ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৪
Arishan Nur
সমুদ্র যখন আয়নাদের বাসার বেল বাজাচ্ছিলো তখন সঙ্গে সঙ্গে আলিয়া গেইট খুলে দিলো। আলিয়ার চেহারায় দুঃখী-দুঃখী ভাব। সমুদ্র ভেতরে প্রবেশ করে প্রথম যে কথাটা বললো তা’হলো, ” তোমার আপা কোথায়?”
–” আপা রুমে শুয়ে কান্না করছিলো ব্যথায় এজন্য ভয়ে, এক প্রকার লুকিয়ে আপনাকে কল দিলাম।”
–” লুকিয়ে কেন?”
–” আপা মানা করেছে। বললো আপনার আসা লাগবে না। ব্যস্ত মানুষ আপনি। ”
সমুদ্র বিরক্তিতে ‘চ’ বর্ণ উচ্চারণ করে। একে দুইদিন ধরে ফোনে কথা হয় না৷ হোয়াটসঅ্যাপে একবার ম্যাসেজের রিপ্লে দিয়েছে। এরপর উধাও তিনি। এখন ম্যাডাম বাকিসব কিছু তাকে না জানিয়ে আগ বাড়ায় একা একা সব করে নিতে চাচ্ছে। সে আয়নার রুমের দিকে পা বাড়ালো। একবার ভাবলো নক করে ঢুকবে ভদ্রতাসূচক। কিন্তু পরে ভাবলো মোটেও না। যে অবস্থায়-ই থাকুক তার কাছে ম্যাটার করে না।
সমুদ্র বিনা নক করে দরজা খুলে ঢুকে পড়ে। আয়না তখন বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছিলো। চোখ ভেজা। সমুদ্রকে দেখামাত্র পিলে চমকে উঠে। নিশ্চয়ই তাকে এ অবেলায় আশা করে নি। আয়না উঠে বসলো৷
সমুদ্র বলে উঠে, ” হুট করে, বিনা নোটিশে নাক ফোঁড়াতে গেলে কেন?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আয়না মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো, ” দাদী বললো……. ” বাক্যটা শেষ না করেই চুপ বনে যায়৷
সমুদ্র তাগিদ দিয়ে বলে, ” বাক্য অসম্পূর্ণ রাখলে কেন? কী বলেছেন উনি?”
আয়না মুখ ফুলিয়ে বলে উঠে, ” নাকফুল পড়লে স্বামীর মঙ্গল হয়।”
–” তাই ভাবলে আমার একটু কল্যান হোক? এই বাড়তি মঙ্গলটুকু করে খুব উপকার করলে!”
আয়না ফের মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইলে সমুদ্র তার থুতনি ধরে মুখ তার দিকে সোজাসুজি এনে থমকালো। বেশ মনোযোগ দিয়ে আয়নার নাকের ফুল দেখলো। চকচক করছে, কিন্তু পাশ দিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। ওর চোখে জল দেখে রাগ উঠলো। আগ বাড়িয়ে নিজেকে ব্যথা দেওয়ার দরকার কী ছিলো?
সে নাকের যে পাশটায় নাকফুল পড়া সেদিকে বেশ জোরেই মুখ গোল করে ফুঁ দিলো। তারপর একটু সরে এসে বেডে বসে বললো, ” নাকের কাজ নিশ্বাস নেওয়া। তুমি আগ বাড়ায় এতে নাকফুল পড়তে গেলে! ঝামেলা বাড়লো তো।”
আয়নার ওইসময় আরেকটা বার সমুদ্রের উপর ভীষণ অভিমান জন্মালো। সে এতো কষ্ট করে ওনার জন্য নাক ফোঁড়ানোর ব্যথা সহ্য করলো। আর উনি এসেই বলছে ঝামেলা বাড়ালো!
সমুদ্র তার চোখের পানে তাকিয়ে সুধালো, ” আমার জন্য এতোটা কষ্ট করলে? ”
–” না। আমার এমনিতেই ইচ্ছা ছিলো। নাকফুল পড়লে বেশি মানায় আমাকে।”
সমুদ্র একপলক তাকে অবলোকন করে বলে, ” তোমার নাক তো বোঁচা। শুধু শুধু ছোট নাকে ফুল দেওয়ার দরকার ছিল? আগে কেন ফোঁড়াও নি তবে! বিয়ের তিন দিন পর, হুয়াই?”
