উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ শেষ পর্ব 

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ শেষ পর্ব 
আফিয়া আফরোজ আহি

পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত ধরা। কালো আঁধারের মাঝেও এক মুঠো আলোক ঝলকানি নিয়ে উপস্থিত হয়েছে চন্দ্র। ফুলের সজ্জিত কক্ষ। খাট থেকে শুরু করে সবটায় অল্প বিস্তর ফুলের ছোঁয়া। পুরো খাট জুড়ে ফুলের অস্তিত্ব। ফুলের সুবাসে সুবাসিত কামরা। ফুলের ঘ্রানে মো মো করছে চারপাশ। বিছানায় বসে বসে বিরক্ত হচ্ছি। এই আদ্র কোথায় গেল? এখনো আসার নাম নেই। উনি কি ভুলে গেছে ওনার অপেক্ষায় কেউ একজন বসে আছে? দেখাই নেই তার! এর মাঝে বাহির থেকে কিছু মানুষের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। ইভা, রোশনি, ঈশিতা আপু, ভাবি, অভ্র ভাইয়া, রুদ্র ভাইয়া, ইয়াদ ভাইয়া, রোশন, আরু এরা মিলে দরজায় আটকে রেখেছে ওনাকে। আদ্র ওদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি ব্যাপার? তোমরা না ঘুমিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও যাও ঘুমাতে যাও”
প্রিয়ম ভাবি বলল,

“সেটা তো যাবোই ভাইয়া। আগে আপনি যান তারপর যাবো”
আদ্র এগিয়ে আসতে নিলে ইভা বাঁধা দিলো। আদ্র ফের জিজ্ঞেস করলো,
“কি সমস্যা? যেতে দিচ্ছিস না কেন?”
“এভাবে তো যেতে পড়বে না”
“তাহলে কিভাবে যাবো?”
পাশ থেকে রোশনি বলল,
“ভিতরে যেতে হলে আমাদের টাকা দিয়ে পড়ে যেতে হবে”
আদ্র কপাল কুঁচকে বলল,
“তোদের টাকা দিতে যাবো কোনো আনন্দে শুনি?”
আরু এক্সসাইটেড হয়ে বলল,
“এইযে আমরা সবাই মিলে তোমার রুম সাজিয়েছি সেই আনন্দে”
অভ্র ভাইয়া বলল,
“তাড়াতড়ি টাকা ছাড় ভাই। এরপর তু্ই ও ঘুমাতে যা আমরাও যাই”
আদ্র নাক সিটকে বলল,
“ছিঃ! ছিঃ! বড় ভাই হয়ে ছোটো ভাইয়ের থেকে চাঁদাবাজি করতে একটুও লজ্জা লাগছে না? একটু তো সরম রাখো। তোমার ছোটো বোনের জামাই হই আমি”
রুদ্র ভাইয়া বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এই জ্ঞান না দিয়ে টাকা দেও তো ভাই”
আদ্র পকেট থেকে ওয়ালেট বের করতে করতে বলল,
“তোরা যেভাবে চাঁদাবাজি শুরু করেছিস একদিনেই ফকির বানিয়ে ছাড়বি আমায়। পড়ে আমি আমার বউকে খাওয়াবো কি? ধান্দাবাজির তো একটা লিমিট থাকে নাকি? তোরা সব হাদ পার করে ফেলেছিস”
টাকা বের করতে না করতেই ইভা ছো মেরে টাকা গুলো নিয়ে নিলো। আদ্র হতোভম্ব হয়ে গেল। আরুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তু্ই আমার বোন হয়ে আমার থেকে চাঁদাবাজি করলি? ছিঃ! কি দিন কাল এলো?”
আরু ভেংচি কেটে বলল,
“টাকার বেলায় কোনো ছাড় নেই”
অভ্র ভাইয়া আদ্রর কাঁধে হাত রাখলো। ঘাড়ে চাপর দিয়ে বলল,
“বেস্ট অফ লাক ভাই”
“ছোটো বোনের জামাই হই। একটু তো সরম রাখো”

