আলোর ভীড়ে পর্ব ৮
ইশরাত জাহান অধরা
“এই কাগজগুলো আজকের মধ্যে কমপ্লিট করে দিবেন।মনে রাখবেন এগুলো কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কাজে যেন ভুল না হয়।”
ম্যানেজারের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে প্রিয়তা বলল,
“জ্বি স্যার কথাটা মাথায় রাখব।”
“তাহলে কাজ করুন!”
ম্যানেজার যেতেই প্রিয়তা কাজ করা শুরু করল।খুব সাবধানে কাজ করছে সে৷ যাতে কোন ভুল না হয়।প্রায় তিন ঘন্টা কাজ করার পর কাজটা শেষ করলো।সবগুলো কাগজ গুছিয়ে রাখতে রাখতেই ফোনে এলো।কাগজগুলোকে টেবিলের সাইডে রেখে ফোন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো।অফিসের ভিতর ফোনে কথা বলা নিষেধ। কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে হাতে থাকা ঘড়িতে চোখ বুলাতেই দেখলো লাঞ্চ টাইম হয়ে গিয়েছে প্রায়।অফিসে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে হাত ধুতে চলে গেল ওয়াশরুমে।কিছুক্ষন পর হাত মুছে চেয়ারে বসতে নিলে কেও একজন ঢাক্কা দিলো প্রিয়তাকে।ফলস্বরূপ ঢাক্কা লেগে টেবিলের উপরে থাকা পানির বোতলের পানি সারা টেবিলে ছড়িয়ে গেলো।প্রিয়তা তাড়াতাড়ি করে সব কাগজ পত্র সরাতে লাগলো।হঠাত পিছন থেকে কেও বলে উঠলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“সরি!আমি আসলে দেখতে পাইনি।”
প্রিয়তা পিছনে ফিরতেই দেখলো এশা দাঁড়িয়ে আছে বাকা হাসি দিয়ে।প্রিয়তা তাকাতেই সাথে সাথে মুখ থেকে হাসি সরিয়ে অবাক হয়ে কথাটা বলল।প্রিয়তা বুঝল এশা এই কাজটা ইচ্ছা করে করেছে।এশার থেকে মুখ ফিরিয়ে কাগজ গুলার দিকে তাকাতেই দেখল সব কাগজ ভিজে গেছে।প্রিয়তা মনে মনে দোয়া করল যেন কাগজগুলা না ভিজে।কারন ৩ ঘন্টা দিয়ে কষ্ট করে ফাইলগুলো ও কমপ্লিট করেছে।তাছাড়া এগুলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও।ভয়ে ভয়ে সাইডে তাকাতেই সব আশা ভেস্তে গেলো।সব ফাইলের কাগজ ভিজে গেছে।
এশা আফসোসের সুরে বলল,
“আহারে!স্যার তোমাকে ভরসা করে ফাইলগুলা দিয়েছিলো।আমার জন্য তোমার এত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।স্যার কিন্তু অনেক রাগী।বকাঝকা করবে অনেক।”
প্রিয়তা কাগজগুলা নিয়েই চেয়ারে বসে পরল।কান্না আসছে ওর।টানা তিন ঘন্টার পরিশ্রম এভাবে শেষ হয়ে গেলো?কি উত্তর দিবে ও?প্রিয়তাকে এই অবস্তায় দেখে এশা খুশিমনে নিজের সিটে গিয়ে বসলো।
“কাগজ গুলা কি কমপ্লেট হয়েছে?”
ম্যানেজারের কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো প্রিয়তা।শুকনো ঢোক গিললো।বসা থেকে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলল,
“সরি স্যার!”
ম্যানেজার ভ্রু কুচকে বলল,
“এখনো কাজ শেষ করেন নি?রাত ৭ টা বাজে।আমি আপনাকে দিয়েছিলাম সেই সকাল ১১ টায়।এখনো কাজ শেষ করতে পারেন নি?”
“আসলে কাজ শেষ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু….”
“কিন্তু?”
“কিন্তু কাগজগুলা সব পানিতে ভিজে গেছে।কিছুই বুঝা যাচ্ছে না।”
“হুয়াট?”
“সরি স্যার।আমার ভুলের কারনে….”
“ভুল করেন কেন আপনি?আপনাকে আমি বলেছিলাম কিনা কাগজগুলা অনেক গুরুত্বপূর্ণ? বলেছিলাম সাবধানে কাজ করতে!বলেছিলাম কিনা?”
