ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১১
Arishan Nur
ফোন বেজে ওঠার পর একাকী থেমে যায়। এরপর একটা ম্যাসেজ আসলো। ম্যাসেজটা স্ক্রিনেই নোটিফিকেশনের মাধ্যমে দেখা যায়–” ওয়ান্ট টু টক টু ইউ। রিসিভ মাই কল সমুদ্র ।”
সমুদ্র ম্যাসেজ দেখামাত্রই দাঁড়িয়ে গেলো। উপস্থিত সবার চোখ গেল হবু বরের উপর। সমুদ্রের হাতে ফোন ছিলো। সে এক কদম এগিয়ে এসে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ। কিছু বলবে মন হয়! লাল টুকটুকে বউ সেজে আয়না এমনটা ভেবেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিপাণে তার দিকে থমকে দাঁড়ায়। আজ ওনাকে এতো বেশি সুন্দর লাগছে! সবার দৃষ্টি তখন সমুদ্রের দিকে।
সে হাত এগিয়ে দিলো। এটা ভদ্রতাসূচক সব প্রোগ্রামেই বরকে এই টাইপ স্টাইলে কনেকে বিয়ের স্টেজে রিসিভ করতে দেখা যায়। আয়না আলতো করে হাত এগিয়ে দিয়ে তার হাতের উপর নিজের হাত রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র হাতটা অনেক শক্ত করে ধরে নেয়। তার পানে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয় আয়না। সঙ্গে সঙ্গে যেন সমুদ্রের বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। সে আস্তেধীরে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আয়নাকে সোফায় বসিয়ে দিলো। ওর আঁচল সোফায় তুলে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে নিজের আসনে বসে পড়ে। তখনও ফোনে কল আসছিলো। একনজরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে, পাওয়ার বাটন অফ করে দিয়ে পিউকে ইশারায় ডাকে।
পিউ ভাইয়ের ডাকে এগিয়ে আসলে ওর হাতে নিজের ফোনটা দিয়ে বললো, ” তোর কাছে রাখ৷ ফোন অন করবি না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পিউ ভাবলো হৈচৈয়ের মধ্যে হয়তো মোবাইল হারিয়ে যাবে এজন্য ভাইয়া তাকে সাবধানে রাখতে বলছে৷ সে বন্ধ করা ফোন হাতে নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো। সমুদ্রের যেন একটু ঘাম ছু’টলো কপাল বেয়ে। বিয়ের সময়ে সবারই একটু নার্ভাস লাগে তার উপর যদি অতীতের পিছুটান হাতছানি দিয়ে ডাকে?
কাল অব্দি মনের মধ্যে অনেক সংকোচ ছিলো তার। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে বিয়েটা না করলে সে সারাজীবন কারো কাছে অপরাধী হয়ে বাঁচবে। নিজে প্রতারণার শিকার হয়েছে, সে জানে একটা ধোঁকা কীভাবে সারাজীবনের কান্না হয়! অন্যকাউকে ওই মরণ যন্ত্রণা দেওয়া নিছক পাপ ছাড়া কিছুই না। আয়নার সঙ্গে সে অন্যায় করতে পারবে না। ইউশা যদি আজ বিয়ের আসরে এসেও তাকে এপ্রোচ্ করত, তবুও ওর কথাতে গলত না সে।
বিভিন্ন চিন্তায় নিমজ্জিত থাকার ক্ষণে, শ্রাবণ তার কাঁধে হাত রেখে বললো, ” নার্ভাস নাকি ব্রো?”
–” একটু।”
–” কাম অন ভাইয়া, তুমি ছেলে হয়ে এতো নার্ভাস কেন হচ্ছো? আর ওইদিকে ভাবীকে দেখো কতো চিল আছে! ব্রো আজ তো তোমার-ই রাত আর মিয়া তুমি নার্ভাস!”
সমুদ্র আয়নার পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মেয়েটা আসলেই অন্যদের সঙ্গে হেসে কথা বলছে। কারা যেনো ওর স্বর্ণের জুয়েলারি গুলো দেখছে। আয়নাও উৎসাহ নিয়ে দেখাচ্ছে। হাত নাড়িয়ে-চাড়িয়ে হাতের চুড়ি-আংটি দেখাচ্ছিলো হেসে হেসে। সমুদ্রের ভারী মায়া হলো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে। যদি আত্ম অনুশোচনা বলে কিছু থাকে, সেটা সমুদ্রের মধ্যে আগ্নেয়গিরি আকারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে৷ মেয়েটার নাকি মা নেই।
বাবার কাছে মানুষ হওয়া ভারী আদরের মেয়ে। অথচ একটু আগেও ইউশার কল আসতে দেখে, হয়তো মনের কোনো কালো কোষাংশ ওর কাছে চলে যাওয়ার জন্য তাড়না দিচ্ছিলো! ইউশার সঙ্গে কথা বলার জন্য উত্তেজনা সৃষ্টি করছিলো। কিন্তু তার বিবেচক মন স্বইচ্ছায় তা প্রত্যাখ্যান করলো। মন থেকেই সে তা প্রত্যাখান করেছে। মস্তিষ্কের বিবেকের চেয়ে মনন-বিবেক ঢের শক্তিশালী!
