এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩১
তানিশা সুলতানা
বর্ষণমুখর সন্ধ্যা। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজ দারুণ রোমাঞ্চকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বেলকনির দরজা খোলা থাকার সুবিধার্থে ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে গোটা কক্ষ জুড়ে। সেই বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে তন্নির সত্তা। ফুলের সুভাষ, অর্ণবের বেসামাল ছোঁয়া এবং প্রকৃতির হৃদয় কাঁপানো হাওয়া তিনটেই বিষাক্ত লাগছে তন্নির নিকট। ভয় দানা বেঁধেছে মনে।
বেপরোয়া অর্ণবের ছোঁয়া গভীরের থেকেও গভীর হয়ে উঠছে। কিছু মুহুর্তেই তন্নিকে বেসামাল করে দিয়েছে। অনুভূতির জোয়ারে ভাসছে সে। ভালো লাগছে ভীষণ। আবার খারাপও লাগছে। মন বলছে যা হচ্ছে হতে দে। শরীর বলছে এখনই থামা। নাহলে তোর বিপদ।
তন্নির আঁখিতে অশ্রু জমেছে। ধরে আসা গলায় রিনরিনিয়ে বলে
“আপনি যা বলবেন তাই শুনবো। প্লিজ ছেড়ে দিন। আমার পিরিয়ড চলছে।
মুহুর্তেই সরে যায় অর্ণব। তন্নির পাশে শুয়ে পড়ে। দৃষ্টি রাখে সাদা রঙের দেয়ালের পানে। হাতের তর্জনী আঙুল দ্বারা ঠোঁট মুছে। তন্নি জোরে জোরে শ্বাস টানতে টানতে জামা ঠিক করে নেয়। এতোক্ষণ বোধহয় ঘুর্ণিঝড় বয়ে গেলো?
” যা বলবো শুনবি বললি?
অনবরত মাথা নেরে সম্মতি জানায় তন্নি। বাঁকা হাসে অর্ণব।
“দ্বিতীয় বিয়ে করবো। অনুমতি দিবি কাগজে কলমে।
উঠে বসে তন্নি। দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় অর্ণবের মুখপানে। তেজী স্বরে জবাব দেয়
” পাঁচটা করলেও আমার সমস্যা নেই।
বা হাতের ওপর ভর দিয়ে আধশোয়া হয় অর্ণব। ফকফকে সাদা লাইটের আলোতে তন্নিকে একটু বেশিই ফর্সা দেখাচ্ছে। ওষ্ঠজোড়া টকটকে লাল হয়ে উঠেছে। যেনো টোকা দিলেই রক্ত গড়িয়ে পড়বে।
হাসি পায় অর্ণবের। তবে হাসি চেপে বলে ওঠে
“আই নো দ্যাট। বড় মন তোর।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তবে চারটা করবো। তোর কথা ফেলতে পারি বল? একমাত্র বড় বউ তুই। তোর কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখবো না পাক্কা প্রমিজ।
তন্নি জবাব দেয় না। গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। তবে মনে মনে বেশ বকে দেয় অর্ণবকে। ইচ্ছে তো করছে লোকটার দুই গালে চারটা থাপ্পড় মেরে ঝাঁকড়া চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। বিলাই চোখ দুটো গালিয়ে দিতে। আর উঁচু নাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একখানা ঘুসি মেরে দিতে। কিন্তু এসব করলে কি আর বেয়াদব লোক চুপচাপ বসে থাকবে? কখনোই না। দ্বিগুণ আঘাত করবে তন্নিকে। ঢেড় জানা আছে। মনে মনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
তন্নির থেকে জবাব না পেয়ে একই সুরে আবারও অর্ণব বলে ওঠে
” ট্রাস্ট মি মায়াবতী। বউ ছাড়া আমি জাস্ট থাকতে পারছি না। ২৯ বছর নারীর শরীরের স্বাদ গ্রহণ করি নি। আর কতো?