“সরম গরম ভাত দিয়ে গিলে ফেল। এখন যা, বোনটা আমার সেই কখন থেকে বসে আছে”
লেহেঙ্গার ওড়না কোমরে গুঁজে দাড়িয়ে আছি। উনি এলেই খপ করে ধরবো। আমায় এতক্ষন বসিয়ে রাখার ফল ওনাকে ভুগতে হবে। আদ্র রুমে ঢুকে সোজা দরজার ছিটকিনি তুলে দিলো। অতঃপর পিছনে ফিরে অগ্নি রূপে আমায় দেখে বেচারা ঘাবড়ে গেল। শুকনো ঢোক গিলে একবার হাত ঘড়ি তো আরেকবার আমায় দেখছে। ঘড়িতে বারো টা বেজে আট মিনিট। আদ্র সোজা কানে ধরে ফেলল।
“সরি বউ, রাগ করেনা। বিশ্বাস কর আমি আরো আগে আসতে চাইছিলাম। বন্ধু নামক বজ্জাত গুলো আসতে দেয় নি। তু্ই না আমার ভালো বউ? এভাবে বর কে কেউ দেখে? একটু ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখ জানু”
“তোমার জানুর নিকুচি করেছি। সেই কখন থেকে বসে আছি খেয়াল আছে?”
আদ্র মুখটা কাচু মাচু করে বলল,
“সরি বললাম তো!”
ওনার এই অবস্থা দেখে হাসি পেল। প্রথমেই পরাজয় স্বীকার করে নেওয়া সৈনিকের সাথে আর যাই যুদ্ধ করা যায় না! বড় নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। রাগ করা যাবে না। নিজেকে সামলে ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম। সালাম করতে ঝুঁকতে নিলে আদ্র আটকে দিলেন।

“কি করছিস?”
“সালাম করবো না?”
“তোর স্থান আমার বুকে, আমার পায়ে নয়। তোর অস্তিত্ব আমার হৃদয় জুড়ে। কখনো যেন না দেখি কাউকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে। মুখে সালাম দিবি এটাই যথেষ্ট”
মাথা নেড়ে সায় জানালাম। আদ্র বাহুতে ধরে আমায় বিছানার এক কোণে বসিয়ে দিলেন। নিজে বসলেন আমার সামনা সামনি। সেকেন্ড গড়িয়ে মিনিট আসে কিন্তু ওনার নড়াচড়ার লক্ষণ নেই। এমন কী চোখের পলক ও ফেলছে না। দেখে মনে হচ্ছে ধ্যানে বসেছেন উনি। আসলেই কি তাই? এদিকে একাধারে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে উঠছি আমি। নড়াচড়া করতেই উনি ‘চ’ সূচক শব্দ করলেন।

“কি সমস্যা? সাপের মতো মোচড়া মুচরি করছিস কেন?”
“একভাবে বসে থেকে যায়? আর কতো দেখবে?”
আদ্র নেশালো কণ্ঠে বলল,
“যতক্ষণ না আমার চোখের তৃষ্ণা মিটছে। জানিস এই রাতটার জন্য দীর্ঘ এগারোটা বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে আমায়? কবে তু্ই আমার হবি, আমি তোকে আমার সামনে বসিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবো। এ দেখার শেষ নেই”
ওনার যতো প্রেমিক মার্কা কথা বার্তা। পাক্কা আধা ঘন্টা বসিয়ে রেখেছে আমায়। বিরক্ত হয়ে বললাম,
“এই তুমি থাকো তো আমি ঘুমাতে গেলাম”
“খবরদার যদি নড়েছিস তাহলে তোর খবর আছে”
কি আর করার? অগত্যা বসে থাকলাম। আদ্র উঠে গিয়ে আলমারি খুলল। কিছু একটা বের করছে। পুনরায় এসে সামনে বসলো। বলল,

