আলোর ভীড়ে পর্ব ৯
ইশরাত জাহান অধরা
সকাল সকাল প্রিয়তা অফিসে পৌছেই গতাকালের কাজগুলা ম্যানেজারকে দিয়ে বলল,
“সরি স্যার।আমি জানি আমি অনেক লেট করে ফেলেছিল।কাগজগুলা কালকে জমা দেবার কথা ছিলো।কিন্তু আমি সব কাজ ভালোভাবে শেষ করেছি।বিশ্বাস না হলে আপনি চেক করে দেখতে পারেন!”
ম্যানেজার কাগজগুলোর দিকে অবাক হলো।গতকাল তো ভিজে গিয়েছিলো কাগজগুলো।তারমানে কি প্রিয়তা নতুন করে শুরু করেছে?কিন্তু কখন?মুখ ফুটে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে কাগজগুলো নিয়ে চলে গেলো।ম্যানেজারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রিয়তা হেসে নিজের চেয়ারে বসলো।কাজের মাঝখানে প্রিয়তা ওয়াশরুমে গিয়ে নিজের হাত মুখ ধুচ্ছিলো।হঠাত পাশ থেকে এশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লিপস্টিক দিতে দিতে বলল,
“কাগজগুলা পেলে কোথায়?সবতো ভিজে গিয়েছিলো!”
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“মানে?”
এশা এবার লিপস্টিক দেওয়া থামিয়ে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মানে এই কাগজগুলোর মেইন কপি ইনামের কাছে থাকে।তোমাকে দিয়েছে ও?”
এশা কয়েক কদম এগিয়ে প্রিয়তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“ইনাম বকেনি তোমাকে?”
“বকবে কেন?”
“তুমি এতবড় একটা ভুল করেছো! ”
“ভুলটাতো আমার ছিলো না।ভুলটা আপনার ছিলো।আপনার ধাক্কার কারনেই কাগজগুলো ভিজে গিয়েছিলো।এখানে আমার দোষ?তাছাড়া আমি উনাকে সব বুঝিয়ে বলেছি।”
“কি বুঝিয়ে বলেছো?”
“যা সত্য তাই।আমার হাত ধোয়া শেষ। আমি যাই।এক্সকিউজ মি!”
বলেই ওয়াশরুম থেকে চলে গেলো।এশা রাগে প্রিয়তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেয়ালে পা দিয়ে বারি দিলো।
ইনাম সামনে থাকা ল্যাপটপে কিছু একটা দেখে ফোন দিয়ে এশাকে কেবিনে আসতে বলল।এশা আয়নায় নিজের চুল ঠিক করে কেবিনে গেলো।প্রিয়তা আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেও নেই। সব স্টাফরা লাঞ্চের জন্য বাইরে গিয়েছে।ওকেও বলেছিলো কিন্তু প্রিয়তা বাইরের খাবার একদম খেতে পারে না!সেজন্য মানা করে দিয়েছে।তাছাড়া বাসা থেকে তো খাবার নিয়েই এসেছে।না আনলে একটা কথা ছিলো।আশেপাশে কাওকে না দেখে প্রিয়তা নিজের সিট থেকে উঠে বসে গেলো।মানুষের নানারকম পার্সোনাল কথা থাকতেই পারে।কান পেতে কথা শুনাটা মোটেও ঠিক না।বড় অন্যায়!তাছাড়া ওর মান সম্মান বলেও একটা ব্যাপার আছে।কেও দেখে ফেললে তো নির্ঘাত চোর ভাবতেও দ্বিধাবোধ করবে না।নিজেকে এই কথাগুলো বুঝিয়ে আবার চেয়ারে বসে পরল।যা কথা বলার বলুক৷ ওর কি?ভেবেই নিজের খাওয়াতে মন দিলো।
এশা কেবিনে ঢুকতেই দেখলো ইনাম লেপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে আছে।কয়েক কদম এগিয়ে টেবিলের সামনে গিয়ে বলল,
“ডেকেছিলি?”
“হুম।”
“কিসের জন্য?মিস করছিলি বুঝি?”
ইনাম এখনো এশার দিকে চোখ তুলে তাকায়নি।ল্যাপটপে চোখ রেখেই বলল কাছে আসতে। এশা অবাক হয়ে বলল,
“কি?”
