এক মায়াবতীর প্রেমে গল্পের লিংক || তানিশা সুলতানা

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১
তানিশা সুলতানা

পৃথিবীতে একটাই নাম তন্নির বিরক্ত লাগে। সেটা হচ্ছে অর্ণব চৌধুরী। নামটা শুনলেই তন্নির হাসি মুখখানা চুপসে যায়। বুক ধুপধুপ করতে থাকে। পানি খেতে ইচ্ছে করে। আর আর দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করে।
কেনো?কারণ মানুষটা আজাইরা। সব সময় সবাইকে ঝাড়তে থাকে। কোনো কারণ ছাড়া।
তন্নি অবশ্য মানুষটার সামনে কখনো যায় না। ভুল করে দু বার পড়ে গিয়েছিলো এবং দুটো ধমক খেয়েছে। সেই থেকে মানুষটাকে বিরক্তির কাতারে ফেলে রেখেছে। অসয্য,বাঁদর,পঁচা, পেঁচামুখী বিভিন্ন নামও দিয়েছে লোকটার।
কেনো ধমকেছিলো? একদমই কারণ ছাড়া। একবার তন্নি লোকটার ওপর গরম চায়ের কাপ ফেলে দিয়েছিলো। আরেকবার উস্টা খেয়ে লোকটার ওপরে গিয়ে পড়েছিলো।

ব্যাসস তাতেই ধমক। ঘর ভর্তি মানুষের সামনে ধমকেছিলো। তন্নি সেই অপমান ভুলে নি।
ভুল করে তন্নি আজকে অথৈয়ের বাড়িতে এসেছে৷ একদমই ভুল করে। ওই বাঁদর আজকে বাসায় ফিরবে জানলে তন্নির ছায়াও দেখা যেতো না এই বাড়িতে। দুটো বছর তন্নি এই রুলস মেইনটেইন করেই এই বাড়িতে আসে। শুক্র শনি এই দুই দিন বাঁদর বাড়িতে থাকে।
আজকে অথৈয়ের দোষ। সে তন্নিকে ডেকেছে। আর্জেন্ট কাজ বলেই এনেছে। অথচ একবারও বললো না “তন্নি আজকে ফাইডে। আমার বাঁদর ভাই বাসায় ফিরবে। তোর আসার দরকার নেই”
আর এখন এই মুহুর্তে তন্নিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্ণবের বিছানা ঠিক করার জন্য। দায়িত্ব ছিলো অথৈয়ের। আশা বেগম অথৈকে কাজটা করতে বলেছে। কিন্তু বেয়াদব অথৈ তন্নিকে পাঠিয়েছে। অথৈ বরাবরই কাজ চোর। আর তন্নি তাকে ভীষণ ভালোবাসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তন্নি তো আর বলতে পারে না “তোর ভাইকে আমার বিরক্ত লাগে। তার বিছানা আমি গোছাতে পারবো না”
বললে অথৈ চুল ছিঁড়ে নিবে তন্নির। ভাইয়ের ব্যাপারে খুব প্রসেসিভ অথৈ। মুখে মুখে বলে “তন্নি আমি তোকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি”
অথচ মনে মনে সে ভাইকে বেশি ভালোবাসে।
এটা নিয়ে অবশ্য তন্নির মন খারাপ হয় না। কারণ সেও তো তার ভাইকে বেশি ভালো বাসে।
অগত্যা তন্নি গুটিগুটি পায়ে চলে গিয়েছে অর্ণবের রুমে।
এই বিশাল বাড়ি এই একটি ঘর সব থেকে সুন্দর। চোখ ধাঁধানো সুন্দর যাকে বলে। ঝকঝকে টকটকে সাদা রংয়ের রুম খানা। বিছানা চাদর পর্যন্ত সাদা। রাজকীয় খাটটা সাদার মাঝখানে গোল্ডেন কালারের ডিজাইন। সব মিলিয়ে ফাটাফাটি। তন্নি এই বাড়িতে আসলেই মাঝেমধ্যে উঁকি মারে এই রুমে৷ অর্ণব থাকলে অবশ্য উঁকি দেওয়া তো দূরের কথা আশেপাশেও আসে না রুমটার।