“হাত দে তো”
কোনো বাক্য ব্যায় না করে হাত এগিয়ে দিলাম। আদ্র এক জোড়া সোনার বালা পড়িয়ে দিলো আমায়। ডান হাতের অনামিকায় রিং থাকায় বা হাতের অনামিকায় রিং পড়িয়ে দিলেন। অতঃপর হাতের উল্টো পিঠে চুমু এঁকে দিলেন। কিছুটা এগিয়ে কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
“আমার জীবনের পূর্ণতা, আমার রৌদ্রময়ী”
এই মানুষটার একেকটা সম্মোধন ভীষণ মিষ্টি। শুনতেও ভালো লাগে। প্রতিটা সম্মোধনের সাথে মিশে আছে এক রাশ ভালোবাসা। যেই ভালোবাসায় আমি সিক্ত হয়ে চলেছি বারংবার। আদ্র উঠে যেতে যেতে বলল,
“ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নে। এই ভারী লেহেঙ্গা পড়ে অস্বস্তি হচ্ছে নিশ্চই?”
মাথা নেড়ে সায় জানালাম। আদ্র হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বলল,
“এখন অস্বস্তি হচ্ছে কেন? বউ সাজার বড্ড শখ ছিলো না? বউ সেজে আরো কিছুক্ষণ বসে থাক”
এক লাফে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। ফটাফট বলে উঠলাম,
“মাফ চাই, আমি আর বিয়ে করবো না। প্রথম বার ফটাফট কবুল বলে বিয়ে শেষ এটাই বেস্ট ছিলো। এবার বউ সেজে আমার শখ মিটে গেছে। লেহেঙ্গা তো নয় যেন আস্ত এক বালির বস্তা”

আমার কথা শুনে আদ্র হেসে দিলো। কাবার্ড দেখিয়ে বলল,
“কাবার্ডে তোর প্রয়োজনীয় সব আছে। চেঞ্জ করে আয়”
লাল রঙা জর্জেট শাড়ি সাথে দরকারি সব কিছু নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম। একেবারে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছি। সারাদিনের ধকলে শাওয়ার না নিলেই নয়। চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আশেপাশে চোখ বুলালাম। পুরো রুমে কোথাও আদ্র নেই। উনি আবার কোথায় গেল? অতো শত না ভেবে পা বাড়ালে ব্যালকনিতে। তোয়ালে শুকাতে দিতে হবে। তোয়ালে মেলে দিয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলাম। পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত শহর দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। দূরের টিম টিমে ল্যাম্প পোস্টের আলো জ্বল জ্বল করছে। ব্যাস্ত শহর নিস্তব্ধতায় ঘিরে আছে। সুনসান নিস্তব্ধতা বেশ লাগছে। আচমকা কোমরে কারো শীতল হাতের স্পর্শ অনুভূত হলো। চমকে উঠে পিছনে তাকাতেই ধাক্কা খেলাম প্রশস্ত বুকের মানুষটার সাথে। মাথায় ব্যথা পেয়েছি। কপাল ঘষতে ঘষতে বললাম,
“এভাবে ভুতের মতো কেউ আসে? ভয় পেয়েছি না?”
আদ্র তার শীতল হাতের বাঁধনে আরো খানিকটা জড়িয়ে নিয়ে বলল,
“ভয় পাওয়ার কি আছে? এই টুকুতে ভয় পেলে তো চলবে না বউ। এখনো তো অনেক কিছু বাকি আছে”
মনের মাঝে ধক করে উঠলো। তোতালানো কণ্ঠে শুধালাম,
“আরো বাকি আছে মানে?”
“এখনই দেখাবো?”

