ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৫
Arishan Nur
তারপর সমুদ্রের কি যেন হলো সে আবারো খুব শক্ত করে, প্রগাঢ়ভাবে আয়নার গালে ঠোঁট ছো’য়ায়! আদৌ দেড়’শ কেজি ভারী চু–মু কি সে জানে না, তবে নিজেও এমন কি৷ স চায় অন্তত ওয়ান ইন এ লাইফটাইম!
আয়না ওইসময় বড্ড ঝামেলা করছিলো। নড়াচড়া, অস্থিরতা সব মিলে একাকার। ওকে চুপটি করে শুইয়ে রাখা মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিনতম কর্ম৷ নিশ্চয়ই জ্বরে কষ্ট হচ্ছে। সমুদ্র কপালে হাত দিলো ওর। সেকি বেশ ভালো রকম জ্বর এসেছে। কপালে ঠাণ্ডা পানির জলপট্টি দিলে আরাম পাবে ভেবে ও যখন উঠতে যাবে, আয়না তখন ওর বুকে মাথা রেখে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিলো। সমুদ্রকে উঠতে দেয় না। শার্ট খামচে ধরে।
সমুদ্র বললো, ” তোমার তো একদম জ্বরে বেহাল দশা। গা পুড়ে যাচ্ছে।”
আয়না ওর এই কথায় হাসলো বেশ৷ সমুদ্র তাজ্জব বনে যায়। জ্বর হলে মানুষ হাসে! এই প্রথম দেখলো৷
আয়না মুখ ফুলিয়ে বলে, ” আপনি না কিছু বুঝেন না!”
–” তুমি বুঝো? ”
–” হুম।”
–” ওতেও চলবে। এবার ছাড়ো আমার শার্ট।”
আয়না ওনার শার্ট তো ছাড়লোই না বরং একটা পাগলামো করে বসে৷ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, ” এটাকে প্রেমের জ্বর বলে জানেন?”
–” না তো। আজই শুনলাম।”
–” ধুর! ভালো লাগে না।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সমুদ্র উঠে চলে যায়। কেন যেন এ’সব তার আর ভালো লাগছিলো না। দ্রুত টাওয়ালের শেষ অংশ ভিজিয়ে এনে আয়নার হাত-পা, কপাল মুছে দিলো৷ প্রায় আধা ঘন্টা কপালে জলপট্টি দিতেই ওর গায়ের টেম্পারেচার কমে আসে। ঘুমিয়ে পড়ে ও। কিন্তু সমুদ্রের চোখে ঘুম থাকে না৷ সে কিছুক্ষণ বহু চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে না৷ কিছুক্ষণ আয়নার মাথায় হাত বুলায় যেন আরাম পায় ও।
পরেরদিন, সকাল সাতটার দিকে আয়নার ঘুম ছ’টে যায়৷ গরম লাগছিলো বেজায়। সে চোখ খুলতেই নিজের পাশে একটা জলজ্যান্ত পুরুষকে শুয়ে থাকতে দেখে লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে । চোখ বড় বড় হয়ে আসে তার। সমুদ্র জাগ্রত-ই ছিলো।
সে দ্রুত উঠে বসে জিজ্ঞেস করে, ” কি হলো?”
আয়নার যেন ধ্যান ভাঙ্গলো। ধাতস্থ হতে সময় নেয়।
সে ছোট্ট করে জবাব দেয়, ” ওও।”
সমুদ্রের ওর কাণ্ড-কারখানা দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। সে সুধালো, ” বাই এনি চান্স, ভুলে গিয়েছিলে নাকি নিজের বিয়ের কথা?”
আয়নার তখন কি যে লজ্জা লাগলো। সে জোর গলায়, অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি জোরেই বলে, ” না।”
–” চোরের মায়ের বড় গলা।”
আয়না ঠায় বসে থাকে। সমুদ্র তার দিকে ঝুঁকে এসে কপালে হাত রেখে উষ্ণতা যাচাই করে এরপর বলে, ” তবে কী প্রেমময় জ্বর সারাতে পেরেছি?”
