ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪৩

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪৩
Arishan Nur

স্নিগ্ধ-কোমল সকাল। ভোর ছয়’টা বাজছিলো তখন। নভেম্বরের শীতে আলসেমি তখন তুঙ্গে। সমুদ্র চোখ কচলে মাথা তুলে তাকায় চারপাশে। বুকের পাশটা কেমন ভারী ভারী লাগলো। বুকের দিকে চোখ মেলতেই দেখে আয়না গড়াগড়ি খেয়ে ঘুমের মধ্যে তার বুকে এসে জোড়ো হয়ে শুয়ে খুব বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। একটা পা সমুদ্রের গায়ের উপর তুলে দেওয়া। কমফোর্টার সামান্য সরে গেছে গা থেকে। সমুদ্র আস্তে করে গায়ে কম্বল টা মুড়িয়ে দিয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে নির্বাক হয়ে। কী নিষ্পাপ চেহারা ওর। চোখের কোনে ডার্ক সার্কেলের কালো দাগ। না জানি কতো রাত নির্ঘুম ছিলো সে! সমুদ্র ওর চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। মেয়েটা আরাম করে ঘুমাচ্ছে। সমুদ্র ডিস্টার্ব না করে উঠে বসে। তার ঘুম ছু’টে গেছে। বেডে হেলান দিয়ে বসে একদৃষ্টিতে আয়ুর দিকেই তাকিয়ে থাকলো।
আয়নার ঘুম ভাঙ্গে সকাল দশটার দিকে। ওকে জাগ্রত হতে দেখে সমুদ্র নিজ থেকে ওর দিকে ঝুকে একগাল হেসে বলে, ” গুড মর্নিং।”

আয়না পিটপিট করে চেয়ে থাকে। আশেপাশে তাকালো অবাক দৃষ্টিতে। তারপর নিজের পেটের দিকটায় হাত দিয়ে বলে, ” আপনি? আপনি না অস্ট্রেলিয়া ছিলেন? এখানে কীভাবে আসলেন?”
আয়না অসুস্থ হওয়ার পর থেকে প্রতিনিয়ত অনেক অদ্ভুত কথা-বার্তা বলছিলো। সমুদ্র ধৈর্য্য নিয়ে সবকিছুর উত্তর দেয়। মনের ভুলেও বিরক্তি প্রকাশ করে না৷ সে আয়নার কপালে চু মু দিয়ে বলে, ” আমি তো অনেক আগেই তোমার কাছে এসেছি।অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এসেছি। ”
আয়না কিসব ভাবে এরপর বলে, ” আমার মাথা কেমন ঝিম ঝিম করছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–” ঘুমাও। এককাজ করো, আমার কোলে মাথা রাখো৷ আমি মাথায় ম্যাসাজ করে দেই।”
আয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলে, একটু পর ও আবার ঘুমিয়ে যায়। বেলা একটায় ওর ঘুম ভাঙ্গে।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এলে ওর জন্য দুপুরে অনেককিছুই আয়োজন করে রেখেছে বাসার বাকি সদস্যরা। বহুদিন পর আয়না দুপুরে বাবা আর পুরা পরিবারের সঙ্গে খেতে বসে। ওর প্রিয় রোস্ট করা হয়েছে। বিয়ের আগে বাসায় ইলিশ মাছ রান্না হলে যেমন করে বাবা মাছের কাটা সরিয়ে দিতো, আজও ঠিক সেইভাবে মেয়ের পাতে ইলিশ মাছ বেছে দেন ফাহাদ।

আয়না খেতে খেতে বলে, ” শায়লা আন্টি কোথায়?”
ফাহাদ সাহেব সামান্য ভ্রু কুচকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ আলিয়া দ্রুত আগ বাড়িয়ে বলে, ” আপা, কচু ভর্তা বানানো হয়েছে তোমার জন্য। দিবো?”
আয়না কিছু বলে না। আশেপাশে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজে। খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই ঔষধ-পত্র দিয়ে হাজির হয় সমুদ্র। আয়না সবাই যেনো চোখে হারাচ্ছে। আলিয়া দু’মিনিট পরপর এসে আপাকে দেখে নিচ্ছে। ওর আপার চেহারার দিকে তাকালেই এতো মায়া লাগছে!