ভাবতে ভাবতে বিছানা চাদর তুলে ফেলে তন্নি নতুন বিছানা চাদর বিছিয়ে দেয়। বালিশের কভারও পরিবর্তন করে। পরিবর্তন করার অবশ্য কোনো প্রয়োজন ছিলো না। কারণ একটুও ময়লা লাগে নি। তবুও এক সপ্তাহ পড়ে ছিলো। ব্যবহার করা হয় নি।
তাই এই পরিবর্তন। এটা নিয়েও অবশ্য তন্নি কয়েকবার মুখ বাঁকিয়েছে। গালি দিয়েছে বাঁদরটাকে।
সব কাজ প্রায় শেষ তখনই একটা বুদ্ধি মাথায় চাপে। মানুষটার দেওয়া ধমকের কথা ভুলে নি তন্নি৷ একটু রিভেঞ্জ নেওয়াই যায়। মনে মনে বুদ্ধি এঁটে ফেলে এবং বিছানা চাদর তুলে তোষকের ওপর পানি ঢেলে দেয়। বাহহহ এবার বাঁদর লোকটা সারা রাত ঘুমতে পারবে না। নিজেকে নিজেই বাহবা দেয় তন্নি৷ কি বুদ্ধি তার। অতঃপর হাসতে হাসতে বেরিয়ে যেতে নেয় রুম থেকে।

দরজার সামনে বুকে হাত গুঁজে অর্ণবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে চমকে ওঠে তন্নি৷ মুখের হাসি টুকু মিলিয়ে যায়। তার এই মাত্র করা কান্ড কারখানা দেখে ফেললো না কি?
এবার কি আরও একটা ধমক খাবে?
মাথা নিচু করে শুকনো ঢোক গিলে তন্নি। ঘোমটা আরও একটু টেনে কপাল ঢেকে ফেলে। হাত দ্বারা ওড়নার এক অংশ গিট্টু দিতে থাকে। মনে মনে চিন্তা করে ফেলে এক দৌড় দিবে। আবার ভাবে দরজার সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছে দৌড় দিয়ে যাবে কি করে?
এসব ভাবনার মাঝেই অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে ওঠে
“হু আর ইউ।

আরেক দরফা চমকায় তন্নি। কপালে ভাজ পড়ে। তাকে চিনতে পারছে না? একবছর আগে একটা ধমক মেরেছিলো ভুলে গেছে? অবশ্য মনে থাকার কথাও না। এরকম ধমক প্রতিদিন অহরহ মানুষকে মারে সে। যে আচমকা তার ধমক খাবে মনে তো শুধু তারই থাকবে।
” আমি অথৈয়ের বন্ধু।
তন্নি খানিকটা মুখ বাঁকিয়ে জবাব দেয়।
“তো আমার বেডে পানি কেনো ঢাললে?
এ বাবা সত্যিই দেখে ফেলেছে? কাঁদো কাঁদো ফেস করে ইনোসেন্ট দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকায় তন্নি। যেনো তন্নির নিষ্পাপ মুখখানা দেখে অর্ণব গলে যায় আর তাকে যেতে দেয়।
কিন্তু এসবের কিছুই হয় না।

অর্ণব রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় চাবি দিয়ে লক করে দেয়।
ভয়ে তন্নির কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। রীতিমতো কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে সে। কথা বলার শক্তিটাও যেনো হারিয়েছে। গলা দিয়ে একটু আওয়াজও বের হচ্ছে না যেনো। লোকটা কি এখন অসভ্যতামী করবে তার সাথে?
” দ…রজা খুলুন। নাহলে কিন্তু আমি চেঁচাবো।
রিনরিনিয়ে বলে তন্নি।
“সিরিয়াসলি?
” হ্যাঁ
অর্ণব নিজেই চেঁচিয়ে ওঠে

“মাম্মামমমমমমমমম অথৈয়ের তন্নিকে রুমে আঁটকে রেখেছি।
তন্নি দুই কানে হাত দিয়ে ফেলে অর্ণবের চিল্লানিতে। রান্নাঘর থেকে আশা বেগমের জবাব আসে।
” ভালো করেছিস আব্বা। আটকে রাখ ওকে। যেতে দেওয়া হবে না আজকে।
হা হয়ে যায় তন্নি। গোল গোল চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে। অর্ণব বাঁকা হাসে।
” আমার বিছানা না শুকানো ওবদি এই রুম থেকে বের হতে পারবে না তুমি।
বলতে বলতে হাতে থাকা চাবিটা ড্রেসিং টেবিলের ওপরে রেখে দেয়। যাতে তন্নি নাগাল না পায়। হাত ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখে ফোনটা চার্জে বসিয়ে কাবাড থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে অর্ণব। আর তন্নি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। কিছু বলতে পারবে না।

অর্ণব ওয়াশরুমে ঢুকতেই কেঁদে ফেলে তন্নি। এক জগ পানি ঢেলেছে। দুই দিনের মধ্যে শুকাবে না। তাহলে কি তাকে এই দুই দিনই এখানে বন্দি থাকতে হবে?
এসব ভেবে শব্দ করে কেঁদে ওঠে তন্নি। কাঁদতে কাঁদতে ফ্যান চালিয়ে দেয়। বিছানা চাদর তুলে ফ্লোরে বসে কাঁদতে থাকে।
বাসায় যেতে না পারলে মা মে রেই ফেলবে তাকে। কেনো পানি ঢালতে গিয়েছিলো?

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২