আয়না চোখ গোল গোল করে তাকায়। সমুদ্র যেন ওকে আরোও বাগে পায়। কাল বহুত জ্বালাইছে আজকে একটু হলেও শোধ তুলতে হবে৷
সে বলে উঠে, ” ভারী চু) মু এখন দিবো নাকি পরে?”
আয়না প্রথম দফায় ভ্রু কুচকে তাকায়। এরপর ক্ষণেই খেয়াল হতেই ওর চোখ-মুখ দেখার মতো অবস্থা। লাজের বশে সে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়৷
সমুদ্র বালিশে হেলান দিয়ে বলে, ” মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলে কেন? না মানে আমি করিনা জন্য তোমার অনেক দুঃখ। এখন আমি করতে চাচ্ছি, মুখ সরিয়ে নিচ্ছো।”
আয়না আস্তে করে বলে, ” সাট আপ!”
–” হুয়াই?”
আয়না বিছানা ছেড়ে উঠে গেলে, সমুদ্র বলে, ” কফি বানায় আনো। সারারাত ঘুমাইনি।”
–” সেকি কেন?”
–” যা পাগলামো করছিলে, আমার জায়গায় অন্যকেউ এসব শুনলে লজ্জায় কেবল মাথা কেন সম্পূর্ণ ঘাড় সমেত কল্লা কাটা যেত।”
আয়নার অবশ্য সবটা খেয়ালও নেই তবে যা যা স্মরণ আছে ওতেই এই লোকের সামনে আর থাকতে ইচ্ছা করছে না।
আয়না সাফাই গেয়ে বলে, ” জ্বর হলে আমি একটু আবোলতাবোল বলি। সেজন্য সর্যি।”
–” শুধু জ্বর নাকি প্রেমের জ্বর!”
আয়না তৎক্ষনাত বেড থেকে একটা বালিশ হাতে তুলে নিয়ে সমুদ্রের মুখের উপর ছুঁ’ড়ে মা’রে।
সমুদ্রর বিছানায় হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম।
সকালে নাস্তার টেবিলে ফাহাদ সাহেব আয়নাকে নিজের পাশে বসালেন। এবং আয়নার পাশে সমুদ্রের জায়গা হলো। আলিয়া তখনো ঘুমে।
ফাহাদ সাহেব বলে, ” সমুদ্র বাবা, তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? দেখছোই তো অফিসে থাকি। তোমাকে সময় দিতে পারছি না।”
সমুদ্র বলে, ” না, না আংকেল সবাই আমার অনেক খেয়াল রাখছে৷ প্লিজ ব্যতিব্যস্ত হবেন না। আমি একদম ঠিক আছি।”
সমুদ্র আর ফাহাদ সাহেব একসঙ্গে অফিসের উদ্দেশ্য বের হবেন৷ সমুদ্র আয়নার রুমে গিয়ে শার্ট ইন করতে লাগলো৷ আয়না রুমে আসতেই সে ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকালো।
এরপর পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে ওর হাতে গুঁজে দিয়ে বললো, ” এটা রাখো।”
–” কী এতে?”
–” খুলে দেখে নিও।”
আয়নাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না, রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্য। আয়না রুমে বসে প্যাকেট খুলতে-ই হতভম্ব হয়ে যায়। ছোট হীরার একটা নাকফুল। একদম রেগুলার ইউজের জন্য ছোটো সাইজের কিন্তু ডিজাইনটা বেশ!
সে মনে মনে অনেক খুশি হলো।
সেদিন একদম রাতে সমুদ্রের কল আসে। আয়না তখন বসে বসে কে-ড্রামা দেখছিলো। খুবই রোমান্টিক একটা এপিসোডের বেস্ট সীন চলছে। এরমধ্যেই কলটা এলো। সে রিসিভ করতেই সমুদ্র বলে উঠে, ” কি করছিলে?”