সেকেন্ড দুই লাগলো ওনার কথার মানে বুঝতে। বুঝতে পেরে ওনার বুকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
“এই সরো অ*সভ্য লোক। দূরে যাও”
“আজকে আমি কোথাও যাচ্ছি না। ছাড় তো আরো আগে দিবো না”
ওনার এহেন পাষণ্ড আচরণে ঠোঁট উল্টে ফেললাম। আদ্র আমার কাণ্ড হাসি আটকাতে না পেরে ফিক করে হেসে দিলো। নাক টেনে দিয়ে বলল,
“তোকে ঠোঁট ফুলালে হেব্বি লাগে বউ। ইচ্ছে করে কামড়ে কুমরে তোর ওই টসটসে অধর জোড়া খেয়ে ফেলি”
“ছিঃ! যতো সব অ*সভ্য কথা বার্তা”
আদ্র ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসলো। একবার চোখ বুলালো ওপর থেকে নিচে। লাল জর্জেট শাড়ি পরনে, হাতে ওনার একটু আগে দেওয়া বালা জোড়া, গলায় একটা চেন, কানে দুল। ঠোঁটে হাল্কা লাল রঙা লিপস্টিক। খোলা চুল গুলো বাতাসের ঝাপটায় উড়ছে। কিছু চুল বাতাসের ঝাপটায় মুখের সামনে এসে পড়তেই উনি ব্যাস্ত হাতে সেগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলেন। জর্জেট শাড়ি ভেদ করে হাত গলিয়ে দিলেন উন্মুক্ত উদরে। ধীরে ধীরে ওনার ছোঁয়া অবাধ্য হচ্ছে। শিহরণ বয়ে যাচ্ছে শিরদাড়া বেয়ে। বেসমাল হচ্ছে শ্বাস প্রশ্বাস। নিজেকে সামলাতে না পেরে হুট্ করে জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে। আদ্র ঠোঁট এগিয় কানের কাছে আনলেন। নেশালো কন্ঠ তার,
“উইল ইউ বি মাইন জান?”
কোনো উত্তর করলাম না। আদ্র ফের জিজ্ঞেস করলো,
“নীরবতা কে সম্মতির লক্ষণ ভেবে নিবো?”
কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতেই নেই আমি। লজ্জায় মুড়িয়ে গেছি। লজ্জার তোপে মুখ তুলতে পারছি না।উনি আচমকা পাঁজা কোলে তুলে নিলেন আমায়। নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে আদ্রর গলা জড়িয়ে বুকে মুখ গুঁজে দিলাম। ওনার ওই নেশালো চোখে তাকানোর সাধ্যি আমার নেই। আদ্র আলতো করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ব্যালকনির দরজার আটকে পর্দা দিয়ে দিলেন। লাইট নিভিয়ে দিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। পাশ থেকে চাদর টেনে মুখ ঢাকলাম লজ্জায় ইচ্ছে করছে এক ছুটে চলে যাই। আদ্র কাছে এসে চাদর ধরে টান দিলো।

“মুখ ঢাকছিস কেন?”
লাজুক কণ্ঠে বললাম,
“লজ্জা লাগছে খুব”
“আমিই তো, এখানে লজ্জার কি আছে?”
“তুমি বেলাজ, তোমার বা লাজ সরম নেই। আমার তো আছে, নাকি?”
আদ্র দুপাশে হাত রেখে আমায় বন্দি করে ফেললেন তার বাহুর মাঝে। চাদর টেনে মুখ থেকে সরিয়ে গালের সাথে গাল মিশিয়ে ফিসফিসে কণ্ঠে বলল,
“তাহলে লজ্জা ভেঙে দেই জান! কি বলিস?”
কিছু বলার জন্য মুখ খুলবো তার আগেই উনি ওষ্ঠে ওষ্ঠ মিশিয়ে দিলেন। অধর জুড়ে চলছে তার অ*ত্যা*চা*র। অবাধ্য হাত আনাগোনা করছে নিষিদ্ধ জায়গায়। আদ্র যেন নেশার ঘোরে আছেন। ধীরে ধীরে ওনার ভালোবাসা আরো গাঢ় রূপ ধারণ করছে। বেসামাল হচ্ছে দুজনের শ্বাস প্রস্বাস। পুরো কক্ষ জুড়ে উত্তপ্ততা ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফুলের ঘ্রান আরো মাতোয়ারা করে তুলছে পরিস্থিতি। দুজন ভেসে যাচ্ছি নিজেদের এক ভালোবাসার শহরে। যেখানে নেই কোনো বাধা, আছে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা।

