আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৯
Raiha Zubair Ripti
বসার ঘরে মাথায় হাত ঠেকিয়ে সোফায় বসে আছে রাত। আষাঢ় তার মায়ের সাথে কথা বলতেছে। সন্ধ্যা নিচে মায়ের বাসায় গেছে। শরিফা কনা কে নিয়ে রাতের রুমে। রাত চোখ বুঝে চিন্তা করতেছে..নিজেই চলে ভাইয়ের টাকায় এখন কনা এসেছে জীবনে। এসেছে কি আবার? নিজেই নিয়ে এসেছে। এখন কনার মান্থলি খরচ তো আর আষাঢ় ভাইয়ের কাছে চাওয়া যায় না। নিজের একটা ইনকাম সোর্স বের করতে হবে। কনার বাবা কে কথা দিয়েছে কনাকে সে অখুশি রাখবে না। কথাটা ভাবতেই আরাফাত এসে রাতের সামনে দাঁড়ায়।
-“ রাত এটা তোর জন্য।
আরাফাত কথাটা বলেই একটা প্যাকেট রাতের হাতে ধরিয়ে দেয়। রাত প্যাকেট টার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি আছে এতে?
-“ এখানে দেনমোহরের টাকা আছে। আষাঢ় দিয়ে পাঠালো। কনা কে দিয়ে দিস।
রাত প্যাকেট টা ফের আরাফাতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ ভাইয়ার টাকা কেনো আমি আমার বউ কে দিব? যেদিন ইনকাম করতে পারবো। দেনমোহর পরিশোধ করার সামর্থ্য হবে নিজের টাকায়। সেদিন কনাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিব।
-“ তা বললে হয় নাকি? তোর তো এখনও পড়াশোনা ই শেষ হয় নি। এখন আপাতত দিয়ে দে। দেনমোহর পরিশোধ না করলে তো বউকে ছোয়াও নিষেধ।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
-“ ভালো করেই জানো বিয়েটা কোন সিচুয়েশনে হয়েছে। সেখানে ছুয়া ছুয়ির কথা কেনো আসবে? আর হ্যাঁ নিজের টাকায় যেদিন দেনমোহর পরিশোধ করবো সেদিনই না হয় ছুঁয়ে দেখবো।
রাতের কথা শুনে আরাফাত কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলে উঠল-
“তুই যেমনটা ভালো মনে করিস, তেমন কর।
আরাফাত ধীরে ধীরে প্যাকেটটা নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। রাতের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কিছু আর বলল না।
এদিকে শরিফা কনাকে নিয়ে ঘরে বসে আছে। কনার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। আরাফাত দরজার বাহির থেকে শরিফার নাম ডেকে বলল-
-“ এই মেয়ে বের হচ্ছো না কেনো? রাত রুমে যাবে না?
-“ হ্যাঁ আসছি।
শরিফা কনার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। কনা এবার পুরো রুমে চোখ বুলালো। আজই প্রথম রাতের রুমে আসা। খুবই সিম্পল রুম। একটা বেড, একটা পড়ার টেবিল,একটা আলমারি,একটা ভেনিটি আর একটা ডিভান। পুরো রুমে চোখ বুলাতেই রাত ভেতরে ঢুকলো। দরজা বন্ধ করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে সাধারণ পোশাক পড়ে নিলো। কনা পা ঝুলিয়ে বসে রইলো। রাত বের হতেই কনা দাঁড়িয়ে বলল-
-“ শুনুন আপনার সাথে আমার কথা আছে।
রাত বিছানায় শুতে শুতে বলল-
-“ আমি ভীষণ টায়ার্ড এখন। সকালে বলছি কথা।
-“ আচ্ছা। আমাকে কি সোফায় শুতে হবে?
রাত কনার দিকে তাকালো।
-“ আমার বেড যথেষ্ট বড়। তিনজন শুলেও চাপাচাপি হবে না।
-“ আচ্ছা। কিন্তু..
-“ কিন্তু কি আবার?
