আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৯

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৯
Raiha Zubair Ripti

পুরো বাসা টা আজ অন্ধকার। কারন হঠাৎ আকস্মিক ঝড়ের কারনে বিদ্যুৎ মামা চলে গেছে। আষাঢ় ঝড় মাথায় করেই বাড়ি ফিরেছে। পুরো বিল্ডিং অন্ধকার দেখে ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো। কলিং বেল বাজবে না সেজন্য দরজাটাতেই কড়া নাড়লো। কিন্তু কড়া নাড়ার শব্দ হয়তো রুমের ভেতর থাকা মানুষ জনের কানে পৌঁছাচ্ছে না। সেজন্য আষাঢ় সন্ধ্যা কে ফোন করলো। মিনিট পাঁচেক পর সন্ধ্যা এসে দরজা খুলে দিলো। মূহুর্তে আষাঢ় থমকে গেলো। লাল টুকটুকে শাড়ি পরিহিত সন্ধ্যাকে দেখে। আষাঢ় অবাক হয়েই ভেতরে ঢুকলো। পায়ের জুতা খুলতে খুলতে বলল-

-“ এই ঝড়ের ভেতর শাড়ি পড়েছো যে? মুড সুয়িং হয়েছে নাকি?
-“ হ্যাঁ মুড সুয়িং ই হয়েছে।
আষাঢ় মৃদু হেঁসে নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে সন্ধ্যা বাঁধা দিয়ে বলল-
-“ এ রুমে না। কনার রুমে যান। বিছানায় পোশাক রাখা আছে ওটা পড়ে বের হন।
-“ কনা বাসায় নেই?
-“ না।
-“ নটি গার্ল ফাঁকা ফ্ল্যাটে আমার সাথে ইয়ে করতে চাচ্ছো না তো?
-“ হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন। ইয়ে টিয়ে সব করবো। আফটার অল আপনি অনেক হর্ণি বলে কথা।
ফিসফিস করে কথাটা বলতে বলতে সন্ধ্যা আষাঢ়ের বা গালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করে। আষাঢ় সন্ধ্যার হাত টা ধরে চুমু খেয়ে চোখ টিপে বলল-

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ আমি ফটাফট আসতেছি। জাস্ট ফাইভ অ্যা মিনিট।
আষাঢ় রুমে ঢুকে বিছানার উপর পাঞ্জাবি পারফিউম, ওয়াচ দেখে মৃদু হাসলো। তারপর পাঞ্জাবি টা পড়ে ঘড়ি টা হাতে লাগিয়ে কড়া করে পারফিউম লাগালো। রুম থেকে বের হতেই দেখলো সন্ধ্যা নেই। আষাঢ় হাঁক ছেড়ে সন্ধ্যা কে ডেকে বলল-
-“ কোথায় তুমি পাখি?
সন্ধ্যা রুমের ভেতর থেকে বলল-
-“ আমি রুমের ভেতর আপনি আসুন।
-“ তুমি এত ফাস্ট শোনা? অ্যাম রিয়েলি ইমপ্রেসড।

কথাটা বলে রুমের দরজা খুলতেই উপর থেকে ফুলের পাপড়ি আষাঢ়ের শরীরের উপর পড়তে লাগলো। আষাঢ় সামনে তাকাতেই দেখলো কনা,রাত, তার মা, সন্ধ্যা হাত তালি দিয়ে হ্যাপি বার্থডে টু ইউ বলতেছে।
আষাঢ় ফোন বের করে তারিখ দেখে নিলো। মার্চের আজ ১৫ তারিখ। ভুলেই গিয়েছিলো আজ তার বার্থডে। সন্ধ্যা এজন্য সেজেছে! আর তার মা ভাই কনা এ রুমের ভেতর ছিলো! কি লজ্জা আষাঢ় এতক্ষণ ধরে সন্ধ্যার সাথে যেই টোনে কথা বলছিলো এখন মনে হচ্ছে ফ্লোর ফাঁক করে ভেতরে ঢুকে যেতে। কিন্তু আফসোস আষাঢ় তা পারছে না।
আষাঢ়ের মা এগিয়ে আসলো। আষাঢ় কে জড়িয়ে চুমু খেয়ে বলল-