দুপুরের দিকে সবাই ভাতঘুমের জন্য যে যার রুমে চলে যায়। আয়নাও ঘুমিয়ে যায়। ওর ঔষধ গুলো বেশ পাওয়ারফুল। ঘুম খুব তীব্র হচ্ছে। এখনো ঔষধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পরে ও। সমুদ্র টি-শার্ট টানটান করে বাসার বাইরে বের হয়। তখন অলমোস্ট সাড়ে চার’টা বাজছিলো। একটা কাজে এলাকার বাইরে গেছে। আধাঘন্টা ও লাগবে না ফিরতে৷ এদিকে তখনো আয়না ঘুমে ছিলো জন্য কেউ ওকে ডিস্টার্ব করেনি। এমনকি বাসায় কেউ কোনো সাড়া-শব্দও করেনি। আয়নার রুমের দরজা ভীড়ানো ছিলো৷ কখন যে ও ঘুম থেকে উঠে বাসার বাইরে চলে যায় কেউ বলতে পারেনা৷

আলিয়া চা নিয়ে আপার রুমে এসে দেখে রুম ফাঁকা। মেইনগেইটের লক খোলা। ওর বুক ধক করে উঠে। আপা কই চলে গেলো? সে বিকট আওয়াজে চিৎকার দিয়ে উঠে। দ্রুত ফাহাদ সাহেব বেরিয়ে আসে মেয়ের চিৎকার। আয়নার রুম ফাকা দেখে উনার বুঝতে বাকি রইল না, আয়ু নিশ্চয়ই বাসার বাইরে চলে গেছে৷ টেনশনে ওনার কপালে ঘাম ছু’টে। ওর তো শরীর ভালো না৷ তার উপর এতো কড়া ডোজের ঔষধ নিচ্ছে, একা বের হওয়া রিস্কি। উনি দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে শুরু করেন। আলিয়া সমুদ্রের ফোনে কল দিতে থাকে। কি করবে সে? উপায় না পেয়ে নিজেও নিচে নেমে পরে৷

আয়না এলোমেলো পায়ে হাঁটছে। ঘুম থেকে উঠে সে বাসার বাইরে চলে এসেছে। আশেপাশে সবকিছুই অচেনা লাগছে। কই যাচ্ছে নিজেও জানে না। হাটতে হাটতে বাসার গলির চৌরাস্তায় চলে আসে ও৷ রাস্তা পার হওয়ার জন্য যানবাহন চলাচল করতে থাকা গাড়ি-রিকশার ভীড়ে পা বাড়াতে ধরলে, কেউ একজন ওকে টেনে সরিয়ে নিয়ে যায়। আয়না বিরক্ত হয়ে পিছে ফিরে দেখে সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। ওর ঐ নীল চোখের মণিতে একরাশ আতঙ্ক। আয়না সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। কেমন বোবা হয়ে তাকিয়ে থাকে দু’জন। রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া দু-একজন পথচারী তাদের বকাঝকা দিয়ে গেলো। ওরা কর্ণপাত করলো না। অন্যদিন হলে সমুদ্র নিশ্চিত আয়নাকে অনেক বকা দিতো কিন্তু আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। সে নম্র গলায় বলে, ” আয়ু, তুমি বাসা থেকে একা কেন বেরিয়েছো?”

আয়না পিটপিট করে চেয়ে থাকে এরপর আশেপাশে তাকিয়ে বলে, ” আমি রাস্তা চিনতে পারছি না। আমরা কোথায় আছি এখন?”
সমুদ্র আলতো করে ওত হাত ধরে বলে, ” সমস্যা নেই৷ আমি আছি তো৷ আমি তোমার গুগল ম্যাপ। চলো শীতের বিকেলে একটু হাঁটাহাঁটি করি।”

আয়নার প্রস্তাব খানা ভারী পছন্দ হলো। সে মাথা দুলিয়ে সমুদ্রর হাতে হাত ধরে সামনে আগালো। সমুদ্র ওকে ফুটপাতের দিকে সরিয়ে নিয়ে, নিজে রাস্তার দিকে থাকে। দু’জন সামনে আগালো। ফুটপাত ঘেঁষে কুকুরের দল খেলা করছিলো। আয়নাকে সমুদ্র বনরুটি কিনে দেয়। ও রাস্তার কুকুর গুলোকে রুটি দিচ্ছিলো। সমুদ্র তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। সে যখন রাস্তায় ছিলো, বাসায় ফিরার জন্য মোড়ের দিকে আগায়। তখন আলিয়ার কল আসে যে আয়না হুট করে কাউকে না জানিয়ে বেরিয়ে গেছে। আলিয়ার কথা শোনামাত্র সমুদ্র দু’চোখে আঁধার দেখে। সমুদ্র দ্রুত আয়নার বাড়ির পথে ফিরে যেতে আরম্ভ করে৷ দু’টো চোখ কেবল আয়নাকে খুজছিল। সে ধারণা ছিলো আয়ু বেশিদূর হেঁটে যায় নি। বাড়ির আশেপাশেই আছে। খুঁজতে খুঁজতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে আয়নাকে রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। সে আয়নার অজান্তেই ওর কিছু ছবি তুলে রাখে। আলিয়াকে ছবি গুলো পাঠিয়ে দিলো। যেন ওরা চিন্তামুক্ত থাকে৷