কাউকে ঠকিয়ে সে কোনোদিন সুখী হবে না। তাও আবার এমন কারো জন্য আয়নাকে ঠকাবে, যার কাছ থেকে নিজেই প্রতারিত হয়েছে। এমন লেইম শীট কোনোদিনই তার দ্বারা সম্ভব না। তাছাড়া ইউশা তাকে এখন কিইবা বলবে? সর্যি বলবে? আদৌ দুঃখ প্রকাশে কিছু আসে-যায়? ওসব ভদ্রতা তো বইয়ের পাতায় যুৎসুই। তাকে ফিরে যেতে বলবে? ফিরে যাওয়া কী সম্ভব?
উহু! তার আর আয়নার সম্পর্ক ততোখানি এগিয়ে গিয়েছে, যতোখানি আগালে আর কোথাও ফেরত যাওয়া যায় না। পারিবারিক ভাবে বিয়ে তাদের। মনে মনে চাচ্ছে সবটা যেন সুষ্ঠু ভাবে হোক।
কাজী সাহেবে এসে বসলেন। কাবিননামায় পাতা উল্টাচ্ছিলেন উনি। আর একটু পর বিয়ে পড়ানো শুরু করবেন। ওইযে ওই নিকাহনামায় তাদের দুইজনের নামে একটা চুক্তিপত্র লেখা আছে যেখানে সাফ জানান দিচ্ছে, আজকে এই নিকাহনামায় স্বাক্ষরের মাধ্যমে সে আয়নার ভরণপোষণের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। এতোবড় দায়িত্ব তো সহজ কথা নয়! কারো সস্তা কলে এমন শক্ত দায়িত্ব ঠুনকো হয়ে যাবে না নিশ্চয়ই!
কাজী সাহেব বিয়ের প্রস্তাব পেশ করলেন। বললেন, দশ লক্ষ্য টাকা ধার্য ধরিয়া……….. সমুদ্র সবটা শুনলো না। বেশ অস্থিরতা কাজ করছে তার মধ্যে।
কাজী সাহেব একদম শেষে বললেন, ” বলো মা কবুল।”
সমুদ্র চেয়েও একমুহূর্তে মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। নিশ্চয়ই বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে সকলে তাকে বেহায়া উপাধি দিবে? বউ? আসলেই বউ? হ্যাঁ বউ তো। তবে এখনো কবুল বলেনি। তখনই কানে এসে বাজলো আয়নার কান্নাভেজা কণ্ঠস্বর। সে তিনবার কবুল বলে দেয়। তারপর মনে হয় কান্নাও করে। ওকে ঘিরে ইতিমধ্যে সকলে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্র মাথা উঁচু করে তাকালো।
এবারে কাজী এগিয়ে এসে তার প্রয়োজনীয় কথা সেড়ে তাকে কবুল বলতে বলে। সমুদ্র দু’দণ্ড অপেক্ষা না করে বলে দেয় সেই ঐতিহাসিক শব্দটি। কাবিননামায় তার স্বাক্ষর নিলো। তিনি মোনাজাত ধরলেন। তারপর শুকনো খেজুর বিতরণ হলো। এতো দ্রুত বিবাহের কার্যক্রম সম্পন্ন হলো যে আর অন্য কিছু ভাবার সময় সে পায়নি।
সমুদ্রকে আয়নার পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আয়নার মাথায় ঘোমটা দেওয়া। তাকে ঘোমটা তুলে দিতে বলা হয়। সে দু’হাত এগিয়ে এনে আস্তে করে নেটের কাজ করা দোপাট্টা সরিয়ে নেয়। ফলে আয়নার সঙ্গে আজ এই প্রথম সরাসরি অধিকারস্বরুপ চোখের সাক্ষাৎকার ঘটে। আয়নাও তার দিকে তাকায়। মেয়েটার চোখ ভেজা-ভেজা। চোখের পাপড়ি ভিজে উঠেছে বিধায় ঘন-ঘন চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে। তাদের দুইজনের অনেকগুলো ক্যামেরায় ছবি তুলে নেওয়া হচ্ছিলো। অনেকেই এই মুহূর্ত গুলো স্মৃতিস্বরুপ রেখে দিতে চাচ্ছেন।
সমুদ্র আয়নার পাশে বসেই সেন্টার টেবিল থেকে টিস্যু পেপার টেনে এনে আয়নার হাতে গুঁজে দেয়। আয়না টিস্যু হাতে নিয়ে একপল ওনার দিকে তাকায়।
আলিয়া একটা সুন্দর কাজ করা আয়না এনে বললো, ” দুলাভাই, আপাকে এবারে একটু আয়নায় দেখুন।”
–” সরাসরি তো আয়নাকেই দেখছি। আবার আয়নায় আয়নাকে দেখা লাগবে?”