–” ড্রামা দেখছিলাম।”
–” ভাবলাম পড়ছো!”
–” না মানে এখন তো সামনে এক্সাম নেই….. ”
–” এক্সাম না থাকলে পড়ো না?”
আয়না বুঝে পায় না এমন রাতের বেলা পড়াশোনা নিয়ে কেন তদারকি করছেন উনি!
সমুদ্র এবারে নিজ থেকে বললো, ” কালকে এক জায়গায় যাচ্ছি আমরা। বিকেলের আগে ধরো চারটার মধ্যে রেডি থাকবে৷ আমি এসে নিয়ে যাব।”
–” কোথায় যাচ্ছি?”
–” ভয় পেতে হবে না। নট ইন হেল।”
–” উফ! কারো বাসায় নাকি এমনি কোথাও?”
–” গেলেই জানতে পারবে। এতো অস্থির হয়ো না।”
আয়নার সে’রাতে উত্তেজনায় ঘুম আসেনি ঠিকঠাক। পরদিন সকালে ভার্সিটির একটা ক্লাস ছিলো। সেটা মিস দিলো। অবশ্য ভার্সিটির ক্লাস মিস দেওয়ার রেকর্ড নেই তেমন তার। সে তার সেকশনের সিআর, তবুও আজ অকারণে ভার্সিটি গেলো না। দুপুর থেকেই কি পরবে, কি পরবে না এইটাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না। সমুদ্র কোথায় নিয়ে যাবে তা অন্তত বলে দিলে ভালো হত। পরবর্তীতে একটা মেরুন রঙের সালোয়ার কামিজ জড়ালো গায়ে। কেন যেন এই জামাটা আজ পড়তে মন চাচ্ছিলো। এরপর চুল বাঁধতে বসলো। আগে কোনোদিন সে সাজ-সরঞ্জামে এতো সময় দেয় নি৷ ইদানীং কি যে হচ্ছে তার সঙ্গে! সুন্দর করে সাজতে মন চায়। সাড়ে তিনটার মধ্যে সাজা শেষ করে, হালিমা খালার সাহায্য সমুদ্রের দেওয়া নাকফুল পড়ে। ব্যথাও পায় বেশ। তারপর দাদী সরিষার তেলের সঙ্গে রসুন-কালোজিরা গরম করে তার নাকে মালিশ করে কয়েক মিনিট৷ ঠিক চারটা বাজে সমুদ্রের কল আসে৷
ফোন ধরতেই বলে, ” নিচো আসো জলদি। রেডি তো তাই না? না মানে তোমরা মেয়ে মানুষ সাজতে বসলে তো আবার ঘঁড়ির কাটা মানো না।”
আয়না বলে উঠে, ” আসছি।”
সে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে দাদা-দাদীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
গাড়ির গ্লাসে টোকা মারতেই সমুদ্র বেরিয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। আয়না সীটে বসলো। সমুদ্র দু’পল থমকালো। ওকে আজ একটু বেশিই অন্যরকম সুন্দর লাগছে কি? কোনো কারণে অতিরিক্ত রূপবতী? নাকি চোখের ভ্রম!
আয়না খোলা গ্লাসের দিকে ঝুঁকে এসে বলে, ” কি হলো?”
সমুদ্রের ধ্যান ভঙ্গ হয়, সে ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করে। মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে, আয়নাকে কেন আজ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে?
আয়না বলে, ” কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
–” নারায়ণগঞ্জ।”
–” কিহ! এতোদূরে?”
–” দূরে কোথায় ড্রাইভিং ডিস্টেন্স দেড়ঘন্টা মাত্র!”