-“ আমি শাড়ি টা পাল্টাবো।
-“ ওয়াশরুম তো আছে গিয়ে পাল্টাও মানা করছি নাকি।
-“ পোশাক তো নেই এখানে। আর আনাও তো হয় নি।
রাত লম্বা শ্বাস টেনে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। দরজা খুলে সোজা সন্ধ্যার রুমের দিকে গেলো। দরজার কাছে যেতেই দেখলো সন্ধ্যা ল্যাপটপে বসে কিছু একটা করছে। রাত দরজায় টোকা দিয়ে বললো-
-“ ভাবি।
সন্ধ্যা ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে বলল-
-“ হ্যাঁ বলুন।
-“ আপনার একটা শাড়ি বা কামিজ দিন। কনার জামা কাপড় তো আনা হয় নি।
-“ ওহ্ হ্যাঁ এখনই দিচ্ছি।
সন্ধ্যা আলমারি থেকে সুতি শাড়ি বের করে রাতের হাতে দিলো। রাত থ্যাংকস বলে চলে গেলো। সন্ধ্যা আবার ল্যাপটপে মুখ গুজলো। অনেক কাজ বাকি তার এখনও।
রাত রুমে এসে কনাকে শাড়ি টা দিয়ে শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে বলল-
-“ তাড়াতাড়ি পাল্টে লাইট অফ করে দাও রুমের। আই নিড স্লিপ।
কনা ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ি পাল্টে বের হয়। বিছানায় শুতে গিয়ে দেখলো চাদর বা কম্বল কিছুই নেই বেডে। শাড়ির ভরসা নেই। কখন কোন হাল হয় বলা দায়। কনা আবার রাত কে ডাকলো-
-“ শুনুন। ঘুমিয়ে পড়েছেন? কি হলো শুনুন না।
রাত বিরক্ত হয়ে বলল-
-“ আবার কি হলো?
-“ চাদর বা কম্বল কোথায় রাখা আছে?
-“ আলমারি তে দেখো।
কনা আলমারি টা খুলে দেখলো কম্বল রাখা আছে। কনা সেটা বের করে বিছানায় রেখে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো।
আষাঢ় রুমে আসতেই দেখলো সন্ধ্যা সোফায় বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে। পুরো রুম অন্ধকার। আষাঢ় হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো। রাত এখন সাড়ে ১২ টা বাজে। আর সন্ধ্যা কে তো আগে কখনও ল্যাপটপ চালাতে দেখে নি। এই ল্যাপটপের জন্য ই কি তাহলে ও বাসায় গিয়েছিল? আষাঢ় পকেট থেকে ফোনটা বের করে চার্জে দিয়ে সন্ধ্যার পাশে বসে বলল-
-“ কি করছো?
সন্ধ্যা চমকে গেলো। তড়িঘড়ি করে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে বলল-
-“ ন..না কিছু না। আপনি কখন এসেছেন?
-“ কেবলই আসলাম। তুমি কি করছিলে ল্যাপটপে?
-“ ঐ..যে ভার্সিটি তে প্রেজেন্টেশন আছে সে…সেটারই কাজ করছিলাম। ঘুমাবেন তো চলুন।
আষাঢ় ভ্রু কুঁচকালো।
-“ ভার্সিটি কবে যাচ্ছ?
-“ কবে যাচ্ছি? একটু ভেবে বলল- “ সপ্তাহখানেক পর।
-“ আচ্ছা শুবে তো।
-“ হু আমি শুলাম আপনিও আসুন।
সন্ধ্যা গিয়ে বিছানায় শুলো। আষাঢ় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সেও শুয়ে পড়লো।
গভীর রাত..চারিদিকে শুনশান বাতাস। হাল্কা কুয়াশা। রাত তখন তিনটা বাজে। জানলা খোলা থাকায় রুমের ভেতর ঠান্ডা বাতাস আসতেছে। সন্ধ্যা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আষাঢ় ও ঘুমিয়েছিল কিন্তু আকস্মিক ফোনে কল আসায় তার ঘুম ভেঙে যায়। এত রাতে কার ফোন আবার? আষাঢ় বিছানা ছেড়ে উঠে ফোনের কাছে আসলো। স্কিনে ভালো করে তাকাতেই দেখলো অচেনা নম্বর থেকে কল এসেছে। আষাঢ় ভ্রু কুঁচকালো। রিসিভ করতে গিয়ে দেখলো ফোন কেটে গেছে। ফের উল্টো ঘুরে চলে আসতে নিলে আবার বেজে উঠে ফোন। আষাঢ় রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসলো-
-“ ইমার্জেন্সি হসপিটালে আসুন। একজন হার্টের রোগী ভর্তি হয়েছে।
আষাঢ় অবাক হয়ে বলল-
-“ এখনই?
