এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৯

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৯
তানিশা সুলতানা

ঘড়ির কাটায় রাত তিনটে বেজে চল্লিশ মিনিট। ঘুম নেই তন্নির চোখে। বেলকনিতে বসে আসমানের পানে তাকিয়ে আছে। হাতে ছোট ফোন খানা।
এমনিতে কখনোই তন্নি বেলকনিতে বসে না। তার কারণ সামনের বিল্ডিং এ থাকে সাগর। মানে আর্থির শশুর বাড়ির লোকজন। তন্নিকে দেখলেই সাগর কথা বলতে শুরু করে। তন্নিও এড়িয়ে যেতে পারে না।
অর্ণব দেশে না থাকায় আর্থি এবং সিয়ামের বিয়েটা আটকে রয়েছে। সাগরের থেকে শুনেছে। মাঝেমধ্যেই দেখা হয় কিছু সময় গল্প করে, কখনো কখনো কাছেপিঠে কোথাও ঘুরতেও যাশ। অথৈয়ের পরে সাগরই হয়ে উঠেছে তন্নির বেস্টফ্রেন্ড। দারুণ ভাবে ভালো রেখেছে তন্নিকে। কখনোই মন খারাপ করে থাকতে দেয় না।
মাঝেমধ্যে তন্নি ভাবে “সাগর আর তামিম না থাকলে কি হতো তার? কিভাবে বাঁচতো? কি করে সামলাতো নিজেকে?”

আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তন্নি। ঢেড় জানে অর্ণব তার সাথে কথা বলার জন্যই তামিমের কাছে ওয়ালেট পাঠিয়েছে। লোকটা হয়ত এখনো মনের কোণে কোথাও একটু তন্নিকে যত্নে রেখেছে। কিন্তু তাদের মিল যে অসম্ভব।
ভুল পথে আর পা বাড়াবে না তন্নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মনে মনে কথা সাজিয়ে নেয়। অর্ণব ফের কল করলে অকপটে বলে দিবে সাজানো গোছানো কথা গুলো।
তখনই কেঁপে ওঠে হাতের মুঠোয় থাকা কালো রংয়ের ফোন খানা। তন্নি একটু চমকায় হাত দুটো কেঁপে ওঠে। বুকের ভেতর টিপটিপ শব্দ করছে। নিজেকে যতই স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে মনটা ততই বেসামাল হয়ে ওঠে।
সময় নেয় না তন্নি। রিভিউ করে কানে ঠেকায়। ওপাশ থেকে ভেসে আসে পুরুষালি আকর্ষনীয় কন্ঠস্বর
“একটা সময় আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করেছিলাম। সেই হিসেবে ওয়ালেট ফিরিয়ে দাও।।
হাসি পায় তন্নির। ২৯ বছরের টগবগে যুবক যদি ২০-২১ বছরের ছেলেদের মতো ইম্যাচুউর বিহেভিয়ার করে হাসি পাবে না?

মুখের ওপর কথাখানা বলতে ইচ্ছে করলো তন্নির। তবে বললো না। ভেবে নেয় একটা দিন নাহয় একটু মজা করা যাক লোকটার সাথে। একটু বাচ্চামো করলে কি ক্ষতি হয়ে যাবে?
অবশ্যই যাবে না।
ঘুম পাচ্ছে বোধহয়। কই এতোক্ষণ তো পেলো না। এখন হামি আসছে। তন্নি হামি দিয়ে বলে
” দশ সেকেন্ডের মধ্যে আমার রূপের প্রশংসা করুন। তারপর ভেবে দেখছি।
“মায়াবতী

জবাব বোধহয় অর্ণবের জিহ্বার জগায় আনা ছিলো? ফের বুক কাঁপে তন্নির। ” মায়াবতী” ভীষণ ছোট এবং নিছক একটা শব্দ। তবুও কিছু একটা রয়েছে। যা হৃদয় কাঁপিয়ে তুলতে সক্ষম।
পরমুহূর্তেই ভেসে আসে একই কন্ঠস্বর হতে কিছু তিক্ত বাক্য
“মায়াবতী প্রশংসা নয়।
তুমি আবার প্রশংসা ভেবে আকাশে উড়ো না। ওয়ালেট তামিমের হাত দিয়ে তোমার কাছে পাঠিয়েছিলাম কিছু বলার জন্য।
কথা গুলো নিশ্চয় প্রেম মূলক হবে না। তবে তোমার জেনে রাখা জরুরি।
কালকে ভার্সিটি শেষে আমার সাথে মিট করবে।

চোয়াল শক্ত করে ফেলে তন্নি। আঁখিতে অশ্রু জমেছে। কি বলতে চায় লোকটা? বলে উঠবে না তো ” তন্নি ডিভোর্স পেপার কই? দাও আমায়। জমা দিবো কোর্টে এবং বিয়ে করবো নিধিকে”
তন্নি সয্য করতে পারবে এই আঘাত মূলক বাক্য গুলো। মেনে নিতে পারবে সব? সাইন না করে আলমারির খুব গোপনীয় জায়গায় লুকিয়ে রাখা ডিভোর্স পেপারটা এবার হাত ছাড়া হয়ে যাবে?
সারাজীবনের জন্য মুছে যাবে তাদের সম্পর্ক?

