আলোর ভীড়ে পর্ব ১০
ইশরাত জাহান অধরা
বাস থেকে নেমেই ইনাম হাঁটা ধরল।ইনামের পিছু পিছু প্রিয়তা হাঁটছে।কিছু দুর হেঁটেই ইনাম থেমে গিয়ে প্রশ্ন করলো,
“এশা আবার যদি কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে সরাসরি আমাকে এসে বলবা!মনে থাকবে?”
প্রিয়তা মনে মনে খুশি হলো।লোকটা আস্তে আস্তে কি ওর প্রেমে পরে যাচ্ছে?নাহলে এত পরিবর্তনের কারন কি?প্রথম দিনের ব্যবহার আর এখনের ব্যবহারের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত।কি সুন্দর খেয়াল রাখছে ওর।মুখে হাসি ফুটে উঠলো।হেসেই বলল,
“হু অবশ্যই! ”
ইনাম কি একটা ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আবার ভেবো না আমি তোমার হয়ে সাফাই গাইছি।তোমার বদলে যেকেও থাকলে আমি একই কাজ করতাম।আমার অফিসের স্টাফদের নিরাপত্তা আমার কাছে আগে।এশার বদলে তুমি যদি কারোর ক্ষতি করার চেষ্টা করো তাহলেও আমি একই কাজ করবো!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ব্যাস নিমিষেই প্রিয়তার হাসি মুখ চুপসে গেলো।রাগ হলো অনেক। মানুষটা এমন কেন?সবসময় কিছু না কিছু বলে ওর হাসি কেড়ে নেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার বয়েই গেছে আপনাকে নিয়ে ভাবতে!আর এই কথা বারবার বলে আপনি কি বুঝাতে চাইছেন আমার মাথার ব্রেন অকেজো?কোন কিছু মনে থাকে না আমার?”
ইনাম থতমত খেয়ে বলল,
“এ কথা আমি কখন বললাম?”
প্রিয়তা কয়েক কদম হেঁটে ইনামের সামনে দাঁড়িয়ে ইনামের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বলেন নি।কিন্তু আপনি কথা দ্বারা বারবার এইটাই মিন করছেন যে আমার মাথায় ব্রেন নেই।আমি কোন কথা মনে রাখতে পারি না।যার জন্য আপনি বারবার আমাকে সাবধান করছেন আপনার থেকে দুরে থাকতে ইনডাইরেক্টলি!”
ইনাম হেসে বলল,
“বুঝে যখন গেছো তাহলে তো ভালোই!একশ মাইল দুরে থাকবা আমার থেকে।”
“১০০ মাইল না হাজার মাইল দুরে থাকব আপনার থেকে! দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব পরছে যে আপনার পিছে পিছে ঘুরব আমি?আপনার থেকেও ভালো, সুন্দর,হ্যান্ডসাম ছেলে আছে।”
কথাটা শুনে ইনাম বুকে দুই হাত গুজে বলল,
“বাহ!বেশ ভালো তো!তো সেই হ্যান্ডসাম ছেলেকে গিয়ে খুঁজো!মানা করছি নাকি আমি?আমি তো চাই ই তুমি অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসো।আর তারপর আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও!আমি তো তোমাকে আটকে রাখি নি।”
প্রিয়তা মুখ খুললো কঠিন কোন কিছু বলার জন্য কিন্তু তারপরই নিজেকে সামলিয়ে নিলো।যে ছেলে তার স্ত্রীকে বলে অন্য কোন ছেলেকে ভালোবাসতে তাকে কিছু বলেও লাভ নেই।কান্না পাচ্ছে ওর।উনি কি ওকে কোনদিনই বুঝবে না!সবসময় এমন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে যাবে?ও যে লোকটার মায়ায় পরে গেছে।লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছে।উনার প্রতি আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পরছে সেটা কি ইনাম কোনদিন বুঝবে না?প্রিয়তা সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“আপনি বাসায় যান।”
ইনাম অবাক হয়ে বলল,
“তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
“আমার ভালোবাসার মানুষকে খুঁজতে!আপনি এই প্রথম মুখ ফুটে চেয়েছেন আমার কাছে কিছু আমি তো আর শুনে বসে থাকতে পারি না।আমি আজকেই ছেলে খুঁজে বের করব। আর কালকে সকালেই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।”
ইনাম কিছু বলার আগেই প্রিয়তা চলে গেলো।ইনাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বাম হাতে ঘড়ির দিকে তাকালো।দেখল রাত ৮ টা বাজে।ভাবল প্রিয়তা নিশ্চয়ই কিছুক্ষন ঘুরে টুরে এসে যাবে৷ মেয়েটাকে একা থাকতে দেওয়া উচিত। সবসময়তো ওর সামনে আমিই থাকি!এসব ভেবেই বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
প্রিয়তা হাঁটতে হাঁটতে পিছনে ফিরে তাকালো।ভেবেছিলো ইনাম হয়তবা বাধা দিতে আসবে।নিয়ে যাবে ওকে।কিন্তু ওর ভাবনায় পানি ঢেলে তাকিয়ে দেখল ইনাম আসেনি।এত রাতে একটা মেয়েকে কি করে একা ছাড়লো?তাও নিজের স্ত্রীকে?লোকটার কি কোন কমনসেন্স নাই?ও ই ভুল ভেবেছিলো। কয়েকদিনের করা যত্নে ভেবেছিলো ইনাম বুঝি ওকে ভালোবেসে ফেলেছে।তাই ওর এতো খাতির,খেয়াল করছে।ওর বুঝা উচিত ছিলো মানুষ কয়দিনের মধ্যেই চেঞ্জ হয়ে যায় না।সাথে এটাও বুঝল ইনাম সত্যিই ওকে দায়িত্ববোধ থেকে এসব করছে।ডিভোর্স দিয়ে দিবে ও!ওর একার চেষ্টায় তো আর সারাজীবন সংসার করা যাবে না।ইনামের যে হাবভাব যেকোন সময়ই ওদের বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।সেটা আজ হোক কিংবা এক দুই বছর পর।
তাই এক দুই বছর ওয়েট না করে যত দ্রুত সম্ভব ওদের আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো। এই সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই। এই কথাগুলা ভাবতে ভাবতে হঠাত হুশ আসলো ওর।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো রাস্তায় কেও নেই।পুরো জনমানবহীন রাস্তা।ও এই রাস্তায় এর আগে কোনদিন আসেনি!তাহলে কি ভুল রাস্তায় এসে পরেছে?ইশ রাগে কি বোকার মতোই না কাজ করে বসেছে।এখন ও ফেরত যাবে কি করে?হঠাত মনে পরল ওর ব্যাগে তো ফোন আছে।কাওকে ফোন দিলেই তো হয়ে যায়।ভেবে ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো।
অন করতেই দেখল অন হচ্ছে না। অনেকক্ষন ট্রাই করার পরে হঠাত স্কিন ভেসে উঠলো প্রিয়তার সামনে। খুশি হয়ে স্কিনে তাকাতেই দেখলো ব্যাটারি লো কথাটা স্কিনে ভেসে উঠছে।কিছু বুঝে উঠার আগেই আবার সুইচ অফ হয়ে গেলো।প্রিয়তা হতাশ হলো।এই একটা ফোনই ওর আশার মাধ্যম ছিলো।এইটাও শেষ হয়ে গেলো।হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে পরল ও।কি করবে ও এখন?ইনাম কি ওকে খুঁজছে?পরমুহূর্তেই হাসি পেলো নিজের ভাবনা দেখে।ইনাম নাকি ওকে খুঁজবে?ও এখন কি করে এই রাস্তা থেকে বের হবে?ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
ইনাম রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে তোয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মোবাইল হাতে নিলো।টাইম দেখতেই দেখল ১০ টা বাজে।এতক্ষনে তো প্রিয়তার এসে যাওয়ার কথা!মোবাইলে কল লিস্টে গিয়ে প্রিয়তার নাম্বারে কল করলো ইনাম।সুইচ অফ বলছে।নিশ্চয়ই চার্জ শেষ।মোবাইলে চার্জও দেয়নি!এখন ও কি করবে?প্রিয়তার কোন বিপদ হয় নি তো?আসছে না কেন?কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠলো ইনামের।আর কিছু না ভেবে ঘাড় থেকে তোয়াল ফেলে নিজের রুমে গেলো।
খাটের পাশের সাইড টেবিল থেকে চাবির রিং নিয়ে গ্যারেজে গিয়ে নিজের গাড়ি বের করলো।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় নেমে পরলো।রাস্তায় গাড়ি চালাতে চালাতে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো প্রিয়তাকে।মেয়েটার যদি কিছু হয় ও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না কোনদিন।ওর জন্যই মেয়েটা একা চলে গেলো।তাও এত রাতে।ইশ কেন অইসময় প্রিয়তার পিছু পিছু গেলো না?গিয়ে মানালো না।তাহলেই তো প্রিয়তা রেগে চলে যেতে পারতো না।আর না এতকিছু হতো!সব দোষ ওর।মনে চিন্তারা জোক ধরে বসে আছে।বারবার মাথায় বাজে চিন্তারা এসে হানা দিচ্ছে।বারবার মনে হচ্ছে প্রিয়তার বুঝি কোন ক্ষতি হয়ে গেলো।
প্রিয়তা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।ভাবল সামনে গেলে মেইন রাস্তা পেয়ে যাবে।আর কোন মতে মেইন রাস্তা পেয়ে গেলেই কোন গাড়ি বা রিকশা করে চলে যাবে।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো। যাই কিছু হয়ে যাক না কেন,যত রাগই হোক না কেন,রাগে মাথা ফেটে গেলেও জীবনে কোনদিন একা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে না।আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগল যেন মেইন রাস্তা পেয়ে যায়।এই রাস্তায় কোন মানুষ তো দুরের কথা একটা রিকশা, সাইকেলও দেখা নেই।প্রিয়তা সামনে দিকে হাঁটতে লাগলো।প্রায় অনেকখানি রাস্তায় এসে পরবার পরেও কোন মেইন রাস্তার দেখা পাচ্ছে না সে।হঠাত সামনে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার পাশে নজর পরলো।
একটা বাড়ির মতো দেখাচ্ছে।অইটা বাড়ি নাকি?একটু ভালো করে নজর বুলাতেই দেখল আসলেই একটা বাড়ি!মনে মনে খুশি হলো!এতক্ষন একটা বাড়িরও দেখা পায়নি সে।ভাবলো এই বাড়ির মালিক বা মালকিনের থেকে সাহায্য চাইবে।ভেবেই অই বাড়ির দিকে অগ্রসর হলো সে।বাড়ির সামনে এসেই ভ্রু কুচকে এলো প্রিয়তার।বাড়িটা ঠিক টিনের ঘর।কিন্তু টিনের ঘরের দরজা খোলা!দরজা খোলা রেখেছে কেন?
পরক্ষনেই ভাবলো দরজা খোলা রাখতেই পারে।এটা নিয়ে এত চিন্তার কি আছে?মাথা থেকে চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলে দরজার ভিতরে উঁকি দিলো প্রিয়তা।পুরো ঘর জুড়ে অন্ধকার!অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।দরজায় নক করলো প্রিয়তা।প্রায় কয়েকবার নক করলেও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ব্যাগ থেকে ছোট্টএকটা টর্চ লাইট বের করে বাড়ির দিকে আলো ফেলতেই দেখল চারদিকে ময়লা।
আলোর ভীড়ে পর্ব ৯
এই বাসায় কেও কি থাকে?থাকলে এমন ময়লা কেন?বাড়ির ভেতর ঢুকে কিছু পা এগিয়ে যেতেই দেখল সামনের রুমে আলো জ্বলছে।খুশি হলো ও।তারমানে অই রুমেই মানুষ আছে।ভেবেই অই রুমের সামনে এগিয়ে গেলো।রুমের দরজার সামনে গিয়ে রুমের ভেতর তাকাতেই দেখল….