প্রিয়তা চুপ করে রইল। প্রিয়তাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ম্যানেজারের রাগ আরও বেড়ে গেলো।
“কি হলো কিছু বলছেন না কেন?”
“জ্বি স্যার বলেছিলেন।”
“তাহলে মনযোগ কোথায় ছিলো?সাবধানে কাজ করলে কাগজ ভিজে যায় কি করে?”
এত চিৎকার চেচামেচি শুনে ইনাম কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখল প্রিয়তা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ভয়ে কাঁপছে মেয়েটা।ইনামের ভ্রু কুঁচকে এলো।তড়িৎগতিতে হেঁটে প্রিয়তার সামনে গেলো।একবার প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ম্যানেজারকে বলল,
“কি হয়েছে?আপনি উনাকে এভাবে বকছেন কেন?”
ম্যানেজার প্রিয়তার দিকে ইংগিত করে বলল,
“এই মেয়েকে আমি কয়েকটা ফাইলের কাগজ দিয়েছিলাম।বলেছিলাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজগুলা যেন সাবধানে কাজটা করে। কিন্ত ইনি সব কাগজ ভিজিয়ে বসে আছেন।”
“আচ্ছা আপনি যান।আমি ওর সাথে কথা বলছি।”
“জ্বি স্যার!”
ম্যানেজার চলে যেতেই ইনাম বলল,
“আমার কেবিনে আসো।”
প্রিয়তা ইনামের পিছু পিছু কেবিনে যেতেই ইনাম প্রিয়তাকে চেয়ার টেনে বলল বসতে।প্রিয়তা বসতেই এক গ্লাস পানি প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“নাও পানিটা খেয়ে নিজেকে শান্ত করো!”
প্রিয়তা পানি খেয়ে গ্লাসটা টেবিলের উপর রাখলো।ইনাম প্রিয়তার সামনের চেয়ারে বসে প্রিয়তার দিকে ঘুরে বলল,
“এবার বলো কি হয়েছে?”
প্রিয়তা মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে।প্রিয়তার চোখের কোণে পানি জমেছে।পলক ফেললেই সেই পানি চোখ থেকে গালে বেয়ে নামবে।প্রিয়তা চাচ্ছে না ইনামকে তার কান্না দেখাতে।তাই মাথা নিচু করে বসে আছে।লোকটা নিশ্চয়ই ওকে শান্তনা দিবে না। উল্টো বকবে। কারন উনার কোম্পানির কাগজই তো সে নষ্ট করেছে।ইনাম কি ওকে ছাড় দিবে?নাহ কিছুতেই না।ভাবতে ভাবতে প্রিয়তার আরও কান্না পেলো।প্রিয়তাকে কোন কথা বলতে না দেখে ইনাম বলল,
“আমার দিকে তাকাও।”
“কি হলো?তাকাতে বললাম তো!”
প্রিয়তা এবার মাথা তুলে ইনামের দিকে তাকালো।প্রিয়তার চোখ পানিতে ছলছল করছে। ইনাম বুঝল প্রিয়তার ভয় পাওয়ার কারন।প্রিয়তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল,
“তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।আমি তোমাকে কিছু বলব না।তুমি শুধু আমাকে বলো কাগজগুলো কি করে ভিজলো?”
প্রিয়তা আশ্বাস খুঁজে পেলো।হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে সবকিছু খুলে বলল।সব কথা শুনে ইনাম বিরক্ত হয়ে বলল,
“তোমার যখন এখানে কোন দোষই নেই তাহলে কান্না করছো কেন?ম্যানেজার যখন তোমাকে বকলো তখন তুমি এই কথাগুলা বলতে পারলা না?তাহলেই ধমক খেতে না!ঘাড়ত্যাড়ামি শুধু আমার সাথেই করতে পারো।অন্যদের সাথে করতে পারো না?”
প্রিয়তা নাক টেনে বলল,
“ম্যানেজারকে বললেও ম্যানেজার বিশ্বাস করতো না।বলতো আমি এক্সিকিউজ বানাচ্ছি।”
“বলেই দেখতে!যাইহোক চোখের পানি মুছো। আর কালকে আমি এর ব্যবস্তা নিচ্ছি।”
“কি ব্যবস্তা নিবেন?এশা তো আপনার ছোটকালের বন্ধু।”
ইনাম অবাক হয়ে বলল,
“তুমি জানো এটা?”
“জানবো না কেন?ও আপনার সামনে আপনার নাম ধরে ডাকে।ও নিজেই বলেছে এই কথা।”
“তো তুমিও এশাকে বলতে যে তুমি আমার ওয়াইফ হও?”