আয়না উত্তর দিলো না।
–” ব্যথা করছে।”
–” নাহ৷”
সমুদ্র পকেট থেকে মেডিসিন বের করে এরপর বলে, ” আসার পথে মেডিসিন নিয়ে এসেছি৷ ঔষধ খাও। ব্যথা কমতে থাকবে। নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে৷”
–” লাগবে না। নো থ্যাংকস।”
–” লাগবে কিনা সেটা আমি বুঝবো।”
সমুদ্রের কণ্ঠে কেমন কঠোরতার আভাস মেলে। আয়না ধপ করে শুয়ে পড়ে বেডে। তখনই আয়নার দাদী আর হালিমা বুয়া আসলো।
হালিমা বুয়া বলে উঠে, ” জামাইবাবু আপামনি কিন্তু সকাল থেকে কিচ্ছু মুখে দেয়নি। না খাওয়া একদম।”
–” সেকি খায়নি কেন?”
–” সেটা তো আমি কইতে পারি না।”
সমুদ্র আয়নার পানে তাকালো এরপর বলে উঠে, ” খাবার প্লেটে তুলেন৷ এখন খাবে।”
আয়নার দাদীর মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ, সে বলে উঠে, ” আয়ু বুবু এটা কী হয়ে গেলো! হুজুগে নাক ফোঁড়ানো ঠিক হলো না! নাকের ব্যথায় মেয়েটা খেতে পারছে না।”
হালিমা বুয়া খাবার আনলেও আয়না খেতে চাচ্ছে না।
সমুদ্র প্রশ্ন করে, ” না খাওয়ার রিজন কী?”
আয়না মনে মনে বলে, ” না খাওয়ার রিজন হচ্ছে অভিমান কিন্তু আপনি তো রোবট-মানব ওসব আপনার ঘিলুতে স্টোরেজ করা নাই। দুইদিন ধরে দেখা নাই, সাক্ষাৎ নাই এখন আসছে জিজ্ঞাসা করতে খাচ্ছো না কেন! যতোসব!
কিন্তু মুখে বলে, ” নাকে ব্যথা সেজন্য খাবো না।”
–” নাক দিয়ে তো আর খাচ্ছো না। খাবে মুখ দিয়ে। নাকি মুখেও ব্যথা?”
আয়নার এতো মেজাজ খারাপ হলো। তার মন চাইলো সমুদ্রের মাথায় খাওয়ার প্লেটটা দিয়ে বাড়ি মারতে, তাও না পারলে ওই অভদ্র লোককেই নাক দিয়ে খাওয়াতে পারলে শান্তি পেত।
সবার জোড়াজুড়িতে সে দুই লোকমা খেল। এর বেশি মুখেই নিলো না৷ না পারতে সাতদিনের কোর্সটার প্রথম ডোজের ঔষধ আয়নার হাতে দিলো। আয়না ঔষধ খেয়ে ঘোষণা দিলো সে ঘুমাবে৷ মূলত সমুদ্রকে ইগনোর করতে চাইছে। সে ঘুমালে, উনি নিশ্চয়ই চলে যাবে। আর যে ব্যস্ত মানুষ নিশ্চয়ই একটু পর কোনো মিটিং আছে৷ একে একে সকলে রুম ত্যাগ করলো। তাদের দু’জনকে একাকীত্ব সময় দিতে চাইলো। সমুদ্র একাই রুমে ওর সাথে থেকে যায়। সে বিছানায় এসে আয়নার পাশে শুয়ে পড়ে। আয়না ভেবেছিলো সবাই চলে গেছে। সে তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে প্রশ্ন করে, ” আপনি? ”
–” হুম। অন্যকাউকে ভুলেও আশা করো না।”
–” গেলেন না কেন?”