-“ শুভ জন্মদিন বাপ।
-“ থ্যাংক ইউ মা। আমি ভুলেই গেছিলাম আজ আমার জন্মদিন।
রাত, কনা এগিয়ে আসলো। রাত ভাইকে জড়িয়ে বলল-
-“ হ্যাপি বার্থডে ভাই। তোমার আগামী দিনের পথ চলা শুভ হোক।
-“ হ্যাপি বার্থডে আষাঢ় ভাই। আমরা কিন্তু রুমের ভেতর থেকে সব শুনেছি বুঝলেন।
আষাঢ় মাথা চুলকে মুচকি হাসলো।
রাত ভাইকে টেনে সন্ধ্যার পাশে দাঁড় করিয়ে বলল-
-” কেক কাটা যাক তাহলে?
আষাঢ় পাশে তাকাতেই দেখলো একটা কেক। তার পাশে ক্যান্ডেল জ্বালানো।
রাত কেক টা এনে আষাঢ়ের সামনে রাখলো।

আষাঢ় ছুরিটা হাতে তুলে নিয়ে সামনে রাখা কেকের দিকে তাকালো। সবার মুখে হাসির ঝিলিক। আষাঢ়ের মা, সন্ধ্যা, কনা, আর রাত—সবাই যেন অপেক্ষা করছে কখন সে কেক কাটবে।
আষাঢ় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছুরিটা কেকের উপর রাখল। মোমবাতিগুলো নিভিয়ে একবার চারপাশে তাকাল। মোমের আলোয় সন্ধ্যার মুখে সেই চিরপরিচিত হাসি।
কেকের প্রথম টুকরো কেটে আষাঢ় মায়ের দিকে এগিয়ে দিল।
-“মা। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা দিনের জন্য।
আষাঢ়ের মা এক কামড়ে কেক মুখে দিয়ে সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে বললেন,
-“আমার সন্তানের জন্মদিন এমন হোক, এটা তো চেয়েই ছিলাম। আর এই প্ল্যান তো সন্ধ্যা আর রাত করেছে।
-“ শুধু রাতের কথা কেনো বললেন মা? আমিও তো ছিলাম এসবে।
আমেনা বেগম মৃদু হেসে বললেন-

-“ সরি মা। কনাও ছিলো।
-“ একটা কথা বলবো ভাবছি।
-“ বলো ভাইয়া।
-“ দাঁড়া আগে কেক খাইয়ে নেই তোদের।
আষাঢ় রাত কনা কে কেক খাইয়ে সন্ধ্যার মুখের সামনে কেক ধরলো। সন্ধ্যা মুখে নিতে নিলে আষাঢ় বলল-
-“ থ্যাংক ইউ সো মাচ মাই লাভলি ওয়াইফ।
সন্ধ্যা হেঁসে দিলো। আষাঢ় এবার গলা খাঁকারি দিয়ে বলল-
-“ রাত তুই তো একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে জব করিস তাই না?
-“ হু।

-“ কনা, আমি, সন্ধ্যা যেহেতু রাজশাহী থাকি,তখন তুই আর মা ঢাকা একা থেকে কি করবি? তারচেয়ে এখানেই থাক। সন্ধ্যার তো মায়ের দরকার এই সময় টাতে।
-“ মা থাকুক। আমার চাকরি তো ঢাকায়।
-“ আমার বন্ধুর কোম্পানি আছে৷ তার কোম্পানি তে ম্যানেজার সহ কয়েকটা পোস্ট টা খালি আছে৷ তুই ইন্টারভিউ দিয়ে দেখতে পারিস।
-“ ভাবার সময় দাও।
-“ ডিনার করবে তো সকলে? ভাইয়া, মা, সন্ধ্যা আয় আমি খাবার সাজাচ্ছি।
কনা চলে গেলো। রাত আর আমেনা বেগম ও চলে আসলো। আষাঢ় সন্ধ্যার বা হাত ধরে চুমু খেয়ে বলল-
-“ হয়ার ইজ মাই বার্থডে গিফট?
সন্ধ্যা পেটের দিকে ইশারা করে বলল-