“আমি ভেবেছি যে কাজগুলা আমি শেষ করতে পারিনি সেগুলা আজকের মধ্যে শেষ করব।”
ইনাম অবাক হয়ে বলল,
“পাগল তুমি?এতগুলা কাজ এখন কিভাবে শেষ করবে?তাছাড়া অফিসের টাইম তো শেষ । সবাই একটু পরেই চলে যাবে!”
“সবাই চলে গেলে আমি থাকব।”
“তুমি একা এখানে থাকবে?”
“হ্যা।আমার অসাবধানতার কারনেই এরকমটা হয়েছে।সব দায় ভার আমার উপর।সব কাজ আমাকেই শেষ করতে হবে।”
“সিউর তুমি?”
“হুম।আমাকে কাগজগুলা রেডি করে দেন।”
প্রিয়তা নিজের টেবিলে লাইট জ্বালিয়ে কাজ করছে।পুরো অফিস নিস্তব্ধ।ইনাম সামনে বসে আছে।কিছুক্ষন পর ইনাম দুই গ্লাস কফি বানিয়ে এক গ্লাস প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিলো।প্রিয়তা কফির মগ নিয়ে ইনামকে দেখে বলল,
“আপনি এখনো যাননি?”
ইনাম কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল,
“কেও একজন গতকাল রাতে আমাকে বলেছিল যতদিন না আমি গাড়ির ড্রাইভার পাচ্ছি ততদিন যেন আমি তার সাথে যাওয়া আসা করি।”
“অহ স্যরি ভুলেই গেছিলাম।আমি তাড়াতাড়ি কাজ করছি যাতে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যায়।”
“হুম।আমি অপেক্ষা করছি।”
ইনামও কয়েকটা ফাইল নিয়ে বসে পরলো।শুধু বসে থাকার চেয়ে কাজ এগিয়ে রাখা অনেক ভালো। প্রায় ২ ঘন্টা পার হতেই ইনাম হাই তুলে সামনে তাকাতেই দেখল প্রিয়তা ঘুমে ঢলে পরছে।যেকোন সময় টেবিলে পরে যাবে এই একটা অবস্তা। ইনামের ধারনাকে সত্যি করে দিয়ে প্রিয়তা টেবিলে হেলে পরেই যাচ্ছিলো ইনাম তাড়াতাড়ি প্রিয়তার মাথা ধরে ফেলল।আস্তে ধীরে সুস্তে কাগজগুলা নিয়ে প্রিয়তার মাথা টেবিলে রেখে দিলো।
কিছু সময় যাবার পর প্রিয়তার ঘুম ভাংতেই দেখলো ইনাম কাজ করছে।তাড়াহুড়ো করে উঠে সামনে তাকাতেই দেখল ওর কাগজগুলা নেই।আশেপাশে খুঁজতেই ইনাম কাজ করতে করতে বলল,
“কাগজগুলা খুঁজে লাভ নেই।আমি বাকি কাজগুলা করে দিয়েছি।আপাতত তোমার সব কাজ কমপ্লিট।”
প্রিয়তা অবাক হয়ে বলল,
“আপনি করেছেন?”
“হুম!”
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,
“চলো বাসায় যাওয়া যাক।অনেক লেট হয়ে গেছে।”
প্রিয়তা উঠকে উঠতে বলল,
“কয়টা বাজে?”
“রাত ১২ টা!”
প্রিয়তা মুখে হাত দিয়ে বলল,
“কি?এতক্ষন?”
“হুম।চলো।”
প্রিয়তা ইনামের পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“ধন্যবাদ!”
ইনামের হাঁটা থেমে গেলো।ভ্রু কুঁচকে পাশ ফিরে বলল,
“কিসের জন্য? ”
“হেল্প করার জন্য। আমি তো ভেবেছিলাম আপনিও ম্যানেজারের মতো আমাকে বকবেন।কাজ থেকে বের করে দিবেন।কিন্তু আপনি আমার ধারনাকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছেন।আমার সাথে এতক্ষন পর্যন্ত অফিসে আছেন আপনার সকল কাজ ফেলে।তাই সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ। ”
আলোর ভীড়ে পর্ব ৭
ইনাম মুচকি হেসে বলল,
“আমি কোন তোমাকে হেল্প করিনি।নিজের ভালোর জন্যই তোমার সাথে ছিলাম এতক্ষন।”
ইনামের কথা শুনে প্রিয়তাও হেসে বলল,
“বুঝলাম।চলুন।”