“আমি ডিভোর্স পেপার দিবো না। মে রে ফেললেও দিবো না। কখনোই দিবো না৷
পূর্বের ন্যায় এবারেও কল কাটে তন্নি। অর্ণব সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বাকি অংশ ছুঁড়ে ফেলে। ছাঁদের রেলিং পেরিয়ে বাইরে চলে যায়। অতঃপর আসমানের পানে তাকিয়ে ধোঁয়া উড়াতে থাকে।
বিরবির করে বলে
“ডিভোর্স পেপার তোর থেকে নিবোও না আমি। নিবো তো তোকে।
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে আমার। মন শরূর দুটোয় চাইছে তোকে। একবার সামনে আয় ট্রাস্ট মি বাসর না করে তোকে যেতে দিবো না।
পরপর ফের ফোন বেজে ওঠে অর্ণবের। স্কিনে আকাশ নামটা ভেসে উঠেছে। রিসিভ করে অর্ণব।
আরেকটা সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে বলে

” বল
“কালকে কি সত্যিই আসবি? আম্মু আব্বুকে নানুবাড়ি পাঠাবো?
ভয়ার্তক কন্ঠস্বর আকাশের। ভীষণ ভয়ে আছে সে। অর্ণব তাকে দায়িত্ব দিয়েছে বাসা খালি করার। অর্থাৎ আকাশের বাবা মাকে কোথাও পাঠিয়ে দিতে এবং বাসর সাজাতে। কাল না কি অর্ণব তার বউকে নিয়ে বাসর করবে আশিকের বাড়িতে।
অবশ্যই আশিক জানে উকিলের মেয়ের সাথে অর্ণবের বিয়ের কথা। ঝামেলার কথাও জানে৷ এবার অর্ণবকে বাসর করার সুযোগ দিয়ে বিপদ ডেকে আনবে না তো?

” পাঠাস না।
আমার বউ আর আমার রোমাঞ্চ দেখে হাত তালি দেওয়ার জন্য রেখে দে।
শুকনো ঢোক গিলে আশিক।
“পাঠিয়ে দিয়েছি। ফুলও কিনেছি।
” গ্রেট
বিকেলের আগেই সাজানো কম্পিলিট করবি। আর একটা সাউন্ড বক্সের ব্যবস্থা করবি। বউয়ের যে তেজ সাউন্ড বক্স ছাড়া ধরা ছোঁয়া যাবে না।
আশিক সম্মতি জানিয়ে কল কাটে। আর মনে মনে বলে
“তন্নি বোইন ভালো থাকিস। তোর কপালে দুঃখ নাচছে।

বরাবরের মতো আজকেও তন্নি বাবার সাথে বেরিয়েছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। তামিমি রয়েছে সাথে। তারেক এক হাতে তামিম হাতটা শক্ত করে ধরেছে এবং অপর হাতে তন্নির হাত ধরেছে। রাস্তা ঘাটে আজকে যানবাহনের চলাচল বেশি। বেশি হবারই কথা। কেনোনা এমপির ভোট চলে এসেছে নিকটে। আজ বাদ কাল ভোট হবে। প্রতিটা দলের প্রচারণায় নেমেছে।
মাইকে সারাক্ষণ বেজে চলেছে ভোটের জন্য বানানো গান গুলো। তারেক বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। এসব প্রচারণা তার অপছন্দ।
তন্নি নজর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর পোস্টার দেখে যাচ্ছে। দারুণ হয়েছে পোস্টার। সুন্দর লাগছে আনোয়ার চৌধুরীকে। কতোদিন সামনাসামনি দেখা হয় না মানুষটিকে।
ভোটের দিন দেখা হবে নিশ্চয়। তন্নি ভোটার হয়েছে। সেও তো যাবে ভোট দিতে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তন্নির।

ভার্সিটির গেইটেট সামনে দাঁড়িয়ে আছে তন্নি। সাগর দাঁড় করিয়ে রেখেছে তাকে। বলেছে ” পাঁচ মিনিট দাঁড়াও আমি আসছি”
হঠাৎ তন্নির নজর পড়ে রাস্তায় পাশে। কালো রংয়ের জিপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব। শুধু দাঁড়িয়ে নেই কথা বলছে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির সাথে। মেয়েটি হচ্ছে নয়না। তন্নি ভেংচি কেটে নজর ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় এখন নিধিকে রেখে নয়নাকে ধরেছে? চরিত্রহীন একটা।
ভেবে ফেলে সাগরের জন্য দাঁড়াবে না। একাই চলে যাবে। ভাবনা শেষে হাঁটতে শুরু করে। দু পা বাড়ানোর পরেই হাতে টান অনুভব করে। কপাল কুঁচকে পেছনে তাকায় তন্নি৷ নয়না হাত ধরেছে তার। হতাশ হয় তন্নি৷ ভেবেছিলো অর্ণব ধরেছে

“সরি আপু। সেইদিন না বুঝেই বলে ফেলেছি।
তন্নি হাত ছাড়িয়ে নেয় নয়নার থেকে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে নেয় নয়নাকে।
” ছিহহ তোমার পায়ের লোমগুলো কি বাজে দেখতে। ছোট ড্রেস পড়লে এটলিস্ট লোম গুলো রিমুভ করে পড়তে হয়৷
নয়না লজ্জা পায়। অর্ণবের চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। আশেপাশের কিছু মানুষ হাসতে থাকে।
পরমুহূর্তেই তন্নি বলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২৮

“সরি ইয়ার
না বুঝেই বলে ফেলেছি।
মিষ্টি হেসে চলে যায় তন্নি। পেছনে দৌড় দেয় অর্ণব।
চলবে
বড্ড তাড়াহুড়ো করে লিখেছি বানান ভুল থাকতে পারে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩০