উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ২০
আফিয়া আফরোজ আহি
ক্লান্ত দুপুরে সবে মাত্র পরীক্ষা দিয়ে ফিরেছি। ফাইল কোনো মতে সোফার এক কোণে ফেলে সোফায় হেলান দিয়ে বসলাম। ঘুমে চোখে ভেঙ্গে আসছে। ঘাড় ব্যথা করছে। পিঠ ধরে এসেছে। শরীর ম্যাচ ম্যাচ করছে। ইচ্ছে করছে এখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। ক্লান্তিতে শরীর ছেড়ে দিচ্ছে। সারারাত জেগে পড়েছি। হাতে গোনা ২-৩ তিন ঘন্টা গুমিয়েছি। ফের সকাল সকাল উঠে পড়া রিভাইস করে পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। সব মিলিয়ে ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। ক্লান্তিতে সোফায় কখন চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানিনা। আম্মু এসে পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো হাতে ডাকছে,
“রোদ, এই রোদ! ঘুমিয়ে পড়েছিস? শরীর বেশি খারাপ লাগছে? ওঠ সোনা”
আম্মুর কলে মুখ গুঁজে দিয়ে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললাম,
“ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আম্মু ডেকো না প্লিজ”
আম্মু চুলের ভাঁজে ভাঁজে হাতে বুলিয়ে দিচ্ছে। মুখে হাত বুলিয়ে আলতো কণ্ঠে বলে উঠলো,
“এখন না ঘুমিয়ে খেয়ে দেয়ে একেবারে ঘুম দে। দেখবি শরীর এতো খারাপ লাগবে না। ওঠ সোনা”
আম্মু ঢেলে ঠুলে উঠিয়ে দিলো। মাতালের মতো সিঁড়ি বেয়ে হেলে দুলে উঠছি। আমাকে দেখে মনে হবে পাক্কা নেশা করে এসেছি। নেশার তালে ঢুলছি। ঢুলতে ঢুলতে হেলে দুলে এদিক সেদিক পড়ে যাচ্ছি। রুমে যেয়ে কলেজ ড্রেস চেঞ্জ করে কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলাম। শাওয়ার নিলে ক্লান্তি খানিকটা কম লাগবে। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে সোজা ব্যালকনিতে গেলাম।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
দুপুরের মিষ্টি আলোয় ফুলগুলো ঝলমল করছে। হাওয়ার তালে তালে দুলছে। ফুলের মিষ্টি ঘ্রান ছড়িয়ে আছে পুরো ব্যালকনি জুড়ে। সুন্দর একটা পরিবেশ। ক্লান্ত মনটা ফ্রেশ হয়ে গেল মুহূর্তের মাঝে। আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলাম ফুলগুলো। ব্যালকনি পেরিয়ে নজর পড়লো বাগানের ফুল গাছগুলোর দিকে। অনেকদিন দিন হয়ে গেল সেভাবে বাগানে যাওয়া হচ্ছে না। আর না ফুলগুলোর যত্ন নেওয়া হচ্ছে। তবুও গাছে কি সুন্দর ফুল ফুটে আছে। এর মাঝে নিচ থেকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাক পড়লো। চলে গেলাম খেতে। খাবার খেয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য ঘুম দিবো। এমন সময় বিছানার পাশে থাকা ফোন বেজে উঠলো সশব্দে। হাতে নিয়ে দেখলাম আদ্র ভাইয়ের কল। রিসিভ করতে ওপাশ থেকে উৎকণ্ঠা স্বর,
“খেয়েছিস? শরীর বেশি খারাপ করছে? এতো রাত জেগে না পড়লেও পারতিস। অসুস্থ হয়ে যাবি তো!”
“হ্যাঁ খেয়েছি। তুমি খেয়েছো? আমার কিছু হবে না। একটু রাত যেগে পড়লে কিছু হয় না। তুমি অফিসে পৌঁছে গেছো?”
সকাল বেলা আদ্র ভাই আমাকে আর ইভাকে কলেজে নিয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষার পুরো সময়টা সেখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছিলো। আমি চলে যেতে বলেছিলাম কিন্তু উনি যাবেন না। তার শুধু আমাকে নিয়ে যত টেনশন। উনার ভাষ্যমতে রাত জেগে পড়ার কারণে আমি যদি পরিক্ষার হলে অসুস্থ হয়ে যাই সেই ভয়ে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে নড়েনি। একেবারে পরীক্ষা শেষ করে বাসায় দিয়ে তারপর গেছে।
“তোদের নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে এসেছি। কাজের একটু প্রেসার আছে। শেষ করে পড়ে খাবো”
মেজাজ খারাপ হলো। এই মানুষতা নিজের বেলায় এতো কেয়ার লেস কোনো? শাসিয়ে বললাম,
“কোনো পরে টরে না এখনই খাবে যাও”
“আরে বেশি সময় লাগবে না। এই ঘন্টা খানেক লাগবে”
ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় তিনটার কাছাকাছি। কঠোর কণ্ঠে বলে উঠলাম,
“তিনটা অলরেডি বাজে। আরো এক ঘন্টা মানে চারটা। কতো দেরি হবে খেয়াল আছে? সকালেও কোনো মতে একটু খেয়ে উঠে গিয়েছো। কাজ পড়ে করলে উড়ে যাবে না। আগে যেয়ে খেয়ে নেও। আগে খাওয়া তারপর সব”
“আরে শুনবি তো….”
“তুমি যাবে কিনা বলো?”
“যাচ্ছি ইয়ার। তুই দিন দিন বড্ড নাছোড় বান্দা হয়ে যাচ্ছিস রৌদ্রময়ী”
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
“আমার বেলায় যখন ধমকিয়ে খাওয়াও সেই বেলায়?”
“তুই না খেলে অসুস্থ হয়ে যাবি। এমনি যা কাঠপাঠির ন্যায় শরীর ফুঁ দিলে উড়ে যাওয়ার জোগাড়। তাকে ধমকেই খাওয়াতে হয়। আমি দেরি করে খেলেও কিছু হবে না”
“বাহ্! নিজের বেলা ষোলো আনা আর আমার বেলায় চার আনা। আমি অতো কিছু শুনতে চাইনা তুমি এখন খাবে মানে এখনই খেতে হবে”
“যাচ্ছি। তুই এখন ঘুমা”
“ঠিক আছে। টা টা”
আদ্র ভাইও কিউট করে বলল,
“টা টা”
কল কেটে ফোন পাশে রেখে দিলাম। চোখ বুজে ঘুমানোর অপেক্ষায় আছি। ক্লান্ত থাকায় কয়েক মিনিটের মাঝেই পাড়ি জমালাম ঘুমের দেশে। গভীর ঘুম যাকে বলে।
সন্ধ্যায় সাতটা নাগাদ ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে আড়মোড়ে ভেঙ্গে উঠে বসলাম। শরীর এখন কিছুটা ভালো লাগছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে ছুটলাম। এখন স্ট্রং কফি খেলে সকল ক্লান্তি কেটে যাবে। ড্রয়িং রুমে সোফায় ভাবি, ঈশিতা আপু, রোশনি, ইভা আড্ডা দিচ্ছে। দুদিন পড়ে রসায়ন পরীক্ষা। এখন একটু আড্ডা দিয়ে আসি। আমায় দেখে ভাবি ডেকে উঠলো।
“রোদ এদিকে এসো। গরম গরম চায়ের সাথে পাকোড়া বানিয়েছি। শীতের সন্ধ্যা জমে যাবে। তাড়াতাড়ি এসো”
এগিয়ে যেয়ে ঈশিতা আপুর পাশে বসলাম। রোশনি খোঁচা মেরে বলল,
“কি গো ব্রিলিয়ান্ট ম্যাডাম পরীক্ষা কেমন হয়েছে?”
ইভা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ও আবার কবে থেকে ব্রিলিয়ান্ট হলো?”
রোশনি ইভাকে এক প্রকার ধমক দিয়ে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“আরে তুমি বুঝবে না। আপু তুমি বলো তো”
ভ্রু কুঁচকে সুধালাম,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই হয়েছে। কেন বল তো?”
“সারারাত জেগে আদ্র ভাই ধরে ধরে মুখস্ত করিয়েছে এরপরও ভালো না হলে হবে? বেচারার সকল পরিশ্রম বৃথা যেত যে”
ঈশিতা আপু চমকে উঠে বলল,
“আদ্র ভাই ওকে সারারাত পড়িয়েছে?”
“হ্যাঁ। আমি পানি খেতে উঠেছিলাম। আমার ঘরে পানি ছিল না তাই ড্রয়িং রুমে এসেছিলাম পানি নিতে। চোখে পড়লো রোদ আপুর রুমে। এগিয়ে গেলাম সেদিকে। এতো রাতে কি করছে সেটা দেখতে। ওমা যেয়ে দেখি আদ্র ভাই ধরে ধরে ম্যাডামকে পড়াচ্ছে”
ঈশিতা আপু আর ইভা একসাথে আফসোস করে বলল,
“আজকে একটা আদ্র ভাই নাই বলে কেউ রাত জেগে পড়ায় না। তাই প্রতিবার ফেল করি। ঠাডা পড়া কপাল আমাদের”
ইভা বলল,
“আজকে এক খান আদ্র ভাইয়ের অভাবে জীব বিজ্ঞান পরীক্ষায় আমার পাশ করা হলো না গো! এখন আমার কি হপ্পে?”