-“ এই যে এখানে। এর চেয়ে আর বড় কোনো গিফট আছে নাকি পৃথিবীতে?
আষাঢ় হাটু গেঁড়ে বসে সন্ধ্যার পেটে চুমু খেয়ে বলল-
-“ অপেক্ষা করতে পারছি না বাবা তোমার জন্য।
-“ বাবা? মা ও তো হতে পারে।
-“ আমার মন বলছে ছোট্ট আষাঢ় আসবে।
-“ আচ্ছা চলুন খেতে।

সকলে মিলে রাতের ডিনার টা করে নিলো। দুই রুম হওয়ায় সন্ধ্যার রুমে, সন্ধ্যা আমেনা বেগম আর কনা ঘুমালো। আর আরেক রুমে রাত,আষাঢ়। কারেন্ট এসেছে অনেকক্ষণ আগেই। আষাঢ় রাতের পাশে বিছানায় বসলো। অনেক দিন ধরেই জিজ্ঞেস করবে বলে বলে আর করা হচ্ছে না। তাই আজ যখন সুযোগ এসেছ তখন করাই যায়।
-“ তুই কি কনা কে নিয়ে হ্যাপি রাত?
হঠাৎ ভাইয়ের থেকে এমন কথা শুনে চমকে উঠলো রাত।
-“ হঠাৎ এ কথা কেনো ভাই?
-“ তোদের বিয়ে তো আর ৫ টা বিয়ের মতো স্বাভাবিক ভাবে হয় নি।
-“ আমি আসলেই হ্যাপি। চিন্তা করিও না।
-“ শিওর?
-“ ১০০% শিওর। এবার ঘুমানো যাক?

আষাঢ় স্মিত হেঁসে রাত কে শুয়ে পড়তে বললো। কিছুক্ষণ আষাঢ় ল্যাপটপে কাজ করে নিজেও শুয়ে পড়লো।
পরের দিন রাত চলে গেলো ঢাকা। থেকে গেলেন আমেনা বেগম। নিত্য দিনের মতো কনা সন্ধ্যা ভার্সিটি চলে যায়। রাত একা ঢাকা থাকবে এজন্য বেশ চিন্তা হচ্ছে কনার। কি দরকার চলে যাওয়ার? ভাইয়া তো বললো এখানে জবের চেষ্টা করতে। তা না করে চলে গেলো। মাস একের ভেতর রাত আবার আসলো। তবে এবার ইন্টারভিউ দিতে। যদি টিকে তাহলে এখানেই থাকবে আর তা না হলে ঢাকা। কনা সব গুছিয়ে রাখলো রাতের ব্যাগে। ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গেলো রাত। কনা আর আজ ভার্সিটি গেলো না। সন্ধ্যা একা গেছে। কনা আমেনা বেগমের সাথে গল্প করলেন।
সন্ধ্যা ভার্সিটিতে ক্লাস সেরে বাহিরে ফুচকা দেখে নিজেকে আর সামলাতে না পেরে খেতে গেলো। কড়া মরিচ দিয়ে দু প্লেট খেয়ে বিল পে করে বাসর উদ্দেশ্যে হাটা দিলো। তবে একটু অস্বস্তি হচ্ছে । বাসার মোরে আসতেই বাসায় ডিম নেই ভেবে মুদির দোকান থেকে এক হালি ডিম নিয়ে হাঁটা ধরলো। হঠাৎ মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে শক্ত দু হাত সন্ধ্যা কে ধরে ফেলে। সন্ধ্যার হাত থেকে ডিম গুলো পরে যায়। কানের কাছে ভেসে আসলো অস্থির এক কন্ঠ –

