায় এক কঠিন ইতিহাস শেষ করে ফিরে দাঁড়ায় ফিওনা। তার চোখে আগুন নেই আর, শুধু এক ধরণের নিরব ক্লান্তি…হয়তো আত্মার ভিতর থেকে একটা গর্জন থেমে গেছে।
তখনই…এক হালকা বাতাস বইলো। আর সেই বাতাসে ভেসে এলো এক চেনা সুগন্ধ। ফিওনা ঘুরে দাঁড়ায়।
আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাসপার।তার কোলে রয়েছে ছোট্ট সেই প্রাণ, তাদের সন্তান, যার চোখে এখনো ভেনাসের কোনো হিং*স্রতা ছোঁয়নি, যার মুখে শান্তি আর নিস্পাপ কোমলতা।
ফিওনার চোখ ভিজে আসে।সে ছুটে যায়,

পাথুরে মাটি আর ক্ষতবিক্ষত ডানার ক্লান্তি ভুলে গিয়ে
জ্যাসপারের বুকে নিজেকে ছুঁড়ে দেয়। “প্রিন্স… আমি আমাদের শত বছরের শত্রুকে শেষ করে দিয়েছি…আমার ভাই… আরডন… আজ সত্যিই শেষ হয়ে গেছে…”
জ্যাসপার নীরবে তার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।তার চোখে কোনো প্রশ্ন নেই,কোনো অভিযোগ নেই। শুধু গর্ব, ভালোবাসা আর প্রশান্তি।
তার এক হাতে ফিওনার কোমর,অন্য হাতে তাদের সন্তান। সে দুজনকে জড়িয়ে ধরে। “তুমি শুধু আমার রানী নও, ফিওনা… তুমি এই জগতের এক সাহসী নারী। আজ তুমি শুধু নিজেকে নয়—আমাদের ভবিষ্যৎকেও রক্ষা করেছো।”
এক মুহূর্তের জন্য সময় থেমে যায়।শুধু তিনটি হৃদয়—
একটা ধ্বংসের পরে শান্তির খোঁজে, একটা ভালোবাসার নিঃশব্দ কৃতজ্ঞতায়, আর একটা—শুধু ধুকধুক শব্দে জীবনের গান গায়। পেছনে পড়ে থাকে ইতিহাস, পাহাড়ের নিচে গড়িয়ে পড়ে লালচে ধূলা…আর সামনে অপেক্ষা করে—এক নতুন রাজত্ব,এক শান্তির ভোর, এক শাশ্বত ভালোবাসার গল্প।

এক সপ্তাহ কেটে গেছে এল্ড্র রাজ্যে রাজকীয় সেই শিশু অভিষেকের পর। সেই শিশুই এখন গোটা রাজ্যের আলো, আর ফিওনার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
শিশুর জন্য আলাদা একটি কক্ষ সাজানো হচ্ছে— না, শুধু রাজকীয় নয়, মায়ের মনের মতো করে। রাজপ্রাসাদের সেই নির্ধারিত ঘরটি হবে এক রঙিন ভেনাস, যেখানে ছোট্ট রাজপুত্র হাসবে, খেলে বেড়াবে, বড় হবে।
সেই ঘরের দেয়ালে হবে বিশেষ কিছু আঁকা। প্রফেশনাল কেউ নয়, আঁকবে ফিওনা নিজে। কারণ এই কাজের মধ্যে সে খুঁজে পায় এক অনির্বচনীয় শান্তি। সে ঠিক করেছে—তার প্রিয় চরিত্র ডোরেমন হবে এই কক্ষের প্রাণ।
সকালবেলা। সূর্য সদ্য উঠেছে। ফিওনা আজ শিশুটিকে তার মা লিয়ারা আর রাজপ্রাসাদের পরিচর্যাকারীদের কাছে রেখে আসে।