সমুদ্র বলে উঠে, ” আমার মঙ্গল কামনা করতে গিয়ে তোমার এ বেহাল দশা, তোমায় এ’অবস্থায় রেখে যাওয়া মোটেও মানবিক হবে না। আফটার ওল আমার জন্য-ই তো এমন দশা হলো!”
আয়না মনে মনে বলে, ” আপনি তো মানুষের জাত-ই না। বলেন মোটেও রোবট-বিক হবে না। হুহ।”
সে ঘুরে অন্যদিকে শুয়ে থাকে। সমুদ্র আয়নার এহেন কান্ডের কোনো উৎস খুঁজে পায় না। দীর্ঘ ছয়বছর ইউশার সঙ্গে ইনভলভ ছিলো সে। মেয়ে সঙ্গীর আচরণ পরিচিত তার। আগে কখনো এমন আজব আচরণ দেখেনি। আয়নাকে বুঝতে তার মাথায় জট পেকে যাচ্ছে। মেয়ের আচার-আচরণ এ বিশাল ঘাপলা আছে৷ সমীকরণ মিলানো যায় না।
সমুদ্র ফোন হাতে নিয়ে টুম্পা আপুকে কল দিয়ে আয়নার সামনে কথা বলতে থাকে। সে বললো আপু আজ অফিসের যাবতীয় কাজ আপনি দেখেন৷ কাল থেকে আমি আবার শুরু করবো। না পারলে রেখে দেন৷ পোস্টপনড করে রাখেন৷
আয়না ও’পাশ থেকে সবটাই শুনলো। ওনার আবার কী হলো? এতো দরদ উতলাচ্ছে কেন? তবে সে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। খামোশ থাকে।
সমুদ্র উঠে বারান্দায় যায়। তারপর একটুপর এসে বললো, ” আধাঘন্টার বেশি হলো। ব্যথা কমেছে?”
আয়নার চোখ খোলা। সে শুয়ে আছে কিন্তু জবাব দিলো না। এতে সমুদ্রের কি যে রাগ উঠলো। নিজেকে সে দমাতে পারলো না। সোজা গিয়ে আয়নার ডান বাহু চেপে ধরে ওকে এক প্রকার হ্যাচকা টান দিয়ে উঠে বসালো তারপর বললো, ” সমস্যা কী তোমার? এমন কেন করছো?”
–” কেমন করছি?”
সমুদ্রের এতে যেন রাগ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়লো। সে আরোও শক্ত করে ওর বাহু চেপে ধরে বলে, ” মজা নিচ্ছো তাও আবার আমার সঙ্গে? আয়না, সমস্যা কী তোমার? এতো আজব ব্যবহার করো কেন? হুয়াট’স রঙ উইথ ইউ?”
আয়না তখন সমুদ্রের কথা শোনার চেয়ে, অন্য হাত দিয়ে বাঁধন খোলায় বেশি গুরুত্ব দিলো। কোনো মেয়ের থেকে ইগনোর কিংবা কিঞ্চিৎ অপমান কেন যেন সমুদ্রের আগে থেকেই একদম পছন্দ না। কিন্তু আয়না একের পর এক আঘাত হানছে। সে তখনো ব্যস্ত সমুদ্রের হাত তার বাহু থেকে সরাতে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই তার।
তবে সে সফল হলো। না ঠিক যেমন করে কোনো পিপীলিকা কাঠের শক্ত খন্ড সরাবার বৃথা চেষ্টা করে!
সমুদ্র গমগমে গলায় বলে, ” আমি ধরেছি জন্য এমন ছটফটানি? অন্যকারো স্পর্শ পেলে শান্ত থাকতে?”
সমুদ্র করা প্রশ্ন যেন তীরের মতো ছু’টে এসে খণ্ড-দ্বিখন্ড করে আয়নার কোমল মনে। বড্ড দৈত্যকার আকৃতির রাগ এসে পাখা ঝাপ্টায়!
সমুদ্র তার কোমড়ে অন্যহাত রেখে শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে বলে, ” ইগনোর করো কোন সাহসে?”
আয়না যেন তখন ফ্রিজড হয়ে যায়। ওনার এতো কাছে আসায় সে ধাতস্থ হতে সময় দেয়। সব এলোমেলো লাগলো। মাথা ঝিম ধরে আসে।
আয়নাকে চুপ থাকতে দেখে সমুদ্র বলে, ” আমি কিন্তু তাহলে চলে যাবো!”
সঙ্গে সঙ্গে আয়না নড়েচড়ে উঠলো এরপর বলে, ” না।”
–” কেন? কথাও বলবে না, আবার যেতেও দিবে না। মেয়ে মানুষ সামলানো বড় মুশকিল দেখছি। এতো মুড সুয়িং কেন?”
আয়না সরে আসতে চাইলে সে আরো নিবিড়ভাবে তাকে খুব কাছাকাছি আবদ্ধ করে বলে, ” কাছেও ভীড়তে দাও না, দূরেও না। যাব কোনদিকে?”
আয়না বিরক্ত হয়ে বলে, ” উফ! প্লিজ ছাড়েন।”
–” কি ছাড়বো?”
আয়না তার এহেন প্রশ্নে বোকা বনে যায়। সে আমতাআমতা করে বলে, ” হাত।”
–” জাস্ট হাত ধরাতেই এতো রিয়্যাক্ট করছো! আরোও কিছু ধরলে যে কি শুরু করে দিবে…… ”
–” প্লিজ চুপ!”
আয়না তার কানে অন্য হাতটা চেপে ধরে যেন সমুদ্রের বলা অভদ্র কথা শোনা না লাগে।
সমুদ্র তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, ” আচ্ছা আর জ্বালাবো না।”
সেদিন আকাশ মেঘলা ছিলো বটে। অবশ্য অক্টোবরের বৃষ্টি বেশ উপভোগ্য সমুদ্রের কাছের৷ তখনো আটটাও বাজে নি। এরমধ্যেই আয়নার জ্বর এসে গেলো। সমুদ্র বুঝলো না ব্যথা কী বেশি ছিলো যে জ্বর চলে আসবে?
ওর কপালে হাত রাখতেই মৃদ্যু কেঁপে উঠে আয়না। এরপর চোখ মেলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, ” কেমন ডাক্তার আপনি? জ্বর ঠিক করে দেন জলদি।দু’মিনিটের মধ্যে ”
সমুদ্র তার কাছে বসে, কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, ” তুমি অনেক লাকি। মানুষ ফ্যামিলি ডক্টর পায় আর তুমি পেয়েছো পার্সোনাল ডাক্তার!”
আয়নার চোখ বন্ধ ছিলো। সে চোখ খুলে সমুদ্রের দিকে তাকায়। দু’জনের দৃষ্টি একে অপরের দিকে।
সমুদ্র বলে,” কী খাবে তুমি?”
আয়না খানিক ভেবে বললো, ” কিটক্যাট।”
সমুদ্রের কপালের ভাঁজ প্রগাঢ় হয় এরপর থেমে থেকে সুধায়,” জ্বরের মধ্যেও চকলেট চাই?”
আয়না বাধ্য বালিকার মতো মাথা দুলিয়ে বলল, “জ্বর হলে দুইটা ‘চ’ খেতে হয়। তাহলে জ্বর পালায় যায়।”
–” সেই দুটো ‘চ’ কী কী?”
–” চকলেট আর চু( মা।”
ডাক্তার হওয়া সত্তেও এতো জরুরি তথ্য সমুদ্রের জানা ছিলো না। সে বলে উঠে, ” ইঞ্জিনিয়ার যখন বলেছে, ঠিকই বলেছে।”
–” আমার কিটক্যাট দেন এবার?”
–” আপাতত দ্বিতীয় চ টা দিই?”
