এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৬
তানিশা সুলতানা
ঘুম জড়ানো আঁধিদ্বয়ে প্রেয়সীর অবয়ন স্পষ্ট। কিন্তু সে এখানে কেনো? আবার মায়ায় জড়ানো আবেদনময়ী ডাক। এসব বাস্তব? অবশ্যই নয়। নির্ঘাত স্বপ্ন। কয়েকবার পাপড়ি ঝাপটায় অর্ণব। ঘুম কাটানোর প্রয়াস মাত্র।
ভয়ার্তক তন্নি গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণবের রিয়াকশন দেখে কথা বলার ভাষা হারিয়েছে। নেহাতি আবার ধমকে না উঠে। লোকটা গম্ভীর স্বরের ধমকে বড্ড ভয় পায় তন্নি। সে চায় লোকটা একটু ভালো করে কথা বলুক। মিষ্টি স্বরে হাসুক। এতেই হৃদয় জুড়াবে তন্নির৷ তবে লোকটার এহেম চাহনিতেও ঘাবড়াচ্ছে। অসুস্থ কি? বা খারাপ স্বপ্ন দেখেছে?
“কাছে এসো
শীতল স্বরে ডাকে অর্ণব। চমকায় তন্নি। দু পা পিছিয়ে যায়। অন্য ভাবনায় বিভোর ছিলো বিধায় সামান্য ডাকেও ভয় পেয়েছে। তবে তার চাহনি ঠিক লাগছে না। নির্ঘাত দুষ্টুমি ভর করেছে মস্তিষ্কে।
“আসতে বললাম তো
আবারও বলে ওঠে অর্ণব৷ তন্নি দৃষ্টি ঘোরায় দরজার দিকে কেউ আসছে কি না?
ফাঁকা রুমে প্রাপ্ত বয়ষ্ক দুজন নরনারীর সঙ্গ নিশ্চয় ভালো নয়। বাড়ির অন্য সদস্যরা দেখলেও ভালো বলবে না।
জিভ দ্বারা ওষ্ঠ ভিজিয়ে রিনরিনিয়ে তন্নি জবাব দেয়
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আর্থি আপু উঠতে বলেছে আপনাকে। মেহমান চলে আসছে প্রায়।
বিরক্ত হয় বোধহয় অর্ণব। আড়াআড়ি ভাবে ভ্রু কুচকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তন্নির মুখপানে। বরাবরই মেয়েটা মাথায় ঘোমটা টেনে থাকে। পার্পল রংয়ের সুতি ওড়না দ্বারা মাথা ঢাকা। গোলগাল মুখ খানায় ভয় স্পষ্ট। হাত পাও বোধহয় মৃদু কাঁপছে। অর্ণব আন্দাজ করতে পারে না।
নজর ঘুরিয়ে অর্ণব ধমকে বলে ওঠে
“কাছে আসতে বলেছি। খেয়ে ফেলবো না।
কেঁপে ওঠে তন্নির সত্তা। ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। খাটের কাছাকাছি মাথা নুয়িয়ে দাঁড়ায়। অর্ণব কম্বল ফেলে হাঁটুতে ভর দিয়ে তন্নির মুখোমুখি হয়। সময় বিলম্ব না করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে।
মুহুর্তেই আঁখি পল্লব বড়বড় করে ফেলে তন্নি। এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
তন্নির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ছোট করে চুমু খেতেও ভোলে না অর্ণব। অতঃপর ছেড়ে দেয়। তন্নি এখনো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিঃশ্বাস টানছে কি না কে জানে?
অর্ণব বিছানা থেকে নামতে নামতে বলে
“স্বাভাবিক হও ইডিয়েট
নরেচরে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে তন্নি। অর্ণব কোমরে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে
“এটা মর্নিং হাগ ছিলো।
এবার বিছানা গুছিয়ে কাবাড থেকে আমার শার্ট বের করে রাখো। আমি সাওয়ার নিয়ে আসছি।
আর হ্যাঁ আমি না আসা পর্যন্ত একদম যাবে না রুম থেকে।
বলেই বাথরুমে ঢুকে পড়ে অর্ণব। অর্ণব যেতেই শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলে তন্নি। ঘাড়ে চুমু খাওয়ার স্থানে হাত বুলায়। এখনো যেনো ভেজা ভাবটা রয়েই গেছে। হার্টবিট লাফাচ্ছে। লোকটা কবে জানি তন্নিকে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে ছাড়বে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তন্নি চট জলদি বিছানা গোছানোর কাজে লেগে পড়ে। বিছানা গুটিয়ে কাবাড থেকে শার্ট প্যান্ট বের করে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। লোকটাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। না জানি আবার কি কি করে বসবে। অসভ্য কি না?
সাজুগুজুতে আর্থি এক্সপার্ট। সে একা একাই সাজছে। শাড়ি পড়তেও কারো সাহায্য নিচ্ছে না৷ অথৈ অধির আগ্রহে বসে ছিলো বোনকে সাজাবে বলে। কিন্তু আর্থি তার থেকে সাজবে না বিধায় জোর করে তন্নিকে সাজিয়ে দিচ্ছে। তন্নিও সাজতে ইচ্ছুক না। ভাড়ি লজ্জা লাগে তার। সাজুগুজু করে সকলের সামনে যাবে কি করে? তবে অথৈকে না করার সাহস তার নেই। কষ্ট পায় যদি। আঁখি বসে বসে দেখছে শুধু। তাকে আগেই সাজিয়ে দিয়েছে অথৈ। তন্নির সাথেও আঁখির বেশ ভাব জমেছে।
শরিফ আহমেদের দুই পুত্র। সাফিন এবং সাগর। সাফিন বড় পুত্র। সে পুলিশে চাকরি করে এবং ছোট ছেলে সাগর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছে। শরিফের স্ত্রী রাবিয়া প্রাইমারি স্কুল টিচার। আনোয়ার চৌধুরীর সাথে শরিফের পরিচয় হয়েছে বিজনেস ট্যুরে গিয়ে। এবং তারপর জানতে পেরেছে তাদের ছেলেমেয়ে রিলেশনশিপ এ আছে। তাই আর সময় বিলম্ব না করে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
অর্ণব আর তামিম গিয়ে পাড়ার মোর হতে এগিয়ে নিয়ে আসে ওনাদের। সুমি এবং আশার রান্না বান্না শেষ।
কথাবার্তা এবং হালকা নাস্তা পানি খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই আর্থিকে নিয়ে আসতে বলা হয়। অর্ণব সাগরের পাশে বসে আছে। তার কোলে তামিম। তামিম এক মুহুর্তের জন্যও অর্ণবকে একা ছাড়ছে না।
আদিলের এসবে মন নেই। সে এক কোণায় বসে ফোন দেখছে। যেনো ফোনের থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই দুনিয়ায় আর কিছু নেই।
অথৈ তন্নি এবং আঁখি নিয়ে আসে আর্থিকে। তন্নি আসতে চায় নি। কিন্তু আর্থি এবং অথৈ তো ছাড়ার পাত্রী নয়। মাথার ঘোমটা আরও একটু বেশি করে টেনেছে তন্নি৷ সাজুগুজু করার জন্য বেশি আনইজি ফিল হচ্ছে। মনে হচ্ছে তাকে ভীষণ বাজে দেখাচ্ছে।
আর্থিকে বসানো হয় রাবেয়া বেগমের পাশে।
অথৈ তন্নি এবং আঁখি আদিলের পাশে গিয়ে বসে।
সাগর উসখুস করছে। চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠেছে। যেনো যে অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস দেখে ফেলেছে৷ অর্ণব বেশ খেয়াল করে বিষয়টা।
এক পর্যায়ে ছেলে মেয়েকে আলাদা কথা বলার জন্য স্পেশ দেওয়া হয়। অথৈ আর তন্নি ওদের নিয়ে ছাঁদে যায়। সাগরও যায় ওদের সাথে।
অর্ণব খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
কিছু বলবে তখনই মা আর খালার ফিসফিসানি কানে আসে অর্ণবের
“আশা ওই মেয়েটা কে?
“ অথৈয়ের বান্ধবী। বেশ ভালো মেয়ে।
“আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমার আদিলের সাথে নেওয়া কথা ভাবছি।
“এটা তো বেশ ভালো কথা। আমি তোমায় গ্যারান্টি দিয়ে বলছি তন্নির মতো ভালো মেয়ে দুটো নেই। ফ্যামেলিও ভালো। কিন্তু বয়সটা কম।
“কথা তো বলি। সেরকম হলে আংটি পড়িয়ে রাখবো।আ আঠারো তে পা রাখলে তুলে নিবো।
রাগে চোয়াল রক্ত করে ফেলে অর্ণব।
তামিমকে ফিসফিস করে বলে
“তোমার আপিকে বলো আমার রুমে আসতে। তাড়াতাড়ি
তামিম দৌড়ে ছাঁদের দিকে যায়। কিছু একটা ভেবে অর্ণব নিজেও ছাঁদের দিকে পা বাড়ায়।
খানিকটা দূরে আর্থি এবং সাফিন কথা বলছে। সাগরের দৃষ্টি তন্নিকে আবদ্ধ। অথৈ এটা সেটা বলেই যাচ্ছে। সাগর হু হা উবাব দিচ্ছে। তন্নি মনোযোগ দিয়ে অথৈয়ের কথা শুনছে।
এক পর্যায়ে সাগর বলে ওঠে
“তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে তন্নি।
একটু চমকায় তন্নি। মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানায়। সাগর আবার বলে
“অথৈ তোমাকে পিচ্চি পিচ্চি লাগছে।
অথৈ খানিকটা মন খারাপ করে বলে
“ বড় বড় লাগবে কি করলে?
তখনই তামিম আসে। তন্নি হাত ধরে।
“কি হয়েছে ভাই?
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৫
“তুমি চলো আমার সাথে। দুই পেয়েছে।
তন্নি তামিমকে নিয়ে চলে আসে।
দরজা ওবদি আসতেই দেখতে পায় অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে।
“ভাড়ি রূপবতী হয়েছিস দেখছি অথৈয়ের তন্নি। যে দেখে সেই দেওয়ানা হয়ে যায়। বাহহহ