তারপর সে হাতে তুলে নেয় রঙের বাক্স, তুলি, স্কেচ আর ল্যাপটপ। সে পরেছে হালকা রঙের হাফ প্যান্ট আর পাতলা স্লিভলেস গেঞ্জি—আরামদায়ক, যেন আঁকা-বুকার মাঝেও সে যেন এক শিল্পী হয়ে উঠতে পারে।প্রাসাদের দক্ষিণ পাশের ওই কক্ষে ঢুকে, সে প্রথমে ল্যাপটপ খুলে ডিজাইন দেখে নেয়।
ডোরেমন, ডোরেমি, নোবিতা, শিজুকা—সবাই যেন তার সন্তানের সাথেই খেলছে।
তারপরই শুরু হয় ফিওনার নতুন এক যুদ্ধ— তুলি হাতে, রঙে রঙে আঁকা তার ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।
ঘরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে পেইন্টের ঘ্রাণ,আর ফিওনার ঠোঁটে এক প্রশান্তির হাসি।
সে জানে—এই কাজটা সে করছে একজন মা হিসেবে,
একজন রাজকুমারীর চেয়ে বড় পরিচয়।
এই রঙ, এই দেয়াল, এই ঘর—সবই একদিন তার সন্তানকে মনে করিয়ে দেবে তার মা তাকে কতটা ভালোবাসতেন।

গভীর নিরবতা ঘিরে রেখেছে এল্ড্র প্রাসাদের পূর্বাংশ।
সারারাত প্রযুক্তির রাজ্যে ডুবে থাকা জ্যাসপার মাত্রই ফিরে এসেছে ল্যাব থেকে—চোখে ক্লান্তির ছায়া, মনে ফিওনার জন্য একটুখানি প্রশান্তি খোঁজা।
ফিওনাকে নিজের কক্ষে না পেয়ে, সে সোজা যায় সিলভার কাছে। সিলভা হালকা হেসে জানায়, “ফিওনা এখন বেবির জন্য—দেয়ালে রঙ করছে নিজ হাতে।”
জ্যাসপারের মুখে তখন এক ভিন্নরকম উজ্জ্বলতা খেলে যায়। বিনা শব্দে, পায়ে পায়ে সে পৌঁছে যায় সেই ঘরের সামনে। দরজাটি আধখোলা। সে ধীরে ঠেলে ভেতরে ঢোকে।

ভেতরে বাতাসে ছড়িয়ে আছে রঙ আর ভালোবাসার গন্ধ। ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে, ফিওনা ডুবে আছে আঁকায়— তার শরীরে হাফ প্যান্ট আর পাতলা স্লিভলেস গেঞ্জি, চুল এলোমেলো করে বেঁধে রাখা, কাঁধে সামান্য রঙের দাগ আর সাথে গালেও আর চোখে এক অদ্ভুত মায়া, যেন মাতৃত্বের শিল্পী রূপ।
জ্যাসপার থমকে যায়।
তার বুক ধুকপুক করে ওঠে। এই নারী, যে তার সন্তানের মা, তার প্রিয়তমা—এমনভাবে আঁকছে যেন এই দেয়ালটা কোনো রাজ্য নয়, বরং তার সন্তানের প্রথম স্বপ্নের দুনিয়া।
কিছুক্ষণ সে কিছু বলে না। শুধু তাকিয়ে থাকে চুপচাপ।

আর তার চোখে এক অদৃশ্য আগুন—ভালোবাসার, আকর্ষণের, আর হারিয়ে যাবার।
এই মুহূর্তে সে বুঝে যায়— ফিওনা এমন একজন নারী যার প্রতি সে প্রতিটি নিঃশ্বাসেও প্রেমে পড়ে যায় নতুনভাবে।
ফিওনা টেরই পায়নি জ্যাসপার তাকিয়ে আছে।
তবে হঠাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে চোখে চোখ পড়তেই সে চমকে ওঠে। “প্রিন্স তুমি? কখন এলে?”
ফিওনা পুনরায় পেইন্টিং এ মন দেয়, যখন দেয়ালের শেষ প্রান্তে ডোরেমনের কানটা নিখুঁতভাবে আঁকছে, তখন জ্যাসপার ধীরে ধীরে পেছন থেকে তার কোমরে বাহু জড়িয়ে ধরলো।
ফিওনা হালকা চমকে উঠে বলে উঠল, “প্রিন্স! কি করছো ছাড়ো না, কাজ করছি আমি! ডিস্টার্ব করোনা…”
জ্যাসপার ঠোঁটে দুষ্টু এক হাসি নিয়ে তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,“তুমি যখন এমন শর্টস আর সফট গেঞ্জি পড়ে এতো মনোযোগ দিয়ে দেয়ালে পেইন্ট করছো, আমার থেকেও বেশি ফোকাস দিচ্ছো দেয়ালের পেইন্টিং এ তখন আমি কীভাবে ডিস্টার্ব না করে থাকতে পারি বলো তো, হ্যামিংবার্ড?”
ফিওনা লজ্জা মিশ্রিত চোখে তাকায়, “এইটা পড়েছি যাতে রং না লাগে ভালো পোশাকে। কাজের সুবিধার জন্য।”
জ্যাসপার তখন হালকা গম্ভীর স্বরে ফিসফিস করে বলে, “আমিও তো পেইন্ট করতে চাই, তোমার মতোই মন দিয়ে…”

ফিওনা মুখ ঘুরিয়ে একটু হেসে বলে, “তাহলে করো, ওই পাশের দেয়ালটা খালি আছে। যাও, শুরু করো।”
জ্যাসপার তখন ফিওনার কানের কাছে আবার ফিসফিস করে বলে,“দেয়াল নয়, আমি চাই… আমার তুলির আঁচড় পড়ুক তোমার এই সেক্সি শরীরের ক্যানভাসে।”
ফিওনা তার চোখ বড় করে তাকায় জ্যাসপারের দিকে।
ঠোঁটে লুকানো এক মুচকি হাসি, আর গালে ছড়িয়ে পড়া রঙের মতো লালিমা।
ফিওনার আঙুলে তখনও নীল রঙ মাখা, সে আর কিছু না ভেবে পুনরায় মনোযোগে দেয়ালে আঁকছে ছোট্ট ডোরেমনের পায়ের ছাপ। শিশুর জন্য একটি স্বপ্নের ঘর তৈরি হচ্ছে, আর প্রতিটি রেখায় ছড়িয়ে আছে তার ভালোবাসা।

তখন হঠাৎ পেছন থেকে জ্যাসপার ফিওনার কানের লতিতে আলতো করে বাইট দেয়। ফিওনার শরীরে শিহরণ খেলে যায় আর সে অস্থির কন্ঠে বলে “প্রিন্স… দুষ্টুমি করোনা প্লিজ,” ফিওনা একমনে বলে ওঠে, “কাজটা শেষ করতে দাও। দেখো না, আমাদের ছোট্ট বেবির জন্য কক্ষটা সাজাচ্ছি এত যত্ন করে।”
জ্যাসপার থমথমে স্বরে, একটানা চোখ বন্ধ করে বলে “আমি জানি, ফিওনা… জানি তুমি কি করছো। কিন্তু… আমি আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কত মাস হয়ে গেছে বলো তো—
তোমাকে ছুঁইনি, তোমাকে আদর করতে পারিনি… রাতের পর রাত শুধু তোমার পাশে বসে থেকেছি, তোমার ঘুমন্ত মুখে চুমু খেয়ে নিজেকে শান্ত করেছি…”

তার কণ্ঠে তখন ঝরঝর করে পড়ে কিছু দমবন্ধ অনুভব।
ফিওনার রঙমাখা আঙুল থেমে যায়, তার চোখেও জ্বলে ওঠে একটা অচেনা কোমলতা।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে তার কাঁধে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বলে—“তোমার আঁকা দেওয়াল নয়, আমি শুধু চাই…এই কিছুটা মুহূর্ত শুধু আমার হোক, শুধু আমি আর তুমি…”
ফিওনা চোখ নামিয়ে ফেলে, সে কিছু বলে না,
তবে তার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠে। ফিওনা মুখ ফিরিয়ে রাখে, জ্যাসপারের কোনো কথাই শুনতে চায় না। চোখে জেদ আর ঠোঁটে স্পষ্ট অবহেলা। জ্যাসপার গভীরভাবে ফিওনার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে নিজের গায়ের ভারী ওভারকোটটি খুলে ফেলে। তার চোখে এক অদ্ভুত কঠোরতা জেগে ওঠে।
“তুমি শুনছো না, হামিংবার্ড। তাহলে আমাকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তারপর নিজের প্যান্টের বেল্ট খুলে, এক নিঃশব্দ ক্ষণে ফিওনার হাত দুটো পেছনে নিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলে।
“আমি চাইনি এমনটা করতে,” সে নিচু স্বরে বলে। “কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করছো।”
ফিওনার চোখে বিষ্ময় ফুটে ওঠে, কিন্তু কোথাও যেন একটুখানি কাঁপনও দেখা যায়—জ্যাসপারের পুরনো কঠোর রূপ দেখে।