একটু থেমে ফের বলল,
“এই জন্যই তো বলি যেই মেয়ে পরীক্ষার হলে এতিমের মতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, সে আজ ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে লিখে যাচ্ছে কিভাবে? আর এদিকে আমি বসে বসে কলম কামড়াচ্ছি। এই তাহলে ওর লেখার রহস্য? আব্বুকে আজই বলবো আমায় বিয়ে দিতে। তারপর জামাই রাত জেগে পোড়াবে। নাহলে এ জীবনে আমার পাশ করা হবে না”
“তোর টা তাও যেমন তেমন। আমার বেলায়? নিজে প্রেম করার বয়সে ছোট বোনদের প্রেম দেখতে হচ্ছে। আগে দেখতাম বড় আপু ভাইয়ারা প্রেম করে আর এখন ছোট বোন ভাইরা প্রেম করে। কি পোড়া কপাল আমার! আমার কি আজীবনেও প্রেম হবে না?”
ওদের হাপিত্বেস দেখে ইচ্ছে করছে এক বালতি পানিতে ডুব দেই। এই লজ্জা আমি কোথায় রাখবো? সব গুলো মিলে আমায় লজ্জা দিচ্ছে। এদের থামা থামির কোনো লক্ষণই দেখছি না। ইচ্ছে করছে এই বজ্জাত রোশনির বাচ্চাকে ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে রাখি। তুই কেন অন্যদের ঘরে উঁকি দিবি? উঁকি দিয়েছিস ভালো কথা যা দেখেছিস তা নিজের মাঝেই রাখ না বোন! সেগুলো এসে আবার ওদের বলার কি দরকার? শেষ পর্যন্ত এদের দেওয়া লজ্জায় টিকতে না পেরে উঠে চলে এলাম। খানিক ক্ষণ মোবাইল ঘাটা ঘাঁটি করলাম। আদ্র ভাই অনলাইনে ছিল মিনিট পঞ্চাশ আগে। কোনো ম্যাসেজ বা কল নেই। মানুষটা খাবার খেয়েছো তো! উনার তো আবার নিজের খেয়াল রাখার বেলায় মনে থাকে না। অন্য কারো মন খারাপ থাকলে সে সব সময় আছে। আর নিজের মন খারাপ হলে এক কোণে চুপটি করে বসে থাকবে বা ফোন বন্ধ করে ঘুম দিবে। তাও কাউকে নিজের কষ্ট, খারাপ লাগার কথা বলবে না। নিজের কষ্ট নিজের মাঝেই রেখে দিবে। যেটা আমার মোটেও ভালো লাগে না। ফোন রেখে পড়তে বসলাম। আজ কিছুটা পড়ে শেষ করলে পড়া কমবে।
এক মনে পড়ছি এমন সময় কারো আগমনের শব্দ কানে এলো। ধীর পায়ে কেউ এগিয়ে আসছে। পড়া রেখে পিছন ফিরে তাকালাম। ইভান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ট্রলি, কাঁধে ব্যাগ। একদম ফিটফাটা হয়ে এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যাবেন। কিন্তু উনি যাবে তা কোথায়? এর আগে গেলেও তো কখনো লাগেজ ব্যাবহার করেনি। তাহলে আজ কোথায় যাচ্ছে? ইভান ভাই এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“পড়ছিলি?”
“হ্যাঁ! পরীক্ষা চলছে তো তাই”
“আচ্ছা মন দিয়ে পড়। আমি গেলাম”
কৌতূহলি স্বরে জিজ্ঞেস করলাম,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
ইভান ভাই ধীর কণ্ঠে জবাব দিলেন,
“চলে যাচ্ছি”
“কি বলছেন? চলে যাচ্ছেন মানে? আবার লন্ডন ব্যাক করবেন?”
ইভান ভাই মাথা নেড়ে সায় জানালেন। মুখে উত্তর করলো না।
“কিন্তু কেন? আপনার তো একেবারে থেকে যাওয়ার কথা ছিলো। বড় আম্মু জানে?”
“থেকে যাওয়ার কথা থাকলেও থাকা হবে না। আমাদের জীবনে অনেক কিছুই তো হওয়ার কথা থাকে সব কিছুই কি হয়? হয় না। তেমনই আমাদের পরিকল্পনার বাহিরেও অনেক কিছু হয়। কেউই জানে না। রাত এগারোটায় আমার ফ্লাইট। সবার প্রথম তোকে জানালাম”
“কেন ইভান ভাই? কেন আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন? থেকে গেলে হয়না?”
“বিশ্বাস কর তুই যদি অন্য সময় এই আবদার খানা করতি আমি রাখতাম। তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার পক্ষে থেকে যাওয়া সম্ভব না”
বাক্কেলের মতো প্রশ্ন করে বসলাম,
“কেন?”
