এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৯
আদ্রিতা জান্নাত অরিন
সুমনের কথা শুনে গ্রামের মানুষের চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠে তারা কি করবে সেটা বুঝতে পারে না। কারণ এখন যদি সুমনের থেকে সাহায্য না নেয় তাহলে নিজের বাড়ি ঘর হারাতে হবে। কিন্তু যদি টাকা নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় পড়ে তখন কি হবে। সকলের মনের অবস্থা বুঝতে পারে আতিক সাহেব ওনি শান্ত গলায় বলে –
‘- দেখুন আপনাদের সকলের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি আমি তবে ভরসা রাখুন এই লোকের থেকে টাকা নিলে কোনো সমস্যা হবে না আপনাদের। ওনি নতুন লোক হঠাৎ করে এতো টাকা দিতে চাইছে সেইজন্য ওনার উপর সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। তবে আর কোনো উপায় নাই আমাদের হাতে তাই একবার ভরসা করে দেখুন কি হয় “।
আতিক সাহেবের কথা শুনে গ্রামের মানুষ একটু ভরসা পায় তবে তারা এখনো একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে। গ্রামের বয়স্ক মানুষ বলে –
“- আতিক সাহেব আপনার উপর আমাদের বিশ্বাস আছে। এই টাকা নিতে চাই আমরা কিন্তু যদি শিমুল সাহেবের মতো ওনি ও টাকা দেওয়ার পর আমাদের সকলের জায়গা জমি দখল করে নেয়। তখন কি হবে আমাদের?
“- টেনশন করবেন না ওনি এমন কিছু করবে না বিশ্বাস রাখুন “।
গ্রামের মানুষ একটু সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় তারা সুমনের থেকে টাকা নিয়ে শিমুল মহাজন থেকে সকল সম্পত্তি উদ্ধার করবে। সুমন একটু হাসি দেয় আর মেসেজ করে নোটনকে সকল বিষয় বলে দেয়। এরপর সুমন টাকা ব্যাগ থেকে বের করে গ্রামের মানুষকে দেয় তারা সেটা নিয়ে শিমুল মহাজনেন বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। শিমুল মহাজন এতোখন হোটেল তৈরি হবে সে অনেক টাকা পেয়ে বড়োলোক হয়ে যাবে সেই সপ্ন বসে ছিলো।
হঠাৎ করে শিমুল সাহেব তার বাড়ির সামনে গ্রামের মানুষকে উপস্থিত হতে থেকে অবাক হয়। ওনি নিজের রুম থেকে বের হয়ে বাহিরে এসে দেখে গ্রামের মানুষ তার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শিমুল মহাজন বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- কি সমস্যা আপনাদের এখানে কোনো এসেছেন? আমার লোক বলে দিয়েছে সকালের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে সেটা কি শুনতে পান নাই আপনারা। যান নিজেদের সব জিনিস নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যান “।
গ্রামের মানুষ শিমুল মহাজনের কথা শুনে আরো রেগে যায় তাদের মধ্যে কয়েকজন মানুষ সামনে এগিয়ে আসে আর বলে –
“- মহাজন সাহেব আপনি আমাদের বাড়ির দলিল ফিরত দেন? আর এই গ্রাম ছেড়ে কোনোদিন বাহিরে বের হয়ে যাবো না আমরা “।
শিমুল সাহেব গ্রামের মানুষের এমন প্রতিবাদী কণ্ঠ শুনে কিছুটা অবাক হয় এতো সাহস হঠাৎ করে তাদের মধ্যে এসেছে কোথা থেকে। শিমুল সাহেব বলে –
“- দলিল মানে কোন দলিল।তোমরা যে ফসল চাষ করার জন্য আমার থেকে টাকা ঋণ নিয়ে ছিলে সেটা কি ভুলে গেছো। কোনো দলিল ফিরত দেওয়া হবে না তোমাদের “।
“- দেখুন মহাজন গ্রামের সবাই আপনার থেকে ঋণ করে জমিতে চাষ করেছে সেটা মিথ্যা না। কিন্তু ঋণ দেওয়ার সময় আমাদের সাথে একটা চুক্তি হয়েছে আপনার যদি আমরা ভবিষ্যতে কোনো দিন টাকা ফিরত দিতে পারি তাহলে আমাদের দলিল ফিরত দিবেন আপনি। এই নেন টাকা এখন দলিল ফিরত দেন “।
শিমুল সাহেব কোনো কথা বলে যাবে তার আগে গ্রামের মানুষ তার মুখের উপর টাকা ছুড়েঁ মারে। হঠাৎ করে এতো টাকা তার মুখের উপর পড়ে যেতে দেখে অবাক হয় ওনি। গ্রামের মানুষ কি করে এতো টাকা ফিরত দিতে পারে তাকে ওদের কাছে খাবার খাওয়ার টাকা ও ছিলো না কাল অবধি। আর আজকে তারা এতো টাকা ওনার মুখের উপর ছুঁড়ে মেরেছে বিশ্বাস হচ্ছে না ওনার।শিমুল মহাজন বলে –
“- টাকা ফিরত দিলে ও দলিল ফিরত দিবো না আমি। তোমাদের সকল সম্পত্তির মালিক আমি সেটাই সত্যি “।
শিমুল মহাজনের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আতিক সাহেব ও সাথে সুমন আর উঁকিল আসে। উঁকিল বলে –
“- মিস্টার শিমুল সাহেব আপনার কথা দিয়ে সব হবে না কারণ আইন আপনার কথা অনুসারে চলে না। গ্রামের মানুষের সাথে চুক্তি অনুসারে তারা আপনার টাকা ফিরত দিয়েছে তাই ওনাদের দলিল ফিরত আপনাকে দিতে হবে৷ আর সেটা না হলে পুলিশ ডেকে আপনাকে জেলে নেওয়া হবে “।
শিমুল সাহেব উঁকিলকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় তবে এতো টাকা গ্রামের মানুষকে কে দিয়েছে সেটা ওনি এখনো বুঝতে পারেন নাই। শিমুল সাহেব বলে –
“- কি বলতে চান আপনি উঁকিল সাহেব? আর আপনাকে এখানে কে ডাক দিয়েছে গ্রামের মানুষদের টাকা বা দিয়েছে কে?