আয়না যখন রুটি ছিড়ে দিচ্ছিল তখন রাস্তার ধারে একটা ছোট্ট কুকুর ছানা এসে দাড়ালো। ওর পা ভাঙ্গা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। কুকুরটাকে দেখামাত্র আয়না হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে। কাছে ডাকলে ভয়ে গুটিসুটি মেরে ঘেউঘেউ করে আর লেজ দুলায়। কুকুর ছানাটার চোখে কী উপচে পড়া মায়া। ভাঙ্গা পায়ের ব্যথায় কাতরাচ্ছে। হয়তো না খাওয়া ক্ষুধার্ত। কোনো মানুষ মনে হয় ঢিল ছুড়ে মেরেছিল, ছোট্ট ছানাটা আঘাত পেয়েছে এজন্য।
আয়না জোরর আওয়াজ করে সমুদ্র কে ডাকে। বলে উঠে, “তুমি না ডাক্তার! এই বাবুটাকে সুস্থ করে দাও।”
আয়নার সরল আবদারে সমুদ্র বিপাকে পড়ে। সে তো হিউম্যান ফিজিওলজি পড়ে এসেছে৷ সে মাথা চুলকে কুকুরের ছানাটাকে কোলে নেয়। সমুদ্র আবার কুকুর ভয় পায় না।দ্রুত আয়না সহ একটা ফার্মেসী তে যায়। বিশাল বড় ফার্মেসী। ফার্মেসীর লোক একটু অবাকই হলো। আজকাল মানুষ-জনের বোবা প্রানী নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবে না অথচ দুজন মিলে একটা কুকুর নিয়ে এসেছে৷
লোকটা প্রাথমিক ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ে বলে, ” রাতের মধ্যে আমরা স্থানীয় ভেটেরিনারি ক্লিনিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিব।”

সমুদ্র ভদ্রলোক কে কিছু টাকা দিয়ে দেয়৷ ভদ্রলোক খুশিই হলো। যদিও কুকুরটার চিকিৎসা করাতে এতো টাকা লাগবে না। তারমানে বকশিস ও দিলো। ওনার ফোন দিয়ে, সমুদ্রের ফোন নাম্বার নিলো।
আয়নাকে নিয়ে ফেরার পথে জিজ্ঞাসা করে, ” ফুচকা খাবে? ”
আয়না বলে, ” হ্যাঁ, হ্যাঁ। খাবো।”
সমুদ্র হাসে ওর উত্তেজনা দেখে। একটা ফুচকার দোকানের সামনে দাঁড়ালো। আয়ু অনেক মজা করে ফুচকা খায়। এক প্লেট ই অর্ডার করেছিলো। সমুদ্র এসব খায় না৷
আয়না তা দেখে প্রশ্ন করে, ” আপনি খাবেন না?”
–” উহু। আমি এসব ধুলাবালি খাই না।”

আয়না ওর কথা কানে তুলে না, একটা ফুচকা সমুদ্রের মুখে পুড়ে দেয়। ঝাল ঝাল ফুচকা খেয়ে নাজেহাল অনেক সমুদ্রের৷ ও একদম ঝাল খেতে পারেনা। ঝালে নাকের পাটা লাল হয়ে আসে। সমুদ্রের নাজেহাল দশা দেখে আয়না খিলখিল করে হেসে বলে, ” আপনি ফুচকা খান না! পৃথিবীতে এমন মানুষও আছে যে ফুচকা খায় না?”
সমুদ্র ওর দিকে মোহগ্রস্ত চাউনিতে তাকিয়ে থাকে।