আলিয়া বলে, ” জি দেখা লাগবে।”
সে সমুদ্রর দিকে মিরর তাক করে রাখলো। সমুদ্রের চোখের সামনে আয়নার প্রতিবিম্ব ভেসে উঠে। ওর নাজুক মুখপানে তাকিয়ে দু’পল সময় নিলো সমুদ্র। এরেঞ্জ ম্যারেজ তাদের। কী বলা উচিৎ? প্রেম-প্রেম কোনো পাঞ্চ লাইন মুখ দিয়ে বের হবে না তার! এতো প্রেম নাই মনে।
সে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” নব্য প্রস্ফুটিত দায়িত্ব”
সমুদ্রের ভারী বাংলা বুঝি বোধগম্য হয় না কারোরই। তবু তারা হাততালি দিলো। যদিও আরোও রোমান্টিক কিছু শুনতে চাচ্ছিলো সবাই। এবার আয়নার পালা৷ কিন্তু বোকা মেয়েটা লজ্জায় নিজেই মাথা নিচু করে ফেলে। ও আর কী জবাব দিবে৷ সমুদ্রের প্রতিবিম্ব কি ও দেখেছে?
আয়না মিনমিন আওয়াজে কাচুমাচু করে অনেক আস্তে জবাব দিলো, ” আমার স্বামী।”
সমুদ্রের যেন উত্তর শোনার পর বুকে খুব প্রশান্তি এসে আঁছড়ে ঢেউ তুলে। অস্থিরতা নিপাক যায়৷ সে ঘাড় ঘুরে নিজের সদ্য বিবাহ করা বউয়ের দিকে তাকালো মুগ্ধ চোখে। আয়না ফের লজ্জায় কাত হয়ে মাথা নিচু করলো। উনি ওভাবে তাকিয়ে কেন আছে? লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে। সে আস্তে করে বলে, ” প্লিজ অন্যদিকে তাকান।”
সমুদ্রও আস্তে করে বলে, ” শুনি নি কি বললে? তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে বলছো? ঠিক আছে থাকলাম এভাবেই। সমস্যা নেই।”
ওনার এমন স্বভাবটা দেখলেই আয়নার গা-জ্বালা দিয়ে উঠে। সবসময়ই যা ইনপুট দেওয়া হয় ওনি এমন এক মেশিন ইনপুটকে উলটো করে আউটপুট বের করবে। ফালতু!
আয়নার বড় ফুপুর ছেলে রাসেল ভাই ক্যামেরা এনেছেন। উনি বলে উঠলো, ” তোমাদের কিছু কাপল পিকচার তুলবো। দেখি একটু কাছে এসে বসো।”
সমুদ্র প্রথমে ভদ্রতাস্বরুপ আয়না থেকে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে বসেছিলো। এবারে ওকে আর পায় কে? ও যেন এমন কিছু শোনার অপেক্ষাতেই ছিলো। সঙ্গে সঙ্গে আয়নার গা ঘেঁষে বসে, কোমড়ে ডান হাত আলতো করে রাখলো। ওনার ছোঁয়া পাওয়ামাত্র আয়নার শিরদাঁড়া কেঁপে উঠে। ইশ! পবিত্র ছোঁয়াতেও এতো বেশি দ্বিধা! কেমন অস্বস্তিতে নিশ্বাস আটকে আসা আসা ভাব!
