এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৫

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৫
তানিশা সুলতানা

“প্রিয় মানুষের সব কিছুই যদি প্রিয় না হয় তাহলে সে তোমার কেমন প্রিয় মানুষ হলো?
যাকে তুমি ভালোবাসো তার সবটা জেনে বুঝে ভালোবাসতে হবে।
ভালোবাসার মধ্যে উঁচু নিচু কালো ফর্সা যোগ্য অযোগ্য এমন কোনো ব্যাপার থাকে না।
ভালোবাসা পারফেক্ট দেখে হয় না। ভালোবেসে পারফেক্ট বানিয়ে নিতে।
যে সমস্ত মেয়েরা বরের যোগ্যতা খুঁজে একচুয়েলি তাদের আমি মেয়ে বলতে পারি না।
তারা মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়েছে ঠিকই তবে তাদের পার্মানেন্ট একটা নাম রয়েছে “লোভী”
আর লোভ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।

শেষের কথাটা তন্নির মুখপানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলে অর্ণব। তন্নি দাঁতে দাঁত চেপে সবটা মন দিয়ে শুনে। চারিপাশে তাকিয়ে সকলের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করে। অর্ণবের কথায় সকলেই ইমোশনাল হয়ে গিয়েছে বেশ বুঝতে পারে। মেয়ে সম্পর্কে দারুণ এক অসম্মানীয় উপস্থাপন। মেনে নেওয়া যায়? একদমই না। তাই মৃদু হেসে দু পা এগিয়ে সাবলীল ভাষায় বলে
“একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া।
তবে একটু ভুল বলেছেন৷ আপনার থেকে ভুলটাই আশা করেছিলাম আমি। তবে ব্যাপার না আমি ভুলটা ধরিয়ে দিচ্ছি।
মতিয়ারা বেগম বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তুই কথা কস কেন? অর্ণবের কথা শুনতে দে আগে। এখনকার মাইয়ারা এমনই। তারা যে
তন্নি মতিয়ারাকে থামিয়ে বলে
“নানু ওনার কথার কোনো যুক্তি নেই। আমার কথা শোনো মজা পাবে। ইন্টারেস্টিং একটা কাপুরুষের গল্প শোনাবো। ধারণা বদলে যাবে আই প্রমিজ।
চোখ দুটো জ্বলে ওঠে অর্ণবের। গোল আলুর মতো বড়বড় নয়নে তাকায় তন্নির মুখ পানে। সাহস কতো বড় কাপুরুষ বলে৷ দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে ফেলে। অথৈ শুকনো ঢোক গিলে। আবার এদের মধ্যে একটা যুদ্ধ লেগে যাবে।

“মেয়েদের সব চেয়ে দুর্বল জায়গা হচ্ছে তার বাবা। প্রতিটা মেয়েই বাবা ভক্ত৷ বাবার মুখের ওপর কথা বলার সাহস তাদের হয় না। কারণ তারা বাবাকে অসম্ভব ভালোবাসে।
আর কোনো মেয়েকে ভালোবাসার আগে তার বাবার কাছে নিজেকে সুপারস্টার প্রমাণ করা জরুরি। বাবারা অলওয়েজ চায় মেয়েকে কোনো ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে। সিগারেটখোর উগ্র বদমেজাজি গুন্ডার হাতে নয়।
তো একটা গুন্ডা যদি একজন সৎ বাবার মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে অবশ্যই গুন্ডাটি ভুল করেছে। এটার দায় নিশ্চয় মেয়েটি কিংবা তার বাবা নিবে না।
বিয়ে করেছে ঠিক আছে মাথা নিচু করে নিজের ভুল স্বীকার করে একটু বুঝিয়ে কথা বলা যায় না?
কিন্তু নাহহহ

উগ্রো বদমেজাজি ছেলেটা তার মেজাজ বজায় রাখতে বাজে বিহেভিয়ার করে ফেলে শশুরের সাথে।
তো তখন শশুরের মনে প্রশ্ন জাগবে না? ছেলেটির কি যোগ্যতা আছে?
ইটস নরমাল।
মানুষকে আমার যেরকম সম্মান দিবো তারাও আমাদের ঠিক সেরকম সম্মান ফেরত দিবে।
এবার মিস্টার অর্ণব ভাইয়া আপনি বলুন
মেয়েকে ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাওয়াটা কি ধরণের লোভ?
অর্ণব দাঁড়িয়ে পড়ে। তন্নির দিকে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে অথৈয়ের পানে তাকায়
“বাসায় ফিরবো চল।

” আমার প্রশ্নের জবাব দিয়ে যান। কাওয়ার্ডের মতো পালাচ্ছেন কেনো?
মনোয়ারা ইভান এবং বিলকিস তাকিয়ে দেখছে শুধু। তাদের মাথায় ধরছে না তন্নি এবং অর্ণবের মধ্যে সম্পর্কটা কি? এমন ব্যবহারই বা করছে কেনো?
অর্ণব কয়েক পা এগিয়ে একদম তন্নির মুখোমুখি দাঁড়ায়। শান্ত নয়নে তন্নিকে পর্যবেক্ষণ করে সাবলীল ভাষায় জবাব দেয়

“ছেলেটির বিদেশে যাওয়ার ডেট এগিয়ে আসছিলো। ক্যারিয়ার এবং শখের নারী দুটোর মধ্যে কোনটাও বেশি মূল্য দিবে বুঝতে পারছিলো না। শখের নারীর সংস্পর্শে অন্য পুরুষের আগমন মেনে নিতে পারতো না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো শখের নারীকে বিয়ে করার। এবং কিছুদিন এক সাথে সংসার করে বিদেশে পাড়ি জমানোর। যাতে ছোট্ট পরিটার মনে অর্ণব ছাড়া অন্য পুরুষের আগমন না ঘটে।

তাই জোর করে বিয়ে করেছিলাম। এবং নিজের সাথে রাখতে চেয়েছিলাম। পরে তার বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো বলেও ঠিক করে ছিলাম৷ ইমোশন প্রকাশ করতে পারি না আমি। গুছিয়ে নিজের অনুভূতির বিবরণও দিতে জানি না।শুধু জানি নিজের জিনিসকে নিজের কাছে আগলে রাখতে। এটাই আমার প্রবলেম।
বড়বড় পা ফেলে চলে যায় অর্ণব। পেছনে যায় অথৈ। তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে। তাদের সম্পর্ক গোলক ধাঁধায় আটকে পড়েছে। এই ধাঁধা কখনো সমাধান হবে না আর অর্ণব তন্নিও এক হবে না।

তার পথ চলা আলাদা।
বিলকিস তন্নির কাঁধে হাত রাখে। ধীর গলায় শুধায়
“ব্যাপার কি বল তো তন্নি?
তন্নি হাসার চেষ্টা করে বলে
“আমার বান্ধবীর সাথে সম্পর্ক ছিলো। তাই একটু কথা শোনালাম।
বক্তব্য শেষ করেই ছোটে নিজ কক্ষের পানে। আঁখি পানিতে টাইটুম্বুর। যখন তখন গড়িয়ে পড়বে।

আর্থির বিয়ের ডেইট এগিয়ে এসেছে। অর্ণবও বাবার সাথে অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। বাবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কোম্পানি। ফর্মাল ড্রেসআপে একদম অন্য রকম লাগে অর্ণবকে। আশা বেগম শুধু তাকিয়েই থাকে ছেলের পানে। মাঝে মধ্যে নিজ মনেই বলে
” মাশাআল্লাহ। আমার হিরের টুকরো ছেলে”

দীর্ঘ দিন বাদে অর্ণব বায়না ধরেছে মায়ের হাতে খাবে। আশা বেগম ছেলেকে খাইয়ে দিচ্ছে। বিয়ে উপলক্ষে গতকালই আগমন ঘটেছে সুমি বেগমের। আদিল আসে নি৷ সে বিয়ের একদিন আগে আসবে। সিনথিয়া এসেছে শুধু (আগেরবার আদিলের বোনের নাম কি দিয়েছিলাম মনে নেই। তাই সিনথিয়া দিলাম)
নিজ খাওয়ায় মনোযোগী সুমি আচমকা বলে ওঠে
“এবার অর্ণবের বিয়েটাও সেরে ফেলতে হবে।
থমকে যায় সবাই। খাওয়া থেমে গিয়েছে ইতোমধ্যেই। দৃষ্টি পড়েছে অর্ণবের পানে। অথৈ বিরক্তির সুরে বলে
” খালামনি তুমি জানোই তো দাভাইয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
“ডিভোর্সও তো হয়ে গিয়েছে।

পানি পান করে গ্লাসখানা শব্দ করে টেবিলে রাখে অর্ণব। আর্থি মনে মনে প্রে করে ভাই যেনো তার অতিরিক্ত হাইপার না হয়ে যায়।
আর্থির মনোভাবনা বোধহয় বুঝলো অর্ণব। কঠোর চোখ মুখ হঠাৎ শান্ত হয়ে যায়। মুচকি হেসে বলে
“মেয়ে দেখো খালামনি।
নরেচরে বসে সুমি। খুশিতে গদগদ হয়ে বলে
” নিধি তো আছেই। মেয়ে দেখার কি প্রয়োজন?
“নয়নাও আমায় পছন্দ করে। দুই বোনকেই বিয়ে করে ফেলি? কি বলো পাপা?
আনোয়ার কেশে ওঠে। ছেলের পানে চোখ পাকিয়ে তাকায়। অথৈ আর্থি হেসে ফেলে।
আশা বেগম শেষ রুটির টুকরো অর্ণবের মুখে পুরে দিয়ে বলে

” নয়নাকেই আনবো। ভাড়ি মিষ্টি মেয়েটা। আমার সংসার আলো করে ফেলবে।
“নয়নাকে জিজ্ঞেস করো মাম্মাম। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বাচ্চা নিতে হবে এবং বাচ্চার নাম রাখতে হবে ময়না। রাজি থাকলে কালকেই কাজি ডাকো। বউ ছাড়া আর থাকা যাচ্ছে না।
যাও একটু দুঃখ ভুলেছিলাম। খালামনি আবার হৃদয়ে ব্যাথা দিয়ে দিলো।
আনোয়ার চোখ মুখ কুঁচকে বল
” আমার ছেলে এতো বেহায়া কি করে হলো?

“রোমান্টিক মুভি দেখে। তুমিও দেখবে? রাতে তাহলে দুজন এক সাথে দেখবো।
” চাপকে তোমার গাল লাল করে দিবো আমি।
“শুধু তিন চারটা বউ এনে দিলেই হবে। গাল লাল করতে হবে না।
আনোয়ার চলে যায় উঠে। অর্ণব সহ বাকি সবাই হেসে ফেলে।
আশা বেগম অর্ণবের কান টেনে দিয়ে বলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৪

” এতো দুষ্টু কেন তুই?
“বউ আসলেই দুষ্টুমি বাদ দিবো। যাও টাকলু উকিলের চুল ছুঁয়ে কথা দিলাম।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৬