একদিন, দুইদিন করে মোট চারদিন কেটে গেলো। আয়নার কড়া ডোজের ঔষধ খাওয়া বন্ধ হলো। বলতে গেলে সে আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। কেবল ঘুমের ঔষধ চলছিল তখন। সে নিজের পুরাতন স্বভাবে ফিরে আসে। বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায় না। সমুদ্র কে ইগনোর করে।কিন্তু এবারে তার জীবনের দুই পুরুষ ই সম্পূর্ণ উলটা আচরণ করে। আয়না ওদের সঙ্গে কথা না বললেও নিজেরাই এসে এসে ভাব জমায়। যত্ন-আত্তির কমতি নেই। অসুস্থ থাকা অবস্থায় করা ব্যবহার বা ওই সময়ের স্মৃতি আয়নার স্মরণ নেই। রোকসানা ম্যাডাম বলেছে এটা নাকি খুব নর্মাল। ম্যাক্সিমাম পেশেন্ট -ই ট্রমায় থাকা অবস্থার ঘটনা ভুলে যায়।

আয়না রাতে বসে ছিলো বারান্দায়। ওর মন ভীষণ খারাপ। এতোদিন পর ও নিজের মিসক্যারেজের কষ্ট টের পাচ্ছে। ওর বাবুটা আর পৃথিবীতে নেই। পৃথিবীতে আসার আগেই মায়ের সঙ্গে অভিমান করে দূরে চলে গেলো? চোখ বেয়ে টপাটপ দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। নিকষ কালো আধারে সব কষ্ট যেনো কোথায় তলিয়ে যেতে লাগে। কেমন শূন্য লাগে সবকিছুই।
এমন সময়, রুমে সমুদ্র প্রবেশ করে। আয়না ওকে দেখামাত্র বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিলো। সমুদ্র হাসি মুখে বারান্দায় টোকা দিয়ে বলে, ” আয়ু, বারান্দায় থাকলে মশা কা মড়াবে তোমাকে। ভেতরে আসো। অবশ্য ভেতরে আসলে বড় মশা কা৷ মড়ালেও কা মড়াতে পারে। হু নোজ?”
আয়না ওপাশ থেকে বলে, ” আমাকে আয়ু বলে কেনো ডাকছেন?”
–” আমার বউকে আমি আদর করে ডাকছি। তোমার সমস্যা কী?”
সমুদ্র বারান্দার দরজা খুলে ওর পাশে দাঁড়িয়ে একটা কিটক্যাট এগিয়ে দিয়ে বলে, ” মন খারাপ কেনো আমার বউয়ের? হু?”

আয়না খামোশ থেকে সমুদ্রের পানে তাকালো। সমুদ্র সাদা টি-শার্ট পরে আছে। চেহারায় ক্লান্তি ভাব ফুটে আছে। সে আয়নার মুখে চকলেট তুলে দিয়ে বলে, ” কাল রাতের ট্রেনে সিলেট যাচ্ছি। জামা-কাপড় গুছিয়ে নেও।”
আয়না ভ্রু কুচকে বলে, ” আমি যাবো না। আমার ইচ্ছা নাই।”
–” বারে, তোমার না এতো আগ্রহ যাওয়ার! হুট করে কী হলো?”
আয়না মনে করতে পারেনা তার কখন সিলেট যাওয়ার শখ জাগে। সমুদ্র কেন তার সঙ্গে এতো মিষ্টি ব্যবহার করছে। ওর না দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা! মানসপটে সব ঘোলাটে স্মৃতি পরিষ্কার হয়ে উঠে।
সে বলে, ” আপনি খুব খারাপ একটা লোক সমুদ্র। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হন।”
সমুদ্র ওর পেছনে গিয়ে দাড়ালো এরপর বলে, ” এবার চলবে? দেখো, তোমার চোখের সামন থেকে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছি।”

আয়না খুব বিরক্ত হলো, তাকে আরোও বিরক্ত করতে সমুদ্র পেছনে থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” আই আম সর‍্যি জান। আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না। আই প্রমিজ সবসময়ই তোমাকে খুব যত্নে রাখবো। আই উইল নট গিভ ইউ লিলি’স, আই উইল টেক কেয়ার অফ ইউ লাইক এ হুয়াইট লিলি।”
আয়না বলে, ” এতো দ্রুত আপনার সব অপরাধ মাফ হবে?”
–” শাস্তি দিলে দেও!”