ছবি তুলার পর একটা ছবি ওদেরকে দেখানো হলো। সমুদ্র ফোন হাতে নিয়ে ছবিটা দেখলো। সে ভেবেছিল তাকে বরবেশে একদম ভালো দেখাবে৷ কিন্তু এই সাদা-সোনালী মিশেলের শেরওয়ানিতে তাকে দারুণ মানিয়েছে। আবার মা যখন জোর করে পাগড়ি পরিয়ে দিলো, তখন জীবনে প্রথম সমুদ্র নিজেকে দু’বার মিররে দেখেছে। নিজেকে বরবেশে দেখে সে নিজেই পরিতৃপ্ত!
ছবিগুলোও দারুণ তুলেছে কাজেই ওকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” আমাকে ছবিগুলো দিয়ে দিও আয়না।।”
আয়না ঠেস মেরে বললো, ” মেইল করে?”
সমুদ্র তার দিকে সামান্য অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে, ” পিডিএফ আকারে দিও, কেমন? ”
আয়না মুখ ঘুরিয়ে নেয়৷ কি শখ! বিয়ের ছবি নিবে তাও নাকি পিডিএফ করে সেন্ড করতে হবে।
সে বিড়বিড় করে বলে, ” মামা বাড়ির আবদার নাকি?”
সমুদ্র কাছে থাকায় ওর বিড়বিড় করে বলা কথাটা শুনে ফেলে সুধালো, ” শ্বশুড়বাড়ির আবদার!”
আয়না বিষ্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকায়। সমুদ্র তার বিখ্যাত ভ্রু নাঁচার ভঙ্গিমায় হাসলো।
খাওয়ার জন্য তাদের ডাক পড়লো৷ ওদের জন্য সব স্পেশাল আয়োজন। একটামাত্র বড় থালিতে দুইজনকে খেতে দেওয়া হয়েছে। সমুদ্র সামান্য ইতিউতি করতে লাগে। অন্য কারো সাথে সে আবার শেয়ার করে খেতে পারে না। তবে আজ সে চুপচাপ থাকলো। তার বাড়ির আত্মীয়-স্বজনরা খেয়ে নিয়েছে৷ মাকে দেখা যাচ্ছে সবার গল্প করছেন। মা যে অনেক খুশ সেটা তার অভিব্যক্তিতেই প্রকাশ পাচ্ছে। আর তার বাবা ইশরাক রহমান আয়নার দাদার সঙ্গে বসে কথা বলছে৷ শায়লা চৌধুরীও উপস্থিত আছেন। ঘরোয়া আয়োজন হওয়ায় আত্মীয়রা নিজেদের মতো গল্প করছেন।
আয়নার ফুপু খাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে থাকলো। যদিও তারা দুইজনের কেউই ঠিকঠাক খেতে পারছে না৷
ফুপু বললেন, ” জামাই বাবা, আয়ু কিন্তু আমাদের খুব আদরের বাচ্চা। ছোট মানুষ কিন্তু ও৷ ওকে তুমি যত্নে রাখবে৷ ”
এমন সময় আয়নার দাদী, সেকালে চিন্তার সরল মনের বৃদ্ধা বলে উঠে, ” কে ছোট মানুষ? জামাই বাবুর সঙ্গে আয়ুর দু’টা বছর আগে বিয়ে দিলে আজ আয়ুর কোলে একটা দুধের বয়সী খোকা থাকত।”
আয়না এমনিতেই লজ্জা পাচ্ছিলো। দাদীর এমন বেঁফাস কথায় তার মুখ-চোখ লজ্জায় একদম টমেটো বনে যায়। ইশ দাদী কেন এসব কথা বললেন? এখন কিভাবে সে ওই বজ্জাত লোকটার দিকে তাকাবে? সমুদ্রও যেন সামান্য চঞ্চল দৃষ্টি ফেলে নানান দিকে।
আয়নার ফুপি বলে উঠে, ” আম্মা কি যে বলো না!”
দাদী এবারে সমুদ্রের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ” জামাই বাবা, বলো তো আমাদের আয়ুর এবার তাড়াতাড়ি কোল পূর্ণ না উচিত না?”