“বললাম এখানে আয়!”
ইনাম নিজ থেকে ওকে কাছে যেতে বলছে।এই সুযোগ কি করে হাতছাড়া করবে ও?ইনামের কাছে যেতেই ইনাম বলল,
“তুইই গতকাল ইচ্ছা করে প্রিয়তাকে ঢাক্কা দিয়েছিলি?”
এশা ল্যাপটপের স্কিনে চোখ রাখতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।অফিসের ভিতরে যে সিসিটিভি আছে সেটা ওর মাথাতেই ছিলো না!কি করে এমন ভুল করলো?ওর করা পুরো কাজ ল্যাপটপে দেখা যাচ্ছে।আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে….”
এশাকে কোন কিছু না বলতে দিয়ে ইনাম বলল,
“কেন করেছিস এরকম?অইটুকু একটস মেয়ের সাথে কিসের শত্রুতা তোর?”
“দেখ তুই ভুল ভাবছিস!অইরকম কিছুই না।”
“আমার কাছে ভাগ্যিস মেইন কপি ছিল অই ফাইলের। না থাকলে কত বড় ক্ষতি হতো এই কোম্পানির বুঝতে পারছিস?তাছাড়া তোর জন্য অই মেয়েটা ম্যানেজারের কাছে বকা খেয়েছে।”
এশা নিচু গলায় বলল,
“আসলে ওর উপর রেগে গিয়েছিলাম আমি।ও সবসময় আমার মুখে মুখে কথা বলে।যা একদমই সহ্য হয়নি আমার।সেজন্য… ”
“আজ তুই ওর উপর রাগ করে কোম্পানির কাগজ নষ্ট করেছিস।এমনও হতে পারে কাল তুই প্রিয়তারই কোন ক্ষতি করে বসলি!”
এশা অবাক হয়ে বলল,
“কি বলতে চাইছিস?সরাসরি বল?”
“দেখ কেওই চায়না তার অফিসের স্টাফের ক্ষতি হোক!আমিও ব্যতিক্রম না।হয় তুই আমাকে প্রমিস করবি যে তুই প্রিয়তার পিছে লাগবি না।ওর কোন ক্ষতি করবি না।ও যদি কোন ভুল করে তাহলে আমাকে বলবি।আমি যা করার করব!আর নয়তো….”
“আর নয়তো কি?”
“আর নয়তো তুই রিজাইন নিয়ে এই চাকরি ছেড়ে দিবি। তোর ইচ্ছার উপর ডিপেনন্ড করছে।”
“ইনাম!তুই অই মেয়েটার জন্য আমাকে বলছিস এই অফিস থেকে রিজাইন নিতে?”
“স্টাফের ভালোর জন্য আমাকে যা করতে হয় আমি তাই করব!”
ইনাম বসা থেকে উঠে যেতে যেতে বলল,
“কি ডিশিশন নিলি সেটা আমাকে জানাবি!”
কেবিনের দরজা খুলতেই প্রিয়তা গিয়ে সরাসরি ইনামের গায়ের উপর পরলো।ইনাম হতভম্ব হয়ে স্তব্দ দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তা ইনামের বুকের উপর গিয়ে পরেছে।ইনাম এক হাতে জড়িয়ে রেখেছে প্রিয়তাকে যাতে না পরে যায়। হুশ ফিরতেই প্রিয়তা সরে এসে আমতা আমতা করে বলল,
“সরি!আসলে আমি….”
“বাই এনি চান্স তুমি কি আমাদের কথাগুলা শুনছিলে?”
“না তো!”
ইনাম ভ্রু কুচকে বলল,
“তাহলে দরজার সামনে কি করছিলে?”
“ইয়ে মানে হাত ধুতে ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম।”
“কিন্তু ওয়াশরুম তো ও পাশে।”
প্রিয়তা পিছনে ফিরে দেখল আসলেই ওয়াশরুম পিছনের দিকে।প্রিয়তা কিছু বলতেই যাবে হঠাত ও খেয়াল করলো ইনামের সাদা শার্টে ওর ঠোটের লিপস্টিকের দাগ লেগে আছে।
“লিপস্টিক!”
ইনাম অবাক হয়ে বলল,
“এখানে লিপস্টিকের কথা আসছে কোথা থেকে?”
“আপনার শার্টে লিপস্টিকের দাগ!”