আমার বোকামোতে ইভান ভাই ঠোঁট প্রসারিত করে খানিকটা হাসলেন। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“এখানে থাকলে আমি তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবো। এই শহর আমার জন্য বিষাক্ত তিক্ততায় ভরা। এ শহরের হাওয়া বাতাস আমার জন্য নয়। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। এখানে থাকলে আমি শেষ হয়ে যাবো। তাই আমার চলে যাওয়াই ভালো”
একটু থেমে ফের বলল,
“জানিস রোদ পাখি যখন রেজিজ্ঞেশন লেটার জমা দিচ্ছিলাম তখন সিনিয়র অফিসার বলল, তোমার মতো একজন সাহসী অফিসার হারিয়ে ফেলবো ভেবেই আমার খারাপ লাগছে। ওরা একজন অফিসার হারিয়ে ফেলবে বলে ওদের খারাপ লাগছে আর আমি যে আমার প্ৰিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি এখন আমার অনুভূতি কেমন হওয়া উচিত?”
ইভান ভাইয়ের কথার বিপরীতে বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। রোবটের ন্যায় তাকিয়ে আছি মানুষটার দিকে। ইভান ভাই আচমকা এগিয়ে এলো। কপালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
“ভালো থাকিস। নিজের খেয়াল রাখিস রোদ পাখি। আমি মন থেকে দোয়া করি তুই অনেক অনেক সুখী হো। এই পৃথিবীর সকল সুখ এসে তোর আঙিনায় জমা হোক”
আমি ক্যাবলা কান্তের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছি। ইভান ভাই আর দাঁড়ালেন না। ট্রলি হাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি তার যাওয়ার পানে এখনো তাকিয়ে আছি। দৃষ্টি সীমানার বাহিরে যেতেই আমার ধ্যান ভাঙলো। ছুটলাম নিচে। নিচে কি হচ্ছে দেখার জন্য। বড় আম্মুর কি রিয়েকশন হবে তার আদরের ছেলের চলে যাওয়ার কথা শুনে সেটাই দেখতে চাচ্ছি। বড় আম্মু যেন ইভান ভাইকে যেতে না দেয় মনে মনে সেই প্রার্থনাই করছি। ড্রয়িং রুমের সবাই অবাক হয়ে ইভান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। বড় আব্বু গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় যাচ্ছ এতো রাতে?”
ইভান ভাইয়ের শান্ত কণ্ঠে জবাব,
“চলে যাচ্ছি”
“চলে যাচ্ছি মানে? কোথায় যাচ্ছ?”
“আমি লন্ডন ফিরে যাচ্ছি”
বড় আব্বু উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
“পা*গল হয়েছো? মাথা ঠিক আছে তোমার? তোমার চাকরির কি হবে? চাকরি টাতো তোমার অনেক শখের ছিল। তাহলে কি সমস্যা?”
ইভান ভাই ঠোঁট বেকিয়ে হাসলেন। সেই হাসিতে মিশে আছে এক ঝাঁক দুঃখ, কষ্ট, বেদনা। মলিন কণ্ঠে বললেন,
“নিজের শখের চাকরির জন্য আমায় শখের নারীকে হারাতে হয়েছে। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং না? তাই শখের কোনো কিছুই আর রাখলাম না”
বড় আম্মু এগিয়ে এসে ছেলের সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে ব্যাকুল কণ্ঠে বলল,
“কি হয়েছে বাবা? হটাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে যাচ্ছিস যে। তুই না আম্মুকে কথা দিয়েছিলি থেকে যাবি? তাহলে চলে যাচ্ছিস কেন? আম্মুকে ছেড়ে যেতে তোর কষ্ট হবে না?”
“আমাকে যে যেতেই হবে আম্মু। এই দেশ আমার কাছ থেকে আমার প্রিয়জন কেড়ে নিয়েছে। এই শহর আমার জন্য বিষাক্ত। তাই চলে যাওয়াই শ্রেয়”
“আম্মুর কথা ভাবলি না একবারও? এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবি?”
ইভান ভাই কাতর কণ্ঠে বললেন,
উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১৯
“আমাকে যে যেতেই হবে আম্মু। এখানে থাকলে তোমার ছেলে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে। তুমি সেটা সহ্য করতে পারবে না। তোমার কষ্ট হবে। তোমাদের কষ্ট না দিয়ে আমি নিজেই চলে যাচ্ছি”
বড় আম্মু কান্না করছে। কেউই ইভান ভাইয়ের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না। ততক্ষনে আদ্র ভাইও বাসায় চলে এসেছে। সবাই মিলে তাকে অনেক বুঝালো কিন্তু উনি বুঝলে তো! শেষ মেষ সবাইকে কাঁদিয়ে চলেই গেল মানুষটা। রেখে গেল কিছু তিক্ত অনুভূতি।