শিমুল সাহেব যখন এইসব কথা ভাবতে থাকে তখন গ্রামের মানুষ ওনার বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। গার্ডরা অনেক তাদের আটকে রাখার চেষ্টা করে কিন্তু সেটা পারে না শিমুল সাহেব কোনো কথা বলতে যাবে। এর আগে পুলিশ এসে ওনাকে গ্রেফতার করে নেয় ওনি নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করেন কিন্তু সম্ভব হয় না সেটা। তখন নোটন সামনে আসে শিমুল মহাজনের নোটন হাসি মুখে বলে –
“- শিমুল মহাজন কি যেনো বলে ছিলেন আপনি সেইদিন যে এইটা আপনার রাজ্য এখানে কোনো ঝামেলা করা সম্ভব হবে না আমার। এই গ্রামের মানুষকে আপনি নিজের গোলাম বানিয়ে রাখবেন কিন্তু এখন কি হয়ে গেলো “।
নোটনের কথা শুনে শিমুল সাহেব বুঝতে পারে এইটা তার কাজ তার শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে। তবে শিমুল সাহেবের রাগ নিয়ে নোটনের কোনো মাথা ব্যাথা নাই ওনি বলেন –
“- নোটন আপনি যা করছেন সেটা কিন্তু অন্যায়? আপনাকে আমি বিশ্বাস করে ভুল করেছি নোটন “।
নোটন বলে –
“- কোনো অন্যায় করি নাই আমি আপনার সাথে শিমুল সাহেব যা আপনার প্রাপ্য সেটা ফিরিয়ে দিয়েছি। ব্যবসায় লাভ করার জন্য মানুষে৷ বিশ্বাস একটু ভাঙ্গতে হয়। আর আপনার সাথে পুরানো একটা শএুতা ছিলো আমার যার প্রতিশোধ নিতে হতো আমাকে “।
“- শএুতা মানে? কে আপনি নোটন?
শিমুল সাহেবের কথা শুনে নোটন হাসে ওনার কাছে গিয়ে কানে একটা নাম বলে যেটা শুনে শিমুল সাহেব অবাক হয়ে যায়। হয়তো ওনার আগের কোনো সৃতি মনে পড়েছে সেটা কি তা নোটন যানে। শিমুল মহাজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় কারণ ওনার নামে খুন সহ আরো অনেক অপকর্মের মামলা আছে। সুমন সকল গ্রামের লোকদের বলে নোটন তাদের টাকা দিয়েছে সেটন শুনে সবাই খুশি হয়ে যায়।
এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৮
গ্রামে কোম্পানির আবার নতুন করে শুরু হয় যেটা ভেঙে ফেলা হয়েছে তার আবার করে নোটন।গ্রামের মহাজন হিসাবে আতিক সাহেবকে সিলেক্ট করে সকলে ওনি সবাইকে ভালো পরামর্শ দান করেন। নোটন তার দায়িত্ব সুমনকে দেয় তবে সে সব অফিসে বসে পরিচালনা করবে। অফিসের সবাই ফিরে আসে শহরে নোটন আর সমুদ্র ও ওদের কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারে না। বরং নোটনকে যে মারার চেষ্টা করেছে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
নোটন বাসায় ফিরে আসে তবে ভিতরে ঢুকে কোনো পরিচিত মানুষকে দেখে থমকে যায় সে। তার শরীরে রাগে ঘৃণায় জ্বলে যায় তবুও সে হাসি মুখে বলে –
”- ওয়েলকাম মামা ওয়েলকাম। আপনার অপেক্ষায় ছিলাম এতোদিন তাহলে আমাদের আবার দেখা হয়ে গেলো। এখন শুরু হবে আসল খেলা “।