আয়না বুঝি তখন জ্বরের ঘোরে ভুলভাল বকছিলো। সমুদ্রের কথায় বোধ হলো। সে মাথা ঘুরিয়ে না ইঙ্গিত করে বলে, ” চকলেট আগে।”
সমুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে রুমের বাইরে গেলো। রাত আটটায় শ্বশুড়বাড়ি থেকে বের হবে বউয়ের জন্য চকলেট কিনতে। জীবনে এতো থ্রিলিং কর্ম করেনি এর আগে।
বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই ফাহাদ সাহেবের সঙ্গে দেখা।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ” সমুদ্র কোথায় যাও? আজ এখানেই থাকবে কিন্তু তুমি। রাতে আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া আয়নার শরীর ভালো না।”
সমুদ্র নিজ থেকেই আজ থাকতে চাচ্ছিলো। ফাহাদ সাহেব বলায় তার জন্য সুবিধাই হলো।
সে বলে, ” গাড়িতে একটা জরুরি ফাইল রেখে এসেছি। ওটাই আনতে যাচ্ছি।”
ফাইল নেওয়ার বাহানায় সে পকেটে করে দু’টো বড় কিটক্যাট নিয়ে ফিরে আসে। আসার পথে ফাহাদ সাহেবের সঙ্গে পুনরায় দেখা। উনি আরেকবার জিজ্ঞেস করলো, ” তোমার ফাইল কোথায় বাবা?”
সমুদ্র কি জবাবে বলবে? আদৌ কোনো ফাইল নেওয়ার কথাই না। সে তবুও বলে, ” প্রয়োজনীয়টা সঙ্গে আনি নি আংকেল।”
ফাহাদ সাহেব ভ্রু কুচকে বলে, ” আংকেল?”
সমুদ্র খানিকটা দমে যায়। শ্বশুড়কে বাবা ডাকতে বেশ আন কমফোর্ট করছে সে।
তিনি বলেন, ” বাবা বলে ডাকবে। আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে। ”
হালিমা বুয়া স্যুপ এনে সমুদ্রকে দিলো। সমুদ্র ই স্যুপ বানাতে বলেছিল আয়নার জন্য।
সে স্যুপ হাতে রুমে ঢুকে। তখনো আয়নার জ্বর ছিলো। সমুদ্র একপ্রকার জোর করে স্যুপ মুখে তুলে দেয়৷
আয়না মাথা নাড়িয়ে বলে, ” খাবো না আমি। ”
–” কেন?”
–” আমি রোবটের হাতে কিছু খাই না।”
–” রোবট কই পেলে?”
–” আপনি? ”
সমুদ্র বহু কষ্টে রাগ সংবরণ করলো। পিউ তাকে বলেছিলো রাগটা দমায় রাখতে। স্পেশালি ভাবীর সামনে৷ ওর ধারণা ভাইয়ার রাগ দেখলে ভাবী ভুলেও শ্বশুড়বাড়িতে পা মাড়াবে না৷
অসুস্থ ভেবে সে অনেক শান্ত গলায় বলে, ” স্যুপটা না খেলে চকলেট গুলো ফেলে দিবো কিন্তু। ”
–” আপনার কি মনে হয় আমি চকলেটের লোভ করি?”
–” তাহলে কী দ্বিতীয় ‘চ’ টার লোভ আছে?
সে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে। আয়না দ্রুত স্যুপ খেয়ে নিয়ে বলে, ” প্লিজ অসভ্য কথা বলবেন না।”
–” আহা, বাণী ছুঁড়লে নিজে, সেটা মুখে বলায় আমি অসভ্য?”
আয়না বিছানায় শুয়ে পড়ে। জ্বর মনে হয় আরোও বাড়ছে তার। সমুদ্র কিটক্যাট গুলো তার সামনে রেখে দিলো। আয়না জ্বর গায়ে নিয়েই উঠে বসে চকলেট খুললো। সে আয়েশী ভঙ্গিমায় চকলেট খেতে থাকে। এরপর আয়না চকলেট তার সামনে এগিয়ে দিয়ে খাওয়ার অফার দিলো।
সমুদ্র শেষ কবে চকলেট খেয়েছে মনেই পড়ে না। চকলেট বলে যে খাওয়ার কোনো জিনিস আছে মাঝেমাঝে মনেই থাকে না। কিন্তু আয়না অফার করায় সে না করলো না। ওর হাত থেকে চকলেট খাওয়ার বড় শখ জাগলো।
ওর হাত থেকে চকলেট মুখে অল্প পুড়ে নেয় সে। তারপর আজ সমুদ্র তার স্বভাবত খোলস ভেঙে হঠাৎ নিয়ম ভঙ্গ করলো। সে খুব মোলায়েম ছোঁ’য়ায় আয়নার বাম গালটায় নিজের ঠোঁট ছো’য়ালো। আয়না চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে। সমুদ্রের ঠোঁটে বেশ উত্তাপের আভাস মেলে। তার ঠোঁট যেন গরম হয়ে উঠে।
সে মিহি গলায় বলে, ” দেখো এবারে জ্বর দ্রুত সেড়ে যাবে।”
আয়না মাথা নাড়িয়ে না বোধক অর্থ প্রকাশ করলো।
সমুদ্র প্রশ্ন করে, ” না?”