আয়নাকে বড় বিচলিত দেখালো। নিশ্চয়ই গণ্ডির রেঞ্জ তার বাড়ির আশপাশে, রেঞ্জের বাইরে যাওয়ার পারমিশন পায় নি কখনো।
সে বলে উঠে, ” তোমার দুই অভিভাবক-ই জানে, যে তুমি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছো। তাহলে অসুবিধে কী?”
–” দুইজন অভিভাবক কে কে?”
–” আমি আর তোমার আব্বু।”
–” আপনি অভিভাবক? ”
–” আলবত! ”
আয়নার যেন দুশ্চিন্তা তবুও যায়নি। জীবনে প্রথম সে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছে৷ প্রস্তুতিও নেই কোনো। ভেবেছিলো ধানমণ্ডি বা গুলসানের কোথাও যাচ্ছে। কিন্তু এতোদূর নিয়ে আসবে ভাবতে পারেনি৷ পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে খায় সে। এরপর হেলান দিলো।
সমুদ্র প্রশ্ন করে, ” খারাপ লাগছে?”
–” নাতো।”
–” ভালোও তো মনে হয় না লাগছে?”
আয়না হেলান দিয়ে থেকেই বললো, ” লাগছে। জানালা খুলে দিলে, প্রাকৃতিক বাতাস পেলে আরোও ভালো লাগবে৷”
সমুদ্র এসি অফ করে দিয়ে জানাল খুলে দিলো। ওয়েদার খুব সুন্দর আজ। বিকেলের দিকে রোদ কমে গেছে। হাই স্পীডে গাড়ি চলছে। হুহু করে বাতাস ঢুকছে। কেমন আরাম লাগতে থাকে। পনের মিনিটের অন্তর ঢাকা ছেড়ে তারা এগিয়ে যেতে লাগে গন্তব্যস্থলে৷ জ্যাম আজকে কম কেন জানি। খুব একটা সময় অপচয় হচ্ছে না।
রাস্তার দুই’ধারে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ চোখে পরে। সমুদ্রের নজর যায় আয়নার উপর। বেচারা ফের অস্থিরতা করছে। হাতে হাত মোচড়া-মুচড়ি করছে। আধা ঘন্টায় সম্পূর্ণ পানির বোতল শেষ করে ফেলেছে। মুখ ফুটে বললেই পারে ওয়াশরুম যাবো। সমুদ্র আনমনে হাসে।
সমুদ্র বলে, ” কোথাও গাড়ি থামিয়ে ফ্রেশ হয়ে চা খাই?”
আয়না যেন এহেন প্রস্তাবে খুশি হয়ে যায়। চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক খেলে যায়৷
সে বলে উঠে, ” এই এই সামনের দোকানটায় থামান৷ ”
সমুদ্র কিঞ্চিৎ হাসলো। আগে এদিকে এতোটা খাবার দোকান ছিলো না। তবে আজকাল অনেক রেস্তোরাঁ খুলছে। তারা দোকানের সামনে গাড়ি পার্ক করে। ভেতরে মানুষ-জন আছে গুটিকয়েক। আয়নাকে নিয়ে টেবিলে বসতেই মেন্যু কার্ড দিয়ে গেলো৷ কিন্তু আয়নার চোখ গেলো দোকানের পাশ ঘেঁষে বড় কালো কড়াইয়ে তেলে ভাজা বেগুনি-পিঁয়াজুর দিকে। তার মোটেও নুডুলস, শর্মা খাওয়ার ইচ্ছা নাই৷ ওই তো গরম-গরম পিঁয়াজু আর আলুর চপ চাই তার!