ইনাম নিজের শার্টের দিকে তাকাতেই দেখল বুকের বামপাশের দিকে শার্টে গোলাপি লিপস্টিকের দাগ লেগে আছে।অনেকটা কিসের মতো দেখাচ্ছে।ইনাম কিছু না বলে সরাসরি কেবিনের ভেতর চলে গেলো।অফিসের কেও দেখলে কেলেংকালি হয়ে যাবে।প্রিয়তা কেবিনের ভেতরে গিয়ে দেখলো ইনাম কালো ব্লেজার পরে শার্টের দাগটা হাইড করে ফেলেছে।ব্লেজার পরায় এখন আর দাগ দেখা যাচ্ছে না।প্রিয়তা কেবিনে ঢুকতেই ইনাম কটমট করে তাকালো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা এই ফাস্ট ইনামকে রেগে যেতে দেখেছে।
“সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি…. ”
“কি বুঝতে পারোনি?আমি হুট করে দরজা খুলবো এটা? ”
“লিপস্টিকের ব্যাপারটা!”
“এখন এইটা কি করলে শার্ট থেকে উঠবে?”
“ধুলে!আমি আপনাকে বাসায় গিয়ে ধুয়ে দিব।দেখবেন শার্ট পুরা চকচক করবে!”
“তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমার শার্ট এখন ময়লা হয়ে কালো হয়ে আছে?”
প্রিয়তা মুখে হাত দিয়ে দুইদিকে মাথা নাড়ালো।
“আমি বলেছি শার্টে কোন লিপস্টেকের দাগ থাকবে না!”
“সিউর তুমি?”
“হুম।”
“পরে যদি দেখি আমার শার্টে একটা ফোটাও লিপস্টিকের দাগ আছে তাহলে তোমার স্যালারি থেকে আমি শার্টের দাম কেটে নিব।”
“কত্ত বড় হারা” মি!আমাকে কিনা বলে শার্ট থেকে দাগ না উঠলে স্যালারি থেকে শার্টের দাম কেটে রেখে দিবে!আমিও দেখব শার্ট থেকে দাগ না উঠে যায় কই!”
রাগে ফুসতে ফুসতে চেয়ারে এসে বসলো।পরমুহূর্তেই কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে পরতেই গাল গরম হয়ে গেলো।কান থেকে ধোয়া বেরুচ্ছে ওর।ও কিনা ইনামের বুকে চুমু খেয়েছে?কি লজ্জা কি লজ্জা!লোকটা ওকে কি মনে করলো?মাথা থেকে সব কথা দুর করে কাজে মনযোগ দিলো।
ইনাম শার্টের দিকে তাকিয়ে আছে। ইনডাইরেক্টলি কি ওদের মধ্যে কিস হয়ে গেলো?প্রিয়তা ওকে কিস করেছে?মাথা দুইপাশে ঝেড়ে মাথা থেকে ঘটনা বের করতে চাইলো।গরম লাগছে ওর।টেবিল থেকে রিমোট নিয়ে এসির পাওয়ার কমিয়ে দিলো।গলার টাই ধিলে করে ফেলল। হঠাত গরম লাগছে কেন?আজব!
ইনাম আর প্রিয়তা বাসে উঠলো।বাসে উঠতেই ভাগ্যবশত দুটা সিটও পেয়ে গিয়েছে খুশি মনে প্রিয়তা গিয়ে জানালার পাশে বসলো।আর ইনাম তার পাশে।প্রিয়তা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ইনাম মাথা নিচু করে মোবাইল চালাচ্ছে।হঠাত খেয়াল করলো ওর কাধে কেও মাথা রেখেছে।পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল প্রিয়তা ইনামের কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
আলোর ভীড়ে পর্ব ৮
ইনাম প্রথমে চাইলো প্রিয়তাকে ডেকে উঠিয়ে দিতে কিন্ত প্রিয়তার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে পারলো।প্রিয়তার ঘুম ভাংগলো কারোর বুকের হার্টবিটের আওয়াজ শুনে। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো ও ইনামের বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো।আসগে আস্তে সরে এসে নিজের সিটে বসলো।ভাবল ইনাম হয়তবা কিছু বলবে কিন্তু ইনাম কিছুই বললো না দেখে অবাক হলো প্রিয়তা।