ফিওনার হাত তখনও পেছনে বাঁধা—জ্যাসপারের বেল্টের মাধ্যমে। সে ছটফট করলেও জ্যাসপার যেন একটুও বিচলিত হয়না।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনাকে দেয়ালের সাথে ঠেলে চেপে ধরে। দেয়ালের পাশে রাখা ফিওনার পেইন্টিং-এর তুলিগুলো নজরে পড়ে যায় তার। একটিকে তুলে নেয়।
সে তুলি-ভর্তি রং নিয়ে ফিওনার গালের একপাশ বেয়ে গলায় নামিয়ে আনে। একটা ঠান্ডা, ভেজা স্পর্শে ফিওনার শ্বাস কেঁপে ওঠে। তার চোখে বিস্ময়।
জ্যাসপার নিচু গলায় বলে “আজ আমার লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ.. হবে এই ওয়াল পেইন্ট।”
সে নিজের আঙুলে পেইন্ট মেখে ফিওনার হাতের উপর বুলিয়ে দেয়—আলতো করে কিন্তু নিয়ন্ত্রণে। যেন এক শিল্পী তার ক্যানভাসে আঙুলের ছোঁয়ায় গল্প লিখছে।
ফিওনা কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। তার চোখে এক অজানা অনুভবের ছায়া খেলে যায়—ভয়, বিস্ময় আর এক টুকরো দুর্বোধ্য আকর্ষণ।

ফিওনার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়, যেন এই মুহূর্তের সমস্ত অনুভূতিকে অন্তরে বেঁধে রাখতে চায়। জ্যাসপার তার কপালে এক নরম চুমু দিয়ে শুরু করে, তারপর আস্তে আস্তে গালে আর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। দুই জনের নিঃশ্বাস যেন এক হয়ে যায়, সময় থেমে যায় এই স্পর্শের মাঝে।
তারপর জ্যাসপার নিজের আঙুলে থাকা পেইন্টি দিয়ে ফিওনার বুকে আলতো করে স্পর্শ করে মেখে দিতে থাকে,ধীরে ধীরে নেমে আসে পেটে, আসলে যেন এই রং আর স্পর্শ দিয়ে সে ফিওনার ওপর নিজের অনুভূতির গল্প আঁকছে। তার দুই হাত বাড়িয়ে ফিওনার পিঠে রেখে, এক কোমল আবেগে ঘেরা স্পর্শ করে।
ফিওনার শরীরের প্রতিটি কোণে যেন প্রেম আর উত্তেজনার মিশ্রণ ছড়িয়ে পড়ে— এই রঙ আর স্পর্শের মধ্য দিয়ে দুজনের অন্তরের কথা প্রকাশ পায়, যা ভাষায় বলা কঠিন।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে নিজের শার্টের বোতামগুলো খুলতে শুরু করল, হাতে হাত রেখে একে একে সব খুলে ফেলল। তার প্রখর চোখ ফিওনার শরীরের প্রতিটা রেখা খেয়াল করল, যেন সে এক অলিখিত ছবি উপভোগ করছে।
একটু দূরে সরিয়ে দাঁড়াল সে,নজর বুলিয়ে দেখে ফিওনার পুরো শরীর,ঘোর লাগা দৃষ্টিতে, মনে হলো যেন রঙের একটি অনন্য ক্যানভাস সামনে।

আস্তে করে ছোট টেবিলে রাখা একটা রংয়ের বোতল তুলে নিল, হঠাৎ করেই তা ছুড়ে মারল ফিওনার দিকে।রঙের ফোয়ারা বৃষ্টির মতো পড়ল তার দেহে, ফিওনা যেন নিজেই হয়ে উঠল সেই দেয়াল,যেখানে জ্যাসপার তার রং ঢেলে দিচ্ছে—নিজের আবেগের বর্ণ আর টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি।
তারপর জ্যাসপার ফিওনার সমস্ত গায়ের ওপর হাত বুলিয়ে রং মাখিয়ে দিতে লাগল, একেক স্পর্শে যেন তাদের মধ্যে এক নতুন বন্ধন গড়ে উঠছে। রঙের ছোঁয়ায় ফিওনার শরীরের গরম অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল।
কিছুক্ষণ পর জ্যাসপার হঠাৎ কোথাও চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে হাতে একটা পাইপ নিয়ে এল,পাইপ থেকে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিতে শুরু করল ফিওনার শরীরে
ধুয়ে দিল সব রং, করে দিল তাকে একেবারে ফ্রেশ,তার মাখা রঙের মতো জমে থাকা সব উত্তেজনা ধুয়ে গেলো দূরে।