আয়নার তখন অনেক জ্বর। ১০১ ডিগ্রি পাড় হবে হয়তো।
সে সমুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ” এমন হাল্কাতে হবে না। আমার সব ফ্রেন্ডদের বয়ফ্রেন্ড লি?প কি–স করে আর আপনি হাসবেন্ড হয়ে হাল্কা চু–মু দিলেন। এতে কিছুই হবে না…….. ”
সমুদ্র সবটা শুনলো না। সে চোখ বড় বড় করে তাকায়। মেয়েটাকে যতোটা ইনোসেন্ট বাচ্চা ভেবেছে মোটেও তা না। ভীষণ পাকনা সে। অবশ্য জ্বরে অনেকের মাথা আউলায়। আয়না তো স্বভাব’তই তারছিড়া, জ্বর মাথায় বোধহয় মাথার স্ক্রল ঢিলা হয়ে গেছে।
সমুদ্র বিজ্ঞ গলায় বলে, ” চু–মুর আবার ওজন আছে যে হাল্কা-ভারী হবে?”
এতেই যেন সমুদ্র বিপদের সাগরে পড়ে গেলো। আয়না জ্বর গায়ে নিয়ে বায়না ধরল সে ভারী চু–মু খাবে৷ যে চু–মু দেড়’শ কেজি ভারী, সেই কি স তার চাই৷ এমন পাগলের পাল্লায় পড়তে হবে জানলে ভুলেও ওই বাক্য মুখে আনতো না সে।
কিন্তু আয়না এতো পরিমাণ নাছোড়বান্দা আর দুষ্ট! সমুদ্রের কোনো কথায় শুনে না। রাতের ঔষধ ও নিবে না। বরং বাবাকে গিয়ে নাকি তার ব্যাপারে কমপ্লিন করবে। এমন বক্তব্য দিয়ে বেড থেকে আয়না উঠে বসতে চাইলে দ্রুত সে আয়নাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। আয়নাকে একদম নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে। চিন্তা করতে লাগলো কিভাবে এই পাগলকে শান্ত রাখবে? পরে বুদ্ধি আটলো। ওর নিজেকে কেমন শেয়ালের মতো ধুরন্ধর চালাক মনে হলো। ইঞ্জিনিয়ারকে ইঞ্জিনিয়ারিং ভাষায় সোজা করতে হবে৷ এছাড়া উপায় কোথায়?
সে বলে উঠে, ” শোন আয়না, চুমু আসলে ওজনের মতো বুঝলা? নিউটন এককে হিসেব-নিকেশ করা হয়৷ আর ওজন তো পরিবর্তনশীল। আমি তোমাকে যেই কি–সটা দিলাম ওটা পৃথিবীতে হাল্কা হলেও মঙ্গলে অভিকর্ষ ত্বরণের জন্য মান অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সো আল্টিমেটলি তোমাকে আমি ভারী চু–মুই দিয়েছি।
আয়না তখন ওর বুকের সঙ্গে লেপ্টে শুয়ে ছিলো। ঘুম ঘুম সুরে বলে, ” সত্যি?”
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৩
–” ইয়েস।”
তারপর সমুদ্রের কি যেন হলো সে আবারো খুব শক্ত করে, প্রগাঢ়ভাবে আয়নার গালে ঠোঁট ছো’য়ায়! আদৌ দেড়’শ কেজি ভারী চু–মু কি সে জানে না, তবে নিজেও এমন কি৷ স চায় অন্তত ওয়ান ইন এ লাইফটাইম!