আলোর ভীড়ে পর্ব ৭

আলোর ভীড়ে পর্ব ৭
ইশরাত জাহান অধরা

“হাত যে ছিলে গেছে সেটা কি খেয়ালে আছে নাকি এখনোও জানোই না?”
বাসায় পৌছে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো প্রিয়তা।তোয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় গিয়ে ভেজা তোয়াল মেলে দিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হতেই ইনাম ডাক দিলো।প্রিয়তা পিছনে ফিরতেই কথাটা বলল ইনাম।ইনামের কথা শুনে অবাক হয়ে প্রিয়তা নিজের হাতের দিকে তাকালো।আসলেই ডান হাতের কনুইয়ের চামড়া ছিলে গেছে।লাল হয়ে গেছে জায়গাটা।ইনাম একটা শ্বাস ফেলে বলল,

“দাঁড়াও এখানে।”
বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।কিছুক্ষন বাদে একটা বক্স নিয়ে এসে প্রিয়তার দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল,
“এখানে ব্যান্ডেজ,ক্রিম যা যা লাগে সব আছে।পরিষ্কার করে নাও।”
প্রিয়তা বাধা দিয়ে বলল,
“আরে এসব কিছুই দিতে হবে না।ছোটবেলায় কত পরে গিয়ে ব্যাথা পাইছি।অভ্যাস আছে আমার।”
“যা বলছি তাই করো।পরে ইনফেকশন হলে আবার আমার দোষ দিবে।বলবে আমাকে বাঁচাতে গিয়েই তোমার হাতে ইনফেকশন হয়েছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“বিষয়টা শুধু আপনার জন্য না।আপনার বদলে যে কেউ থাকলেই আমি বাঁচাতাম!”
“অনেক গুনবান কাজ করেছো। এখন মেডিসিন লাগাও হাতে!”
প্রিয়তা মুখ ফুলিয়ে বলল,
“আমি কো ব্যথা পেয়েছি ডান হাতে।বাম হাত দিয়ে কিভাবে ঔষধ লাগাবো?”
ইনাম আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“আমি মেডিসিন লাগিয়ে দিতে পারব না।আমার কাজ আছে।”
“তাহলে আর কি করার এমনেই থাকা লাগবে!”
বলে রুমে চলে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই ইনাম বলল,
“সোফায় বসো।”

প্রিয়তা ভেবেছিলো ইনাম মানা করবে।যার ফলে ওকে আর মেডিসিন লাগাতে হবে না।ছোটবেলা থেকেই কাটা জায়গায় মেডিসিন দেওয়াকে ভয় পেয়ে আসছে।কোন জায়গা কাটলে সেটার ব্যথা যতোটা না পাওয়া যায় তার থেকে কয়েকশো গুন বেশি ব্যথা পাওয়া যায় সেই জায়গায় মেডিসিন লাগালে।মনে হয় কাঁটা জায়গায় কেও নুন মরিচের ছিটা দিয়ে দিছে।প্রিয়তা আমতা আমতা করে বলল,
“আপনি সত্যিই আমাকে মেডিসিন লাগিয়ে দিবেন?”
“হ্যা!এছাড়া আর কোন উপায় দেখছিনা আমি!”
প্রিয়তা মুখ কালো করে সোফায় গিয়ে বসলো।ওর পাশে এসে বসল ইনাম।বক্স খুলতে খুলতে বলল,
“হাত দাও!”

প্রিয়তা হাত বারাতেই ইনাম হাত ধরে সেখানে এন্টিস্যাপটিক ক্রিম লাগাতে যেতেই প্রিয়তা বলল,
“আস্তে ধীরে সুস্তে ক্রিম লাগাবেন।যাতে আমি ব্যথা না পাই।”
ইনাম কিছু না বলে আবার ক্রিম দেওয়ার জন্য হাত বারালো।
“জ্বলছে তো!কিভাবে ক্রিম দেন?আপনি ক্রিম লাগাতেই পারেন না!”
ইনাম বিরক্ত হয়ে বলল,

“আমি তো এখনো ক্রিম টাচই করাতে পারিনি তোমার হাতে।জ্বলে কিভাবে?”
প্রিয়তা খেয়াক করে দেখল আসলেই ক্রিম এখনো লাগায়নি।।ইনাম কিছুক্ষন চুপ করে বলল,
“বাই এনি চান্স তুমি কি ভয় পাও?”
প্রিয়তা হেসে বলল,
“আরে কিসের ভয়?আপনি তো আর আমায় কেটে ফেলছেন না!”
“এক্সেটলি!তাহলে এরকম বিহেভ করার কারন কি?”
“আচ্ছা এখন আপনি ক্রিম লাগান।আমি কিছু বলব না।”
“সিউর?”
“হুম।”

প্রিয়তা চোখ মুখ খিচে ফেলল।দাঁতে দাঁত চেপে রইলো।ইনাম একবার প্রিয়তার মুখের দিকে তাকালো।মিথ্যা যে বলেছে সেটা প্রিয়তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।হাসলো ইনাম।অতঃপর আস্তে ধীরে ক্রিম লাগাতে লাগলো।ক্রিম লাগানো শেষে ব্যান্ডেজ দিয়ে বলল,
“শেষ!”
প্রিয়তা চোখ খুলে হাতের দিকে তাকালো।
“জ্বলেছে?”
প্রিয়তা চোখ ইনামের দিকে রেখে বলল,
“তো?জ্বলবে না?”
“একটু আকটু তো জ্বলবেই!যাইহোক খাবার খেতে আসো টেবিলে!”

প্রিয়তা হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে আর আড়চোখে ইনামের দিকে তাকাচ্ছে।ইনাম তাকাতেই প্রিয়তা মাথা নিচু করে ভাত খাচ্ছে।এরকম প্রায় ৩ বার হওয়ার পর ইনাম গ্লাসের পানি শেষ করে টেবিলে রাখতে রাখতে বলল,
“কি বলবে বলে ফেলো।”
প্রিয়তা অবাক হলো।লোকটা কি করে জানল যে ওর কিছু বলার আছে?মনেত কৌতুহলকে থামিয়ে রাখতে পারলো না।গালের ভাতটুকু শেষ করে বলল,
“আপনি কি করে বুঝলেন আমার কিছু বলার আছে?”
“সিম্পল!যেভাবে কিছুক্ষন পর পর চোরের মতো করে তাকাচ্ছিলে আমার জায়গায় যেকেও থাকলেও বুঝতো যে তুমি কিছু বলতে চাও?”

“আপনি আমার এতো খেয়াল কেন রাখছেন?এত কেয়ার কেন করছেন?আপনি তো অইদিন বললেনা আমাকে আপনার রকটা ফোটাও পছন্দ না। কেবল মা বাবার জন্য বিয়েটা করেছেন।তাহলে এত যত্ন করার কারন কি?”
ইনাম পুরো কথাটা শুনলো।প্রিয়তা তাকিয়ে আছে ইনামের দিকে।ইনাম বসা থেকে উঠে প্লেট নিয়ে যেতে যেতে বলল,
“দায়িত্ববোধ!দায়িত্ববোধ থেকেই এতকিছু করছি।তোমার বাবা মা তোমাকে আমার কাছে বিয়ে দিয়েছেন ভরসা করে।তার উপর তুমি আমার বাসায় এসেছো।তোমার কোন সমস্যা হলে দোষটা আমার ঘাড়ে এসে পরবে!কোন সুস্ত মানুষ চায়না তার উপর কোন দোষ এসে পরুক।সবাই তাকে দোষী ভাবুক!তার নামের সাথে দায়িত্বহীন ট্যাগটা যোগ হোক।আমিও ওদেের ব্যতিক্রম না।কোন দোষ নিজ ইচ্ছায় ঘাড়ে নিয়ে ঘুরতে পারব না।সেজন্যই তোমার খেয়াল রাখা।সামান্য এই বিষয়টাকে অন্য দিকে আবার টেনে নিও না।”