কেটে গেছে পাঁচটা বছর,
সময় যে কিভাবে চোখের পলকে কেটে গেছে নিজেও জানি না। এই তো মনে হচ্ছে এই সেদিন না আমাদের প্রণয় হলো। দুজনের খুনসুটি পূর্ণ দুস্টু মিষ্টি একটা সংসার হলো। এখন দুজনের সংসারে নতুন সদস্য যোগ হয়েছে। এখন তিনজনের সংসার। দেখতে দেখতে পাঁচ পাঁচটা বছর হয়ে গেল।
বাড়িতে আয়োজন করা হচ্ছে। আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাড়িতে সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। ইদানিং সবাই ব্যাস যার যার জীবনে। কতো গুলো দিন হয়ে গেল আমাদের কাজিনদের আড্ডা বসে না। সবার খুনসুটি হয় না, এর ওর পিছন লাগা হয় না। সব কিছুই এখন অতীত। তবে কোনো অনুষ্ঠান হলে আমরা সেই সুযোগ হাত ছাড়া করি না। আমার ইচ্ছে ছিলো না এতো কিছু করার কিন্তু একটা বজ্জাত লোক আছে না? সে তার বিবাহ বার্ষিকী পালন করবেই করবে। আমায় জ্বালায় ফেলে দিয়ে বাপ্ মেয়ে কোথায় যে হাওয়া হয়েছে কে জানে? আজকে আসুক বাপ্ মেয়ে তারপর দুটোকে দেখছি। রান্না করছি এর বিড়বিড় করছি। এর মাঝে পাশে এসে দাঁড়ালো ফুপ্পি।
“কিরে মা রান্না কতো দূর? সবাই তো এসে পড়বে?”
“এইতো আম্মু হয়ে এলো বলে”
“আরু টাও না এখনো আসছে না। ও বলেছিলো ও এসে তোকে হেল্প করবে। তুই তো আমায় কিছু করতেও দিবি না”
“এইতো আমার হয়ে গেছে তুমি যেয়ে রেস্ট নেও”
ফুপ্পি চলে গেছে। একা হাতে সব সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সার্ভেন্ট দুজন সব গুছিয়ে দিয়ে এখন রুম গুলো রেডি করতে গেছে। সবাই আজ থাকবে এখানে। রান্নার মাঝে ছোটো ছোটো দু খানা হাত কোমর জড়িয়ে ধরলো। নড়তে গিয়েও আটকে গেলাম। পিছনে ফিরে দেখি আদ্র সাহেবের প্রিন্সেস। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
“সকাল সকাল বাপ্ মেয়ে কোথা থেকে ঘুরে এলেন শুনি?”
এমনি সময় মেয়েকে তুমি সম্মাধন করলেও রেগে গেলে আপনি করে বলি। এতে মেয়ে এবং মেয়ের বাপ্ দুজনই সোজা হয়ে যায়। মেয়ে আধো আধো বুলিতে বলল,
“আমরা মিত্তি আনতে গিয়েছিলাম”
“বাহ্ ভালো কাজ করেছেন। আমায় একা ফেলে বাপ্ মেয়ে ঘুরে এসেছেন। এখন আপনার বাপজান কে বলেন আপনাকে গোসল করিয়ে রেডি করতে। আমি পারবো না”
এতক্ষন আদ্র দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেও এখন কাছে এলো। মেয়েকে কাবার্ডের ওপর বসিয়ে দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“সকাল সকাল খেপেছিস কেন বউ? চুমু টুমু লাগলে বল? ফটাফট দুটো চুমু খেয়ে ফেলি। তাও রাগ ঝাড়িস না”
“রাগ ঝাড়বো না তো কি করবো? আদর করবো?”
ওনার ফটাফট জবাব,
“করতেই পারিস। আমি মাইন্ড করবো না”
“এই সকাল সকাল মেজাজ খারাপ করবে না তো।মেয়েকে নিয়ে বিদায় হও। আমায় এতো কাজ ধরিয়ে দিয়ে নিজে ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন আসছে আলগা পিরিত দেখাতে”
আদ্র ফিসফিস করে বলল,
“রুমে চল বিলিভ মি আলগা পিরিত দেখাবো না, মাখো মাখো প্রেম দেখাবো, একদম আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরার মতো”
তীক্ষ্ণ চোখে তাকালাম ওনার দিকে। উনি আমায় ছেড়ে মেয়েকে কোলে তুলে বলল,