সে দোকানের ছোট ছেলেটাকে বলে উঠে, ” ওই ভাজাপোড়া গুলো আনো। আর দুই কাপ চা। মালাই চা। বেশি করে সর দিবে। কেমন? ”
— ” আচ্ছা আপা।”
সমুদ্র অবাক চোখ তার দিকে তাকায়। আয়না তাকে রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আসতে আসতেই দুই প্লেট ছোট ছোট পিয়াজু, আলুর চপ আর বেগুণি দিয়ে গেলো। আয়না ছোট ছোট ফুঁ দিয়ে মজা করে পিঁয়াজু খেলো। তাকেও বার কয়েক সাধলো।
সমুদ্রের ধারণা ছিলো এসব রাস্তার দোকানের সস্তা তাও ভাজাপোড়া খুব বাজে হয় খেতে! কিন্তু ওর জোড়াজুড়িতে মুখে দেওয়ার পর ধারণা পালটে যায়। ভাজাপোড়াও যে এতো সুস্বাদু হয় তার একদম অজানা ছিলো। সে খাওয়ার ফাঁকে আয়নাকে দুইবার দেখে নিল। কি মজা করে খাচ্ছে! ওর খাওয়া দেখেই তার খেতে মন চাইলো আরোও।
চা দিয়ে যাওয়ার পর সমুদ্র বলে, ” চল বাইরে দাঁড়িয়ে চা খাই। খোলা বাতাসে।”
আয়নার যেন প্রস্তাব খানা ভারী মনে ধরে। সে কাপ হাতে বাইরে চলে যায়। সমুদ্র নিজেও যখন আসে, তখন বিকেলের শেষভাগ। রোদের ছিটেফোঁটা নেই বললেই চলে৷
আয়না তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” ওরা যদি ভাবে আমরা বিল না দিয়েই ভেগে যাবো? বিল চোর ভাববে কী?”
–” তা কেন ভাববে? বিল তো দিবোই।”
আয়না চায়ের কাপে চুমুক দিলো। সমুদ্রের খেয়াল হলো ওর নাকে তার দেওয়া হীরার নাকফুল জ্বলজ্বল করছে। এতোক্ষণ সময় লাগলো কেন তার, এটা পর্যবেক্ষণ করতে?
আশেপাশে কোথাও বোধ করি কাশবন আছে। বাতাসের তোপে কাশবন থেকে কাশ ফুলের ক্ষুদ্র কণাসমূহ উড়াউড়ি করতে করতে এদিকেও পৌঁছে গেছে৷ ওগুলো দেখতে একদম সাদা প্রজাপতির মতোন! কেমন বেখেয়ালি ভাবে উড়াউড়ি করছে! কাশফুল গুলোর মতো যদি মনের দুয়ার খুলে বহুদূর, অনেক দূরে বেদনাগুচ্ছ উড়ে যেত!
বাতাস বইছে। রিকশার ক্রিংক্রিং আওয়াজ কানে ভাসছে। আয়নার চুলের খোপা খুলে যায়। এলোমেলো চুলগুলো বাতাসে আরো এলোমেলো হলো। কোথা থেকে যেন পেঁজা তুলোর মতো নরম কাশ ফুল এসে আয়নার চুলে আটকা পড়ে। সমুদ্র চোখ সরাতে পারে না ওর দিক থেকে।
আয়না বলে, ” থ্যাঙ্কিউ এতো সুন্দর একটা বিকেল উপহার দেওয়ার জন্য। আই লাইকড ইট সো মাচ্।”
সমুদ্র ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বলে উঠে, ” আজ তোমায় খুব সুন্দর লাগছে৷ ”
আয়না যেন এহেন প্রশংসায় খুশিতে আটখানা হলো। আবেগে অতিরিক্ত পর্যায়ে আপ্লূত হয়ে সমুদ্রের পকেট ধরে টানাটানি করে বলে, ” তাই?”
সমুদ্র ওমন টানাটানির তোপ সামলাতে না পেরে একটু ঝুকে পড়ে এরপর বলে, ” এইজন্য তারছিড়াদের বেশি প্রশ্রয় দিতে নেই৷ প্রশ্রয় দিলেই মাথায় উঠে নাচানাচি করে!”
আয়না চোখ গরম করে বললো, ” তারছিড়া? আপনি আমাকে তারছিড়া বললেন?”
–” তো? রাস্তায় কেউ এভাবে কারো শার্ট ধরে টানাটানি করে? দেখেছো কখনো?”
–” ওতোসব খেয়াল ছিলো না জন্য ভুলে।”
–” তারছিড়াদের ই আশপাশের খেয়াল থাকে না।”
আয়না ভীষণ রাগ হলো। সে অতিরিক্ত খুশি হয়ে নাহয় একটু শার্ট ধরে টান-টাই মেরেছে এতে এতোবার তাকে তারছিড়া বলে হেনেস্তা করা লাগবে? আরে টান মারার ফলে শার্ট তো আর খুলে পড়েনি!
সে রাগী চেহারা নিয়ে শব্দ করে গাড়ির উপর চায়ের কাপ রেখে বললো, ” আমি চললাম।”
সমুদ্র তখন চায়ে শেষ চুমুক দিচ্ছিলো। ওর কথা শুনে লাফিয়ে উঠে বলে, ” কই?”
–” ঢাকায়। আমার বাসায়। আমি আপনার সঙ্গে আর যাচ্ছি না। মিষ্টার ডাস্টবিন সর্যি মিষ্টার সাদবিন আপনি একাই যান।”
সমুদ্র ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো এরপর কেবল জিজ্ঞেস করলো, ” কিন্তু ঢাকায় যাবে কীভাবে?”
এতেই আয়না আরোও ক্ষেপে গেলো। সে হাত উঠিয়ে একটা বাস থামালো। এদিকটায় বাস যাতায়াত করে অনেক। বাসও সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় যাত্রী নেওয়ার আশায়৷ সমুদ্র ঘটনা বোঝার আগেই যা হওয়ার ঘটে যাচ্ছে। আয়না দ্রুত পায়ে বাসে উঠে যাচ্ছে৷ তাও যদি বাসটা ঢাকাগামী হতো দুশ্চিন্তার কারণ ছিলো না। ঢাকা গিয়েই পৌঁছাবে৷ কিন্তু এই বাস ঢাকা বিমুখী৷ কোনদিকে যাবে তাও লেখা আছে কিন্তু ম্যাডামের ওসব পড়ার টাইম কোথায়?
সমুদ্র দ্রুত এক প্রকার দৌঁড়ে আয়নাকে বাস থেকে নামালো। এতে কন্ট্রাক্টর বেশ রেগে যায়। বিরক্ত হয়ে সমুদ্রের দিকে তাকায়।
সমুদ্র বললো, ” আমার বউ ভুলে ভুল বাসে উঠে গেছে। দেখে নি বাস কোনদিকে যাবে৷”
বাংলাদেশের লোকাল বাসের কন্ট্রাক্টরদের চেহারায় সবসময়ই একটা বিরক্তি ভাব লেগে থাকে। ওনারা মনে হয় পৃথিবীর সবকিছুর উপর ভীষণ রকম বিরক্ত থাকে।
লোকটা বললো, ” হেতিরে সামলাতে পারেন না তো মাঝ রাস্তায় আনছেন ক্যান? ওস্তাদ আগে নেন।”
বাস সাইসাই করে তাদের রেখে চলে গেলো। সমুদ্র মনে মনে বলে, ” হেতিরে সামলাতেই তো জান বেরিয়ে যাচ্ছে!”
এরপর আয়নাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসে৷ বিল মিটিয়েই সোজা গাড়ি টান মারে। গাড়ি একদম গন্তব্যে এসে থামে। ঢাকা শহর থেকে দূরে, নিরিবিলি স্থানে একটা বাংলো টাইপ বাসা৷ একদম সিনেমায় দেখানো ফার্মহাউজ যেন।
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৪
আয়না এতো সুন্দর বাসা দেখে খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করে, ” এটা কার ফার্মহাউজ?”
–” শায়লা আন্টির।”
উত্তর শোনামাত্র আয়নার মুখ থেকে খুশি কর্পূরের ন্যায় গায়েব হয়ে যায়৷