তারপর জ্যাসপার নিজের গায়েও পাইপ দিয়ে পানি ঢালল, এক ঝলক ঠাণ্ডা জল তাদের মধ্যে নতুন সতেজতা এনে দিল।পাইপ বন্ধ করে জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনার কাছে এগিয়ে এল, আঁটসাঁট করে বাঁধা ফিওনার হাতের বাঁধন খুলে দিল।
বিনা কথায়ই তাকে কোলে তুলে নিল—ফিওনার পা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জ্যাসপারের কোমর জড়িয়ে ধরে।জ্যাসপার তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে,তার ঠোঁটে রাফলি চুম্বন শুরু করল, গলা থেকে ঘাড় হয়ে বুকে পর্যন্ত কামড়ানোর স্পর্শে গরম অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল ফিওনার শরীরে।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনার কোমর থেকে হাত সরিয়ে নীচে নামিয়ে নিয়ে গেলো,তার স্পর্শে ফিওনার শরীর যেন আগুনে ঝলসে উঠল। এক এক করে ফিওনার সব কাপড় খুলে ফেলল,তাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে দিলো, কিন্তু তার চোখ কখনো ফিওনার চোখ থেকে সরলো না।
জ্যাসপার আরেকবার ধীরে ধীরে ফিওনার বুক থেকে নাভি পর্যন্ত আস্তে আস্তে চুমু দিলো,প্রতিটি স্পর্শে যেন তার ভালোবাসা আর তৃষ্ণা মিশে গিয়েছিল। ফিওনার হৃদয় থমকে গেলো, দুই জনের মধ্যে একটা নীরব ভাষা তখন গড়ে উঠল যা কেবল তাদেরই বোঝার মতো।

জ্যাসপার আস্তে আস্তে ফিওনার নাকে হালকা চুমু দিয়ে ঘুরিয়ে দিলো তাকে,তার স্পর্শ ফিওনার শরীরে এক জোরালো সাড়া জাগিয়ে তুলল। তার হাত দিয়ে দেয়ালটি শক্ত করে ধরল ফিওনা, উত্তেজনার বেগে পুরো শরীর যেন বিদ্যুৎস্পর্শে ঝলমল করছে।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনার পিঠে চুমু খেতে খেতে নিচের দিকে নামতে লাগল,প্রতিটি স্পর্শে ফিওনার হৃদয় গতি বাড়িয়ে দিলো, দু’জনে যেন একাকার হয়ে গেছে এই মুহূর্তে।ফিওনার হাত দেয়ালে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে,তার শরীরে যেন এক আশ্চর্য উত্তেজনার ঢেউ বয়ে যায়।আচমকা তার শরীর কিছুটা কুঁচকে ওঠে, মনেই হয় যেন পুরো বিশ্ব থেমে গেছে এই মুহূর্তে।

একসময় ফিওনা ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়। তার চোখে লজ্জা নেই, আছে গভীর এক টান, এক ভাষাহীন অনুভূতি। সে নিজেই এবার জ্যাসপারের ঠোঁটের কাছে এগিয়ে যায়— একটা চুমু দেয়, তারপর আরেকটা, আরও গভীর…
তার ঠোঁট জ্যাসপারের গলার ওপরে,বুকে… বুক থেকে কাঁধে,সে যেন ভালোবাসার ছোঁয়ায় জ্যাসপারকে পুড়িয়ে দিতে চায়।জ্যাসপারের পেশীবহুল বডিতে ফিওনার ঠোঁট ঘুরে ঘুরে প্রেম লিখতে থাকে।এই মুহূর্তে কেউ কাউকে দিচ্ছে না, কেউ নিচ্ছেও না— দুজন একসাথে হারিয়ে যাচ্ছে এক অনুভবের জগতে, যেখানে ভাষা নেই, শুধু ছোঁয়া আর হৃদস্পন্দন।

জ্যাসপারের চোখে তখন ঘন ছায়া, তার ভেতরের আগুন আর ধরে রাখা যাচ্ছে না।সে হঠাৎ ফিওনার চোয়াল চেপে ধরে, তার চোখে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় বলে— “Enough, Fiona! You have no idea what you’re doing to me..”…” তার কণ্ঠ থমথমে, কিন্তু গলায় কাঁপন স্পষ্ট। “now…no more game’s.” সে ধীরে ধীরে ফিওনার ঠোঁটের খুব কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে, “It’s time I make you mine… completely.”
জ্যাসপার তার কণ্ঠ নিচু করে ফিওনার কানে ফিসফিস করে বলল—”.”..that you’ll be begging—for more… not mercy.”