“চলো মাম্মাম তোমার মাম্মার মাথা হট হয়ে আছে আমরা রুমে যাই”
উনি মেয়েকে নিয়ে চলে গেল। মেয়েও হয়েছে বাপ্ নেওটা। মাঝে মাঝে আমি নিজেই বাক্কেল হয়ে যাই এটা আমার পেট থেকে বেরিয়েছে তো? নাকি অন্য কিছু। সারাদিন যেমন তেমন রাতে বাপ্ এলে আমি কে? আমাকে চিনেই না এমন ভাব। বাপের গলা জড়িয়ে ধরে শুরু করবে সারাদিনের যতো নালিশ আছে। আর আদ্র! ওনার কথা না বললেই নয়। উনি ও মেয়ের সাথে তালে তাল দিয়ে বকবে আমায়। আমি বসে বসে বাপ্ মেয়ের নাটক দেখি।
রান্না শেষ হতে না হতেই ঈশিতা আপু চলে এলো। ভাইয়া কে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে নিজে চলে এলো রান্না ঘরে।
“কিরে কি করছিস? এখনো রান্না হয়নি?”
মঠোঁট উল্টে বললাম,
“না, এইতো হয়ে যাবে। তুমি সবে এসেছো, রেস্ট করো”
ঈশিতা আপু আমায় সরিয়ে বলল,
“আমি এটা দেখছি তু্ই গোসল সেরে আয়”
ঈশিতা আপু ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠিয়ে দিলো আমায়। রুমে এসে দেখি আদ্র তার প্রিন্সেস কে ড্রেস পড়াচ্ছে। বাপ্ মেয়ে একদম পুরোপুরি রেডি। ওদের কিছু না বলে জামা কাপড় নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেলাম।

পুরো ছাদ জুড়ে ডেকোরেশন চলছে। সবাই মিলে সাজাচ্ছে আর কি! একপাশে বসার জায়গা অপর পাশে একটা টেবিলের ওপর কেক, বলুন দিয়ে ডেকোরেশন করা। বাচ্চারা বেলুন নিয়ে খেলছে। হৈচৈ আড্ডায় মেতে উঠেছে পুরো বাড়ি। সাজানো শেষে এবার সেলিব্রেশন এর পালা। টেবিলের আশেপাশে সবাই জড়ো হয়েছে। মাঝে আমি, পাশে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদ্র দাঁড়িয়েছে। তিনজন মিলে একসাথে কেক কাটলাম। আদ্র কেকের পিস নিয়ে প্রথমে মেয়েকে খাইয়ে দিলো। এরপর আমায়। আমি একটু নিয়ে ওনাকে খাইয়ে দিলাম। খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ হতে হতে রাত এগারোটার মতো বেজে গেছে। আমরা সকলে বসেছি আড্ডা দিতে। সবাই বাচ্চা-কাচ্চা, সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। তাই আড্ডা আগের মতো আড্ডা দেওয়া হয়ে ওঠে না। আম্মু তো মাঝে মাঝেই অভিযোগ তোলে,
“সব গুলো ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল। এখন বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে”

খান বাড়ি এখন অনেকটাই ফাঁকাই পড়ে আছে। সবাই যার যার মতো ব্যাস্ত। অভ্র ভাইয়া আর প্রিয়ম ভাবির এক ছেলে, এক মেয়ে। শুভ ভাইয়া, তিথি আপুর এক ছেলে। ইয়াদ ভাইয়া আর ইভাজ ভাইয়া কাজের সূত্ররে ফ্যামিলি নিয়ে অন্যত্র থাকে। রুদ্র ভাই বিয়ে করেছে দুবছর আগে। রিসাব ভাই পড়াশোনা করে এখনো বেচেলার ঘুরছে। আব্বু-আম্মু বিয়ে জন্য প্রেসার দিচ্ছে তবে তিনি নাকি বিয়ে করবে না। সন্ন্যাসী হবেন ভেবেছে। তবুও আব্বু – আম্মু ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখছে। ঈশিতা আপুর এক ছেলে এক মেয়ে। ইভার এক মেয়ে। রোশন পড়াশোনা শেষ করে ভার্সিটির লেকচার হিসেবে জয়েন হয়েছে। রোশনির বিয়ে হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। আরু এখন শশুর বাড়ি। ওর ফুটফুটের কিউট একটা ছেলে। আমাদের কাজিন মহলের জায়গায় কয়েকদিন আমাদের বাচ্চাদের কাজিন মহল হয়ে যাবে। কিন্তু এখনো আমরা সেই আগেই মতোই রয়ে গেছি। কারো মাঝে তেমন বদল আসেনি। সেই আগের মতো দুস্টুই রয়ে গেছি।

বাচ্চাদের আম্মু, বড় আম্মু, ফুপ্পি এদের কাছে গছিয়ে দিয়ে আমরা গল্প করছি। গল্পের মাঝে খেয়াল করলাম তিথি ভাবি শুভ ভাইকে চোখ রাঙাচ্ছে। মেয়েটা এমনই, তবে খুব মিশুকে। শুভ ভাইকে উঠতে বসতে নাকানি চুবানী খাওয়ায়। বেচারা শুভ ভাই ফেঁসে গেছে নিজের চেয়ে কয়েক বছরের ছোটো এক রমণীর ভালোবাসায়।
ইভা তো রীতিমতো পিয়াসকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোড়ায়। পিয়াস বেচারা ভালোবেসে কুয়ায় ঝাঁপ দিয়েছে মনে হচ্ছে। ইভা যাই বলে বেচারা তাই শোনে। কোনো উল্টে প্রতিক্রিয়া নেই।
ইভান ভাই এক কোণে বসে তিন্নি ভাবির সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছে। ইভান ভাই সেবার দেশে আসায় পরিচয় হয় তিন্নির সাথে। তিন্নি মেয়েটা ইভান ভাইকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলে। মেয়েটার পা*গলামোতে ভাইয়া মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেনি। এক দিক দিয়ে তিন্নির পা*গলামো অন্য দিকে বড় আম্মুর বিয়ে নিয়ে প্রেসার। সব মিলিয়ে ইভান ভাই বিয়েটা করেই নিয়েছেন। ওদের দু বছরের ফুটফুটে একটা ছেলে আছে।
আড্ডার মাঝে নিচ থেকে ডাক পড়লো। ঈশিতা আপুর মেয়ে কাঁদছে। আপু, ভাইয়া চলে গেল। রাত হয়ে আশায় একে একে সবাই যে যার মতো চলে যাচ্ছে। পুরো ছাদে জুড়ে আমি আর আদ্র সাহেব। ছাদের রেলিংয়ের সাথে দাঁড়িয়ে মিটি মিটি জ্বলতে থাকা তাঁরা দেখছি। সবাই যেতেই উনি কাছে এসে দাঁড়ালেন। আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে বলল,

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৩৪

“দেখতে দেখতে প্রায় সাতটা বছর কিভাবে কেটে গেল তাই না রৌদ্রময়ী?”
“হ্যাঁ”
“আমার তো মনে হচ্ছে এই তো সেই দিন আমি তোকে আমার করে পেলাম। এরপর আমাদের দুস্টু মিষ্টি প্রেম, অতঃপর বিয়ে। সময় কতো তাড়াতাড়ি চলে গেল তাই না?”
“হ্যাঁ। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। দিন গুলো কতো তাড়াতড়ি চলে গেল। কিন্তু তুমি আর আমি এভাবেই রয়ে গেলাম। এভাবেই সারাজীবন আমার হয়ে থাকবে তো?”
আদ্র হাতের বাঁধন আরো শক্ত করলো। কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
“এভাবেই #উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন” এ জড়িয়ে রাখবো তোকে আজীবন। এ দেহে প্রাণ থাকবে যতদিন “আদীব চৌধুরী আদ্র” তার “রৌদ্রময়ী’র”থাকবে ততদিন”
পিছনে ঘুরে আদ্রকে জড়িয়ে ধরলাম। এই মানুষটা আমার কাছে আস্ত এক ভালোবাসা। আদ্র আমায় নিজের বুক থেকে তুলে চুমু এঁকে দিলো আমার ললাটে। আকাশে তাঁরা জ্বলে উঠলো। কি অপরূপ দৃশ্য। এভাবেই ভালোবাসায় কেটে যাক পুরোটা জীবন। আদ্র নামক মানুষটা আমায় মুড়িয়ে রাখুক ভালোবাসায়। ভালোবাসার মানুষটা সঠিক হলে, ভালোবাসা সুন্দর, ভীষণ সুন্দর।

সমাপ্ত