-“ হ্যাঁ।
কথাটা বলেই ফোন কেটে গেলো ওপাশ থেকে। আষাঢ় ওয়াশরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে ফর্মাল পোশাক পড়ে উপরে এপ্রন পড়ে সন্ধ্যার ঘুমন্ত মুখটার দিকে একবার তাকালো। এখন ডাকলে ঘুম নষ্ট হয়ে যাবে সন্ধ্যার। তাই ফোনে একটা মেসেজ পাঠিয়ে আষাঢ় চলে গেলো।
ভোরের দিকে হাল্কা শীত অনুভত হতেই ঘুম ভেঙে যায় রাতের। মৃদু চোখ মেলে উঠে বসে কম্বল নেবার জন্য। পাশ ফিরতেই চোখ যায় কনার উপর। শরীরে তার কম্বল নেই। শাড়ি কিছুটা পায়ের উপরে উঠে গেছে। শাড়ির আঁচল বুক থেকে সরে গিয়ে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাত চোখ সরিয়ে নিলো। পায়ের নিচে থাকা কম্বল টা কনার শরীরে দিয়ে নিজেও নিয়ে শুয়ে পড়লো।
সন্ধ্যা ঘুম থেকে উঠে পাশে আষাঢ় কে দেখতে না পেয়ে ধরে নিলো হয়তে ভোরের দিকে হসপিটালে চলে গেছে। কারন আজই তার যাওয়ার কথা ছিলো হসপিটালে। সেজন্য আর আষাঢ় কে নিয়ে না ভেবে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে আসে সকালের ব্রেকফাস্ট বানাতে। চা পাউরুটি আর ডিমপোা করে খাবার টেবিলে সাজায়। জগ নিয়ে জুশ বানাতে নিলে তখনই দরজায় কলিংবেল বেজে উঠে। সন্ধ্যা জগ হাতে নিয়েই দরজা খুলতেই দেখে শ্রেয়া এসেছে। সন্ধ্যা দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়। এখন ৭ টা বেজে ৪৫ মিনিট। শ্রেয়া সন্ধ্যা কে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল-
-“ ভেতরে আসতে বলবি না নাকি?
সন্ধ্যা সরে দাঁড়ালো। শ্রেয়া ভেতরে ঢুকে খাবার টেবিলের দিকে আগে তাকালো। শ্রেয়া চেয়ার টেনে বসে বলল-
-“ বাহ্ খাবার রেডি দেখি টেবিলে।
কথাটা বলেই একটা পাউরুটি আর একটা ডিম মুখে পুরে নিলো। শ্রেয়া খেতে খেতে বলল-
-“ শুনলাম রাত কে নাকি বিয়ে করিয়েছিস তুই। বাহ্ নিজের বান্ধবী কে রাতের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলি।
সন্ধ্যার ভ্রু কুঁচকে আসলো।
-“ এসব বলার জন্য তুই এখানে এসেছিস?
শ্রেয়া হেঁসে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ না রে। আমি তোদের দেখতে এসেছি। আচ্ছা আষাঢ় কোথায়?
-“ কেনো আষাঢ় কে দিয়ে কি করবি?
-“ না এমনি। রাত রা ঘুম থেকে উঠেনি বুঝি?
-“ কেনো বলোতো? আমাদের ঘুম থেকে উঠা নিয়ে তুমি কি করবে?
কথাটা বলতে বলতে রাত এগিয়ে আসলো। শ্রেয়া মুচকি হেঁসে বলল-
-“ না কি আর করবো? কিছুই না। তা বলছি তোমার না গতকাল রাতে ফ্লাইট ছিলো। বিদেশে না গিয়ে সোজা বিয়ে করতে গেলে যে?
সন্ধ্যা এবার দাঁত চেপে বলল-
-“ এসে থেকেই পাগলের মতো বিলাপ কেনো করছিস? তুই বাসায় যা।
-“ বাহ্ রে খেদিয়ে দিচ্ছিস? নতুন বউ কোথায় একটু নিয়ে আয় দেখি মুখ।
রাত সোফায় বসতে বসতে বলল-
-“ কিছু কি নিয়ে এসেছো শ্রেয়া? না মানে নতুন বউ দেখতে হলে তো কিছু নিয়ে আসতে হয়।
-“ ইশ্ ভুলেই গেছি কিছু যে আনতে হয়।
-“ নো প্রবলেম। এখন তো মনে করিয়ে দিলাম। যাও নিয়ে আসো।
রাতের কথার প্রেক্ষিতে শ্রেয়া কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিলে দরজার সামনে শ্রেয়া তার বাবা কে দেখে চুপ হয়ে গেলো। সেই সাথে বিরক্ত ও হলো ইচ্ছে করে ঠিক সময় করে চলে এসেছে সে। শ্রেয়ার বাবাকে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৮
-“ বাসায় আয়।
কথাটা বলেই চলে গেলো সে। শ্রেয়া কিছুটা রাগান্বিত হয়েই চলে গেলো।