-“ ঠিক আছিস?
কথাটা কান অব্দি পৌঁছাতেই পুরো শরীর বরফের মতো জমে গেলো। আষাঢ় সেই পুরুষটির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে পেছন ফিরে বলল-
-“ আপনি এখানে?
নিখিল চোখের চশমা টা ঠিক করলো।
-“ হ্যাঁ এখানেই থাকি।
পাশ থেকে এক মেয়ে এসে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ তুমি এখানে? আর আমি তোমাকে এদিল ওদিক খুঁজছি।
সন্ধ্যা মেয়েটার দিকে তাকালো। মিষ্টি দেখতে মেয়েটা।
-“ তিতলি ও সন্ধ্যা।
তিতলি মেয়েটা হাসলো সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে। তারপর হুট করে জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ কেমন আছো সন্ধ্যা? শুনলাম তুমি মা হতে চলছো? এই সময় একা একা রাস্তায় বের হওয়া ঠিক না।
সন্ধ্যা ইতস্তবোধ করলো।

-“ আসলে ভার্সিটি গিয়েছিলাম। সেজন্য। আর তাছাড়া প্রতিদিন কনা যায় সাথে। আজ যায় নি। কিন্তি আপনি কে?
-“ আমার ওয়াইফ।
কথাটা কানে আসতেই সন্ধ্যা চমকালো।
-“ বিয়ে করেছেন?
-“ হু দেড় মাস হবে।
-“ ওহ্ কংগ্রাচুলেশনস। বাসায় জানে?
-“ মা বাবা জানে।
-“ তো বাসায় গিয়ে থাকছেন না কেনো?
-“ যাবো নেক্সট মাসে।
-“ আচ্ছা একদিন আসবেন বউ নিয়ে। ভালো লাগবে।
-“ সময় হলে যাব। একা যেতে পারবি? নাকি দিয়ে আসবো বাসা অব্দি?
-“ না পারবো যেতে। ভালো থাকবেন।
সন্ধ্যা চলে গেলো। নিখিল সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আগের থেকে সন্ধ্যার মাঝে কেমন প্রাপ্ত বয়সের একটা ছাপ চলে এসেছে।
-“ নতুন অনুভূতির সাথে পরিচয় হতে যাচ্ছে যে। চলো কেনাকাটা আছে তো।
-“ হুম চলো।

সন্ধ্যা বাসায় এসে নিজের রুমে ঢুকে সোজা গোসল সেরে নিলো। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। ফুচকা গুলো খাওয়ার পর থেকেই এমন হচ্ছে। এজন্যই আষাঢ় মানা করতো খেতে। কিন্তু পাকনামি করে খেলো। অস্থিরতা কমানোর জন্য সন্ধ্যা একটা ঘুম দিলো। ঘুমটা গিয়ে ভাঙলো মাগরিবের আজানের পর। তখন আষাঢ় এসেছে। অবেলায় সন্ধ্যা কে শুয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ শরীর ঠিক আছে?
সন্ধ্যা উঠে বসে মাথা নেড়ে বলল-
-“ হু ঠিক আছে।
-“ চোখ মুখ ওমন লাগছে কেনো?
-“ ঘুমাইছিলাম সেজন্য।
-“ ওহ্ শুয়েই থাকবে এখন?
-“ হু।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৮

এরমধ্যে কনা রুমের ভেতর এসে উৎফুল্ল নিয়ে জানালো রাতের জব লেগে গেছে। কনা সন্ধ্যা কে জড়িয়ে ধরলো। এবার থেকে রাত এখানেই থাকবে তাহলে। আষাঢ় রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। বাসাটাও চেঞ্জ করতে হবে। এই দুই রুমের ফ্ল্যাটে তো আর থাকা যাবে না। বাসা দেখতে হবে কাল গিয়ে। রাত বাড়ি ফিরলে সন্ধ্যা বাদে সবাই ডিনার করে নেয়। রাত কনার রুমে গিয়ে ঘুমায় কনার সাথে আর আষাঢ় আমেনা বেগম কে সন্ধ্যার সাথে ঘুমাতে বলে। আষাঢ় বসার ঘরের সোফাতেই শুয়ে কোনো রকম রাত টা কাটিয়ে দেয়।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা শেষ পর্ব