জ্যাসপার ফিওনার হাত ধরে আবার তাকে ঘুরিয়ে দেয়ালের দিকে চেপে ধরল। তার দেহের প্রতিটি পেশি ছিল উত্তেজনায় টানটান, আর চোখে ছিল দাবির আগুন। ফিওনার নিঃশ্বাস কেঁপে উঠল—সে জানত, এই মুহূর্তে কিছুই আর থামাতে পারবে না জ্যাসপারকে।
জ্যাসপার তার ঠোঁট ফিওনার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে গম্ভীর গলায় ফিসফিস করল, “Now… you are mine, Fiona. Every. Single. Inch.”
তারপর এক ঝটকায় সে সেই সীমারেখা পেরিয়ে গেল—
প্রতিটি টান, প্রতিটি শ্বাস যেন তাদের একে অপরের গভীরে গেঁথে দিচ্ছিল। দেয়াল কাঁপল না, কিন্তু তাদের শরীর থেকে ছড়িয়ে পড়া উত্তাপ বাতাসকে ভারী করে তুলল।
ফিওনা একবার শুধু কেঁপে উঠে বলল, “prince… I—can’t… but I don’t want you to stop.” আর জ্যাসপার ফিসফিস করে জবাব দিল, “Then hold on, little Hummingbird… I’m going to break every boundary tonight.”

ঘরটা ছিল ফাঁকা, দেয়ালের প্রতিটি কোণ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে যেন সাক্ষী হয়ে আছে তাদের উন্মত্ত মিলনের। জ্যাসপার ফিওনাকে পুরোটা নিজের করে নিচ্ছে, আর ফিওনার দেহ, মন—সবকিছু এক অজানা ঘূর্ণিতে ডুবে যাচ্ছে।
তার নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে আসে, আর এক সময়—
ফিওনার কণ্ঠ কেঁপে ওঠে।তীব্র এক প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে ঘরের প্রতিটি দেওয়ালে,একটা দীর্ঘ, আটকে রাখা আর্তনাদ যেন— “ প্রিন্স…!”
শব্দটা এতটাই গভীর, এতটাই পরিপূর্ণ তৃষ্ণায় ভেজা ছিল যে, পুরো ঘর জেগে উঠল—ফাঁকা দেয়ালগুলোও যেন তা ফেরত পাঠাচ্ছিল, বারবার— “প্রিন্স… প্রিন্স… প্রিন্স…”
জ্যাসপারের ঠোঁটে তখন এক বিজয়ী অথচ কোমল হাসি, সে ফিসফিস করে বলে, “Even the walls know… you’re mine now.”

ফিওনার নিঃশেষ আর্তনাদের পরেও জ্যাসপার থেমে থাকেনি। সে যেন এখনো পুরোপুরি তৃপ্ত হয়নি, তার চোখে এখনো ঝলক দিচ্ছে দাবির আগুন।
এক মুহূর্তের জন্য সে ফিওনাকে ঘুরিয়ে নেয় নিজের দিকে,তারপর দেহটা শক্ত করে নিজের বাহুতে তোলে— ফিওনার মাথা পিঠে হেলানো, নিঃশ্বাস ছেঁড়া, চোখে মৃদু কাঁপুনি।
জ্যাসপার ফিসফিস করে বলে, “I’m not done with you yet, hummingbird… Not even close.”
তারপরে আবার…দেয়ালের এক কোণে এসে ফিওনাকে ঠেসে ধরল,তাকে নিজের কোলের উপর নিয়ে পুনরায় প্রবেশ করল এবার আরও গভীর, আরও জোরালো, যেন তার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে দাবি করছে এই সম্পর্ককে।
ঘর আবার কেঁপে উঠল,ফিওনার নিঃশ্বাস আর কণ্ঠ আবার প্রতিধ্বনি তুলল ফাঁকা দেওয়ালে— একবার নয়, বারবার, তার নাম নিয়ে।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫১

ফিওনা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, “prince.. I can’t take it anymore…” জবাবে জ্যাসপার তার কানের কাছে ঠোঁট রেখে গর্জে উঠল, “Yes, you will. You’re mine, Fiona. And I’ll remind you… again and again.”

আযদাহা সিজন ২ শেষ পর্ব