এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২১

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২১
তানিশা সুলতানা

ঠকঠক করে কাঁপছে তন্নি। হৃদয়পিন্ডের ধকধক বেড়েই চলেছে। তারেকের হাতে স্মার্ট ফোন খানা। তাতে জ্বল জ্বল করছে অর্ণবের নাম্বার। লোকটা এখন কেনো কল করেছে বুঝতে পারছে না তন্নি। শুধু এইটুকু বুঝতে পারছে আজকে তার জান ক ব জ হবে। বাবা পিঠের ছাল তুলে লঙ্কা লাগিয়ে দিবে। কেউ বাঁচাতে পারবে না তাকে।
তারেক তন্নির দিকে এক পলক তাকিয়ে কল রিসিভ করে কানে দেয়।
ওপাশ থেকে ভেসে আসে পুরুষলি আদর মাখা কন্ঠস্বরের মধুর ডাক
“বউ

শুকনো কাশি দেয় তারেক। কে কল করেছে ধরতে পারছে না সে। তবে মনে মনে শুকরিয়া আদায় করে মেয়ের কাছে ফোন ছিলো না। যথা সময়ে তার হাতে এসে পড়েছে।
“আসসালামু আলাইকুম।
কে বলছেন?
তারেক সালাম দিয়ে শুধায়।
অর্ণব সালামের জবাব দিয়ে বলে
“আমার বউয়ের জামাই বলছি। আপনি কে?
এতোখন বেয়াদবটার কন্ঠস্বর চিনতে পেরেছে তারেক। চোখে মুখের বিষ্ময়কর কেটে গম্ভীর হয়ে ওঠে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনার বউ কে?
অর্ণব হাই তুলে জবাব দেয়
“আগে বলুন আপনি কে? তারপর বলছি আমি কে?
“এখানে আপনার বউ নেই। রং নাম্বার।
“ আরেহহ শা লা আগে তো বলুন আপনি কে? তারপর বলছি রং না রাইট
তারেক মনে মনে বকে দেয় অর্ণবকে। মেয়ে সামনে না থাকলে উচ্চ স্বরে বকা দিতেও দ্বিধাবোধ করতেন না। শুধু মেয়ের জন্যই থেমে আছে। মেয়েকে সে জানাতে চায় না অর্ণব কল করেছে।
“আমি এডভোকেট তারেক রহমান বলছি।

“ ওহহহ নো অশিক্ষিত টাকলু রহমান? সরি ভাই রং নাম্বার।
সাথে সাথে কল কেটে দেয় অর্ণব৷ তারেক খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। কি বললো তাকে? অশিক্ষিত টাকলু? মুহুর্তেই তারেকের মুখশ্রী কঠিন হয়ে ওঠে। ওই ছেলেকে হাতের নাগালে পেলে দুই গালে দুটো থা প্প ড় বসিয়ে দিতো। ইডিয়েট একটা।
তন্নি জীভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বাবাকে প্রশ্ন করে
“কে কল করেছিলো বাবা?
তারেক মেয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে জবাব দেয়
“একটা বেয়াদব।
তুমি কিন্তু অথৈয়ের বাড়িতে আর যাবে না। বাবার কথা না শুনলে বাবা খুব রাগ করবে।
তন্নি মাথা নারিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে। মনে মনে হাজারবার শুকরিয়া আদায় করে নেয়। আজকে জোর বাঁচা বেঁচে গেছে।

স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। তন্নি আসছেই না। তন্নিকে ছাড়া অথৈ কখনোই ক্লাস রুমে গিয়ে বসবে না। অবশ্য দাঁড়িয়ে থাকার আরও একটা কারণ রয়েছে। সেটা হচ্ছে সাগর। অথৈ ঠিক জানে সাগর এখানে আসবে। তাকে একটু দেখবে বলে অথৈ তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।
ঘন্টা খানিক এক নাগারে দাঁড়িয়ে থাকার পরে অবশেষে সাগরের দেখা মেলে। লোকটাকে মারাক্তক ভালো লাগে অথৈ। কালো বাইকে রোগাপাতলা সাগরকে বেশ মানায়। অথৈয়ের খুব ইচ্ছে একদিন সাগরের পেছনে বসে গোটা শহর ঘুরবে। সাগরের কাঁধে হাত রাখবে কিন্তু সেই স্বপ্ন কি আদৌ পূরণ হবে?
ভাবতে ভাবতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা মেলে। ঠিকঠিক অথৈয়ের সামনে এসে বাইক থামায়। মাথা হতে হেলমেট খুলে লম্বা চুল গুলো বা হাতে পেছনে ঠেলতে থাকে। এই দৃশ্য খানাই অথৈয়ের নস্টালজিক বানিয়ে দেয়।

“হেই বিউটিফুল
একা কেনো?
তন্নি কোথায়?
অথৈ নজর সরিয়ে বলে
“ এখনো আসে নি। আসছে বোধহয়।
“তুমি আজ তাড়াতাড়ি আসলে যে?
“দাভাইয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে। তাই তাড়াতাড়ি আসলাম।
অর্ণব হাত ঘড়িতে নজর বুলায়। দশটা বেজে চল্লিশ মিনিট। ক্লাস শুরু হয়েছে দশ টায়।

“অথৈ তোমার তন্নি বোধহয় আজকে আসবে না। চল্লিশ বেজে গেছে।
এতোখনে সময় খেয়াল হয় অথৈয়ের। চটজলদি ঘড়ির দিকে তাকায়। কখন এতো সময় পেরিয়ে গেলো?
অসহায় দৃষ্টিতে সাগরের দিকে তাকায় অথৈ। সাগর হাসে
“সিরিয়াসলি অথৈ। বন্ধুর জন্য ওয়েট করতে করতে সময় ভুলে গেলে?
যাই হোক
আমার সাথে ঘুরতে যাবে? তন্নি নেই একা একা নিশ্চয় ক্লাস করবে না।
অথৈ যেনো হাতে চাঁদ পেলো৷ সে বিনাবাক্যে রাজি হয়ে যায়। এবং মুহুর্তেই সাগরের পেছনে বসে পড়ে। সাগর চমকায় এবং পরমুহূর্তে মুচকি হাসে।

জ্বর এসেছে তন্নির৷ তারওপর তন্নির মামা ইয়াসিন এসেছে বেড়াতে। এনেছে তন্নির জন্য স্মার্ট ফোন। তন্নি তো খুশিতে আটখানা হয়ে গিয়েছে। জ্বরের কথাও বেমালুম ভুলে গিয়েছে। সে যে সকাল থেকে জ্বরের তাপে কাঁপছিলো সেটা মনেই নেই। এখনো শরীরের তাপমাত্রা বেশি।
ইয়াসিন ভাগনীর খুশি দেখছে। বড় বোন মরে যাওয়ার পরে পুরো ভেঙে পড়েছিলো গোটা পরিবার। কিন্তু তন্নির মুখের হাসি তাদের ভরসা দিয়েছে। ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে। তন্নির মুখের দিকে তাকিয়েই তো নিজের ছোট অবিবাহিত বোনকে তারেকের সাথে বিয়ে দিয়েছে। কারণ খালা আর মা আলাদদ হলেও টান তো একটু থাকবেই।
ইতি বেগম গরম গরম পরোটা বানিয়ে আনে। ইয়াসিন এর হাতে ধরিয়ে দেয় এক প্লেট। আরেক প্লেট নিয়ে তন্নির সামনে বসে। তন্নি তখন গেমস খেলতে ব্যস্ত।
তন্নির প্রতি বোনের এই মুহুর্ত দেখে মুচকি হাসে ইয়াসিন। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে।
ইতি রুটি ছিঁড়ে তাতে ডিম ভাজা মিশিয়ে তন্নির মুখের সামনে ধরে। তন্নিও খেয়ে নেয়।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২০

অর্ণবকে নিধি শিশু পার্কে নিয়ে এসেছে। বেজায় বিরক্ত অর্ণব। এই মুহুর্তে সে তন্নির স্কুলে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু নিধির জন্য পারছেই না। বারবার বলছে অর্ণবের সাথে তার কথা আছে।
অর্ণব গিয়ে ছোট ঘোড়ার পিঠে বসে পড়ে। অতঃপর নিধিকে বলে
“কি বলবে বলো জলদি। ইমপটেন্ট কাজ আছে আমার
নিধি মনে মনে কথা সাজিয়ে নেয়। কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের করতে পারছে না। জড়তা কাজ করছে। অর্ণব কেমন রিয়াকশন দেবে সেটাই ভাবাচ্ছে তাকে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২২