সমুদ্র ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠে, বুঝ পায় না কেমন জবাব দিবে? তাই থেমে থেমে বলে, ” জ্বি, তাতো অবশ্যই।”
দাদী হাসিমুখে বললো, ” তাড়াতাড়ি আমাদের আয়ুর কোলে তাহলে একটা পুত আনো বাবা।”
এবারে দাদী কথায় ছেলে হওয়া সত্তেও নিজেরই লজ্জা লাগলো তার। এসব কি যে বলে মুরুব্বি বৃদ্ধরা! স্পার্ম ও দেড়টা মাস সময় নেয়, অথচ বৃদ্ধা দাদী দেড় মিনিটও সময় দিচ্ছেন না! তারা এমনিতেই খেতে পারছিলো না৷ এমন রসালো আলাপে কেবল চামচ নড়াচড়া করতে থাকে।
আয়নার ফুপি বলে উঠে, ” আরে না আম্মা। এতো আগেই বাচ্চা-কাচ্চা নেওয়ার দরকার নাই। আগে ওরা নিজেরা নিজেদের লাইফ ইঞ্জয় করুক। বাচ্চা-কাচ্চা নিলে দুধ খাওয়াইতে আর প্যাম্পপাশ পড়াতেই দিন-রাত যাবে।”
আয়নার আর একমুহূর্ত এসব শুনতে ইচ্ছা করছে না৷ লজ্জায়- শরমে গা গরম হয়ে আসছে৷ মনে হচ্ছে, এখনি মাটি ফাঁকা হয়ে যাক, সে মাটির নিচে গিয়ে কিছু দিন পালিয়ে থাকবে।
সমুদ্র তাদের কথায় সামান্য হাসলো। এরপর আয়নাকে আস্তে করে বলে, ” এতো যে লজ্জায় লাল হচ্ছো। পরে সালাদে টমেটো চাইলে ওনারা ভুল করে তোমার গালটা খেতে দিয়ে দিবে তো। তখন কি করব আমি? হু?”
কেমন বদমাশ লোক! ইচ্ছে করে জ্বালানো হচ্ছে! উফ এতো অসহ্যকর কেন উনি?
খাওয়ার পর্ব শেষ করে যখন আয়না বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বিশাল এক বিপত্তি ঘটলো। আয়নার ঘোমটার কোণা গিয়ে সমুদ্রের হাতঘড়ির চেইনের সঙ্গে আটকে যায়। কি এক ঝামেলা!
আয়না বাম হাত দিয়ে ঘোমটা ধরে টানাটানি করা শুরু করে, কিন্তু লাভের মধ্যে লাভ যা হলো আরোও প্যাঁচিয়ে গেলো ঘড়ির চিকন চেইনের সঙ্গে! সে কি করবে বুঝে পায় না।
আস্তে করে বলে, ” আপনার ঘড়িটা খুলে ফেলেন না।”
–” কেন?”
–” দেখছেন না, আপনার ঘড়ির সঙ্গে আমার আঁচল আটকে গেছে।”
সমুদ্র আয়েশী ভঙ্গিতে বসে বলে, ” এভাবেই থাকুক। সমস্যা কোথায়?”
–” সমস্যা আপনার মাথায়।”
–” গোটা তুমি সহ তোমার আঁচলও তো দূরত্বে চাইছে না। আর দোষ দিচ্ছো আমাকে?”
২ অক্টোবর তারিখটা যেন ভীষণ অভিশপ্ত হয়ে ঠেকলো ইউশার কাছে। এতোবার কল-ম্যাসেজ দেওয়া সত্তেও সমুদ্র তার ফোন রিসিভ করেনি বরং ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। একটু আগেই তাদের পুরাতন ফ্রেন্ডস স্কোয়াড গ্রুপটায় তাদেরই এক ফ্রেন্ড সমুদ্রের বিয়ের ছবি সেন্ড করলো। সেটা দেখার পর থেকে কোনোকিছুই ভালো লাগছে না ইউশার। সমুদ্রের আসলেই বিয়ে হয়ে গেলো আজ! তার বিশ্বাস হচ্ছে না। সে মানতেও পারছে না সমুদ্র অন্যকাউকে বিয়ে করবে। এতোদিন যাবত ভেবে এসেছে সমুদ্র কেবল তারই ছিলো। কিন্তু আজ থেকে সমুদ্র অন্যকারো! ওরা ডিরেক বিয়ে করে নিলো কেন?
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১০
ইউশা হাতে থাকা ফোনটায় ওদের বিয়ের ছবি আরেকবার দেখে একা একা বলে উঠে, ” মেয়েটা কী খুব সুন্দর? আমার থেকে বেশি সুন্দরী তো নয়। তাহলে কেন সমুদ্র তার ফোন না ধরে, তার কথা না শুনে এই মেয়েকে বিয়ে করে নিল? সমুদ্র না আগে বলত সে ইউশাকে ছাড়া বাঁচবে না? আজ কি হলো তবে?”
সে প্রচন্ড শব্দ করে ফোনটা ফ্লোরে চটকা মারে। এরপর গম্ভীরমুখে বললো, ” ফা৷৷(ক হিজ ম্যারিড লাইফ!”