এবার তো উচিত ………
অর্ণবের কথা শুনে তন্নির মুখ থেকে আপনাআপনি “ছিহহহ” শব্দটা বেরিয়ে আসে।
মুখ বাঁকায় অর্ণব।
“দ্বিতীয় বিয়ে করি খালি। এক মাসের মধ্যে বাচ্চা আসার মিষ্টি খাওয়াবো তোকে।
তন্নি দাঁড়িয়ে পড়ে। এসব ফালতু কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় জানালার কাছে। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার চেষ্টা করে। তখনই জোরে বাতাস বয় এবং হাতের কনুই ওবদি ভিজে যায়। হাসি ফুটে ওঠে তন্নির মুখে।
অর্ণবও এসে দাঁড়ায় তন্নির পাশে। হাসি মুখখানা দেখে বলে
“প্রতিদিন বারবার কল করবি আমায়। আমি রিসিভ করবো না তবুও করবি। কেটে দিবো তবুও করবি। বকা দিবো তবুও করবি।
তন্নি ঘাড় বাঁকিয়ে এক পলক তাকায় অর্ণবের মুখপানে। অতঃপর নজর ফিরিয়ে বলে
” ফোন নেই আমার।
“তোর টাকলু বাপকে কিনে দিতে বলবি।
তন্নির খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে ” কেনো রে আমার বাপ কিনবে কেন? শালা তুই বিয়ে করছিস তুই কিনে দিবি”
কিন্তু এই কথা বললে লাগাম ছাড়া বেয়াদব কি বলে উঠবে আল্লাহ জানে।
“আমি না বললেন একরাত আপনার সাথে থাকলে আর মুখ দেখাবেন না।
” থাকলি কই?
কাঁদতে কাঁদতে বৃষ্টি নামিয়ে ফেললি তো।
তন্নি কিছু বলবে তখনই অর্ণবের ফোন বেজে ওঠে। পকেট হতে ফোন বের করে।
“আমার দ্বিতীয় বউয়ের শশুর কল করছে। একটু কথা বলে আসি ঠিক আছে?
তন্নি ভেংচি কাটে জবাব দেয়।
অর্ণব কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে আনোয়ারের গম্ভীর কন্ঠস্বর
” কোথায় তুমি?
“পাপা বিয়ে করবো। বউ ছাড়া থাকতে পারছি না।
তন্নি চোখ পাকিয়ে তাকায় অর্ণবের মুখপানে। আনোয়ার কেশে ওঠে
” বাড়ি ফিরে এসো।
“সকালে ফিরবো। তুমি মেয়ে দেখো।
” একটা না করেছো বিয়ে?
“প্রথম বউ অনুমতি দিয়েছে তো। কাল টাকলু শশুরের থেকেও অনুমতি আনবো। তুমি জলদি মেয়ে খুঁজো।
” কয় টাকা ইনকাম করো তুমি? যে দুটো বিয়ে করার স্বপ্ন দেখছো?
“বিয়েই তো আমার ইনকাম সোর্স। প্রথম বউয়ের বাড়ি থেকে যৌতুক এসে দ্বিতীয় বিয়ে করবো।
” তারপর খাওয়াবে কি?
“আদর, ভালোবাসা, চু
তখনই কল কেটে দেয় আনোয়ার। অর্ণব হেসে ফেলে। চোখে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বসে পড়ে। বাবার পেছনে লাগতে দারুণ লাগে।
তন্নি কিছু বলতে গিয়েও বলে না। ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
একটা মানুষ কতোটা বেয়াদব হলে বাবাকে এসব কথা বলতে পারে?
বরাবরই তন্নির বৃষ্টি বেশ পছন্দ। আজকে আজকে বিরক্ত লাগছে। সেই সন্ধ্যা হয়ে শুরু হয়েছে। এখন বাজে সকাল নয়টা। কমার নামই নিচ্ছে না। একাধারে অনবরত গড়িয়ে পড়ছে৷ বাসায় ফিরতে হবে তন্নির। গতকাল এই রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে আর খোলে নি৷ অবশ্য অর্ণব ডাকাডাকিও করে নি।
এই রুমটা বোধহয় আশিকের। দেয়ালে বড় করে আশিকের ফটো টাঙানো।
তন্নি গুটিগুটি পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। দৃষ্টি রাখে আসমান পানে। গোটা আসমান জুড়ে মেঘের বসবাস। আজকে আর বৃষ্টি ধরবে বলে মনে হচ্ছে না। তন্নি বিরবির করে বলে
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩০
” বৃষ্টি বোধহয় চাচ্ছে না আমরা দূরে চলে যাই”
পরপর অর্ণবের কন্ঠস্বর ভেসে আছে৷ ধীর গলায় ডাকছে
“ছকিনার মা দরজা খোলো। ব্রাশ এনেছি তোমার জন্য।