বলেই কিচেনে চলে গেলো।ইনামের এতগুলা কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে
বসে রইলো।আসলেই তো ও তো ইনামের দায়িত্বই।সামান্য এই বিষয়টাই আগে মাথায় আসলো না?এতো বোকা কেন ও?
প্লেটের কেবল অর্ধেক ভাত খেয়েছে ও।বাকি ভাতটুকু আর মুখ দিয়ে যাচ্ছে না তাই ভাতের প্লেট নিয়ে কিচেনে চলে গেলো।পলিথিনে খাবার গুলো ভরে ডাস্টবিনে রাখতেই ইনাম বলল,
“ভাত খেলে না যে?”
“ইচ্ছা করছে না।”

ইনাম বুঝলো ওর কথাগুলো শুনেই প্রিয়তা খায়নি।ওর আর কি করার আছে?হাতে থাকা মেডিসিনগুলা প্রিয়তার দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল,
“রাতে জ্বর আসলে খেয়ে নিও!”
প্রিয়তা অবাক হয়ে গেলো লোকটা জানলো কিভাবে যে ওর জ্বর আসবে?
“আপনি জানলেন কিভাবে আমার যে জ্বর আসবে?”
” অফিসেই তো শীতে….”
“কি হলো চুপ হয়ে গেলেন কেন?বাকিটুকু বলুন?”

“এখনো আসে না।বাট পরে যদি আসে?তখন ধরো আমি আশেপাশে নেই সেক্ষেত্রে ঔষধ খাবে কি করে?সেজন্যই দিচ্ছি।”
প্রিয়তা বুঝলো ইনাম মিথ্যা কথা বলছে।অফিসে কাজ করার সময় ওর যখন শীত লাগছিলো তখন নিশ্চয়ই ইনাম দেখেছে।বিষয়টা খেয়াল করেছে।তাই মনে হয় তখন এসির পাওয়ার বেরে গেছিলো।ঠান্ডা কমে গেছিলো।মনে খুশি হলো। পরমুহূর্তেই সেই খুশি চলে গেলো।কারন ইনাম তো বলেই দিয়েছে সে যা করছে সব দায়িত্ববোধ থেকে।
“আচ্ছা আপনার বাসায় সবসময় সবধরনের মেডিসিন থাকে?যখন যেটা লাগে সেটাই দেখি আপনার কাছে আছে।”
“রাখতে হয়। কখন কার কোন রোগ হয় বলা তো যায় না!মাঝে মাঝে এমন রোগ হয় যে ঔষধ দিয়েও সারানো যায়। এত এত ঔষধ রেখেও আমার কোনই লাভ হয়নি!
প্রিয়তা ইনামের লাস্টের বলা কথাটুকু বুঝতে পারলোনা।তাই না বুঝে বলল,

“মানে?”
“নাহ কিছুনা।”
বলেই প্রিয়তার হাতে মেডিসিন দিয়ে নিজের রুমে যেতে যেতে বলল,
“ঘুমিয়ে পড়ো।”
প্রিয়তা ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে ওর মাথায় কিছুই ঢুকেনি।ইনাম কেন অইসময় অই কথাটা বলল?লোকট অই কথাটা দ্বারা কি বুঝালো?

আলোর ভীড়ে পর্ব ৬

“এই ফাইলগুলো আজকের মধ্যে কমপ্লিট করে দিবেন।মনে রাখবেন এগুলো কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাজে যেন ভুল না হয়।”
ম্যানেজারের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে প্রিয়তা বলল,
“জ্বি স্যার কথাটা মাথায় রাখব।”
“তাহলে কাজ করুন!”
ম্যানেজার যেতেই প্রিয়তা কাজ করা শুরু করল।খুব সাবধানে কাজ করছে সে৷ যাতে কোন ভুল না হয়।হঠাত….

আলোর ভীড়ে পর্ব ৮