সমুদ্র ওর সামনে এসে দাঁড়ায় এবং কানে হাত দিয়ে বলে, ” সর‍্যি, মাই হুয়াইট লিলি।”
আয়না সঙ্গে সঙ্গে ওর হাত নামিয়ে দিয়ে বলে, ” আমি স্বামী হিসেবে আপনাকে অনেক বেশি সম্মান করি।”
সমুদ্র ওর পাশে এসে বলে, ” তোমাকে কোনো চাপ দিবো না। তোমার যেদিন আমার সঙ্গে আসতে মন চাইবে। ফিরে এসো৷ আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।”
আয়না অপলক নয়নে চেয়ে থাকে বলে, ” আমাদের বাবুর জন্য আপনার খারাপ লাগে না?”
সমুদ্র এবারে কিছুটা মিইয়ে গিয়ে বলে, ” লাগে কিন্তু আমি জানি ও খুব আনন্দে,সুখে আছে, আয়ু। বরং ওর জন্য আমরা দুঃখ পেলেই ও দুঃখ পায়। ওর জন্য হলেও আমাদের হাসি-খুশি থাকতে হবে। বাবা-মা হাসি-খুশি থাকলে বেবিও আনন্দে থাকবে।”
আয়না সামান্য হাসে। সমুদ্র ওর হাতে হাত রেখে বললো, ” আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও। দেখো, অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না।”

–” কীভাবে? আপনাকে বিশ্বাস করতে ভয় লাগে। যদি আবারোও অবহেলা করেন?”
সমুদ্র ওর কথায় থমকে যায়। কয়েক দন্ড নিজের মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে এরপর বলে, তোমার না অনেক ইচ্ছা ছিলো একটা প্রেম করার। বয়ফ্রেন্ড নিয়ে টিএসসি ঘুরার। আমাকে কয়েকদিনের জন্য বয়ফ্রেন্ড বানাও। দেখবা অটো আমার প্রতি বিশ্বাস চলে আসবে।”
আয়না বিষ্ফোরিত চোখে সমুদ্রের পানে তাকালো। সমুদ্র তার এই ইচ্ছার কথা কিভাবে জানলো? এটা তো তার এডমিশন টাইমের ফ্যান্টাসি ছিলো।
— “উইল ইউ বি মাই গার্লফ্রেন্ড? দেখো আমাদের কতো ভাগ্য ভাল, মানুষ বয়ফ্রেন্ড টু হাসবেন্ড হয় আর আমি হাসবেন্ড টু বয়ফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি।”

আয়না জবাব না দিয়ে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে৷
সেদিন রাতে সমুদ্র নিজের বাড়ি ফিরে যায়। পরদিন বিকেলে ফোন দেয় আয়নাকে। আজকে সিলেট যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের।
আয়না ফোন তুলে বলে, ” আপনি অপেক্ষা করেন৷ আমি আর আলিয়া বের হচ্ছি।”
–“শুনো, বাঙ্গালী মেয়েরা বয়ফ্রেন্ডকে কোনোদিন আপনি বলে ডাকে। সে ‘তুমি’।
কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে যায় সবাই। ট্রেনে করে যাবে তারা। রাত সাড়ে আটটায় ট্রেন। শ্রাবণ, সমুদ্র, পিউ এসে গেছে। আয়না-আলিয়াকে ফাহাদ সাহেব ড্রপ করলেন। গন্তব্যস্থলে, হুট করে ট্যুর অর্গানাইজার হিসেবে রঙ্গনকে দেখা গেলো। রঙ্গনকে দেখামাত্র সমুদ্র ভ্রু কুচকে তাকালেও পিউ মিটমিট করে হাসে৷

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪২

রঙ্গন আর শ্রাবণ নাকি ট্যুর ম্যানেজমেন্ট এর ভলেন্টিয়ার হিসেবে আছে। রঙ্গন সঙ্গে ওর বোনকেও এনেছে। ট্রেনের একটা বগির অর্ধেক জুড়ে ট্যুর ঢাকা টু সিলেট এর মানুষ জনে ভরে গেলো। ফেসবুক গ্রুপে দেখে অনেকে রেজিস্ট্রেশন করেছে। বাজেট একটু বেশি হওয়ায় ভদ্র পরিবারের মানুষ-জন ই আগ্রহ পোষণ করেছে।
আয়না জানালার পাশে বসে পরে ট্রেনের। ট্রেন চলা শুরু করতেই সমুদ্রের ফোন থেকে ম্যাসেন আসে৷
” ট্রেনের বাম সাইডে আসো। একটু প্রেম করি।”

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৪৪